উপন্যাস - পদ্মাবধূ || বিশ্বনাথ দাস || Padmabadhu by Biswanath Das || Fiction - Padmabadhu Part -29
নয়
বিকেল বাড়ীর জানালার পাশে বসেছিল দেবীদাস। ছুটির দিন। মুকুলের সাথে সিনেমা যাবে। বাড়ী হতে ফোন করল মুকুলকে। সে সিনেমা যাবে না কারণ ওর মা অসুস্থ। তাহলে বিকেলটা কাটাবে কেমন করে চিন্তা করছিল। হঠাৎ রন্টু উপস্থিত হয়ে, দেবীকে বেরুতে বলল, দেবী রাজী।
দুই বন্ধুতে ট্যাক্সির মধ্যে আলোচনা হলো তাদের গন্তব্য স্থান কোথায়। রন্টুর মনের অভিপ্রায় তার জানা ছিল না। তারা উপস্থিত হলো এক নিষিদ্ধ পল্লীতে, সেখানে দেহের কারবার নিয়ে চূড়ান্ত প্রতিযোগিতা চলছে। দেবীদাসের জানায় বাইরে ছিল রন্টু এই নোংরা পরিবেশে এনে উপস্থিত করবে।
দেবীদাস ভীষণ অপমান করল রন্টুকে। ঐ পল্লীতে কোন প্রকারে থাকতে মন চাইল না তার। সেই মাত্র ওখান হতে বেরুবার চেষ্টা করল, কোথা হতে এক ডানা কাটা পরী অর্থাৎ অপূর্ব সুন্দরী রমনী তার পথকে অবরোধ করে বলল, আমাদের কুঞ্জে যখন এসেছেন তখন ভেতরে প্রবেশ না করে চলে যাচ্ছেন কেন?
মেয়েটির কোন কথা ভ্রূক্ষেপ না করে আগের মতো পা বাড়াতেই সে তার হাত দুটো ধরে ফেলল, এক কাপ কফি না খাইয়ে কোন মতেই যেতে দেবো না।
কোন প্রকারে সুন্দরীর কাছে নিজেকে মুক্ত করতে পারলো না দেবী। বুঝতেও পারলো নন্সা কোন যাদু মন্ত্রের ক্রিয়ায় ওর কাছে বন্দী হলো। তার সাথে বাড়ীর মধ্যে প্রবেশ করল। কি সুন্দরভাবে পরিপাটী করে সাজানো তার কুঞ্জখানি । মধ্যিখানে বেশ বড় সড় গ্যালিচা পাতা ও তার চারিপাশে বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র। সেতার, তানপুরা, এসরাজ, হারমোনিয়াম, বাওয়া ও তবলা ইত্যাদি।
মেয়েটি যে একজন গায়িকা এ দৃশ্য দেখার আগে পর্যন্ত তার জানা ছিল না। বাড়ীর মধ্যে একপাশে একটা তক্তাপোষের উপর বিছানো আরামদায়ক গদি ও দুটো বালিশ। সেই তক্তাপোষে বসার জন্য অনুরোধ করল। বসে পড়ল দেবী।
মেয়েটি কলিং বেল চাপ দিতেই মাঝারি বয়েসের এক মেয়ে উপস্থিত হতেই মেয়টি তাকে বলল কফি আনতে।
দেবীদাস কোনরূপ বাধা দিতে পারল না। কিছুক্ষণের মধ্যে কফি এসে হাজির হলো। মেয়েটি তৎক্ষণাৎ তার অ্যাপায়ণের জন্য তার লোকদের নির্দেশ পাঠালো। ওর কার্যকলাপে কোনরূপ বাধা দিতে পারল না দেবী।
জানে না সে কি বশীকরণে বশীভূত হয়ে গেছে। কফির কাপে চুমু দিতেই লোকগুলো এসে হাজির হলো। সঙ্গীত চর্চার কাজে যথারীতি মনোনিবেশ করল। ওরা সকলে রেডি হয়ে মেয়েটিকে ইশারা করতেই গান শুরু হলো।
কি সুন্দর মেয়েটির কণ্ঠ, কি সুন্দর মায়া জড়ানো তার সুর, দেবীদাস ওর সুমিষ্ট কণ্ঠে অভিভূত হয়ে কতখানি যে মোহিত হয়েছিলেন তা বলতে পারব না। পরপর তিনখানি গান করলো মেয়েটি। গানকে ছোট হতেই ভালোবাসতো। তাই ভীষণ ভালো লাগলো তার।
গান চলাকালীন কত গ্লাস যে সরবৎ খেয়েছিল দেবী, তার হিসেব নেই। কিন্তু সরবতের মধ্যে যে দামী মদ ছিল তা জানতো না। গানের শেষে মেয়েটির প্রতি দেবীদাস গভীরভাবে আসক্ত হয়ে পড়েছিল। সেদিন ঐ মেয়েটির কাছে কতক্ষণ ছিল মনে নেই। মনে হয় রন্টুই তাকে বাড়ীতে পৌঁছে দিয়েছিল।
তবে ঐ পতিতালয়ে যাওয়ার কথা গোপন রাখতে পারেনি। অতি সহজেই মুকুলের কাছে ধরা পড়েছিল, বিশেষ করে ধরিয়ে দিয়েছিল - মুখে মদের গন্ধ ও লিপষ্টিকের দাগ। অবশ্য পরে জেনেছিল রন্টুই মুকুলকে বলেছিল গত রাত্রের কথা। তাই তাকে পরীক্ষা করার জন্য পরদিন সকালেই দেবীর বিছানার পাশে এসে হাজির হয়েছিল।
ঘুম হতে ঠিক সময়ে উঠতে পারল না দেবী। গত রাত্রের আমেজ বা কিসের নেশার ঘোরে বিছানা হতে অবসাদ ক্লান্তিতে বিছানা ত্যাগ করতে ইচ্ছে করছিল না। তার। মুকুল তাকে ঘুম হতে তুলতেই দেবীর মুখে মদের গন্ধ পেয়ে সে আকাশ থেকে পড়লো। সে গম্ভীর কণ্ঠে বলল, তুমি মদ খেয়েছ?
বিষ্ময়াপন্ন হয়ে বলল, কি বলছো মুকুল? তুমি পাগল হলে না কি? মুকুল তখন গম্ভীর। হ্যাঁ আমি পাগল হয়েছি।
ঠিক বুঝতে পারছি না।
সব পারবে। জামায় কিসের দাগ?
জামায় দাগ? কিসের? জামার দিকে তাকিয়ে দেখল, সে মিথ্যা বলেনি। কাল রাত্রে কোথায় ছিলে?
বাড়ীতে ছিলাম।
মিথ্যে কথা। কাল তুমি কোথায় গিয়েছিলে তার প্রমাণ তোমার ঐ মুখের গন্ধ? জামায় লিপস্টিকের দাগ। দেবীদাস তুমি এতো নীচে নেবে যাবে বিশ্বাস করতে পারছি না। তুমি উপরে মানুষের মুখোশ পরে আছো, তোমার অন্তর পাশব প্রবৃত্তিতে ভরা।
মুকুল কথা শোন, আমি কোন অন্যায় করেছি বলে মনে হয় না। বিশ্বাস করো। আমি বুঝতে পারিনি গত রাত্রে কোন অন্যায় করেছি কি না। তুমি আমার ভালবাসার পাত্রী কোন দিন মিথ্যা বলিনি তোমায়, গত রাত্রে বন্ধুর কুপরামর্শে আমি পতিতলালয়ে গিয়ে ছিলাম। তা এখন অকপটে স্বীকার করছি। কিন্তু কোন অন্যায় -
চুপ করো? দেবীদাস বড় ভুল করেছি একজন বিখ্যাত শিল্পপতির ছেলেকে ভালোবেসে। কারণ তোমাদের মতো সৎ আভিজাত্যে পূর্ণ ব্যক্তিদের চরিত্রের অন্তরালে যে নোংরা, আবর্জনায় পরিপূর্ণ থাকে তা তোমাকে দেখেই বুঝতে পারলাম। কি প্রয়োজন ছিলো আমার প্রতি ভালোবাসার ছলনা করে নিত্য নতুন সহচরী করতে? ছিঃ ছিঃ দেবীদাস তুমি এইভাবে ভদ্র সন্তানের পরিচয় দেবে?
মুকুল, এতোখানি হীন মনোবৃত্তি নিয়ে আমার চরিত্রের বিচার করো না। হয়তো কোন কারণবশতঃ পদঙ্খলন হয়েছে। নিজের নীতিবোধে মানবতাকে অবমূল্যায়ণ করেছি। কিন্তু তুমি আমার অপমান করো না, ভগবানকে ভুল বুঝ না ।
ভুল, অপমান? দেবীদাস, তোমাকে অপমান করার যোগ্যতা অর্জন করিনি। তবে আগে হতে সতর্ক হলাম একজন ঠক্, প্রতারক এবং চরিত্রহীনের সঙ্গে চিরদিনের সম্পর্ক পাতাবার আগে ঈশ্বর যে সতর্কের ইঙ্গিত দিলেন, এজন্য ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিলাম। আমি চললাম, আশা করি কোন দিন আর দেখা করার চেষ্টা করবে না।
Comments