এরা কারা - বিশ্বনাথ দাস || Era Kara - Biswanath Das || পর্ব - ৮ || part - 8 || Era Kara part 8 || Novel - Era Kara || Era Kara by Biswanath Das || উপন্যাস - এরা কারা
গতস্য শোচনা নাস্তিঃ কিন্তু হিড়িম্ব মহারাজ কোন মতেই অসীম রায়ের অপমানের কথা ভুলতে পারলো না। সর্বদাই কানের মধ্যে বাজতে থাকলো। সর্বক্ষন মনে হচ্ছে বুকের বাম দিক টাতে একটা আলপিন যেন ফুটে আছে। একদিন ওর সাকরেদদের ডেকে পরিকল্পনা করলো, কি ভাবে নীলরতনকে ফাঁদে ফেলা যায়। একমাত্র পথ হলো স্কুলের হেডস্যারকে হাত করতে হবে। রাজনীতির প্রভাবে হেডস্যারকে সহজেই হাত করা সহজ হবে। তার চামচারা একমত। নেতাকে থাপ্পড় মারা মানে তাদের ও ল্যাজ কেটে দেওয়া। হঠাৎ হিড়িম্বর পোষাগুন্ডা গনশা এক সময় বলে উঠলো - টেন্সন নিওনা গুরু, তুমি বললে খালাস করে দেবো। হিড়িম্ব ও তার গোপাল বন্ধুরা মিলনদার দোকানে মাল ও কচি পাঁঠার মাংস খাচ্ছিল। হঠাৎ দাঁতের খাঁজে এক টুকরো হাড় আটকে যাওয়াতে মুখের ভেতরে পুরো কব্জিটা ঢুকিয়ে বের করতে করতে বললো
- পারবি খালাস করতে? গনশা বললো- পারবো গুরু পারবো, হুকুম করলে দেখবে কাজ হাসিল। হঠাৎ গনশা বিকট চিৎকার করে বললো, -এই জোগা, একটা ট্যাংরা নিয়ে আয় নেশাটা জমাতে হবে। এমন সময় হিড়িম্ব বললো- উঠে পড় গনশা, একটা নয়া চিজ খেয়ে আসি। বলা মাত্র ট্যাংরী না খেয়ে উঠে পড়লো। এবার আপনাদের কাছে দু লাইন বক্তব্য রাখছি, এই গনশা কে? কি তার পরিচয় যদি জানতে চান তাহলে কিছুক্ষন অপেক্ষা করতে হবে। এ ছেলেটি শিক্ষিত, মেধাবী ছাত্র ছিলো, এবং ভালো ক্যারেটে ম্যান ও ছিলো। কে এবং কেন তার জীবন নষ্ট করলো। পড়তে থাকুন জানতে পারবেন। তবে হিড়িম্ব হাজরার চরিত্র কিছু জেনেছেন, এখানো অনেক বাকী। নেতা হওয়ার জন্য ওর পাওয়ার এতো বেশী যে ওর অন্যায়ের প্রতিবাদ করার কারো ক্ষমতা নেই, তার কারণ পূর্বেই প্রকাশ করেছি। তবে কোন যুবতী ওকে চটিপেটা করেছিলো। ঐ যুবতী ছিলো এক জন নার্স নাম আশালতা। ওতেও ব্যাটার লজ্জা শরম নেই। কি ভাবছেন ঐ চটি পেটার গপ্পো শুনবেন নাকি? আমি বুঝতে পারছি আপনাদের মন উত্তলা ঠিক আছে ঐ গপ্পো, আপনাদের শোনাব একটু ধৈর্য্য ধরুন। আশালতা শুধু চটি পেটা করেনি, নানা উপহার ও দিয়েছিলো। তাহলে শুরু করি কেমন? ঠিক আশ্বিনের কাছাকাছি হবে। গৌরবাবু রিটার্ড হয়ে অচীন পুরেই ডেরা বাঁধলেন পাততাড়ি গুছিয়ে। বাংলা দেশের মানুষ হলেও তিনি ভালো ও খাঁটি মানুষ। অনেক পূর্বে এখানে এসে মাষ্টারী যোগাড় করেছিলেন। সেই প্রাইমারী স্কুলে খুবই কম বেতন ছিলো। তাই তাঁর কামনা বাসনা থাকলেও তিনি বিয়ে করতে পারেন নি। তার ভয় ছিলো সংসারী হলে ঐ পয়সাতে সংসার চালাতে পারবেন না। সেই জন্য তিনি চাপা বয়সেই বিয়ে করেছিলেন। বেশী বয়সেই তিনি জনক হলেন। একমাত্র মেয়ে কনিকাকে নিয়েই তার সংসার।- ভালো মন্দের মধ্য দিয়ে দিন কেটে যায়। কনিকা যৌবনে পা দেবার পর অনেকেই ওর সাথে প্রেম নিবেদন করতে চেয়েছিলো কিন্তু সকলকে ডিনাই করেছে। সে তার বাবার দীক্ষায় দিক্ষিত। কনিকা উচ্চমাধ্যমিক পাশ করেছে। খুবই ভালো মেয়ে স্কুলে যখন পড়তো তখন পড়াছাড়া কিছু বুঝতো না বাবার বয়স হয়েছে, মা যামিনী দেবী, গৌর বাবুকে বিয়ে করে সুখীই হয়েছিলো কিন্তু কনিকা জন্ম নেবার কয়েক বৎসর পর তাঁকে এমন রোগে আক্রান্ত করলো যে কনিকার মাধ্যমিক পাশ করার পর ইহলোক ত্যাগ করলেন। কনিকা এবার একা সংসারের কাজ কর্ম বাগিয়ে পড়াশোনা করে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করলো উচ্চমাধ্যমিকের পর আর কলেজে যাওয়া ইচ্ছে জাগেনি। কারন বাবার সেবা করার তার কর্তব্য।
হঠাৎ একদিন প্রাইমারী স্কুলের মাষ্টার স্বরুপ বাবুর সাথে কনিকার সাক্ষাৎ হলো ঘটনা চক্রে। তবে স্বরুপ বাবুকে প্রায়ই দেখতো হাটে বাজারে। এমনকি পাড়াতেও, ভোটার কার্ড, রেশনকার্ড সংশোধন ইত্যাদি কাজে। হাটের মধ্যে সম্মুখে চোখাচুখি হবে ভাবতে পারেননি উভয়েই। দৃষ্টিটা এমন প্রতিফলিত হয়ে ছিল যেন উভয়েই শুভ দৃষ্টি হচ্ছে। একটু পরে উভয়েই পূর্বের অবস্থায় ফিরে এসেছিল। স্বরুপ বাবু প্রথম কথা বলেছিলেন- আপনি গৌরবাবুর মেয়ে! কনিকা নম্র কণ্ঠে জবাব দিয়েছিলেন- হ্যাঁ। কনিকা ওখানে আর দাঁড়ায় নি, সোজা বাড়িতে এসে হাজির হয়েছিল। দিন কয়েক পর ধুমকেতুর মত স্বরুপ বাবু কনিকাদের দরজায় সামনে উদয় হলেন। কনিকার চক্ষু চরক গাছ। মুখ থেকে বেরিয়ে এলো, আপনি! হ্যাঁ আমি। বিশেষ দরকারে আপনার বাবার সাথে সাক্ষাৎ করতে এলাম। তবে আপনি যদি অনুমতি দেন তাহলে সাক্ষাৎ করবো নতুবা একশো মিটার রেসে এখান থেকে পালিয়ে যাবো। কনিকা চোখ দুটোকে গোল মার্বেল করে বললো, আমার অনুমতি, ঠিক বুঝলাম না।
বুঝলেন না এই তো? ঠিক আছে আমি আপনাকে সারাংশ করে বুঝিয়ে দিচ্ছি। আমার নাটকে আমি হলাম নায়ক, আর আপনি হলেন নায়িকা। নায়িকা যদি নায়ককে বিয়ে করতে রাজী না থাকে তাহলে নাটক লেখার সার্থকতা কোথায়। অর্থাৎ আমার ইঙ্গিত বুঝতে পারছেন। কনিকা একটু অবাকই হলো, কারন স্বরুপ বাবু যে এই প্রস্তাব করবেন ভাবতেই পারে নি। যুবকটি বলেন কি! তার সাথে কোন আলাপ হলো না, প্রেম হলো না আলে, খালে, ডালে, পার্কে বসে দশ মিনিটের জন্য কোন দিনই প্রেম কাব্য রচনা হলো না, কোন প্রেমের ভাষাতে আলাপ হলো না, আপন গালে প্রেমের চুম্বন ও আঁকলো না আমি কে, কি আমার পরিচয় তাও জানলো না। তবুও বিয়ের কথা শুনে অন্তরটা যেন কল্ কল্ করে উঠলো। অবশ্য কনিকা ওর বাবার কথা ভেবে কোনদিন বিয়ের কথা ভাববার অবকাশ পাইনি। কারন তার বাবাকে কুহকে ফেলে কোন প্রকার বিয়ে করবে না। আর পরক্ষনেই ভাবতে থাকে বাবা চিরদিন বাঁচবে না। তাঁকে সংসারী হতে হবে। স্বরুপ বাবু মেধাবী ছেলে, ভদ্র ও নম্র ও চরিত্রের সার্টিফিকেট ও ভালো। ওর কথা শুনে প্রথমতঃ থতমত করছিলো, কিন্তু সেদিনের হাটের দৃশ্য মনে করতেই তার মনের মধ্যে প্রেমের বাসা বাঁধতে শুরু করেছিলো। প্রেম যে কি তা একটু একটু করে অনুভব করছে। কিন্তু- ওর সাথে আলাপ না হলেও স্বরুপ বাবুর চোদ্দ গোষ্টীর রামায়ন শুনিয়েছে কনিকার অত্যন্ত প্রিয় দিদি আশালতা। আশালতা দেবীর কাহিনী এখন বলবো না পরে জানতে পারবেন। যাইহোক স্বরুপের কন্ঠস্বরে কনিকার সম্বিৎ ফিরে এলো- কি ভাবছেন? তাহলে আমি বাড়ী ফিরে যাই?
-আমি কি তাই বললাম? কনিকা মৃদুস্বরে বললো।
- আপনি রাজী। কনিকা ঘাড় নাড়ে। স্বরুপ বাবু বললেন,
- আপনি আমার বায়োডাটা জানেন?
- কিছু কিছু জানি, আশাদির কাছে শুনেছি।
- তাহলে বাবার কাছে হাজির হই।
ভেতরে আসুন। পজেটিভ উত্তর পেয়ে স্বরুপ বাবুর মনে হলো দুইহাত তুলে চৈতন্য মহাপ্রভুর মতো নাচতে, কিন্তু পারলো না মাষ্টার মশায় হয়ে এতটা উৎফুল্ল হওয়া উচিত নয়। এবার আপনারা ভেবে দেখুন তো, মানুষের মনের আশা যদি পূর্ণ হবার সম্ভাবনা হয় তাহলে মানুষের হৃদয় আনন্দে ভরপুর হয়ে উঠে। প্রেমানন্দে, অনেক খানি আত্মসুখী হয়ে থাকে। আর মনো বাসনা যদি পূর্ণ না হয় তাহলে ভেতর থেকে কান্নাকে ঠেলে নিয়ে আসে। চোখ ফেটে জল ঝরতে থাকে, হৃদয় একে বারে খন্ড বিখন্ড হযে যায়। স্বরুপবাবু জীবনে নিরানন্দের বন্যার স্রোতে হৃদয় একে বারে বারে ধসে পড়েছিলো। এই আঘাতে যে কত কঠিন তা স্বরুপবাবু অনুভব করেছিলেন। ঘটনা কি ঘটেছিল একটু পরেই বুঝতে পারবেন বা জানতে পারবেন। তবে একথা স্বীকার করেন তো? "বিধির লিখন কে করে খন্ডন"। কনিকা তার জেঠুর মেয়ে। আপন জেঠুর মেয়ে। কি ভাবছেন আমার প্রিয় পাঠক/পাঠিকা গন? ভাবছেন এ আবার কি রকম লেখা। কি করবেন আমি দুষ্টু লেখক, নায়ক/নায়িকার মিলন ঘটাতে আমার কলম বিরুদ্ধাচারণ করে এই তো বলবেন না মশায়, আমি তা চাই না, যেটা সত্য তা আমার কলম লিখে, সত্য পথে এগিয়ে যেতে আমার কলম পিছপা হবে না। এক অদ্ভুত সাহস নিয়ে কাগজের উপর লিখতে শুরু করে। আমার কলমকে বীর যোদ্ধা বললে ভুল হবে না, আমার কলমকে বন্দুকের গুলি বলতে পারেন, আমার কলমকে তীক্ষন তীর বললেও ভুল হবে না।
তাহলে শুনুন ব্যাপারটা কি দাঁড়িয়েছে। কনিকার মত পেয়ে স্বরুপ বাবু গৌরবাবুর কাছে উপস্থিত হয়ে গৌর বাবুকে টুক করে প্রমান করে বললেন- আপনার কাছে এলাম স্যার। গৌরবাবু গুরু গম্ভীর লোক। প্রায় আশির কাছাকাছি বয়স। তরমুজের মতো মাথা। আধা কাঁচা ও পাকায় মাথা ভর্তি চুল। মধ্যিখানে পাক ধরেছে। নাকের ডগায় মোটা ফ্রেমের চশমা। গোঁফ খানিও মোটা। নজরুলের "সঞ্চিতা" পড়ছিলেন, স্বরুপ বাবু কণ্ঠস্বরে বই পাতা হতে চোখ সরিয়ে বললেন- কে? কোথা হতে আগমন। স্বরুপ বাবু নম্র কন্ঠে বললেন- পাশের গ্রাম ধরমপুর হতে। ঐ গ্রামের স্কুলে মাষ্টারী করি। গৌরবাবু একটু ট্যারাচে চোখে বললেন- প্রাইমারী স্কুলে?
হ্যাঁ স্যার।
কোন সাবজ্যাকট নিয়ে অর্নাস করেছো?
-অংকে। ভালো, ভালো, বসো। কনিকা কে একটা চেয়ার আনার জন্য বললেন। কনিকা একটা হাতল ভাঙ্গা চেয়ার এনে স্বরুপ বাবুকে বসতে বললো। একটা প্রাইমারী স্কুলের অবসর প্রাপ্ত শিক্ষকের হাতল ভাঙ্গা চেয়ার! ও সব ভাবনা না ভেবে টুপ করে বসে পড়লেন। কিছুক্ষন নীরব। এমন সময় মুখ সরিয়ে বললেন, কি খাবে চা, না কফি? স্বরুপ বাবু আমতা আমতা করে বললেন,- আমার জন্য আপনাকে ব্যস্ত হতে হবে না। তবুও কনিকাকে কফি করতে বললেন। স্যার, আমি যে প্রস্তাব নিয়ে অপনার দরবারে এসেছি যদি বলার সুযোগ দিতেন তাহলে খুশী হতাম। তিনি বললেন- অবশ্যই বলো,
- আপনার মেয়ে কনিকাকে আমার ভারী পছন্দ। তাকে আমি বিবাহ করতে ইচ্ছুক, আপনার মতামত বলুন। গৌরবাবু বেশভারী গলায় বললেন, কনিকাকে পছন্দ হলো কি করে? তবে কি কনিকার সাথে প্রেম আদান প্রদান হয়েছে? হক্কচিয়ে স্বরুপ বাবু বললেন, না না ওসব কিছু নয়। আপনার মেয়েকে দেখে আমার ভারী পছন্দ হয়েছে। অবশ্য কনিকার সাথে কদাচিৎ কোন আলাপ, ও কোন কথাবার্তা হয়নি। একটু দুরে দাঁড়িয়ে ছিলো কনিকা। গৌরবাবু কনিকার পানে কর্কশ দৃষ্টি নিক্ষেপ করতেই বুঝতে পারলো বাবা ওকে দু-চার কথা জিজ্ঞেস করবে সুতরাং কনিকা হঠাৎ বলে উঠলো- না বাবা, এনার সাথে আমার আলাপ হয়নি, আর এই ব্যাপারে আলোচনা হয়নি। গৌর বাবু দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, তাহলে তোমার বাড়ী ও জন্ম স্থান কোথায়? সংক্ষেপে উত্তর, ঢাকা জেলায় কনকপুরে। জন্ম এই স্থানে কনকপুরের নাম শুনতেই গৌরবাবু চমকে উঠলেন। এবার বইটা বন্ধ করে গভীর ভাবে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললেন,-
কতদিন দেশ ছাড়া হয়েছো.
তা জানি না।
তোমার বাবার নাম কি?
- আমার বাবার নাম কিশোরীলাল বসাক। হঠাৎ গৌর বাবুর মুখ দিয়ে বেরিয়ে তোমার ঠাকুরদার নাম জানো? এলো,
প্রেমেন্দ্র বসাক। গৌরবাবু পুনরায় বললেন,
তোমার মায়ের নাম কি ললিতা বসাক! তার মার নাম শুনে স্বরুপ বাবু চমকে উঠলেন, গৌরবাবু কি করে জানলেন তার মার নাম ললিতা বসাক। তবুও কৌতুহল দৃষ্টি নিয়ে বললেন, -আপনি কি করে আমার মার নাম জানলেন? গৌরবাবু স্তব্দ হয়ে গেলেন। কনিকা, স্বরুপ গভীর ভাবে আশ্চর্য্য হলেন। বারংবার নিজেদের মনকে নাড়া দিতে থাকলো। গৌরবাবু কি করে জানতে পারলেন। হঠাৎ দেখা গেল গৌরবাবুর চোখ দিয়ে টপ্স্টপ্ করে জল বেরুতে থাকলো কনিকা ধীরে ধীরে গৌরবাবুর কাছে এগিয়ে এসে বললো- বাবা তোমার চোখে জল। গৌরবাবু চোখ দুটো মুছে বললেন,
এ দুঃখের চোখের জল নয় মা। এ আমার আনন্দাশ্রু। হঠাৎ মুড পালটে বাবা স্বরুপ এবার বলতো, তোমার মা বেঁচে আছেন? বললেন,
হ্যাঁ আছেন। বাবা নেই। কিন্তু আপনি স্বরুপের কথাকে লুফে নিয়ে বললেন, বলবো, সব বলবো নইলে যে যন্ত্রণা বয়ে বেড়াচ্ছি কয়েক বছর ধরে এবার সেই যন্ত্রনা হতে নিস্কৃতি পাবো। আমি ভেবেছিলাম আমার পরিবারের লোক জন মারা গেছে, কেউ বেঁচে নেই। সেই ভয়ংকর রাত্রির কথা আজো মনে আছে। ঐ রাত্রির কথা কোন মতে ভুলতে পারিনি বাবা। দিনটা ছিল, হেমন্তের কোন এক রাত্রি। সবে মাত্র চাষীদের খামারে ধান উঠতে শুরু করেছে। প্রচন্ড ফসল ফলেছে মাঠে, সোনালী বর্নে মাঠ ভরে গেছে। চাষীদের মনে আনন্দের শেষ নেই। কি হিন্দু, কি মুসলিম। স্থানে স্থানে মৃদঙ্গের বাজনা বাজছে ঝুমুর, ভাটিয়ালী, ও গম্ভীরা গানের তালে তালে। সারাদিন হাড়ভাঙ্গা, খাটুনির পর সন্ধ্যের সময় গান/বাজনার আসর জমে উঠেছে। প্রতি মানুষের মনে আনন্দের জোয়ার। কিছু লোক ভাঙ্গ, গাঁজা প্রভৃতি মাদকতায় ঝিমুচ্ছে। কেউ কেউ গানের সুরে সুর মিলিয়ে গান করার চেষ্টা করলে নেশার ঘোরে মানুষ গুলো নেতিয়ে পড়ছে। কেউ কেউ আবার হেমন্তের মৃদু, মন্দা বাতাসে শীতের আমেজ উপভোগ করছে। গৌরবাবু আপন বারান্দায় বসে কয়েক জন ছাত্র/ছাত্রী কে পড়াছিলেন। পাশের ঘরে অর্থাৎ ত্রিশ/চল্লিশ মিটার দুরে লুডো খেলছিলো। তখন টি.ভি ছিলো না। কখনো কখনো ছোট ভাই কিশোরীলাল ছোটতেই ললিতাকে হারিয়ে বিকট শব্দ করে তাকে রাগন্ধিত করছে। এমন করে ঘন্টা খানেক কেটে যাবার পর শতশত মানুষের বিকট চিৎকার, পালাও পালাও রব। হিন্দু ভায়েরা পালিয়ে যাও। নইলে ওরা মেরে ফেলবে।
Comments