ছোট গল্প - হানাবাড়ি || লেখক - সন্দীপ কুমার পণ্ডা || Short story - Hanabari || Written by Sandip Kumar Panda
হানাবাড়ি
সন্দীপ কুমার পণ্ডা
আমি ভূতে মোটেই বিশ্বাস করি না ভূত হল মানুষের মনের দুর্বলতার স্বরূপ মাত্র যা আমরা কল্পনার মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলি।মানুষ যেখানে ভূতও সেখানে , যেখানে মানুষ নেই সেখানে ভূতও নেই এটাই আমার আদর্শ। অনেক বন্ধু -বান্ধবদের সঙ্গে আড্ডায় ভূতের প্রসঙ্গে কথা হলে আমি বিপক্ষে সোয়াল করি সেজন্য আমাকে অনেকে 'ভূতনাস্তিক ' বলেও বাঁকে। আমি বহু পোড়ো বাড়ি,শ্মশানে ঘুরে বেরিয়েছি তবে ভূত দেখবার জন্য নয় ভূত দেখাবার জন্য মানে আমার একটা ইউটিউব চ্যানেল আছে 'ভূতান্বেষী' নামে যেখানে রাত ১২টায় কিম্বা ১টায় আমি পোড়ো বাড়িতে ,শ্মশানে গিয়ে মানুষকে ভূত দেখাই তবে সত্যি কারের নয় আমার চ্যানেলে একটি মেয়ে আছে কোকড়ানো চুলওয়ালা ওকে সাজিয়ে বা অন্য সময় অন্য কাওকে সাজিয়ে দর্শকদের ভূত দর্শন করাই।তাহলে বোঝাই যায় আমি নিজেই একটা আস্ত ভূত।
বেশ ভালো চলে চ্যানেলটি অল্প রোজকারও হয়।এমনি করে দিন চলে যায় একদিন খবর পেলাম বাবুইপুরে একখানা পুরোনো বাড়ি আছে যেখানে নাকি ভূত আছে বলে এলাকার লোক। আমি গেলাম বারুইপুরে তবে ভূত দেখার জন্য নয় এখানে ভূতের ভিডিও করলে কেমন হয় সেজন্য গিয়েছিলাম। দেখলাম বেশ মনের মতো বাড়িখানা একদিকটা ভেঙ্গে পড়েছে,সিড়িতে শেওলা জমেছে ঝুল তো আছেয়। বাড়ির পিছনে মোটা মোটা আমি জাম তেঁতুলের বাগান অন্ধকারছন্ন করে তুলেছে।মনে মনে খুব পছন্দ হল বাড়িখানা ঠিক করলাম সামনের অমাবস্যা পড়েছে ২৮ তারিখ সেইদিনই এখানে সুটিং করব।
বিকেলে দলবল নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম বারুইপুরের দিকে। সন্ধের সময় পোঁছে গেলাম বারুইপুরের বাড়িতে। বাড়িতে প্রবেশ করতেই বুকটা কেঁপে উঠলো মনে হলো সেটাকে পাত্তা না দিয়ে সবাইকে ঠিকঠাক বুঝিয়ে দিলাম আর পাপিয়াকে মেকাপের জন্য তৈরি হতে বললাম।মেকাপের পর ওকে বাড়ির একটা ঘরে বসে থাকতে বললাম ওকে আগে থেকেই বলে রেখেছিলাম কীরকম আজকে সুটিং করব,ওর কীরকম অংশগ্ৰহন করবে?তাও আর একবার বুঝিয়ে দিলাম। নকল রক্ত,হাঁড় ও মানুষের খুলি আগেই তৈরি ছিল। আকাশ বেশ অন্ধকার চারপাশ ছমছমে ভাব আর আমার মনে কেমন একটা অসস্তিকর অবস্থা অন্য কোথাও শুটিং এর সময় এমন অসস্তি বোধ করিনি। মনের চিন্তাকে ঝেড়ে ফেলে কাজে নেমে পড়লাম। সবাইকে ডেকে বললাম "প্রথমে বাড়ির চারপাশ দেখিয়ে ঘরে ঢ়ুকব সেখানে পাপিয়া আছে সে সেখানে ভূতুড়ে কান্না কাঁদবে আর আমাদের দেখে বাগানের দিকে ছুঁটে পালাবে"। তার একটু বাদে তখন ঘড়ির কাঁটায় ১২টা তখন শুরু হল লাইভ ।ক্যামেরায় আছে রাজু , কথাবার্তায় দীপ, বিভিন্ন শব্দ কৌশলে রেখেছি সমুকে কৃত্রিম রঙ্গিন আলো ও ধোঁয়ার জন্য আছে সায়ন , সবাই কাজ করছে। ক্যামেরায় প্রথমে বাড়িটার চারপাশটা দেখিয়ে তখন সিড়ি দিয়ে ঢ়ুকছি তক্ষুনি কতগুলো চামচিকা শব্দ করতে করতে বেরিয়ে এলো আমি তো অবাক হয়ে গেলাম চামচিকের কোনো অস্তিত্ব ছিল না হয়তো দিনের বেলার জন্যই ছিল না কিংবা দেখতে পাইনি কিন্তু দিনের বেলাতেও চামচিকে দেখা যায় অন্ধকার ঘরে।এরপর যখন বাড়িতে ঢ়ুকতে যাচ্ছি ঝমঝমে ভাবটা মনে হলো বেড়ে গেছে আর কেন জানি না মনটাও সায় দিচ্ছল না এই ভুতুড়ে বাড়িতে থাকতে। যেহেতু সবাই ঠিকঠাক নিজ দায়িত্ব পালন করছিল সেজন্য আমার আর কিছুই করার ছিল না কেবল মাত্র দেখে যাওয়া ছাড়া।তারপর যে ঘরে পাপিয়া আছে সে ঘরে আমাদের নিজস্ব কৃত্রিম আলো,রং, হাঁড়, রক্ত দিয়ে সজ্জিত ঘর খানা ও দূর থেকে পাপিয়ার নাকি কান্না দেখাতে লাগলাম । পাপিয়ার অভিনয় আজ সত্যিই অবাক করার মতো অন্য দিনের চেয়ে অনেক ভালো যেন সতিই পাপিয়া ভূত হয়ে গেছে।ঝুলে ভর্তি দেওয়ালে পলেস্তার খসে পড়েছে আগাছা জন্মেছে ঘরের ভিতর আর ছাদ খসে খসে পড়ছে।তারপর পাপিয়া বাগান দিকে ছুটে অদৃশ্য হয়ে গেল আর আমরা বাগান দিকে ছুটলাম দর্শকদের আমারা ভূত অদৃশ্য হয়ে গেল সেটা দেখাব বলে।সবাই সেদিকে গেল আমি আর গেলাম না। একটু বাদেই দেখি পাপিয়া ঘরের দিক থেকে ছুটে আসছে কিন্তু পাপিয়ার তো বাগানের দিকে থেকে আসা উচিত সেদিকেই পাপিয়া আর ইউনিটের সবাই গেছে আর বাড়ির পিছনে দিকে তো বাগান তাই ওকে জিজ্ঞাসা করতে ওর দিকে আমি এগিয়ে যেতেই ও হাঁপিয়ে বলতে লাগল "আমার ভুল হয়ে গেছে সচীনদা , আমি বুঝতে পারিনি এমন হবে আর কোনো দিন এমন হবে না।"
আমি তো আকাশ থেকে পড়লাম বলে কী মেয়ে টা।তারপর হেসে বললাম " তুই আজ অসাধারণ অভিনয় করেছিস খুব ভালো হয়েছে" ।
পাপিয়া অবাক হয়ে গিয়ে বলল "আমি তো ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম এই বাড়িতে তুমি যখন আমাকে রেখে এলে, বুঝতে পারিনি কিন্তু হঠাৎ চোখ লেগে গেল।"
আমি তো বিস্ময়ে , ভয়ে ,অবাকে হতবুদ্ধি হয়ে মাটিতে বসে পড়লাম আর শুনতে পেলাম কেও যেন আমার কানে বলছে " আমরা আছি......আমরা আছি....আমরা আছি...... আমরা চিরন্তন সত্য...... আমরা বাস্তব"।
Comments