প্রতিশোধ - পায়েল বিশ্বাস || Protisodh - Payel Biswas || ছোটগল্প || Short Story

 প্রতিশোধ 

পায়েল বিশ্বাস




"আমরা কোথায় যাচ্ছি রহিমচাচা?" 

গণ্ডোলাটাকে সংকীর্ণ খাঁড়িটার মধ্যে প্রবেশ করিয়ে উমার দিকে তাকিয়ে বললাম," এক অজানা জগতে যাচ্ছি মা। যেখানে আর কেউ তোমার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না।"

দশ বছরের মেয়েটি আমার এই ছোট্ট ডিঙিটার মধ্যে আরও জড়োসড়ো হয়ে বসল। 

" চাচা, আমার বড় কষ্ট হচ্ছে।" 

উমার কথায় কবেকার শুকিয়ে যাওয়া পিচুটি পড়া চোখে জল এসে গেল। শীর্ণ বক্ষ পিঞ্জরে বহু বছরের সুপ্ত আগ্নেয়গিরি যেন আবার জেগে উঠল।  

" না, ছাড়বি না মা, ওই নর পিশাচদের একদম ছাড়বি না। শেষ করে দিবি সবাইকে যারা তোর উপর অমানুষিক অত্যাচার করেছে।" 

উমা অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বলল," আমি কি করে পারব চাচা? আমার বাবা মাও যে ওদের সাথে পারল না। সেই ওদের জমিটা লিখেই দিল। কিন্তু যদি আগেই লিখে দিত তবে.." 


এবার আমি আমার অভীষ্ট লক্ষ্যে প্রবেশ করলাম। অসংখ্য ঝাড়বাতি সাথে সাথে জ্বলে উঠল। বহু পুরনো পরিত্যক্ত প্রাসাদটি যেন সত্যি সত্যি দেবী উমার আগমনে প্রাণ ফিরে পেল। অসংখ্য বাদুর বিরক্ত হয়ে ডানা ঝাপটিয়ে অন্ধকারের গভীর থেকে তাদের রক্তচক্ষু মেলে আমাদের দিকে তাকাল। উমা চমকে গিয়ে চারিদিকে তাকিয়ে একটু যেন ভয় পেয়ে আমার দিকে সরে এসে বলল," এ আমায় কোথায় নিয়ে এলে চাচা? আমাকে বাবা মার কাছে ফিরিয়ে নিয়ে চলো।"

আমি স্মিত হেসে তাকে বললাম," এখানেই যে তোকে থাকতে হবে। তোর বাবা মা সমাজের ভয়ে, প্রাণের ভয়ে তোকে ত্যাগ করেছে। তাই হাসপাতাল থেকে লুকিয়ে আমি তোকে এখানে নিয়ে এসেছি। ওখানে ফিরে গেলে প্রমাণ লোপাটের জন্য তোকে ওরা শেষ করে দেবে। এখানে যে আছে সে তোকে শক্তি দেবেন। এক অলৌকিক শক্তি। "

" তিনি এমনিই দেবেন?" বাস্তববাদী মেয়ের প্রশ্ন।

" কোনো কিছু এমনিই হয় না। কয়েক ফোঁটা রক্ত নিবেদনের মাধ্যমে শুধু তাঁর তৃষ্ণা নিবারণ করিস মা। "

বলে আমি উমাকে প্রাসাদের ঘাটের সিঁড়ির দিকে নিয়ে গেলাম। এক্ষুণি সে আসবে। যাকে আমার মত কিছু অত্যাচারিত সন্তানহারা বাপ জাগ্রত করেছে তাকে উষ্ণ রক্তের মাধ্যমে অসংখ্য পিশাচকন্যা তৈরি করে চরম প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য।



Comments

Popular posts from this blog

শারদীয়া সংখ্যা ১৪৩০ || সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র || World Sahitya Adda Sarod sonkha 1430

শারদীয়া সংখ্যা ১৪৩১ || Sarod sonkha 1431 || সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র