তারার আলো - বর্ণনা কর্মকার || Tarar alo - Barnona Karmakar || Short Story || ছোটগল্প

 তারার আলো

     বর্ণনা কর্মকার


ছেলেটা আজ খুব সুন্দর করে সেজেছে, 

একদম তার ভালোবাসার মানুষ টার মনের মতো! আয়নার প্রতিবিম্বের দিকে তাকিয়ে সে নিজেই বলে উঠলো ~ " আজ নিশ্চয়ই আমাকে দেখে ঠোঁট ফোলাবি না! দ্যাখ, শার্টের রং টাও কিন্ত তোর পছন্দের।। ফুলহাতা শার্ট এর হাতা কব্জি অবধি গোটানো, 

   আজ আমাকে দেখার পর আর তোর কোনো অভিযোগ থাকবে না, 

অগোছালো বলে আমাকে কথাও শোনাতে পারবি না , পারফিউম টাও তোর ই গিফ্ট করা কিন্ত! মনে আছে তোর? 

       মনে পড়ে পাগলি, ভালোবাসা প্রকাশ করতে পারতাম না বলে কত্তো অভিমান ছিল তোর? সবার মতো তথাকথিত ভালোবাসা টা আসতো না যে আমার, তাই তুই হয়তো বুঝতে ই পারতিস না কতোটা ভালোবাসি তোকে! "

             আজ ছেলেটার তাড়া যে প্রচন্ড, নিজের প্রিয়তমার অভিমান ভাঙাতে যাবে সে ! আজকে দিনটা তেই সে উপহার পেয়েছিল তাকে : এ দিন কী ভোলা সম্ভব? 

      একতোড়া লাল গোলাপ কিনে সে চললো, মনে কত্তো আশা ~ কথার বুননে পাহাড় তৈরি করে ফেলেছে সে , 

    এই একমাস কী কী করলো সে, কী কী হলো ~ সব বলতে হবে না ওকে? 

    সারাদিনের গল্প শোনাটাই যে মেয়েটার অভ্যেস আর, 

  ছেলে টা যখন প্রচন্ড ব্যস্ততার মাঝে ভুলেই যেত একটা পাগলি অপেক্ষা করে আছে, 

তখন মেয়ের সে কী রাগ? ভাবতেই ঠোঁটের কোনে হাসি চলে আসে ছেলেটার! দিনশেষে কান্নাভেজা স্বরে পাগলি টার অভিযোগ গুলো শুনেই তো আরও বেশি ভালোবেসে ফেলতো ছেলেটা পাগলি টাকে! 

     "দেরি করা যাবে না, পাগলি টা আমাকে দেখবে বলে বসে আছে ঠিক! "~ ছেলে টার অস্থিরতা র পারদ আজ খুব বেশি! 

       আজ দিন টাও বড়ো বেশি মেঘলা , 

      ছেলেটার একহাতে লাল টকটকে গোলাপের তোড়া আর অন্য হাতে হলুদ মলাটের সেই ডাইরি : শেষ উপহার! 

   অগোছালো ছেলেটা আজ বড্ডো গোছানো হাতে প্রিয়তমার সমাধি টা পরিস্কার করছে , 

       আর বলছে, ~

" কী রে, দ্যাখ এলাম তো ঠিক সময়ে? 

    দ্যাখ তাকিয়ে আজ আমার দিকে! কেমন লাগছে বলবি না আমাকে? 

তোর জন্য গিফ্ট আছে এনেছি যে, 

  লাফাবি না আগের মতোন? জ্বালাবি না আমাকে? 

এত্তো অভিমান কেন তোর? তুই চুপ করে থাকলে আমার কষ্ট হয়, বুঝিস না? 

  দ্যাখ, আমার জন্য লেখা তোর সব কবিতা গুলো আজ ছাপার অক্ষরে ~ তোর স্বপ্ন ছিল তো এটা? 

বলেছিলি একসাথে পূরন করবো? কিন্তু তার আগেই তো একা করে চলে গেলি আমাকে। আমার করা ভুলের শাস্তি এত্তো টা ভয়ানক ভাবে কেন দিলি? 

                 অগোছালো বোকা ছেলেটাকে সেদিন আটকাতে পারতিস তো একটি বারের জন্য? 

পারতিস না, বল! ভালোবাসা র অধিকারে একটিবার কী বলতে পারতিস না যে, লড়াই টা একসাথে করবো? 

   একদিন যোগ্য হয়ে সবার সামনে ভালোবাসা র অধিকারে তোর হাত ধরতে চেয়েছিলাম ~ অপেক্ষা টুকুও করতে পারলি না? 

       যেদিন তোর ভালোবাসা কে অস্বীকার করে তোর ভালো থাকার জন্য তোকেই অস্বীকার করলাম : সেদিন একটিবার ও কেন বললি না ~ " সোম, তোকে নিয়েই আমার ভালো থাকা , 

     আমার মন হয়তো আশা করেছিলো যে অন্তত তুই আমার অভিমান টুকু বুঝবি! 

  কিন্তু আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম আমি এক এমন অভিমানীনির সামনে দাঁড়িয়ে আছি যে সে নিজের কষ্ট নিয়ে অভিযোগ করতেই জানে না! 

            এত্তো টাই অভিমান যে ওভারিয়ান ক্যান্সারের বিভৎস কষ্ট ও তার কাছে হার মেনেছে, বিদায়ের শেষ বেলাতেও অভিমান কমেনি তোর! 

একবার ও ডেকে বললি না কেন , জানালি না কেন আমাকে? 

ঐ একটা দিনের আমার মুখে র কথাটাই তোর কাছে ধ্রুব সত্যি হয়ে গেলো? আর আমার ভালোবাসা টা ? আমার চোখের ভাষা গুলো তোর শব্দের অপেক্ষায় ছিল যে, বুঝলি না পাগলি বল? 

তুই তোর পাগলকে চিনিস ই নি নাকী অধিকার নামক শৃঙ্খল দিয়ে বাঁধতে চাস নি, কোনটা? 

       একবার যদি সেদিন আটকাতিস তাহলে আমাদের ও দুজনের একটা সংসার হতো, বল! 

  তোর জীবনের শেষ কটা দিন ও আমি তোর সাথে থাকতে পারলাম না, কী হতভাগ্য আমি দ্যাখ? 

তোর - আমার সংসারের স্থায়িত্ব যে কটা দিনের ই হতো তার স্মৃতি নিয়েই বাকী দিন গুলো কাটিয়ে দিতাম আমি! তুই না থাকলে ও বাড়ি টা জুড়ে ঐ সংসার টা জুড়ে তো তুই থাকতিস বল? আর এখন ? তোর কয়েকটা লেখা চিঠি, কবিতা আর ঐ রঙিন দিনের স্মৃতি গুলো সম্বল! 

  বুড়ো হলে শুনেছি স্মৃতি ঝাপসা হয়, তুই বল তো বুড়ো বয়স এর মুহূর্ত গুলো কী আঁকড়ে বাঁচবো আমি? 

   শুনতে পাচ্ছিস তুই আমার কথা? 

   এত্তো জ্বালাছিস, কষ্ট দিচ্ছিস তো ~ সব সুদে আসলে শোধ নেবো আমি, 

    তুই শুধু অপেক্ষা টুকু করিস এবার : আমার ওপারে যাওয়ার অপেক্ষা টুকু! 

 এবার আর ফাঁকি দিস না প্লিজ, 

আর অভিমান কে জিতিয়ে দিবি না, কথা দে? 

      আমিও উপলব্ধি করেছি জানিস যে ভালোবাসা কে বলিদান দিয়ে ভালোবাসা র মানুষের ভালো থাকার অজুহাতে তাকে ছেড়ে আসাটা কাপুরুষতা, 

    ভালোবাসা তো প্রমাণ হয় লড়াই করার মাধ্যমে , 

আমরা ছেলেরা বুঝি না "ভালো থাকিস" বলে যার হাত ছেড়ে আসি, তার ভালো থাকাটাই আমাদের নিয়ে , তার জগত টা আর্বতিত হয় আমাদের ঘিরে, 

 আর যখন বুঝি তখন বড্ডো বেশি ই দেরি হয়ে যায়! 

যখন বুঝি , আমাদের ভালো থাকার চাবিকাঠি টাও ঐ ছেড়ে আসা মানুষ টার হেফাজতে : তখন সবটা শেষ! 

   ফিরে তাকানো যায় না, ফিরে যাওয়া যায় না! 

  শুধু একরাশ আক্ষেপ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে ~ লড়াই টা যদি করতাম ওর হাতটা ধরে, ওর পাশে থেকে! 

         তোর বলা প্রতি টা কথা আমি আজ প্রতি টি রোমকূপ দিয়ে অনুভব করি, কিন্তু আজ আমি নিঃস্ব, অসহায়!  

    বলিদানে মহানত্বের সুখ আছে ঠিকই কিন্তু বেঁচে থাকার কারণ টাই হারিয়ে যায় ঐ নিষ্ঠুরতার করাল আঘাতে, আর ঐ বলিদানে র ক্ষনস্থায়ী সুখ যখন ক্ষীণ হতে শুরু করে, 

যন্ত্রনা র আগুনের আত্মদংশন জীবন টাকে দুর্বিষহ করে তোলে। 

প্রতি মুহূর্তে নরক যন্ত্রণা র অনুভূতি সহ্য করাটাও যে খুব কঠিন~ আজ আমি সবটাই বুঝি! 

    তাই, তুই আর একটি বার সুযোগ দিলে আমার করা প্রত্যেক টা ভুল আমি শুধরে নেবো, তোর মনের মতো হয়ে যাবো ~ কথা দিলাম! 

         আর এই গোলাপ টাও তোর জন্য! কখনো তোর মনের মতো করে বলা হয় নি যে ভালোবাসি, 

আজ বলছি ~ " I love you & I will love you for the rest of my life . 

     will you be mine for today, tomorrow , decades & for the next life also? 

            ছেলেটার চোখের জল, গোলাপের তোড়া আর ঐ আলগোছে পড়ে থাকা কবিতার বই সমাধির মাটির ওপর নিজেদের অস্বিত্ব কে ঠিক ই খুঁজে নেয়। 

       দূরে মসজিদ থেকে ভেসে আসা আজানের শব্দে ছেলেটা বুঝি শুনতে পায় মেয়েটার কন্ঠস্বর , 

  ~ " দিন পালটায়, রং বদলায়

   অস্থির মন! 

হাতের মুঠোয় ফেরারি সময়, শুধু শিহরণ, 

 ছায়াপথ জুড়ে হাতছানি কার 

সেই পিছুটান! 

কার কথা মনে পড়ে? 

রাতজাগা পাখি যায় ডেকে যায়

দীর্ঘ শ্বাস, 

জোনাকিরা জ্বলে গাছের পাতায়

আলোর আভাস, 

পাশে পড়ে থাকা কবিতার খাতা, 

নীলচে আকাশ, 

কলমের রং গুঁড়ো গুঁড়ো হয়ে স্তব্ধ বাতাস! 

ঝড় বয়ে গেছে পড়ে আছে শুধু, 

ছেঁড়া মাস্তুল, 

ফিকে হয়ে যাওয়া কুয়াশার পিছে, 

উঁকি দেয় ভুল, 

ছেঁড়া কবিতার পাতাগুলো সব আলো অক্ষর, 

হৃদয়ের কোনে ভালোবাসার শেষ স্বাক্ষর! 

     কার কথা মনে পড়ে? "

    

     কখনো কখনো দীর্ঘশ্বাসের ওজন বড্ডো বেশি ই ভারি হয়! 


Comments

Popular posts from this blog

শারদীয়া সংখ্যা ১৪৩০ || সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র || World Sahitya Adda Sarod sonkha 1430

TATA Steel Job Recruitment 2024 || টাটা স্টিল কোম্পানিতে নতুন করে 6000 শূন্যপদে কর্মী নিয়োগ || TATA company job

মাধ্যমিক পাশেই ভালো মাইনের চাকরি,জলের ট্যাঙ্কি দেখাশোনার স্থায়ী কাজ || Jal Jeevan Mission Registration 2024