ভাগ্যের পরিহাস - দেবাশীষ দেবনাথ || Vagger Porihas - Debasish Devnath || Short Story || ছোটগল্প

 ভাগ্যের পরিহাস

দেবাশীষ দেবনাথ


          একটি সত্য কাহিনী

                               ১

আমি দিপক নাথ, পুলিশে চাকরি করি , চাকরি জীবনে নানা জায়গায় নানান অভিজ্ঞতা ও নানা ঘটনা আমার সামনে ঘটে যাওয়ার স্মৃতি থেকে তার একটা এখানে তুলে ধরলাম।

আমার তখন পুরুলিয়ায় পোষ্টিং।পুলিশ ক্যাম্পের পাশে পুলিশ কোয়াটারে কতগুলো পুলিশ  ভাড়া থাকত।তার মধ্যে কল্যাণ ভট্টাচার্য্য নামে একজন পুলিশ ভাড়া থাকত। তিনি দেখতে খুব সুন্দর ছিলেন, ওনার স্ত্রী ও মাও দেখতে খুব সুন্দরী  ছিলেন।আমি মাঝে মাঝে  ওদের বাড়িতে গিয়ে ভাল মন্দ খেয়ে আসতাম। আর ভাল মন্দ রান্না হলেও আমার ডাক পড়ত।কিন্তু একটা দুঃখ এই যে কল্যাণ দার কোনো সন্তান ছিলনা। তার পাশে থাকতেন অশোকনগর গোলবাজারের শিব নাথ বাগচি। শিবুদার দাদা ব্যাঙ্কে চাকরি করতেন। শিবু দা দক্ষিণ ২৪পরগণার জয়নগরের কোনো একটা থানার সাবইন্সপেক্টর। বাগচিদার বাড়িতেও দু তিনবার গিয়েছি।একদিন কি হল একটি জীর্ণশীর্ণ চেহারার ভদ্র মহিলা বাগচিদার সাথে সন্ধ্যাবেলায় ক্যাম্পে এল।কোথা থেকে এসেছে?

অশোকনগর থেকে এসেছে,রাতে ব্যারাকে কোথায় থাকবে, তাই শিবুদা কল্যাণদাকে বলে কল্যাণদার বাড়িতে রাখার ব্যবস্থা করে দিলেন। ।সঙ্গে একটি বাচ্চা ছেলে পাঁচ ছয় বৎসরের আর একটি মেয়ে দু তিন বৎসরের।

বাড়ি হচ্ছে বিহারের হাজারিবাগে রামগড় বলে একটি জায়গায়।তো রাত্রে কোথায় যাবে? সকালে বাসে তুলে দিলে চলে যাবে। তো আমি রাত্রে তখন কল্যাণদার বাড়িতে বসে ছিলাম। কল্যাণদার আসল বাড়ি বেহালা।

সেখানে আমি হাজার বার গিয়েছি, কত থেকেছি খেয়েছি। তারপর আমার  একটু ইন্টারেস্ট হল, আমি জিজ্ঞাসা করলাম আপনার বাড়ি বলছেন অশোকনগর তো আপনি এখানে কি করে এলেন?

তখন মহিলাটি বলল, আমার বাড়ি বাংলাদেশে, আমরা খুঁব গরীব ছিলাম, আমরা তিন বোন কারোরই বিয়ে সাদি হচ্ছেনা। ঠিক মত খাওয়া জুটত না।এটা ১৯৮৫—৮৬সালের কথা।তো আমার স্বামী বাংলাদেশ গিয়েছিল কাজ করতে,মানে ভারত থেকে অনেক ট্রাক ড্রাইভার বা্ংলাদেশে ট্রাক নিয়ে যায় তো।আমার বাবার সাথে পরিচয় হয়। তখন সে বলে আমার দেশে অনেক জমি জায়গা  এবং বাড়িতে কাজ কম্মের লোকও ঠিক মত নাই,দেখাশোনারও লোকের অভাব। আমার বাবাও তার কথায় পটে যায়, আমার বাবা ওই বিহারিটার সাথে আমাকে বিয়ে দিয়ে দেয়। দেখতে শুনতে বিহারীরা যেমন হয় তেমনই আর কি।বিয়ে করে আমাকে নিয়ে তার বাড়ি হাজারিবাগের রামগড় নিয়ে চলে আসে।গিয়ে দেখি আমাকে নিয়ে উঠল একটা মাটির বাড়ি।জমি জায়গা আছে । সেখানে জোয়ার আর ভুট্টা চাষ হয়।

জমিতে ধান টান হয়না, কিছু সব্জি টব্জি চাষ হয়।বাড়িতে গরু আছে দুধও হয়।শ্বশুর শাশুড়ি ছিল, দেওরও ছিল। কি আর করব আমি আমার ভাগ্যকে মেনে নিয়েছিলাম, কারন আমি তো বাঙালি, বাবা একটা বিহারী সঙ্গে আমাকে বিয়ে দিয়ে দিল। এই চিন্তা করে মাঝে মাঝে মনে মনে খুব কান্না করতাম। কিন্তু কিছু করার তো নেই, আমি তো বাংলাদেশ ছেড়ে ভারতে এসে পড়েছি। এবং একজন মহিলা হয়ে আমি কি করতে পারি।

কিন্তু কিছুদিন যাওয়ার পর বিহারিদের আসল চেহারাটা বেরিয়ে পড়ল। রাতদিন অত্যাচার মারধর। স্বামীটা মদ খায়। তাই সহ্য করতে না পেরে বাপের বাড়িতে গিয়েছিলাম, তো বাপের বাড়িতে ক দিন রাখবে, তারাও তো গরীব তাই শিবুদার সাথে পরিচয় ছিল তাই শিবুদাকে বললাম শিবুদা আমাকে পুরুলিয়া পর্যন্ত নিয়ে চলুন, ওখানে রাতটা থেকে সকালে বাস ধরে বাড়ি চলে যাব।তাই শিবুদার সঙ্গে এখানে আসা।তো আমার কি মনে হল আমি জিজ্ঞাসা করলাম যে এখান থেকে তোমার বাড়ি যেতে কত সময় লাগে। সে বলল এখান থেকে সকাল সাতটায় বাস ছাড়ে আর বিকাল পাঁচটা ছটায় রামগড় পৌছে দেয়। আমি জিজ্ঞাসা করলাম যে তোমাদের দিকে ডাকাতি টাকাতি কেমন হয়?বৌটা বলল না ডাকাতি হয়না তবে বিহারিরা তো গুন্ডাগিরি করে, ওখানে সবাই বিহারি, আমিই একমাত্র বাঙালি আমাকে খুব কষ্ট করে থাকতে হয়।

তো আমার কি ইন্টারেস্ট হল আমার তখন বয়েস কম  আমি বললাম আপনার সাথে যদি আমি যাই কোনো অসুবিধা হবে?           

                                     ২

বলল নানা এমনি কোনো অসুবিধা নাই।চলুন তা হলে আমার বাড়ি দেখে আসবেন। কল্যাণদা নিষেধ করল, ধ্যাত চিনিস না জানিস্  না কোথায় যাবি?

আমি ভাবলাম দেখিই না গিয়ে, পুলিশে চাকরি করি,পকেটে টাকা পয়সার অসুবিধা নাই, তাই সকাল বেলায় বাসে  উঠে মহিলাটার সাথে তাদের বাড়ি রামগড় রওনা হলাম। পুরুলিয়ার বর্ডার শেষ তারপর পাহাড় শুরু। পাহাড় আর পাহাড়, পাহাড় আর পাহাড়, যাচ্ছি তো যাচ্ছি এর যেন শেষ নেই।

মহিলাটি যা বলেছিল সে রকমই বিকাল পাঁচটার দিকে বাস থেকে নামলাম।তারপর যেখানে পাহাড় শেষ তারপর কিছু ফাকা মাটি, সেখানেই তার বাড়ি। বেশ কিছু সময় হেটে হেটে তারপর বৌটার বাড়ি গিয়ে পৌছালাম।

সেখানে গেলে বৌটার বাড়ির লোকজন জিজ্ঞাসা করল এটা কে?বৌটা আমাকে শিখিয়ে  নিয়ে গিয়েছিল যে বাড়ির লোকে জিজ্ঞাসা করলে বলবেন, আমার ভাই আমাকে পৌছে দিতে এসেছেন। আমাকে আগেই বলে দিয়েছিল যে আপনি বলবেন না যে আপনি পুলিশে চাকরি করেন।

আমি বললাম আমি অশোকনগরেই থাকি চাকরি করি পুরুলিয়াতে হেল্থ ডিপার্টমেন্টে। তো দিদি আসছিল আমাকে বলল আমি যখন পুরুলিয়ায় যাচ্ছি  দিদিকে একটু পৌছে দিতে।

যা হোক রাতে রুটি ডিম দুধ টুধ দিল খেলাম , কিন্তু ঠান্ডার দিন কি ঠান্ডা, আমাকে একটা কম্বল দিয়েছে তাতে কি আর ঠান্ডা মানে?

ঘরের মধ্যে বিশ্রী গন্ধ, তো বৌটা পরিস্কার করে দিল, একটা মাটির ভাড়ে আগুন জালিয়ে দিল।পরের দিন ভাত রান্না করেছে সাথে ফুল কফি টমাটো  ওখানে শিতকালে সব্জিটা বেশ হয়। থাকলাম খেলাম, এভাবে দু দিন কেটে গেল।

তো ঘুরে টুরে দেখলাম এলাকাটা পুরোই নকশাল এলাকা। কিন্তু এদিকে তখন মাওবাদী নেই। তো ওরা বলল ওরা মাঝে মাঝে জঙ্গল থেকে নকশালরা  আসে আর বেশ কিছু ভেট নিয়ে চলে যায়।

এভাবে দিন দুই ওখানে ঘুরলাম ফিরলাম।দুদিন পরে রাতে ঘুমিয়ে আছি তো তখনও আমার ঘুম ঠিক গাঢ় হয়নি, তো বাপ বেটা আলোচনা করছে, যে ও আদমি কৌন হ্যায় জরুর জানানা কা সাথ কুছ হ্যায়। 

তাই রাতের বেলা ভয় লাগল যে নকশাল এলাকা এরা নকশাল কিনা কে জানে?

আমাকে আবার মার্ডার টার্ডার করে দেবে নাকি। যা হোক রাতটা জেগে জেগে ঘুমালাম, ঘুম কি হয় নাকি ওই আরকি ঝিমালাম।

তারপর সকালে ঘুম থেকে উঠে বললাম উঠে বললাম ভাই হাম ঘর যা রাহা হ্যায়।

বলল যা রাহা হ্যায় আমি বললাম হা যা রাহা হায়।ওখান থেকে বেরিয়ে বাস ধরে পুরুলিয়া এসেছি।

এর পর পাঁচ সাত বছর কেটে গেছে।

তখন আমি আবার খড়গ্পুরে চলে এসেছি। তো কোনোও কারনে আমি একদিন আদ্রা স্টেশনে কাজে গিয়েছিলাম, তো দেখছি ওই মহিলা ,দুটি বাচ্চাকে স্টেশনে শুইয়ে দিয়ে কলের থেকে জল আনতে গিয়েছে। বড় বাচ্চাটা তখন প্রায় দশ বারো বছর হবে ছোটোটা আর একটু ছোটো।

মহিলাটার তখন উস্কো খুস্কো চুল প্রায় পাগলির মত চেহারা, আমি দেখে চিনতে পেরেছি।তখন আমি তার কাছে গেলাম গিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম হামকো পহেচানতা হায়, সে বলল নেহিতো, তো আমি বললাম 

আচ্ছাছে দেখ, তুমকো ঘর অশোকনগরমে হ্যায় না?

তো বৌটা বলল যে হা বাবু অশোকনগরমে হ্যায়।

আমি বললাম তুমকো ইয়াদ নেহি একরাত তুম পুরুলিয়ামে থা, তুমকো সাথ তুম্হারা ঘর গিয়া থা।

তখন বলল ও—দীপক বাবু?

                                    ৩

আমি জিজ্ঞাসা করলাম তোমার এই অবস্থা কেন? তখন ও বলল কি বলব বাবু আমার স্বামীর অত্যাচারটা দিন দিন বাড়তে বাড়তে এমন পর্যায়ে পৌছাল যে আমি আর সহ্য করতে পারলাম না, তো একদিন বাধ্য হয়ে পালিয়ে আসলাম।

আসার পথে ট্রেনে এক বাঙালির সাথে পরিচয় হয়েছিল, সে আদ্রাতে থাকে।

সে বলল এখন কোথায় যাবি চল আমার সাথে, আমার কাছে থাকবি,তো তাকে বিশ্বাস করে তার কাছে তার সাথে আসলাম। সে আমাকে মাস ছয়েক তার কাছে রাখল, আমাকে সে সম্পুর্ন ব্যবহার করল।এখন তার খাই তার পরি তাকে তো সন্তুষ্ট রাখতেই হয়।এর মাস ছয়েক পর একদিন সে পালিয়ে গেল।কোথায় উধাও হয়ে গেছে খুঁজে পাওয়া যায়নি।

আমি আর কি করি আদ্রা স্টেশনের পিছনে একটা ঝুপড়ী মত বানিয়ে তার ভিতর থাকি,আর দিনের বেলায় স্টেশনে ভিক্ষা করি, আমি বললাম ছেলেটা?বলল ছেলেটা ট্রেনে ঝাট টাট দেয়।আর মেয়েটা আমার কাছে থাকে। দিনের বেলায় স্টেশনে থাকি আর রাত হলে ঝুপড়িতে যাই রান্না বান্না করি খাই দাই, আবার দিনের বেলায় হলে স্টেশনে এসে বসি। এভাবেই চলে যাচ্ছে,। 

তো আমি বললাম তো তুমি অশোকনগর যাওনি? সে বলল গিয়েছিলাম, কি হবে –বাবা মারা গিয়েছে, মা মারা গিয়েছে, একটা ভাই ছিল বিয়ে করেছে। তো গিয়েছিলাম আমাকে ঢুকতেই দিলনা।

তাই আবার এখানে চলে আসলাম। এখন এখানেই থাকি, তো আমি পকেট থেকে একশ টাকা রের করে তাকে দিয়ে আসলাম।যে এটা রাখ। একটা কাপড় টাপড় কিনে নিও।

এঘটনাটা ১৯৯২-১৯৯৩সালের।

তারপর অনেকদিন ২০১০সালে আঠারো বছর পরে আবার আদ্রা গিয়েছিলাম পি এম ডিউটিতে, মমতা ব্যানার্জি এসেছিল,মমতা ব্যানার্জি তখন রেল মিনিস্টার।তখন মাওবাদী যুগ চলছে।

তো রাতে ব্যারাকে শুয়ে আছি হঠাৎ কি মনে হল, ভাবলাম একটু চা খেয়ে আসি। হাটতে হাটতে গেলাম স্টেশনের দিকে।

তারপর চা খাওয়া হলে ওয়েটিং রুমে বসে আছি,তো দেখছি ওই মহিলার ছেলেটা ওখানে যে সব ভিখারিরা থাকে, তাদের সঙ্গে বসে গাঁজা খাচ্ছে, তো আমি দেখে চিনতে পেরেছি।

ছেলেটা তখন বেশ লম্বা চওড়া হয়ে গেছে, দাড়িগোঁফ উঠেছে।আমি বললাম এই শোন তুই আমাকে চিনতে পারছিস?তখন ছেলেটার বয়স প্রায় চব্বিশ পঁচিশ হয়ে গেছে।লম্বায় খুঁব একটা বাড়েনি।তখন ও বলল না, আমি বললাম তোর বাবার বাড়ি রামগড় না? তোর মামাবাড়ি অশোকনগরে না।

ছেলেটি বলল হ্যা, আমি জিজ্ঞাসা করলাম তোর মা কোথায়?ছেলেটি বলল মা তো মেদিনীপুর জেলে আছে।আমি জিজ্ঞাসা করলাম কেন, সে বলল আমার পরের বাবাটা আবার ঘুরে আসছিল।আবার আমাদের সঙ্গে থাকত, মদ টদ্ খেয়ে খুঁব অত্যাচার করত।

মা সহ্য করতে না পেরে একদিন পাথর দিয়ে মাথা থেতো করে দিয়েছিল।

সেই কেসে  মার যাবজ্জীবন জেল হয়ে গেছে। সেই থেকে মা জেলে আছে।জিজ্ঞাসা করলাম তোর বোনটা?বলল বোনটার তো বিয়ে হয়ে গিয়েছে, আসানসোলে আছে।আমি জিজ্ঞাসা করলাম জামাইটা ভাল?বলল হ্যা ভাল।মাঝে মাঝে আসে। কি করে জামাইটা?ওই কন্ট্রাটটারের আন্ডারে কাজ টাজ করে, তুই গাঁজা খাচ্ছিস কেন?বলল কি করব বাবু সারাদিন কাজ টাজ করি ওতেই সারাদিন চলে যায় তারপর একটু নেশা টেশা করি।থাকিস কোথায়?এই স্টেশনেই তো আছি বহু বছর ধরে।

আমি বললাম তুই মেদিনীপুর জেলে যাস?বলল যাই মাঝে মাঝে টাকা পয়সা দিয়ে আসি।

আমি যখন মেদিনীপুর  এ পোষ্টিং হলাম এই জি আর পি থেকে, ওখানে তিন বছর ছিলাম, তো আমাকে তো প্রতিদিন আসামি  নিয়ে  কোর্টে যেতে হত।

তমলুক কোর্ট, ঝাড়গ্রাম কোর্ট, মেদিনীপুর  কোর্ট বাকুড়া কোর্ট।

                                   ৪

তো একদিন হঠাৎ মনে পড়ল যে এই জেলেই তো মহিলাটা আছে।ওখানে জেল কয়েদি গুলো সমস্ত লেখালেখি করে।জেলার বাবুর সামনে একটা অফিস আছে ওখানে।

এই যে ঝাড়গ্রাম কোর্ট কটা আসামি আছে? দেখা গেল কারোও দশটা আসামি আছে কারও পাঁচটা আসামি আছে। ওরা সব লেখালেখি করে নিত।

ওখানে কাঞ্চন বলে একটা ছেলে ছিল, কাকাকে মার্ডার করে যাবজ্জিবন জেল খাটছে। ছেলেটা খুব ভাল।আমি ঘন ঘন যাওয়াতে আমার সাথে বেশ খাই খাতির হয়ে গেছে। 

আমি বললাম কাঞ্চন তোর সাথে একটা কথা আছে।এখানে একজন মহিলা তার স্বামীকে মার্ডার করে জেলে আছে, তার সাথে একটু দেখা করব, তোর দ্বারা কি দেখা করিয়ে দেওয়া সম্ভব হবে? ও বলল স্যার চা খাবেন?আমি বললাম না চা খাবনা।বেলা দশটা বেজে গেছে যাদের যাদের কোর্ট আছে তাদের ডাকতে পাঠিয়েছে, নানান কোর্টে নাম ধাম সই সাবুদ  করে কোর্টে চালান দেবে। 

আমি বসে আছি,আমি বললাম এখানে একটা আসামি আছে, সে আদ্রায় ছিল সে তার স্বামীকে পাথর দিয়ে মার্ডার করে দিয়েছিল। তার যাবজ্জিবন  জেল হয়ে গেছে, তার একটা ছেলে আছে স্টেশনে ভিক্ষা টিক্ষা করে।

কাঞ্চন কিছুক্ষণ মনে করল, তারপর বলল এরকম এরকম দেখতে? আমি বললাম হ্যা , তো সেতো ব্রেইন খারাপ হয়ে গেছে, কাউকে চিনতে পারেনা। কাঞ্চন বলল দেখবেন?আমি বললাম হ্যা একটু দেখতে ইচ্ছা করছে।

তারপর মেয়েদের ওয়ার্ডের দিকে নিয়ে গেল।তারপর একটা সেলের দিকে দেখিয়ে বলল ওই যে ওইটা?আমি বললাম হ্যা ওইটা, দেখি চুল টুল পেকে গিয়েছে , আমি বললাম এই লক্ষী আমাকে চিনতে পারছ?

সে বলল কৌন হ্যায় বাবু?

আমি তখন বললাম আমি সেই দীপকবাবু তুমারা সাথ পুরুলিয়া গিয়েছিলাম।

তখন লক্ষী বলল ও—-দীপক বাবু, আমি বললাম তুম ক্যায়া কিয়াথা, হাম তো মরদকো পাথ্থরছে মার দিয়া। তুমারা লেড়কি কিধার হ্যায়, ও বলল ওতো মালুম নেহি।তুমারা ল্যাড়কা কিধার হ্যায়, ওতো হ্যায়, আতা হ্যায় কভি কভি। দেখে আমার খুব খারাপ লাগলো। কিন্তু আমি আর কি করবো, এর সমাধানের পথ আমার জানা নেই। তারপর কাঞ্চনকে সঙ্গে নিয়ে বেরিয়ে আসলাম।এই লক্ষী এখনও হয়ত মেদিনীপুর জেলে পাগলিনী বেশেই আছে। জানিনা বিধাতার কি ইচ্ছা।


Comments

Popular posts from this blog

শারদীয়া সংখ্যা ১৪৩০ || সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র || World Sahitya Adda Sarod sonkha 1430

TATA Steel Job Recruitment 2024 || টাটা স্টিল কোম্পানিতে নতুন করে 6000 শূন্যপদে কর্মী নিয়োগ || TATA company job

মাধ্যমিক পাশেই ভালো মাইনের চাকরি,জলের ট্যাঙ্কি দেখাশোনার স্থায়ী কাজ || Jal Jeevan Mission Registration 2024