অদৃশ্য - সাহানাজ ইয়াসমিন মুনমুন || Odrishya - Sahanaj Yasmeen moonmoon || Short Story || ছোটগল্প

 অদৃশ্য

সাহানাজ ইয়াসমিন মুনমুন


একদা এক সময় নিশ্চিন্তপুর গ্রামে, সুন্দরলাল নামে এক জমিদার বাস করতেন। তিনি অত্যন্ত দয়ালু ও সৎ ব্যক্তি ছিলেন। অন্যদিকে জমিদার বাবুর একমাত্র ভাই অমরলাল যেমন খুব লোভী আর হিংসাপরায়ন তেমনই অত্যাচারী ও দুশ্চরিত্র ছিলেন।জমিদার বাবু ও তাঁর স্ত্রী সত্যবতি ও তাদের দুই ছেলে,রতন,সনাতন এবং তাদের একমাত্র কন্যা সুতপাকে নিয়ে তিনি খুব সুখেই ছিলেন। জমিদারবাবু তার ছেলে মেয়েদের অত্যন্ত ভালোবাসতেন।তিনি সবসময় তাদের হাসি,খুশি আনন্দে রাখার চেষ্টা করতেন। মেয়েকে তিনি একটু বেশিই আদর,যত্ন করতেন। মেয়েও বাবা অন্তপ্রাণ! 

রতন ও সনাতন দুই ভাইও তাদের বোনকে খুব ভালোবাসতো। অন্যের বিপদে জমিদার বাবু সবসময় ঝাঁপিয়ে পড়তেন। কখনো কোনো অন্যায়কে তিনি প্রশ্রয় দিতেন না। 

গ্রামের সকলেই জমিদার বাবুকে খুব সম্মান করতেন এবং সকলে তাঁর কথার মান্যতা দিতেন।অমরলাল জমিদার বাবুর ভাই হলেও আচার,আচরণে সম্পূর্ণ তার দাদার বিপরীত।

অমরলাল সবসময় তার দাদার বিশ্বাসের সুযোগ নিয়ে তার দাদার ক্ষতি করার চেষ্টা করতেন। জমিদার বাবুর বিপুল সম্পত্তি নিজের নামে করে নেওয়ার জন্য বিভিন্ন ফন্দি কষতেন।দাদার সামনে এমন মিষ্ট আর বিনয়ী ব্যবহার করতেন যে,দাদা তার ভাইকে কখনো সন্দেহ করতেই পারবেন না।কিন্তু পেছন থেকে জমিদার বাবুকে আক্রমণ করার দুষ্ট প্রবৃত্তি সে মনের মধ্যে পুষে রাখতো। জমিদারি দেখাশোনার দায়িত্ব ছিল অমর লালের উপর। জমিদার বাবু কখনো কোনো হিসেব চাইতেন না তার ভাইয়ের কাছে। কিন্তু একদিন অমর লাল গ্রামের সুপর্ণা নামের একটি মেয়েকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে যায় জমিদারবাবুর বাগানবাড়িতে এবং সেখানে সে মেয়েটির শ্লীলতা হানির চেষ্টা করে। গ্রামের সকলের কাছে এই খবর পৌঁছতেই তারা মেয়েটিকে নিয়ে জমিদার বাবুর কাছে এই ঘটনার বিচার চাইতে যায়।

জমিদার বাবুর উপস্থিতিতে গ্রামে বিচার বসলো এবং সেখানে তিনি সবার সামনে তার ভাই অমর লালকে কঠোর শাস্তি দিলেন।এবং মেয়েটির কাছে তার কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা চাইতে বললেন। অমরলাল সবার সামনে ক্ষমা চাইলেও লজ্জায়,অপমানে সে আরো বেশি উত্তেজিত ও হিংসাত্মক হয়ে উঠে।তার দাদা বেঁচে থাকতে সে, কখনোই কোনো অন্যায় কাজ করে সে,যে পার পাবে না,সেটা অমরলাল ভালো মতই জানে।তাই সর্বাগ্রে সে তার দাদাকে তার রাস্তা থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য উঠে পড়ে লাগলো। কিন্তু জমিদার বাবুকে চিরতরে শেষ করে দেওয়ার আগে তাঁর বিপুল সম্পত্তি সে নিজের নামে করে নিতে হবে,একদিন তাই নায়েব মশাইকে সঙ্গে নিয়ে সে ছক কোষতে বসলো।কি করে জমিদার বাবুর সব সম্মত্তি নিজের নামে করে নেওয়া যায়,সেই নিয়ে যখন তারা আলাপ আলোচনা করছিলো ঠিক সেই সময় সুপর্ণা অর্থাৎ অমরলাল যার শ্লীলতা হানি করেছিল,সে কোনোভাবে আড়াল থেকে তাদের কথা শুনে নেয়। সুপর্ণা সেসব কথা শোনা মাত্রই সেখান থেকে যখন দৌড়ে যাচ্ছিল জমিদার বাবুর বাড়ি,অমলের কূট চক্রান্তের ব্যাপারে জমিদার বাবুর কাছে সবটা জানাতে, সেই সময় অমল কোনো ভাবে বুঝতে পেরে সুপর্ণার পিছু নিয়ে তাকে ধরে ফেলে এবং প্রমাণ লোপাটের জন্য তার গলা চেপে শ্বাসরোধ করে তাকে মেরে সেখানে থাকা একটি শিমূল গাছে তাকে এমন ভাবে ঝুলিয়ে দেয় যেনো সুপর্ণা নিজেই আত্মহত্যা করেছে। তারপর অমর লাল সেখান থেকে পালিয়ে যায়। ঘটনার সময় কেও ছিলনা।গ্রামের সবাই ভাবলো সুপর্ণা সেদিনের ঘটে যাওয়া নোংরা ঘটনার জন্য লজ্জায়,অপমানে আত্মহত্যা করেছে। আসল সত্যটা কেও জানতে পারলো না।কিছুদিন পর অমরলাল জমিদার বাড়িতে যায়,দুপুরের খাওয়া দাওয়া সেরে জমিদার বাবু বিশ্রাম নিচ্ছেন আর জমিদার গিন্নি সত্যবতী,জমিদার বাবুকে পান সেজে দিচ্ছেন এমন সময় অমরলাল প্রবেশ করলো অন্দরে।সত্যবতী অমরলালকে কেদারায় বসতে দিয়ে বলে উঠলেন," কি ব্যাপার ঠাকুর পো! হঠাৎ এই সময় তোমার আগমন?"

অমরলাল সত্যবতিকে একটু বাইরে যেতে বললেন।

সত্যবতী প্রস্থান করলে,অমরলাল জমির একটি কাগজ নিয়ে তার দাদার হাতে দিয়ে সেখানে সই করতে বলে জমিদার বাবু কাগজে কি লেখা আছে

না পড়েই সই করে দেন।এরপর অমরলাল সেখান থেকে চলে যায়। সত্যবতী জমিদার বাবুর কাছে অমরলালের আগমনের কারণ জানতে চাইলে তিনি কাগজে সইয়ের ব্যাপারে বলেন। সত্যবতীর মনে একটা খটকা লাগলো। না পড়ে সই দেওয়া জমিদার বাবুর উচিৎ হয়নি সেকথা তিনি জমিদার বাবুকে বললেন। কয়েকদিন পর অমরলাল জমিদার বাবুর সমস্ত সম্পত্তির দখল নিয়ে নিলেন। জমিদার বাবুর কাছে সম্পত্তি বলতে পড়ে রইলো শুধু ওই বাড়িটুকু।

জমিদার বাবু তার নিজের ভাইয়ের এই বিশ্বাস ঘাতকতা সহ্য করতে না পেরে অসুস্থ হয়ে পড়লেন।

জমিদার বাড়িতে দুঃখের ছায়া নেমে আসলো।

কিছুদিন এই ভাবেই কেটে যাওয়ার পর....... 

একদিন নিশ্চিন্তপুর গ্রামে এক বিশাল মেলার আয়োজন হলো।আর জমিদারবাবু কাছে তার তিন ছেলে মেয়ে গিয়ে আবদার করলো তারা মেলায় ঘুরতে যাবে। জমিদার বাবু তাদের সম্মতি দিলেন।সেখানে গিয়ে তারা সবাই খুব আনন্দ আর উল্লাসে মেতে উঠলো। তারা সারাদিন মেলায় ঘোরাঘুরি করার পর জমিদার বাবুর মেয়ে সুতপা একটি কথা বলা পুতুল কিনে তার দুই দাদার সঙ্গে বাড়ি ফিরলো। সুতপা পুতুলটি পেয়ে খুব খুশি।সে তার নিজের ঘরে গিয়ে পুতুলটির সঙ্গে একান্ত মনে কথা বলতে লাগলো।এরপর রাত্রি হলে,সুতপা পুতুলটি তার পাশে নিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে।

মাঝরাত্রির দিকে যখন তার একটু ঘুম ভাঙলো,

তখন সে তার বিছানা হাতড়াতে শুরু করে,কিন্তু কি অদ্ভুত ব্যাপার!পুতুলটি সেখানে আর নেই।

সে অবাক হয়ে খোঁজাখুঁজি শুরু করে দেয়।

ক্ষণিকের জন্য সে ভবলো তার দুই দাদা হয়তো তার সাথে মজা করে পুতুল সরিয়ে নিয়েছে, তাই সে দাদাদের ঘরে গিয়ে খুঁজতে লাগলো কিন্তু কোথাও পুতুলটি নেই। দাদারাও ঘুমে বিভোর।তবে কোথায় থাকতে পারে পুতুলটি সে ভাবতে লাগলো।পুতুলের তো হাত পা নেই!যে হেঁটে কোথাও চলে যাবে এই ভেবে সে খুব দুঃখ মনে চুপ করে ঘরে তার বিছানার উপর বসে রইলো। ঠিক কিছুক্ষন পর তার কানে একটি অদ্ভুত কান্নার আওয়াজ আসতে শুরু করলো। তখন অনেকটা গভীর রাত্রি! বাড়ির অন্যরা সবাই ঘুমোচ্ছে।সুতপা বলে উঠলো,"কে ওখানে"? "কে?" এই বলে সে ঘর থেকে বেরিয়ে কান্নার আওয়াজ'টিকে অনুসরণ করে এগিয়ে গেলো।

কিন্তু কোথাও তো কেও নেই! আবার সে তার ঘরে ফিরে গেলো। আবারও কিছুক্ষণ পর একই কান্নার আওয়াজ আসতে লাগলো তার কানে।এবার সুতপা একটু ভয় পেলো।এবং সে দৌড়ে তার মায়ের ঘরে যেতেই,তার হঠাৎ মনে হলো,পুতুলটি তার আসে পাশেই যেনো কোথাও সে একপলক দেখলো! তৎক্ষণাৎ পিছু ফিরে চাইতেই সে একটি কালো বিড়াল দেখতে পেলো। কিন্তু সুতপা যখন বিড়ালটিকে তাড়তে গেলো,ঠিক তখনই বিড়ালটি অদ্ভুত ভাবে তার স্বরুপ বদলে একটি খরগোশে পরিণত হয়ে গেলো।সুতপা এবার ভয়ে আতঙ্কে তার মায়ের ঘরে ছুটে পালালো।তার মাকে জড়িয়ে ধরে সে কাতরাতে শুরু করলো। তার মায়ের ঘুম ভেঙে গেলো এবং তাকে তার ভয়ের কারণ জিজ্ঞেস করলে,সুতপা তার মাকে ঘটনাটি জানায়।সুতপার মা হেসে বললেন, "ওসব কিছুনা সোনা,ওটা আসলে,তোমার মনের ভুল।ঘুমের ঘোরে কি দেখতে কি দেখেছো,ঘুমিয়ে পড়ো এখন।সকালে দেখবে আর কিছু মনে নেই!" এই বলে তিনি মেয়েকে জড়িয়ে ঘুমিয়ে পড়লেন। কিন্তু সুতপার চোখে ঘুম নেই সে ভাবতে লাগলো তার পুতুল হারিয়ে যাওয়া এবং বিড়ালের খরগোশে পরিণত হওয়া এটা কোনো স্বাভাবিক ব্যাপার নয়। এতদিন তো তাদের বাড়িতে এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। এই ভাবনায় সে সারারাত্রি বিছানায় শুয়ে শুয়ে জেগে রইলো সারারাত। সকাল হলে তার ঘরে গিয়ে দেখে পুতুলটি

তার বিছানাতেই আছে। সে অনেকটা অবাক আর স্তভিত হলো। তারপর তার নিজেরও মনে হতে লাগলো তার মা হয়তো ঠিকই বলেছেন "তার মনেরই ভুল ছিল!"

সারাদিন সুতপা আবার পুতুলটি নিয়ে খেলা করার পর রাত্রিবেলায় যখন আবার ঘুমিয়ে পড়লো তখন

আগের রাত্রির মত একই ঘটনা ঘটলো।পুতুলটি বিছানা থেকে আবার উধাও হয়ে গেলো দেখে সুতপা 

যখন খোঁজাখুঁজি করতে লাগলো সে দেখতে পেল 

এক ভয়ঙ্কর দৃশ্য! পুতুলটির হাত, মুখ পুরো রক্ত মাখা আর একপা একপা করে বাড়ির উঠোন পেরিয়ে তার ঘরের দিকে আসছে। সুতপা ভয়ে,আতঙ্কে সেখান থেকে তার মায়ের ঘরে ছুটে পালায় এবং তার মাকে বিষয়টি বলে। তখনই তার মা সুতপাকে সঙ্গে নিয়ে তার ঘরে গিয়ে দেখলো পুতুলটি আগের মতই আছে। কোথাও কোনো রক্তের ছাপ নেই!

মা সুতপাকে আগের দিনের মতোই একই কথা বললেন। সুতপা সারারাত জেগে পুতুলটির ব্যাপারে 

ভাবতে থাকলো। এই পুতুল কোনো সাধারণ পুতুল নয় সে বুঝতে পারলো।পরদিন সকালে শোনা গেলো নায়েব মশাই যিনি,জমিদার বাবুর সম্পত্তি অন্যায় ভাবে অমলবাবুর নিজের নামে করে নেওয়ার ব্যাপারে তাকে সাহায্য করেছিলেন।জমিদার বাবুর সঙ্গে তিনিও বিশ্বাস ঘাতকতা করেছেন।অমলবাবুর অসৎ উদ্দ্যেশে তিনি সঙ্গ দিয়েছিলেন। সুপর্ণার মৃত্যুর জন্য তিনিও সমান ভাবে দায়ী ছিলেন।সেই নায়েব মশাই গলা কাটা রক্তাক্ত ও ক্ষত,বিক্ষত অবস্থায় বাগান বাড়ির কাছে পড়ে রয়েছে। 

পুতুলটির মধ্যে যে এক অলৌকিক ক্ষমতা আছে সেই ব্যাপারে সুতপার মনে সন্দেহ হতে লাগলো।

কিন্তু পুতুলটি সুতপার বা জমিদার বাড়ির কোনো

কোনো ক্ষতি চাইছে না সেটা সে এই কদিনেই বুঝেছে। সুতপা যেহুতু পুতুলটিকে খুব ভালোবাসে,

তার সাথে খেলা করে,কথা বলে সময় কাটায়,সেই জায়গা থেকেও কোথাও গিয়ে তার মনে পুতুলটিকে নিয়ে একটু সন্দেহ,একটু ভয় হলেও তার মনের মধ্যে কোথাও সাহসটুকুও ছিল।পুতুলটি কোনোদিন তাদের কোনো ক্ষতি করবেনা সে ব্যাপারেও সে নিশ্চিত হতে পেরেছিল। যাইহোক নায়েব মশায়ের অস্বাভাবিক মৃত্যুতে গ্রামে একরকম হইচই শুরু হয়ে গেলো।জমিদার বাড়িতেও খবর এলো,জমিদার বাবু

তার অসুস্থ শরীর নিয়ে গ্রামে বের হলেন।

তাঁর এতদিনের সম্পর্ক নায়েব মশাইয়ের সাথে তিনিও শোকাহত হলেন।মৃত্যু রহস্য কেও উদঘাটন করতে পারলেন না। 

কয়েকদিন পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হল। 

সুতপা লক্ষ্য করলো পুতুলটি রাত্রে আর কোথাও যাচ্ছে না সে রাত্রিবেলায় প্রায় জেগে,জেগে সেটা লক্ষ্য করেছে। তার মনে আবারও বিশ্বাস জাগতে 

শুরু করলো। সে ভাবলো সে হয়তো পুতুলটিকে অহেতুক সন্দেহ করেছে। পুতুলটির রক্ত মাখা মুখটি

তার দেখার হয়তো ভুল ছিল। হয়তো তার দুই দাদা

তার সাথে মজা করে পুতুলটি রাত্রে তার বিছানা থেকে সরিয়ে নেয় এবং আবার রেখে যায়। 

সুতপার সঙ্গে তার দুই দাদার বয়সের একটা ফারাক থাকলেও,তারা সুতপার সঙ্গে সবসময় ঠাট্টা মজা করে থাকতো।জমিদার বাবুর দাম্পত্য জীবনে দীর্ঘদিন কোনো সন্তান ছিল না। প্রায় মাঝ বয়সে দুই ছেলে সনাতন আর রতনের জন্ম। সুতপার জন্ম তাদের অনেক পরে। অমলবাবু জমিদার বাবুর ভাই

হলেও নিজের সন্তানের চোখে দেখতেন,সন্তানের মত

স্নেহ ভালবাসা দিয়ে তিনি তার ভাইকে বড় করেছেন।

জমিদার বাবুর ঠাকুরদার অমতে তাঁর বাবা বিয়ে করেছিলেন বলে তিনি তাঁর সমস্ত সম্পত্তি তাঁর একমাত্র নাতি জমিদার বাবুর নামে করে দিয়েছিলেন। অমলবাবুর জন্ম তখন হয়নি। তাদের দুই ভাইয়ের মধ্যে বয়সের বিস্তর ফারাক। অমরবাবুর মনে হোত,জমিদার বাবুর সমস্ত সম্পত্তি

একদিন তাঁর সন্তানরাই পাবে। কিন্তু জমিদারবাবু 

কখনোই অমরবাবুকে বঞ্চিত করার কথা ভাবতেন না। আর অমরবাবু এতটাই লোভী ছিলেন যে দাদার পুরো জমিদারিটাই সে নিজের দখলে চাইতো। আর শেষ পর্যন্ত জমিদার বাবুকে ঠকিয়ে সেটাই সে করে ছাড়লো। 

নায়েব মশায়ের মৃত্যুর প্রায় কিছুদিন পরই,গ্রামে আবারও শোরগোল পড়ে গেলো!

অমরলাল আত্মহত্যা করেছে বলে চারিদিকে রব উঠলো।জমিদার বাবু সংবাদ পাওয়া মাত্রই সেখানে ছুটে গেলেন। জমিদার বাবু ও গ্রামের সবাই আশ্চর্যজনক হয়ে দেখলো,ঠিক ওই জায়গায়,এবং

ওই একই গাছে,সুপর্ণা যেভাবে ঝুলে আত্মহত্যা করেছিল সেইরূপ অমরলাল গলায় ফাঁস দিয়ে ঝুলে রয়েছে।অমরলাল কেনো আত্মহত্যা করবে?তার তো আত্মহত্যার কোনো কারণ নেই!তার হাতে পুরো জমিদারিটাই রয়েছে। সে এখন গ্রামের জমিদার। তাহলে,এতদিনে কেনই বা অমরলাল কোনো কারণ ছাড়া আত্মহত্যা করতে যাবে?এটা খুব আশ্চর্যের একটা ব্যাপার!সবার মনে নানা রকম প্রশ্নের উদয় হতে লাগলো। 

জমিদার বাবু তাঁর ভাইয়ের মৃত্যুতে কান্নায় ভেঙে পড়লেন। শোক ও দুঃখ নিয়ে তিনি যখন সেখান থেকে তাঁর বাড়ি ফিরলেন তখন তাঁর ঘরে প্রবেশ মাত্রই তিনি দেখতে পেলেন বিছানার পাশে, তাঁর আরাম কেদারাটির উপর কতকগুলো দলিল!

তাঁর সমস্ত সম্পত্তির দলিল!তিনি হতবাক হয়ে গেলেন! জমিদার গিন্নি সুতপাকে ডেকে তিনি বললেন,"এই দলিল গুলো তো অমরলালের কাছে ছিল এখানে কিভাবে এলো?" সত্যবতী কিছুই জানে না এ ব্যাপারে সেও অবাক হয়ে রইলো!

তবে কি অমরলাল তাঁর ভুল বুঝতে পেরে এখানে দলিল গুলো রেখে গিয়ে আত্মহত্যা করেছে! জমিদার বাবু আরও কান্নায় ভেঙে পড়লেন! 

সেই মুহূর্তে সুতপাও ঘরে প্রবেশ করলো। সে বললো

" পুতুলটি বাড়িতে কোথাও নেই! রাত্রি বেলায় সে গভীর ভাবে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম,তারপর সকাল বেলা

থেকে খুঁজছি এখন পর্যন্ত পুতুলটিকে বাড়ির কোথাও দেখছি না"! জমিদার বাবু এবার রেগে গিয়ে

মেয়ের উপর একটু চিৎকার করে উঠলেন! " তুমি এখন পুতুল নিয়ে পড়ে আছো? তোমার কাকা মারা গেছেন!" সুতপা অবাক আর হতভম্ব হয়ে চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলো!! 

তারপর ঐ বাড়িতে পুতুলটি আর কোনোদিন দেখা যায় নি!


সুপর্ণা পুতুলরূপে জমিদার বাড়িতে ফিরে এসে তার অসম্পূর্ণ কাজটি সম্পুর্ণ করে দিয়ে গেলো! 

তাঁর মৃত্যু যেমন সবার চোখে একটা রহস্য ছিল তেমনই অমরলালের মৃত্যু সারা গ্রামবাসীর কাছে রহস্যই থেকে গেলো! সে জমিদার বাড়িকে যেমন রক্ষা করলো তেমনই তাঁর মৃত্যুর প্রতিশোধও সে নিজেই নিল! সে এখন পুরোপুরি মুক্ত,নিশ্চিন্ত!

Comments

Popular posts from this blog

শারদীয়া সংখ্যা ১৪৩০ || সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র || World Sahitya Adda Sarod sonkha 1430

TATA Steel Job Recruitment 2024 || টাটা স্টিল কোম্পানিতে নতুন করে 6000 শূন্যপদে কর্মী নিয়োগ || TATA company job

মাধ্যমিক পাশেই ভালো মাইনের চাকরি,জলের ট্যাঙ্কি দেখাশোনার স্থায়ী কাজ || Jal Jeevan Mission Registration 2024