হরেন দাস - কাহার মল্লিক || Haren Das - Kahar Mallik || অনুগল্প || Short story || Prose
হরেন দাস
কাহার মল্লিক
হরেন দাস একজন ডাহা মাতাল। মাতাল হলেও অত্যন্ত সরল মনের মানুষ। সে অন্ধকারকে খুব ভয় পায়। অন্ধকারে পড়লেই সে বিকট কান্না শুরু করে দেয়। সে নেশাবস্থায় থাকুক বা সাধারণ অবস্থায় থাকুক, অন্ধকারে তার খুব ভয় হয়। সে অন্ধকারে পড়ে অনেকবারই মূর্ছা গিয়েছে। তার একট বিশেষত হল, রাস্তায় চলাকালীন কোনও গাড়ির হর্ন বাজলে তার কাছে অসহ্য হয়ে উঠে। হরেন হর্ন বাজানোকে ড্রাইভারদের চরম ঔদ্ধত্য ভাবে। তখন সে গাড়ির সম্মুখেই থাকে, মধ্য রাস্তা থেকে একটুও সরে দাঁড়ায় না। গাড়ি থামলে হরেন দাস বুক চাপড়ে বলে- “আমার নাম হরেন, আর কে রে আমার সামনে হরেন বাজাস। তোর সাহস তো কম নয়।” এই উদ্ভট কীর্তিকলাপের জন্য ড্রাইভারদের হাতে কত যে প্রহার খেয়েছে তার কোনও ইয়ত্তা নেই। এই নিয়ে তার সহকর্মিরাও অনেকবার অনেক ঝামেলায় জড়িয়েছে, এমনকি দু-একদিনের জন্য জেল ভোগও করেছে।
হরেন দাস ছত্রিশগড়ে হরেক মালের ব্যবসা করে। সাইকেলে হরেক মাল ফেরি করে বেড়ায়। প্রতিবছরই হরেন দাসরা বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা করে রোজগারের উদ্দেশ্যে সুদূর ছত্রিশগড়ে পাড়ি দেয়। একদিন হরেন দাস মদ পান করে ব্যবসার উদ্দেশ্যে সাইকেল নিয়ে বের হয়। সাইকেল ভর্তি হরেক মাল তার। রাস্তার মাঝখানে সাইকেল চালাতে থাকে। গাড়ির হর্ন কানে গেলেও নিজ সাইডে যায় না। একটা পুলিশের গাড়ি হরেনের সাইকেলকে ওভার টেক করে এবং গাড়ি থামায়। পুলিশ জানতে পারে, সাইকেল চালক মদ্যপ অবস্থায় রয়েছে। ছত্রিশগড়ী পুলিশ তাকে ধরে আর বলে, “দারু পিকার সড়কপে কিউ চল রহা হে?” তখন হরেন ভয়ডর না করে বলে, “মেরা নাম হরেন, মেরে সামনে কিউ হরেন দেতা হে?” তাদের বচসা চলাকালীন আরও দুটো সাইকেল হাজির হয়, তারাও ফেরিওয়ালা হরেনের সহকর্মী। তারা হরেনের জন্য পুলিশের কাছে কাকুতি-মিনতি করে, কিন্তু পুলিশ তাদের কথা না শুনে হরেনকে ধরে নিয়ে যায়। রাতের অন্ধকারে জেলবন্দি হরেনে বিকট শব্দে কান্না শুরু করে দেয়। গোটা থানার পুলিশ বিরক্ত হয় এবং তাদের ঘুম হারাম হয়। পরের দিন তার দুজন সঙ্গীকে ডাকা হয় এবং তাদেরও জেলে রাখা হয়। জেলে আলোর ব্যবস্থা করা হয়। হরেন মোট তিনদিন জেল ভোগ করার পর ও পাছায় কয়েক ঘা খাওয়ার পর ছাড়া পায়।
Comments