ফকির দাদু
অমিত কুমার রায়
ভোর সাড়ে চারটেয় বাপের বাড়ি থেকে শ্বশুরবাড়িতে রওনা দিয়েছিল সুদেষ্ণা তার স্বামীর সঙ্গে। সম্বিতের বাইক নদীর দুপারের কুয়াশা ঠেলে বাড়ির গন্তব্যে পৌছালো যখন তখন ভোর সাড়ে পাঁচটা। সুদেষ্ণা বাইকে করে যখন শ্বশুরবাড়িতে যাচ্ছিল তখন তার মধ্যে সামান্য কিছু অস্বাভাবিক আচরণ লক্ষ্য করেছিল সম্বিত। বাড়ির উঠোনে এসে সম্বিত সুদেষ্ণাকে জিজ্ঞেস করল--- অমন করে পিছনদিক থেকে কাঁকড়ার মতো জড়িয়ে ছিলে কেন, ব্যাপারটা কি বলবে।
সুদেষ্ণা ব্যাগ থেকে জলের বোতল বের করে ঢকঢক করে হিমেল আবহে জল খাচ্ছিল!তারপর সম্বিতকে বললে, জামাকাপড় বাইরে ছেড়ে হাতমুখ পা ধুয়ে তবেই ঘরে ঢুকবে বুঝলে তারপর কথা বলব।
সম্বিত হাসতে হাসতে বলল ---আরে কবে আবার শ্বশুরবাড়ি থেকে এসে ড্রেস চেঞ্জ করেছি। সুদেষ্ণা হাফ ঝাঁঝে বলল ---- যা বলছি তাই করো। আমি বাইরের কলতলায় ড্রেস ছেড়ে এলেই তুমিও যাবে, একদম ঘরে ঢুকবে না। সম্বিত দ্বিরুক্তিমাত্র করল না। যথারীতি সম্বিত আর সুদেষ্ণা পোশাক বদল করে ঘরের ভেতরে গেল।
এবার তো বলো কি হয়েছিল তোমার সম্বিত বললে। সুদেষ্ণা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বললে ---রথতলার স্নান পুকুর ঘাটে ফকির দাদুকে লাঠি হাতে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছিলাম। সম্বিত অবাক হয়ে বলল--- তাতে হল কি!!
থাম, এই বলে সুদেষ্ণা বোন শুভমিতাকে ফোন লাগালো, মনে হয় এখনো ঘুমোচ্ছে। তিন বার পরে শুভমিতা ঘুম জড়ানো গলায় বললে ---পৌঁছেগেছিস তো? সুদেষ্ণা "হ্যাঁ" বলেই জিজ্ঞেস করল ফকির দাদু কেমন আছে রে?? ফোন স্পিকারে দেওয়াই ছিল, শুভমিতা বললে, আজতো ফকির দাদুর ঘাট! সম্বিত শুনতে পেয়ে বললে--- মারা গেছেন অথচ তুমি......
সুদেষ্ণা কথা কেড়ে বললে হ্যাঁ, আমি ভুল দেখিনি; স্পষ্ট দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছি লাঠি হাতে। চোখ দুটো যেন লাল নাইট বাল্ব! সন্দেহ ঠিক তখনই হয়েছিল। শুভমিতাকে ফোন রাখতে বললে সুদেষ্ণা। তাই তো তোমাকে তখন থেকেই কাঁকড়ার মতো আঁকড়ে ধরে ছিলাম!!
সম্বিত সব ঝেড়ে ফেলে বললে ---ধুত! তুমি কাকে দেখতে কাকে দেখেছো। ভূত আবার দেখা যায়?????
সুদেষ্ণা উষ্ণা হয়ে বললে-- যায় কিনা জানা নেই তবে আমি কোনো ভুল দেখিনি।
No comments:
Post a Comment