সিগারেট - কাজল মণ্ডল || cigarate - কাজল মন্ডল || অনুগল্প || Short story || Prose
সিগারেট
কাজল মণ্ডল
আজ অফিসে অনেক কাজ জমে ছিল।সেই সব সেরে সুরে বেড়াতে বেড়াতে রাত ন'টা বেজে গেল।পাহাড়ী অঞ্চলে এটা বেশ রাতই।আশেপাশের দোকানের সব ঝাঁপ পড়ে গেছে।বন্ধ হয়ে গেছে সব বাড়ীর দরজা জানলাও।রাস্তা একদম শুনশান।কুয়াশার চাদরে মুড়ে গেছে সব।সঙ্গের সেলফোনটার টর্চ এদিক ওদিক মেরে দেখলাম।যদি কোনো গাড়ী টারী পাই আর কী।না-কোনো কিছুই চোখে পড়ছে না।ঘন কুয়াশার কারণে ভালো দেখাও যাচ্ছে না।তাই গাড়ী-গাড়ী-বলে কয়েকবার হাঁকলাম।না কাউরির কোনো সাড়া টাড়া নেই।একেই পাহাড়ী মফঃসল অঞ্চল।তার ওপর শীতের রাত। গাড়ী না পাবারই কথা।
তাই আর দেরি না করে হাঁটতে শুরু করে দিলাম।এখান থেকে আমার কোয়াটার্স তাও কিমি দুই হবে।এমনিতে আমি হেঁটেই ফিরি।কিন্তু আজ এত রাতে এই নির্জন রাস্তায় একা একা হাঁটা।একটু কেমন কেমন লাগে আর কী।মেন রোডটা শেষ করে বাঁদিকের পায়ে চলা পথটা ধরতেই গন্ধটা নাকে এলো।সেই পোড়া সিগারেটের গন্ধটা।বিদেশি নামি ব্যান্ডের দামি সিগারেট।যেটা কেবল আমি রাণাদাকেই স্মার্টলি টানতে দেখছি।যখন রাণাদা লণ্ডন থেকে ছুটি নিয়ে বাড়ী আসতো।তো সেই রাণাদা বছর দু'য়েক থেকে নিঃখোঁজ।পুলিশ দিয়ে,গোয়েন্দা দিয়ে কত তদন্ত করিয়েছেন জ্যাঠামণি।মানে রাণাদার বাবা ।কিন্তু এত দিন হয়ে গেল কিচ্ছুটি জানা যায় নি।
আরে!কে যাচ্ছে ও!মাথায় যেন একটা বড় হ্যাট।ঘন কুয়াশায় অস্পষ্ট।বুকটা ছ্যাত করে উঠলো ঐরকম হ্যাট তো রাণাদাও মাথায় দিত।তাহলে কী-----
এত শীতেও আমার কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমতে শুরু করে দিয়েছে।আমি আরো জোরে জোরে হাঁটছি।
কে ও!আমাকে জানতেই হবে যে।ঐতো ও!আমার থেকে এখন হাত দশেক দুরে হবে।আর একটু জোরে যেতে পারলেই ধরে নেব ।আমি দৌড়াতে শুরু করে দিয়েছি।যাঃ!ও বাম দিকে বাঁক নেওয়ায় সামনের পাহাড়টায় আড়াল হয়ে গেল।আমিও দৌড়িয়ে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে বাঁক নিলাম।কিন্তু একি!সামনে যে গভীর খাত।টর্চের আলোয় দেখছি।রাস্তাটা এখানেই শেষ।টর্চের আলো এপাশে ওপাশে ফেলে তন্ন তন্ন করে খুঁজছি।কোনো জনপ্রাণী নেই।পোড়া সিগারেটের সেই বিশেষ গন্ধটা এখানে তীব্র।পায়ের কাছে লালচে-কী ওটা! টর্চের আলো ফেলে ভালো করে দেখি একটা পোড়া সিগারেট।পাথরের খাঁজে আটকিয়ে।যেটা থেকে এখনও একটু একটু ধোঁয়া উঠছে।
Comments