ছোট গল্প - বিপণন || লেখক - দর্পণা গঙ্গোপাধ্যায় || Written by Darpana Gangapadhay || Short story - Biponon
বিপণন
দর্পণা গঙ্গোপাধ্যায়
লকডাউনে বীথিদের অবস্থা বড়ই খারাপ গেছে ,ওদের রোজগার পাতি তলানিতে ঠেকেছে। যা জমানো ছিল তাও খেতে খেতে শেষ। এ বছর ওর বর একটা কারখানায় কাজ পেয়েছে। আগেরটা গেছে, যা হোক যা পাওয়া যায় তাই সই। বীথি ভাবলো দুটো কানের দুল আছে। ওগুলো বেচে পুজোর কাপড় তুলে বেচবে ,যেমন ভাবনা তেমনি কাজ দুল বেছে বড়বাজারে একটা বড় দোকান থেকে কিছু তাঁত ছাপা সিন্থেটিক শাড়ি কিছু বিছানার চাদর আর কুর্তি লেগিন্স লুঙ্গি ইত্যাদি নেবে।
শুনেছে বড় দোকান ধার দেয় ছেঁড়াফাটা ফেরত নেয় ,আবার দাম দিয়ে আরো নতুন জিনিসও নেওয়া যায়। কিছুটা বেচেই আবার যাওয়া যায় নতুন জিনিসের জন্য। তাহলে বেচার এবং কেনার বেশ সুবিধা হয়।
সেদিন বুধবার সকাল সকাল খেয়েদেয়ে বেরিয়ে পড়ল বড়বাজারের দোকানের সন্ধানে।
পেয়েও গেলো, দোকানের মালিক বসেছিল, তো তার সঙ্গে কথা হলো। মালিক বলল বেশ,--- কিন্তু একটা শর্ত আছে তোমাকে আমার দোকানে এসে সপ্তাহে তিন দিন বসতে হবে শিখতে হবে কিভাবে শাড়ি বেচতে হয় তারপর তোমাকে আমি সম্পূর্ণ ধারেই সবকিছু দেব,--- বিক্রি করে দাম দেবে। বীথি তো খুব আনন্দ পেল এবং বাড়ি ফেরার উপক্রম করছে ঠিক তখনই দুজন মহিলা ও একজন পুরুষ দোকানে প্রবেশ করল। আর বলল তারা দামি শাড়ি দেখাতে। মালিক বলল বীথি তুমিও বসে যাও । দামি শাড়ি দেখার শখ কোন মেয়ের না থাকে বসে গেলাম বড় কালো ট্রাঙ্ক থেকে একের পর এক বালুচড়ি বেরোতে লাগলো কোনোটা ৬০০০ কোনটা ১০০০০ কোনটা ১২000 কোনটা কুড়ি হাজার চলতেই থাকে চলতেই থাকে যতই দেখায় কিছুতেই মন ভরে না, একটা একটা শাড়ি রাখছে আর বলছে আরো শাড়ি দেখান এভাবে এক ঘন্টা ধরে দুজন কর্মীর কাল ঘাম ছুটে যাচ্ছে ,অবশেষে মালিক বলল (ইশারায় চুপ মুখে আঙুল দিয়ে। একটাও কথা নয় প্রথমে ঢুকেই আমি একটা সুন্দর রানী কালারের শাড়ি পছন্দ করে জিজ্ঞাসা করেছিলাম শাড়িটার কত দাম তখন মালিক বলেছিল কত আর হাজার খানেক হবে,) সেই শাড়ি খানা অত দামি শাড়ির ওপর ফেলল। বলল দেখুন তো দিদি। এটা গায়ে দিয়ে কেমন লাগছে সঙ্গের পুরুষটিও বলল আঙুল তুলে দারুণ। ব্যাস এবার দুজনেই বলে তাহলে আমি? মালিক বললে কোন চিন্তা নেই। আর একটা আছে,একই রঙের ডুপলিকেট।
আগের একটি দামী শাড়ি বাছা ছিল,
মোট তিনটি হচ্ছে আরেকটি চাই মালিক বললে অসুবিধে নেই ওই যে গাট্টি আছে ওই গাট্টিতে আরেকটা আছে ঐরকম ডুপলিকেট শাড়ি আরেকটি শাড়ি ও একই রকম এনে দিল মালিক এবং বিল করল কুড়ি হাজার টাকা আর ওরা সেই চারটি শাড়ি কুড়ি হাজার টাকায় নিয়ে চলে গেল। এরপর ব্যস্ত হয়ে পড়ল মালিক সমস্ত শাড়ি তোলার জন্য আর বলল বীথি তুমি ওদের একটু সাহায্য কর ওরা দুজনে যথেষ্ট এক্সপার্ট শাড়ি তোলার কাজে, তবুও আমাকে সঙ্গে নিল। আমিও কিছু শাড়ি পাট করে ওদের এগিয়ে দিতে লাগলাম বড় ট্রাঙ্ক দুটো ভরে আসার সময় এক বয়স্ক ভদ্রমহিলা এসে ঢুকলেন । বেশ সুন্দর দেখতে সাজগোজ করা এসে বসে হাঁপাতে লাগলেন মালিক বলল চা নিয়ে আয় ততক্ষণ একটু জিরিয়ে নিক ,তারপর আমি শাড়ি দিচ্ছি । মাসিমা বলল আমার পুজোর শাড়ি চাই আমি পছন্দ করব না ঠাকুর সবার তাই তোমরাই পছন্দ করে দেবে আমি শুধু নেব দেখো কালো না থাকে।বললে ঠিক আছে মা আপনি চিন্তা করবেন না মালিক সঙ্গে সঙ্গেই বলল গনসা ওই যে শাড়ি আমি একটু আগে ওনাকে দিলাম ওই শাড়ি তিনখানা নিয়ে আসো বিস্কুটেতে লাল যে শাড়িটা ওটা মা দুর্গার, আর হলুদ খোলে লাল পাড় যেটা ওটা মা সরস্বতীর ,আর সবুজে লালেতে যেটা সেটা মা লক্ষ্মীর আর তিনটি কুঁচোনো ধুতি আনো, একটা শিবের একটা গণেশের একটা কার্তিকের তিনটে পাঞ্জাবি দিও একটা হলুদ একটা সবুজ একটা সাদা ।সাদাটা শিবের, হলুদটা গনেশের ,আর সবুজটা কার্তিকের ।আর ছটা গামছা দিও, আর কলা বউয়ের একটা লাল পেড়ে শাড়ি দিয়ো। এছাড়া ছটা ধুতি ছটা লাল পেড়ে আলাদা।এতে বীথি মনঃক্ষুন্ন হয়ে বলল সবার জন্য দামি শাড়ি আর বাড়ির বউ এর জন্য একটা কম দামি লাল পেড়ে শাড়ি ! এ কথা শুনে মালিক বলল যে মায়ের এবার বেশি দামি শাড়ি পরার শখ হয়েছে শাড়িটা তুলে রাখো। মায়ের জন্য একটা দামি লাগবে ,মাসিমা বলল আমি কিন্তু দশ হাজার ই দেব এর বেশি দেব না তখনই ওর অপর কর্মী চা নিয়ে এসে হাজির হলো এবং মাসিমাকে চা দিতে লাগলো চা খেতে খেতে বলল আর শোনো মেয়ে,--- কলা বউ গণেশের বউ না কলা বউ নবপত্রিকা মা দুর্গার নয় রূপ কলা গাছের সাথে বাকি আটটি গাছ একত্র করে দুটো বেল মাঝখানে দিয়ে বাঁধা হয়। কলা গাছকে চান করানোর পর এবং এই নব পত্রিকাকে ৯ রূপ দুর্গা হিসাবে পুজো করা হয় দুর্গার ডানদিকে এই নবপত্রিকা থাকে। আবার দুর্গার ডানদিকে গণেশ ও থাকে ফলে মনে হয় গণেশের বউ। কিন্তু বউ হলে গণেশের ডান দিকে থাকতো না বাম দিকে থাকতো মানুষ এটা ভুল করে এই নটি গাছ হল হল কলা কচু হরিদ্রা, জয়ন্তী বিল্ব দারিম্বো মান ধান অশোক আর যথাক্রমে দেবীর নয়রূপ হলো , ব্রহ্মনি কালিকা উমা কার্তিকী শিবা রক্তদন্তিকা চামুন্ডা লক্ষ্মী শোকরোহিতা এসব বলার পর দশ হাজার টাকা দিয়ে জিনিসপত্র গাড়িতে তুলে নিয়ে গাড়িতে উঠে চলে গেল।
মালিক বলল কি শিক্ষা হলো আজ তোমার? আমি বললাম দু'রকম ধনী দেখলাম। ছ্যাঁচড়া আর বনেদি ! মালিক বিস্ময়ে আমার দিকে চেয়ে রইল ,
কিছুক্ষণ পর বললো দুজনকেই শাড়ি বিক্রি করতে হবে, তবে পদ্ধতি আলাদা।
Comments