ছোট গল্প - সৌরভ || লেখক - দীপক কুমার মাইতি || Written by Dipak Kumar Mayti || Short story - Sourav

 





সৌরভ


দীপক কুমার মাইতি

 

            কোন সুযোগ না দিয়ে মা হঠা চলে যায় রাতে পাশাপাশি শুয়ে গল্প করছিলাম মা বলে – বুকটা ব্যথা করছে বোধ হয় অম্বল হয়েছে বাবু অ্যান্টাসিডের শিশিটা দিবি

            শিশি এনে দেখি মা কেমন নেতিয়ে পডে়ছে মনে কু ডাকে তাড়াতাড়ি হাসপাতালে ভর্তি করে অপেক্ষা করতে থাকি কিছুপরে চরম সংবাদ পাই বিহ্বল হয়ে ডাক্তারবাবুর দিকে তাকিয়ে থাকি হুশ ফেরে মুখে জলের ঝাপটায় ডাক্তারবাবু বলেনমনটা শক্ত করুন সঙ্গে কাউকে দেখছি না আত্মীয়দের খবর দেন

            সংসারে মা  আমি অল্প বয়সে বাবাকে হারাই বাবার চাকরি  এক কামরার ফ্ল্যাট তখন আমাদের সম্বল। সাহায্য করার ভয়ে স্বজনেরা দূরে চলে যায় এখন তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থায় কর্মরত আমার অনুরোধে মা স্বেচ্ছাবসর নেয় এভাবে একা হতে হবে কখনও ভাবিনি ধীরে ধীরে মা-এর শয্যা পাশে দাঁড়াই স্নিগ্ধ শান্ত মা চোখ বন্ধ করে শুয়ে অমি মা-এর বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ি বুকে মুখ রেখে ডুকরে কাঁদতে থাকি হাতের স্পর্শে পিছনে ফিরে দেখি একজন নার্স দাঁড়িয়ে— সরি স্যার , আমাদের কয়েকটি ফরম্যালিটি সারতে হবে অফিসে কয়েকটি কাগজে সই করে মর্গ থেকে বডি পেয়ে যাবেন

            বাইরে বেরিয়ে কয়েকজন অফিস কলিগ  বন্ধু ময়ুখকে ফোন করি বাকি কাজ ওরাই করে বাড়ি ফিরতে সন্ধ্যে হয়ে যায় সবাই চলে যায়। রাতে ময়ুখ বলে – আমি  বাড়ি যাচ্ছি শুকনো খাওয়ার এনেছি খেয়ে নিবি কাল সকালেই আসবো

            ময়ুখ বরিয়ে যায় চুপচাপ বসে থাকি ফাঁকা ঘর সংসারে আজ আমি একা নিঃসঙ্গতা গ্রাস করতে থাকে তখন খুব ছোট রথের মেলায় গিয়েছিলাম মায়ের হাত ছাড়িয়ে হারিয়ে যাই জন-অরণ্যে মাকে খুঁজতে গিয়ে আরো হারিয়ে যাই একটা গাছের নিচে নিঃসঙ্গ আমি দাঁড়িয়ে চোখে জল ভরে আসে ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলি বেশ কিছুক্ষণ পর স্নেহের একটি হাত চেনা সৌরভ নিয়ে আমায় জড়িয়ে ধরে আমি বুকে মুখ গুজে কাঁদতে থাকি মা কপালে চুমু খেয়ে বলে –  ভয় কীএই তো অমি

            আজ চাখ বন্ধ করে সেই সৌরভ খুঁজত থাকি হঠাৎ সেই চেনা সৌরভর ঝাপটা লাগে চোখে মুখে চমকে চোখ মেলি খাটের মশারিদানে ঝুলছে মায়ের শাড়ি হাওয়ায় দুলছে ছড়িয়ে পড়ছে মায়ের ঐশ্বরিক সৌরভ জানালা দিয় জোছনা হয়ে মাযের স্বর্গীয় হাসি ছড়িয়ে ঘরে লুটোপুটি খাচ্ছে আমি মাতালের মতো ঘরে মাকে খুঁজতে থাকি মায়ের শাড়ি নামিয়ে আনি বুকে জড়িয়ে মায়ের ওম পেতে থাকি এক সময়ে মায়ের সৌরভে ঘুমিয়ে পড়ি

            সদিন থেকে আজ তিন বছর রাতে মায়ের শাড়ি বুকে জড়িয়ে কাটিয়ে দিচ্ছি এখন নিঃসঙ্গতা আমার আর্দশ সঙ্গী নিঃসঙ্গতা আমার কাছে ঈশ্বরের মতো নিঃসঙ্গ থাকলে মায়ের স্নিগ্ধ সৌরভ আমায় জড়িয়ে ধরে

            অবর্ণার ফোনে ঘুম ভাঙে – একটা  বিপদে পডে়ছি একমাত্র তুই সাহায্য করতে পারিস দশ মিনিটে  পৌঁছে যাব

            আমরা একই প্রোজেক্টে কাজ করি অবর্ণা ময়ুখের বাগদত্তা মায়ের মৃত্যুর পর ওরাই আমার পরম বন্ধু এখনও প্রতিদিন দুপুরে অবর্ণা আমার লাঞ্চ নিয়ে আসে ওর বিপদ শুনে চিন্তা হয়

            কিছুপরে এক বিদেশিনি সহ অবর্ণা আসে পরিচয় করিয়ে অবর্ণা বলে— এলিজাচিকাগো থেকে ভারত দেখতে এসেছে আমার কাছে উঠেছে অমাকে দেখিয়ে বলে , শাওন মাই বেস্টফ্রেন্ড

 দুজনের প্রাথমিক আলাপের পর অবর্ণাকে বলি – তোর বিপদটা কী?”

            কাল রাতে ম্যানেজার মেল করছে ,এক সপ্তাহের জন্য পুনা যেতে হবে এলিজার কাল দুপুরে ফ্লাইট কাল পর্যন্ত থাকা নিয়ে সমস্যা আমার মেসে রাখা যাবে না ভাল হোটেলে থাকার মতো ওর রেস্ত নেই কয়েকটা জায়গা ওর দেখার ইচ্ছে তুই একা থাকিস নিজের গাড়ি আছে এলিজাকে তোর কাছে রাখ ছুটি নিয়ে ওকে গাইড করে দিবি?

            আমার একটাই শোবার ঘর একা মেয়েকে রাখা ঠিক হবে কী?

            তুই ছাড়া কাউকে ভাবতে পারছি না এলিজা সব জানে ওর কোন আপত্তি নেই

            আমি কিন্তু কিন্তু করে বলি – তবুও  একটা মেয়ে বিদেশিনি ভাল করে চিন্তা করেছিস?

             অবর্ণার মুখে নিশ্চিন্তের হাসি – মাসিমার সৌরভ তোকে


Comments

Popular posts from this blog

শারদীয়া সংখ্যা ১৪৩০ || সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র || World Sahitya Adda Sarod sonkha 1430

TATA Steel Job Recruitment 2024 || টাটা স্টিল কোম্পানিতে নতুন করে 6000 শূন্যপদে কর্মী নিয়োগ || TATA company job

মাধ্যমিক পাশেই ভালো মাইনের চাকরি,জলের ট্যাঙ্কি দেখাশোনার স্থায়ী কাজ || Jal Jeevan Mission Registration 2024