Wednesday, May 31, 2023

দহন - সুদীপ্ত বিশ্বাস || Dohon - Sudipta Biswas || Bengali Poem || Poetry || বাংলা কবিতা

 দহন 

সুদীপ্ত বিশ্বাস


 


ধুলোর ঝড় উঠেছে মরুরাত্রিতে


চাপচাপ অন্ধকার


বিষাদ নদীর শীতল স্রোতের আবর্ত


ঘুটঘুটে মধ্যযুগীয় অন্ধকারে


পেঁচারা ওড়াউড়ি করছে


আমার দু'হাতে শুধু সূর্য পোড়া ছাই


তুমি নেই


তোমার আমার মধ্যে অনন্ত গ্যালাক্সির ব্যবধান।


আরও দূরে সরে যাচ্ছি আমরা


আমার চারিদিকে দাবানল


আমার বুকের ভিতরে জ্বলন্ত ভিসুভিয়াস


আমার চারিদিকে পাথর ভাঙার শব্দ


আমার হৃদয়ের স্ফটিকটা ভেঙে


কাচের টুকরো হয়ে ছড়িয়ে পড়েছে মেঝের ধুলোয়


কান্নারা বোবা হয়ে গেছে


অশ্রুরা স্তম্ভিত



ভাঙা মাস্তুল হাতে নিয়ে আমি একলা দাঁড়িয়ে আছি।

তবে যাও তবে যাও - তন্ময় দাস || Tobe jaou Tobe jaou - Tanmoy Das || Bengali Poem || Poetry || বাংলা কবিতা

 তবে যাও তবে যাও

তন্ময় দাস 


রক্তে মাখা অতিথকে যদি দেখতে চাও তবে যাও তবে যাও।


সপ্ন টাকে ভালো করে যদি দেখতে চাও তবে যাও তবে যাও।


ওই নদীর প্রান্ত শেষে যদি নিজেকে দেখতে চাও তবে যাও তবে যাও।


আমার অপেক্ষায় দারিয়ে না থেকে নিজের লক্ষে এগিয়ে যাও এখনি যাও এখনি যাও ।


অন্যের দিকে না তাকিয়ে নিজের লক্ষে এগিয়ে যাও তবে যাও তবে যাও।


যদি নিজের লরাইয়ে তুমি যদি হেরে যাও তবে লরাই ছরে দাও কেনো ।


ওই ধানে খেতের মধ্যে যদি সপ্নকে খুজে পাও তাহলে যাও দৌড়ে যাও।


ওই সপ্নকে হাতে পেতে যদি আমায় ভুলে যাও তবে যাও তবে যাও ।


ওই করা রোদ্দুরের মাঝে যদি সফলতা দেখতে পাও তবে আমায় ভুলে গিয়ে তুমি যাও তুমি যাও

বৃষ্টি - সায়ন তরফদার || Brishti - Sayan Tarafdar || Bengali Poem || Poetry || বাংলা কবিতা

 বৃষ্টি

সায়ন তরফদার


বৃষ্টি এসে ভিজিয়ে দিল আমায়

আজ তবে দেখা না হওয়াই থাক

বৃষ্টিতে তোর আজও অনেক ভয়

মুহূর্তগুলো বদলে গেলে, যাক...


প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকুক যেমন ছিল 

আদর্শগত অমিলও কিছুটা থাক

মুখে মুখে বলা মানুষের কবিতায়

সব প্রেম শুধু অধিকার খুঁজে পাক


মানুষের অধিকারে কী লাভ?

যদি না তারা বাঁচার শিক্ষা পায়

ভালোবাসাটা অপূর্ণই থেকে গেলে

রাজনীতিটাও বেরঙীন হয়ে যায়


বৃষ্টি এসে ভিজিয়ে দিক আবার

যেভাবে ঠিক ভিজিয়ে দিত আগে

এক জীবনে কাউকে না পেলে

বৃষ্টির মতো আরেকটা জীবন লাগে

শেষ দৃশ্যে - পীযূষ কান্তি সরকার || Ses Drishe - Pijus kanti Sarkar || Bengali Poem || Poetry || বাংলা কবিতা

 শেষ দৃশ্যে

       পীযূষ কান্তি সরকার


জঠরের জ্বালা, হৃদয়ের জ্বালা --

সকল জ্বালার শেষ করে 

দেহটা চিতার আগুনে জ্বলে যায়।

হাজার হাজার মুক্তো যেন

মাটিতে ঝরে পড়ে

পলকে হারিয়ে যায়।

শোকস্তব্ধ শ্মশান ঘাটে রয়ে যায়

শুধু ফুল, ফুলের মালা আর নীরবতা

আর 

ধূপ-চন্দন-কস্তুরির সৌরভ।


সেই শেষদৃশ্যে চলে তখন

হিসেবনিকেশ --

শিল্পী আর তাঁর শিল্পের

বিজ্ঞানী আর তাঁর আবিষ্কারের

কবি আর তাঁর কবিতার

... ... ... ...

স্রষ্টা আর তাঁর সৃষ্টির।

ফুঁক্যে দিব্য বাঁশি - চিরঞ্জিত ভাণ্ডারী || Fukhhe dibba banshi - Chiranjit bhandari || Bengali Poem || Poetry || বাংলা কবিতা

 ফুঁক্যে দিব্য বাঁশি

   চিরঞ্জিত ভাণ্ডারী 


তাড়ির লেশায় মাত্যে ফাগুন মাসের রাত্যে

ফুঁক্যে দিব্য বাঁশের বাঁশি তুর নামটা ধরে

জল আইনবার লছনাতে মাটির কলসি লিয়ে হাতে

আসবি ছুটে রাধার মতো ঐ লীল শাড়িটা পরে।

মাতাল করা সুরে তুই থাকত্যে লারবি ঘরে

পরত্যে যাইঞে কাজল ভুল্যে পরে ফেলবি ঠোঁটে

তুর আসার পথ ভাল্যে মহুল ফুল রাখব্য তুল্যে

সারা রাতটা কাটায় দিব পড়্যে পেম সুহাগের মাঠে।

জল আয়নায় দ্যাখবি মুখ বুকের ভিতর পরম সুখ

সারারাতটা থাকব্য ডুবে পেমের মালা গাঁথ্যে

কমরে দিব্য ঝিঙা ফুল বাঁধ্যে দিব মাথার চুল

বুকের উপর মহুল মালা রইবেক লেশায় মাত্যে।

তুর ঐ নাভি পদ্মে পড়বেক শিশির ছিটকে 

পায়ে দিব্য পরায়েঁ কলমি লতার লুপুর 

হাতে দিব্য ফুলের তড়া দ্যাখত্যে লাগবি লজর কাড়া

যেন আষাঢ় মাসের জল কুমুদের পুকুর।

চড়চড়াঞ্যে বাড়বেক রাত রাখব্য হাতে হাত

ডাগর খোঁপায় জোনাক ধরে দিব্য আনে গুঁজে

সুহাগ ভরে আসব্য কাছে যেমন ময়ূর লাচে

বুকের উপর মাথা রাখ্যে মরবি বেদম লাজে।

তুর আমার পিরিত কথা হিয়ার মাঝে কাব্যগাঁথা 

দ্যাখবেক বনলতা পাকপাখুড়ি দুচোখটা ভরে 

তাড়ির লেশায় মাত্যে ফাগুন মাসের রাত্যে

ফুঁক্যে দিব্য বাঁশের বাঁশি তুর নামটা ধরে ওগো তুর নামটা ধরে।

কোথাও ডাকে না কেউ ,পাখি ডাকে - সোহরাব পাশা || Kothaou Dake na keu, pakhi Dake - Shorab pasa || Bengali Poem || Poetry || বাংলা কবিতা||

 কোথাও ডাকে না কেউ ,পাখি ডাকে

সোহরাব পাশা


মেঘের পাতায় ঢাকা স্মৃতির ভ্রমণ

আকাঙ্ক্ষার কারুকাজ

উন্মাদ দুপুরে বিশ্বাসের ছায়া বৃক্ষে ভাঁজ করা

নৈঃশব্দ্যের বিরহ যাপন ,


দীর্ঘ উপেক্ষার অন্ধ নদী

জল নেই ধূলিক্ষেতে হাওয়ার সিম্ফনি;


বিভ্রান্ত মানুষ শুধু ছোটে দূরের স্টেশনে যায়

ফিরে আসে স্বপ্নঘড়ির নিশ্চুপ শব্দে

কোথাও ডাকে না কেউ অমিয় সন্ধ্যায়

মুখোমুখি একা

নিবিড় ভাষায় রাত্রির আড়ালে যেতে;


তোমাকে আবৃত্তি করে বিঁধেছে বেভুল অন্ধ চোখে

তীব্র বিষাদের -নিঃস্বতার নীল কাঁটা

কোথাও ডাকে না কেউ ,দূরে পাখি ডাকে ;

তবুও যেতে হয়

যদি তুমি ফিরে যাও বিষণ্ণ একাকী ।

পারি - সুশান্ত সেন || Pari - Susanta Sen || Bengali Poem || Poetry || বাংলা কবিতা

 পারি

সুশান্ত সেন



শুধু কবিতার জন্য সব পারি

এত বড় সাহস ত ছিল না।

তাই গা বাঁচিয়ে বাঁচিয়ে ,

দাবি গুলো মেটাতে মেটাতে 

যত টুকু পারা যায় , ততটুকুই ---

এখন সাঁঝ বেলাতে 

তাই

যত টুকু পারা যায় , ততটুকুই ---

ততটুকুই ---

এর বেশি কিছু পারিনা , সে জানে

তাই কবিতা কে রেখে দিই সামনের 

                     ফুলভরা বাগানে ।





প্রেমে আছি, যুদ্ধেও আছি - নাসির ওয়াদেন || Preme achi, Juddheu achi - Nasir Oaden || Bengali Poem || Poetry || বাংলা কবিতা

 প্রেমে আছি, যুদ্ধেও আছি

           নাসির ওয়াদেন


কতটা রাত কাটলে তবে একটা ভোর আসে

ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে গেছি

ঘুম নয় মৃত্যুই আচ্ছন্ন করে রাখে

এসবই মনের কল্পনা বা আলো-আঁধারী


জীবনকে জয় করতে গিয়ে পুঁথি খুঁজছি

কোনো সরলসূত্র থাকলে জানাবেন বৈকি

প্রেম শুধু ভালবাসা নয় আবর্জনা নিষ্কাশন

আবর্জনা আর স্তূপ মেখে জড়িয়ে থাকা


খাবারের স্বাদ পেতে লড়াই চলছে সমানে

লড়াইয়ে হারজিত থাকবে কি থাকবে না

সেই বিচারের দায় যাদে‌র তারা জেগে ঘুমায়

আমার কাজ ক'জন সৈন্য মারা গেল দেখা


মৃত্যুর আগে প্রেম সলিলে ঝাঁপ দেয় রাধা

আমার পড়শি খোনার বউ বড্ড খুনসুটে

শাশুড়ির সাথে নিত্য যুদ্ধ জানালায় আঁটা

সাদা-চোখে দেখি কেউ কম নয়,ঝগড়ুটে

        

অনুভব‌‌ - রমা খাঁ || Onuvab - Rama Khan || Bengali Poem || Poetry || বাংলা কবিতা

 অনুভব 

রমা খাঁ 


নিজেকে লুকাবে কি করে 

আমার অতল নির্জনতায় ভেজা তোমার আড়াল 

তোমার না বলা কথা আমার ঠোঁটে, 

আমার পলকে তোমার চোখের ইশারা 

তোমার প্রতিটি অনুভূতি আমার অনুভবে, 

তোমার সৃষ্টির আমি বুদবুদ, দাবার দানের বোরে

তোমার আনন্দের ঝরনা আমার বুকে  

তোমার ভ্রূর ভাঁজে ধরে রাখা - ফেলে আসা

 বিকেল আমার গোধূলিতে 

তোমার আশায় আমার স্বপন, 

তোমার উন্মুক্ত চলাচল আমার সম্মুখে 

তোমার নৈঃশব্দে আমার ধূসর রিক্ততা, 

তোমার জীবন - সলিলে আমি তরঙ্গ। 


                            

অনুকম্পা - অসীম কুমার সমাদ্দার || Onukompa - Ashim Kumar Samadar || Bengali Poem || Poetry || বাংলা কবিতা

 অনুকম্পা 

অসীম কুমার সমাদ্দার


উড়ে যাব একদিন প্রমিথিউসের নাম করে 

কোন চৈতালি রাতে , তোমার জানালার কাছে ।

তুমি থেকো জোনাকি হয়ে আলো ধরে ,

ইঙ্গিতে ভুলিয়ে দিতে দুঃখের গল্পগুলো হাসিমুখে ,

ঝরে পড়বে তখন তারাদের অনুকম্পা 

চারদিকে তোমার অশ্রু-ডানা ভর করে ।

ভালবাসার টীকা - কাজল মৈত্র || Valobasar Tika - Kajal maitra || Bengali Poem || Poetry || বাংলা কবিতা

ভালবাসার টীকা

      কাজল মৈত্র 


কে পরিয়েছে তোমার কপালে

ভালবাসার অমোঘ টীকা ,

কিসের টানে তুমি নেমেছ

পৃথিবীর ছায়াময় পথে ,

তোমার চোখের শুকনো জলে

একটা ভিসুভিয়াসের জন্ম নেয় ,

তোমার ওষ্ঠে নামুক বৃষ্টি

বৃষ্টি হল প্রেম

আর প্রেম মানে নতুন জীবন।

গুণধরের বিয়ে - চন্দন চক্রবর্তী || Gunodhorer Biye - Chandan Chakraborty || Bengali Poem || Poetry || বাংলা কবিতা

 গুণধরের বিয়ে

চন্দন চক্রবর্তী


কি হে ভায়া,কেমন আছো ? হঠাৎ করলে বিয়ে !

তাকেই করলে,ওই যার সাথে ছিল ইয়ে টিয়ে ?

না না দাদা,কি আর বলি,সেই মেয়েটার কথা,

ভাবলে বুকে ব্যাথা জাগে,ঘুরতে থাকে মাথা ।


কেন,কেন ? কি হয়েছে ? ব্যাপারটা কি শুনি,

মেয়ে তো বেশ ফর্সা,লম্বা,তাছাড়া সে গুণী,

গড়ন তাও ভারি মিষ্টি,মায়াবী চোখ দুটো,

চলন,বলন সবই ভালো,কিছু ছিল ঝুটো ?


সে কথা নয়,সে কথা নয়,শুনুন তবে বলি,

শ্বশুর মশাই কিপটে হলে কেমন করে চলি ?

দুলাখ আগাম দিলেই দাদা চাকরি আমার পাকা,

টাকা চাইতেই,গেলেন চটে,মানুষ এমন বাঁকা !


সেতো হবেই,শিক্ষক তিনি,বিদ্বান মানুষ বটে,

ঘুষের চাকরি শুনেছেন যে,তাই গিয়েছেন চটে,

তাছাড়া ভাই তোমার চাকরি,তুমি খাবে দাবে,

তিনি কেন টাকা দেবেন ? কেন চাইতে যাবে ?


শুনুন দাদা,আমি হলাম মাধ্যমিক ফেল ছেলে,

তাতে করে কি এসে যায় নইতো এলেবেলে !

ছেলে মানে সোনার আংটি,সেতো সবাই জানে,

হোক না বাঁকা তবু তাকে সবাই সোনা'ই মানে ।


বেশ ভায়া,তারপর বল,ঘটেছিল কি পরে,

টাকা দিতে শ্বশুর রাজি ? বউ আনলে যে ঘরে ?

চাকরি তোমার হয়ে গেছে ? মুখটা হাসি হাসি !

মনিকাঞ্চন যোগ হয়েছে,মনে খুশির রাশি !


কি যে বলেন,শুনুন তবে ঘটলো গিয়ে শেষে,

ঘটক ঠাকুর খবর পেয়ে চুপি চুপি এসে,

সরেস মেয়ের খবর দিতেই নিলাম বিয়ে করে,

গায়ের রংটা বেজায় কালো,কে আর সেটা ধরে ।


পাঁচ লাখ নিলাম এক তো যাবে,সাবান কিনবো দাদা,

ভালো রকম ধোলাই দিলেই বউ তো তখন সাদা,

দু লাখ দিলে চাকরি হবে,বাকি দুলাখ হাতে,

ব্যাংকে রাখলে সুদও আসবে,থাকবো দুধে ভাতে ।


বেশ ভায়া,ভালো ভালো,গুণধর তুমি বটে,

হিসেব তোমার খুবই পাকা বুদ্ধি আছে ঘটে,

বলার ধরন কেমন কেমন ভাবতাম হাবা গোবা,

ভুল ভেঙ্গেছে,তোমায় চিনে,আমি এখন বোবা ।

একগুচ্ছ - প্রিয়াংকা নিয়োগী || Eekgucho - Priyanka Niogi || Bengali Poem || Poetry || বাংলা কবিতা

 একগুচ্ছ

প্রিয়াংকা নিয়োগী



অম্র পল্লব প্রয়োজনে ব‍্যাবহার হয়,

একসাথে সব পাতাই ঠিক হতে হয়।

কল্পনা গুচ্ছগুলো মুখরিত হয়,

যখন বাস্তব ছুয়েও ছোয়া যায়না।


একগুচ্ছ গোলাপ শোভা পায়,

যখন মর্যাদা পায়!

গোলাপের কদর থাকেনা,

যদি প্রত‍্যাখান করা যায়।


একগুচ্ছ "আশা" আকাঙ্খায় পরিণত হয়,

আশা যখন বাস্তব রুপ নেয়।


গল্পগুচ্ছ পরিণত হয়,

যখন গল্প সাজানো হয় গুচ্ছাকারে।


প্রতিটি ফুটে ওঠা ফুল পূর্ণতা পায়,

পূর্ণাকারে ব‍্যবহার করা হয়,


 বিন্দু বিন্দু দুঃখ হতে হতে,

বাসা হয় কষ্টের,

ছোটো ছোটো খুশি থেকে,

বড়ো হয় সুখ।


                               

বুনে দিই শাল সেগুন - বিশ্বনাথ মাঝি || Bune di sal segun - Biswanath majhi || Bengali Poem || Poetry || বাংলা কবিতা

 বুনে দিই শাল সেগুন 

বিশ্বনাথ মাঝি


এক অরণ্য শাল সেগুন বুনে দিই

আবহাওয়ার তাগিদে

এসো মেঘ এসো বৃষ্টি শ্রাবণ বুকে নিই

আমাদের বৃষ্টির খিদে।


জলবায়ু সরে যায় গাছেদের বিহনে

সামঞ্জস্য প্রয়োজন বড়ই

এমন আগুন তপ্ত নিদাঘ সূর্য কিরণে

জীবনে অসহ্য দাহ খরই।


বনানী সবুজ হোক গাছের সৃজনে

দূর হোক যত দূর্বৃত্তায়ন

এক অরণ্য বুনে দিই শাল সেগুনে 

গাছের আজ বড়ো প্রয়োজন।


মাটি জল হাওয়া আজ বিষাক্ত দূষণ

জীবনে প্রাণ ওষ্ঠাগত

বুনে যাই শাল সেগুন করুক পূরণ

চন্দন হাওয়া আজ বিগত।

নব আনন্দে জাগো - শুভ্রা ভট্টাচার্য || Naba anande jago - Suvra Bhattacharya || Bengali Poem || Poetry || বাংলা কবিতা

 নব আনন্দে জাগো

  শুভ্রা ভট্টাচার্য



নববর্ষ জীবন চলমানতায় প্রচলিত উৎসব

একটি বছর পার করার সাজো সাজো রব,

নতুনের প্রতি সদাই বিশেষ আগ্রহ উদ্দীপনা

নতুনত্বেই নিহিত সুপ্ত বীজে অমিত সম্ভাবনা।


পুরাতনের ব্যর্থতা নৈরাশ্য গ্লানি ক্লেদ ভুলে

নব উদ্যমে নতুন আশায় বাঁচার উন্মাদনা,

পুরনো সব না পাওয়ার হিসাব নিকাশ ছেড়ে 

নতুন বছরকে সাদরে গ্রহণের ব্যাকুল প্রার্থনা।


লালিত ইচ্ছেদের উল্টিয়ে পাল্টিয়ে দেখে

মনেতে সাজাই কত আশা প্রত্যাশার স্বপ্ন,

আনমনে গোছানো আগামী ভবিতব্যেরা

নতুনত্বের স্বাদ আস্বাদনের আগ্রহে মগ্ন।


পুরনো বছর হতে অনিচ্ছার ভুল শুধরিয়ে

পাই ভবিকালের শক্ত খুঁটি নির্মাণের দীক্ষা,

লক্ষ্য পূরণের কঠিন পথটিকে সুগম করে

দৃপ্ত পদক্ষেপে সম্মুখে এগিয়ে চলার শিক্ষা।


পুরানের রেখে যাওয়া স্মৃতিবিস্মৃতির আলোড়ন

ঘটায় প্রকৃতি পরিবেশ মনুষ্য সভ্যতার বিবর্তন,

বর্ষবন্দনায় অনাবিল আনন্দে উদ্ভাসিত জীবন

সোনালি পাখা মেলে নতুন স্বপ্নের জাল বুনন।


সুস্থ রুচিতে সুশৃঙ্খলে এ উৎসব সুস্বাগতম

আশাবাদী প্রাণে জাগে সম্প্রীতির মেলবন্ধন,

প্রকৃতি প্রাণের সখ্যতায় স্থবিরতা কাটিয়ে

জৈব অজৈব সম্মিলনে মননসত্তায় বর্ষবরণ।

ক্ষুধা - শ্যামল রক্ষিত || Khuda - Shamal Rakshit || Bengali Poem || Poetry || বাংলা কবিতা

 ক্ষুধা 

শ্যামল রক্ষিত 



প্রতিদিন ধুলো ঝাড়ি আকাশের 



ঘরের জানালা দিয়ে হাত বাড়িয়ে 

ঋতুকে কাছে ডাকি 

ক্ষুধার জামাকাপড় পরে 

সময়ের গাছ থেকে নক্ষত্রগুলো পেড়ে আনি



আলো খাই 

অন্ধকার খাই 

খাই সমগ্র বিশ্বকে ৷


কর্মী - দীপঙ্কর বেরা || Karmi - Dipankar bera || Bengali Poem || Poetry || বাংলা কবিতা

 কর্মী

দীপঙ্কর বেরা 


এ সমাজে কিসের জন্য কামার কুমোর চাষা

তাঁতি জেলে মেথর ছিল কাজে যাওয়া আসা,

এখন পাল্টে জীবন যাত্রা লোকের সংখ্যা কত

কাজগুলো সব যাচ্ছে কাজে যে যার ইচ্ছে মত।


কাজ বাড়ন্ত এ সংসারে সবাই কাজের খোঁজে

কিছু ইনকাম হবে জেনে আরামে চোখ বোজে,

গায় গতরে খাটার কাজে নেই আর ছোটো বড়

দিন ফুরালে খেতে হবে, যতই দেখাও দড়। 

 

কামার যে সে হয়তো গড়ে মাটির কোনো পাত্র

কুমোর বানায় অস্ত্র শস্ত্র এলিয়ে তার গাত্র,

জেলে বুনছে হয়তো বস্ত্র মাছ ধরছে এক তাঁতি

ব্যবসা করছে ধোপা নাপিত ধরে আছে যাঁতি।  


জাতের নামে ভাগাভাগি বন্ধ হলেই ভালো

সব মানুষই সমান হবে ঘুঁচবে যত কালো, 

শিক্ষা নিয়ে বুদ্ধি জোরে আয় উপায়ে অন্য

করলে পরে সমস্ত কাজ হবে সবার জন্য। 


পরস্পরের হাত বাড়ানো সুন্দর কাজে যাবে

দেশ জুড়ে এই এত মানুষ কাজ কত আর পাবে?

উৎসাহে আর ভালোবাসায় কাজ করে যাও তুমি

এই পৃথিবী ভোগ্য হবে সবার স্বর্গ ভূমি।

Lap of nature - Sunanda Mandal || || English poem || Poetry

    Lap of nature 

         Sunanda Mandal 


An undying peace is found in the lap of nature.


That trees, bird

A crowd of flowers and leaves,

I want to build a new house.


But that house is no longer built.


Nature is not so close these days,

In fact, the number of trees and birds has decreased.

No flower smell,

No leaf tremors.

A RIVER IS NOT ONLY WITH ITS WATER - SUBIR GHOSH || English poem || Poetry

 A RIVER IS NOT ONLY WITH ITS WATER


 SUBIR GHOSH


 


For those the path is measured


they cann’t move any further.


Even an express horse has to stop.


From an upperfloor balcony


a cunning kite comes down with a smile.


My scripts and syllabi


cannot withstand any more


the torturous teeth of the printing devil.


The well that once used to overflow with water


even there the mirror of cloud got broken long back.


To supersede me


the jockies mercilessly whip their horses.


But I cann’t proceed further


Neither anyone can supersede me too.


 


My shadow is not Myself.


The stones of a hill are not the hill as such.


A river is not only with its water,


else any water could have been called


in the name of ‘river’.

The Deserted House - Ananda Gopal Garai || English poem || Poetry

   The Deserted House

Ananda Gopal Garai



Oh no! nobody lives there! 

The house is deserted. 

Only the sparrows twitter, 

The night owls hoot, 

The cockroaches have made it

Their safe abode! 

The neighbors still hear the lament

Of the Old Rich Man, 'oh! stab me not'. 

They robbed him of his jewells

They robbed him of his life, too. 

When the midnight stars

Raise their heads and look upon

The dreamy shades--- 

A spirit cries in fear--- 

'Oh! stab me not, stab me not

Please let me live, let me live. '


বিংশ-শতাব্দীর ফরাসী কবিতা - শংকর ব্রহ্ম || Binsha satabdir Farshi kabita - Sankar Brhama || প্রবন্ধ || Article

 বিংশ-শতাব্দীর ফরাসী কবিতা

           শংকর ব্রহ্ম



               উনিশ শতকের ফরাসী সাহিত্যের বিশেষ ঘটনা হল 'প্রতীকিবাদ'। প্রতীকিবাদের মধ্যে দেখা যায় বিভিন্ন প্রবণতা। ১৮৮৬ সালে মোরেআ-র 'প্রতীকিবাদের' ঘোষণা পত্র প্রচারিত হয়। কিন্তু 'প্রতীকিবাদী' কবিদের মধ্যে


সকলের কাছে এটা কাব্যতত্বের আদর্শ হিসাবে


গৃহীত হয়েছিল বলে মনে হয় না। এই কবিদের মধ্যে, এক দলের লেখার মধ্যে অবক্ষয়, বক্রোক্তি,আক্রমণাত্বক ভঙ্গির সঙ্গে এক ধরণের গীতিময়তার রোমান্টিকর রেশ, আর এক ধরণের কবিদের মধ্যে পার্নাসিঁয়াসদের 


সহমর্মিতা লক্ষ্য করা যায়। তবে এদের সবারই স্বীকৃত গুরু ছিলেন বোদলেয়র, রঁ্যাবো, ভের্লন, মালার্মে। এই সূত্রেই তাদের মধ্যে যা কিছু সহমর্মিতা।



               বিশ শতকে প্রতীকিবাদের বিবর্তন ঘটে


'শুদ্ধ কবিতা'র আদর্শে। তাদের মধ্যে পল ভালেরি,পল ক্লোদেল, ফ্রাঁসিস জাম, মিলোজ, স্যাঁ-জন-পের্স প্রমুখ। এই ধারা বয়ে নিয়ে চলেছেন- জঁ-জুভ্, পিয়ের এমানুয়েল, পাত্রিস দ লা তুর দ্যু প্যাঁ, জঁ ক্লোদ রনার,জোএ বক্সে, ইভ বনফোয়ার প্রমুখ।


         এর পাশাপাশি, প্রথামুক্ত লেখার প্রয়াসও লক্ষ্যণীয়।


তারা প্রাত্যহিক দৈনন্দিন জীবনের আবিলতা মুক্ত, আন্তরিক স্বরূপের সন্ধানে - কাব্যাদর্শকে পরিচালিত করতে চান। তাদের বত্তব্য হল,


" ঢের হয়েছে, মালার্মে ও বোদলেয়ারের ভক্ত হয়ে,বহুকাল তো কাটল, এবার অন্যরকম কিছুর সন্ধান করা যাক বরং"।



                 বিশ শতকের শুরুতে জ্যুল রম্যাঁ-র নেতৃত্বে


'য়ুনানিমিসম' আন্দোলন শুরু হয়, যার উদ্দেশ্য


'একাত্ম ও সমবেত জীবনের' উপস্থাপনা কাব্যে।


         ১৯০৯ সালে ফরাসী পত্রিকা 'ফিগারো'-তে বের হল, ইতালীয়ান কবি মারিনেত্তির 'ভবিষ্যৎবাণী ঘোষণাপত্র'।এই ঘোষণায় যন্ত্রযুগের উপযুক্ত নতুন শিল্পসৃষ্টির 


আহ্বান জানানো হলো। ১৯১৬ সালে ফরাসী কবি আপলিনের এরই সমর্থনে একটি ঘোষণা পত্র প্রকাশ করেন। ইতিমধ্যে চিত্রকলায় 'ক্যুবিসম'ও বস্তুকে নতুন দৃষ্টিতে দেখার পথ দেখাল।


          ১৯১২ সালের এপ্রিল মাসে ব্লেজ সঁদ্রার লিখলেন -


'ন্যু ইয়র্কে ইস্টার'। ওই বছরেরই সেপ্টেম্বর মাসে 'গীয়ম আপলিনের' বন্ধুদের পড়ে শোনালেন, 'চিৎকার' নামে কবিতাটি। পরে কবিতাটি 'জোন' শিরোনামে ১৯১৩ সালে


আপলিনের 'সুরাসার' কাব্যগ্রন্থে প্রথম কবিতা হিসাবে স্থান পায়। জীবনে জটিলতা, ভিড়, অনিশ্চয়তা, কর্মচাঞ্চল্য, অসংগতি সব কিছু নিয়ে তার বাস্তব রূপ ধরা দিল 'সঁদ্রার' ও 'আপলিনের' কবিতায়।


           ১৯১৩ সালে প্রকাশিত হয়, 'সঁদ্রার'- এর "ট্রান্স-সাইবেরিয়ানের গদ্য" নামক তার কবিতা। 'বোদলেয়ার' ও 'রঁ্যাবো'-র কল্পিত ভ্রমণের পরিবর্তে বাস্তব ভ্রমণের বিবরণে এখানে কবিতা লেখা হয়েছে। 'সঁদ্রার' ও 'আপলিনের'-এর কবিতায় বাইরের জীবনের টুকরো টুকরো অভিজ্ঞতা, ট্রেনে কি জাহাজে বেড়ানো, শহরের পথে পথে বৈচিত্রময় ভ্রমণ, আইফেল টাওয়ার, ট্রাম-বাস, দৈনন্দিন জীবন প্রভৃতি সবকিছুই কবিতার বিষয় হয়ে উঠল।


          এই দু'জন কবি ছাড়া তৃতীয় কবি হলেন, 'মাক্স


জাকব'। ১৯১৭-১৯২১ সালের মধ্যে তাঁর দুটি কবিতার বই প্রকাশিত হয়ে আলোড়ণ তোলে। তাঁর কাব্যধারা স্যুরেলিয়াজমের সূচনা ঘোষণা করে।


         ওই সময়ই শিল্প-সাহিত্য ভাঙার আন্দোলন


'ডাডাইজম'-এর সূচনা হয়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ মানুষের আশা-আকাঙ্খা, চিন্তা-চেতনা, মূল্যবোধের জগতে যে আঘাত হানে, সেই হতাশা থেকেই ডাডা-ইজমের বিদ্রোহ, সব কিছুকে অস্বীকার করার প্রবণতা শুরু হয়।


         'ডাডা-ইজম' আন্দোলন ছিল প্রধানতঃ নেতিবাচক, যুক্তির পরম্পরাময় ভাষাসংস্থান তথা চিন্তার বন্ধকে গুঁড়িয়ে দেওয়াই ছিল, 'ডাডা-ইজম'-র প্রয়াস।


        "মুক্তি - ডাডা ডাডা ডাডা, কুঁকড়ে যাওয়া রঙগুলোর আর্তনাদ, বৈপরীত্য আর যত রকমের বিরোধ, বীভৎসতা, অপরিণামের জড়িয়ে যাওয়- জীবন (ত্রিস্তঁ জারা, ঘোষণাপত্র-১৯১৮ সালে)।


         প্রথম বিশ্ব যুদ্ধের পর কিছুটা স্তিতি সামাজিক ও রাজনৈতিক জীবনে ফিরে এলে, ডাডা-ইজমের নঞর্থক আন্দোলন অপ্রাসঙ্গিক ও অর্থহীন হয়ে পড়ে। তখন এই আন্দোলন ছেড়ে কয়েকজন বেরিয়ে গিয়ে, 'অঁদ্রে ব্রতোঁ'-র


নেতৃত্বে স্যুরিয়ালিসম আন্দোলন শুরু হয়। এই আন্দোলনের চরিত্র বিশেষভাবে সদর্থক।



          ১৯২৪ সালে স্যুরিয়ালিষ্টিক ঘোষণাপত্রে, স্যুরিয়ালিজমের সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে,


" বিশুদ্ধ মানসিক স্বয়ংক্রিয়তা যার দ্বারা প্রকাশ করা যায়, মৌখিক, লিখিত বা যে কোন চিন্তার যথার্থ গতিপ্রকৃতি, যুক্তিদ্বারা কোন প্রকার নিয়ন্ত্রণহীন, কোন প্রকার নৈতিক বা নান্দনিকতার বাইরে, চিন্তার প্রতিলিপি।"


         'স্যুরিয়ালিস্টরা' মানসিক চিন্তার জগতে' প্রবিষ্ট হতে চাইলেন। উদ্ভাবিত হলো স্বয়ংক্রিয় রচনা পদ্ধতি।


        ইতিমধ্যে ইয়োরোপীয় বুদ্ধিজীবিদের মধ্যে মার্কসবাদ ছড়িয়ে পড়তে থাকে। বিপ্লবের ধারণা স্যুরিয়ালিস্টিকদের আকর্ষণ করে। 


         তবে কবি 'অঁদ্রে ব্রঁতো' সব রকম 'নিয়ন্ত্রণ'-এর বিরোধিতায় অবিচল রইলেন। ফলে স্যুঁরিয়ালিস্টিক গোষ্ঠীতে ভাঙন দেখা দিল। 


        প্রথমে 'লুই আঁরাগ', পরে 'পল এলুয়ার' স্যুঁরিয়ালিস্টিক গোষ্ঠী ছেড়ে এসে কম্যুনিস্ট পার্টিতে যোগ দিলেন। এই সময় কবি পল এলুয়ার লিখলেন,"সময় এসেছে যখন সমস্ত কবির অধিকার ও কর্তব্য হলো এ'কথা বলার যে তারা অন্য মানুষের জীবনে, সমষ্টিগত জীবনে গভীরভাবে নিবিষ্ট।"



      ১৯৩৯ সালে দ্বিতীয় যুদ্ধ শুরু হয়। ১৯৪০ সালে


ফ্রান্স পরাজিত ও জার্মান অধিকৃত হয়।


     মার্শাল পেত্যাঁ-র নেতৃত্বে ভিশিতে জার্মান তাঁবেদারী সরকার প্রতিষ্ঠিত হল। 


প্রতিরোধের আন্দোলনে যোগ দিলেন কবি সাহিত্যিকেরা।



            'অঁদ্রে ব্রতোঁ' আমেরিকায় আশ্রয় নিলেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় স্যুঁরিয়ালিস্টিক আন্দোলন থিতিয়ে পড়ল। যুদ্ধ থেমে গেলে, 'অঁদ্রে ব্রতোঁ' ফিরে এসে আন্দোলনকে আবার পুনরুজ্জীবিত করতে চাইলেও, তা আর আগের মতো উদ্দীপিত হয়ে ওঠেনি কখনই।


              তবে 'স্যুঁরিয়ালিসরটিক' আন্দোলন ফরাসি শিল্প-সাহিত্য জগতে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ আন্দোলন। এই আন্দোলনের ফলে শিল্প- সাহিত্যে এক নতুন মুক্তির আবহাওয়া তৈরী হয়েছিল। কবিতার ক্ষেত্রে এই আন্দোলনের ফলে বিশেষ গতিশীল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল।


            এই সময়টা ছিল ফরাসী কবিতার উজ্জল সময়। এই আন্দোলনে শুরু থেকে ছিলেন,'পল এল্যুয়ার' ,'লুই আঁরাগ', 'রবের দেসনস' ,'অঁদ্রে ব্রতোঁ' প্রমুখ। কিছুদিন এই আন্দোলনের সাথে থেকে পরে বেরিয়ে আসেন কবি 'জাক প্রেভের' ও কবি 'রনে শার'।


           এই আন্দোলনে শরিক না হয়েও যাদের কবিতায় স্যুঁরিলিজমের প্রভাব পড়েছিল তারা


হলেন 'জাঁ ককতো' ,'পিয়ের রদেভি' ,'জ্যুল স্যুপের ভিয়েল' প্রমুখ। 


           প্রথা নির্দিষ্ট ফর্ম ও ভাষা রীতির বন্ধন থেকে মুক্তির প্রয়াসে এই আন্দোলনের ফলে ফরাসী কবিতা অনেক পরিণতি লাভ করেছে, এ'কথা অনস্বীকার্য।


         কোন গোষ্ঠীভুক্ত না হয়েও যাদের কবিতা ফরাসী সাহিত্যকে মর্যাদাশীল করে তুলেছে, তারা হলেন - 'অঁরি মিশো' ,'ফ্রঁসিস পোঁজ' , 'য়োজেন গিলভিক' প্রমুখ।


'অঁরি মিশো'-র কবিতায় তীর্যক দৃষ্টভঙ্গী ও বস্তুজগতের বিরোধ ও বৈপরীত্য ফুটে উঠেছে। 'পোঁজ' ও 'গিলভিক'-এর কবিতার প্রধান অবলম্বন বস্তুজগৎ।



         যুদ্ধ পরবর্তী কালের ফরাসী কবিতায় বৈশিষ্ট সৃষ্টিকারী ঘটনা 'ইসিদোর ইসু'-র প্রবর্তনায় 'লেত্রিস্ত' আন্দোলন। শুধু বাক্যসংস্থান নয়, শব্দকে পর্যন্ত ভেঙে চুরে 'লেত্রিস্ত'-রা যা করতে চেয়েছেন, তা ডাডা-ইজমের শূন্যগর্ভ ভাঙাচোরাকেই স্মরণ করিয়ে দেয়।


    


          বিশ শতাব্দীর ফরাসী কবিতায় ফরাসীভাষী


কৃষ্ণাঙ্গ কবিদের কবিতা এক নতুন মাত্র সংযোজন করেছে তাদের ঐতিহ্য ও উপলব্দি, যাকে বলা হয় 'নেগ্রিত্যুদ'। বিশ শতাব্দীর প্রথমসারীর ফরাসী ভাষার কবিদের নাম করতে গেলে,সেনেগেলের কবি 'লেওপলদ সেদার সঁগর' ও মার্তিনিকের কবি 'এম সেজার'-এর নাম উল্লেখযোগ্য।



          জাপানী কবিতা সাধারণতঃ যেমন স্বল্প দৈর্ঘের হয়, ফরাসী কবিতা ঠিক তার উল্টো। বেশীরভাগ কবিতাই দীর্ঘ দৈর্ঘের হয়ে থাকে।


      ফরাসী কবিতায় এখন আর তেমন কোন উল্লেখযোগ্য আন্দোলনের খবর নেই।



অদ্ভুত কর ব্যবস্থা ও মুলাকরম - ঋভু চট্টোপাধ্যায় || Odvut kar babostha o mulakorom - Rivu Chattyapadhay || নিবন্ধ || Nibandha

 অদ্ভুত কর ব্যবস্থা ও মুলাকরম 

 ঋভু চট্টোপাধ্যায়


 


পৃথিবীর ইতিহাসে আমরা যদিও ৩০০০-২৮০০ খ্রীষ্টপূর্বে একদিকে যেমন ইজিপ্টে, অন্যদিকে মনুস্মৃতি বা অর্থশাস্ত্রেও কর ব্যবস্থার কথা জানতে পারি, তবে বিভিন্ন অদ্ভুত বিষয়ে কর ব্যবস্থার কথা কিন্তু খুব একটা পুরানো নয়।সাল ১৬৯৬ ইংল্যাণ্ডে তৃতীয় উইলিয়ামের রাজত্বকালে একটা অদ্ভুত ধরনের করের ব্যবস্থা করা হয়,যা পরবর্তীকালে অন্যতম কুখ্যাত ‘উইনডো ট্যাক্স’ নামে প্রচলিত ছিল।এই ট্যাক্সে বলা হয় যার বাড়িতে যত বেশি জানলা সে তত বেশি কর দেবে।বিশেষ করে যে বাড়িতে দশটার বেশি জানলা তার অতিরিক্ত দশ সিলিং কর পড়বে।এর পরিণতি হিসাবে অনেকেই ইট দিয়ে নিজেদের বাড়ির জানলা এক্কেবারে বন্ধ করে দেন।এই উইনডো ট্যাক্স ছাড়াও বিভিন্ন দেশে বাড়ির গরু মোষ, এমনকি গোপ রাখবার ওপরেও ট্যাক্স নেওয়ার প্রথা প্রচলন ছিল। তবে এইসব কিছুকে ছাড়িয়ে যায় এই ভারতের কেরালায় এক সময়কার প্রচলিত ‘মুলাকরম’ বা ‘ব্রেস্ট ট্যাক্স।’ ‘মুলাকরম’ কর ট্রাভাঙ্কর রাজ্যে সেই সময় কার নীচু জাতের মহিলাদের থেকে নেওয়া হত।এই ট্যাক্স প্রায় ১৯২৪ সাল পর্যন্ত প্রচলিত ছিল, এমনকি রাজ্য সরকারের এই ট্যাক্স আদায়ের সাথে যুক্ত কর্মচারীরা বাড়ি বাড়ি ঘুরে ট্যাক্স আদায় করতেন।মেয়েরা বয়ঃসন্ধিকালীন সময়ে পড়লেই তাদের থেকে কর নেওয়া আরম্ভ করা হত,এবং অদ্ভুত ব্যাপার হল এই কর নির্ধারিত হত স্তনের আকারের ওপর ভিত্তি করে।বর্তমানে সমাজতাত্ত্বিকরা এই কর ব্যবস্থা কেন প্রচলিত হয়েছিল সেই বিষয়ে বিভিন্ন রকমের আলোচনা করেন।তবে যেটুকু জানা যায় তাতে বলা হয়, সেই সময়কারের ট্রাভাঙ্কর রাজ্যের রাজারা ব্রাহ্মণ ছিলেন এবং এই মুলাকরম কর ব্যবস্থাকে সেই সময়কারের সামাজিক ভাবে নীচু শ্রেণির মানুষদের ব্রাহ্মণদের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের একটা উপায় হিসাবে ধরা হত।সমাজের নীচু জাত বলতে ‘নাদার’ ‘এজাভা’ প্রভৃতির নাম পাওয়া যায়।মন্দিরে পুজা করতেন নায়ার ব্রাহ্মণরা।তাদের বাড়ির মহিলারা কাঁধ থেকে কাপড় ঢেকে নিতে পারতেন।এই ব্রাহ্মণদের সামনে নিচু্ শ্রেণির মহিলাদের স্তন খোলা রাখতে হত।স্বভাবতই একটা সামাজিক আন্দোলন আরম্ভ হয়।এইসময় আরেক সমস্যার সৃষ্টি হয়, ১৮২০ সালে জন মনরো এক আইন প্রণয়ন করে বলেন, ‘খ্রীষ্টান হলে আর মেয়েদের মুলাকরম কর দিতে হবে না।’এমনকি ‘পিণ্ডাকাশ’ নামে এক রকমের পোশাকেরও ব্যবস্থা করা হয়।স্বভাবতই শয়ে শয়ে নীচুজাতের মানুষ এই ঘৃণ্য কর ব্যবস্থার থেকে মুক্তির আশায় খ্রীষ্টান হতে আরম্ভ করলেও রাজ্যে একটা অন্যরকমের সংকট উপস্থিত হয়।সেই সময় রাজাকে বোঝানো হয়, ‘এই অবস্থা চলতে থাকলে সামাজিক ব্যবস্থা এক্কেবারে ভেঙে পড়বে, রাজাকে আর কেউ মানবে না, এবং রাজ্যে একটা ধর্ম সংকট নেমে আসবে।’ তাই ১৮১৩ সাল থেকে ১৮৫৯ সাল পর্যন্ত সরকারি উদ্যোগেই নিচু শ্রেণির মানুষ যারা খ্রীষ্টান ধর্ম গ্রহণ করেছিল তাদের ওপর চূড়ান্ত অত্যাচার আরম্ভ হয়।উচ্চ জাতের পুরুষেরা প্রকাশ্যে তাদের পোশাক ছিঁড়ে দেয়, তাদেরকে মারাও হয়।অনেক চার্চও জ্বলিয়ে দেওয়া হয়, এমনকি ধর্ম পরিবর্তন করেছে এমন নিম্ন শ্রেণির মেয়েদের বাড়ি ঘর জ্বালিয়ে দেওয়া হয়।পরিস্থিতি চরমে ওঠে যখন নাদার জাতের দুই মহিলাকে ১৮৫৯ সালের ২৬শে জুলাই বাজারে প্রকাশ্য জায়গায় জ্বালিয়ে দেওয়া হয়।এই সবটাই হয় সরকারি উদ্যোগে।এর পরেই প্রথমে নাদার জাতির মানুষ বিদ্রোহ আরম্ভ করে পরে অন্যান্য জাতের মানুষরাও এই বিদ্রোহে সামিল হয়।চার্চের উদ্যোগেও মানুষদের সঙ্ঘবদ্ধ করবার কাজ আরম্ভ করা হয়।এমনকি খ্রীষ্টান ধর্মের প্রচার ও প্রসারের ফলে নিচু শ্রেণির মানুষরা দলে দলে খ্রীষ্টান হতে আরম্ভ করলে এই ঘৃণ্য প্রথা আস্তে আস্তে অবলুপ্ত হয়।পরে মাদ্রাজের গর্ভনর চালর্স ট্রাভেলিনের ব্যবস্থাপনাতে সবাই এই পোশাক পরবার অনুমতি পায়।তবে প্রথম দিকে ব্রাহ্মণ বাড়ির মেয়েরা যেভাবে বক্ষ বন্ধনী ব্যবহার করতেন সেভাবে বাকি সবাইকে পোশাক ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয়।এই ‘মুলাকরম’ কর ব্যবস্থার সাথে আরেক জনের নাম বিশেষ ভাবে জড়িয়ে গেছে।তার নাম নাঙ্গেলী।কেরলের মধ্য অঞ্চলে ট্রাভাঙ্কর রাজ্যের চারথালা (বা চেরথালা) গ্রামের এজাভা জাতের নাঙ্গেলী এই রকম এক অদ্ভুত অশালীন কর প্রথার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ স্বরূপ কর চাইতে আসা এক রাজকর্মচারীর হাতের ওপর নিজের দুটি স্তন কেটে তুলে দেয়।অতিরিক্ত রক্তপাতে তার মৃত্যু হয়।তার স্বামী চিরুকাদান জ্বলন্ত চিতায় ঝাঁপিয়ে আত্মবিসর্জন করে।তাকেই ভারতের প্রথম পুরুষ সতী বলে দাবি করা হয়।অনেক ঐতিহাসিক এই তথ্যকে স্বীকার করে না।কিন্তু ভাবতে অবাক লাগে যে ভারতে একের পর এক নিচু জাতের মানুষরা একের পর এক ভক্তি আন্দোলনের সাথে যুক্ত ছিলেন(কবির তাঁতির ঘরের, দাদু ধুনুরি ঘরের, রবিদাস মুচির ঘরের), যেখানে মহাভারত রচনা করেন এক ক্যাওট সম্প্রদায় ভুক্ত মহিলার পুত্র, সেখানেই মুলাকরমের মত একটা জঘন্য কর ব্যবস্থা শুধু এই দেশের নয় সারা পৃথিবীর কাছে লজ্জা। যদিও অনেক ঐতিহাসিক এই কর ব্যবস্থার কথা স্বীকার করেন না।তাঁরা বলেন সেই সময় কেরালার কিছু জাতের মধ্যে বক্ষবন্ধনী ব্যবহারের প্রচলন ছিল না, এমনকি কোন কোন ঐতিহাসিক এই প্রথাকে শুধু মাত্র ভিক্টোরিয়ান যুগের রক্ষণশীলতার বিরুদ্ধে একটা সাধারণ বিদ্রোহ হিসাবেই দেখেছেন।তবে সেই সময়কারের নিচুজাতের মহিলাদের যে একটা বিশেষ ধরনের কর দিতে হত সেটা প্রায় সব ঐতিহাসিক স্বীকার করেছেন।একটা যে সামাজিক আন্দোলন হয়েছিল সেকথাও স্বীকার করেছেন অনেকেই স্বীকার করেছেন নাঙ্গেলীর কথাও।এর পরবর্তী কালে আরেক সামাজিক আন্দোলনের ফলে ১৯৮১ সালে প্রায় ২৪০০০ নাদার জাতের মানুষ নিজেদের ক্ষত্রিয় বলে দাবি করে, এবং পৈতে পরা ও পাল্কি চেপে বিয়ে করতে যাবার অধিকার দাবি করে এবং স্বীকৃতি পায়,এমন কি নাম্বোদিরী ব্রাহ্মণদের মধ্যে প্রচলিত থাকা আরেকটি অশালীন প্রথারও অবলুপ্তি হয়।তারা আগে নায়ার পরিবার থেকে যেকোন মহিলাকে রাতের জন্যে নিয়ে যেতে পারতেন। ‘মুলাকরমের’ সামাজিক আন্দোলন এই জঘন্য প্রথারও অবলুপ্তি ঘটায়।যাই হোক ঐতিহাসিক যা তথ্য বা তত্ত্ব থাকুক ভারতেবর্ষে একটা সময় ধরে হিন্দু ধর্মের তথাকথিত নিচু জাতের মানুষদের ওপর বর্ণ হিন্দুরা যে অত্যাচার করত সেই ব্যাপারে আর কোন ঐতিহাসিক দ্বিমত করেন নি, হয়ত মুলকরম কিছুটা সত্য কিছুটা অতিরঞ্জিত, কিন্তু এটি একটি অত্যাচারের দলিল।


 

খুঁতখুঁতে গিন্নি - প্রদীপ কুমার দে || khut khute ginni - Pradip Kumar de || রম্যরচনা || Rammyarochona

 খুঁতখুঁতে গিন্নি 

 প্রদীপ কুমার দে


ব্যাগটা সবে নামিয়েছি, গিন্নি দৌড়ে এল, সুদুর রান্নাঘর থেকে নাইলনের মোটা বাজারের ব্যাগ দেখেই উনি বুঝে গেছেন যতসব রদ্দিমাল,মানে সবজি আমি মহামুল্যে কিনে এনেছি।


ও রেগে লাল, মাথার চুল এলোমেলো করে চিৎকার -- এসব কি এনেছো যাচ্ছেতাই?


সবে বাজার থেকে এলাম, করোনার আবহে মুখের মাস্কটাও পর্যন্ত খুলতে পারিনি, হাত পা ধোওয়া দুরে থাক, কিছু না দেখেই মাথা আমার খারাপ করে দেওয়ার পালা। আর আমি সত্যিই বোকা প্রায়শই মুখ খুলে ফেলি আর সেই একই উৎপত্তি শুরু হয়ে যায়, কচ্ছপের গল্পের মতোই। তাই বলেই ফেললাম --

-- আরে চেঁচামেচি করছো কেন? আগেতো থলি থেকে সব বার করে দেখো। সমস্ত মাল বেছে বেছে এনেছি।


-- দেখো মাথা গরম করো না আমার, বুঝলে? আমি একবার দেখলেই বুঝতে পারি। আর সব বেশি বেশি দাম দিয়ে এনেছো এই সব ফেলে দেওয়া সব্জিগুলো? 


-- আরে না না, সব দামী এবং টাটকা!


-- ঠিক আছে। ঠিক আছে! যা সব এনেছো - ওগুলো দিয়ে তুমিই রান্না করবে, আমি ছুঁয়েও দেখবো না, এই বলে দিলাম। যত্তোসব!


আমি তাড়াতাড়ি ব্যাগ উল্টে দিলাম। আনাজ গুলো গড়াগড়ি খেয়ে দিক-বেদিক বেমালুম হয়ে গেল। দু একটা হাতে তুলে বৌয়ের উদ্দেশ্যে নাড়ালাম -- দেখো ! বললাম না ? কত টাটাকা দেখ!


গিন্নি ওসবের ধার দিয়েও গেল না। পালং শাকের আঁটিটা হাতে তুলে নিয়ে কি চেঁচানি -- ছ্যা! ছ্যা এটা কি? এটা ফেলে দিলে গরুতেও তো খাবে না!


আমি বেগতিক দেখে কেটে পড়লাম। একেবারে সোজা ছাদে গিয়ে ঠাঁই নিলাম। কিনা কান খাঁড়া করে শুনতে লাগলাম গিন্নির চিল্লানি -- কোনো কাজটা যদি পারে। সব কিছুতেই বড় বড় ভাষণ!

কাজের বেলায় অকর্মার ঢেঁকি !


লজ্জায় কান লাল হয়ে গেল। কর্মজীবনে যে আমি কিনা ম্যানেজার হয়ে সকলকে ধমকেছি সেই আমিই এখন বউয়ের হাতে জব্দ হয়ে ল্যাজ গুটিয়ে নিজেকে লুকাচ্ছি! ছিঃ ছিঃ! ভগবানের এ কেমন বিচার? না ভগবান- ফগমান কিছু নেই!


আশেপাশের বাড়ির প্রতিবেশী বৌদিরা সব শুনছে আর কি ভাবছে কে জানে? ছিঃ ছিঃ!

Tuesday, May 30, 2023

অদৃশ্য - সাহানাজ ইয়াসমিন মুনমুন || Odrishya - Sahanaj Yasmeen moonmoon || Short Story || ছোটগল্প

 অদৃশ্য

সাহানাজ ইয়াসমিন মুনমুন


একদা এক সময় নিশ্চিন্তপুর গ্রামে, সুন্দরলাল নামে এক জমিদার বাস করতেন। তিনি অত্যন্ত দয়ালু ও সৎ ব্যক্তি ছিলেন। অন্যদিকে জমিদার বাবুর একমাত্র ভাই অমরলাল যেমন খুব লোভী আর হিংসাপরায়ন তেমনই অত্যাচারী ও দুশ্চরিত্র ছিলেন।জমিদার বাবু ও তাঁর স্ত্রী সত্যবতি ও তাদের দুই ছেলে,রতন,সনাতন এবং তাদের একমাত্র কন্যা সুতপাকে নিয়ে তিনি খুব সুখেই ছিলেন। জমিদারবাবু তার ছেলে মেয়েদের অত্যন্ত ভালোবাসতেন।তিনি সবসময় তাদের হাসি,খুশি আনন্দে রাখার চেষ্টা করতেন। মেয়েকে তিনি একটু বেশিই আদর,যত্ন করতেন। মেয়েও বাবা অন্তপ্রাণ! 

রতন ও সনাতন দুই ভাইও তাদের বোনকে খুব ভালোবাসতো। অন্যের বিপদে জমিদার বাবু সবসময় ঝাঁপিয়ে পড়তেন। কখনো কোনো অন্যায়কে তিনি প্রশ্রয় দিতেন না। 

গ্রামের সকলেই জমিদার বাবুকে খুব সম্মান করতেন এবং সকলে তাঁর কথার মান্যতা দিতেন।অমরলাল জমিদার বাবুর ভাই হলেও আচার,আচরণে সম্পূর্ণ তার দাদার বিপরীত।

অমরলাল সবসময় তার দাদার বিশ্বাসের সুযোগ নিয়ে তার দাদার ক্ষতি করার চেষ্টা করতেন। জমিদার বাবুর বিপুল সম্পত্তি নিজের নামে করে নেওয়ার জন্য বিভিন্ন ফন্দি কষতেন।দাদার সামনে এমন মিষ্ট আর বিনয়ী ব্যবহার করতেন যে,দাদা তার ভাইকে কখনো সন্দেহ করতেই পারবেন না।কিন্তু পেছন থেকে জমিদার বাবুকে আক্রমণ করার দুষ্ট প্রবৃত্তি সে মনের মধ্যে পুষে রাখতো। জমিদারি দেখাশোনার দায়িত্ব ছিল অমর লালের উপর। জমিদার বাবু কখনো কোনো হিসেব চাইতেন না তার ভাইয়ের কাছে। কিন্তু একদিন অমর লাল গ্রামের সুপর্ণা নামের একটি মেয়েকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে যায় জমিদারবাবুর বাগানবাড়িতে এবং সেখানে সে মেয়েটির শ্লীলতা হানির চেষ্টা করে। গ্রামের সকলের কাছে এই খবর পৌঁছতেই তারা মেয়েটিকে নিয়ে জমিদার বাবুর কাছে এই ঘটনার বিচার চাইতে যায়।

জমিদার বাবুর উপস্থিতিতে গ্রামে বিচার বসলো এবং সেখানে তিনি সবার সামনে তার ভাই অমর লালকে কঠোর শাস্তি দিলেন।এবং মেয়েটির কাছে তার কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা চাইতে বললেন। অমরলাল সবার সামনে ক্ষমা চাইলেও লজ্জায়,অপমানে সে আরো বেশি উত্তেজিত ও হিংসাত্মক হয়ে উঠে।তার দাদা বেঁচে থাকতে সে, কখনোই কোনো অন্যায় কাজ করে সে,যে পার পাবে না,সেটা অমরলাল ভালো মতই জানে।তাই সর্বাগ্রে সে তার দাদাকে তার রাস্তা থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য উঠে পড়ে লাগলো। কিন্তু জমিদার বাবুকে চিরতরে শেষ করে দেওয়ার আগে তাঁর বিপুল সম্পত্তি সে নিজের নামে করে নিতে হবে,একদিন তাই নায়েব মশাইকে সঙ্গে নিয়ে সে ছক কোষতে বসলো।কি করে জমিদার বাবুর সব সম্মত্তি নিজের নামে করে নেওয়া যায়,সেই নিয়ে যখন তারা আলাপ আলোচনা করছিলো ঠিক সেই সময় সুপর্ণা অর্থাৎ অমরলাল যার শ্লীলতা হানি করেছিল,সে কোনোভাবে আড়াল থেকে তাদের কথা শুনে নেয়। সুপর্ণা সেসব কথা শোনা মাত্রই সেখান থেকে যখন দৌড়ে যাচ্ছিল জমিদার বাবুর বাড়ি,অমলের কূট চক্রান্তের ব্যাপারে জমিদার বাবুর কাছে সবটা জানাতে, সেই সময় অমল কোনো ভাবে বুঝতে পেরে সুপর্ণার পিছু নিয়ে তাকে ধরে ফেলে এবং প্রমাণ লোপাটের জন্য তার গলা চেপে শ্বাসরোধ করে তাকে মেরে সেখানে থাকা একটি শিমূল গাছে তাকে এমন ভাবে ঝুলিয়ে দেয় যেনো সুপর্ণা নিজেই আত্মহত্যা করেছে। তারপর অমর লাল সেখান থেকে পালিয়ে যায়। ঘটনার সময় কেও ছিলনা।গ্রামের সবাই ভাবলো সুপর্ণা সেদিনের ঘটে যাওয়া নোংরা ঘটনার জন্য লজ্জায়,অপমানে আত্মহত্যা করেছে। আসল সত্যটা কেও জানতে পারলো না।কিছুদিন পর অমরলাল জমিদার বাড়িতে যায়,দুপুরের খাওয়া দাওয়া সেরে জমিদার বাবু বিশ্রাম নিচ্ছেন আর জমিদার গিন্নি সত্যবতী,জমিদার বাবুকে পান সেজে দিচ্ছেন এমন সময় অমরলাল প্রবেশ করলো অন্দরে।সত্যবতী অমরলালকে কেদারায় বসতে দিয়ে বলে উঠলেন," কি ব্যাপার ঠাকুর পো! হঠাৎ এই সময় তোমার আগমন?"

অমরলাল সত্যবতিকে একটু বাইরে যেতে বললেন।

সত্যবতী প্রস্থান করলে,অমরলাল জমির একটি কাগজ নিয়ে তার দাদার হাতে দিয়ে সেখানে সই করতে বলে জমিদার বাবু কাগজে কি লেখা আছে

না পড়েই সই করে দেন।এরপর অমরলাল সেখান থেকে চলে যায়। সত্যবতী জমিদার বাবুর কাছে অমরলালের আগমনের কারণ জানতে চাইলে তিনি কাগজে সইয়ের ব্যাপারে বলেন। সত্যবতীর মনে একটা খটকা লাগলো। না পড়ে সই দেওয়া জমিদার বাবুর উচিৎ হয়নি সেকথা তিনি জমিদার বাবুকে বললেন। কয়েকদিন পর অমরলাল জমিদার বাবুর সমস্ত সম্পত্তির দখল নিয়ে নিলেন। জমিদার বাবুর কাছে সম্পত্তি বলতে পড়ে রইলো শুধু ওই বাড়িটুকু।

জমিদার বাবু তার নিজের ভাইয়ের এই বিশ্বাস ঘাতকতা সহ্য করতে না পেরে অসুস্থ হয়ে পড়লেন।

জমিদার বাড়িতে দুঃখের ছায়া নেমে আসলো।

কিছুদিন এই ভাবেই কেটে যাওয়ার পর....... 

একদিন নিশ্চিন্তপুর গ্রামে এক বিশাল মেলার আয়োজন হলো।আর জমিদারবাবু কাছে তার তিন ছেলে মেয়ে গিয়ে আবদার করলো তারা মেলায় ঘুরতে যাবে। জমিদার বাবু তাদের সম্মতি দিলেন।সেখানে গিয়ে তারা সবাই খুব আনন্দ আর উল্লাসে মেতে উঠলো। তারা সারাদিন মেলায় ঘোরাঘুরি করার পর জমিদার বাবুর মেয়ে সুতপা একটি কথা বলা পুতুল কিনে তার দুই দাদার সঙ্গে বাড়ি ফিরলো। সুতপা পুতুলটি পেয়ে খুব খুশি।সে তার নিজের ঘরে গিয়ে পুতুলটির সঙ্গে একান্ত মনে কথা বলতে লাগলো।এরপর রাত্রি হলে,সুতপা পুতুলটি তার পাশে নিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে।

মাঝরাত্রির দিকে যখন তার একটু ঘুম ভাঙলো,

তখন সে তার বিছানা হাতড়াতে শুরু করে,কিন্তু কি অদ্ভুত ব্যাপার!পুতুলটি সেখানে আর নেই।

সে অবাক হয়ে খোঁজাখুঁজি শুরু করে দেয়।

ক্ষণিকের জন্য সে ভবলো তার দুই দাদা হয়তো তার সাথে মজা করে পুতুল সরিয়ে নিয়েছে, তাই সে দাদাদের ঘরে গিয়ে খুঁজতে লাগলো কিন্তু কোথাও পুতুলটি নেই। দাদারাও ঘুমে বিভোর।তবে কোথায় থাকতে পারে পুতুলটি সে ভাবতে লাগলো।পুতুলের তো হাত পা নেই!যে হেঁটে কোথাও চলে যাবে এই ভেবে সে খুব দুঃখ মনে চুপ করে ঘরে তার বিছানার উপর বসে রইলো। ঠিক কিছুক্ষন পর তার কানে একটি অদ্ভুত কান্নার আওয়াজ আসতে শুরু করলো। তখন অনেকটা গভীর রাত্রি! বাড়ির অন্যরা সবাই ঘুমোচ্ছে।সুতপা বলে উঠলো,"কে ওখানে"? "কে?" এই বলে সে ঘর থেকে বেরিয়ে কান্নার আওয়াজ'টিকে অনুসরণ করে এগিয়ে গেলো।

কিন্তু কোথাও তো কেও নেই! আবার সে তার ঘরে ফিরে গেলো। আবারও কিছুক্ষণ পর একই কান্নার আওয়াজ আসতে লাগলো তার কানে।এবার সুতপা একটু ভয় পেলো।এবং সে দৌড়ে তার মায়ের ঘরে যেতেই,তার হঠাৎ মনে হলো,পুতুলটি তার আসে পাশেই যেনো কোথাও সে একপলক দেখলো! তৎক্ষণাৎ পিছু ফিরে চাইতেই সে একটি কালো বিড়াল দেখতে পেলো। কিন্তু সুতপা যখন বিড়ালটিকে তাড়তে গেলো,ঠিক তখনই বিড়ালটি অদ্ভুত ভাবে তার স্বরুপ বদলে একটি খরগোশে পরিণত হয়ে গেলো।সুতপা এবার ভয়ে আতঙ্কে তার মায়ের ঘরে ছুটে পালালো।তার মাকে জড়িয়ে ধরে সে কাতরাতে শুরু করলো। তার মায়ের ঘুম ভেঙে গেলো এবং তাকে তার ভয়ের কারণ জিজ্ঞেস করলে,সুতপা তার মাকে ঘটনাটি জানায়।সুতপার মা হেসে বললেন, "ওসব কিছুনা সোনা,ওটা আসলে,তোমার মনের ভুল।ঘুমের ঘোরে কি দেখতে কি দেখেছো,ঘুমিয়ে পড়ো এখন।সকালে দেখবে আর কিছু মনে নেই!" এই বলে তিনি মেয়েকে জড়িয়ে ঘুমিয়ে পড়লেন। কিন্তু সুতপার চোখে ঘুম নেই সে ভাবতে লাগলো তার পুতুল হারিয়ে যাওয়া এবং বিড়ালের খরগোশে পরিণত হওয়া এটা কোনো স্বাভাবিক ব্যাপার নয়। এতদিন তো তাদের বাড়িতে এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। এই ভাবনায় সে সারারাত্রি বিছানায় শুয়ে শুয়ে জেগে রইলো সারারাত। সকাল হলে তার ঘরে গিয়ে দেখে পুতুলটি

তার বিছানাতেই আছে। সে অনেকটা অবাক আর স্তভিত হলো। তারপর তার নিজেরও মনে হতে লাগলো তার মা হয়তো ঠিকই বলেছেন "তার মনেরই ভুল ছিল!"

সারাদিন সুতপা আবার পুতুলটি নিয়ে খেলা করার পর রাত্রিবেলায় যখন আবার ঘুমিয়ে পড়লো তখন

আগের রাত্রির মত একই ঘটনা ঘটলো।পুতুলটি বিছানা থেকে আবার উধাও হয়ে গেলো দেখে সুতপা 

যখন খোঁজাখুঁজি করতে লাগলো সে দেখতে পেল 

এক ভয়ঙ্কর দৃশ্য! পুতুলটির হাত, মুখ পুরো রক্ত মাখা আর একপা একপা করে বাড়ির উঠোন পেরিয়ে তার ঘরের দিকে আসছে। সুতপা ভয়ে,আতঙ্কে সেখান থেকে তার মায়ের ঘরে ছুটে পালায় এবং তার মাকে বিষয়টি বলে। তখনই তার মা সুতপাকে সঙ্গে নিয়ে তার ঘরে গিয়ে দেখলো পুতুলটি আগের মতই আছে। কোথাও কোনো রক্তের ছাপ নেই!

মা সুতপাকে আগের দিনের মতোই একই কথা বললেন। সুতপা সারারাত জেগে পুতুলটির ব্যাপারে 

ভাবতে থাকলো। এই পুতুল কোনো সাধারণ পুতুল নয় সে বুঝতে পারলো।পরদিন সকালে শোনা গেলো নায়েব মশাই যিনি,জমিদার বাবুর সম্পত্তি অন্যায় ভাবে অমলবাবুর নিজের নামে করে নেওয়ার ব্যাপারে তাকে সাহায্য করেছিলেন।জমিদার বাবুর সঙ্গে তিনিও বিশ্বাস ঘাতকতা করেছেন।অমলবাবুর অসৎ উদ্দ্যেশে তিনি সঙ্গ দিয়েছিলেন। সুপর্ণার মৃত্যুর জন্য তিনিও সমান ভাবে দায়ী ছিলেন।সেই নায়েব মশাই গলা কাটা রক্তাক্ত ও ক্ষত,বিক্ষত অবস্থায় বাগান বাড়ির কাছে পড়ে রয়েছে। 

পুতুলটির মধ্যে যে এক অলৌকিক ক্ষমতা আছে সেই ব্যাপারে সুতপার মনে সন্দেহ হতে লাগলো।

কিন্তু পুতুলটি সুতপার বা জমিদার বাড়ির কোনো

কোনো ক্ষতি চাইছে না সেটা সে এই কদিনেই বুঝেছে। সুতপা যেহুতু পুতুলটিকে খুব ভালোবাসে,

তার সাথে খেলা করে,কথা বলে সময় কাটায়,সেই জায়গা থেকেও কোথাও গিয়ে তার মনে পুতুলটিকে নিয়ে একটু সন্দেহ,একটু ভয় হলেও তার মনের মধ্যে কোথাও সাহসটুকুও ছিল।পুতুলটি কোনোদিন তাদের কোনো ক্ষতি করবেনা সে ব্যাপারেও সে নিশ্চিত হতে পেরেছিল। যাইহোক নায়েব মশায়ের অস্বাভাবিক মৃত্যুতে গ্রামে একরকম হইচই শুরু হয়ে গেলো।জমিদার বাড়িতেও খবর এলো,জমিদার বাবু

তার অসুস্থ শরীর নিয়ে গ্রামে বের হলেন।

তাঁর এতদিনের সম্পর্ক নায়েব মশাইয়ের সাথে তিনিও শোকাহত হলেন।মৃত্যু রহস্য কেও উদঘাটন করতে পারলেন না। 

কয়েকদিন পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হল। 

সুতপা লক্ষ্য করলো পুতুলটি রাত্রে আর কোথাও যাচ্ছে না সে রাত্রিবেলায় প্রায় জেগে,জেগে সেটা লক্ষ্য করেছে। তার মনে আবারও বিশ্বাস জাগতে 

শুরু করলো। সে ভাবলো সে হয়তো পুতুলটিকে অহেতুক সন্দেহ করেছে। পুতুলটির রক্ত মাখা মুখটি

তার দেখার হয়তো ভুল ছিল। হয়তো তার দুই দাদা

তার সাথে মজা করে পুতুলটি রাত্রে তার বিছানা থেকে সরিয়ে নেয় এবং আবার রেখে যায়। 

সুতপার সঙ্গে তার দুই দাদার বয়সের একটা ফারাক থাকলেও,তারা সুতপার সঙ্গে সবসময় ঠাট্টা মজা করে থাকতো।জমিদার বাবুর দাম্পত্য জীবনে দীর্ঘদিন কোনো সন্তান ছিল না। প্রায় মাঝ বয়সে দুই ছেলে সনাতন আর রতনের জন্ম। সুতপার জন্ম তাদের অনেক পরে। অমলবাবু জমিদার বাবুর ভাই

হলেও নিজের সন্তানের চোখে দেখতেন,সন্তানের মত

স্নেহ ভালবাসা দিয়ে তিনি তার ভাইকে বড় করেছেন।

জমিদার বাবুর ঠাকুরদার অমতে তাঁর বাবা বিয়ে করেছিলেন বলে তিনি তাঁর সমস্ত সম্পত্তি তাঁর একমাত্র নাতি জমিদার বাবুর নামে করে দিয়েছিলেন। অমলবাবুর জন্ম তখন হয়নি। তাদের দুই ভাইয়ের মধ্যে বয়সের বিস্তর ফারাক। অমরবাবুর মনে হোত,জমিদার বাবুর সমস্ত সম্পত্তি

একদিন তাঁর সন্তানরাই পাবে। কিন্তু জমিদারবাবু 

কখনোই অমরবাবুকে বঞ্চিত করার কথা ভাবতেন না। আর অমরবাবু এতটাই লোভী ছিলেন যে দাদার পুরো জমিদারিটাই সে নিজের দখলে চাইতো। আর শেষ পর্যন্ত জমিদার বাবুকে ঠকিয়ে সেটাই সে করে ছাড়লো। 

নায়েব মশায়ের মৃত্যুর প্রায় কিছুদিন পরই,গ্রামে আবারও শোরগোল পড়ে গেলো!

অমরলাল আত্মহত্যা করেছে বলে চারিদিকে রব উঠলো।জমিদার বাবু সংবাদ পাওয়া মাত্রই সেখানে ছুটে গেলেন। জমিদার বাবু ও গ্রামের সবাই আশ্চর্যজনক হয়ে দেখলো,ঠিক ওই জায়গায়,এবং

ওই একই গাছে,সুপর্ণা যেভাবে ঝুলে আত্মহত্যা করেছিল সেইরূপ অমরলাল গলায় ফাঁস দিয়ে ঝুলে রয়েছে।অমরলাল কেনো আত্মহত্যা করবে?তার তো আত্মহত্যার কোনো কারণ নেই!তার হাতে পুরো জমিদারিটাই রয়েছে। সে এখন গ্রামের জমিদার। তাহলে,এতদিনে কেনই বা অমরলাল কোনো কারণ ছাড়া আত্মহত্যা করতে যাবে?এটা খুব আশ্চর্যের একটা ব্যাপার!সবার মনে নানা রকম প্রশ্নের উদয় হতে লাগলো। 

জমিদার বাবু তাঁর ভাইয়ের মৃত্যুতে কান্নায় ভেঙে পড়লেন। শোক ও দুঃখ নিয়ে তিনি যখন সেখান থেকে তাঁর বাড়ি ফিরলেন তখন তাঁর ঘরে প্রবেশ মাত্রই তিনি দেখতে পেলেন বিছানার পাশে, তাঁর আরাম কেদারাটির উপর কতকগুলো দলিল!

তাঁর সমস্ত সম্পত্তির দলিল!তিনি হতবাক হয়ে গেলেন! জমিদার গিন্নি সুতপাকে ডেকে তিনি বললেন,"এই দলিল গুলো তো অমরলালের কাছে ছিল এখানে কিভাবে এলো?" সত্যবতী কিছুই জানে না এ ব্যাপারে সেও অবাক হয়ে রইলো!

তবে কি অমরলাল তাঁর ভুল বুঝতে পেরে এখানে দলিল গুলো রেখে গিয়ে আত্মহত্যা করেছে! জমিদার বাবু আরও কান্নায় ভেঙে পড়লেন! 

সেই মুহূর্তে সুতপাও ঘরে প্রবেশ করলো। সে বললো

" পুতুলটি বাড়িতে কোথাও নেই! রাত্রি বেলায় সে গভীর ভাবে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম,তারপর সকাল বেলা

থেকে খুঁজছি এখন পর্যন্ত পুতুলটিকে বাড়ির কোথাও দেখছি না"! জমিদার বাবু এবার রেগে গিয়ে

মেয়ের উপর একটু চিৎকার করে উঠলেন! " তুমি এখন পুতুল নিয়ে পড়ে আছো? তোমার কাকা মারা গেছেন!" সুতপা অবাক আর হতভম্ব হয়ে চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলো!! 

তারপর ঐ বাড়িতে পুতুলটি আর কোনোদিন দেখা যায় নি!


সুপর্ণা পুতুলরূপে জমিদার বাড়িতে ফিরে এসে তার অসম্পূর্ণ কাজটি সম্পুর্ণ করে দিয়ে গেলো! 

তাঁর মৃত্যু যেমন সবার চোখে একটা রহস্য ছিল তেমনই অমরলালের মৃত্যু সারা গ্রামবাসীর কাছে রহস্যই থেকে গেলো! সে জমিদার বাড়িকে যেমন রক্ষা করলো তেমনই তাঁর মৃত্যুর প্রতিশোধও সে নিজেই নিল! সে এখন পুরোপুরি মুক্ত,নিশ্চিন্ত!

মনুষ্যত্ব - সংযুক্তা পাল || Manusatta - Sanjukta pal || Short Story || ছোটগল্প

 মনুষ্যত্ব

সংযুক্তা পাল



......টিং টং।

বেলা সবে কাজকর্ম সেরে দুপুরের খাবার খেয়ে একটু ভাত-ঘুম দেওয়ার চেষ্টা করছে এ.সি.তে শুয়ে। বৈশাখের মাঝামাঝি গরমটা অসহ্য লাগছে এই পাঁচতলার উপরে। বিশেষ করে যখন ও রান্নাঘরে থাকে তখন গলগল করে ঘামতে থাকে। তখন শখ করে এই ফ্ল্যাটটা কিনেছিল। এখন আর ভালো লাগছে না। এ.সি.তে সব সময় তো আর থাকা যায় না। আর দুটো ঘরেই শুধু এ.সি. লাগানো।ওই ঘুমোবার সময়'টুকুই শুধু আরাম।এখন ছেলে-মেয়েরা স্কুলে। বর অফিসে। এ.সি.র মধ্যে একটু আয়েস করা যেতেই পারে। চোখটা লেগে এসেছিল ঠান্ডার আরামে। কলিং-বেলের আওয়াজে ঘুমটা ভাঙল। 'উফ' বলে অস্পষ্ট আওয়াজ করে বেলা উঠে বসল।মনে মনে ভাবল এখন আবার কে! শান্তিতে একটু শুতেও দেবে না! আবারও একবার বেলটা বাজল। অনিচ্ছা সত্ত্বেও বেলা বিছানা ছেড়ে নামল।

দরজার আইহোল দিয়ে দেখল। একটা সেলসগার্ল মনে হল দাঁড়িয়ে আছে। দু'কাধে অনেকগুলো ব্যাগ। মনে মনে কেয়ারটেকারটার গুষ্টির ষষ্ঠীপুজো করে দরজা খুলল। যতীন পইপই করে বলে দিয়েছে অচেনা কাওকে দেখলে দরজা খুলবে না। এই কেয়ার-টেকারের ওপর ভরসা নেই। নিজের চেয়ারে কম, আর অন্য জায়গায় বেশি সময় বসে থাকে। ফালতু গল্প করার স্বভাব। তাও বেলা খোলে। ওর আবার নাকি যদি বড় ঘর থেকে দরজা অবধি আসতেই হয় তবে দরজার ওপাশে অপর ব্যক্তির কী বক্তব্য আছে তা জানতে দরজা খোলাটাই শ্রেয় মনে হয়।



         দরজা খুলেই বেলা অচেনা সেলস গার্লটাকে এক ধমক দিল, 'এই তোমাদের ওপরে উঠে আসতে নীচে বসে থাকা কেয়ারটেকার বারণ করেনি? কোথায় থাকে ব্যাটা কে জানে! আজকেই কম্প্লেন জানাতে হবে। কি জ্বালা এই ভরদুপুর বেলা একটু শোওয়া-বসার জো নেই গো। আর তোমরা এই দুপুর রোদে বের হও কি করে গো? শরীর খারাপ লাগে না'!


       মেয়েটি যেন মন মতো প্রশ্নের অপেক্ষাতেই ছিল। চটপট বলে উঠল, 'আমাদের আবার শরীর দিদি। সেলিং এর ওপর আয়। একবেলা খেতে পেলে তখন থেকেই আবার ভাবতে হয় পরের বেলা খেতে পাব কিনা! সকাল থেকে না খেয়েই রয়েছি দিদি। শুধু জল খেয়ে আছি। এই কয়েকটা জিনিস একটু দেখবেন। শুধু দেখবেন। কিনতে হবে না'। বেলা আবার 'জিনিস' কেও দেখাতে চাইলেই আর না বলতে পারে না। মনে মনে ভাবল দেখতে কি দোষ! কোলাপসিবল গেটটা তো লক করা আছে। শুধু দরজা খুলেছে। এইভাবেই কি কি জিনিস মেয়েটা দেখাতে চায় দেখে নিয়ে অবশেষে পছন্দ হয়নি বলে দরজা দিয়ে দেবে। ও মাঝে মাঝে ভুলে যায় ওর ছেলে-মেয়েরাও ওকে কতভাবে ভয় দেখিয়ে এসব সেলস গার্লদের থেকে সাবধান করেছে! ছেলে বলেছে, 'মা এই দরজাটাও খুলবে না তুমি। কারণ ওরা যদি ডাকাত হয় ওদের কাছে বন্দুক থাকবেই। আর ওই বন্দুক নিয়ে কোলাপসিবলের ফাঁক দিয়ে তোমাকে ভয় দেখিয়ে লক খোলাতে বাধ্য করতে পারে। তখন তুমি খুলতে বাধ্য হবেই আর ওরা ওদের সংকেত ব্যবহার করে আরো লোক আনিয়ে ডাকাতি করবে'। বেলা তখনকার মত ভয় পেয়ে সাবধান হয়ে গেলেও পরেরদিন আবার যে কে সেই। সেলস-বয় আর সেলসগার্ল দেখলে আবার ওইসব আকর্ষণীয় ঘর-কন্নার 'জিনিস' দেখার জন্য মোহিত হয়ে পড়ে। এবারেও তাই করল। ছেলে-মেয়ে-বরের নিষেধ পাত্তা না দিয়ে কোলাপসিবল গেট খুলে মেয়েটির আনা নন-স্টিক বিভিন্ন জিনিস দেখতে আরম্ভ করল। নিজের ঘরে এসব রাখার আর জায়গা নেই। যতীন খালি খিটখিট করে ও এসব কেনে বলে। মনে মনে বলল, সেলসগার্ল যে এসেছিল ও ওর বর আর বাচ্চাদের একদম বলবে না। তাহলেই হবে। কিন্তু ওর পেটে যে কোনো কথাই থাকে না। নিজের সে দোষটাও ভালো করেই জানে।


          মেয়েটা ছ'টা ব্যাগ নামিয়ে খুলে শুধুই জিনিস দেখাচ্ছে আর কপাল-গলার ঘাম মুছছে। বেলা নেড়ে-চেড়ে কড়াই,প্যান দেখেই চলেছে। মেয়েটিকে অত ঘাম মুছতে দেখে একবার বলল, 'তুমি জল খাবে'? ও বলল, 'না না ম্যাম। আপনি দেখুন'। মেয়েটা সেই কতক্ষণ থেকে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই জিনিসপত্র দেখাচ্ছে। এত কিছু দেখার পর বেলা বলে উঠল, 'ধুর তোমার এসব জিনিসগুলো একদম ভালো না। না না নেব না। তুমি এখন এস বুঝলে'। মেয়েটির মুখে হতাশার থেকেও এক চরম অস্বস্তি বেলা লক্ষ্য করল। ও বিশেষ পাত্তা না দিয়ে কোলাপসিবল গেটটা লক করে দিতে উদ্যত হল। মেয়েটা তখন হঠাত কাঁদো কাঁদো মুখে বলল, 'ম্যাম আমার একটা উপকার করবেন প্লিজ? আমি চার মাসের প্রেগন্যান্ট। সকাল থেকে জল......' 'এই দাঁড়াও দাঁড়াও। তুমি এসব কথা বলে কী চাইছ আমার কাছ থেকে। বড় জোর তোমাকে দুটো টোস্ট বিস্কিট দিতে পারি। ঘরে এখন বানানো সেরকম কিছুই নেই।ছেলে-মেয়েরা এলে নুডলস বানাবো'। মেয়েটি অসহায়ভাবে বলল, 'ম্যাম আপনাদের টয়লেটটা একটু ব্যবহার করতে দেবেন প্লিজ আমাকে? এই অবস্থায় আপনি তো জানেন ঘনঘন ইউরিন পাস করার দরকার পড়ে। প্রেশার ধরে রাখা যায় না। আর একটু ঘাড়ে-মুখে জল দিলেই আবার বেরিয়ে বাড়ি অবধি চলে যেতে পারব'।

           বেলা পড়ল মহাফাপড়ে। কি করে ও এখন! ওকে পুরো ফ্ল্যাটের ভেতরে মেয়েটাকে ঢুকতে দিতে হবে। সরাসরি যে না করবে তাও পারছে না। এতক্ষণ সত্যি ও খেয়ালই করেনি মেয়েটা প্রেগন্যান্ট। পেটটা ঈষৎ ফোলা। ওর বিবেক ওকে বলল মেয়েটাকে সাহায্য করতে। মেয়েটি খেতে পর্যন্ত চায়নি। শুধু এ'টুকুই.....ভয়ে ভয়ে ইষ্টদেবতাকে স্মরণ করে, মানা-নামানা'র দোলাচলে বিশ্বাসী মনোভাবটুকু সম্বল করে বলল, 'ঠিক আছে তুমি এস'। মেয়েটি বাথরুমে ঢুকে গেল।ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে বেলাকে ঢিপ করে একটা প্রণাম ঠুকল। বেলা ওর জন্য নুন-চিনির শরবত আর বিস্কিট নিয়ে দাঁড়িয়েছিল। মেয়েটি গোগ্রাসে সব খেয়ে নিল। আসি বলে এগোতেই বেলা হাতটা বাড়িয়ে কীছু টাকা দিয়ে বলল, -'কোথায় থাকো তুমি? ভাড়াটা নিয়ে তাড়াতাড়ি বাড়ি যাও। এই অবস্থায় আর এখন বেরোবে না। কী করে তোমার বাড়ির লোক এই রোদে তোমাকে বেরোতে দেয় ভেবে পাই না'।


-'না ম্যাম। বর অ্যাক্সিডেন্ট করে হঠাৎই বিছানাতে শয্যাশায়ী। ভালোবাসার বিয়ে। দুই বাড়ির কেও এখনো মেনে নেয়নি আমাদের এই সম্পর্ক। তাই আমাকে বের হতে হচ্ছে পেটের তাগিদে কাজে। ওদিকে বর বেচারা আমার জন্য কিছু করতে পারছে না বলে শুয়ে শুয়ে চোখের জল ফেলছে।

বেলার খুব কষ্ট হল মেয়েটার জন্য। মেয়েটাকে হাসিমুখে বিদায় দিয়ে আজকের অভিজ্ঞতার কথা ও ওর ডায়েরীতে লিখে রাখল। ও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ বর বাচ্চাদের কিছুতেই এসব বলবে না। না বললেই শান্তি। তবে কত দিন পারবে কে জানে!

কিন্তু বেলার মাথায় আবার চলে এল ছেলের বলা কথাগুলো। ডাকাতি? তবে কী মেয়েটি ডাকাত দলের কেউ? রেইকী করতে বেরিয়েছে ডাকাতি করার আগে। মনুষত্ব্যের সত্যি কোনো মূল্য আছে কি? ধুর আবোল-তাবোল ভাবনা।



ভুত নাকি অদ্ভূত - রিকু দাস || Vut naki Odvut - Riku Das || Short Story || ছোটগল্প

 ভুত নাকি অদ্ভূত

           রিকু দাস


কে ..... কে ওখানে ? কি হলো উওর দিন কে ওখানে? এই বলে সুজিত এগিয়ে যেতে থাকে সামনের আলো আঁধারি তে দাঁড়িয়ে থাকা ছায়া মুর্তি টার দিকে। সুজিত উপলব্ধি করে সে যতোই এগিয়ে যাচ্ছে ছায়া মুর্তি টিও ততোধিক পিছিয়ে যাচ্ছে একটা সময় সুজিত যখন এসে পৌঁছায় এই সেকেন্ড ফ্লোরের এক দম শেষে তখন সে দেখে কোথায় কেউ তো কোথাও নেই। তবে... তবে কি সে ভুল দেখছিলো? কিন্তু সেটাই বা কি ভাবে সম্ভব এক পলকের জন্য হলেও মেনে নেওয়া যেত কিন্তু। এই সকল নানান চিন্তা করতে করতে সুজিত রুমে যাওয়ার জন্য যখনি পিছনে ঘুরেছে ওমনি একটা অস্ফুট স্বরে চিতকার করে মাটির উপর উল্টো পড়ে যায়।। সুজিত সদ্য কলেজে উঠা এক তরুণ যুবক বয়স সবে কুড়ি , সুঠাম চেহারা, গায়ের রং ফর্সা, তবে ওর সবথেকে আকর্ষণীয় অঙ্গ টি হলো ওর চোখের মণি দুটি হালকা নীলচে রঙ্গের মণী বিশিষ্ট মায়াবী চোখের অধিকারি সে । সুজিত এর বাড়ি  পুরুলিয়ার উঁদা তে সেখানে ভালো কোনো কলেজ না থাকার কারণে সুজিত এর বাড়ির লোকেরা ওকে ভর্তি করে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং সেখানের হস্টেলেই তার থাকার ব্যবস্থা করা হয়। আজ সুজিত এই হস্টেলে এসে উঠেছে প্রায় তিন দিন আগে, সুজিত এর রুমটা সেকেন্ড ফ্লোরে এই কয় দিনে সুজিত একটা বিষয় লক্ষ্য করেছে তার রুমের ঠিক দুটো রুম পরে একটা রুম বাইরে থেকে তালা বন্ধ অবস্থায় রয়েছে , মনে বেশ একটা কৌতুহল এর সৃষ্টি হয় তার কিন্ত হস্টেলে নতুন হওয়ার কারণে এখনো তেমন ভাবে কারো সাথে বন্ধুত্ব করে উঠতে পারেনি সে তাই তার এই কৌতূহল টা ছাই চাপা আগুন এর মতোই চাপা পড়ে গেছে , তার রুমে সে ছাড়া আরো তিন জন আছে ঠিকই কিন্তু তারা তেমন ভাবে সুজিত কে পাত্তা দেয় না একে তো নতুন ছেলে তার উপর আবার জুনিয়র তাই , আর সুজিত ও ওদের সাথে খুব একটা মেশার চেষ্টা করে না কারন ওরা তিন জনেই বিহারী আর সুজিত হিন্দিতে কথা বলতে পারে না খুব একটা তাই সে যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলে। দিনটা ছিলো রবিবার সারাদিন কলেজে কাটিয়ে সন্ধ্যায় হোস্টেলে ফিরে সামান্য কিছু খাওয়া দাওয়া করে নিচের তলায় যায় আড্ডা দিতে। সুজিত আজ এই হস্টেলে আছে প্রায় পাঁচ দিন নিচের তলার রুমের দুই এক জন এর সাথে বন্ধুত্ব ও হয়েছে ইতিমধ্যে এক জনের নাম রবিন ও অপর জনের নাম ইন্দ্র তো আড্ডা শুরু হলো এই দিক ওই দিকের কথা দিয়ে তার পর আস্তে আস্তে প্রেম , ভালোবাসা , সবশেষে ভুত প্রেত তো রবিন বললো:- আরে কি বলবো তোদের আমাদের গ্ৰামে এক জন মহিলা কে ভুতে ধরে ছিলো তা সে কি বলবো তোদের মহিলা টা উল্টো দিকে হেঁটে একটা সোজা নারকেল গাছের উপরে উঠে গেলো আমার তো সে দৃশ্য দেখেই মাথা খারাপ । এই কথা শুনে ইন্দ্র বললো:- তোর তো এই টুকু দেখেই অবস্থা খারাপ হয়ে গিয়েছিল আমার সাথে যা ঘটে ছিলো তা যদি তোর সাথে ঘটতো তা হলে তো তুই পেন্টে হিসু করে দিতিস। সোন তবে বলি আমাদের গ্ৰামে রাখাল মাঠ বলে একটা যাইগা আছে, তো একদিন অমবস্যার রাতে আমি  মাঠে গিয়েছিলাম আলু পাহাড়া দিতে আমাদের জমিটা হচ্ছে ওই রাখাল মাঠের একদম পাশেই। তখন প্রায় রাত বারোটা বাজে চারিদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার পুরো জমি টা ভালো করে ঘুরে দেখে বাড়ি ফিরতে যাবো ঠিক এমন সময় আমি দেখলাম আমার থেকে বেশ কিছুটা দূরে কেউ যেনো দাঁড়িয়ে আছে, কতক্ষন অন্ধকারে থাকার কারণে আমার চোখ সয়ে গিয়েছিল তাই একটু ভালো করে তাকাতেই যা দেখলাম তা দেখে তো আমার মাথায় চুল দাঁড়িয়ে গেলো, আমি দেখলাম আমার থেকে কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে আছে একটা গলাকাটা ভুত সে আমার দিকেই এগিয়ে আসছে আমি তো ভয়ের চোটে দিলাম এক ছুট বাড়িতে এসে দাদুকে যখন সব কিছু বললাম তখন দাদু বললো ওই খানে নাকি একটা গলা কাটা ভুত আছে সে নাকি যাকেই কাছে পায় তার গলা কেটে দেয় তার পর থেকে আমি আর কোনো দিন মাঠে যায়নি। বেশ কিছুক্ষণ এই আসারে গল্পের পর তিন জন কেন্টিনে গিয়ে রাতের খাবার খেয়ে আবারো রুমে এসে বসলো । ইন্দ্র বললো:- আচ্ছা সুজিত আজ তো তুই তোর রুমে একা তাই না ? সুজিত বললো:- হ্যাঁ.. ওই ওদের কি যেনো একটা পূজো আজ তাই ওরা তিন জনেই বাড়ি গিয়েছে । রবিন বললো:- তা হলে তুই বরং এক কাজ কর আজ কের রাতটা না হয় আমাদের কাছেই ঘুমিয়ে পর । সুজিত বললো:- আরে না না ওই সবের কোনো প্রয়োজন নেই একটা রাতেরিতো ব্যপার ও ঠিক পেরিয়ে যাবে আচ্ছা তোরা থাক আমি গেলাম কাল আবার সকালে কলেজে যেতে হবে‌ । এই বলে সুজিত নিজের রুমে চলে আসে আসার সময় অবশ্য ইন্দ্র বলেছে কোনো অসুবিধা হলে তাকে ডাকতে ইন্দ্র দের রুমটা নিচের তলায় আর সুজিত এর রুম দোতলায় । রুমে এসে যখন সুজিত বিছানায় শুলো তখন প্রায় সাড়ে দশটা সারাদিন এর ক্লান্তির পর বিছানায় শুয়ে একটা সিগারেট ধরিয়ে মোজ করে টানতে থাকে সুজিত তার পর সিগারেট শেষ করে ঘুমিয়ে পরে । হঠাৎ একটা ঠান্ডা বাতাস গায়ে লাগতেই ঘুমটা ভেঙ্গে গেলো সুজিত এর শীত গিয়ে বসন্ত আসেছে ঠিকই কিন্তু এখনো একটা ঠান্ডা ঠান্ডা ভাব রয়েছে তাই রুমে থাকা সিলিং ফ্যান টা এখন বন্ধয় থাকে কিন্তু এই ঠান্ডা হাওয়া আসছে কোথা থেকে এই ভেবে চোখটা খুলতেই আতংকে ওঠে সুজিত তার বেড টা একদম  দরজার সামনেই সে ঘুম ঘুম চোখে দেখে রুমের দরজা টা হাট করে খোলা আর দরজার ঠিক সামনেই দাঁড়িয়ে আছে একটা মেয়ে মেয়েটির পড়নে একটা সালোয়ার কামিজ ও গলায় একটা উর্না পেঁচানো অবস্থায় রয়েছে কিন্তু এই এতো রাতে বয়েজ হোস্টেলে মেয়ে এলো কোথা থেকে বিছানা থেকে ধরমর করে উঠে হাতের উলটো পিঠ দিয়ে চোখ কচলে আবার সে দিকে তাকাতেই সুজিত আবারো অবাক হলো কোথায় মেয়ে কেউ কোথাও নেই হয়তো মোনের ভুল এই ভেবে সে দরজা টা বন্ধ করে আবারো এসে শুয়ে পড়লো বিছানায় বেশ কিছুক্ষণ পর আবারো একটা ঠান্ডা বাতাসে সুজিত এর ঘুম ভেংগে গেলো এক রাস বিরক্তির সাথে সুজিত চোখ খুলতেই সে দেখলো সামনের দরজা টা খোলা আর ঠিক আগের বারের মতোই সেখানে দাঁড়িয়ে আছে ওই মেয়েটি সুজিতের ঘুম এক নিমেষেই উড়ে গেলো চোখ কচলে আবার তাকিয়ে দেখলো না এবারে  আর সেই মেয়েটি অদৃশ্য হয়ে যায়নি সে এখনো দাঁড়িয়ে আছে দরজাটার সামনেই। এবার সেই মেয়েটি আস্তে আস্তে দরজার সামনে থেকে সরে গেলো , সুজিত এর মনে এবার একটা কৌতুহল ভড় করলো গুটিগুটি পায়ে বিছানা থেকে নেমে ও দরজার দিকে এগিয়ে গেলো দরজার বাইরে মুখ বাড়াতেই সুজিত দেখলো মেয়েটি দাঁড়িয়ে আছে ওই বন্ধ রুম টির সামনে সুজিত ঘর থেকে বেরিয়ে সেই দিকেই এগিয়ে যেতে যেতে প্রশ্ন করলো:- কে ..... কে ওখানে ? কি হলো উওর দিন কে ওখানে? এই বলে সুজিত এগিয়ে যেতে থাকে সামনের আলো আঁধারি তে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটির দিকে। সুজিত উপলব্ধি করে সে যতোই এগিয়ে যাচ্ছে মেয়েটি ততোধিক পিছিয়ে যাচ্ছে একটা সময় সুজিত যখন এসে পৌঁছায় এই সেকেন্ড ফ্লোরের এক দম শেষে তখন সে দেখে কোথায় কেউ তো কোথাও নেই। তবে... তবে কি সে ভুল দেখছিলো? কিন্তু সেটাই বা কি ভাবে সম্ভব এক পলকের জন্য হলেও মেনে নেওয়া যেত কিন্তু। এই সকল নানান চিন্তা করতে করতে সুজিত রুমে যাওয়ার জন্য যখনি পিছনে ঘুরেছে ওমনি একটা অস্ফুট স্বরে চিতকার করে মাটির উপর উল্টে পড়ে যায় সে। সুজিত দেখে সেই মেয়েটি এখন দাঁড়িয়ে আছে ঠিক তার রুমের দরজার সামনে কিন্তু এই মাত্র তো সুজিত ওকে এখানে দেখেছে তা হলে ওই মেয়েটা ওখানে কিভাবে গেলো সুজিত ছুটে যায় তার রুমের দিকে। রুমের দরজার কাছে এসে সুজিত দেখে কোথায় সেই মেয়ে কেউ নেই পিছনে ঘুরে তাকায় কিন্তু না পিছনেও কেউ নেই সুজিত মনে মনে ভাবে:- গেলো কোথায় মেয়েটা? এই মাত্র তো এখানেই ছিলো? হঠাৎ একতলার সিঁড়ি তে ভাড়ি পায়ের শব্দ তার কানে ভেসে আসে কেউ যেনো খুব শব্দ করে সিঁড়ি দিয়ে বার বার উঠছে আর নামছে উঠছে আর নামছে সুজিত এক ছুটে সিঁড়ির কাছে যায় কিন্তু না কোথায় কিছুই তো নেই ঠিক এমন সময় আবারো সেই সিঁড়ি বেয়ে উঠার শব্দ ভেসে আসে তার কানে কিন্তু এবার সেই শব্দ আসছে দোতলার ছাদে যাওয়ার সিঁড়ি থেকে  সুজিত ছুটে যায় সেখানে কিন্তু না এবারেও সেই একই কেউ যেনো তার সাথে খেলছে সুজিত এবার রুমের দিকে ফিরে আসতে যায় ঠিক এমন সময় ছাদে কারো হেঁটে চলে বেরানোর শব্দ আশে তার কানে সে ছুটে যায় ছাদে। ছাদে গিয়ে সে প্রথমে কাওকে দেখতে পায় না হঠাৎ সে দেখতে পায় মেয়েটি গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যাচ্ছে ছাদের একটি কোনার দিকে ছাদে কোনো গাড বা পাঁচিল নেই সুজিত মেয়েটির দিকে এগিয়ে যেতে যেতে মেয়েটিকে উদ্দেশ্য করে বললো:- দাঁড়ান.... দাঁড়ান ওদিকে যাবেন না ..... হয়তো সুজিত এর কথা শুনে মেয়েটি দাঁড়ালো কিন্তু মেয়েটি এখন দাঁড়িয়ে আছে ছাদের এক দম শেষে আর এক পাও বাড়ালে সে ছাদ থেকে নিচে পড়ে যাবে মেয়েটি এবার মাথা ঘুরিয়ে সুজিত এর দিকে এক নজর তাঁকালো সুজিত আবারো বললো:- আর এগুবেন না আপনি পড়ে যাবেন। এই বলে সুজিত যখন মেয়েটির একদম  কাছাকাছি চলে এসেছে আর মাত্র কয়েক হাতের দূরত্ব ঠিক এমন সময় মেয়েটি ছাদ থেকে ঝাপিয়ে পড়ল সুজিত একটা অস্ফুট চিতকার করে ছুটে গেলো ছাদের কোনায় গিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে দেখলো কিন্তু কিছুই দেখতে পেলো না , কি হচ্ছে এ সব কেনোই বা হচ্ছে আর কে করছে এমনটা তার সাথে এই সব ভাবতে ভাবতে সে রুমের দিকে আস্তে থাকে । রুমে প্রবেশ করেই সে চমকে যায় এ কি এটা তো তার রুম না এটা তো দেখে মনে হচ্ছে কোনো মেয়ের রুম চারিদিকে কেবল মাত্র মেয়েদের ব্যবহারর্য জিনিস পত্রে ঠাসা ঠিক এমন সময় কারেন্ট চলে যায় পুরো রুম অন্ধকারে ভড়ে উঠে এবার সুজিত এর মনে একটু ভয় এর সঞ্চার হয় সে অন্ধকারে হাতরাতে থাকে বেশ কিছুক্ষণ পর আবারো কারেন্ট আসে রুমের আলো জ্বলে উঠতেই সুজিত একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে যখন সে সামনের দিকে তাকায় তখনি ভয়ে আতঙ্কে চিতকার করে পিছনে ছিটকে পড়ে যায় এ সে কি দেখছে ওই মেয়েটা গলায় ফাঁস লাগিয়ে ঝুলে আছে সিলিং এর সাথে সুজিত এই দৃশ্য দেখে ভয়ের কারনে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়ে ঠিক এমন সময় আবারো রুমের লাইট অফ হয়ে যায় সুজিত এর চোখে নেমে আসে একরাশ অন্ধকার , অন্ধকারে চোখ সয়ে যেতেই সুজিত আবারো চমকে উঠে এ সে কোথায় এসে পড়েছে চারিদিকে আম গাছ এটাতো হোস্টেলের পিছনের জঙ্গল টা কিন্তু সে এখানে কি ভাবে এলো এই সবই ভাবছে সে হঠাৎ পিছনের দিক থেকে একটা কাঠ ফাটার শব্দ সে শুনতে পাই সে দিকে তাকাতেই সে দেখে একটি চিতা দাউ দাউ করে জ্বলছে আর তার ঠিক উপরে আগুনের লেলিহান শিখায় ঠিক মাঝখানে দাড়িয়ে আছে সেই মেয়েটি ।বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে একটা বিশ্রী কটু গন্ধ মেয়েটির শরীর পুড়ে যাচ্ছে আগুন এর লেলিহান শিখায় আস্তে আস্তে চামড়া মাংস পুড়ছে  এবং সেই মেয়েটি তার দুই হাত বাড়িয়ে যেনো তাকে ডাকছে। এই বিভত্স দৃশ্য আর সহ্য করতে না পেরে ঞ্জান হারিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে সুজিত কতক্ষন অচেতন ছিলো জানিনা যখন ঞ্জান ফিরলো তখন সুজিত দেখলো ও সুয়ে আছে ওর বিছানাতে সামনের দরজা টা হাট করে খোলা সামনের দেয়াল ঘড়িটার দিকে তাকিয়ে দেখলো প্রায় তিনটে বাজে সুজিত আর কালবিলম্ব না করে ছুটে যায় নিচের তলায় ইন্দ্রর রুমে রুমের দরজায় জোরে জোরে শব্দ করতে থাকে সে। দরজা ধাক্কানোর শব্দে ঘুম ভেংগে যায় ইন্দ্র ও রবিনের ঘুম ঘুম চোখে দরজা টা খুলে দিতেই হন্তদন্ত হয়ে ঘরে ঢোকে সুজিত । সুজিত রিতিমত হাঁপাচ্ছে ওর এই অবস্থা দেখে ইন্দ্র চিন্তিত কন্ঠে প্রশ্ন করে :- কি হয়েছে সুজিত? তুই এমন হাপাচ্ছিস কেনো ? সুজিত এর গলা শুকিয়ে যাবার ফলে ও কিচ্ছু বলতে পারছে না অতিকষ্টে সে বলে:- জল....... একটু জল রবিন তারাতারি তার জলের বোতল টা  এনে সুজিত এর হাতে দেয়। নিমেষেই বোতল এর সব জল টুকু শেষ করে খালি বোতল টা রবিন কে ফিরিয়ে দিয়ে সুজিত একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে তার পর এতক্ষণ জাবত তার সাথে ঘটে চলা সমস্ত ঘটনা তাদের খুলে বলে কিন্তু ইন্দ্র আর রবিন এর তা বিশ্বাস হয় না তা সুজিত বেশ ভালোই বুঝতে পারে । ইন্দ্র ও রবিন মনে মনে ভাবে হয়তো ভুতের স্বপ্ন দেখে ভয় পেয়েছে তাই তারা সুজিত কে তাদের কাছেই থাকতে বলে । পরের দিন সুজিত ইন্দ্র ও রবিন গিয়ে সিকিউরিটির কাছে সবটা খুলে বললে সিকিউরিটির হরি দা সুজিত কে একটা গালাগালি করে বললো:- সালা এমনি তে তো রাত বারোটা পর্যন্ত এর তার রুমে গিয়ে আড্ডা মারতে পারো আর রাতে কাওকে ডেকে নিতে পারো না একা শোয়ার ওতো শখ কিসের? ইন্দ্র বললো:- কিন্তু ওই মেয়ে...? ইন্দ্র কে থামিয়ে দিয়ে হরি দা বললো:- তোমাদের বলছি আর কাওকে বলবে না ওই যে রুম টা আছে না  ২০৪ ওখানে একটা মেয়ে  উর্না দিয়ে গলায় ফাঁস লাগিয়ে সুইসাইড করে ছিলো তার বাড়ির লোক তাকে বাড়িতে না নিয়ে গিয়ে এই বিল্ডিং এর পিছনের আম বাগানে তার অন্তিম সংস্কার করে ছিলো তার পর থেকে অনেকেই ওকে দেখেছে। ইন্দ্র প্রশ্ন করলো:- কিন্তু বয়েজ হস্টেলে মেয়ে কোথা থেকে এলো? হরি দা বললো:- আরে এটা আগে লেডিস হস্টেল ছিলো পরে বয়েজ হোস্টেল হয়েছে। তার পর আমরা রুমে চলে আসি আমার কিছু গোছ গাছ বাকি ছিলো। সকালেই সুজিত তার বাড়িতে টেলিফোন করে জানিয়ে দিয়েছে সে এখানে থাকবে না তার বাড়ির লোক সমস্ত বিষয় টা শুনে তাকে বাড়ি ফিরে আসতে বলে , সব কিছু গোছগাছ করে সুজিত যখন হোস্টেলের মেন গেট থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে এমন সময় কি বেশ মনে করে সে একবার পিছনে ঘুরে তাকালো আর তাকাতেই সে প্রকাশ্ দিবালোকে দেখতে পেলো ছাদের ঠিক এই প্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে সেই মেয়েটি সেই একই পোশাক তার পড়নে এবং সে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তারই দিকে।

ঝড়ঝঞ্ঝার আন্দামানে - সামসুজ জামান || Jharjonjhar Andamane - Samsuz zaman || Short Story || ছোটগল্প

                   ঝড়ঝঞ্ঝার আন্দামানে

                                  সামসুজ জামান


একেবারে ছোট্টবেলার ঝড়ের যে ছবি মনে আঁকা আছে তা বাড়ির খুব কাছেই মসজিদ তলার আম গাছের আম কুড়োনোর সাথে যুক্ত হয়ে আছে। আরেকটু বড় হয়ে সেই ছবি কিভাবে, কোথায় অপু আর দুর্গার আম কুড়ানোর সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে গেছে তা বোঝার উপায় নেই।

আরেকবার ঝড় হল আচমকা। আশেপাশের গ্রামে তেমন কিছুই হলো না কিন্তু আমাদের বর্ধমান জেলার কালনা থানার টোলা গ্রামের উপর দিয়েই যেন তার যাবার ইচ্ছে হল। আর সে দানব যাবার সময় গ্রামের পশ্চিম প্রান্তে পশ্চিম ডাঙ্গার বটতলার পুরনো বটগাছ আর গ্রামের উত্তরপ্রান্তে খন্দকার পীরের আস্তানার বিশাল বটগাছের দুটো গাছেরই বেশিরভাগ ডালপালা ভেঙে, গাছ উপড়ে একেবারে তছনছ করে দিয়ে গেল।

তারপর কর্মসূত্রে চলে গেলাম আন্দামানে। আর আন্দামানে থাকবো অথচ ঝড়ের অভিজ্ঞতা হবে না তা তো আর হয় না। সাধারণভাবে আমাদের পশ্চিমবঙ্গের কালবৈশাখীর মতো হঠাৎ ঝড় ওখানে নেই। কিন্তু আবহাওয়ার দুর্যোগের কারণে বিশেষ করে নিম্নচাপ সৃষ্টি হলে যখন তখন প্রাকৃতিক দুর্যোগ ভয়ংকর আকার ধারণ করে। আর সেই প্রচন্ড ঝড়ে সমুদ্র তীরবর্তী এলাকার অবস্থা যারা না দেখেছেন তাদের কাছে ব্যাপারটা বলে বোঝানো সম্ভব নয়। একবার তো ঝড়ের ভয়ংকর অবস্থার ছবি তুলতে কারবাইন্স কোভের সমুদ্রের তীরবর্তী এলাকায় গিয়েছিলাম চার-চাকা নিয়েই। তবে কিনা মাঝখানে এমন অবস্থা মনে হচ্ছিল না সেই চার চাকা আর মাটির উপর দাঁড়িয়ে থাকতে পারবে। এই বিপজ্জনক অবস্থা কাটিয়ে কোনরকমে প্রাণ হাতে করে ফিরেছিলাম। তবে আমার পাঠানো সেই ভিডিওগ্রাফির কিছু অংশ অন্ততঃ কলকাতা টিভির পর্দায় দেখানো হয়েছিল – এটাই যা সান্ত্বনার কথা।

এছাড়া পর্যটকেরা হয়তো দ্বীপ দ্বীপান্তরে ভ্রমনে গেছেন হঠাৎই এমন সময় মাঝেমধ্যে এমন দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতির সুচনা হলো তখন তাদের ‘ছেড়ে দে মা, কেঁদে বাঁচি’-র অবস্থা। হঠাৎই তারা হয়তো শুনলেন রাজধানী পোর্ট ব্লেয়ারে ফেরার সমস্ত যোগাযোগ একেবারেই অচল। কলকাতা যাওয়ার বিমান বন্ধ। ভ্রমণার্থীদের কান্নাকাটি, হা হুতাশ! তবে আন্দামান-নিকোবর প্রশাসন এসব ক্ষেত্রে খুব যোগ্য ব্যবস্থা গ্রহণ ক’রে ভ্রমনার্থীদের উদ্ধার, ফেরা বা খাওয়া-দাওয়া ইত্যাদির যথাযোগ্য ব্যবস্থা করেন। কতবারই এমন হলো। তবে প্রশাসনের তৎপরতায় যাত্রীরা বিপদে পড়েন নি তেমন, কোনো দিনই। প্রশাসনের সর্বোচ্চ প্রশাসক স্বয়ং উপরাজ্যপালের তড়িঘড়ি নির্দেশে পর্যটকদের জন্যে সর্বতোভাবে তাৎক্ষণিক উপযুক্ত সুযোগ-সুবিধার বন্দোবস্থ করা হয়।

তবে জানো বন্ধু একবার ২০শে জুলাই কলকাতা থেকে যাত্রা করেছিলাম আন্দামানের উদ্দ্যেশ্যে। সে বারে জাহাজে ছিলাম ব্যক্তিগত ভাবে আমি একা। আচমকা দ্বিতীয় দিন থেকেই সমুদ্রের মেজাজ খাপ্পা! উঠল ঝোড়ো বাতাস। ভয়ঙ্কর অবস্থা। যে যেখানে পারছে বমি করতে করতে জাহাজে লুটিয়ে পড়ছে। আমার তেমন বমির ধাত নেই কোনদিনই তাই কিছুটা রক্ষে। কিন্তু মন খুব খারাপ। মনে পড়ছে পরদিন বিবাহবার্ষিকী। হয়ত সে কারণেই আমার তখন সেই অবস্থাতেও মনে জাগছে রবিঠাকুরের গান – “ আমার হৃদয় তোমার আপন হাতের দোলে / দোলাও দোলাও দোলাও আমার হৃদয়”। জাহাজের ক্রু দের বারণ সত্তেও একেবারে জাহাজের উপরের ডেকে দাঁড়িয়ে থাকতে-থাকতে প্রতি মুহূর্তেই মনে হচ্ছিল দৈত্যের মতো ছুটে আসা ঢেউয়ের মধ্যে জাহাজের সম্মুখভাগ যেন তলিয়ে যাচ্ছে। মনে হচ্ছেএবার জাহাজডুবি অনিবার্য! ওমা! আবার দেখি জাহাজ ভেসে ওঠে। বড় বড় ঢেউ একেবারে জাহাজের মাস্তুলে আঘাত করার মত ব্যাপার। সেই স্মৃতি কি ভোলা যায়?

 আরেকবার গ্রীষ্মের ছুটিতে ফেরার সময় প্রচন্ড দুর্যোগ। সব ঠিকঠাকই চলছিল। দুদিন বাদে ঘোষণা করা হল- জাহাজ কলকাতার দিকে যেতে পারবেনা, ভয়ানক তুফান চলছে। অগত্মা জাহাজ যাবে ভাইজাগ বন্দরে। আবার চলল জাহাজ। এক দিন বাদে আবার ঘোষণা হল সেখানেও নাকি ভয়ানক দুর্বিপাক, তাই জাহাজ যাবে চেন্নাইতে। আবার দুলতে দুলতে যেতে লাগলাম বাধ্য হয়ে। চেন্নাইয়ের কাছাকাছি গিয়ে খবর এলো কলকাতায় আবহাওয়া ঠিক হয়ে গেছে তাই জাহাজ আবার ফেরত যাবে সেখানে। ইতিমধ্যে নামার তাড়ায় দুই মহিলা যাত্রী সোজা ক্যাপ্টেনের কাছে গিয়ে হুমকি দিতে লাগল - কলকাতার দিকে জাহাজ ঘোরালে আমরা জলে ঝাঁপ দেবো। আমাদের চেন্নাইতে নামানো হোক। বাধ্য হয়ে ক্যাপ্টেন ঘোষণা করলেন চেন্নাইয়েই যাওয়া হবে। যাদের জরুরী প্রয়োজন তারা নেমে পড়বেন আর যাদের কলকাতা ফেরার দরকার তারা জাহাজেই থাকবেন। দীর্ঘদিনের যাত্রায় লোকের খাবার পুঁজি শেষ। তখন জাহাজ থেকে বিনা পয়সায় খাবারের ব্যবস্থাও করা হয়েছিল। এভাবে ঝড়ের তাড়নায় মোট দশ দিনের মাথায় আমরা একদিন রাত দুপুরে এসে কলকাতায় নামলাম। এতরাত্রে খিদিরপুর ডকে যাত্রীদের কখনও নামানো হয়না তবে সেবারে – “ কার হেন সাধ্য যে সে রোধে তার গতি”- দেখে কর্তৃপক্ষ আর দ্বিরুক্তি করেন নি। আর সকলেই নিজের নিজের বাড়ি ফেরার তাড়ায় সেই রাতেই হাওড়া স্টেশনে পৌঁছতেই আমাদের হতদৈন্য অবস্থার কথা শুনে আর জাহাজ যাত্রার দশদিনের শংসাপত্র দেখে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ মানবিকতা দেখিয়ে ফার্স্ট ক্লাস ওয়েটিং রুমে আমাদের থাকার সুন্দর ব্যবস্থা করেছিলেন।

পরদিন ভোরে আমরা যে যার গন্তব্যে পোঁছে তবেই হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম।

    ---------------------

উত্তর ছাড়া অঙ্ক - দর্পণা গঙ্গোপাধ্যায় || Uttar Chara onko - Dorpona Gangapadhyay || Short Story || ছোটগল্প

 উত্তর ছাড়া অঙ্ক

দর্পণা গঙ্গোপাধ্যায়


এখন আমি এসে পড়েছি একজন পুরনো আমলের জজের বাড়ি। পেল্লায় উঁচু পেল্লায় বড় কিন্তু সব ঘর গুলোই ভীষণ অ যেস্বাস্থ্যকর।উঠোন ভর্তি আগাছায় ভরা,--- ড্রেনগুলো বুঝে গিয়ে ময়লা জমে দুর্গন্ধ বেরচ্ছে : বাঁ পাশ দিয়ে পরপর দুটো ঘর তালা বন্ধ ।জানলা গুলো ভাঙা,পাল্লা নেই, দেয়াল গুলো প্লাস্টার খসে দাঁত বার করে একেবারে বীভৎস ।

ওরই একটা ঘরে বন্দী আছে সুতপা। তারপরের পশ্চিম দিকের ঘরে ভাড়াটে বহু বছর ধরে ভাড়া না দিয়েই রয়ে গেছে, উত্তরে দুটো ঘর ছোট বড় সে ঘর গুলোও তালা মারা প্রমোটিং হলেই ছুটে আসবে পুরনো উঠে যাওয়া ভাড়াটিয়া।

উপরে থাকে বাড়ির মালকিন। সিঁড়িগুলো বেখাপ্পা ,আর কোন জানলা নেই, অন্ধকার ঘুট ঘুট করছে, ফোনের টর্চ জ্বালিয়ে লেফট রাইট করতে করতে ওপরে উঠেই দেখি ওরে বাবা,! খোলা বারান্দা ! ঝুলছে ---সেখানেই প্রবেশ করতে দেখি ,এখানে আলো আছে ,কিন্তু ভুল পদক্ষেপে একেবারে নিচে পড়ে যেতে পারি। ভয়ে খুব ধীরে ধীরে এগোতে লাগলাম। মালকিন এগিয়ে এসে বললেন," এই আমার রান্নাঘর ", দেখলাম! বিশাল বড় একটা ঘর, চারিদিকে প্লাস্টার খসে পড়ছে , মেঝে গুলো ওদোল খোদল ,জানলার একটা পাল্লা আছে তো অন্য পালা নেই, নিচে বিড়ালরা ঘুরোঘুরি করছে আরশোলাটা ঝটপট করে উড়ে টিকটিকির মুখে পড়ে গেল।

মালকিন বলল দরজার পাল্লা নেই ,

এইটা শোবার ঘর, আসুন---, শোবার ঘর দারুণ অসুস্থ ,নোংরা চাদর বালিশ, মোটা কালো মশারি, খড়খড়ির জানলা বেয়ে হুহু করে উত্তুরে হাওয়া ঢুকছে ,যত্র তত্র বিচ্ছিন্ন জামাকাপড় ,নোংরা একটা পুরনো আগেকারের টিভি, ফ্রিজে জং পড়ে গেছে, ওখানেই বসার অনুরোধ করল। আমি বললাম ,না না---, আমি বসবো না। আমি একটু সুতপার সঙ্গে দেখা করতে পারতাম যদি ভালো হতো। 

আর ওকে নিচে রেখেছেন কেন? 

আপনি আপনার সঙ্গে রাখেননি কেন ? 

প্রশ্নের উত্তরে বলল মালকিন, কি করব বলুন ,বারান্দাগুলো খোলা--- জানালা দরজার ঠিকমত পাল্লা নেই ওরকম মানুষ খেয়ালে কি করে বসে কে জানে?

চলুন নিচে সুতপার ঘরে যাই,--- 

যেতে যেতে প্রশ্ন করলাম রান্না কি আপনি করেন ? মালকিন উত্তরে বলল, না, ছেলে অথবা বোন দুজনের কেউ না কেউ খাবার দিয়ে যায় ।নিচের ঘরের তালা খুলতেই দেখি সুতপা বসে আছে ।ঘরের মাঝখানে একটা ফুটো টুল বসানো তাতেই বসে চান পায়খানা সারে, মা পরিষ্কার করে। চারিদিকে ফিনাইল ছড়ানো ,অল্প একটা এল-ই-ডি আলো জ্বলছে, টিমটিম করে !একটা ছোট ক্যাম খাট তার ওপর বসে আছে। মশা সারা ঘরে ভোঁ ভোঁ করে ডাকছে ,ঘরের উত্তরে ও পশ্চিমে দুটো জানলা থাকা সত্বেও ,জানলা গুলো বন্ধ। দক্ষিণের দিকে দরজা,---

 দরজা সব সময় তালা বন্ধ থাকে । জিজ্ঞাসা করলাম ঘরের মধ্যে সব সময় ভালো লাগে ?

অবলীলায় উত্তর দিল,--- হ্যাঁ ! বাইরের সব লোক খারাপ! বদমাইশ ! কেউ আমার ভালো চায় না,--- তাছাড়া আমি পাগল !

 আমার সঙ্গে তো খারাপ ব্যবহার করবেই ----

আশ্বস্ত করে বললাম ,তোমায় দেখে তো আমার পাগল বলে মনে হচ্ছে না ,শুনেই সে ভীষণ জোরে হাসতে শুরু করল,---

হা হা হা হা ঐ যে নাটের গুরু আসছে,--- কে আসছে ? প্রশ্ন করলাম, 

উত্তরে, ওই যে প্রভাস ! বড়লোকের মেয়ের থেকে টাকা খেয়ে ওকে আগে মঞ্চে তুলে গান গাওয়ালো

 যখন সব লোক চলে গেছে তখন আমাকে তুলল ,আমি গাইলাম মেরি খৃস্ট মাস, জিংগেল বেল কিন্তু সবাই পেছন ফিরে গল্প করছিল কেউ আমার গান শুনছিল না। তখন হঠাৎ রবীন্দ্র সংগীত ধরি। "তোমারও অসীমে 

 প্রাণ মন লয়ে যত দূরে আমি ধাই ---" সুন্দর গলা একবার হাতে তালি দিয়ে মেরি ক্রিসমাস গাইছে একবার রবীন্দ্র সংগীত গাইছে, সুন্দর!

তারপর জোরে জোরে কাঁদতে শুরু করল, আমি শশব্যস্ত হয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, কাঁদছো কেন ? সুন্দর হচ্ছে গান শুনছি তো---

 প্রভাস তুমি শুধু পয়সাটাই দেখলে ,আমার ভালোবাসা তোমার চোখে পড়লো না। প্রভাস আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি। শান্ত করে বললাম। কেঁদো না ,তোমার জন্য আমরা অন্য ভাল পাত্র দেখে বিয়ে দিয়ে দেব ,যে তোমাকে ভালবাসবে তোমার সব কথা শুনবে,--- ঠোঁট ফুলিয়ে ফুলিয়ে বলল পাগলের বিয়ে ,----

হা হা হা হা আবার বিকট হাসতে শুরু করল---

থামিয়ে বললাম, চুপ। তুমি পাগল এ কথা কে বলেছে,? সবাই বলেছে ---বিকট চিৎকার করছে,--- চেঁচিয়ে ওঠে সুতপা। পাগলা গারোদ চেনো? মার জানো ? ইলেকট্রিকের শক ? ফুঁপিয়ে কেঁদে বলে বাথরুম থেকে বের করে মার,--- অত্যাচার তারপর হুহুঁহু সুর করে কাঁদতে থাকে ,

আমি বাইরে যেতে চাই না--- বাইরের সব লোক খারাপ! আমি বলি চিপস খাবে? তুমি তো খুব ভালোবাসো, লজেন্স ? তখনো হু হু করে কাঁদতে থাকে। মালকিন 

বলেন সেই পরশুদিন আমাকে দিয়ে এই চিপসটা আনিয়েছে। এখনো পড়ে আছে। কিছুই খেতে চায় না।


সুতপা হঠাৎ লাফিয়ে লাফিয়ে

 মশা মারতে শুরু করল--- তারপর বলল, আমি ভূত নিজের চোখে দেখেছি, একটু পরেই ওরা আসবে ,তোমরা চলে গেলেই ,ওরা আমার চারপাশে জুড়ে নাচবে। গান গাইবে, তালি দেবে !আমিও ওদের সঙ্গে ঘুরে ঘুরে গান গাইবো !তালি দেবো !


কিন্তু কখনো কখনো ওরাও রাগ করে,-- বেসুর হলেই ! গলা টিপে দেয় ---

আমার দম বন্ধ হয়ে আসে। তারপর স্বরটা লাগিয়ে আবার গাই, তখন আবার ঠিক হয়ে যায় ।"মানুষ হয়ে তো বাঁচতে পারলাম না, ভূত হয়ে বেঁচে আছি "--- আবার হা হা হা হা হাসি

একবার আমি আর প্রভাস শ্রুতি নাটক করেছিলাম,---

মাত্র ১০ বার রিহার্সাল, দুটো পিরিয়ডের সময়ের মধ্যে,

তারপরই মঞ্চস্থ ---

" একবার আমি ভুল করে স্মার্টলি পরের ডায়লগ টা বলে ফেললাম, কটমট করে প্রভাস তাকিয়ে দাঁতে চেপে চেপে অন্য ডায়ালগ বলে দরকারি প্রথমের ডায়ালগ টা নিজেই বলে নিয়ে পরেরটা বলে সামনে নিল। আমি এবার থেকে সিরিয়াস হয়ে গেলাম আমার আর ভুল না কিন্তু হোঁচট খেলো প্রভাস, আমিও ওর মত করে সেই হোঁচট সামনে নিলাম নাটক শুনে সকলেই বলল,--- দারুন ! দারুন ! দারুন ! নাটকের মধ্যে আমাদের নাটকীয়তা কেউ বুঝতে পারল না।

   সেসব মানুষের জীবনের কথা ভুলতে চাই ,পারিনা!--- 


আমি প্রসঙ্গ ঘুরিয়ে বললাম তোমার ঘরে এত ফিনাইল ফেলা কেন ?সুতপা বলে ওই যে, মাঝে মাঝে আমি বাথরুম করার কথা ,অনুভব করতে পারি না, করে ফেলি। ঘরে গন্ধ ছাড়ে মা পরিষ্কার করে, জানি মার কষ্ট হয়। ওরা যে আমায় মেরে মেরে অত্যাচার করে আমায় শেষ করে দিয়েছে ,তারপর ও খুব ক্লান্ত অনুভব করে। কেমন যেন এক পাশে ঘাড় গুঁজড়ে চুপ হয়ে বসে যায় ।

ও- আর -এস গোলা জল ওর মুখে ঢেলে দেয় ওর মা ,আস্তে আস্তে খেতে খেতে জলটা ঘুমিয়ে যায় ।ওর মা গুছিয়ে বালিশটা মাথায় দিয়ে, চাদরটা চাপা দিয়ে একটা মশার ধুপ জ্বালিয়ে দিয়ে দরজায় তালা বন্ধ করে দেয়। ততক্ষণ আমি নীরব দর্শক হয়ে থাকি।।   

                  তারপর মালকিনকে বলি, আপনি বাড়িটা প্রমোটিং করে নিন, ছেলের জন্য আলাদা, আর মেয়ে আর আপনার জন্য আলাদা, দুটো ফ্ল্যাট নিন,--- সুখে স্বাচ্ছন্দে থাকুন, কিছু টাকাও পাবেন, ছেলে আর মা 

মিলে ভাগ করে নেবেন।


 মালকিন বলল আমি চাইলেই তো হবার নয় ,

সুস্থ পরিবেশ ছেলেমেয়েদের সুস্থ জীবন ,সুখ-শান্তি সমৃদ্ধি--- কে না চায় ! কিন্তু সব কিছু ভাবলেই তো কাজ হয় না !

ভেতর থেকে কে যেন বলে ওঠে,--- না ,আমি চাকরি পাবো!

 অনেক টাকা রোজগার করব। তখন নিজেই বাড়ি ভেঙে ,বাড়ি বানিয়ে নেব। বজ্জাত ননী, আমাদের বাড়ি এতদিন বিনা পয়সায় থেকে হয় না, ঘর নেবে? আমি জজের নাতনি। আমিও জজ হবো, না হতে পারি দাদার ছেলেমেয়েরা হবে ,কিছুতেই প্রমোটিং করতে দেব না। আমাদের বাড়ি ভাঙ্গা পচা। পচাই থাক । মা,--- এই দুষ্টু বদমাশ লোকটাকে তাড়াও না হলে, আমি মেরে ,মেরে ফেলবো। আমি ফ্ল্যাট করে সুস্থ থাকবো, আর আমার পরবর্তী জেনারেশন ভাঙ্গা ফ্লাটে থাকবে।


বের হও ,---হও বলছি !দুমদাম ভেতর থেকে ভয়ানক আওয়াজ আসতে লাগলো! মালকিন আমায় ইশারায় চুপ থাকতে বললেন, তারপর ধীরে ধীরে মেয়েকে ডাকলেন, মানা ও প্রোমোটার নয়। তুই ভুল করছিস। মানা শোন ও এনজিওর লোক তোর বিয়ের জন্য এসেছে।

ভেতর থেকে,--- আমি জানি আমি "পাগল "

তাছাড়া অত্যাচারিতা ধর্ষিতা---!

 আমাকে কেউ কখনো বিয়ে করবে না,

 কেউ না

 কক্ষনো না

 তুমি সব জানো

 তুমি যাও যাও

 তোমার সহ্য হচ্ছে 

আমার হচ্ছে না

 ওদের ঘোড়ার ঘাস কাটতে বলো

শুধু গসিপ করা ওদের কাজ! ছবি তুলে বিদেশের লোককে আমাদের উলঙ্গ চেহারা দেখানো ছাড়া ওদের কাজ নেই, একটা লুঙ্গি দান করলেও সেটার ছবি তুলে রাখে ,লোককে দেখায় "দান" করেছে। ওরা স্যান্টাক্লজ নয় মা!

মালকিন জানায়, আমি ছেলের জন্য অনেক টাকা ব্যয় করেছি, তবে ছেলে চাকরি পেয়েছে,

 মেয়ের জন্য টাকা রেখেছিলাম,

 চাকরি অথবা বিয়ে দেবো বলে, কিন্তু মেয়ের এই অবস্থা।


বিদায় নিয়ে পথে হাঁটতে হাঁটতে মনে মনে বলি ,এত অসুস্থ সমাজে আমরা আর কতো দিন হাঁটতে পারবো।।

কালো রাত্রি শেষ হোক। আসুক নতুন সকাল ,---

আসুক সত্যের দিন ,

সুন্দর দিন ,

ভালোবাসা দিন।।