উপন্যাস - পদ্মাবধূ || বিশ্বনাথ দাস || Padmabadhu by Biswanath Das || Fiction - Padmabadhu Part -16


 

ছয়


মনের দুঃখকে লাঘব করার জন্য গঙ্গার ধারে এসে হাজির হলাম । গঙ্গার ধারে বসে আমার জীবনের অতীত ও ভবিষ্যতের দিনগুলোর কথা চিন্তা করছি , তখন পশ্চিম আকাশের আবির ছড়িয়ে গঙ্গা বক্ষে সূর্যাস্ত হল । আমি তখন চিন্তার রাজ্যে হারিয়ে গেছি । চারদিকে গাঢ় অন্ধকার ছেয়ে এলো , দূরে দূরে গাছে গাছে জোনাকির আলো এবং শিল্প নগরীর উজ্জ্বল বৈদ্যুতিক আলোগুলি আমাকে এক মায়াময় জগতের দিকে নিয়ে চলল।



হঠাৎ গঙ্গার বক্ষ হতে একফালি চাঁদ ভেসে উঠল , আমি আর বিলম্ব না করে । আমার পরিত্যক্ত কুঞ্জের দিকে এগিয়ে চললাম । এসেই শ্যামলীদির বাসাতে গিয়ে । শ্যামলীদিকে জড়িয়ে কাঁদতে থাকলাম শ্যামলীদি কৌতূহলী হয়ে জিজ্ঞাসা করায় , আমি কোন রকমে মুখ তুলে বাবার প্রসঙ্গ উত্থাপন করতে পারলাম না , কারণ ঐ সময় শ্যামলীদির এক প্রণয়ী শ্যামলীদিকে কক্ষান্তরে নিয়ে গেলেন । 

লালসার বহ্নি — দ্যুতি তখন সেই অপরিচিত পুরুষের চোখে মুখে দেখতে পেলাম । শ্যামলীদির নিকট আমার মনের কথা খুলে বলতে না পারায় আমি এক অব্যক্ত যন্ত্রণায় কাতর হয়ে পড়লাম । শ্যামলীদি অধিক রাত্রে এই নবাগত ভদ্রলোককে যৌবন রসে আপ্যায়িত করে ফিরে এলেন ।

 শ্যামলীদি বাবার দুরাবস্থার কথা শুনে নানান উপদেশ দিয়ে আমাকে সান্ত্বনা দিল ও বলল বিধাতা পুরুষের ভাগ্যচক্র আবর্তনের ফলশ্রুতি মানুষ আগে হতে ধারণা করতে পারে নারে । এর জন্য আফশোষ করে কি হবে বলতে পারিস ? তোর বাবা ধনী পুত্র বলে অন্ধ হয়ে পথে পথে ভিক্ষে করবে বলে কি ভগবানের উপর দোষ দিবি ? কারো দোষ নয়রে , এর জন্য আমরা সম্পূর্ণ ভাগ্যের নিকট । সহায় । চিন্তা করিস না , যদি তিনি কলকাতা শহরে এসে থাকেন তাহলে নিশ্চয়ই কোন জায়গায় আশ্রয় পাবেন । আর তোর সাথে দেখাও হতে পারে । আমি একটু পরেই আসছি । 

একাকি বসে থাকলাম । বাবার আকস্মিক আত্মগোপনের জন্য আমার চোখ দিয়ে ফোঁটা ফোঁটা জল ঝরতে লাগলো । 

পরদিন সকালে শ্যামলীদির অর্ডার মতো পেটে দেবার অন্য একটা বস্তীর দোকানে ডিম সেদ্ধ ও পাউরুটি আনার জন্য বাউন্ডারীর শেষ সীমায় এসে পৌঁছেছি , ঠিক সেই সময় আগের দিনের ভদ্রলোকের পরিচিত মুখ দেখে একটু স্তম্ভিত হলাম । কিছুক্ষণ ওর মুখের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করার পর , ধীরে ধীরে ভদ্রলোক তার মুখখানি নত করে আমার নিকট উপস্থিত হলেন । তিনি উপস্থিত হতে আমার সর্বশরীর সংকুচিত হল । 

তিনি অতি নম্র কণ্ঠে বললেন , কোথাও যাচ্ছেন বুঝি ?

 বললাম , হ্যাঁ । তা এই প্রাতঃকালে আগমন কেন ? তিনি থতমত করতে থাকেন । তার ঠোঁট দুটো কেঁপে উঠল । বহু কষ্টে বললেন , আপনাকে একবার দেখতে এলাম।

 ও , আমার প্রতি দরদ যে কম নয় আপনার । আমি মরে গেছি না বেঁচে আছি দেখতে এসেছেন ?

 তিনি বললেন , ন - না আমি ঠিক-
ঠিক আছে বাসাতে গিয়ে বসবেন চলুন । আপনার সাথে একটা বোঝাপড়া হয়ে যাবে । মনে মনে বললাম ওর চালাকি বের করে দেবো । আপন মনে গজগজ করতে করতে দোকানে এসে উপস্থিত হলাম । ফিরে গিয়ে দেখলাম ভদ্রলোক শ্যামলীদির সাথে গল্পে মজে গেছে।

 শ্যামলীদি ওকে সান্ত্বনা দিয়ে বলছে , আপনি এজন্যে নার্ভাস হবেন না । আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করবো ।

 শ্যামলীদির কথা শুনে কৌতুহলী দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে রইলাম ওর মুখপানে । তবে কি শ্যামলীদি ওর কাছ হতে কিছু রসদ পেয়েছে ! না না , শ্যামলীদি আমার প্রতি কোন দিন অসৎ ব্যবহার করবে না । সে আমাকে সর্বনাশের পথে কোন দিন এগিয়ে দেবে না।

আমাকে খেলনা পুতুলের মতো দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আদুরে গলায় বলল , কি রে দাঁড়িয়ে আছিস কেন , কাছে আসতে কি ইচ্ছে করছে না ? 

ধীরে ধীরে এগিয়ে গেলাম । শোন্ এখুনি এই দেবীবাবুর সাথে তোকে যেতে হবে । মনের মধ্যে কোন সংকোচ আনবি না । তোকে নিয়ে যাবার জন্য ইনি আদরি মাসীর কাছে পারমিশন নিয়েছেন । দেবীবাবু আপনি আদরি মাসীর সাথে কথা বলুন , কোন চিন্তা করবেন না , পদ্মা যাবে আমি কথা দিলাম । 

দেবীবাবু শ্যামলীদিকে নমস্কার করে আমাদের কুঞ্জ হতে আদরি মাসীর বাসায় চলে যাবার পর শ্যামলীদিকে বললাম , একি করলে দিদি , আমাকে ঐ লম্পটটার সাথে । ভিড়িয়ে দিয়ে আমার সর্বনাশ ডেকে আনলে ?

 শ্যামলীদি বলল , পদ্মা একটা কথা মনে রাখবি , সাপের হাঁচি বেদেয় চেনে । তুই লক্ষ্য করেছিস ওর চোখে কামনার নেশা ? আমরা বেশ্যা , সতুরাং ওর তৃপ্তি লাভের নেশাকে সহজেই চিনতে পারতাম । ওরে দেবীবাবু সে ধরনের নয় । ওর সাথে গিয়ে বুঝতে পারবি।

আমি নীরব থাকলাম। 

আমার প্রতি বিশ্বাস রাখ ঠকবি না । আমি তোর রন্টুদা নই রে , তোর আপন দিদি শ্যামলী । যা , তাড়াতাড়ি খেয়ে তৈরী হয়ে নে , ঘন্টা তিন পরেই পুনরায় এখানে পৌঁছে দেবেন । বিলম্ব করিস না।

 দ্বিতীয় কথা না বলে কোন প্রকারে উদরে কিছু দিয়ে একটা সাধারণ কাপড় পরে শ্যামলীদির কাছে দাঁড়িয়ে রইলাম । মিনিট কয়েক পরেই শ্যামলীদির কাছে অনুমতি চাইলেন আমাকে নিয়ে যাবার জন্য । শ্যামলীদি বার বার দেবীবাবুকে বলে দিল তিনি যেন আমাকে অবিলম্বে এখানে পৌঁছে দিয়ে যান।

দেবীবাবু ঘাড় নেড়ে জানালেন অক্ষরে অক্ষরে তার কথা পালন করবেন।


                       
                           ক্রমশ...

Comments

Popular posts from this blog

শারদীয়া সংখ্যা ১৪৩০ || সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র || World Sahitya Adda Sarod sonkha 1430

TATA Steel Job Recruitment 2024 || টাটা স্টিল কোম্পানিতে নতুন করে 6000 শূন্যপদে কর্মী নিয়োগ || TATA company job

মাধ্যমিক পাশেই ভালো মাইনের চাকরি,জলের ট্যাঙ্কি দেখাশোনার স্থায়ী কাজ || Jal Jeevan Mission Registration 2024