ছোট গল্প || বকখালিতে একরাত || সামসুজ জামান
বকখালিতে একরাত
বকখালিতে সমুদ্র-কিনারে চাঁদের আলোয় সোনালীর কোলে মাথা রেখে শুয়েছিল প্রভাত। সোনালী তার মাথার চুলে বিলি কেটে দিচ্ছিল। ফুরফুরে হাওয়া গঙ্গার জোয়ারের জল ছুঁয়ে ছুঁয়ে এসে মনটাকে ভিজিয়ে দিচ্ছিল প্রভাতের।
একটু পরে প্রভাতকে জড়িয়ে ধরে সোনালী বলল – চল না, হটেলের রুমে ফিরে যাই।
যাবে? ভাল লাগছে না আর এখানে?
না,না,না, ভাল লাগবে না কেন? আমাদের কী আর এমন ভাগ্য হয়? একটু থেমে আবার যোগ করল – আসলে আমাদের তো কেউ এত ভাল বাসেনা! আমরা হলাম এঁটো পাতার জাত!
মুখে হাত চেপে ধরে প্রভাত বলল- ছিঃ, বোলো না !
আরও কিছু পরে হোটেলের সি ফেসিং রুমে বসে, জানালা দিয়ে আসা চাঁদের আলো গায়ে মাখিয়ে সোনালীকে উপভোগ করছিল প্রভাত। মেয়েটা আদরে আদরে ভরিয়ে দিতে দিতে বলছিল – তুমি এত ভাল! আমাদের কেউ এভাবে কখনও আদর করে না! শুনে খুশী হয়ে প্রভাত, সোনালীর মাথাটা বুকের কাছে টেনে নিয়ে আদর করে দু-চোখের পাতায় চুমু খেল আর একবার।
রাতটা অদ্ভুদ এক নেশার মধ্যে দিয়ে কথা দিয়ে কেটে গেল। একসময় সময় ফুরিয়ে যেতেই ককিয়ে উঠল সোনালী – বাড়ি ফিরে গিয়ে আমাকে মনে পড়বে তো? আবার আসবে তো? কবে আসবে?
-আসবনা আবার ? কী যে বল? যত তাড়াতাড়ি পারি আবার ----- কথাটা বলতে গিয়েও গলায় আটকে গিয়েছিল প্রভাতের।
বিদায় নেবার সময় পাঁচশ টাকা সোনালির হাতে গুঁজে দিতেই চিক চিক করে উঠল ওর চোখ – বাবু, আবার কবে আসবে, বলনা?
-এই তো সামনের মাসেই – বলেই সোনালীর চোখের ওপর থেকে চোখ সরাল প্রভাত। অনেক কষ্টে অমলাকে বুঝিয়ে, অফিসের অডিটের ঝামেলার কথা বলে একরাতের জন্যে বকখালিতে আসা। এরপর আবার আসা? পাগল নাকি! সোনালীকে সঙ্গে নিয়েই আরও এগোচ্ছিল প্রভাত। পখে পড়ে এঁটো শালপাতা, গর্ভ নিরোধকের মোড়ক। কিন্তু এসব ছাপিয়েও মনে পড়ে মেয়েটার চোখ দুটো। বড় মায়াবী সুরে সোনালী বলতে থাকে – আবার আসবে তো? বলো না কবে আসবে?
প্রভাত আর একবার ভয়ে ভয়ে সোনালীর দিকে শেষবারের মত তাকিয়ে দেখল। মেয়েটার বড় বড় দুটো চোখ জলে ভরে উঠেছে। শুধু তাই নয়, নিজের মুখটা চেপে ধরে এবার ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠল সোনালী। অদ্ভুদ এক পিছুটানকে অনেক কষ্টে উপেক্ষা করে জোরে জোরে সামনের দিকে পা ফেলল প্রভাত। কিন্তু অনেক দূর পর্যন্ত যেন তার কানে আসতে লাগল সোনালীর ফুঁপিয়ে কান্নার আওয়াজ।
Comments