গল্প || ছায়াসঙ্গী || বর্ণা গঙ্গোপাধ্যায়

 ছায়াসঙ্গী




বেশ কয় কাপ চা খাওয়ার পরেও রাজার মাথাটা কিন্তু এখনো ঝিমঝিম করেই যাচ্ছে ,আর হবে নাই বা কেন ? সেই কোন ভোরে ইমার্জেন্সী ডিউটি ধরেছে সারাদিন সারারাত ধরে কাজ করেই যাচ্ছে...

তবে এটা ওর নিত্য দিনের না হলেও মাসে তিন চারবার হয়ে থাকে;কি করা যায় নিম্নবিত্ত পরিবারের একমাত্র রোজগেরে মাথা, তাকে মাথার ব্যামো নিয়েও কাজ করে যেতে হবে 

-রামসিং দেখতো মেশিনের কালি দিতে লাগবে মনে হচ্ছে 

-জি দাদা বাবু

-বুঝলে রামসিং এই সকাল থেকে রাত অবধি ডিউটি টা একটু বেশি চাপ এর ;বড্ড চোখ লেগে যায় 

-তা আপনি একটু বিশ্রাম নিন না আমি বাকিটা দেখে নেব

-না থাক তুমি আমাকে আরো এক কাপ চা এনে দাও

-জি দাদাবাবু

-ভোর হতে আর বেশী নয়, আমি একটু পরে বেরিয়ে যাব অনেকটাই পথ ট্রেনে বেশ ভালোই ঘুম হয়ে যায় 

তবে কি জানো তো এই শীতের মাসগুলো রাতটা যেন কাটতে চায় না ..আর ভোরবেলা ওই ট্রেনের হাওয়ায় বড্ড শরীর ম্যাজম্যাজ করে

  

এই বলে চায়ের কাপে মুখ দিলো রাজা ,একটা বেসরকারি ছাপা কারখানায় কাজ করে, এই জয়েন করেছে কিছুদিন হলো ..কলেজ স্টুডেন্ট নিজের পড়াশুনার খরচ আর সংসারের ভাত জোগাড় করতে ওর কাজ করা ...

যথারীতি ভোরের আলো ফুটলো; রাজাও ট্রেনের টাইম দেখে বেরিয়ে গেল..

কারখানা থেকে স্টেশন বেশি দূর নয় তবে বস্তির ভিতর রাস্তা দিয়ে না গিয়ে রেললাইন ধরে গেলে একটু তাড়াতাড়ি হয়|

  ঘন কুয়াশায় আচ্ছন্ন চারিদিক,কিছুই দেখা যাচ্ছে না |ফোনের লাইট ও চোখে ঠাওর দিচ্ছে না

রাজা বুঝতে পারছে তার পিছনে যেন আরও একজন কেউ আসছে ,হ্যাঁ খেয়াল করে দেখল আরও এক ভদ্রলোক...

 ভদ্রতার খাতিরে রাজা নিজেই জিজ্ঞাসা করে উঠলো

-কি মশাই আপনিও কি ট্রেন ধরবেন ?

-না এই একটু হাঁটছি (খুব ই শান্তভাবে )

-এই ঠান্ডায় আবার মর্নিং ওয়াক যা কুয়াশা চোখে তো কিছু দেখা যাচ্ছে না ;বয়স হয়েছে মশাই শরীর খারাপ হবে বেলা করে বেরোবে 

-তুমি কারখানাতেই কাজ করো নাকি ?

-এই ডিউটি শেষ করে বাড়ি ফিরছি

-বলতে পারো সেই রকম আমিও ডিউটিতে বেরিয়েছি


বেশ কিছুটা রাস্তা কথা বার্তার মাধ্যমে দুজনেই এগিয়ে এলো,স্টেশনের প্রায় কাছেই আছে ;রাজা একটা ট্রেনের শব্দ পেল কিন্তু বুঝতে পারল না কোন দিকের !

আর ঠিক সেই মুহূর্তেই ঝটকা টানে ওর খেয়াল হল....

 ওর হাতটা ধরে কি যেন টেনে সরিয়ে নিল যদিও বোঝার কিছু নেই এটা সেই ভদ্রলোকের মানবিকতার কাজ

-ধন্যবাদ আপনি না থাকলে আজকে যে আমার কি হতো !!

-বলেছিলাম না আমি ও আমার ডিউটিতে আছি (ঘন কুয়াশায় হারিয়ে যেতে থাকা সেই মানুষ )

পরেরদিন রাজা কারখানায় এসে তার এই অভিজ্ঞতার কথা জানায় 

সবশুনে কিছু বয়স্ক কর্মচারী জানায় এটা হয়তো সেই "রামলাল সিং" মানে রাম সিংয়ের বাবা

 সেও কারখানায় রাম সিংয়ের মতই ফাই-ফরমাশ এর কাজ করতো | একদিন ডিউটি টাইমে রেললাইনের ওপারে যাওয়ার সময় মেলেএর ধাক্কায় প্রাণ হারায় | তবে আজও কারখানার কিছু বিপদে-আপদে কিংবা এখানকার কোন কর্মচারীর বিপদে তার উপস্থিতি ভালোভাবেই অনুভব করা যায়.....

রাজার নির্বাক, স্তব্ধ হয়ে কথাগুলো শুনে গেল.....

 তবুও যেন কিছুতেই সেই ছায়াসঙ্গী কে ভূত বলে মানতে পারছে না | 


ভূত মানেই আমরা অনেকেই বুঝি যে আমাদের ক্ষতি করবে এমন কোন আতঙ্ক তবে এই গল্পে কারখানার এক নিঃস্বার্থ বিশ্বস্ত কর্মচারী 

রামলাল সিংহ মরে গিয়েও তার দায়িত্ব কর্তব্য থেকে আজও অবসর নেয় নি।

Comments

Popular posts from this blog

শারদীয়া সংখ্যা ১৪৩০ || সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র || World Sahitya Adda Sarod sonkha 1430

TATA Steel Job Recruitment 2024 || টাটা স্টিল কোম্পানিতে নতুন করে 6000 শূন্যপদে কর্মী নিয়োগ || TATA company job

মাধ্যমিক পাশেই ভালো মাইনের চাকরি,জলের ট্যাঙ্কি দেখাশোনার স্থায়ী কাজ || Jal Jeevan Mission Registration 2024