গল্প || মনের ভুল || ইন্দিরা গাঙ্গুলি

 মনের ভুল 



রকিদের বাড়ি ভবানীপুরে। রকির মামাবাড়ি রাজনগরে খেজুরী গায়ে। রকির বাবা রেলে চাকরি করে। রকির মা ও সরকারি অফিসে চাকরি করে। দুজনেই খুব দায়িত্ব পূর্ণ কাজ করে যে যার অফিসে। রকি ছোট্ট বেলা থেকে বেশি ভাগ সময় ঠাকুমার কাছেই মানুষ হয়েছে। দাদু, ঠাকুমার সঙ্গে ই বেশি ভাগ সময় কাটে রকির। রকির মা মলি কাজের লোক, রান্নার লোক রেখে দিয়েছে। মলির বাড়ি ফিরতে ফিরতে সাত টা বেজে যায়। রকির বাবা গগন রোজই রাত করে বাড়ি ফেরে। অফিস থেকে ফেরার সময় আনাজপাতি, মাছ, মাংস নিয়ে বাড়ি ফিরতো। একবার গরমের ছুটির সময় রকি মা'র কাছে মামাবাড়ি যাবার জন্য বায়না ধরলো। মলি বললো ঃ " আমার ও তো খুব ইচ্ছে করে রে। কতদিন যাইনি। দেখি যদি অফিস থেকে সাতদিনের ছুটি পাই। " পরের দিন অফিসে গিয়ে বসের কাছে সাতদিনের ছুটি চেয়ে একটা এপ্লিকেশন জমা দিলো মলি। মলির অফিসের বস খুশী মনে ছুটি সেংশন করে দিলো। আসলে মলি খুব একটা ছুটি নেয় না। অফিসের কাজ ও খুব ভালো ভাবে ই সামলায়। তাই মলির ছুটি পেতে কোনো অসুবিধে হলো না। গগন বললো ঃ " আমি কিন্তু যেতে পারবো না। অফিসে খুব কাজের চাপ। তাছাড়া বাবা, মা কে একা একা রেখে সবাই মিলে যাওয়া যাবে না। " কাজেই মলি আর রকি সাতদিনের জন্য রাজনগরে গেলো। ওখানে মলির বাবা, মা,দুই ভাই , তাদের বৌরা আছে। মলির বড় ভাই য়ের দুই ছেলে আর এক মেয়ে। মলির ছোট ভাই য়ের দুই ছেলে। মামাবাড়ি গেলে ওদের সঙ্গে খেলা করে , গল্প করে রকির খুব ভালো লাগতো। ভবানীপুরের বাড়িতে তো একা একা থাকতে হয়। শুধু দাদু আর ঠাকুমার সঙ্গে কাটাতে হয় সারাদিন। মলির বাবা, মার বয়স হয়েছে। মলিকে অনেক দিন পরে কাছে পেয়ে খুব খুশী ওরা। মলির বাবা বললো ঃ " জামাই বুঝি আসতে পারলো না? " মলি বললো ঃ " না বাবা ওর অফিসে অনেক কাজের চাপ। " মামাবাড়ি এসে রোজ বিকেলে রকি মামাতো ভাই, বোনের সঙ্গে ধাবার মাঠে খেলতে যেতো। মলির বড়ো ভাই য়ের বড়ো ছেলে টা একটু অন্য ধরনের ছেলে। সব সময় পড়াশোনা নিয়ে থাকে। একদিন বিকেলে রকিরা ধাবার মাঠ থেকে ফেরার সময় আকাশ কালো করে এলো। গুড় গুড় করে মেঘ ডাকছিলো। ওরা তাড়াতাড়ি পা চালিয়ে বাড়ি ফিরছিলো। রকির মামাবাড়ির পাশেই একটা বাঁশ বাগান ছিলো। ওরা যখন বাড়ি ফিরছিলো তখন দেখলো বাঁশ বাগানে সাদা কাপড় পরে কেউ একজন মাথা নারছে। রকিরা খুব ভয় পেয়ে তাড়াতাড়ি ছুটে বাড়ি পৌঁছে বললো ঃ " বাঁশ বাগানে সাদা কাপড় পরে একটা ভূত দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মাথা নাড়ছে। আমরা ভয়ে ভয়ে ছুটে বাড়ি এসেছি। " ওদের অবস্থা দেখে রকির বড়োমামার ছেলে হো হো করে হাসছিলো আর বলছিলো ঃ " ও রে বোকা হাঁদার দল। ভূত বলে কিছু হয় না। এখুনি সবাই চল আমার সঙ্গে। " রকিরা তখন ও ভয়ে কাঁপছে। রকির বড়োমামার ছেলে সঙ্গে সঙ্গে একটা টচ হাতে নিয়ে জোর করে সবাই কে বাঁশ বাগানে নিয়ে গেলো। বাঁশগাছের উপর আলো ফেলতেই সবাই দেখলো একটা বাঁশ গাছের উপরে একটা সাদা কাপড় পরে আছে। হাওয়ায় গাছ টা নড়লেই কাপড় টা ও নড়ছে। বড়োমামার বড়ো ছেলে গৌতম বললো ঃ " আসলে ভূত বলে কিছু ই নেই। সবই আমাদের মনের ভুল। " সেদিন গৌতম দার কথায় রকিদের ভুল ভাঙলো। সত্যি ই তো আসলে ভূত বলে কিছু ই নেই। সবই আমাদের মনের ভুল। এই ঘটনার দুই দিন পরে ই রকিরা ভবানীপুরে ফিরে গিয়েছিলো। দাদু, ঠাকুমা আর বাবা কে সবকিছু গল্প করেছিলো রকি। রকির দাদু বললো ঃ " ঠিক ই বলেছে গৌতম। সত্যি ই তো ভুত বলে কিছু ই নেই। সবটাই মনের ভুল।

Comments

Popular posts from this blog

শারদীয়া সংখ্যা ১৪৩০ || সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র || World Sahitya Adda Sarod sonkha 1430

TATA Steel Job Recruitment 2024 || টাটা স্টিল কোম্পানিতে নতুন করে 6000 শূন্যপদে কর্মী নিয়োগ || TATA company job

মাধ্যমিক পাশেই ভালো মাইনের চাকরি,জলের ট্যাঙ্কি দেখাশোনার স্থায়ী কাজ || Jal Jeevan Mission Registration 2024