টি টোকেন: চা বাগানের বিকল্প মুদ্রা ব্যবস্থা - অসিত কুমার পাল || প্রবন্ধ || নিবন্ধ || Article writing

 টি টোকেন: চা বাগানের বিকল্প মুদ্রা ব্যবস্থা 

          অসিত কুমার পাল



পলাশীর যুদ্ধের পরে একটু একটু করে গোটা ভারতের শাসন ক্ষমতা প্রথমে ব্রিটিশদের হাতে চলে গিয়েছিল । তারা স্থানীয় ভাবে প্রচলিত অর্থনৈতিক কাঠামো ভেঙে দিয়ে নিজস্ব কেন্দ্রীয় অর্থনৈতিক ব্যবস্থা চালু করেছিল , সেই সঙ্গে সারা ভারতে অর্থনৈতিক লেনদেনের মাধ্যম হিসাবে নিজস্ব মুদ্রা ব্যবস্থা ( বিভিন্ন মূল্যমানের কাগুজে নোট ও ধাতব মুদ্রা ) চালু করেছিল ।


 বহুদিন আগেই চিনে দেশের অধিবাসীরা লক্ষ্য করেছিল চা নামক এক প্রকার গুল্ম জাতীয় গাছের পাতার নির্যাস থেকে তৈরি এক প্রকার সুস্বাদু পানীয় দেহের ক্লান্তি দুর করে । অষ্টাদশ শতাব্দীর আগে পর্যন্ত চীন দেশের বাইরে পানীয় হিসাবে চায়ের ব্যবহার ততটা প্রচলিত ছিল না । ব্রিটিশরাই চীনের বাইরে চায়ের ব্যবহার ছড়িয়ে দিয়েছিল । তারা লক্ষ্য করেছিল ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চল চা চাষের উপযোগী । তাদেরই চেষ্টায় বর্তমান পশ্চিম বঙ্গের দার্জিলিং জলপাইগুড়ি জেলা , বর্তমান আসামের কিছু অঞ্চল ও বর্তমান বাংলাদেশের সিলেট অঞ্চলে অসংখ্য চা বাগান ও চা প্রক্রিয়া করন কেন্দ্র স্থাপিত হয়েছিল ।


 সেই সব চা বাগানের বিভিন্ন ধরনের কাজ করার জন্য বর্তমান ঝাড়খণ্ড ছত্তিশগড় ওড়িশা প্রভৃতি অঞ্চল থেকে আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষদের নিয়ে যাওয়া হয়েছিল । প্রধানত এজেন্ট বা দালালদের মাধ্যমে আদিবাসী সম্প্রদায়ের দরিদ্র পরিবারগুলোকে নানা সুযোগ সুবিধার লোভ দেখিয়ে চা বাগানগুলোতে নিয়ে যাওয়া হত । কিন্তু নারী পুরুষ শিশু নির্বিশেষে হাড় ভাঙ্গা পরিশ্রম করলেও চা শ্রমিকরা ন্যায্য পারিশ্রমিক থেকে বঞ্চিত হত । তাদের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে ছোট ঘরে গাদাগাদি করে থাকতে বাধ্য করা হত , খাদ্যের চাহিদা মেটাতে নিম্ন মানের খাদ্য শস্য বিতরন করা হত , চিকিৎসার তেমন কোন ব্যবস্থা ছিল না ।


 সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন ব্যাপার ছিল পারিশ্রমিক বাবদ কখনো শ্রমিকদের হাতে নগদ টাকা দেওয়া হত না । পরিবর্তে তাদের হাতে টি টোকেন ( Tea Token) নামে কিছু ধাতব চাকতি ধরিয়ে দেওয়া হত যার বিনিমনে নির্দিষ্ট পরিমাণ নগদ অর্থ পাওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল । চা বাগান কর্তৃপক্ষের তরফে দাবী করা হত উপযুক্ত যোগাযোগ ব্যবস্থার অভাবে তাদের হাতে পর্যাপ্ত নগদ অর্থ থাকে না বলেই তার বিকল্প হিসাবে ওইসব টোকেন দেওয়া হয়েছে । প্রয়োজনে টোকেন এর বিনিময়ে নির্দিষ্ট পরিমাণ নগদ অর্থ পাওয়া যাবে । কার্যক্ষেত্রে ওই সব টোকেন নির্দিষ্ট চা বাগানের বাইরে কার্যকর ছিল না , ফলে কোন শ্রমিক নিজের প্রয়োজনে টোকেন ব্যবহার করতে পারত না , এমনকি সেটার সাহায্যে বাড়ী ফিরে যাওয়ার জন্য ট্রেনের টিকিট কেনাও যেত না । অনেকে বলে থাকেন কোন শ্রমিক যাতে কাজ ছেড়ে নিজের বাড়িতে ফিরে যেতে না পারে সেজন্যই ইচ্ছাকৃত ভাবে নগদ অর্থের পরিবর্তে ওইসব টোকেন দেওয়া হত ।






Comments

Popular posts from this blog

শারদীয়া সংখ্যা ১৪৩০ || সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র || World Sahitya Adda Sarod sonkha 1430

TATA Steel Job Recruitment 2024 || টাটা স্টিল কোম্পানিতে নতুন করে 6000 শূন্যপদে কর্মী নিয়োগ || TATA company job

মাধ্যমিক পাশেই ভালো মাইনের চাকরি,জলের ট্যাঙ্কি দেখাশোনার স্থায়ী কাজ || Jal Jeevan Mission Registration 2024