নিজের সঙ্গেই তুলনা - গাজী সাইফুল ইসলাম || কবিতা || Poetry
নিজের সঙ্গেই তুলনা
গাজী সাইফুল ইসলাম
জুতো সেলাইয়ে রত একজন মুচিও আমার চেয়ে কত সুখী
আনমনে কাজ করে- মুখ ভরে ধোঁয়া ছাড়ে
কত না সুখের এ বিড়ির টান।
কিন্তু যখনই সামনের রাস্তা ধরে হাঁটি
কেমন তৃষ্ণার্ত চোখে সে তাকিয়ে থাকে
আমার জুতোর দিকে
নিজেরই ছেঁড়া জুতো রেখে অন্যের জুতো
পালিশ করার প্রবল আগ্রহ দেখে ভাবি, কিছুতো সমস্যা রয়েছে তার।
সেলুনে নাপিত ব্যাটাও আমার চেয়ে সুখী
বড় মূলধন, লেখাপড়া, প্রযুক্তি বিদ্যা কিচ্ছু লাগে না
ক'টি খুর-ক্যাচি, কিছু ক্রিম প্রসাধন
আর রাস্তার পাশে একটি ঝুপড়ি ঘর হলেই চলে।
কাস্টমার লাইন দেয়...
কেনো যে নাপিত হলাম না?
উঁচু ভলিউমে গান চালিয়ে
একটার পর একটা পান মুখে পুরে
পিক ফেলে যত্রতত্র
নিজের কাজের ব্যাপারে কতটা স্বাধীন সে।
কিন্তু যখনই শুনি বাড়ি ফিরে নেশা করে
বউ পেটায়, ভাবি, কুছ তো গড়বড় হ্যায়।
কখনও ভাবি, কৃষকরাই সবচেয়ে সুখী।
দিনমান রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে যেমন খাটুনি খাটে-
তেমনই খেতেও পারে প্রচুর,
ক্ষেতের আইলে বসে চেপাশুটকির ভর্তা দিয়ে খেয়ে নেয় এক গামলা ভাত।
কিন্তু ফসলের মৌসুমে কমদামে সব ফসল বিক্রি করতে বাধ্য হয়,
সব চলে যায়-মধ্যসত্বভোগীদের গুদামে।
বছরের শস্যে শোধ হয় না বছরের দেনা।
ফলে ফি বছর তাকে বিক্রি করতে ফসলের জমি।
তখন বুঝি-কৃষকরাও যে ভালো নেই।
মাঝেমধ্যে একজন ফল বিক্রেতার সঙ্গেও নিজের তুলনা করি।
ভাবি, সেও কত সুখী।
কত ধরনের সুমিষ্ট রসালো ফলে ভরা তা ঝুড়ি
ইচ্ছে করলেই যে কোনো একটি মুখে পুরতে পারে
কিন্তু যখনই জানা গেলো, অধিক লাভের আশায় একটি ফলও সে চেখে দেখে না
এর মধ্যে কিছু ফল পোকায় নষ্ট করে
কিছু পঁচে যায়।
কতকসময় লাভতো দূরের কথা আসলই উঠে না।
তখন তার চে' কে বেশি দুঃখী?
আর তখনই বুঝি আমার ভাবনা কত ভুল।
Comments