Wednesday, December 29, 2021
SSC -র মাধ্যমে কয়েক হাজার group- c কর্মী নিয়োগ || Staff Selection Commission Combined Graduate Level Examination 2022 || ssc CGL recruitment 2022
Tuesday, December 28, 2021
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় এর গল্প - অতনু ফিরে যাবে || ছোট গল্প || Short story || অতনু ফিরে যাবে || সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় || Atanu phire jabe || Sunil Gangopadhyay
##অতনু ফিরে যাবে
@সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
এটা কি আগে এখানে ছিল, না ছিল না? একটা বেঁটে
মতো গম্বুজ, তার সবদিকই নানারকম পোস্টারে মোড়া,
একটা বড় ফিল্মের পোস্টারে এক যুবতী দু’চোখ দিয়ে হাসছে।
এক পাশে ছিল ধানক্ষেত আর জলা, রাস্তার অন্যপাশে
দোকানপাট। হ্যাঁ, স্পষ্ট মনে আছে অতনুর, ধানক্ষেতের
পাশে যে অগভীর জলাভূমি, সেখানে গামছা দিয়ে মাছ
ধরত কয়েকটি কিশোর, মাছ বিশেষ পাওয়া যেত না,
ঝাঁপাঝাঁপি, কাদা মাখামাখিই সার, কখনও হয়তো পাওয়া যেত কিছু কুচো চিংড়ি, বেলে আর পুঁটি। একদিন অতনু দুটো খলসে মাছ পেয়েছিল। সব মিলিয়ে এতই কম যে, নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে বাড়িতে নিয়ে যাওয়া যায় না, তাই এক একদিন এক একজন সবটা, কম হোক বা বেশি হোক, যার ভাগ্যে যেমন আছে। খলসে মাছের কথা বিশেষভাবে মনে থাকার কারণ, কই মাছের গরিব আত্মীয় হলেও এই মাছের গায়ে রামধনু রঙের ঝিলিক থাকত। সেই মাছ দুটো রান্না করার বদলে একটা কাচের বয়ামে জল ঢেলে তার মধ্যে রেখে দিয়েছিল অতনু। তিন দিনের বেশি বাঁচেনি। কই-মাগুর জাতীয় মাছ মরে গেলে খেতে নেই বলে মা ছোট খলসে দুটো ফেলে দিয়েছিলেন। এ গল্প অতনু যাকেই বলতে গেছে, সবাই তাকে শুনিয়ে দিয়েছে যে, খলসে মাছ এখন আর পাওয়াই যায় না, খলসে এখন বিলুপ্ত প্রজাতি। সেই ধানক্ষেত আর জলাভূমিও অদৃশ্য। এখন সেখানে সার সার এক ধরনের বাড়ি, চারতলা, মেটে রঙের। মনে হয় কোনো বড় সংস্থার কর্মচারীদের কোয়ার্টার। অদৃশ্য হওয়াই তো স্বাভাবিক, সীতারামপুর নামে পুর হলেও একসময় তো গ্রামই ছিল, এখন শহর হতে চলেছে, শহরের এত ধার ঘেঁষে কি ধানক্ষেত থাকে নাকি? অতনুদের ছেলেবেলায় এখানে রেলস্টেশন ছিল না, চার মাইল হেঁটে চকবাজারে যেতে হতো। এখন স্টেশন হয়েছে বলেই ধাঁ ধাঁ করে বদলে যাচ্ছে গ্রাম। পরিবর্তনগুলো ঠিক ঠিক মিলিয়ে নিতে পারে না অতনু। অনেক দিনের ব্যবধান, ১৭ বছরে সে সীতারামপুর ছেড়েছিল, এখন তার বয়স ৪২। কিন্তু মাঝখানে কি সে আর কখনও আসেনি, তা তো নয়, বেশ কয়েকবার ঘুরে গেছে। কিন্তু স্মৃতির এমনই কারসাজি, কৈশোরের ছবিগুলো এখনও জ্বলজ্বল করে, মাঝখানে অনেক দিনের শূন্যতা। অবশ্য মাঝখানে এসে সে আগে দু’তিন দিনের বেশি থাকেনি, ভালো করে চারপাশটা তাকিয়ে দেখেনি।
শেষ এসেছিল সাত বছর আগে, মায়ের মৃত্যুর সময়। তখন আবার অতনুর ওদিকেও খুব ব্যস্ততা। একটা প্রমোশন নিয়ে দর কষাকষি চলছিল, তবু মা বলে কথা, আসতেই হয়, শেষ দেখা হয়নি, শুধু শ্রাদ্ধের জন্য তিনদিন। মাতৃশোকের চেয়েও মন বেশি অস্থির ছিল চাকরির জন্য, তখন এখান থেকে আফ্রিকায় টেলিফোন করারও সুবিধে ছিল না।
খাল ধালে একটা ছিল ভূতের বাড়ি। কৈশোরেরও আগে, বাল্যস্মৃতিতে একটা গা-ছমছমে ভাব। বেশ বড় তিনতলা বাড়ি, দেয়ালে দেয়ারে বট-অশথ গাছ গজিয়ে গিয়েছিল, ভূত ছাড়াও সাপ-খোপেরও অভাব ছিল না! আসলে হয়তো কোনো শারিকি গণ্ডগোলে পরিত্যক্ত বাড়ি, কোনো সমৃদ্ধ মুসলমানের সম্পত্তিও হতে পারে, দেশ ভাগের পর চলে গিয়েছিল ওপারে, এখনও ওখানে কাছাকাছি মুসলমানদের একটি পল্লী আছে। এখন সেই ভূতের বাড়ির জায়গায় একটি ঝকঝকে রিসর্ট, প্রচুর আলো ঝলমল করে, শহরের লোকেরা এখানে ছুটি কাটাতে আসে। ওরকম ভূতের বাড়ি আরও নানা জায়গায় ছিল, সবই হয়ে গেছে নিশ্চিহ্ন, হবেই তো, এরই নাম উন্নতি।
তবে, সেই রিসর্টের দিকে তাকিযে এখনও অতনু কল্পনায় সেই ভূতের বাড়িটা দেখতে পায়। তার মনে হয়, গ্রামে-ট্রামে ও রকম দু’একটা হানাবাড়ি থাকা বোধহয় উপকারীই ছিল, ওই সব বাড়িতে বাচ্চা ছেলেমেয়েদের ভয় ভাঙার ট্রেনিং হতে আস্তে আস্তে। অতনুরা প্রথম প্রথম ট্রেনিং হতো আস্তে আস্তে। অতনুরা প্রথম প্রথম ওই বাড়ির আশপাশে ঘুরে বেড়াত, একটা কিছু আওয়াজ শুনলেই দৌড়ে পালাত ভয়ে। একটু বয়েস বাড়লে সাহস করে পাড় দিয়েছিল বাগানে বাড়িটার কাছ ঘেঁষত না, বাড়িটার মধ্যে সত্যি সত্যি মাঝে মাঝে উৎকট শব্দ হতো, কেউ কেউ নাকি আগাগোড়া কালো সিল্কের বোরখায় ঢাকা এক মহিলাকে ধীর পায়ে দোতলার বারান্দায় হাঁটতে দেখেছে, কয়েক মুহূর্ত মাত্র, তারপরই তিনি মিলিয়ে যেতেন হাওয়ায়। উনি রাবেয়া বেগম, মারা গেছেন সাতাশ বছর আগে।
কী করে যেন হঠাৎ একদিন ভয় ভেঙে গেল। মধ্য কৈশোরে চার-পাঁচজন বন্ধুর সঙ্গে অতনু উঠে গিয়েছিল দোতলায়। গাঢ় দুপুরে, যখন চারপাশে কোনো শব্দ থাকে না, সে সময় ভূতরা এসে পেছন থেকে ঠেলা মারে। কই কিছুই তো হলো না, কোনো ঘরেরই দরজা-জানলা নেই, চতুর্দিক প্রচুর ভাঙা কাছ ছড়ানো, আর ধুলোতে কিছু কিছু পায়ের ছাপ, ভূতেরা পায়ের ছাপ ফেলতে পারে কি না, তা ঠিক জানা ছিল না তখন। অনেক পায়রার বাসা ছিল।
সে দিনটার কথা খুব ভালোই মনে আছে অতনুর। কারণ সেদিন সে শুধু ভূতের বাড়ি জয় করেনি। সেইদিনই জীবনে প্রথম সে সিগারেট খায়, তার বন্ধু রতন শিখিয়েছিল। সিগারেট টানার মতন অমন নিরিবিলি জায়গা আর পাওয়া যাবে কোথায়? লেবু পাতা চিবিয়ে বাড়ি ফিরলেও কী করে যেন ধরা পড়ে গিয়েছিল মায়ের কাছে। মা কি কোনো শাস্তি দিয়েছিলেন? মায়ের দেওয়া শাস্তি কোনো মানুষই মনে রাখে না। বাবা চুলের মুঠি ধরে মাথাটা দেয়ালে ঠুকে দিতেন, সেটা মনে আছে।
সেই দিনটায় তাদের দলে একটা মেয়েও ছিল না? কী যেন নাম তার, চিনু, চিনু, সে একটা গেছো মেয়ে, তাকে নেওয়া হবে না, তবু এসেছিল জোর করে। রোগা-প্যাংলা চেহারা, সেই তেরো-চৌদ্দো বছর বয়সে তাকে মেয়ে বলেই মনে হতো না, বুকেও বোধহয় ঢেউ খেলেনি, হাফ-প্যান্ট আর শার্ট পরে থাকত। সিগারেট টানার সময় সেও জেদ ধরেছিল, আমায় দাও, আমিও খাব, আমিও খাব, কিন্তু তাকে দেওয়া হয়নি, কে যেন একটা চড়ও মেরেছিল তাকে। কোথায় হারিয়ে গেছে সেই মেয়েটা।
এবারে তিন সপ্তাহের ছুটিতে এসেছে অতনু। সীতারামপুরে তার আর কোনোও আকর্ষণ নেই, এখানে কয়েকটা দিন নষ্ট করার কোনোও মানে হয় না, হঠাৎ মায়ের কথা খুব মনে পড়ছিল, এসেছে সেই নস্টালজিয়ায়। আসার পরই মনটা পালাই পালাই করছে।
যৌথ পরিবার ছিল একসময়, তারপর অনেক ভাগ হয়েছে, মায়ের মৃত্যুর পর তার দাদা এসে নিজেদের অংশটা বিক্রি করে দিয়ে যায় এক কাকাকে। সেই কাকা অতনুর বাবার বৈমাত্রেয় ভাই, ছোটবেলায় খুব ভালোবাসতেন অতনুকে। সেই স্মৃতিতে এখানে আসা, কাকার পরিবার বেশ খাতির-যত্ন করছে তাকে, তবু অতনুর অস্বস্তি কাটছে না। কাকা বুড়ো হয়ে গেছেন, অসুখের কথা ছাড়া আর কোনো কথা জানেন না। দুই খুড়তুতো ভাইকেই অচেনা মনে হয়, দুই ভাইয়ের স্ত্রী খুব ঝগড়া করে। কিন্তু চাষের জমি আছে, তার থেকে উপার্জন অনিশ্চিত, বাজারে একটা জামা-কাপড়ের দোকানে সিকি ভাগ মালিকানা, সে আয়ও যথেষ্ট নয়।
মা যে ঘরটায় থাকতেন, সে ঘরটা এখন বৈঠকখানা। কয়েকটা ছেঁড়া ছেঁড়া বেতের চেয়ার, একটা তক্তাপোশ আর একটা টিভি। মায়ের কোনো চিহ্নই নেই। খুড়তুতো ভাইয়ের দুই স্ত্রীর মধ্যে একজন নিঃস্তান, অন্যজনের তিনটে ছেলেমেয়ে তিনটির বয়েস নয়, বারো, চৌদ্দ, মেয়েটিই বড়। অতনুর আর বিয়ে-থা করা হয়নি। ছোট ছেলেমেয়েদের সে ভালোবাসে। ওদের সঙ্গেই তার বেশি সময় কাটে। মাঝে মাঝে অতনু মনে মনে ওদের সঙ্গে তুলনা করে তার বাল্য-কৈশোর বয়সের। তখন এখানে প্রচুর ফাঁকা জায়গা ছিল, কিছু কিছু বাগান আর পুকুর ছিল, অতনু তার বন্ধুদের সঙ্গে হুটোপুটি করে বেড়াত, বাঁদরের মতন লাফালাফি করত অন্যদের বাগানের গাছে, ফল-পাকুড় খেয়েছে, লাঠির বাড়িও খেয়েছে। সন্ধের পরেও দেরি করে বাড়ি ফিরলে বকুনি। খেয়েছে বাবার কাছে। এখন তার খুড়তুতো ভাইয়ের ছেলেমেয়েরা স্কুলে যায়, বাড়িতে কিছুক্ষণ পড়তে বসে, আর বাকি সব সময়টা টিভি দেখে। বাড়ির বাইর কোথাও যায় না, খেলতেও যায় না, তাই তারা লক্ষ্মী ছেলেমেয়ে। অতনু বুঝতে পারে, এরা হয়তো সারাজীবন এই গ্রামেই থাকবে, আর কোথাও যাবে না।
অতনুকেও ওদের সঙ্গে টিভি দেখতে হয়। অতনু খানিকটা কৌতূহল নিয়েই টিভির অনুষ্ঠানগুলো, বিশেষত বিজ্ঞাপন দেখে। কোনোও দেশের অনেকখানি সমাজের ছবি বিজ্ঞাপন দেখলেই বোঝা যায়। এখানকার বিজ্ঞাপন দেখে সে প্রায় হতবাক। মনে হয় যেন ইন্ডিয়া নামের দেশটা পুরোপরি ওয়েস্টার্নাইজড হয়ে গেছে। ছেলেমেয়েদের কী সব চোখ ঝলসানো পোশাক, কতরকম গাড়ি, কমপিউটার দারুণ কেরামতি, আর কত টাকা খরচ হয় একটা বিজ্ঞাপনে! এসব দেখে হাসে অতনু। দূরে থাকলেও সে তো মোটামুটি খবর রাখে দেশের। ইন্টারনেটেও পড়া যায় কলকাতার খবরের কাগজে।
টিভিতে অনেকগুলো বাংলা চ্যানেল, তাতে সিনেমা দেখায়, আর হরেক সিরিয়াল কাহিনী, বিদেশের মতোন। এসব একটা সিনেমারও সে নাম শোনেনি, এখনকার অভিনেতা-অভিনেত্রীদেরও সে চেনে না। উত্তমকুমার চলে গেছেন, সে জানে, কিন্তু বসন্ত চৌধুরী, ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়, জহর রায়, রবি ঘোষ, অরুন্ধতী, অনুপ, এঁরা কেউ নেই! পুরনোদের মধ্যে রয়েছেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, আর একালের একজন নায়িকাকে কেন যেন তার চেনাচেনা মনে হয়, যদিও তার একটা ফিল্মও সে আগে দেখেনি, অথচ কোথায় তাকে দেখেছে, তা মনে করতে পারছে না।
এই সীতারামপুরেও অতনুর পুরনো কালের চেনা অনেকেই নেই। তার স্কুলের বন্ধুদের মধ্যে চার-পাঁচজন এখানকার সঙ্গে সম্পর্ক চুকিয়ে চলে গেছে কলকাতায় বা বিদেশে। আর যারা রয়ে গেছে, তারা রাজনীতির কচকচি বেশ ভালোই ভোজে। কিন্তু অন্য কোনো বিষয়ে তারা প্রায়ই কিছুই খবর রাখে না। আফ্রিকা সম্পর্কে একেবারে অজ্ঞ। যাদের সঙ্গে তুই তুই সম্পর্ক ছিল, তারা এখন তাকে তুমি বলে। এদের সবারই বিশ্বাস, বিদেশে যারাই থাকে, তারা সবাই খুব বড়লোক। এনআরআই-রা অনেক টাকা পকেটে নিয়ে দেশে বেড়াতে আসে।
অবশ্য এনআরআই বলতে ইউরোপ-আমেরিকার অনাবাসীদের কথাই সবাই ভাবে। তারা ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার বা বিজ্ঞানী বা বড় বড় বিদ্বান। অতনু এর কোনোটাই নয়। ছোটবেলায় সে ভেবেছিল, ডাক্তার হবে। এখানে ক্লাস এইট পর্যন্ত পড়ার পর সে গিয়েছিল চক বাজারের হাইস্কুলে। রেজাল্ট মোটামুটি ভালোই ছিল, কলকাতায় গিয়ে ডাক্তারি পড়া যেত অনায়াসেই, থাকতে হবে হস্টেলে। সব যখন প্রায় ঠিকঠাক, তখন একদিন রাত্রির খাওয়া-দাওয়ার পর তার বাবা একটা সিগারেট ধরিয়ে টানছেন বারান্দায় বসে, হঠাৎ প্রবল ভাবে কাঁপতে কাঁপতে পড়ে গেলেন মেঝেতে, বুকে ছুরিবিদ্ধ মানুষের মতোন গড়াতে গড়াতে আর্তনাদ করতে লাগলেন। একজন ডাক্তারকে ধরে আনা হয়েছিল দু’ঘণ্টা বাদে, ততক্ষণে বাবার শ্বাস-প্রশ্বাস খরচ হয়ে গেছে। সেই সঙ্গে শেষ হয়ে গেল অতনুর ডাক্তারি পড়ার স্বপ্ন।
দাদা তখন রেশনিং অফিসে কেরানির চাকরি পেয়ে বর্ধমানে পোস্টেড, ছোট বোনের বিয়ে হয়নি। অতনু পড়াশোনা বন্ধ করে এক বছর পড়ে রইল এখানে। তার পরেও থেকে যেতে পারত গ্রামের অন্য ছেলেদের মতো, সেই ষোলো বছর বয়সেই সংসারের অনটন দেখে চেষ্টা করছিল টুকটাক উপার্জনের। বাবা অনেক ধার রেখে গেছেন। কিছুদিন সে আরও প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে হাঁস-মুরগির ডিম কিনে এনে সাপ্লাই দিত বাজারের কাছের দুটো ভাতের হোটেলে। শুধু মা দুঃখ করে বলতেন, তোর আর পড়াশোনা হবে না রে তনু! আমার গয়না বিক্রি করে দেব, তুই তবু পড়। ক’খানাই বা গয়না মায়ের, তা বিক্রি করে শহরে গিয়ে বেশিদিন পড়াশুনা চালানো যায় না। তা ছাড়া ছোট বোনের বিয়ের সময় গয়নাগুলো লাগবে না?
মায়ের বড় ভাই থাকতেন পুনায়। তিনি সেখানে স্কুলশিক্ষক। তিনি প্রস্তাব দিলেন, অতনুকে তার কাছে পাঠিয়ে দিলে তিনি ওর পড়াশোনার দায়িত্ব নেবেন। অতনু চলে গেল পুনায়। এসবই যেন সাপ-লুডোর ওঠানামা।
সংসারে আর একটি খাওয়ার পেট বৃদ্ধি পাওয়ায় বড় মামিমা প্রথম থেকেই অতনুকে পছন্দ করেননি। তাঁকে খুব দোষ দেওয়া যায় না, তাঁদেরও অভাবের সংসার আর বড় মামাও খানিকটা আলাভোলা মানুষ। তিনি অতনুকে ডাক্তারি পড়াতে পারেননি, তবু ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন হোটেল ম্যানেজমেন্ট ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে। সেখান থেকে পাস করার পরই খবরের কাগজে বিজ্ঞাপন দেখে সে চাকরি পেয়ে যায় আফ্রিকার কেনিয়ায়। সীতারামপুর গ্রামের একটি ছেলে চাকরি করতে যাবে কেনিয়ার হোটেলে! নিয়তির নির্বন্ধ।
আফ্রিকা থেকে মাকে নিয়মিত টাকা পাঠিয়েছে অতনু। তখনই ছোট বোনের বিয়ে হয়। দাদা বাড়ির সঙ্গে বিশেষ সম্পর্ক রাখেনি। আফ্রিকায় অতনুর চাকরি নিয়ে অনেক ঝঞ্ঝাট হয়েছে বেশ কয়েক বছর। ওখানে হোটেল ম্যানেজমেন্টে ইন্ডিয়ান ট্রেনিংয়ের চেয়েও সুইজারল্যান্ডের ট্রেনিং সার্টিফিকেটের কদর অনেক বেশি। কেনিয়ার ট্যুরিজম ও হোটেল ম্যানেজমেন্টে অনেক সুইস কাজ করে। তাদের সঙ্গে রেষারেষিতে অতনুর পদোন্নতি আটকে যায় বারবার। একবার তার কর্মস্থান-হোটেলটা বিক্রি হয়ে যায়, নতুন মালিকরা প্রথমে তাকে রাখতেই চায়নি, রাখলেও অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজারের পদ তাকে দিতে চায়নি। সেই সময়েই মা মারা যান।
মাকে নিজের কাছে নিয়ে রাখতে চেয়েছিল অতনু। মা রাজি হননি। শুধু বলতেন, আফ্রিকা, ওরে বাবা! না না, ওখানে গিয়ে থাকতে পারব না। মা ভাবতেন, শুধু নেংটি পরা, বর্শা হাতে দুর্ধর্ষ ধরনের মানুষরাই সেখানে ঘুরে বেড়ায়। মাকে কিছুতেই বোঝাতে পারেনি অতনু যে নাইরোবি খুবই আধুনিক শহর, সেখানকার মেথররাও প্যান্ট-শার্ট ও জুতো পরে। মা না হয় স্বল্প শিক্ষিত মহিলা, ও রকম ধারণা থাকতেই পারে, কিন্তু এখানকার অনেক শিক্ষিত ভদ্রলোকেরও তো আধুনিক আফ্রিকা সম্পর্কে ধারণা পরিষ্কার নয়। যতবার সে দেশে এসেছে, প্রতিবারই কেউ না কেউ বলেছে, তুমি আফ্রিকায় পড়ে আছ কেন, বিলেত-আমেরিকায় চলে যেতে পারলে না? ওসব দেশে তো হোটেল অনেক বেশি। এবারেও একজন বলছে। কলকাতাতেও অনেক নতুন নতুন হোটেল খুলছে, তুমি এখানে কাজ পাও কি-না দেখো না! গত পাঁচ বছর ধরে অতনু নাইরোবির যে হোটেলে কাজ করছে, সেটা কলকাতার গ্র্যান্ড বা তাজের চেয়ে অনেক বড়। সেখানকার কাজে সে বেশ খুশি। একটি বেলজিয়ান মেয়ের সঙ্গে সহবাস করে।
কলকাতা শহরটা অনেকটা বদলেছে ঠিকই। এয়ারপোর্ট থেকে আসবার যে নতুন রাস্তাটা হয়েছে, সে রাস্তার পাশে পাশে নতুন নতুন প্রাসাদ দেখে সে মুগ্ধ হয়ে গেছে। তার মনে হয়, কলকাতার চেয়ে সে নাইরোবি শহর অনেক বেশি চেনে। কলকাতায় তো সে কখনও থাকেনি।
এবারে অবশ্য সে একটা ভালো জায়গা পেয়েছে। রাজেশ আগরওয়াল নামে মাড়োয়ারি ভদ্রলোকের ব্যবসা আছে কিনিয়া আর তানজানিয়ায়। তিনি নাইরোবিতে প্রায়ই যান এবং প্রতিবারই রয়াল ক্রাউন হোটেলে ওঠেন। ভদ্রলোক বাংলা বলেন মাতৃভাষার মতো। মেনটেন্যান্স ম্যানেজারের নাম অতনু ঘোষ দেখেই তিনি তার সঙ্গে আলাপ করেছেন। মাঝে-মধ্যে সন্ধেবেলা গল্প হয়ে অনেকক্ষণ।
অতনু নিজের কোয়ার্টারে তাকে নেমন্তন করেও খাইয়েছে, তিনিও অতনুকে আমন্ত্রণ জানিয়ে রেখেছিলেন কলকাতায়। তার নিজের বাড়িতে নয়, আগরওয়ালদের একটি ননফেরাস মেটালের কারখানা আছে টালিগঞ্জ অঞ্চলে, অতনুর থাকার ব্যবস্থা করেছেন তিনি। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, দেয়াল ঘেরা এলাকাটিতে রয়েছে সুসজ্জিত বাগান, একটি গাড়িও বরাদ্দ করা আছে তার জন্য।
অতনু অবশ্য মেট্রো ট্রেনে যাতায়াত করে বেশ নতুনত্ব বোধ করে। কলকাতা শহরের মাটিরতলা দিয়ে ট্রেন চলে, এ খবর তার না জানার কথা নয়, যদিও আগে কখনও স্বচক্ষে দেখেনি, তাই প্রথম দিনে সেই ট্রেনে ওঠা যেন মনে হয়েছিল আবিষ্কারের মতন।
রাত আটটা ন’টায় ট্রেন থেকে নামলে এদিক ওদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা কিছু মেয়েকে দেখা যায়। তাদের স্বাস্থ্য এত খারাপ কেন? ভাল করে সাজতেও জানে না। যে শহরের বার-নারীদের অবস্থা করুণ, সে শহরের নৈতিক স্বাস্থ্যও খারাপ হয়, অর্থাৎ অনেক সুখী সংসারের মধ্যেই নৈতিকতার পতন হয়েছে। সত্যি কি তাই? জাগতিক উন্নতি আর নেতিকতার পতন পাশাপাশি চলে! এই শহর থেকেই সবচেয়ে বেশি কিশোর ও যুবতী পাচার হয়ে যায় বাইরে, খবরের কাগজেই ছাপা হয়। সে সব মেয়েদের জায়গা হয় না এই উন্নতির মধ্যে!
ভাল পেনের ব্যবহার তো উঠেই গেছে। এখন সবাই সস্তার পেন দিয়ে লেখালেখি করে। অতনুর বাবার পকেট থেকে একটা শেফার্স পেন চুরি গিয়েছিল লোকাল ট্রেনে। এখন সেই সব পেন পকেটমাররা বেকার, সাত-আট টাকার ডট পেন মেরে কোনো লাভ হয় না। মেট্রো সিনেমার সামনে একজন সিড়িঙ্গে চেহারার প্রৌঢ় সেই পেন বিক্রি করতে এসেছিল অতনুকে। হোটেলে যারা কাজ করে, তাদের কাছে এই পেন যে কত গণ্ডা থাকে, তার ঠিক নেই। সীতারামপুরে বিলি করার জন্য অতনু তার হোটেলে নাম লেখা এই ধরনের পেন এনেছিল পাঁচ ডজন।
লোকটিকে দেখে অতনু চমকে উঠে কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেল।
সে চিনতে পেরেছে। কিন্তু সেটা জানানো ঠিক নয়। এই লোকটি তাদের সীতারামপুরের স্কুলের ইন্দুভূষণ স্যারের ছেলে বিশ্বনাথ, অতনুর সহপাঠী। অথচ এর মধ্যেই এত বুড়োটে চেহারা হয়ে গেছে। দারিদ্র্য আয়ু হরণ করে নেয়, স্বাস্থ্য, শরীরের জ্যোতি, সবই খেয়ে নেয়। অতনুর এখনও অটুট চেহারা, গায়ের রং কালো হলেও অনেকে তাকে সুপুরুষই বলে। বিশ্বনাথ ইস্কুল মাস্টারের ছেলে, অথচ তার এই পরিণতিং জুয়া খেলে নে, না নেশা করে? উন্নতির দৌড়ে সে পা মেলাতে পারেনি!
মস্ত বড় হোর্ডিং-এ বাংলা ফিল্মের এক নায়িকার মুখ দেখে তার খটকা লাগে। কোথায় একে দেখেছে? কোনও ফিল্মে নয়।
কলকাতার সংস্কৃতি জগতের সঙ্গে রাজেশ আগরওয়ালের বেশ যোগাযোগ আছে। তার অনেক ব্যবসা, তা ছাড়াও ফিণ্ম প্রোডিউস করেন। এতগুলো ব্যবসার কথা মাথায় রাখেন কী করে? এত টাকা নিয়েই বা কী পরমার্থ হবে!
মাঝে মাঝেই তিনি পাঁচতারা হোটেলে পার্টি দেন। একটা শহরের, যাদের বলে গ্গ্নটারেট্টি, তারা অনেকেই আসেন, কিছু কিছু রাজনীতির লোকও। সার্থকভাবে ব্যবসা চালাতে গেলে টেবিলের তলা দিয়েও কিছু কিছু আদান-প্রদান করতে হয়। সবাই জানে। তবুও জিনিসটা চাপা দেবার জন্য মাঝে মাঝে সংস্কৃতির অনুষ্ঠানের আয়োজন করা বেশ সুবিধেজনক। বাঙালিদের ধারণা, যারা সংস্কৃতি ভালবাসে, তারা উচ্চ মার্গের মানুষ। তারা কখনও কোনও নোংরা ব্যাপারে জড়াতে পারে না।
রাজেশ আগরওয়াল অতি সজ্জন ও বিনয়ী ব্যক্তি। হয়তো সত্যি তিনি সংস্কৃতি প্রেমিক। পার্টিতে ঢোকার দরজার কাছে দাঁড়িয়ে থেকে হাত জোড় করে তিনি নিজে সব অতিথিকে অভ্যর্থনা জানান, অনেককেই তিনি ব্যক্তিগতভাবে নাম ধরে চেনেন। ভদ্রতাবশত তিনি অতনুকেও আজকের পার্টিতে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।
হোটেল সংলগ্ন বিস্তৃত লনে পার্টি। সবুজ ঘাস ঘিরে চেয়ার, অতিথি অন্তত পঞ্চাশজন তো হবেই। মাঝখানে একটা অস্থায়ী মঞ্চে একটি মেয়ে গান গাইছে। আজকাল গায়িকাদের খুব স্বল্প পোশাক পরাই রীতি। সারা গা ঢেকে গান আজকাল পুজোর অনুষ্ঠানেও চলে না। গরম দেশ, তবু এর মধ্যে অনেক পুরুষেরই অঙ্গে কোট আর টাই। আর মেয়েদের শরীরের অনেকটাই খোলামেলা।
এত লোক হলে, ছোট চোট দলে ভাগ হয়ে আড্ডা হয়। দু’চারজন মদের গেলাস হাতে ঘুরে ঘুরে অনেকের সঙ্গে আরাপ করে। আর বেশির ভাগ অতিথি বসে থাকে একই চেয়ারে।
অতনু এখানে একজনকেও চেনে না। সে গ্রামের ছেলে, কলকাতায় কখনও পাত্তা পায়নি। তারপর পুনা থেকে চলে গেছে ধাদ্ধারা গোবিন্দপুরের চেয়েও অনেক দূরে কালো মানুষদের দেশে। এই ধরনের পার্টিতে এলে সে জানে একা একা বেশি মদ খেয়ে নিতে হয়। আর দেখতে হয় অন্যদের। হোটেল ম্যানেজমেন্টের ট্রেনিং থেকে সে জানে। মদ খেয়ে কখনও বেচাল হতে নেই, একটা সময়ে মদের গেলাস শুধু হাতে ধরে রাখলেও চুমুক দেবার বদলে মাঝে মাঝে ফেলে দিতে হয় মাটিতে।
অতনু নিজে থেকে কারও সঙ্গে আলাপ করে না, তবে অচেনা কেউ কথা বলতে এলে সে গুটিয়ে থাকে না। একটা কিছু হাসি-ঠাট্টার প্রসঙ্গ খুঁজে নেয়।
পার্শ্ববর্তী পাঁচ ছ’জনের দলের একজন সুবেশা তরুণী তার দিকে ঝুঁকে বলল, আপনার সঙ্গে আমাদের আলাপ নেই। আমার নাম সুদর্শনা রায় গুপ্ত, আমি একজন সাংবাদিক।
অতনু নিজের নাম জানিয়ে বলল, গ্ল্যাড টু মিট ইউ, আপনি কোন কাগজের?
সুদর্শনা নিজের কাগজের একটা কার্ড দিয়ে বলল, আপনি কোথায়?
অতনু বলল, আমি থাকি আফ্রিকায়। কয়েকদিনের জন্য এসেছি।
আফ্রিকা শুনেই একজন পুরুষ গলা বাড়িয়ে বলল, আপনি আফ্রিকায় থাকেন? কোথায়?
এই ধরনের বাঙালি আড্ডায় কথা জমাবার জন্য অতনুর একটা বাঁধা রসিকতা আছে।
সে বলল, আমি থাকি কেনিয়ার নাইরোবি শহরে। রবীন্দ্রনাথ এই শহর নিয়ে গান লিখেছেন, আপনারা জানেন?
এবার অনেকগুলি কৌতূহলী মুখ কাছে ঝুঁকে আসে। একজন বলল, রবীন্দ্রনাথ আফ্রিকা নিয়ে একটা বড় কবিতা লিখেছেন জানি। কিন্তু লাইব্রেরি নিয়ে—
অতনু বলল, রবীন্দ্রনাথ নিজের নাম নিয়ে অনেক কবিতা ও গান লিখেছেন। তাই রবি’র সঙ্গে কবি, ছবি,হবি এই সব মিল দিয়েছেন, মিল খুঁজতে খুঁজতে একবার নাইরোবীও পেঁৗছে গেছেন একটা গানে। সেই গানটা হল, সকালবেলার আলোয় বাজে, বিদায় ব্যথার ভৈরবী/ আন বাঁশি তোর, আর কবি… এরপর একটা লাইন হল নাই যদি রোস নাই রবি, সেদিন নাইরবি…
সবাই কলহাস্যমুখর হয়।
আর কিছু বলার আগেই একটা গুঞ্জন ও কিছু লোকের ব্যস্ততা দেখা যায় প্রবেশ মুখে। বিশিষ্ট কোনো অতিথি এসেছেন।
রাজেশ আগরওয়াল হাত জোড় করে ও কোমর ঝুঁকিয়ে সেই অতিথিকে নিয়ে আসছেন, অতিথি একজন মহিলা। সাদা সিল্কের শাড়ি পরা, তার থেকে ঝিলিক মারছে অনেক জরির চুমকি, মাথার চুল চুড়ো করে বাঁধা, পালিশ করা মুখ, খুব গ্গ্ন্যামারের ছড়াছড়ি।
অতনু সাংবাদিকটিকে জিজ্ঞেস করল, ইনি কে?
সে বলল, সে কী। আমাকে বলেছেন বলেছেন, আর কারুকে বলবেন না। লোকে আপনাকে গেঁয়ো ভূত ভাববে। সুরশ্রী মিত্র, বাংলা ফিল্মের সবচেয়ে নামী নায়িকা, মুম্বাই থেকেও ডাক এসেছে, চলে গেল বলে।
আর একবার তাকিয়ে দেখে বুঝল। কয়েকদিন আগেই টিভির কোনও ফিল্মে সে এই নায়িকাটিকে দেখেছে, গ্রাম্য মেয়ের ভূমিকায় সাজপোশাক ছিল অন্যরকম? কেন ওকে একটু চেনা চেনা লাগছিল তার কারণটাও বোঝা গেল, সীতারামপুরের গোল গম্বুজটার গায়ে ফিল্মের পোস্টারে এরই মুখের ছবি ছিল, যাতায়াতের পথে সে অনেকবার দেখেছে।
একটু বাদে রাজেশ আগরওয়াল তার এই প্রাইজড পজেশানটি সকলকে ভাল করে দেখাবার জন্য নিয়ে আসলেন প্রতিটি চেয়ারের সামনে। জনে জনে হাত তুলে নমস্কার করছে। উত্তরে মিষ্টি হাসি বিলোচ্ছেন নায়িকাটি।
অতনুর কাছে এসে সে একটু থমকে দাঁড়িয়ে চেয়ে রইল নির্নিমেষে! তারপর অস্ফুট গলায় বলল, তনুদা?
অতনুরও আর চিনতে দেরি হলো না, সেও সঙ্গে সঙ্গে বলল চিনু! তাই না?
নায়িকা জিজ্ঞেস করল, তুমি এখানে কোথা থেকে এলে? তুমি তো হারিয়ে গিয়েছিলে।
অতনু বলল, এসেছি এক জঙ্গলের দেশ থেকে। দৃশ্যটি একটু বেশি নাটকীয়। তাই বেশিক্ষণ টানা যায় না। অভ্যেস মতন অতনুকেও একটু হাসি উপহার দিয়ে এগিয়ে গেল নায়িকা অন্যদের দিকে।
এই সেই দস্যি মেয়ে চিনু, বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়। সেই যে রূপকথার গল্পে আছে, একটা ব্যাঙ একদিন হঠাৎ রাজপুত্র হয়ে গেল। এ যেন ঠিক তার উল্টো। সেদিনের সেই রোগা প্যাংলা মেয়েটা আজকের এই রূপসী!
মহিলা সাংবাদিকটি জিজ্ঞেস করল, আপনি একে পার্সোনালি চেনেন বুঝি?
অতনু তাচ্ছিল্যের সঙ্গে বলল, সে অনেক ছেলেবেলায়।
সে বুঝিয়ে দিল যে, এই বিষয়ে সে আলোচনা চালাতে উৎসাহী নয়। সে চুমুক দিল গেলাসে। একটু পরেই এক যুবক এসে অতনুকে বলল, আপনাকে একবার ওদিকে ডাকছে।
আলোর বৃত্ত থেকে একটু বাইরে। আধো-অন্ধকারে একটা চেয়ারে বসে আছে নায়িকা। তাকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে কয়েকজন।
অতনুকে দেখে সে অন্যদের বলল, এই এখানে একটা চেয়ার দাও। আর তোমরা একটু যাও, ওঁর সঙ্গে আমার কথা আছে।
অতনু বসবার পর একটু ঝুঁকে এসে তার একটা হাত ধরে নায়িকা সম্পূর্ণ অভিনয়হীন গলায় বলল, তনদুা, তোমাকে কতদিন পর দেখলাম। আগরওয়ালজি বললেন, তুমি এখন আফ্রিকায় থাকো।
অতনু বলল, হ্যাঁ। চিনু, তুই কবে সিনেমার নায়িকা হয়েছিস? শুনলাম তার খুব নাম, এসব আমি কিছুই জানি না। তোর ভালো নামও তো আমি জানতাম না।
চিনু বলল, কেন তোমাদের ওখানে বাংলা ফিল্ম যায় না?
অতনু বলল, কী জানি। হিন্দি ফিল্ম কখনও সখনও প্রাইভেটলি দেখানো হয় শুনেছি। তাও আমার দেখা হয় না। তুই হিন্দিতেও করেছিস।
করেছি দু’একটা। সব বাঙালিরাই আমাকে চেনে, একমাত্র তুমি ছাড়া।
তারপর একটু দুষ্টুমির হাসি দিয়ে সে আবার বলল, কিংবা, একমাত্র তুমি আমাকে যেভাবে চেন, সেভাবে এখন আর কেউ চেনে না।
তুই কী করে নায়িকা হয়ে গেলি রে? চেহারাটাও বদলে গেছে।
ওসব কথা ছাড়ো। হয়ে গেছি কোনো রকমে। তুমি কেমন আছ, বলো। বিয়ে করেছ?
ভালোই আছি রে। না বিয়ে করিনি। তবে একজন বিদেশিনী মেয়ের সঙ্গে ভাব আছে। তুই?
আমার একটা বিয়ে ভেঙে গেছে। আর একটা, নাঃ, এখনও কিছু ঠিক নেই।
তুই আমাকে দেখে চিনলি কী করে? আমি তো তোকে চিনতে পারিনি, শুধু একটু একটু মনে হচ্ছিল, তোর নাকটা শুধু…
হ্যাঁ, আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধুরা আমাকে বলে নাকেশ্বরী। তোমার চেহারা তো প্রায় একই রকম আছে। পুরুষরা বিশেষ বদলায় না। আমাদের তো মেক-আপ টেক-আপ দিয়ে…
অতনু একটা সিগারেট ধরালো।
চিনু বলল, তুমি এখনও সিগারেট খাও? অনেকেই তো… আমিও ফিল্ম লাইনে এসে প্রথম প্রথম খুব খেতাম, এখন একদম ছেড়ে দিয়েছি, অন্তত সাত বছর, দাও, তোমার থেকে একটা টান দিই।
সিগারেটটা হাতে নিয়ে একটু অন্যমনস্ক হয়ে গেল চিনু।
অতনু জিজ্ঞেস করল, তুই আর সীতারামপুরে যাস?
চিনু বলল, নাঃ। ওখানে তো ছিল আমার মামাবাড়ি। প্রায়ই যেতাম এক সময়, আমাদের বাড়ি ছিল ব্যারাকপুরে। তারপর বাবা বদলি হয়ে গেলেন নর্থ বেঙ্গলের মালবাজারে।
অতনু বলল, ও হ্যাঁ, মামাবাড়ি। ওঁরা আর কেউ নেই শুনেছি। তোর একটা ফিল্ম কয়েকদিন আগে দেখলাম টিভিতে। নামটা বোধহয় ‘আশালতা’, তাই না?
হ্যাঁ।
তাতে তুই একটা গ্রামের মেয়ে, ডুরে শাড়ি পরা, একটা সিনে আছে, তুই একটা পুকুর থেকে ডুব দিয়ে উঠে এলি… হ্যাঁরে চিনু, তুই ও রকম কোমর দুলিয়ে হাঁটা কোথায় শিখলি রে? গ্রামের মেয়েরা কি ওইভাবে হাঁটে?
তুমি কী যে বল তনুদা? সিনেমা করতে গেলে কত কী শিখতে হয়। গ্রামের মেয়েরা ওইভাবে হাঁটে না, ওসব মেক বিলিভ, অধিকাংশ সিনেমাই তো রূপকথা, তাই না?
তুই নাচ জানিস?
মাঝে মাঝে নাচতে হয়, কিন্তু তাকে নাচ বলে না।
একজন যুবক হন্তদন্ত হয়ে এসে বলল, মিস, আপনাকে ওদিক আসতে বলছেন আগরওয়ালজি। সবাই আপনাকে চাইছে।
চিনু রুক্ষ গলায় বলল, একটু পরে যাচ্ছি, এখন ডিস্টার্ব কোরো না।
ছেলেটি ফিরে যাবার পর চিনু বলল, একটু নিরিবিলিতে যে তোমার সঙ্গে গল্প করব, তার উপায় নেই। তুমি কতদিন আছ?
অতনু বলল, পরশু ফিরে যাব।
চিনু বলল, এই রে, এই দু’দিন আমার টানা শুটিং। আউটডোর। তুমি আসবে, ডায়মন্ডহারবারে? না থাক, শুটিং-এর সময় আমি তোমার সঙ্গে ভালো করে কথা বলতে পারব না। তোমারও বোরিং লাগবে।
অতনু বলল, শুটিং দেখা আমার পোষাবে না।
আবার একজন যুবক দৌড়ে এসে বলল, মিস, আপনার নাম অ্যানাউন্স করা হয়ে গেছে, আপনাকে একবার সেন্টার স্টেজে দাঁড়াতে হবে।
চিনু বলল, ঠিক আছে। যাচ্ছি।
উঠে দাঁড়িয়ে সে অনেকটা আপন মনে বলল, নায়িকা টায়িকা হতে গেলে অনেক কিছু মূল্য দিতে হয়, সে তুমি বুঝবে না।
অতনু মনে মনে ভাবল, না বোঝার কী আছে? সব দেশেই তো এক।
চিনু আবার বলল, যে কোনো লাইনেই ওপরে উঠতে গেলে কিছু না কিছু মূল্য দিতে হয়ই, তাই না? আমাদের ফিল্ম লাইনেও… কোনো ইনহিবিশন রাখলে চলে না। যাই। তোমার সঙ্গে আবার কখনও দেখা হবে কিনা জানি না। তবু একটা কথা বলতে খুব ইচ্ছে করছে। বলব?
বল!
তনুদা, তোমার সেই দিনটার কথা মনে আছে? সেই ভুতুড়ে বাড়িটায়…
মনে থাকবে না কেন? তোর যে মনে আছে, সেটাই আশ্চর্যের।
তনুদা, জীবনে আমি অনেক অভিজ্ঞতা পার হয়ে যাচ্ছি। কিন্তু সেদিন, আমি যে তীব্র আনন্দ পেয়েছিলাম তার কোনো তুলনা হয় না। তোমাকে দেখে… সে রকম আর কখনও… চলি ওরা আর থাকতে দেবে না।
হঠাৎ কি চিনুর গলায় কান্না এসে গেল? মুখ নিচু করে সে দ্রুত পায়ে চলে গেল আলোর বৃত্তের দিকে।
অতনু আরও কিছুক্ষণ বসে রইল সেখানেই। সেই বট-অশ্বত্থের ফাটল ধরানো পোড়োবাড়ি। গা-ছমছমে দুপুর। সিগারেট খেতে চেয়েছিল চিনু, একদিন অতনুকে ধরে ঝুলোঝুলি, তাই বন্ধুদের বাদ দিয়ে শুধু চিনুকে নিয়ে এক দুপুরে চুপি চুপি সেই বাড়িতে গিয়েছিল অতনু।
সিগারেটে প্রথম টান দিয়েই কাশতে শুরু করেছিল চিনু, তার পিঠে ছোট ছোট চাপড় মেরে দিচ্ছিল অতনু, তারপর কী যেন হল, পর পর পাঁচটা চুমু খেয়েছিল সে। চিনু অবাক হয়নি, প্রথমবারের পর, পাখির বাচ্চা যেমন পাখি-মায়ের সামনে ঠোঁট ফাঁক করে থাকে, সেইভাবে চিনু এগিয়ে দিয়েছিল ঠোঁট।
তাদের দুজনেরই সেই প্রথম অভিজ্ঞতা। তার পর নদী দিয়ে কত জল গড়িয়ে গেছে, সেই বাড়িটা আর নেই, চিনু কত বদলে গেছে। অনেক কিছুই বদলে গেছে, তবু চিনু যে আজ বলল, সে রকম তীব্রতা সে আর জীবনে পায়নি, তার চোখে জল এসে গেল… এই স্মৃতি নিয়েই ফিরে যাবে অতনু।
___________________________
গল্প টি পড়তে নীচের লিঙ্কে ক্লিক করুন --
https://worldsahityaadda.blogspot.com/2021/12/story-haraner-nathjamay-manik.html
Monday, December 27, 2021
দুয়ারে রেশন প্রকল্পে নিয়োগ 2022 || Duare reson prokalpo recruitment 2022 || Duare sarkar recruitment 2022 || government jobs news
**পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে কর্মী নিয়োগ দুয়ারে রেশন প্রকল্পে**
**দুয়ারে রেশন প্রকল্পে কর্মী নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি জারি
করল পশ্চিমবঙ্গ এর আরও একটি জেলা । মুখ্যমন্ত্রী
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুপ্রেরণায় রাজ্যের বিভিন্ন
জেলা থেকে একে একে দুয়ারে রেশন প্রকল্পে কাজের
জন্য প্রার্থীদের নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত করা হচ্ছে।
বিভিন্ন জেলার নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি জারি হলে তা
https://worldsahityaadda.blogspot.com/?m=1
ওয়েবসাইটে একে একে পোস্ট করা হচ্ছে।
একইরকম ভাবে পশ্চিমবঙ্গ এর নতুন একটি জেলা থেকে
দুয়ারে রেশন প্রকল্পে নিয়োগের আবেদন চলছে। কোন
জেলায় নিয়োগ করা হচ্ছে, শিক্ষাগত যোগ্যতা,
বয়সসীমা এবং আবেদন পদ্ধতি সহ বিস্তারিত তথ্য নীচে
দেওয়া হল।
পদের নাম- অ্যাডিশনাল ডাটা এন্ট্রি অপারেটর
(Additional Data Entry Operation/ DEO)
বয়স সীমা- এই পদে আবেদনের জন্য আবেদনকারীর
বয়স হতে হবে সর্বনিম্ন ১৮ বছর। বয়স হিসাব করতে হবে
৮ অক্টোবর, ২০২১ তারিখের হিসাবে।
শিক্ষাগত যোগ্যতা- প্রার্থীদের যোগ্যতা হতে হবে
যেকোনো বিষয়ে স্নাতক পাশ। তাছাড়া কম্পিউটার
অ্যাপ্লিকেশন বিষয়ে কোর্স পাশ করে থাকতে হবে।
আবেদন পদ্ধতি- আবেদন পত্রের ফরম্যাট প্রতিটি
জেলার অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।
আবেদন পত্রটি একটি A4 সাইজ কাগজে প্রিন্ট আউট
করে যথার্থভাবে পূরণ করতে হবে। সঠিকভাবে পূরণ
করা আবেদনপত্র ও আবেদনকারীর নথিপত্রের জেরক্স
কপি সংযুক্ত করে একটি বন্ধ খামে নির্দিষ্ট ঠিকানায় জমা
দিতে হবে।
Sunday, December 26, 2021
মাসিক 40 হাজার টাকা বেতনে ইয়ং প্রফেশনাল পদে চাকরি || PBSSD Young Professional recruitment 2022 || Pbssd recruitment 2022 || government jobs news
**মাসিক 40 হাজার টাকা বেতনে ইয়ং প্রফেশনাল পদে চাকরি**
পশ্চিমবঙ্গ সোসাইটি ফর স্কিল ডেভেলপমেন্ট (PBSSD)
ঘোষণা করলো রাজ্যে নিয়োগের একটি বিজ্ঞপ্তি। ইয়ং
প্রফেশনাল পদে কর্মী নিয়োগ করা হবে।উক্ত পদে
নিয়োগ করার জন্য দেখা হবে প্রার্থীদের বিশেষ শিক্ষাগত
যোগ্যতা । নিয়োগ সংক্রান্ত সমস্ত তথ্যাদি নিচে দেওয়া
হল।
*Recruitment for PBSSD Young Professional*
*নোটিশ নং:* PBSSD-33/2/2021/3596
*প্রকাশিত তারিখঃ* 10 ডিসেম্বর 2021
*পদ* : ইয়ং প্রফেশনাল (Young Professional)
*বেতনঃ* 40,000 টাকা (মাসিক), সাথে মাসিক ভাতা।
*বয়সসীমাঃ* 01.01.2022 তারিখ অনুযায়ী
আবেদনকারীর বয়স 30 বছরের মধ্যে হতে হবে।
*শিক্ষাগত যোগ্যতাঃ* সম্পর্কিত বিষয়ে মাস্টার ডিগ্রি
থাকতে হবে অথবা BE/B.Tech এর ডিগ্রি অথবা
ম্যানেজমেন্ট/ LLB/ প্রসেসিং- এই বিষয়গুলির মধ্যে
যেকোনো একটিতে দুই বছরের পোষ্ট গ্র্যাজুয়েশন
ডিপ্লোমা করা থাকতে হবে।
*চাকরির ধরনঃ* দুই বছরের জন্য কন্ট্রাকচুয়াল
বেসিসে নিয়োগ করা হবে। পরে আরো এক বছর
কাজের সময়সীমা বাড়ানো হবে।
*আবেদন পদ্ধতিঃ*
পশ্চিমবঙ্গ সোসাইটি ফর স্কিল ডেভেলপমেন্ট (PBSSD)
এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইট থেকে অনলাইনের মাধ্যমে
আবেদন করতে হবে। ইতিমধ্যেই আবেদন পদ্ধতি চালু
হয়ে গেছে।
অফিসিয়াল ওয়েবসাইট --
*আবেদন ফিঃ* প্রার্থীরা বিনামূল্যে আবেদন করতে
পারবে।
*প্রক্রিয়াঃ* প্রার্থীদের আবেদন গুলিকে স্ক্রুটিনি করার
পর যোগ্যদের নাম শর্টলিস্ট করা হবে। ঐ লিস্টে নাম
থাকা প্রার্থীদের ইন্টারভিউয়ের জন্য ডাক দেওয়া হবে।
ইন্টারভিউ তে সফলতা অর্জন করলেই চাকরিতে
নিয়োগিত করা হবে।
*গুরুত্বপূর্ণ তারিখ :*
আবেদন শুরু : 10.12.2021
আবেদন শেষ : 02.01.2022
________________________________________________
সম্পূর্ণ বিজ্ঞপ্তি পড়তে নীচের লিঙ্কে ক্লিক করুন--
https://worldsahityaadda.blogspot.com/2021/12/wbsetcl-recruitment-2022-wbsedcl.html
__________________________________________________
সম্পূর্ণ বিজ্ঞপ্তি পড়তে নীচের লিঙ্কে ক্লিক করুন---
https://worldsahityaadda.blogspot.com/2021/12/bsk-new-recruitment-2022-wb-govt-jobs.html
Friday, December 24, 2021
রাজ্যে বিদ্যুৎ বিভাগে নিয়োগ || Wbsetcl recruitment 2022 || wbsedcl recruitment 2022 || রাজ্য বিদ্যুৎ সংস্থায় ৪১৪ জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ার নিয়োগ || government jobs news 2022
*রাজ্য বিদ্যুৎ সংস্থায় ৪১৪ জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ার*
*(ডিপ্লোমা ও গ্র্যাজুয়েট ছেলেমেয়ের জন্য)*
পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অধীন সংস্থা পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য
বিদ্যুৎ সম্প্রসারণ কোম্পানি লিমিটেড (WBSETCL)
'জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ার (ইলেক্ট্রিক্যাল) গ্রেড-।।' ও 'জুনিয়র
এক্সিকিউটিভ (স্টোর্স)' পদে ৪১৪ জন লোক নিচ্ছে।
কারা কোন পদের জন্য যোগ্য :
জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ার (ইলেক্ট্রিক্যাল) গ্রেড-।।: পশ্চিমবঙ্গ
রাজ্য কারিগরি শিক্ষা সংসদের অনুমোদিত কোনো
প্রতিষ্ঠান বা কলেজ থেকে ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের
ও বছরের পুরো সময়ের ডিপ্লোমা কোর্স পাশ হলে
আবেদন করতে পারেন।
মূল নাইনে:-- ৩৯,৮০০-১,০৮,৭০০ টাকা।
শূন্যপদ:-- ৪০০টি (জেনাঃ ১১১, জেলাঃ ই.সি. ৬২,
জেনাঃ প্রাঃসংকঃ ১৬, জেনাঃ মেধাবী খেলোয়াড় ৮.
জেনাঃ প্রতিবন্ধী (এল.ভি), জেনাঃ বধির প্রতিবন্ধী 3.
জেনা প্রতিবন্ধী (আইডি) ৪. ও.বি.সি.-এ ক্যাটারি ২৭,
৩.বি.সি. ক্যাটেগরি ই.সি. ১২. ও.বি.সি-বি ক্যাটেগরি ২০,
৩.বি.সি-বি মেরি ইসি ৯, তাজা, ইসি ২৮. প্রসবের ৮. বর্ষ
(এল.ডি.)১৭, ভাউলা ইসি. (৮)। পোস্ট কোড নং: 02
জুনিয়র এক্সিকিউটিভ (স্টোর্স) : যে কোনো শাখার
গ্র্যাজুয়েটরা লজিস্টিক্স, মেটেরিয়াল ম্যানেজমেন্ট,
লজিস্টিক্স অ্যান্ড মেটেরিয়াল ম্যানেজমেন্ট, সাপ্লাই চেন
ম্যানেজমেন্ট, সাপ্লাই চেন ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড
লজিস্টিক-এর পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডিগ্রি বা ডিপ্লোমা কোর্স
পাশ হলে যোগ্য। যে কোনো শাখার গ্র্যাজুয়েটরা
লজিস্টিক্স, মেটেরিয়াল ম্যানেজমেন্ট বা, সাপ্লাই চেন
ম্যানেজমেন্ট স্পেশালাইজেশন হিসাবে নিয়ে বিজনেস
ম্যানেজমেন্টের পোস্ট-গ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমা কোর্স পাশ
হলেও যোগা।
মূল মাইনে: ৩৭,৪০০-১,০৮,২০০ টাকা ।
শূন্যপদ : ১৪টি (জেনা: ১. জেনাঃ প্রতিবন্ধী (এল.ভি) ১,
ও.বি.সি.-এ ক্যাটেগরি ২, ৩.বি.সি এ ক্যাটেগরি ই.সি. ১.
ও.বি.সি.- বি ক্যাটেগরি ইসি ১, ভজো, তাহাঃ ই.সি. ২.
ত:উ:জা: ২)। পোস্ট কোড :01.
উপরের সব পদের বেলায় বয়স হতে হবে ১-১-২০২১
হিসাবে ১৮ থেকে ৩২ বছরের মধ্যে। তপশিলীরা ৫ বছর,
ও.বি.সি.'রা ৩ বছর ও প্রতিবন্ধীরা ১০ বছর বয়সে ছাড়
পাবেন। শুরুতে ১ বছরের প্রবেশন। এই পদের বিজ্ঞপ্তি
নং: REC/2021/04.
প্রার্থী বাছাই হবে অনলাইন পরীক্ষার মাধ্যমে। সফল হলে
ভাইভা টেস্ট। সব পরীক্ষাই হবে কলকাতায়। ১০০ নম্বরের
১০ মিনিটের পরীক্ষায় থাকবে এইসব বিষয় সংশ্লিষ্ট বিষয়
৬০ নম্বর, জেনারেল অ্যাপ্টিটিউট ২০ নম্বর, ইংলিশ টেস্ট
১৫ নম্বর বাংলা টেস্ট ও নম্বর। নেগেটিভ মার্কিং নেই।
সফল হলে ২০ নম্বরের ইন্টারভিউ।
দরখাস্ত করবেন অনলাইনে, ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত।
এই ওয়েবসাইটে -- www.wbsetcl.in
অনলাইনে দরখাস্ত করার সময় বৈধ ই-মেল আই.ডি.
থাকতে হবে আর ফটো ও সিগনেচার স্ক্যান করে নিয়ে
যাবেন। ফটো ও সিগনেচার ৫০ কে.বি.র মধ্যে স্থান করে
নেবেন। তারপর পরীক্ষা ফী বাবদ জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ার
(ইলেক্ট্রিক্যাল) পদের বেলায় ৩০০ টাকার আর জুনিয়র
এক্সিকিউটিভ পদের বেলার ৪০০ টাকা অনলাইনে
দেবেন। তপশিল্পী ও প্রতিবন্ধীদের ফী লাগবে না।
অনলাইনে দরখাস্ত করার পর সিস্টেম জেনারেটেড
আপ্লিকেশন ফর্ম প্রিন্ট করে দেবেন। আরো বিস্তারিত
তথ্য পাবেন ওই ওয়েবসাইটে।
________________________________________________
সম্পূর্ণ বিজ্ঞপ্তি পড়তে নীচের লিঙ্কে ক্লিক করুন--
https://worldsahityaadda.blogspot.com/2021/12/bsk-new-recruitment-2022-wb-govt-jobs.html
____________________________________________
সম্পূর্ণ বিজ্ঞপ্তি পড়তে নীচের লিঙ্কে ক্লিক করুন--
https://worldsahityaadda.blogspot.com/2021/12/duare-sarkar-new-requirements.html
__________________________________________
সম্পূর্ণ বিজ্ঞপ্তি পড়তে নীচের লিঙ্কে ক্লিক করুন----
https://worldsahityaadda.blogspot.com/2021/12/indian-agricultural-research-institute.html
Thursday, December 23, 2021
বাংলা সহায়তা কেন্দ্রে নতুন নিয়োগ || bsk New Recruitment 2022 || WB govt jobs || www.bsk.wb.gov.in || government jobs news
*নতুন কর্মী নিয়োগের ঘোষণা করলো বাংলা সহায়তা কেন্দ্রে (BSK)
Recruitment in WB BSK for 2021-22*
##সম্প্রতি কর্মী নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি ঘোষণা করা হয়েছে
পশ্চিমবঙ্গের বাংলা সহায়তা কেন্দ্র-এর (BSK) তরফ
থেকে। সরাসরি ইন্টারভিউর মাধ্যমে প্রার্থীদের নিয়োগ
করা হবে। কোনো রকম লিখিত পরীক্ষা নেওয়া হবে না।
ইতিমধ্যেই আবেদন প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে, যা চলবে
*15-01-2022* তারিখ পর্যন্ত।এখানে সরাসরি আবেদন
করার জন্য আপনাকে হতে হবে পশ্চিমবঙ্গের স্থায়ী
বাসিন্দা । এটি রাজ্য সরকারের একটি চাকরি। এই
চাকরি সম্বন্ধে বিস্তারিত তথ্য (অফিশিয়াল
নোটিফিকেশন) নিচে বিস্তারিত ভাবে দেওয়া আছে এক
নজরে দেখে নিন।
পদ:-- বাংলা সহায়তা কেন্দ্র দপ্তরে বিভিন্ন পদে কর্মী
নিয়োগ করা হবে। যেসকল পদে কর্মী নিয়োগ করা হবে
সেগুলি যথাক্রমে হল-
*Help-Desk Personnel* ,
*Reconciliation Personnel* ,
*Senior Software Personnel* ,
*Chief Finance Officer (CFO)* ,
*Chief Technology Officer (CTO)* ,
*Chief Operating Officer (COO)*
আবেদন পদ্ধতি:-- আপনাকে সরাসরি অনলাইনের
মাধ্যমে আবেদন করতে হবে। অফিশিয়াল
নোটিফিকেশন টা ভালো করে পড়লে আবেদন সম্পর্কে
বিশদে জেনে নিতে পারবেন। এছাড়াও নিচের দেওয়া
রাজ্য সরকারের সরকারি ওয়েবসাইট বা রাজ্য
সরকারের অফিশিয়াল সাইট থেকে আবেদন করতে
পারবেন।
আবেদন করার ওয়েবসাইটটি হল-
নিয়োগ পদ্ধতি:-- এখানে কোন রকম লিখিত পরীক্ষা
দিতে হবে না প্রার্থীদের। সরাসরি ইন্টারভিউ এর মাধ্যমে
নিয়োগ করা হবে এই পদগুলোতে। এখানে সফলভাবে
আবেদন করার পর প্রার্থীদের নাম short-listed করা
হবে। এরপর আপনি BSK অফিশিয়াল পোর্টালে
আপনার নাম ও আপনার ইন্টারভিউ এর তারিখ, সময় ও
ইন্টারভিউ এর স্থান দেখে নির্দিষ্ট সময়ে ইন্টারভিউতে
যোগদান করতে পারবেন। এই ইন্টারভিউ থেকেই
প্রার্থীদের নাম বেছে নিয়ে ফাইনাল লিস্ট করা হবে এবং
অতঃপর সেই সকল সিলেক্টেড প্রার্থীদের চাকরি হয়ে
যাবে।
শিক্ষাগত যোগ্যতা:--- এই পদের জন্য প্রার্থীদের
গ্রাজুয়েশন পাশ হতে হবে। তাছাড়া আরো অন্যান্য উচ্চ
যোগ্যতায় এখানে বিভিন্ন চাকরি পদ আছে। কিন্তু
আপনাদের অবশ্যই কম্পিউটার সার্টিফিকেট থাকতে
হবে।
বয়স সীমা:--- প্রার্থীদের বয়স অবশ্যই 18 থেকে 55
বছরের বাইরে হওয়া যাবে না।
আবেদনের অন্তিম দিন:--- 15 ই জানুয়ারি 2022
তারিখের মধ্যে প্রার্থীদের আবেদন সম্পন্ন করতে হবে।
চাকরি সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য পেতে নিছে দেওয়া
অফিশিয়াল নোটিফিকেশন টি ডাউনলোড করে নিন।
OFFICIAL WEBSITE:---
__________________________________________________
সম্পূর্ণ বিজ্ঞপ্তি পড়তে নীচের লিঙ্কে ক্লিক করুন---
https://worldsahityaadda.blogspot.com/2021/12/duare-sarkar-new-requirements.html
__________________________________________________
সম্পূর্ণ বিজ্ঞপ্তি পড়তে নীচের লিঙ্কে ক্লিক করুন--
https://worldsahityaadda.blogspot.com/2021/12/indian-agricultural-research-institute.html
_______________________________________________
সম্পূর্ণ বিজ্ঞপ্তি পড়তে নীচের লিঙ্কে ক্লিক করুন ---
https://worldsahityaadda.blogspot.com/2021/12/asha-karmi-recruitment-2022.html
Wednesday, December 22, 2021
Wbp Constable result 2021 || Wbp Constable and lady constable result 2021 || West Bengal police constable result out
**Wbp Constable and lady constable prelims
exam was held on 26 September 2021.
Total post -- 7440 (constable)
1192 (lady constable)
constable and lady constable result to
be released.
Search 🔍 your result official website-
All details are submitted in this official site.
##যে সমস্ত ছেলে মেয়ে prilims exam পাস করেছ
তাদের নামের পাশে Qualified লেখা থাকবে। একমাত্র
তারাই মাঠের জন্য ডাক পাবে। রেজাল্ট এর ১০-১৫
দিন পর মাঠ শুরু হবে। তাই আর দেরি না করে মাঠের
জন্য প্রস্তুতি নিয়ে নাও।
More details please click on this official website-
RRb NTPC Gk || RRb group d Gk || Wbp si Gk || Wbp Constable gk || General Knowledge || Special Gk & current affairs Part - 1
সম্পূর্ণ পিডিএফ পেতে নীচের দিকে রান এবং লিঙ্কে ক্লিক করুন 👇
1. হরপ্পা অধিবাসীদের সঙ্গে কোন দেশের বাণিজ্য চলত ?
উঃ- সুমের ।
2. নিচের কে আকবরের রাজসভায় নবরত্ন ছিলেন না ?
উত্তর :- আমির খসরু ।
3. বেনারসের কেন্দ্রীয় হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় কে স্থাপন করেন ?
উঃ:- অ্যানি বেসান্ত ।
4. কোন্ নদীর ওপর ' হিরাকুদ ' বাঁধ অবস্থিত ?
উঃ:- মহানদী।
5. নিচের শস্যগুলির মধ্যে কোন্টি খারিফ শস্য ?
উঃ:- ধান।
6. স্বর্ণজয়ন্তী গ্রাম স্বরোজগার যোজনা কত সালে শুরু হয় ?
উঃ:- ১৯৯৯ সালে।
7. ' অপরারেশন বর্গা ’ ভারতের কোন্ রাজ্যে প্রথম চালু হয় ?
উঃ:- পশ্চিমবঙ্গ ।
8. কোথায় ভারতের প্রথম মহিলা ব্যাঙ্ক খোলে ?
উঃ:- মুম্বাই ।
9. ঘুমের সময় মানুষের রক্তচাপ কী অবস্থায় থাকে ?
উঃ:- ওঠা-নামা করে।
10. কোণ ভিটামিনের রাসায়নিক টোকোফেরল’–
উঃ- E ভিটামিন
11. ‘ মিনা ’ ভারতের কোন রাজ্যের উপজাতি ?
উঃ:- রাজস্থান ।
12. নোবেল পুরস্কার জয়ী কৈলাস সত্যার্থী কোন আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ?
উঃ:- বচপন বাঁচাও বা শিশু শ্রম।
13. নিচের কোনটি একটি ‘ পলিমার '
উঃ:- ভিনাহল ক্লোরাইড (PVC)।
14. লাক্ষাদ্বীপ কোথায় অবস্থিত ?
উঃ- আরব সাগর ।
15. কোন ভিটামিনের অভাবে রাতকানা রোগ হয় ?
উঃ- ভিটামিন- A ।
16. ভারতীয় সৈন্যবাহিনীর সদর দপ্তর কোথায় ?
উঃ- নিউ দিল্লি ।
17. স্বাধীনোত্তর দেশে পশ্চিমবঙ্গের প্রথম মুখ্যমন্ত্রী কে হন?
উঃ- ডঃ প্রফুল্ল চন্দ্র ঘোষ ।
18. সারা বিশ্বে ‘ কবিতা ’ দিবস কবে পালিত হয় ?
উঃ- 21 শে মার্চ ।
19. টক দই - য়ে কোন্ অ্যাসিড থাকে ?
উঃ- ল্যাকটিক অ্যাসিড ।
20. কাজরি কোন দেশের শিল্পকলা ?
উঃ- উত্তরপ্রদেশ।
21. 'আন্নাকালী পাকড়াশী' কোন মহান ব্যক্তির ছদ্মনাম ?
উঃ- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
22. ভারতের একটি অন্তঃবাহিনী নদীর নাম কী?
উঃ:- লুনি।
23. সার্বিক দাতা কোন শ্রেণীর রক্ত ?
উঃ:- O
24. বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থ 'ত্রিপিটক' কি ভাষায় রচিত ?
উঃ:- পালি ভাষায় ।
25. ' অমৃতবাজার ’ পত্রিকা কে প্রতিষ্ঠা করেন ?
উঃ- শিশির কুমার ঘোষ ।
26. কোথায় বুদ্ধদেব তাঁর প্রথম ধর্ম প্রচার করেন ?
উঃ:- সারনাথ ।
27. ঔরঙ্গজেব কোন্ শিখ গুরুকে হত্যা করেছিলেন ?
উঃ:- গুরু তেগ বাহাদুর ।
28. ১৮৫৭ সালে নানা সাহেব কোন স্থান থেকে মহাবিদ্রোহের নেতৃত্ব দেন ?
উঃ:- কানপুর ।
29. ভারতের কোন অভয়ারাণ্যে সবচেয়ে বেশি হাতি পাওয়া যায়—
উঃ:- কাজিরাঙ্গা।
30. মৌর্যযুগে বংশানুক্রমিক সৈনিকদের কী বলা হত ?
উঃ:-মৌল ।
31. সন্ধ্যাকর নন্দী কার রাজসভার সভাকবি ছিলেন ?
উঃ- পাল।
32. পশ্চিমবঙ্গের প্রথমে কাগজকল কোথায় তৈরী হয় ?
উঃ:- শ্রীরামপুর।
33. “ বানিহাল পাস ” কোথায় অবস্থিত ?
উঃ:- কাশ্মীর হিমালয় ।
34. বিক্রমশিলা বিশ্ববিদ্যালয় কে প্রতিষ্ঠা করেন ?
উঃ:- ধর্মপাল।
35. পোলিও ভ্যাকসিন আবিষ্কার করেন ?
উঃ:- জোনায় সাঁক ।
36. ২০১৪ শীতকালীন অলিম্পিক কোথায় অনুষ্ঠিত হয় ?
উঃ:- সোচি ।
37. ‘ বাটাভিয়ার ’ বর্তমান নাম কী ?
উঃ:-জার্কাতা ।
38 . পঙ্কজ আদবানি কোন্ খেলার সঙ্গে যুক্ত ?
উঃ:- বিলিয়ার্ড ।
39. বিজয় হাজারে ট্রফি কোন খেলার সঙ্গে যুক্ত ?
উঃ:- ক্রিকেট ।
40. ভারতের নতুন রাজ্য তেলেঙ্গানার ক'টি জেলা আছে ?
উঃ:-৩১টি (2021)
41. ভারতীয় সংবিধানে কবে থেকে শিক্ষার অধিকারকে মৌলিক অধিকার হিসাবে যুক্ত করা হয় ?
উঃ:- ২০০২ সালে।
42. এ বছর ন্যাশনাল গেমসে ৮০০ মিটারের মেয়েদের দৌড়ে কে ১৮ বছরের পুরানো রেকর্ড ভেঙ্গে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করেছে ?
উঃ:- টিন্টু লুক্কা।
43. সম্প্রতি ন্যাশনাল গেমস কোথায় অনুষ্ঠিত হয় ?
উঃ- (১)২০২০সালে গোয়াই
(২) ২০২১ সালে ছত্রিশগড়ে
(৩) ২০২২ সালে উত্তরাখণ্ড
(৪)২০২৩ সালে মেঘালয়
44. বার্লিন চলচ্চিত্র উৎসব ২ টি বিভাগে পুরস্কৃত হয়েছে কোন ভারতীয় ছবি ?
উঃ:- Dhanak
45. ২০১৬ - এর টি -20 ক্রিকেট বিশ্বকাপের আয়োজক দেশ কোন্টি ?
উঃ:- ভারতে ।
Current affairs (2021-2022)
____________________________________________
1) আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস কবে পালন করা হয়?
উঃ- ৩ রা ডিসেম্বর।
2) বিশ্ব মৃত্তিকা দিবস পালন করা হয় ৫ ই ডিসেম্বর ; 2021 সালে থিম কি ছিল
উঃ- ' Halt soil salinization , boost soil productivity '
3) বিশ্ব এডস দিবস পালন করা হয় ১ লা ডিসেম্বর ; 2021 সালে থিম কি ছিল?
উঃ-“ End inequalities. End AIDS "
4) ভারতীয় নৌসেনা দিবস কবে পালন করা হয়?
উঃ- ৪ ঠা ডিসেম্বর ।
5) মানবাধিকার দিবস পালন করা হয় ১০ ই ডিসেম্বর ; 2021সালে থিম কি ছিল?
উঃ- " Equality, Reducing inequalities, advancing human rights."
6) UNICEF Day পালন করা হয় ১১ ই ডিসেম্বর ; 2021সালে থিম কি ছিল?
উঃ- “ to help children to recover from interruption and learning losses experienced through the pandemic in the last two years ".
7) ১৯৮৪ সালে ভোপাল গ্যাস দুর্ঘটনায় মৃত ব্যক্তিদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে জাতীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ দিবস কবে পালন করা হয়?
উঃ- ২ রা ডিসেম্বর।
8) International Civil Aviation Day পালন করা হয় ৭ ই ডিসেম্বর ; 2021সালে থিম কি ছিল?
উঃ- “ Advancing Innovation for Global Aviation Development . "
9) আন্তর্জাতিক দুর্নীতি বিরোধী দিবস পালন করা হয় ৯ ই ডিসেম্বর ; 2021সালে থিম কি ছিল?
উঃ- “ Your right , your role : say no to corruption".
10) ভারত ও বাংলাদেশে মৈত্রী দিবস কবে পালন করা হয়?
উঃ- ৬ ই ডিসেম্বর।
Pdf download করতে নীচের লিঙ্কে ক্লিক করুন 👇
https://drive.google.com/file/d/1rVfEt7wPz-XCdvzyvC7MxXip-uk7ebPn/view?usp=drivesdk
__________________________________________________
চাকরি সংক্রান্ত আপডেট পেতে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
Telegram group-
https://t.me/Jobnewsgovtandpraivate
Whatsapp group-
Tuesday, December 21, 2021
গল্প || হারাণের নাতজামাই -- মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় || Story || Haraner nathjamay || Manik Bandopadhyay
মাঝরাতে পুলিশ গাঁয়ে হানা দিল।
সঙ্গে জোতদার চণ্ডী ঘোষের লোক কানাই ও শ্রীপতি।
কয়েকজন লেঠেল। কনকনে শীতের রাত বিরাম বিশ্রাম
হেঁটে ফেলে ঊর্ধ্বশ্বাসে তিনটি দিনরাত্রি একটানা ধান
কাটার পরিশ্রমে পুরুষেরা অচেতন হয়ে ঘুমোচ্ছিলা পালা
করে জেগে ঘরে ঘরে ঘাঁটি আগলে পাহারা দিচ্ছিল
মেয়েরা শাঁখ আর উলুধ্বনিতে গ্রামের কাছাকাছি
পুলিশের আকস্মিক আবির্ভাব জানাজানি হয়ে
গিয়েছিল। প্রায় সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ সমস্ত গাঁ ঘিরে ফেলবার
আয়োজন করলে হারাণের ঘর থেকে ভুবন মণ্ডল সরে
পড়তে পারত, উধাও হয়ে যেত। গাঁ শুদ্ধ লোক যাকে
আড়াল করে রাখতে চায়, হঠাৎ হানা দিয়েও হয়ত পুলিশ
সহজে তার পাত্তা পায় না। দেড়মাস চেষ্টা করে পারেনি,
ভুবন এ-গাঁ ও-গাঁ করে বেড়াচ্ছে যখন খুশি।
কিন্তু গ্রাম ঘেরবার, আঁটঘাট বেঁধে বসবার কোন চেষ্টাই
পুলিশ আজ করল না। সটান গিয়ে ঘিরে ফেলল ছোট
হাঁসতলা পাড়াটুকুর ক-খানা ঘর, যার মধ্যে একটি ঘর
হারাণের বোঝা গেল আঁটঘাট আগে থেকে বাঁধাই ছিল।
ভেতরের খবর পেয়ে এসেছে।
খবর পেয়ে এসেছে মানেই খবর দিয়েছে কেউ। আজ
বিকালে ভুবন পা দিয়েছে গ্রামে, হঠাৎ সন্ধ্যার পরে তাকে
অতিথি করে ঘরে নিয়ে গেছে হারাণের মেয়ে ময়নার মা,
তার আগে পর্যন্ত ঠিক ছিল না কোন পাড়ায় কার ঘরে সে
থাকবে। খবর তবে গেছে ভুবন হারাণের ঘরে যাবার
পরে! এমনও কি কেউ আছে তাদের এ গাঁয়ে? শীতের
তে-ভাগা চাঁদের আবছা আলোয় চোখ জ্বলে ওঠে
চাষীদের, জানা যাবে সাঁঝের পর কে গাঁ ছেড়ে বাইরে
গিয়েছিল। জানা যাবেই, এ বজ্জাতি গোপন থাকবে না।
দাঁতে দাঁত ঘষে গফুর আলী বলে, দেইখা লমু কোন
হালাপিঁপড়ার পাখা উঠছে। দেইখা লমু।
ভুবন মণ্ডলকে তারা নিয়ে যেতে দেবে না সালিগঞ্জ গাঁ
থেকে। গাঁয়ে গাঁয়ে ঘুরছে ভুবন এতদিন গ্রেপ্তারী
ওয়ারেন্টকে কলা দেখিয়ে, কোনও গাঁয়ে সে ধরা পড়েনি
সালিগঞ্জ থেকে তাকে পুলিশ নিয়ে যাবে? তাদের গাঁয়ের
কলঙ্ক তারা সইবে না। ধান দেবে না বলে কবুল করেছে
জান, সে জানটা দেবে এই আপনজনটার জন্যে
শীতে আর ঘুমে অবশপ্রায় দেহগুলি চাঙ্গা হয়ে ওঠো লাঠি
সড়কি দা কুড়ল বাগিয়ে চাষীরা। দল বাঁধতে থাকে।
সালিগঞ্জে মাঝরাতে আজ দেখা দেয় সাংঘাতিক
সম্ভাবনা!
গোটা আষ্টেক মশাল পুলিশ সঙ্গে এনেছিল, তিন-চারটে
টর্চা হাঁসখালি পাড়া ঘিরতে ঘিরতে দপদপ করে তারা
মশালগুলি জ্বেলে নেয়। দেখা যায় সব সশস্ত্র পুলিশ,
কানাই ও শ্রীপতির হাতেও দেশী বন্দুক।
পাড়াটা চিনলেও কানাই বা শ্রীপতি হারাণের বাড়ীটা ঠিক
চিনত না সামনে রাখালের ঘর পেয়ে ঝাঁপ ভেঙে তাকে
বাইরে আনিয়ে রেইডিং পার্টির নায়ক মন্মথকে তাই
জিজ্ঞেস করতে হয়, হারাণ দাসের কোন বাড়ী?
তার পাশের বাড়ীর হারাণ ছাড়াও যেন কয়েক গণ্ডা হারাণ
আছে গাঁয়ে। বোকার মত রাখাল পাল্টা প্রশ্ন করে,
আজ্ঞা, কোন হারাণ দাসের কথা কন?
গালে একটা চাপড় খেয়েই এমন হাউমাউ করে কেঁদে ওঠে
রাখাল, দম আটকে আটকে এমন সে ঘন ঘন উঁকি
তুলতে থাকে যে তাকে আর কিছু জিজ্ঞাসা করাই
অনর্থক হয়ে যায় তখনকার মতা বোেকা হাবা চাষাগুলো
শুধু বেপরোয়া নয়, একেবারে তুখোড় হয়ে উঠেছে
চালাকীবাজিতে।
এদিকে হারাণ বলে, হায় ভগবান ময়নার মা বলে, তুমি
উঠল। কেন কও দিকি? বলে কিন্তু জানে যে তার কথা
কানে যায়নি বুড়োরা চোখেও যেমন কম দেখে, কানেও
তেমনি কম শোনে হারাণা কি হয়েছে ভাল বুঝতেও
বোধহয় পারেনি, শুধু বাইরে একটা গণ্ডগোল টের পেয়ে
ভড়কে গিয়েছে। ছেলে আর মেয়েটাকে বুঝিয়ে দেওয়া
গেছে চটপট, এই বুড়োকে বোঝাতে গেলে এত জোরে
চেঁচাতে হবে যে, প্রত্যেকটি কথা কানে পৌঁছবে বাইরে
যারা বেড় দিয়েছে। দু’এক দণ্ড চেঁচালেই যে বুঝবে হারাণ
তাও নয়, তার ভোঁতা ঢিমে মাথায় অত সহজে কোন কথা
ঢোকে না। এই বুড়োর জন্য না ফাস হয়ে যায় সবা।
ভুবনকে বলে ময়নার মা, বুড়া বাপটার তরে ভাবনা!
ভুবন বলে, মোর কিন্তু হাসি পায় ময়নার মা।
ময়নার মা গম্ভীর মুখে বলে, হাসির কথা না। গুলিও
করতে পারে। দেখন মাত্তর। কইবো হাঙ্গামা করছিলেন!
তাড়াতাড়ি একটা কুপি জ্বালে ময়নার মা। হারাণকে তুলে
নিয়ে ঘরে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে হাতের আঙ্গুলের
ইসারায় তাকে মুখ বুজে চুপচাপ শুয়ে থাকতে বলে।
তারপর কুপির আলোয় মেয়ের দিকে তাকিয়ে নিদারুণ
আপসোসে ফুঁসে ওঠে, আঃ! ভাল শাড়ীখান পরতে
পারলি না?
বলছ নাকি?ময়না বলে।
ময়নার মা নিজেই টিনের তোরঙ্গের ডালাটা প্রায় মুচড়ে
ভেঙ্গে তাঁতের রঙিন শাড়ীখান বার করে। ময়নার পরনের
হেঁড়া কাপড়খানা তার গা থেকে একরকম ছিনিয়ে নিয়ে
তাড়াতাড়ি এলোমেলো ভাবে জড়িয়ে দেয় রঙিন শাড়ীটি।
বলে, ঘোমটা দিবি। লাজ দেখাবি। জামায়ের কাছে যেমন
দেখাস। ভুবনকে বলে, ভাল কথা শোনেন, আপনার নাম
হইল জগমোহন, বাপের নাম সাতকড়ি। বাড়ী হাতীনাড়া,
থানা গৌরপুর–
নতুন এক কোলাহল কানে আসে ময়নার মার। কান খাড়া
করে সে শোনো কুপির আলোতেই টের পাওয়া যায় প্রৌঢ়
বয়সের শুরুতেই তার মুখখানাতে দুঃখ দুর্দশার ছাপ ও
রেখা কি রুক্ষতা ও কাঠিন্য এনে দিয়েছে। ধুতি-পরা
বিধবার বেশ আর কদম ছাঁটা চুল চেহারায় এনে দিয়েছে।
পুরুষালি ভাব।
গাঁ ভাইঙ্গা রুইখা আইতেছে। তাই না ভাবতেছিলাম
ব্যাপার কি, গাঁর মাইনষের সাড়া নাই!
ভুবন বলে, তবেই সারছে। দশবিশটা খুন-জখম হইব
নির্ঘাৎ। আমি যাই, সামলাই গিয়া।
থামেন আপনে, বসেন, ময়নার মা বলে, দ্যাখেন কি হয়।
শ’দেড়েক চাষী চাষাড়ে অস্ত্র হাতে এসে দাঁড়িয়েছে দল
বেঁধে ওদের আওয়াজ পেয়ে মন্মথও জড়ো করেছে তার
ফৌজ হারানের ঘরের সামনে দু’চার জন শুধু পাহারায়
আছে বাড়ীর পাশে ও পিছনে, বেড়া ডিঙ্গিয়ে ওদিক দিয়ে
ভুবন না পালায় দশটি বন্দুকের জোর মন্মথের, তার
নিজের রিভলভার আছে। তবু চাষীদের মরিয়া ভাব দেখে
সে অস্বস্তি বোধ করছে স্পষ্টই বোঝা যায়। তার সুরটা
রীতিমত নরম শোনায়—স্রেফ হুকুমজারির বদলে সে যেন
একটু বুঝিয়ে দিতে চায় সকলকে উচিত আর অনুচিত
কাজের পার্থক্যটা, পরিমাণটাও।
বক্তৃতার ভঙ্গিতে সে জানায় যে, হাকিমের দস্তখতী
পরোয়ানা নিয়ে সে এসেছে হারাণের ঘর তল্লাস করতো
তল্লাস করে আসামী না পায়, ফিরে চলে যাবে। এতে বাধা
দেওয়া হাঙ্গামা করা উচিত নয়, তার ফল খারাপ হবে। বে-
আইনী কাজ হবে সেটা।
গফুর চেঁচিয়ে বলে, মোরা তল্লাস করতি দিমু না।
প্রায় দুশো গলা সায় দেয়, দিমু না!
এমনি যখন অবস্থা, সংঘর্ষ প্রায় শুরু হয়ে যাবে মন্মথ
হুকুম দিতে যাচ্ছে গুলি চালাবার, ময়নার মার খ্যানখেনে
তীক্ষ্ণ গলা শীতার্ত থমথমে রাত্রিকে ছিঁড়ে কেটে বেজে
উঠল, রও দিকি তোমরা, হাঙ্গামা কইরো না। মোর ঘরে
কোন আসামী নাই। চোর ডাকাইত নাকি যে ঘরে আসামী
রাখুম? বিকালে জামাই আইছে, শোয়াইছি মাইয়া
জামাইরে দারোগাবাবু তাল্লাস করতে চান তাল্লাস করেন।
মন্মথ বলে, ভুবন মণ্ডল আছে তোমার ঘরে?
ময়নার মা বলে, দ্যাখেন আইসা, তাল্লাস করেনা ভুবন
মণ্ডল কেডা? নাম তো শুনি নাই বাপের কালো মাইয়ার
বিয়া দিলাম বৈশাখে, দুই ভরি রূপা কম দিছি ক্যান,
জামাই ফির্যা তাকায় না। দুই ভরির দাম পাঠাইয়া দিছি
তবে আইজ জামাই পায়ের ধূলা দিছে। আপনারে কমু কি
দারোগাবাবু, মাইয়াটা কাইন্দা মরো মাইয়া যত কান্দে,
আমি তত কান্দি–
আচ্ছা, আচ্ছা। মন্মথ বলে, ভুবনকে না পাই, জামাই নিয়ে
তুমি রাত কাটিও।
গৌর সাউ হেঁকে বলে, অত চুপে চুপে আসে কেন জামাই
ময়নার মা?
গা জ্বলে যায় ময়নার মা-রা বলে, সদর দিয়া আইছে!
তোমার একটা মাইয়ার সাতটা জামাই চুপে চুপে আসে,
মোর জামাই সদর দিয়া আইছে।
গৌর আবার কি বলতে যাচ্ছিল, কে যেন আঘাত করে
তার মুখে একটা আর্ত শব্দ শুধু শোনা যায়, সাপে-ধরা
ব্যাঙের একটি মাত্র আওয়াজের মতো।
ময়নার রঙিন শাড়ী ও আলুথালু বেশ চোখে যেন ধাঁধা
লাগিয়ে দেয় মন্মথর, পিচুটির মত চোখে এঁটে যেতে চায়
ঘোমটা পরা ভীরু লাজুক কচি চাষী মেয়েটার আধপুষ্ট
দেহটি। এ যেন কবিতা বি.এ. পাশ মন্মথর কাছে, যেন
চোরাই স্কচ হুইস্কির পেগ, যেন মাটির পৃথিবীর জীর্ণক্লিষ্ট
অফিসিয়াল জীবনে একফেঁটা টসটসে দরদ। তার
রীতিমত আপসোস হয় যে জোয়ান মর্দ মাঝবয়সী
চাষাড়ে লোকটা এর স্বামী, ওর আদরেই মেয়েটার এই
আলুথালু বেশ!
তবু মন্মথ জেরা করে, সংশয় মেটাতে গাঁয়ের দু’জন
বুড়োকে এনে সনাক্ত করায়। তার পরেও যেন তার বিশ্বাস
হতে চায় না! ভুবন চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে গায়ে চাদর
জড়িয়ে যতটা সম্ভব নিরীহ গোবেচারী সেজে। কিন্তু খোঁচা
খোঁচা গোঁপদাড়ি ভরা মুখ, রুক্ষ এলোমেলো একমাথা
চুল, মোটেই তাকে দেখায় না নতুন জামায়ের মত মন্মথ
গর্জন করে হারাণকে প্রশ্ন করে, এ তোমার নাতনীর বর?
হারাণ বলে, হায় ভগবান!
ময়নার মা বলে, জিগান মিছা, কানে শোনে না, বদ্ধ
কালা।
আ! মন্মথ বলে।
ভুবন ভাবে এবার তার কিছু বলা বা করা উচিত।
এমন হাঙ্গামা জানলে আইতাম না কর্তা মিছা কইয়া
আনছে আমারো সড়াইলের হাটে আইছি, ঠাইরেণ
পোলারে দিয়া খপর দিলেন, মাইয়া নাকি মর মর, তখন
যায় এখন যায়।
তুমি অমনি ছুটে এলে?
আসুম না? রতিভরি সোনা-রূপা যা দিব কইছিল, তাও
ঠেকায় নাই বিয়াতে। মইরা গেলে গাও থেইকা খুইলা
নিলে আর পামু?
ওঃ! তাই ছুটে এসেছ? তুমি হিসেবী লোক বটে। মন্মথ বলে
ব্যঙ্গ করে।
আর কিছু করার নেই, বাড়ীগুলি তাল্লাস ও তছনছ করে
নিয়ম রক্ষা করা ছাড়া। জামাইটাকে বেঁধে নিয়ে যাওয়া
চলে সন্দেহের যুক্তিতে গ্রেপ্তার করে, কিন্তু হাঙ্গামা হবে।
দু’পা পিছু হটে এখনো চাষীর দল দাঁড়িয়ে আছে, ছত্রভঙ্গ
হয়ে চলে যায় নি। গাঁয়ে গাঁয়ে চাষাগুলোর কেমন যেন
উগ্র মরিয়া ভাব, ভয় ডর নেই। ঘরে ঘরে তল্লাস চলতে
থাকে একটা বিড়াল লুকানোর মতো আড়ালও যে ঘরে
নেই, সে ঘরেও কাঁথা বালিস হাঁড়িপাতিল জিনিসপত্র
ছত্রখান করে খোঁজা হয় মানুষকে।
মন্মথ থাকে হারাণের বাড়ীতেই। অল্প নেশায় রঙিন চোখা
এ সব কাজে বেরোতে হলে মন্মথ। অল্প নেশা করে, মাল
সঙ্গে থাকে কর্তব্য সমাপ্তির পর টানবার জন্য,—চোখ
তার রঙিন শাড়ীজড়ানো মেয়েটাকে ছাড়তে চায় না।
কুরিয়ে কুরিয়ে তাকায় ময়নার দিকে ময়নার কুড়ি বাইশ
বছরের জোয়ান ভাইটা উসখুস করে ক্রমাগত ভুবনের
চোখ জ্বলে ওঠে থেকে থেকে। ময়নার মা টের পায়,
একটু যদি বাড়াবাড়ি করে মন্মথ, আর রক্ষা থাকবে না!
মেয়েটাকে বলে ময়নার মা, শীতে কাঁপুনি ধরেছে, শো’ না
গিয়া বাছা? তুমিও শুইয়া পড় বাবা। আপনে অনুমতি
দ্যান দারোগাবাবু, জামাই শুইয়া পড়ুক। কত মানত
কইরা, মাথা কপাল কুইটা আনছি জামাইরে,—ময়নার
মা’র গলা ধরে যায়। আপনারে কি কমু দারোগাবাবু–
ময়না ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়ে। ভুবন যায় না।
আরও দু’বার ময়নার মা সস্নেহে সাদর অনুরোধ জানায়
তাকে, তবু ভুবনকে ইতস্তত করতে দেখে বিরক্ত হয়ে
জোর দিয়ে বলে, গুরুজনের কথা শোন, শোও গিয়া।
খাড়াইয়া কি করবা? ঝাঁপ বন্ধ কইরা শোও!
তখন তাই করে ভুবনা যতই তাকে জামাই মনে না হোক,
এরপর না মেনে আর কি চলে যে সে জামাই?মন্মথ আস্তে
আস্তে বাইরে পা বাড়ায়। পকেট থেকে চ্যাপ্টা শিশি বার
করে ঢেলে দেয় গলায়।
পরদিন মুখে মুখে এ গল্প ছড়িয়ে যায় দিগদিগন্তে, দুপুরের
আগে হাতীপাড়ার জগমোহন আর জোতদার চণ্ডী ঘোষ
আর বড় থানার বড় দারোগার কাছে পর্যন্ত গিয়ে
পৌঁছায়। গাঁয়ে গাঁয়ে লোকে বলাবলি করে ব্যাপারটাা
আর হাসিতে ফেটে পড়ে, বাহবা দেয় ময়নার মাকে! এমন
তামাশা কেউ কখনো করেনি পুলিশের সঙ্গে, এমন জব্দ
করেনি পুলিশকে। ক’দিন আগে দুপুরবেলা পুরুষশূন্য
গাঁয়ে পুলিশ এলে ঝাঁটা বঁটি হাতে মেয়ের দল নিয়ে
ময়নার মা তাদের তাড়া করে পার করে দিয়েছিল গাঁয়ের
সীমানা! সে যে এমন রসিকতাও জানে, কে তা ভাবতে
পেরেছিল?
গাঁয়ের মেয়েরা আসে দলে দলে, অনিশ্চিত আশঙ্কা ও
সম্ভাবনায় ভরা এমন যে ভয়ঙ্কর সময় চলেছে এখন, তার
মধ্যেও তারা আজ ভাবনা-চিন্তা ভুলে হাসিখুশিতে উচ্ছল।
মোক্ষদার মা বলে একগাল হেসে গালে হাত দিয়ে, মাগো
মা, ময়নার মা, তোর মদ্যি এত?
ক্ষেন্তি বলে ময়নাকে, কিলো ময়না, জামাই কি কইলো?
দিছে কি?
লাজে ময়না হাসে।
বেলা পড়ে এলে, কাল যে সময় ভুবন মণ্ডল গাঁয়ে পা
দিয়েছিল প্রায় সেই সময় আবির্ভাব ঘটে জগমোহনের।
বয়স তার ছাব্বিশ-সাতাশ, বেঁটে খাটো জোয়ান চেহারা,
দাড়ি কামানো, চুল আঁচড়ানো। গায়ে ঘরকাচা শার্ট, কাঁধে
মোটা সুতির সাদা চাদর গাঁয়ে ঢুকে গটগট করে সে চলতে
থাকে হারাণের বাড়ীর দিকে, এপাশ ওপাশ না তাকিয়ে,
গম্ভীর মুখে।
রসিক ডাকে দাওয়া থেকে, জগমোহন নাকি? কখন
আইলা?
নন্দ বলে, আরে শোন শোন, তামুক খাইয়া যাও।
জগমোহন ফিরেও তাকায় না।
রসিক ভড়কে গিয়ে নন্দকে শুধোয়, এই কাণ্ড বুঝলা নি?
কেমনে কমু?
অবাক হয়ে মুখ চাওয়াচাওয়ি করে দু’জনন।
পথে মথুরের ঘর। তার সঙ্গে একটু ঘনিষ্ঠতা আছে
জগমোহনের নাম ধরে হাঁক দিতে ভেতর থেকে সাড়া
আসে না, বাইরের লোক জবাব দেয়। ঘরের কাছেই
পথের ওপাশে একটা তালের গুড়িতে দু’জন মানুষ বসে
ছিল নির্লিপ্তভাবে, একজনের হাতে খোঁটা সুদ্ধ গরু-বাঁধা
দড়ি
তাদের একজন বলে, বাড়ীতে নাই। তুমি কেডা,
হারামজাদারে খোঁজ ক্যান?
জগমোহন পরিচয় দিতেই দুজন তারা অন্তরঙ্গ হয়ে যায়
সঙ্গে সঙ্গে।
অ! তুমিও আইছ ব্যাটারে দুই ঘা দিতে?
তা ভয় নেই জগমোহনের, তারা আশ্বাস দেয়, হাতের সুখ
তার ফসকাবে না। কাল সন্ধ্যায় গেছে গাঁ থেকে, এখনো
ফেরেনি মথুর, কখন ফিরে আসে ঠিকও নাই, তার
অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকতে হবে না জগমোহনকে। মথুর
ফিরলে তাকে যখন বেঁধে নিয়ে যাওয়া হবে বিচারের
জন্য, সে খবর পাবো সবাই মিলে ছিঁড়ে কুটি কুটি করে
ফেলার আগে তাকেই নয় সুযোগ দেওয়া হবে মথুরের
নাক কানটা কেটে নেবার, সে ময়নার মা’র জামাই, তার
দাবি সবার আগে।
শাউড়ী পাইছিলা দাদা একখানা!
নিজের হইলে বুঝতা জগমোহন জবাব দেয় ঝাঁঝের সঙ্গে।
চলতে আরম্ভ করে। শুনে দুজনে তারা মুখ চাওয়া-চাওয়ি
করে অবাক হয়ে!
আচমকা জামাই এল, মুখে তার ঘন মেঘ দেখেই ময়নার
মা বিপদ গণে। ব্যস্ত-সমস্ত না হয়ে হাসি মুখে ধীরে
শান্তভাবে অভ্যর্থনা জানায়, তার যেন আশা ছিল, জানা
ছিল, এ সময় এমনিভাবে জামাই আসবে, এটা অঘটন
নয়। বলে, আস বাবা আস। ও ময়না, পিঁড়া দো ভাল নি
আছে বেবাকে? বিয়াই বিয়ান পোলামাইয়া?
আছে!
আরেকটুকু ভড়কে যায় ময়নার মা। কত গোঁসা না জমা
আছে জামাই-এর কাটা-ছাঁটা এই কথার জবাবে। ময়নার
দিকে তার না-তাকাবার ভঙ্গিটাও ভাল ঠেকে না পড়ন্ত
রোদে লাউমাচার সাদা ফুলের শোভা ছাড়া আর কিছুই
যেন চোখ চেয়ে দেখবে না শ্বশুরবাড়ির, পণ করেছে জগমোহন! লক্ষণ খারাপ।
ঘর থেকে কাঁপা কাঁপা গলায় হারাণ হাঁকে, আসে নাই?
হারামজাদা আসে নাই?হায় ভগবান! নাতিরে খোঁজে,
ময়নার মা জগমোহনকে জানায়, বিয়ান থেইকা দ্যাখে
না, উতলা হইছে।
ময়নার মা প্রত্যাশা করে যে, নাতিকে হারাণ সকাল থেকে কেন দ্যাকে না, কি হয়েছে হারাণের নাতির, ময়নার ভায়ের, জানতে চাইবে জগমোহন, কিন্তু কোন খবর জানতেই এতটুকু কৌতূহল দেখা যায় না তারা
খাড়াইয়া রইলা ক্যান? বসো বাবা, বসো।
জগমোহন বসে ময়নার পাতা পিঁড়ি সে ছোঁয় না, দাওয়ার খুঁটিতে ঠেস দিয়ে উবু হয়ে বসে।
মুখ হাত ধুইয়া নিলে পারতা।
না, যামু গিয়া অখনি।
অখনি যাইবা?
হ। একটা কথা শুইনা আইলাম। মিছা না খাঁটি জিগাইয়া
যামু গিয়া। মাইয়া নাকি কার লগে শুইছিল কাইল রাতে?
শুইছিল? ময়নার মার চমক লাগে, মোর লগে শোয়
মাইয়া, মোর লগে শুইছিল, আর কার লগে শুইব?
ব্রহ্মাণ্ডের মাইনষে জানছে কার লাগে শুইছিল। চোখে
দেইখা গেছে দুয়ারে ঝাঁপ দিয়া কার লগে শুইছিল।
তারপর বেধে যায় শাশুড়ী-জামাইয়ে। প্রথমে ময়নার মা
ঠাণ্ডা মাথায় নরম কথায় ব্যাপারটা বুঝিয়ে দিতে চেষ্টা
করে, কিন্তু জগমোহনের ওই এক গোঁ! ময়নার মাও শেষে
গরম হয়ে ওঠো বলে, তুমি নিজে মন্দ, অন্যেরে তাই মন্দ
ভাবো। উঠানে মাইনষের গাদা, আমি খাড়া সামনে,
একদণ্ড ঝাঁপটা দিছে কি না দিছে, তুমি দোষ ধরলা!
অন্যে তো কয় না?
অন্যের কি? অন্যের বৌ হইলে কইতো।
ড় ছোট মন তোমারা আইজ মণ্ডলের নামে এমন কথা
কইলা, কাইল কইবা জুয়ান ভায়ের লগে ক্যান কথা কয়।
কওন উচিত। ও মাইয়া সব পারে।
তখন আর শুধু গরম কথা নয়, ময়নার মা গলা ছেড়ে
উদ্ধার করতে আরম্ভ করে জগমোহনের চোদ্দপুরুষ
হারাণ কাঁপা গলায় চেঁচায়, আইছে নাকি? আইছে
হারামজাদা? হায় ভগবান আইছে? ময়না কাঁদে ফুঁপিয়ে
ফুঁপিয়ে ছুটে আসে পাড়াবেড়ানি নিন্দাছড়ানি নিতাই
পালের বৌ আর প্রতিবেশী কয়েকজন স্ত্রীলোক।
কি হইছে গো ময়নার মা? নিতাই পালের বৌ শুধায়, মাইয়া কাঁদে ক্যান?
তাদের দেখে সম্বিৎ ফিরে পায় ময়নার মা, ফোঁস করে ওঠে,কাঁদে ক্যান? ভাইটারে ধইরা নিছে, কাঁদব না?
জামাই বুঝি আইছে খবর পাইয়া?
শুনবা বাছা, শুনবা। বইতে দাও, জিরাইতে দাও।
ময়নার মার বিরক্তি দেখে ধীরে ধীরে অনিচ্ছুক পদে
মেয়েরা ফিরে যায়। তাকে ঘাঁটাবার সাহস কারো নেই।
ময়নার মা মেয়েকে ধমক দেয়, কাঁদিস না। বাপেরে নিয়া
ঘরে গেছিলি, বেশ করিছিলি, কাঁদনের কি?
বাপ নাকি? জগমোহন বলে ব্যঙ্গ করে। বাপ না? মণ্ডল
দশটা গাঁয়ের বাপা খালি জম্মো দিলেই বাপ হয় না, অন্ন
দিলেও হয়। মণ্ডল আমাগো অন্ন দিছে। আমাগো
বুঝাইছে, সাহস দিছে, একসাথ করছে, ধান কাটাইছে।
না তো চণ্ডী ঘোষ নিত বেবাক ধানা তোমারে কই জগু,
হাতে ধইরা কই, বুইঝা দ্যাখো, মিছা গোসা কইরো না।
বুইঝা কাম নাই। অখন যাই।
রাইতটা থাইকা যাও। জামাই আইলা, গেল। গিয়া,
মাইনষে কি কইব?
জামাইয়ের অভাব কি। মাইয়া আছে, কত জামাই জুটবো।
বেলা শেষ হতে না হতে ঘনিয়ে এসেছে শীতের সন্ধ্যা অল্প
অল্প কুয়াশা নেমেছে। খুঁটের ধোঁয়া ও গন্ধে নিশ্চল বাতাস
ভারি। যাই বলেই যে গা তোলে জগমোহন তা নয়। ময়নার
মারও তা জানা আছে যে শুধু শাশুড়ীর সঙ্গে ঝগড়া করে
যাই বলেই জামাই গট গট করে বেরিয়ে যাবে না। ময়নার
সাথে বোঝাপড়া, ময়নাকে কাঁদানো, এখনো বাকি
আছে। যদি যায় জামাই, মেয়েটাকে নাকের জলে
চোখের জলে এক করিয়ে তারপর যাবে। আর কথা বলে
না ময়নার মা, আস্তে আস্তে উঠে বেরিয়ে যায় বাড়ী
থেকে। ঘরে কিছু নেই, মোয়ামুড়ি কিছু যোগাড় করতে
হবে। খাক বা না খাক সামনে ধরে দিতেই হবে
জামাইয়ের।
চোখ মুছে নাক ঝেড়ে ময়না বলে ভয়ে ভয়ে, ঘরে আস।
খাসা আছি। শুইছিলা তো?
না, মা কালীর কিরা, শুই নাই। মার কওনে খালি ঝাঁপটি দিছিলাম, বাঁশটাও লাগাই নাই।
ঝাঁপ দিছিলা, শোও নাই। বেউলা সতী!
ময়না তখন কাঁদে।
তোমার লগে আইজ থেইকা শেষ।
ময়না আরও কাঁদে।
ঘর থেকে হারাণ কাঁপা গলায় হাঁকে, আসে নাই? ছোঁড়া
আসে নাই? হায় ভগবান! থেমে থেমে এক একটা কথা
বলে যায় জগমোহন, না থেমে অবিরাম কেঁদে চলে
ময়না, যতক্ষণ না কান্নাটা একঘেয়ে লাগে জগমোহনের।
তখন কিছুক্ষণ সে চুপ করে থাকে। মুড়িমোয়া যোগাড়
করে পাড়া ঘুরে ময়নার মা যখন ফিরে আসে, ময়না তখন
চাপা সুরে ডুকরে ডুকরে কাঁদছে। বেড়ার বাইরে সুপারি
গাছটা ধরে দাঁড়িয়ে থাকে ময়নার মা সারাদিন পরে এখন
তার দু’চোখ জলে ভরে যায়। জোতদারের সাথে, দারোগা
পুলিশের সাথে লড়াই করা চলে, অবুঝ পাষণ্ড
জামাইয়ের সাথে লড়াই নেই!
আপন মনে আবার হাঁকে হারাণ, আসে নাই? মোর মরণটা আসে নাই? হায় ভগবান!
জগমোহন চুপ করে ছিল, এতক্ষণ পরে হঠাৎ সে
জিজ্ঞাসা করে শালার খবর। —উয়ারে ধরছে ক্যান?
ময়নার কান্না থিতিয়ে এসেছিল, সে বলে, মণ্ডলখুড়ার
লগে গোঁদল পাড়া গেছিল, ফিরতি পথে একা পাইয়া ধরছে।
ক্যান ধরছে?
কাইল জব্দ হইছে, সেই রাগে বুঝি।
বসে বসে কি ভাবে জগমোহন, আর কাঁদায় না ময়নাকো
ময়নার মা ভেতরে আসে, কাঁসিতে মুড়ি আর মোয়া খেতে
দেয় জামাইকে, বলে, মাথা খাও, মুখে দাও।
আবার বলে, রাইত কইরা ক্যান যাইবা বাবা? থাইকা যাও।
থাকনের বোনাই। মা দিব্যি দিছে।
তবে খাইয়া যাও? আখা ধরাই? পোলাটারে ধইরে নিছে, পরাণ পোড়ায়। তোমারে রাইখা জুড়ামু ভাবছিলাম।
না, রাইত বাড়ে।
আবার কবে আইবা?
দেখি।
উঠি-উঠি করেও দেরি হয়। তারপর আজ সন্ধ্যারাতেই
পুলিশ হানার সেইরকম সোর ওঠে কাল মাঝরাত্রির মতো।
সদলবলে মন্মথ আবার আচমকা হানা দিয়েছে। আজ তার সঙ্গের শক্তি কালের চেয়ে অনেক বেশী। তার চোখ সাদা।
সোজাসুজি প্রথমেই হারাণের বাড়ী।
কি গো মণ্ডলের শাশুড়ী, মন্মথ বলে ময়নার মাকে, জামাই কোথা?
ময়নার মা চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে।
এটা আবার কে?
জামাই ময়নার মা বলে।
বাঃ, তোর তো মাগী ভাগ্যি ভাল, রোজ নতুন নতুন জামাই জোটে। আর তুই ছুঁড়ি এই বয়সে–
হাতটা বাড়িয়েছিল মন্মথ রসিকতার সঙ্গে ময়নার থুতনি ধরে আদর করে একটু নেড়ে দিতো। তাকে পর্যন্ত চমকে দিয়ে জগমোহন লাফিয়ে এসে ময়নাকে আড়াল করে গর্জে ওঠে, মুখ সামলাইয়া কথা কইবেন!
বাড়ীর সকলকে, বুড়ো হারাণকে পর্যন্ত, গ্রেফতার করে
আসামী নিয়ে রওনা দেবার সময় মন্মথ দেখতে পায়
কালকের মতো না হলেও লোক মন্দ জমেনি। দলে দলে
লোক ছুটে আসছে চারিদিক থেকে, জমায়েত মিনিটে
মিনিটে বড় হচ্ছে। মথুরার ঘর পার হয়ে পানা পুকুরটা
পর্যন্ত গিয়ে আর এগোনো যায় না। কালের চেয়ে সাত-
আটগুণ বেশী লোক পথ আটকায়। রাত বেশী হয়নি, শুধু
এগাঁয়ের নয়, আশেপাশের গাঁয়ের লোক ছুটে এসেছে।
এটা ভাবতে পারেনি মন্মথ। মণ্ডলের জন্য হলে মানে
বোঝা যেত, হারাণের বাড়ীর লোকের জন্য চারদিকের গাঁ
ভেঙে মানুষ এসেছে! মানুষের সমুদ্র, ঝড়ের উত্তাল
সমুদ্রের সঙ্গে লড়া যায় না। ময়না তাড়াতাড়ি আঁচল
দিয়েই রক্ত মুছিয়ে দিতে আরম্ভ করে জগমোহনের।
নব্বই বছরের বুড়ো হারাণ সেইখানে মাটিতে মেয়ের
কোলে এলিয়ে নাতির জন্য উতলা হয়ে কাঁপা গলায়
বলে, ছোঁড়া গেল কই? কই গেল? হায় ভগবান!
_________________________________________________
গল্প টি পড়তে নীচের লিঙ্কে ক্লিক করুন---
https://worldsahityaadda.blogspot.com/2021/12/haimanti-rabindranath-tagore-story.html