রম্যরচনা || গল্প লিখতে হবে || সত্যেন্দ্রনাথ পাইন
গল্প লিখতে হবে
নাটক, গল্প আমার দ্বারা সম্ভব নয় জেনেই কি এই আব্দার! যেমন শিশু জেনে বা না জেনেই বোধহয় তার বুড়ো দাদুর কাছে আব্দার করে ঘাড়ে ক'রে বেড়াতে নিয়ে যাবার। বায়না ধরে। দাদু তখন নিজের শরীরের বিভিন্ন ধরনের অসুখে জেরবার! তাতে কী! শিশুর আব্দারের মূল্য কি নেই! তবু দাদু ছুটি পায় না। আমারও বোধহয় সেই অবস্থা। কিন্তু অগত্যা--
কলম ধরেছি।হয়তো কিছু একটা দাঁড়াবে শেষমেশ। সেটা গল্প কিনা বলতে পারবো না। প্রত্যাশা বেশি হলে সেখানে ত্রুটি থাকবেই। সেই ত্রুটিমুক্ত কিছু লেখা বাংলা সাহিত্যের পক্ষে বর্তমানে প্রচুর গল্পকারের কাছে নিন্দনীয় হতে পারে।কিংবা মঙ্গল বা অমঙ্গলও হতে পারে। যদিও সেটার বিচার করার ভার অবশ্যই আপনার।
একদিন এক অল্পবয়সী ছেলে বাবার কথায় সাড়া দিয়ে সব ফেলে নামলো জীবন নদীর তীরে নৌকো না পেয়ে। লাভ হয়েছে।
অনেকেই পেরিয়ে গেছে কিন্তু সে পেরোতে পারেনি।
পৃথিবীর মাঝে সে একা বিবর্ণপ্রায় দিন কাটায় আজও। তার কথা ভুলেও কেউ মনে রাখে না আর। তার নাম কী দেব বলোতো! সেতু নাকি তক্তা হীন কাঠের পোল।! বিধাতা পুরুষ নাকি নারী সে দ্বিধা দ্বন্দ্ব যেমন থাকবে বা আছেও। তবুও আমি যে কথা চলে আসছে বহু বছর ধরে সেটাই লিখছি-- "বিধাতা পুরুষ"!
হ্যাঁ বিধাতা পুরুষ আমাকে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে সেতুর মতো শুইয়ে সকলের পারাপারের ব্যবস্থা করেছে। আমি কিন্তু সেই আগের মতোই রয়ে গেছি আজও এখনও। ওপারে যাবার উপযুক্ত হতে পারিনি।
সেতুর ওপর দিয়ে যারা পেরিয়ে ওপারে গেল তারা আর খোঁজ রাখেনি আমার। আমি তাহলে সেতু নাকি অন্য কিছু!? এ ক্ষুদ্র পৃথিবীর অতি পুরোনো এক মাধ্যম যেমন!
বাঁশঝাড়ে যেমন অনেকরকম শব্দই হয় একটুখানি হাওয়া দিলেই। সেতুও পুরোনো বলেই হয়তো নানান উদভৎ শব্দ করে।। কখনো চিৎকার করে আবার মড়মড় শব্দে ভেঙে যাচ্ছি বলতে চেয়ে সাবধান করে সকলকে। যাই হোক্ যারা পারাপারের যাত্রী তারা কিন্তু কেউ কি খেয়াল করে এটা!
বোধহয় না।
এই গল্প তো একটা শিশুও লিখিতে পারে। তাই না! । আর আমি কি আর নতুন লিখলাম! বিড়ম্বনা লাঞ্ছনা বিদ্রুপ নাজেহাল ক'রে কয়েকটা বানী উচ্চারণ করেছি মাত্র। আমি তো এখন পড়ে আছি সেই আগে যেমন ছিলাম এখনও সেই পারাপারের মাধ্যম সেতুর মতোই। আমার ব্যথা আমার পাপ ঐ বাল্মীকি বা দস্যু রত্নাকর এর মতোই। কেউই কষ্টের ভাগ নিতে চায় না।
নদী বড় বা ছোট যাই হোক সেতুর কাজ রোদ্দুর দেখিয়ে বা পেয়ে তাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। পথ দেখিয়ে দেয়া। আমি সেই কাজটা হয়তো ভালোই করেছি মনে হয়।
তোমরা ও শেষে শিশুর মতোই শুনে বলবে হয়তো ধুর এটা কী গল্প হলো! যত্ত সব আবোল তাবোল! তবুও এই গল্প টার মধ্যে সহজ সরল কিছু বক্রোক্তি আছে। নেই উপাদান। তাই এটা গল্প নয়। এটা শেষের শুরু বলা যেতে পারে। মাথা মুন্ডু কিচ্ছু নেই। সূখ দুঃখ হাসি কান্নার লেশমাত্র নেই। অতএব আমি ডাহা ফেল।
তার চেয়ে যাই দেখি ওদিকে রোদ্দুর উঠেছে কিনা।
বর্ষা শেষ। বসন্ত ধীরে ধীরে প্রবেশ করতে চাইছে, কিন্তু কেউ যেন বাধা দিচ্ছে নিম্নচাপের ভঙ্গিতে।
হয়তোবা পুষ্টি উপাদানের সাথে ভেজাল নেই এতে-- তাই এটা গল্প হয়নি। হয়েছে কিছু অনাবশ্যক কঠিন বাক্য বিন্যাস মাত্র।
এটা না পড়াই বোধহয় ভালো।।
আমি এখন একটু নিস্তার চাইছি। আবার পরে বলবো যদি কিছু পারি।।
Comments