Monday, November 22, 2021

লেখিকা মৌসুমী চন্দ্র -এর একটি গদ্য

 সেই দিন



"আপনি একটু দেখা করবেন আমার সাথে, বিশেষ প্র‍য়োজন আছে", স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা দীপক বাবুকে সেদিন স্কুল শেষে ডেকে পাঠালেন।

দীপক বাবু ভীষণ কৌতুহল নিয়ে প্রবেশ করলেন

প্রধানা শিক্ষিকার ঘরে। 

প্রধানা শিক্ষিকা, দীপক বাবুকে বসতে বললেন।

দীপক বাবু বললেন, " আমার মেয়ে কেমন পড়াশুনা করছে? আমি তো বেশীক্ষণ ওর কাছে থাকতে পারি না,ও নিজেই বেশীরভাগ পড়াশুনা করে। প্রধানা শিক্ষিকা বললেন, " এ বারের বাংলা পরীক্ষায় ওদের রচনা লিখতে দেওয়া হয়েছিল, তোমার কাছে মা দুর্গার রূপ। আপনার মেয়ে যা লিখেছে একটু পড়ে শোনাই, "। 

দীপক বাবু ভীষণ ঘামতে শুরু করলেন বললেন জোর হাতে, " আজ্ঞে ম্যাডাম আমার মেয়ের মা নেই বড় অভিমানী মেয়ে আমার, যদি কিছু অন্যায় করে.... "। কথার মাঝেই হেড ম্যাডাম থামিয়ে দিয়ে বললেন আগে শুনুন


আপনার মেয়ে এই খানে লিখেছে, আমি মন্ডপে যতবার দেবী দর্শন করি, মনে মনে দেবীর রূপ কল্পনা করি, আমার চোখের সামনে ভেসে ওঠে আমার বাবার মুখ। আমার বাবা দেবী দশভূজার মত 

সংসারের সব কাজ সামলায়, আমায় মাতৃস্নেহে বড় করছেন। আমার বাবার স্নেহ পেয়ে আমি ভবিষ্যৎ জীবনে সত্যিকারের মানুষ হতে চাই। আমার বাবার মত সমাজ সেবায় নিজেকে সঁপে দিতে চাই।আমার বাবাই আমার দেবী দুর্গা রূপী দশভূজা। কোনদিন মায়ের অভাব বুঝতে দেন নি। 


"আপনার মেয়ের এই চিঠিখানি পড়ে আমার এতটাই ভাল লেগেছে, আমি আপনাকে ডেকে পাঠিয়েছি। আপনার মেয়ে দেবরত্না, একটা হীরের টুকরো মেয়ে। ওর নতুন চিন্তা ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে আমরা একটা নাটক করতে চলেছি, বিশ্ব পুরুষ দিবসে। যদি আপনি আমাদের সাথে একটু থাকেন, খুব ভালো লাগবে,দেবরত্না বলছিল আপনি নাটক করেন, লেখেন,আপনি থাকলে আমাদের খুব ভাল লাগবে"। দীপক বাবু বললেন, " এ তো পরম সৌভাগ্যের, অবশ্যই সাহায্য করব"। প্রধানা শিক্ষিকা বললেন," আপনি আমাদের স্কুলের সাথে যুক্ত থাকলে আমাদের খুব ভাল লাগবে "।

নমস্কার, করে কি সুখকর একটি হাসি দিয়ে দীপক বাবু প্রধান শিক্ষিকার ঘর থেকে বেড়িয়ে এলেন। 

 বাইরে দেবরত্না খুব কৌতুহল নিয়ে বাবাকে জিজ্ঞাসা করল, " বাবা, কি বললেন ম্যাডাম?"

দীপক বাবু একগাল প্রশান্তির হাসি হেসে,বললেন," তোর লেখা চিঠিটি পড়লেন, আর বললেন আমার সোনা মা..... টা না খুব.... খুব........."।

বাবা মেয়ের গালে একটা চুমু দিয়ে বললেন, আমি কি মা দুরগা হতে পারি, উনি তো দেবী রে মা... "

দেবরত্না বলল তুমি যেভাবে দশহাতে দশদিক সামলাও, তুমিই তো আমার কাছে দশভুজা"।

দীপক বাবু বললেন, ' পাগলী মেয়ে আমার, চল

বলে মেয়ের হাতটি শক্ত করে ধরে হাঁটা লাগালেন বাড়ির পথে।


গোধূলির অস্তমিত আলো তখন এসে পড়েছে ওদের ওপর। যেন নতুন এক নতুন উদ্যমে জীবনের রাস্তা দিয়ে হেঁটে চলেছে বাবা আর মেয়ে। এবন্ধন যেন বড় মধুর বড় মিষ্টি..... 


তুমি যেন সামলে রাখ, ঝড় উঠলে পরে

তোমার দুটি হাতের থেকে আদর ঝরে পড়ে।

ওই দুটি হাত বাড়িয়ে আমায় জড়িয়ে ধরে রাখ

দৌড়ে ছুট্টে যাই তখনি, যখন আয় খুকু আয় ডাক।



প্রাবন্ধিক সত্যেন্দ্রনাথ পাইন-এর একটি প্রবন্ধ

 আধুনিক বাংলা সাহিত্য কি accidental?




" কি ভাষা, কি সাহিত্য কোনোদিক দিয়ে আমরা সেই মন্দিরে একটি নূতন চুড়া তুলিতে পারি নাই, বরং তার ভিৎ জখম করিতেছি "! __ মোহিতলাল মজুমদারের এই আক্ষেপ কৌতূহল নয়, কাব্য সাহিত্যের রস যথেষ্ট না থাকার বেদনা।।

        আমার এই আলোচনায় essential বা সব থেকে প্রয়োজনীয় যেটা সেটা হোলো কাব্য সৃষ্টি বা সাহিত্য সৃষ্টির রহস্য সম্বন্ধে আমাদের মনে যে রসবোধ জাগে সেটার যথার্থ প্রয়োগ। এই রসসৃষ্টি স্বাধীন অন্তরের পরাজয় নয়, প্র লাপ ও দুঃস্বপ্ন নয়--- তড়িৎ গতি র প্রবৃত্তি ও আঁচলে বাঁধা ভাবনার আত্মপ্রসার। সেটা এখন বস্তু পীড়িত উদভ্রান্ত কলোচ্ছ্বাসের রূপ নিয়েছে। Emotion কে সুদৃঢ়ভাবে শব্দবদ্ধ করে সাহিত্যে খেয়াল খুশির জন্ম দিয়েছে। ফলে ভাষা ও বক্তব্য দুটোই অসংলগ্ন ও পরস্পর বিরোধী।

       সাহিত্য আঙিনায় এখন অনেকেই আল্পনা দিতে বসে সাহিত্যে র দর্পনে আত্মচরিত্ লেখায় ব্যতিব্যস্ত হওয়ায় নৈর্ব্যক্তিকতা ও জাতীয়তাবোধ জন্ম নিতে পারছে না। তাই বঙ্গ লক্ষ্মী ঘণ ঘণ মেঘের গর্জনে মমতাময়ী না হয়ে একধারে ক্রন্দনেই আকুল যেন।

    আমরা মাইকেল, বঙ্কিম,, শরৎ, সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত, দ্বিজেন্দ্রনাথ, অতুলপ্রসাদ থেকে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ কে পেয়েছি। তাঁরা নিজ নিজ ভঙ্গিতে বাংলা সাহিত্যকে সযত্নে অভিনবত্ব দিয়েছেন। সে যুগ এখন যেন দিবাস্বপ্নের মতো অলৌকিকতায় ভরা। এখন প্রচুর সাহিত্যিক মহাপ্রভুর ঢংয়ে নগর কীর্তনে বেরিয়েছেন সাহিত্য কে নিখুঁতত্বের দিতে সযত্নে সাহিত্য কলার মস্তক মুণ্ডন করছেন। অত্যন্ত দুঃখ জনক এ চিন্তা।

     অন্যান্য ভাষার সাহিত্য যখন কামনা- লক্ষ্মী র সন্ধানে ব্যস্ত -- আমরা তখন তার নিরঞ্জনে কালক্ষেপ করছি। ভাবপ্রবণ বাঙালি র অস্তিত্বে মঞ্চ সাজানো হচ্ছে-- প্রাণ প্রতিষ্ঠা হচ্ছে না। কতিপয় বাঙালি ( পুরুষ/ নারী) অত্যন্ত সরল- তায় কাব্য লোকে আরোহন করতে চেয়ে সীমাহীন যথেচ্ছভাবে বিচরন করতে তৎপর। হিমালয়ের মত উই ঢিবি তৈরি হচ্ছে বটে কিন্তু বালির বাঁধের মতোই ক্ষণস্থায়ী। কেবলমাত্র পরিবর্তন ঘটে বটে কিন্তু মাতৃত্বের সূক্ষ্মতা য় সেটা নিতান্তই technically sound. হয় না; দুঃসাহসীকতা প্রকাশ পায়, কোমল মাতৃস্নেহ সুষমা মন্ডিত হয়না। একজন সমালোচকের কথায় বলি--- The pure poet is not a mystic, contemplation of the mystery is no end in itself for him. He is a doer, a maker, a revealer, a creator.

       চিন্তালেশহীন নিছক কয়েকটা শব্দের গুচ্ছতাই সাহিত্য নয়। যোগ সাধনা বা যোগাভ্যাসে যেমন শরীরের পুষ্টি বাড়ে তেমনি সকল ইন্দ্রিয়কে বশীভুত করে সাহিত্যে মন দিলে সাহিত্য পুষ্টি লাভ করবে।।

       সৌন্দর্য বোধ, শালীনতা ও যোগ সাধনা না করে সাহিত্যে র পুরোহিত হতে চাইলে সাহিত্য লক্ষ্মী ঘর ছেড়ে পালিয়ে যাবে-- এবং যেতে বাধ্য।

    যে মেঘে আকাশ কালো, সারা ঘরদোর অন্ধকার, সেই মেঘেই বৃষ্টির সম্ভাবনা-- সেই মেঘেই নব কিশলয় বার্তা বাহিত হয়- বাঙালি র ভাবনা ও সহ জিয়া সুর আজ কেন মমতাময়ী হতে পারছে না?

      কিসের ভয়ে আদর্শচ্যুত? সাহিত্য সৃষ্টিকে কি বাঙালি নিতান্তই accidental মনে করছেন?

      প্রীতি- প্রেম- কান্না- সৌহার্দ্য কি শুধুই নিছক নাটুকে কোলাহল! কল্পনার পাখায় সাধনা কেন ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্যের বেড়াজালে আবদ্ধ!?

  বাঙালির লক্ষ্মী সরস্বতী কি তবে ভিনদেশী দের কাছে'" আয়া " র কাজে ব্যস্ত থাকবে?

   ভেবে দেখুন। অপেক্ষায় বিশুদ্ধতা অবশ্যই আসবে।

লেখিকা উম্মেসা খাতুন -এর একটি গল্প

 নমস্য

                  

                      


ভোরের আযান শেষ হয়েছে, জামিন মিয়ার ঘুম ভাঙলো। তারপর সে খানিক আলস‍্য কাটিয়ে বলদ দুটো নাদে বেঁধে দিয়ে এক ডালি শুকনো খড় ঢেলে দিল," লে, একটু জলখাবার খাইয়‍্যা লে, ম‍্যালা দিন তোধের দিইয়‍্যা কুনু কাম করাই নি, আজ একটু কাম করাব। শিষ‍্যার মাঠে আমার একটা এ্যাক বিঘ‍্যা ভুঁই আছে, ভুঁইডা চষতে হবে। এ্যাখুন এ্যাক চাষ দিইয়‍্যা ফেল‍্যা রাখব। তাহিলে ঘাস যা আছে সব মইর‍্যা যাইয়‍্যা ভুঁইডা পরিষ্কার হইয়‍্যা থাকবে। পরে আর এ্যাক চাষ দিইয়‍্যা বাতাল কইর‍্যা রাই বুনব। এই ভুঁইডায় রাই খুব ভালো হয়। নাহিলে ত‍্যালের যা দাম ত‍্যাল কিইন‍্যা খাতি পারব না। আমার মুতোন মানুষ জ‍্যান্ত মইর‍্যা যাবো। হ‍্যাঁ রে, সত্যি বুলছি। লে, তাড়াতাড়ি খাইয়‍্যা লে!..."

                            

মাঠে গিয়ে লাঙ্গল জুড়ে অর্ধেক ভুঁই চাষ করে জামিন মিয়ার খুব খিদে আর জল তেষ্টা পেয়ে গেল। লাঙ্গল ছেড়ে দিয়ে জামিন মিয়া তখন ভুঁইয়ে একটা বাবলা গাছতলায় বসল, এ্যাখুন এ্যাক থালি পানি দ‍্যাওয়া বাসি ভাত পালে খুব ভালো হতো, জানডা ঠাণ্ডা হতো। কিন্তু সাকিনা আজ বাড়ি লাই। কাল তার মা'র বাড়ি গেলছে। বাড়িতে থাকলে সে ঠিকই এ্যাক থালি পানি দ‍্যাওয়া বাসি ভাত আনত। সে তার বিহ‍্যা করা স্ত্রী না! আর সে তা মজা কইর‍্যা খাতো। কুনও কারণে যিদি আসতে না পারত তো কাহুকে দিইয়‍্যা পাঠিয়‍্যা দিত। কিন্তু আজ আর সেডা হওয়ার লয়। আজ তাকে এ্যাক প‍্যাট খিদ‍্যা লইয়‍্যা ভুঁই চাষ করতি হবে। বাড়িতে জুয়ান ব‍্যাটারা থাকলেও কেহু আসবে না। বুড়া বাপডা খাতে পালো কি পালো না কেহু কুনু দিন খোঁজ লিইয়‍্যা দ‍্যাখে না।...."


"জামিন মিয়া, ও জামিন মিয়া...."

"কে গো?" জামিন মিয়া উঠে দাঁড়ালো।

"আমি গো, নির্মল মাজি।" কাছের কলাবাগান থেকে উত্তর এল।

"ও, নির্মল মাজি!"

"হ‍্যাঁ।"

"কী হলো, বুলো।"

"বুলছি, ভাত খাবা নাকি? খালে আসো। ম‍্যালা ভাত আছে।"

"তা খালে হতো।"

"আসো তাহিলে।"

"কী ভাত? বাসি না গরম?"

"বাসি। খাবা কি? খালে চলে আসো।"


বলা মাত্র জামিন মিয়া চলে গিয়ে হাত, মুখ ধুয়ে বসে গেল," দিবা তো দ‍্যাও তাহিলে,খাই!"

নির্মল মাজি নিজে অর্ধেক আর জামিন মিয়াকে অর্ধেক ভাত দিল। ভাত গুলো খেয়ে দু' জনেরই ক্ষুধা নিবৃত্ত হল। শান্ত মনে তারা এবার নিজ নিজ কাজ করতে পারবে। সাদা মনের এই সব মানুষ গুলো চিরকালই আমার নমস্য।

লেখক অমিত পাল -এর একটি গল্প

 নতুন জামা


                      


"কমল তোর জামার দাম কত?"--- পূজা মন্ডপে ভিড়ের মাঝে দাঁড়িয়ে রিজু বলে উঠল।


"তিন হাজার টাকা ব্রাদার, তোরটা কত?"


"পাঁচ হাজার টাকা"--- রিজুর মুখে এই কথা শুনে সুজয় কোনো কথাই বলতে পারল না।


আসলে তার জামার দাম যেমন কম তেমনই পুরাতন। গতবছর পূজোর সময় সুজয়ের বাবা দু'শো টাকা দিয়ে তার জামা কিনে এনেছিল। এই বছর পূজোয় কোনো দামি জামা তো দূরের কথা, কোনো নতুন জামাও কিনতে পারেননি।

লেখক সিদ্ধার্থ সিংহ -এর একটি গল্প

 ফোন কল



স্বামী-স্ত্রী রাত্রিবেলায় খেতে বসেছেন। দু'জনেরই মোবাইল টেবিলের উপরে। তখনও তাঁদের খাওয়া অর্ধেকও হয়নি। ঘনঘন রিং বাজতে লাগল স্বামীর মোবাইলে।

এই সময় রোজই তাঁর ফোন আসে। আজকে দেরি করে খেতে বসেছে দেখে। না হলে এই সময় ও শোওয়ার ঘরেই থাকে। এদিককার টুকিটাকি কাজ সেরে যতক্ষণ না বউ ওই ঘরে যাচ্ছে ততক্ষণ ও কথা বলে যায়।

বউও জানে কার ফোন। তাঁর স্বামী একদিন তাকে বাড়িতেও নিয়ে এসেছিলেন। তাঁর স্বামী ফোন ধরছে না দেখে এর মধ্যে কবে যেন ওই মেয়েটি তাঁকে ফোনও করেছিল।

বউ বুঝতে পারল, সে সামনে বসে আছে বলেই তাঁর স্বামী ফোনটা ধরছে না। ফোনটা ননস্টপ বেজে যাচ্ছে।

না, এ বার আর স্বামীর নয়, বেজে ওঠল তার ফোন। বউয়ের ফোনে রিং হতেই তাঁর স্বামী তড়িঘড়ি করে বলল, কেউ যদি আমার খোঁজ করে বলবে বাড়িতে নেই।

বউ কলটি ধরেই বলল, আমার স্বামী বাড়িতে আছে। বলেই, লাইনটি কেটে দিল।

স্বামী অত্যন্ত বিরক্ত হয়ে বলল, তোমাকে বললাম না, বলে দিও আমি বাড়িতে নেই?

বউ তাঁর স্বামীর দিকে তাকিয়ে বললেন, এটা তোমার ফোন নয়, আমার।

Poet Pavel Rahman's one poem

 Cause Of Living



If you don’t get anyone’s love,

If all hopes to live are vanished,

Nonetheless, you will have to live-

For saving others from danger.

Though night is coming deeper,

Though there is no any hope to live,

Nonetheless, say to your mind-

“ I will have to live for saving others.”

Poet Sunanda Mandal's one poem

 Catalyst

       


We don't have society,

No struggle for existence.

In the present civilization

A mixture of anxiety and pain,

A kind of catalyst.

The smell of rotten meat emanating from life.

কবি তহিদুল ইসলাম -এর একটি কবিতা

 তুমি বলে ছিলে




তুমি বলে ছিলে, বৃষ্টি ভালোবাসো

কিন্তু যখন বৃষ্টি ঝরে ,তুমি আশ্রয় খুঁজে পাও

তুমি বলে ছিলে, সূর্য ভালোবাসো

চোতের বিরহকাতর মাঠের বুকফাটা রোদে

তুমি হাফ ছেড়ে বাঁচো ,ছায়া খুঁজে নাও

আমি বড় চিন্তিত, তুমি যখন বলো,

" আমি তোমাকে ভালোবাসি"।


তুমি বলে ছিলে ,চাঁদ ভালোবাসো

আবার জোছনা রাতে ,তার কলঙ্ক খুঁজতে যাও

তুমি বলে ছিলে, গোলাপ ভালোবাসো

গোলাপ বনের কাঁটা দেখে থমকে দাঁড়াও।

আমার ভয় করে তুমি যখন বলো,

" আমি তোমাকে ভালোবাসি"।             

কবি সেখ নজরুল -এর একটি কবিতা

 ভালোবাসা অন্ধ




সত্যি ভালোবাসা অন্ধ,

চোখে দেখা যায় না।

মন দিয়ে অনুভব করতে হয়।।

আমি যখন মাতৃগর্ভে ছিলাম, তখন মা আমাকে না দেখেই মনে মনে অনুভব করে,আমাকে নিয়ে হাজার ছবি আঁকতেন।

আমার খোকার এরকম হবে, তার চোখ দুটো এরকম হবে, তারা হাত দুটো এরকম হবে, তার পাদুটো এরকম হবে,তার নাকটা এরকম হবে।

অনেক সময় আমরা অজানা মানুষের ছবি মনের মধ্যে এঁকে ফেলি এবং পাগলের মতো ভালোবাসি।

সত্যি ভালোবাসা অন্ধ,

চোখে দেখা যায় না,

মন দিয়ে অনুভব করতে হয়।যখন আমরা বাইরে থাকি,

মা ভাবতে শুরু করে,

আমার খোকা কিছু খেয়েছে কিনা,আমার খোকা কি করছে,,কখন বাড়ি ফিরবে।

সত্যি ভালোবাসা অন্ধ,

চোখে দেখা যায়না,,

মন দিয়ে অনুভব করতে হয়।

কাউকে দেখে তার প্রতি মন কেঁদে ওঠে,

এটা ভালবাসা নয়,,ভাললাগা।

আমরা সৃষ্টিকর্তাকে কোনোদিন চোখে দেখিনি, তবুও উনার প্রতি আমাদের মন কেঁদে ওঠে এবং দুটি হাত তুলে সব সময় উনার কাছে কিছু চাইতে থাকি।

সত্যি ভালোবাসা অন্ধ,

চোখে দেখা যায় না,

মনে দিয়ে অনুভব করতে হয়।

কবি অভিজিৎ দত্ত -এর একটি কবিতা

 মৃত্যু



হে পথিক করিও স্মরণ 

জীবনের শেষে আসবে মরণ

মৃত্যু জীবনের চরম সত্য 

অথচ এই সত্যটিকে আমরা

কেন ভুলে যায় অবিরত?


লোভ,হিংসা,মারামারি

একে অপরকে বঞ্চিত করার জন্য 

করি শুধু বাড়াবাড়ি 

এমন কী এজন্যই পিতামাতাকে 

পর্যন্ত ছাড়তে হয়েছে ঘর-বাড়ি।


মানুষের দুর্নীবার লোভ

গ্রাস করেছে সবকিছু

অথচ কিছুই যাবে না সঙ্গে

কবে বুঝবে মানুষ এই সত্য?


অন্যায়, অবিচার, দেবেন,হিংসা 

সবই লোভ পেতো

যদি মৃত্যুভয় স্মরণে থাকতো।

মানুষের বিবেক যদি হয় জাগ্রত 

সব অন্যায় হবে পরাভূত।

মৃত্যুকে গ্রহণ করো হাসিমুখে

মৃত্যুঞ্জয়ী হয়ে যাও

শুভ কার্যের সাথে।

কবি অরবিন্দ সরকার -এর একটি কবিতা

 গুরু

             

           


লালন পালনে গুরু তাঁরা মাতাপিতা,

গোরু পালনে গোপাল সে পরমগুরু,

দলের নেতা ভোম্বল সেও কাটে ফিতা,

ডাকাত দলে সর্দার নাম তার হীরু।


গুরু মশাই শিক্ষক তিনি পাঠদাতা,

বস্ত্রহরনে খচ্চর তার হাতে নাড়ু,

সব শালায় কর্মের গড়েন বিধাতা,

যত শালা আছে তারা, সবে ধর্মভীরু।


পশুরাজ সিংহ গুরু নয় পরিত্রাতা,

স্রষ্টা গুরু প্রজাপতি হাতে নিয়ে গারু,

জীবের কল্যাণে ব্রতী তিনি বিশ্বপিতা,

স্বর্গ মর্ত্য পাতালেতে বাজাবে ডমরু।


পাঠশালায় শিক্ষক গোশালায় গোরু,

কামার কুমোর শালা না থাকলে মরু!

___________________

কবি নবকুমার -এর একটি কবিতা

সমস্ত প্রতারণাগুলি 



সমস্ত প্রতারণা গুলি লিখে রাখি বুকের দেয়ালে ।


যেখানে গেছি পেয়েছি শুধুই প্রতারণা 

কেউ দেয়নি স্নেহে একটু শীতল জল ।


মরুভূমির ভেতর হেঁটে হেঁটে 

ফোস্কা পড়েছে পায়ে 

কেউ বলেনি ডেকে -এসো ,একটু জিরিয়ে নাও শীতল ছায়ায়।


যা-ই ধরতে গেছি পিছলে পিছলে গেছে

অসময়ে রজ্জুও সাপ হয়ে মাত করে 

ছোবলে ছোবলে ।


সমস্ত প্রতারণা গুলি লিখে রাখি বুকের দেয়ালে ।



কবি সৈয়দ শীষমহাম্মদের অনু কবিতা

 ১


লাঙ্গল ঘাড়ে কৃষক আমি 

মুখে তুলে দিই অন্ন,

দিসনা বাধা আমার কাজে 

তোর সাথে নই ছিন্ন ।

______________


ভাত ঘুমের ব্যার্থ চেষ্টা হলো 

ঘুম যে গেল চলে,

তিনটে শালিক ঝগড়া করে 

রান্না ঘরের চালে l