Sunday, January 9, 2022

কবিতা || ক্যানভাস || নমিতা বোস

 ক্যানভাস

      



নিশ্চয় কোথাও আগুন লেগেছে ,

নাহলে শূন্য কলসির দিকে ঝুঁকছে কেন কিছু দ্বন্দ্ব বিবাদ!

উদ্দ্যেশ্য বিহীন রক্ত ক্ষরণ গন্ধহীন ,অর্থহীন।

পরিচিত অক্ষর শুকনো কাঠে বেঁচে থাকার লড়াই করছে।

পরিমার্জিত হতে চাইছে বর্নলিপি।

কাল ও তো তোমাকে দেখেছি সজীব দেহে,

জতিস্মরের জন্মা থেকে জেগে ওঠা আলোক মালায় ,

তখন তো কোনো আভাস ছিল না অনিশ্চয়তার কাল্পনিক সিড়ির ,

তবে কেন এই অগ্নিপ্রীতি,আর অনভ্যাসের সপ্তসুর ?

তবে কি বুঝে নেবো বর্ষারম্ভের প্রাক্কালে এই গোলাকার পৃথিবীর শরীরে সুর্য্যের দংশন আলপথে মহাদেশ গুলোকে ক্যানভাসে রেখেছে শুধুমাত্র দিনরাত্রির প্রত্যাশায়?

কবিতা || কুয়াশা || সামসুজ জামান

 কুয়াশা

           



ইদানীং আমরা সবাই শান্ত হৃদয় খুঁড়ে খুঁড়ে

বেদনা জাগাতে ভালবাসি। কুয়াশা সবার অন্তঃপুরে।

 কেউ আর থাকি না সরল, কেউ নই আজকাল ভালো। 

টেনে নিই মনে জটিলতা, তাই মুছে যায় সব আলো।

আলো মুছে কালো নয়, দেখা যায় দূরে ভাসা ভাসা

পাব নাকি হারিয়ে যাবে? একেই তো বলে কু-আশা।

 কুয়াশার কু টা ছেড়ে দাও, পাবে তুমি নিশ্চিত আশা।

 খুঁজে পাবে জীবনের মানে, হারিয়ে যাবে না ভালোবাসা।

 না হলে যে প্রতি পদে পদে হারাবেই জীবনের খেই,

 আশার সূর্যটা দেখো, এই আছে, এই দেখো নেই।

 সূর্যের এত বেশি জ্যোতি, কুয়াশার কাছে যাবে হেরে?

 কুয়াশার জটিলতা এসে জীবনের আলো নেবে কেড়ে?

জীবনের মানে খুঁজে নাও। জীবনের গাও জয়গান।

 জীবনে শুধু ভাল থাক, কুয়াশার না থাকুক স্থান।

কবিতা || আগামীর আশায় || বিশ্বেশ্বর মহাপাত্র

 আগামীর আশায়




সবেমাত্র কুয়াশার আঁচল ভেদ করে,

ম্রিয়মান অরুণের জলছবি ভেসে উঠে—

সাগরের তরঙ্গ দোলায় দোদুল দুল৷ শীত পরি

হাওয়ার দাপটে ঝাঁউয়ের বন বেসুরো মাতাল৷

পাখপাখালি, শঙ্খচিল আর হকারের হাঁকডাক

ঝিঁঝিঁ পোকার মতোই ক্রন্দন রত বেলাভূমি পরে৷

নিত্য যে ক্ষুধার অন্ন চাই৷দু চোখে আঁধার৷

কখনও পেট ভরে না মিঠে কথা আর স্তোকে,

তাই গৃধিনীর মতোই চেয়ে থাকা সুদুর থেকে৷

সময় পুড়িয়ে যায় মনটাকে বাগনলের মতো—

 তবুও সে এখনো খাঁটি সোনা হতে পারলো না৷

একরাশ খেদোক্তি নিয়ে বসে থাকা জীবন খাদে

শুধু অপেক্ষা—কখন সে মুক্তির আশায় গড়িয়ে পড়ে ঝরণার মতো৷

আর তার গড়িয়ে পড়া জলতরঙ্গ থেকে শুধু অনুরণন উঠবে তেমমি আগের মতো অবিরত৷

পাখি যেমন চঞ্চু দিয়ে পালক ঝরায়৷

এ শীতের লগনে তেমনি আমলকি গাছে শূন্য হবে পাতা৷

শুধু কঙ্কাল নিয়ে বেঁচে থাকবে সে আগামীর আশায়৷

কবিতা || কাঁসার গ্লাস || চিরঞ্জিত ভাণ্ডারী

 কাঁসার গ্লাস




রোদের টিলা ভেঙে চৌকাঠে দাঁড়াই

সামনে এগিয়ে আসে একটি কাঁসার গ্লাস

কানা-উপচে আলোর মুখে শিশিরের মতো চমকায় প্রেম

আমার শরীরের প্রতিটি ঘামের ফোঁটায় ফোঁটায়

ফোটে উঠে প্রশান্তির কুসুম।

কবিতা || আমাদের উঠোন নেই || সোনালী মীর

 আমাদের উঠোন নেই




থ্রি বি এইচ কে ফ্ল‍্যাটে

সাজানো ডাইনিং ড্রয়িং আছে

উঠোনটাই কেবল নেই ;

দক্ষিণখোলা বারান্দায় মাদুর পেতে বসে

উঠোনময় জ‍্যোৎস্নার মায়াময় খেলা,আর

বারান্দা ঘেঁষা শিউলি কামিনীর তারা হয়ে যাওয়া,

নেই।

ব‍্যালকনি থেকে বৃষ্টিপড়া দেখি এখন

জল থৈ থৈ বৃষ্টিতে নেচে

কাগজের নৌকো ভাসানোর উঠোন নেই

স্নানের আগে তেলমাখা গায়ে ছুটে বেড়ানো শৈশবের উঠোন

এককোনে মানকচু আম লিচুর আলোছায়া মাখা

ভয়ের উঠোন

চু কিৎকিৎ খেলার 

খঞ্জনি বাজিয়ে বৈষ্ণবীর গান শোনার 

অনাবৃষ্টিতে ব‍্যাঙের বিয়ে দেখার 

উঠোন নেই।

ড্রয়িং রুমে মেকি আলো,টবে গাছ আছে

দাদিমার রোদ পোহানোর

মায়ের গন্ধমাখা শাড়ি মেলে দেওয়ার 

উঠোন গেছে ঢেকে।

ছোট পাখি আসে না আর ধান খেতে


উঠোনবিহীন ঘর,হৃদয়, সম্পর্ক ছোট হতে হতে 

প‍্যান্ডোরার সেই চারকোনা বক্সে জমছে 

একাকীত্বের কষ্ট,সঙ্কীর্ণতার ভয়


দেওয়াল ভাঙার শব্দ শুনি রোজ

ছাদখোলা আকাশ ছোঁয়ার নির্মল আদুরে উঠোনটা

গেছে হারিয়ে।

কবিতা || নতুন বরষ || সৈয়দ শীষ মহাম্মদ

 নতুন বরষ 

           


       হারানো দিন গুলি 

             কাতর মনে ভুলি 

                    ধরে রাখা যায় না,

        সিঁড়ি ভাঙ্গার মতো 

                 সময় হয় গত 

                       সেতো আর ফেরে না l


        নতুন বরষ এসো 

                 সবার হৃদয়ে বসো 

                         সুন্দর উপহার হয়ে,

          হিংসা বিদ্বেষ ভুলে

                 ধরিত্রী মায়ের কোলে 

                       থাকো প্রেমের গীত গেয়ে l

কবিতা || পাখিটা আর গান গাইছে না || দিলীপ কুমার মধু

 পাখিটা আর গান গাইছে না



এক বিকেলে

হঠাৎ ঝোড়ো হাওয়ার দাপাদাপিতে

গাছটা সমূলে উপড়ে গেল,

একটাই পাখির বাসা ছিল গাছটাতে

ভেঙে পড়ল-সব তছনছ, লন্ডভন্ড,

দুটো ডিমও ছিল বাসাতে

তাও গেল ভেঙে,

ধরিত্রীর ওপর প্রলেপ পড়ল নতুন করে...


অল্প বয়সেই বুড়ো হয়ে গেল মা-পাখি ,

চামড়ায় টান ধরেছে,

পালক ধূসর হয়েছে,

ঠোঁটে ধার কমেছে,

শুধু হা-হুতাশ করছে 

যে উচ্চতায় পাখির বাসা ছিল সে উচ্চতায় তাকিয়ে ।


পাখিটা আর গান গাইছে না

দুর্যোগ বারণ করেছে ।

কবিতা || শীতকালীন || চাঁদ রায়

 শীতকালীন

                 




শীতের কাকেরা রাতের শেষে

তাপের স্পর্শে জেগে ওঠে

সোনালী ধানের গন্ধ আঁধারেও সক্রিয়

শব্দহীন শিশির বিন্দুর প্রতিজ্ঞা মিথ্যা------

নেই ঝড়, নেই বৃষ্টি

চাতকও নেই সুরের ভুবনে

মুঠো ধানের সুবাসে নবান্ন

অপেক্ষা নতুন প্রতিজ্ঞা --বার্তার

 বৃষ্টির পরেই ঋতু পরিবর্তন

অথবা ঋতু বদলের বৃষ্টি

শিশিরাঙ্কের অতিক্রান্ত বীজ

হাই তোলার আমন্ত্রণ পাবে

কবিতা || কবি তো হতে চাইনি প্রিয় || সুব্রত মিত্র

 কবি তো হতে চাইনি প্রিয়

                       

                          


                     কবি তো হতে চাইনি প্রিয়,

                       অভিনেতা করে অভিনয়

                    গীতিকার লেখে গীতিআলেখ্য

                সময়ের ধারাপাতে পাল্টে গেছে সবই ।

                     ভাগ্যে ছিল যে এ অভাবনীয়

                       কবি তো হতে চাইনি প্রিয় ।


                            যন্ত্রণারা হয়ে সঙ্গী

                   তোমার স্মৃতিতে হয় মালাবদল

                                সেতো মিথ্যে ,

                              সত্য নয় , সত্য নয় ,

         চূড়ান্ত ভাবনার সাক্ষাতে তা যে শুধু কল্পনীয়

                         কবি তো হতে চাইনি প্রিয় ।


                   চেয়েও তোমায় পাইনি বলে

                 আজ আমায় সবাই কবি বলে,

                   মনের মাঝে চাইগো তোমায়

                           সঙ্গমে নাহি চাই ।

              অবশেষে ভগ্ন হৃদয়ে স্বপ্ন ইতির প্রান্তে

       সময়ের ঘড়িটা থামিয়ে চেওনা কিছু জানতে ।


                    প্রকাশ্যে যদি বলি ভালবাসি

           মনে হবে হয়তো তোমার ওসব নাটকীয়,

                     নির্জনতায় বসে বলি শোন,

                      কবি তো হতে চাইনি প্রিয় ।

কবিতা || ঘর || জয়িতা চট্টোপাধ্যায়

 ঘর




আমার ঘর পাল্টে যাচ্ছে নিয়মিত, বাইরে থেকে দেখলে একই মনে হয়, অথচ সকাল আর সন্ধ্যেটা কতটা আলাদা, আমি হলাম এই ঘরের একমাত্র বাসিন্দা, বাইরে থেকে দেখলে মনে হয় গতকাল যা ছিল আজও ঠিক তাই আছে, কিন্তু আমি গতকালের সাথে আজকের আর কোনো মিল খুঁজে পাই না।

কবিতা || স্ট্রিক্স কালার ও কিউটিকল দাঁত || নিমাই জানা

 স্ট্রিক্স কালার ও কিউটিকল দাঁত




আমাদের সকলের মৃত্যুপরবর্তী গর্ভপাতের একটি ক্যালেন্ডুলা পাতা তৈরি করে রাখা আছে পের্সোলিয়াম বাটির কিনারায়

একটি ছত্রাক ও আমাকে স্ট্রিক্স কালারের কলঙ্কহীন মূলরোম তৈরি করে এক প্রজাপতি হয়ে চমকে দেবে

গভীর ঘুমের ভেতর আমি এক আরব্য সাগরের ধাতব অলংকার খুলে রেখেছি রমজানের আগে , আমি ছায়াকে ভক্ষণ করেছি সারারাত

আমি তাপমাত্রা মেপে চলি রাতের অঙ্গজ চাদরের তলায়

সকলের চোখে একটি কম্পাঙ্ক ভাঙ্গা দেয়াল ঘড়িটি ট্যানজেন্ট গণিতের অসীম দীর্ঘ ধারাপাত পড়ে যাচ্ছে দীর্ঘ মেহগিনি পাতা হয়ে

তরল ধাতু খেয়ে ঘুমানোর আগে প্রাচীন মহাদেশে এগিয়ে যায় সূক্ষ্ম দেহের প্রপঞ্চময় সংসার , সংসারে সকলের দাঁতে কিউটিকল মাখানো তুলসীপাতার দাঁত আছে

মালবিকা এক ইচ্ছামতীর নৌকায় ঈশ্বরীর আরাধনা করেন

আমি ঈশ্বরীর দুটি চোখে লাল পদ্ম রাখি কৃষ্ণকায় চৈতন্যের ভোরে শ্রীরাধা খুলে ফেলছেন মায়াবীর পরমার্থিক অন্ধকার অলঙ্কার

কাগজের ফুল নিয়ে অসীম ভগ্নাংশে বসে পড়লেন নাবিক ও গণিতজ্ঞ, ও কাঠের নারদ পাখিটি

যোগ্যসূত্রটি আর কিছু নয় এক প্রাচীন দেহতত্ত্ব কথার সঙ্গম ও সন্ধি বিচ্ছেদ

কবিতা || সংশোধনী || সৌমেন্দ্র দত্ত ভৌমিক

 সংশোধনী





হিমেল বায়ু মারছে চাটি


ভাবছি এখন অনাচারী


কি করে যে হলাম পাপী


পাল্লা হলো পাপে ভারী?


 


মন্দ সময় নিভাঁজ হেসে


গড়িয়েছিল ভাঙা ঘর


শক্ত ভেবে নিজের ডেরা


আসে নি তো প্রবল জ্বর।


 


গুহ্য কারণ লুকিয়েছিল


শিরার ভেতর অনেক পল


নষ্ট বীজের ভদ্র খেলায়


মুগ্ধ ছিলাম অনর্গল।


 


ঘোলা জলে সাঁতরে প্রাণী


এখন খোঁজে কোমল বায়ু


মেঠো পথে আর কিছুদিন


চায় বাড়াতে পরম আয়ু।


 


চোখের ছানি না কাটিয়ে


চাইছি যেন বিষম রোদ


হিমেল বায়ু মারছে চাটি


ফিরিয়ে দিতে সেই-ই বোধ।

কবিতা || আমার মনে নেই || চাতক পাখি

 আমার মনে নেই...




আমার মনে নেই
কখন কবে উঠেছিল ঝড়
দক্ষিণের প্রান্ত থেকে।

জানিনা কখন কবে 
জাহাজের স্টেশনে 
সাইরেন উঠেছিল ডেকে।

আমার মনে নেই
কখন বিকেলের রোদ্দুর পড়ে ,
গেছে অস্তাচলে ।

জানিনা কখন কিভাবে 
ঘরে ফেরানোর ডাক ডেকে ডেকে,
 ক্লান্ত হয়ে সেও বুঝি গেছে সব ভুলে।
 
 জানিনা ,
 কখন কিভাবে 
 মনেরই খোলা জানালার প্রান্তরে,

 হটাৎ কখন কিভাবে
 জানিনা,
 খুলেছিল দ্বার অন্তরে।

আমার মনে নেই 
ছেঁড়া চিঠি আজও হয়তো পড়ে আছে
কি জানি , কোনো এক অচেনা ঠিকানায়।

আমার মনে নেই 
কবেও কি লিখেছিলাম কিছু ,
 কিছু কি ছন্দ কবিতায়।

আমার মনে নেই....