Friday, October 14, 2022

ছোট গল্প - অশ্বত্থের ডায়েরী || লেখক - রঞ্জিত মল্লিক || Written by ranjit mallik


 

 অশ্বত্থের ডায়েরী

          রঞ্জিত মল্লিক




      "........আশ্বিনের শারদ প্রাতে.......

......... .......... বেজে........"


            ভাদ্রমাসের চড়া রোদ পড়েছে। আশাবরী ছাদে কাপড়গুলো শুকোতে দিয়েই নীচের ঘরে আড্ডাতে যোগ দিল। পুজো আসতে এখনও কিছুদিন বাকি। 


           আকাশে নীল মেঘের টোপর, খোলা খামে বলাকার চিঠি, পদ্ম দীঘির জলে শালুক, শাপলার সরল খুনসুটি, সবুজের মখমলে কাশের জনসভা, শিউলি ভোরে শিশিরের স্যাঁতস্যাঁতে অভিমান, মাঝে মাঝে ঢাকের মাতাল করা মিষ্টি মল্লারে ভেসে আসছে আগমনী সুর।


              আড্ডা বেশ জমেছে। ঘর থেকেই ঘন ঘন চায়ের অর্ডার আসছে। নিকোটিনের গন্ধে ভরপুর আড্ডার আসর। পুজোর বেড়ানো, শপিং, ঠাকুর দেখা নিয়ে কথা হচ্ছে। 


                 একটু পরেই দুর্নিবার ধূমকেতুর মতন উদয় হয়ে নৈঋতার বিয়ে ভাঙ্গার খবরটা দিল।


              "আমি আগেই জানতাম। নৈঋতার এই বিয়েটা টিকবে না।" আশাবরী বলল।

             "আমারও সব শুনে সেটাই মনে হয়েছিল। আমি জানতাম ও পারবে না গুছিয়ে সংসার করতে।"সোমলতা বলে ওঠে।

            "আসলে ওর একটা পুরানো অতীত আছে। সেই অতীতকে ছেড়ে..............."সাম্য কথাটা শেষ না করেই সিগারেটে টান দেয়।

            "আমিও কিছুটা শুনেছিলাম।তবে অতটা গুরুত্ব দিয়নি।" রাজন্যা বলে ওঠে।

               "সামান্য আভাসও আমিও পেয়েছিলাম। আমার সাথে প্রায়ই ফোনে কথা হত।"দুর্নিবার কথাগুলো বলেই একবার সকলের দিকে গভীর দৃষ্টি ছোড়ে। 

               "একটা অসমবয়সী প্রেম সব শেষ করে দিল। দোষটা দুজনের কারোর নয়।" সাম্য বলল। "হতে পারে এটা ইনফ্যাচুয়েশান। আর সেটাই মনের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে গ্রো করছে।" দুর্নিবার আবার বলে ওঠে।

                                     ***************


               নৈঋতা নিজেও ভাবতে পারেনি তার জীবনে এই রকম পরিণতি হতে পারে। শেষ বিয়েটা না টেকাতে পেরে আজকাল খুব ভেঙ্গে পড়েছে।


               সারাদিন ঘরের মধ্যে চুপ করে বসে থাকে। কোন কথা বলছে না। কিছুদিন ধরেই ভাবছে দুদিনের জন্যে কোথাও ঘুরে আসবে।


            "কি রে, সকাল থেকেই মুখ গোমরা করে বসে আছিস?" মা ঠাকুর ঘর থেকেই হাঁক পাড়ল।

           "মা, কিছুই ভাল লাগছে না। আমার আর এই জীবনে সংসার করা হবে না।" নৈঋতা বলল।

           "সবই আমার কপাল। আমাদের কপাল।একদিন দেখবি সব ঠিক হয়ে যাবে।" মা স্বান্ত্বনা দেয়।

           "ভাবছি, একটু বাইরে যাব। স্কুল থেকে কদিন ছুটি নিয়েছি।"

          "কোথায় যাবি?"

          "মালদার চাঁচলে। আমার পুরানো স্কুলে একবার যাব।কিছু কাজ বাকি আছে। আজকেই বেরোতে হবে।"

           "আজ রাতেই যাবি?" 

          "এরপর গেলে আসল কাজটাই হবে না। অনেক দেরী হয়ে যাবে।"

           

               নাইটিতে চোখের জলটা মুছেই নৈঋতা ব্যাগ গোছাতে শুরু করল। ব্যাগে পুরানো শাড়িটা ঢোকাতে গিয়েই কিছু চিঠি বেরিয়ে আসল। চিঠিগুলো দুর্জয়ের লেখা।মনটা নিমেষে ডানা মেলল দূর অতীতে।

                           

                                  *************


            ওর সাথে প্রথম বিয়ে। বিয়ের আগেই পাঁচ বছরের পরিচয় ছিল। দুর্জয়ের বাড়িতে যেদিন প্রথম পা রাখে, সেদিন ওর ঠাকুমার নৈঋতাকে দেখেই পচ্ছন্দ হয়েছিল।


               নৈঋতাও চাইছিল এই রকম এক শ্বশুড়বাড়ি। ঘরোয়া পরিবেশ। ছোট্ট সংসার।


               ধুমধাম করে বিয়ে হলেও বিয়েটা শেষাবধি টিকল না। দুর্জয় অনেক চেষ্টা করেছিল। নৈঋতাকে বোঝানোর। ও শোনেনি।


                প্রতি রাতে দুজনের ঘনিষ্ঠ হবার মুহূর্ত্যে অশ্বত্থের ছবি ভেসে আসত নৈঋতার মনে। নৈঋতা বেরিয়ে আসতে চেয়েছিল সেই সম্পর্ক থেকে। পারেনি, ভিতরে গুমরে উঠত। 


                একদিন দুর্জয় বলেই ফেলল...,


             "অশ্বত্থ কে? তোমার প্রাক্তন.....?"

            "আমার শুভাকাঙ্ক্ষী।।ভাল সম্পর্ক আছে। আমাদের মধ্যে। সেটা....."

            "আজও ওকে ভালবাস ?"

             "জানিনা। হয়ত কিছুটা হলেও ভালবাসি।তা না হলে সে আমার মনের মধ্যে আসবে কেন? আসলে আমাদের রিলেশানটা এমন যে তোমাকে ঠিক বোঝানো যাবে না।"

            "আর অশ্বত্থ? সেও কি....?"

            "হতে পারে।"


            টানা চার-পাঁচ বছর সংসার করার পর দুর্জয়ের সাথে সম্পর্ক ছেড়ে বেরিয়ে আসে। জানেনা ও এখন কোথায় আছে। 


               ট্রেনে চেপেই ঘামে ভেজা শরীরটা চোখ বন্ধ করে জানালার গায়ে ছেড়ে দিল। 


                 এখন প্রায়ই অশ্বত্থের কথা মনে ভাসে। চাঁচলে চাকরি করতি গিয়ে ওর সাথে পরিচয়। পরে বিএড করার সময় ওর সাথে ঘনিষ্ঠতা।


                                           **********


                বাবা, মা মরা অশ্বত্থ হোস্টেলে থাকত। বাড়ি জলপাইগুড়ি। গার্জেন বলতে একমাত্র কাকা,কাকিমা। মামার বাড়ির নিকটস্থ চাঁচলের স্কুলেই পড়ত।


           অংকে ভাল নম্বর পেতে অশ্বত্থের মামা নৈঋতাকে টিউটর হিসেবে ঠিক করে। বারো ক্লাসের ছাত্র অশ্বত্থ এমনিতেই অংকে ভাল। নৈঋতা এসে উজার করে সব কিছু শেখাতে শুরু করল।


                 আসতে আসতে নৈঋতা বুজতে পারল, অশ্বত্থ কেমন যেন ওর উপর নির্ভরশীল হয়ে উঠছে।ওর জীবনের অনেক কিছুই শেয়ার করত দিদিমণির কাছে। সুন্দর বণ্ডিং ছিল দুজনের।


               এক বছর ঘুরতে না ঘুরতেই বণ্ডিংটা আরো স্ট্রং হল। নৈঋতার ছোট ছোট কাজে অশ্বত্থ এগিয়ে আসে। বাজার হাট , ওষুধ কিনতে অশ্বত্থের ডাক পড়ত।


             নৈঋতা অসুস্থ হয়ে পড়লে, অশ্বত্থ নিজে এসে দিদিমণির রান্না করে দিয়েছে। মাথায় জলপটি দিয়েছে।

                           .......................


             "আজ শরীর কেমন আছে? জ্বরটা কমেছে দেখছি।"

             "জ্বর কমলেও শরীরে একটু ব্যথা আছে। মাথাটা পুরো ভারী হয়ে আছে।"         

         "কপালটা একটু টিপে দেব? বেশ হালকা লাগব।"

           "না, থাক।"

                                  ...........

             "অঙ্কগুলো সব হয়ে গেছে?""

             "সব হয়নি দিদিমণি। দু একটা বাকি আছে।"

              "স্কুলে কি করাল?"

               "ক্যালকুলাস।"  


                  বারো ক্লাসে হিংসে করার মতন নম্বর পেয়ে অশ্বত্থ জলপাইগুড়ির কলেজে ভর্তি হয়। ফিজিক্স অনার্স। নৈঋতার ইচ্ছে ও ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ুক। কিন্ত আর্থিক অবস্থা ভীষণ খারাপ।নৈঋতা সব দিক ভেবে এগিয়ে আসে। অশ্বত্থকে জয়েন্টে বসতে বলে।


                  এক চান্সে জয়েন্ট উতড়ে যায়। জলপাইগুড়ির ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজেই ভর্তি হয়। নৈঋতাই সব খরচ দেয়। 


               পরে ও জলপাইগুড়িতে বিএড করতে এলে সম্পর্কের নিবিড়তায় পারস্পরিক নির্ভরশীলতা আরো বেড়ে ওঠে।


              নৈঋতাও বুঝতে পারে অশ্বত্থের প্রতি কেমন একটা টান চলে আসছে। সেই টান কি ভালবাসার ? না অন্য কিছু? নিজেই জানে না।


               অশ্বত্থের পড়া শেষ হতে তখনও দুই বছর বাকি। নৈঋতা মিউচুয়াল ট্রান্সফার নিয়ে জলপাইগুড়ির একটা স্কুলে জয়েন করে। মাঝে মাঝে অশ্বত্থকে ডেকে তার স্টাডি কেমন চলছে খোঁজ নেই। নিজের হাতে ওর খাবার, টিফিন বক্স সাজিয়ে দেয়।


                পুরানো দিনের কথা ভাবতে ভাবতে কখন যে চোখটা বুজে এসেছিল খেয়াল করেনি। বর্ধমান এসে গেছে।


                জানালার দিকে আপন মনে তাকিয়ে আছে। একটু পরেই পিছন থেকে একজন টোকা মারল। ঘাড় ঘুরিয়েই দেখে বিদর্ভ দাঁড়িয়ে।


            "তোমাকে শিয়ালদাতে উঠতে দেখেছি।"

          "কোথায় যাচ্ছ?"

         "অফিসের কাজে বালুরঘাটে যাচ্ছি।"  

                   "তুমি?"

         "মালদা। কাজ আছে। জলপাইগুড়িও যেতে পারি।"

       "বুঝেছি।"

      "কি?"

       "সেই পুরানো সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসতে পার নি?"

      "ঠিক ধরেছ। বেরোতে না পারলে তোমাকে এত সহজে........?"

    "মন থেকে বলছ?"


                 ট্রেন ছেড়ে দিল। বিদর্ভ ওর দুটো বগির পিছনেই উঠেছে। বেশী দিন হয়নি ওদের ডিভোর্স হয়েছে।


             দুর্জয় চলে যাবার পর ঠিক করেছিল জীবনটা একাই কাটাবে। কাউকে আনবে না এই ছন্নছাড়া জীবনে। অসুস্থ মার কথা রাখতেই কেন্দ্রীয় সরকারের আধিকারিক বিদর্ভকে বিয়ে করে।


            ওকে আঁকড়ে ধরে রাখতে চেয়েছিল। পারেনি। তার কারণও ছিল। ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করার পর অশ্বত্থ ভাল চাকরি নিয়ে ব্যাঙ্গালুরু চলে যায়। চার বছর পরে ওকে ফ্রান্সে পাঠায়।


             তখন থেকেই অশ্বত্থের সাথে যোগাযোগটা ফিকে হয়ে আসে। বিদর্ভকে অশ্বত্থের কথা বলতে হয়নি। খাঁচার পাখি অশ্বত্থকে বিদর্ভ নিজেই একদিন খাঁচাটা খুলে মুক্ত করে দিল।


           বিদর্ভ হঠাৎ একদিন জানায় যে সে এই সম্পর্ক থেকে বেরোতে চাই। কারণ এক নার্সের সাথে তার সম্পর্ক রয়েছে যাকে সে ভালবাসে। যদিও নার্স তার থেকে বয়সে আট বছরের বড়।


     "আমি মনামীকে ঠকাতে পারব না। তোমার আগে ও আমার জীবনে এসেছে। ও আমাকে পাগলের মত ভালবাসে।"

   "সব বুঝলাম। তাহলে আমাকে বিয়ে করলে কেন ? মার কাছে মহৎ হতে?"

     "কিছুটা তাই। তখন সিচুয়েশান অন্যরকম ছিল।"

  "এখন হঠাৎ নতুন করে পুরানো প্রেম উথলে উঠল?"

"এক্সিডেন্টের পর মনামীর স্মৃতি চলে যায়। এখন ওর স্মৃতি ফিরে এসেছে। ও আমাকে খুঁজে চলেছে।"

"বেশ তো যেদিন বলবে আমি ডিভোর্স পেপারে সই করে দেব।"


               নৈঋতা আর কথা বাড়ায়নি। বিদর্ভের দাবী মেনে নিয়েছিল। পরে চিঠি লিখে বিদর্ভকে অশ্বত্থের বিষয়ে সব জানিয়েছিল।


            ট্রেন বোলপুর ছাড়তেই ঘুমটা আবার ভেঙ্গে গেল। বোলপুরের শান্তিনিকেতনে একবার অশ্বত্থ কাকাদের সাথে এসেছিল পৌষমেলাতে। সেবারে নৈঋতা দিদিমণিকেও আসতে রাজী করিয়েছিল। ওর মনে আছে পৌষমেলাতে মাদলের সাথে পা মিলিয়েছিল। অশ্বত্থ ওকে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে সব কিছু দেখিয়েছিল।


              আজও নৈঋতার শূন্য বুকের মাঝে একটা মাদল বাজে। সেটা আনন্দের না কষ্টের ও নিজেই জানে না। তবে সেই মাদলের তালে তালে, মাঝে মাঝে অশ্বত্থের স্পন্দনটা টের পায়।


          চোখের জলটা মুছেই আবার একটু ঘুমানোর চেষ্টা করল। ঘুম কিছুতেই আসছে না।


                     

                                   ***************


                   ট্রেন মালদা ছুঁয়েছে। চাঁচলের স্কুলের কাজ মিটতে একটু বেলা হল।


              শরৎকাল যে এসেছে প্রকৃতির সাজ দেখলেই তা বোঝা যাচ্ছে। আম বাগানের ফাঁক ফোকর দিয়ে হলদে রোদ্দুরটা আলপনা এঁকে বেড়াচ্ছে। কাশের বনে সাদা বকের জ্যোৎস্না।


               অশ্বত্থের মামার সাথে দেখা হয়েছিল। ওর খবর একটা পেয়েছে। আর তাতেই......। পুরানো স্মৃতি ফিরে ফিরে আসছে। চোখ ছলছল করছে অনবরত। নিজেকে আজ ভীষণ একা মনে হচ্ছে। একটু পরেই সন্ধ্যে নামবে। চারিদিক জমাট অন্ধকারে ঘিরে ধরবে। নৈঋতার মনে হচ্ছে সেই অন্ধকার ওর সব কিছু কেড়ে নেবে। 


                                  ********


             চাঁচল থেকে জলপাইগুড়ি অনেকটা পথ। ওখানে নেমেই চোখে মুখে একটু জল দিল। ওখানের পুরানো স্কুলেও একবার যেতে হবে।


                স্কুল থেকে ফিরেই সোজা চলে আসল অশ্বত্থের বাড়ি।বাড়িটা আগের মতই আছে। সেই রকম সাজানো গোছানো। গুছিয়ে রাখার সেই মানুষটাকে দেখতে পাচ্ছে না। মামার কাছে গতকালই শুনেছে ও দেশের বাইরে আছে। তবে বাড়ির মধ্যে পা ফেলেই বুঝতে পেরেছে একটা চাপা নিস্তব্ধতা বিরাজ করছে সাড়া বাড়িতে। 


  "অশ্বকে দেখছি না?"

   "অশ্ব এখানে এখন আর থাকে না।"

   "শুনলাম আমেরিকাতে আছে?"

   "কে বলল?"

   "মামী।"

   "হ্যাঁ, ঠিক শুনেছ। ও আমাদের ছেড়ে অনেক দূরে চলে গেছে।"


           অশ্বের কথা বলতে বলতে কাকিমার চোখ ছল ছল করে উঠল। একটু থেমেই, "আর একটা দিন থেকে গেলে হত না?"

"এবারে ছুটি কম। পরে একবার আসব।"


                নৈঋতা বেরোনোর জন্যে রেডী হতেই কাকিমা ওর হাতে একটা ডায়েরী এগিয়ে দিয়ে করুণ সুরে বলল," ডায়েরীটা অশ্বত্থের। এখানে অনেক কিছু লেখা আছে। ও তোমাকে দিতে বলেছে।"


                 ডায়েরীটা হাতে নিয়ে নৈঋতা বেশ অবাক হল। ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে আছে কাকিমণির দিকে।একটু থেমে বলল,"কিন্তু কেন?"

"জানিনা, আমরা কোনদিন এর পাতা উল্টেও দেখিনি। ও চলে যাবার আগে এটা তোমাকে........"


            ডায়েরী নিয়েই নৈঋতা স্টেশনের দিকে পা বাড়াল। ছিপ ছিপ করে বৃষ্টি পড়ছে। ওর চোখেও নামল শ্রাবণের ভরা কোটাল। বৃষ্টির বিন্দুগুলো পদ্মপাতার উপর পড়ে এক অপূর্ব সৌন্দর্য্যের সৃষ্টি করছে।


              ট্রেনে উঠেই জানালার ধারে হেলান দিয়ে বসল। আজ মনে হচ্ছে সব প্রশ্নের উত্তর পেয়ে গেছে। অশ্বত্থের মুখটা ভাসছে সদ্য ফোটা শিউলির মতন।ওর সরল হাসি, শিশুসুলভ কথাগুলো কানে বাজছে। মনে মনে ভাবছে,ভালই হয়েছে ও দূরে চলে গেছে। কেউ আর ওকে বিরক্ত করবে না।


             নৈঋতা বুঝতে পেরেছিল অশ্বত্থের কাছে ও বাঁধা পড়েছে। অশ্বত্থও একটা অজানা টান অনুভব করত ওর প্রতি। হতে পারে সেই টানটাই ভালবাসা। কিংবা ভালবাসার মতই এক শক্ত, নিখাদ বন্ধুত্ব।                     

                                   *****************


                   সময়ের খরস্রোতে ন টা বছর দেখতে দেখতে কেটে গেছে। বোধনের রোদ্দুর আবার চৌকাঠে এসে ঝলমল করছে। কদিন পরেই মা অপর্ণা সবার ঘর আলো করে আসবে।


                    "বাজলো তোমার

                      ........... আলোর বেণু......."


                    আশাবরীর বাড়িতে পুজোর আড্ডাটা আর নেই। সেখানে ঘোলাটে ভেজা অন্ধকার। তার প্রতিফলন অশ্বত্থের জলপাইগুড়ির বাড়িতে। নৈঋতার ঘরেও। কাকিমণি মারা গেছে। নৈঋতার মায়েরও বেশ বয়স হয়েছে। 


                   দুর্জয় মাঝে মাঝে নৈঋতার মা, বৃদ্ধা সবিতাদেবীর খোঁজ রাখে। ও আর বিয়ে করেনি। সিঙ্গল ফাদার হিসেবে থাকতে চায়। একটা মেয়েকে দত্তক নিয়েছে। বাবা, মেয়েতে আছে ভালই। বিদর্ভের সাথে মনামীর অসমবয়সী প্রেমটা ছাদনাতলার গন্ধ মাখলেও শেষরক্ষা হয়নি। মনামীর আবার স্মৃতি লোপ পেলে বিদর্ভ শোকে দুঃখে তিন বছরের মধ্যেই মারা যায়। 


                  আজ অষ্টমী। সন্ধিপুজো শুরু হতেই সবিতাদেবী প্রদীপ হাতে নৈঋতার ঘরে ঢুকল। প্রদীপের স্বর্ণাভ আভায় ধুলোর চাদরে মোড়া মেয়ের ছবিটা জ্বল জ্বল করছে।ঠিক যেন মা উমা!  


              ছবির ভিতর থেকে নৈঋতা মিষ্টি হেসে যেন বলছে,"মা, তোমাদের আদরের ঋতা ভাল আছে। যেখানে আছে সুখেই আছে।"


               ঐ আলোর ছটা, নৈঋতার মধুর হাসি জলপাইগুড়ির অরবিন্দ পল্লীর এক দোতলা বাড়ির ছোট্ট ঘরকেও আলিঙ্গন করল। যেখানে ভালবাসা আজও বেঁচে আছে। নৈঋতা, অশ্বত্থ যেখানেই থাকুক ওরা ভাল থাকবে।


                সন্ধিপুজো শেষ হতেই ঝির ঝির করে বৃষ্টি শুরু হল। সবিতাদেবীর চোখেও নামল শ্রাবণের ভরা কোটাল।      


               "দুর্গে দুর্গে দুর্গতিনাশিনী......

                ..........মহিষাসুরমর্দিনী........"


               কিছু অসমবয়সী প্রেম কুসুমিত হবার পর কালের নিয়মে কেন জানিনা ঝরে যায়। কিন্তু তার রেশ আজীবন থেকে যায়। নৈঋতা, অশ্বত্থ, আর বাকিরা সেই অসম, বন্ধুর পথের কুশীলব।


                                    **************


              সেদিন চাঁচলের মামা অশ্বের সঠিক খবরটা দেয়নি। কাকার বাড়িতেও বিষয়টা চেপে রাখে। কাকিমণি জানত, শুনলে নৈঋতাও ভীষণ কষ্ট পাবে। তাই ওকে কিছু বলা হয়নি।। ও যে আসবে সেটাও ভাবতে পারেনি। তাছাড়া কাকিমণিও অশ্ব আর নৈঋতার মধ্যে নিবিড় সম্পর্কের কিছুটা আঁচ করতে পেরেছিল।

           

             ট্রেনে যেতে যেতে ডায়েরীর অনেকটা পড়ে নৈঋতা অশ্বত্থর মনের অনেক অজানা, না বলা কথায় জানতে পারল। যার কিছুটা অনুভব করেছিল মাত্র। হৃদয় দিয়ে। ভালবাসা দিয়ে।      


                                   *****************

          

               জলপাইগুড়ির স্কুলে কিছু বছর চাকরি করার পর প্রোমোশন পেয়ে প্রধান শিক্ষিকা হয়ে হুগলীর একটা স্কুলে যোগ দেয়। ও চেয়েছিল অশ্বত্থ জীবনে বড় হোক। রোজ ভগবানের কাছে প্রে করত। ভগবান প্রার্থনা শুনেছে। 


            অশ্বত্থ চাকরি পাবার পর ব্যাঙ্গালুরু চলে যায়। তারপর ইউরোপ। ওর সাথে যোগাযোগ একটু ঘোলাটে হতেই নৈঋতাকে একাকীত্ব গ্রাস করে। সেই সময়ই বিদর্ভ আসে জীবনে। অশ্বত্থ বিয়ের খবরটা জানল অনেক পরে।ও দিদিমণির প্রথম বিয়েটা মেনে নিতে পারেনি। হয়ত চায়নি উনি এত তাড়াতাড়ি ঘর বাঁধুক।


               দু দুটো বিয়ে ভেঙ্গে যেতে অশ্বত্থ একটু অবাকই হয়েছিল। বিদেশ থেকে ফেরার পরে অশ্বত্থও একটা সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। অফিসের বসের মেয়ে শ্রীকে বিয়ে করে ফেলে। ততদিনে নৈঋতাও বিদর্ভের সাথে সংসার করছে। যদিও শ্রী বয়সে আট বছরের বড়, তবুও তো একটা সম্পর্ক।


               ভালবাসতে পারেনি শ্রীতমাকে। সব সময় নৈঋতার ছবি মনে ভাসত। জানত দিদিমণির একটা নতুন সংসার হয়েছে। উনি হয়ত আর ফিরে আসবেন না। ওখানেই বাঁধা পড়েছেন। 


               অশ্বত্থের কষ্টও হয়েছিল। বসের মেয়ে বলে শ্রীতমা মাঝে মাঝে অশ্বত্থকে মানসিক নির্যাতনও করত। মনের মধ্যে একটা দ্বন্দ্ব, নিত্য অশান্তি চলত।মাঝে মাঝে ও ডিপ্রেসনে চলে যেত। সেই কারণেই..

.

                                       *****************


                সেদিন ট্রেনে যেতে যেতে নৈঋতা ডায়েরীর সবটা পড়তে পারেনি। ওর ঘুম চলে এসেছিল। সারাদিনের ক্লান্তিতে। বাড়িতে ফিরে একটু ফ্রেশ হয়ে গভীর রাতে ডায়েরীর বাকি পাতা ওল্টাতেই চমকে উঠেছিল। সারা শরীর বেয়ে নেমে এসেছিল শিহরণ।


                   ডায়েরীর বেশ কিছু পাতাতে অশ্বত্থ দিদিমণির প্রতি তার ভালবাসা উগড়ে দিয়েছে। সেখানে পরিষ্কার আদরের দিদিমণির প্রতি তার চূড়ান্ত দুর্বলতা প্রকাশ পেয়েছে। সাদা কালো অক্ষরে, পেনের কালিতে তা জীবন্ত হয়ে উঠেছে। বেশ কিছু লাইনে অশ্বত্থ নিজেই স্বীকার করেছে যে, সে নৈঋতাকে ভালবেসে ফেলেছে। তাকে গভীরভাবে কাছে পেতে.......


                ডায়েরীর শেষ দিকের কিছু লাইনে নৈঋতার চোখ আটকে গেল। বেশ কিছু কথা এলোমেলো আর অসংলগ্ন। সেখানে ক্রমশঃ ভয়ের ভাব প্রকট। কিছু কিছু লাইন সুউচ্চ পর্বতের গভীর গিরিখাতের মতন সংকীর্ণ ঢালু হয়ে নেমে গেছে। যা অতীব ভয়ঙ্কর। 


                 নৈঋতার মনে হচ্ছে সে ঐ গভীর গিরিখাতের মধ্যে দিয়ে যেন তলিয়ে যাচ্ছে। শেষ পর্যন্ত সে তলিয়েও গেল। ডায়েরীর একেবারে শেষ লাইনগুলো তার আর পড়া হয়ে ওঠে নি। আর কোনদিন হবেও না।


                      "........জাগো দুর্গা.......

                       .......... ..........তুমি জাগো......"


                 মহালয়ার ভোর শুরু হবার আগেই নৈঋতার শোক জর্জরিত বেদনা ক্লিষ্ট শরীরখানি সিলিং থেকে ঝুলে পড়ল ভীষণ ব্যথায় আর অভিমানে। 

                                               ********** 


              সেদিন দুই বাড়ির কথা শুনে নৈঋতা বুঝেছিল অশ্ব আমেরিকাতে আছে। আসলে ও ততদিনে মারা গিয়েছিল। যেটা ওকে কষ্টে কেউ বলেনি। 


              অশ্বত্থ আমেরিকা গিয়েছিল ঠিকই। তবে ও মারা যাবার দেড় বছর আগে। আমেরিকা থেকে ফিরে এসেও শান্তি পায়নি।শ্রীতমা ওর জীবনটা দুর্বিষহ করে তুলেছিল। যার নিদারুণ পরিণতি সুইসাইড।


             মারা যাবার একমাস আগেই সব কিছু লিখে রেখেছিল ডায়েরীর পাতায়। প্রথমদিনের ক্লাস থেকে শুরু করে একটু একটু করে দিদিমণির সান্নিধ্যে আসা, বিপদে আপদে উনার পাশে এসে দাঁড়ানো, নৈঋতার অকৃপণ সাহায্যের হাত বাড়ানো, শান্তিনিকেতনের পৌষমেলা কোন কিছুই বাদ রাখেনি।


                 ডায়েরীর শেষ দিকের লাইনগুলোতে অশ্ব অব্যক্ত যন্ত্রণার কথা তুলে ধরেছে। দিদিমণিকে হারানোর ব্যথায় দ্বগ্ধ হয়েছে তার সবুজ মন। বারে বারে তার লেখার আকুতিতে এটা স্পষ্ট যে সে নৈঋতার কাছে ফিরে আসতে চায়। ওর এই চরম দুর্দিনে নৈঋতার আগের মতন পাশে দাঁড়ানোটা খুব প্রয়োজন।


               সময়ের জোয়ার যত সামনের দিকে এগিয়েছে অশ্বত্থ নিজেকে তত গভীর হতাশার মধ্যে ডুবিয়ে রেখেছে। ডায়েরীতে নিজেকে শেষ করে দেবার কথাও বলা আছে। আর সেটাই শেষ পরিণতি পেয়েছে।


              নৈঋতাও ডায়েরীটা পড়ে নিজেকে ঠিক রাখতে পারেনি। অশ্বত্থের মৃত্যুটা মেনে নিতে পারেনি। 


               শেষে চরম দ্বন্দ, হতাশা, একাকীত্বের দাঁড়িপাল্লায় দুলতে দুলতে অশ্বত্থের মত ও ফিরে গেছে না ফেরার দেশে। 


                                     ************


                 নবমীর পুজো এখনও বসেনি। গতকাল সারাদিন উপোসের পর ঘুমিয়ে ছিলেন। কলিং বেলের শব্দে ঘুম ভাঙ্গল। 


                দরজা খুলেই দেখে দুর্জয় মেয়ে শাল্মলীকে নিয়ে হাজির। নীল শাড়িতে ওকে অসাধারণ লাগছে। নৈঋতা নাকি ছোটতে এই রকমই ছিল। দুর্জয় প্রতিবার বিজয়াতে আসে। এই প্রথম মেয়েকে আনল। তাও আবার নবমীর সকালে। 


           "দিদুন,আমি কদিন তোমার কাছেই থাকব।"

           "মা, আসলে আমি অফিসের কাজে একটু বাইরে যাচ্ছি। শালুর হোস্টেলেও ছুটি পড়েছে। তাই ভাবলাম......."


            সবিতাদেবী দুর্জয়ের কথা ঠিকমত শুনতে পায়নি। শাল্মলীর চোখের দিকে তাকিয়ে আছে। বাকরুদ্ধ। উনার বারান্দাতে সোনামুগ হলদে রোদের জলসা। তার অণু,পারমাণু নাতনির চোখেও।


           নৈঋতা ফিরে এসেছে। সেই সাথে মনে হল মা দশভূজাও আজ উনার ঘর আলো করে বসে আছেন। সবিতাদেবীর চোখে নিষ্পাপ আশ্বিনী শিশিরের স্পন্দন। সব দুঃখ ভুলে মনটা নতুন করে খুশীতে ভরে উঠল। 


            "শঙ্খ শঙ্খ মঙ্গল গানে......

            "জননী এসে দ্বারে........"

             

               

              

            

        

Thursday, October 13, 2022

ছোট গল্প - ভ্রান্তির ভূত || লেখক - তৈমুর খান || Short story - Vrantir vut || Written by Taimur khan


 

ভ্রান্তির ভূত 


    তৈমুর খান



আলো জ্বলা দেখে বাড়ির কাছাকাছি যাচ্ছি আর অমনি মনে হচ্ছে বাড়িটা সরে গেল। আর একটু এগিয়ে গেলে বাড়িটার কাছে পৌঁছাব। এমনি করে করে যতদূর এগিয়ে যাচ্ছি বাড়িটা সরে যাচ্ছে। গ্রামে ঢোকার রাস্তাটা দূর থেকে মনে হচ্ছে: হ্যাঁ আমাদেরই গ্রাম। রাস্তার দু'পাশে তালগাছ, গ্রাম ঢোকার মুখে বিশাল একটি বটগাছ দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তেমনই ধারণা। মানিকের সাইকেল ভালো করার সেই আটচালা। বামদিকে কুতুবের চায়ের দোকান। তেমনই তো সব ঠিকঠাক আছে!


     দাদু বললেন: সকালে তো এই রাস্তা দিয়েই এসেছি! আমাদের ভুল হবার কথা নয়! কিন্তু এতটা পথ হেঁটেও এখনো পৌছালাম না কেন?


  আমিতো ভয়ে জড়োসড়ো। দাদুর বাম হাতের একটা আঙুল শক্ত করে ধরে আছি। রাস্তা কিছুই দেখা যাচ্ছে না। আকাশে ঘন ঘোর মেঘ। আষাঢ় মাস। ব্যাঙের সঙ্গে ঝিঁঝিঁ পোকারা একটানা ডেকে যাচ্ছে। মানুষের কোনো সাড়াশব্দ নেই। একটা মালগাড়ি সো সো শব্দে পেরিয়ে গেল। ভয়ে ভয়ে দাদুকে বললাম: এবার আমরা ঠিক পথেই চলেছি আর ভুল হবে না।


   কিন্তু একটু পথে হেঁটেই বুঝতে পারলাম আমাদের পথটা ভুল। যে আলোটা নিকটেই মনে হচ্ছিল, এখনো সেটা তাই-ই মনে হচ্ছে। ওই যেমন বটগাছ, সাইকেল সারাইয়ের দোকান, চায়ের স্টল সবই মনে হচ্ছে আরও একটু দূরে। আমরা সেদিকেই লক্ষ্য রেখে হেঁটে চলেছি আর সেগুলিও ঠিক তেমন দূরত্বেই অবস্থান করছে।


 আর কতদূর যাব দাদু?


 আর একটু এগিয়ে যাই তারপর দেখি!


     কিন্তু আমাদের যাওয়া যে ফুরোচ্ছে না? সেই রাত দশটায় ট্রেন থেকে স্টেশনে নেমেছি। বড়জোর আধঘন্টা লাগে আমাদের বাড়ি ফিরতে। ট্রেনটা লেট না করলে আমরা সাড়ে-আটটাতেই নেমে যেতাম। স্টেশন থেকে সোজা পশ্চিম দিকে মাত্র তিন কিমি রাস্তা হাঁটলেই আমাদের গ্রাম। আসার সময় পিসি বারবার বলেছিল আজ থেকে যেতে। আমারও তাই ইচ্ছা ছিল। কিন্তু দাদু থাকলেন না। জমিতে এখনো ধানের বীজ পড়েনি। কোন্ সময় বৃষ্টিতে সব ভর্তি হয়ে যাবে। তাই তাড়াহুড়ো করে বাড়ি ফিরে পরের দিন সকালেই মাঠে যাবেন। স্টেশনে নামার সময় কয়েকজন মাত্র প্যাসেঞ্জার তারা এদিক ওদিকে কোথায় চলে গেল। আমি আর দাদু পশ্চিম দিক বরাবর হাঁটতে শুরু করলাম। প্রথমদিকে মনে হচ্ছিল আমাদের সামনে দিয়ে কেউ এগিয়ে যাচ্ছে। হয়তো সেও আমাদের গ্রামে যাবে। তার সঙ্গ ধরার জন্য দাদু খুব জোরে হাঁটতে লাগলেন। আমি হাঁটতে না পেরে পেছনে পেছনে লাগালাম ছুট। কিন্তু লোকটাকে ধরতে পারলাম না। সে এগিয়েই গেল। তার পেছন পেছন হাঁটতে গিয়ে আমাদের এই দশা। আন্দাজ করছি তখন রাত বারোটা। কতবার আমরা একই রাস্তায় ঘুরে ফিরে বারবার একই জায়গায় পৌঁছচ্ছি। আর কেবলই মনে হচ্ছে আর একটু গেলেই আমাদের গ্রাম।


     অবশেষে আমরা ভীষণ ক্লান্ত হয়ে পড়লাম। আমি বললাম: আর হাঁটতে পারব না দাদু! পায়ে প্রচণ্ড ব্যথা! চলো আবার স্টেশনে ফিরে যাই। ওই ট্রেন গেল ওই পথ দিয়েই রেললাইনে হেঁটে স্টেশনে যাব। তারপর স্টেশনেই রাতটুকু কাটিয়ে দেব।


  দাদু রাজি হলেন। বললেন: স্টেশন মাস্টার দাসবাবু, আমার খুব পরিচিত। তাকে বলে একটা আলোর ব্যবস্থা করে নেবো।


  রেললাইন মুখি আমরা তখন প্রাণপণে হাঁটছি। কিন্তু কোন্ দিকে যাচ্ছি সেটা ঠিক করতে পারলাম না। কেবলই মনে হল সামনেই রেললাইন। কিন্তু অনেকটা হেঁটেও রেললাইনের নাগাল পেলাম না। কেবল একইভাবে মনে হতে লাগল: এইতো! আর একটু গেলেই পৌঁছে যাব!


     রাত তখন প্রায় দুটো। আবার আমরা হতাশ। কতদূরে স্টেশন? কতদূর রেললাইন? কে উত্তর দেবে? চারিপাশে চেয়ে দেখি শুধু অন্ধকার। সামনে শুধু আলো জ্বলছে। পেছনে, ডাইনে-বাঁয়ে সবদিকেই টিমটিমে আলো। তবে কেউ কি আলো জ্বালিয়ে এখন অপেক্ষা করছে? কাছাকাছি গেলেই মনে হচ্ছে আর একটু দূরে। এভাবে যে রাত কেটে যাচ্ছে। দাদু, কী হবে আমাদের?


     এবার এগিয়েই যাব। একটা গ্রাম তো পাব? যেখানে মানুষ বাস করে। মানুষ থাকলেই সাহায্য পাব।


     দাদুর কথা শুনে আমিও যেতে লাগলাম। দুই পা কাঁটায়-পাথরে ও মাটির ঢেলায় ক্ষতবিক্ষত হয়ে গেছে। কিছুই বলতে পারছি না। কতক স্থান থেকে চুঁইয়ে রক্ত পড়ছে আঁধারে তা অনুভব করছি। কতক্ষণে বাড়ি পৌঁছাব শুধু একটিই লক্ষ্য।


       যেতে যেতে হঠাৎ একটা বাড়ি চোখে পড়ল। ছোটখাটো একটা কক্ষ। খড় দিয়ে ছাউনি করা। একটামাত্র দরজা। দাদু দরজার সামনে দাঁড়িয়ে চেঁচাতে লাগলেন:


 কেউ আছো বাড়িতে? কেউ আছো? কেউ কি আছো?


 কোনো সাড়া পাওয়া গেল না। ভেতরে অদ্ভুত একটা শব্দ হল। কান্নার শব্দ না হাসির শব্দ কিছুই বোঝা গেল না। দাদু আবার ডাকলেন: কেউ আছো সাড়া দাও! আমরা খুব বিপদে পড়েছি!


    হঠাৎ দরজা খুলে সামনে দাঁড়ালেন দীর্ঘদেহী এক অন্ধকার মানুষ। তার মুখের চেহারা কিছুই বোঝা গেল না। হাতদুটি এত দীর্ঘ যে হাঁটু পর্যন্ত ঝুলে আছে। শুধু চোখ দুটি আগুনের ভাটার মতো লাল। এ-কি কোনো মানুষের চোখ? হতেই পারে না। দাদুকে জড়িয়ে ধরেছি ভয়ে। দাদু স্থির হয়ে নিজেকে সামলে নিয়ে বললেন: গ্রামে যাব, রাস্তা ভুলে গেছি; আমাদের রাস্তা দেখিয়ে দাও!


 অন্ধকার লোকটি এক অদ্ভুত হাসির শব্দ তুলে বললেন: কোঁন্ রাঁস্তায় যাঁবি? আঁমি দেঁখিয়ে দিঁচ্ছি আঁই!


        অগত্যা তার সঙ্গে-সঙ্গে যেতে হল। না গেলে যদি অন্য বিপদ হয়!


        সে এগিয়ে যাচ্ছে কিন্তু কিছুতেই তার মাটিতে পা পড়ে না। মনে হচ্ছে যেন বাতাসে ভর করে সে উড়ে উড়ে যাচ্ছে। আমরা তার সঙ্গে অত দ্রুত হাঁটতে পারছি না। তবু দাদু আর একটা কথাও বললেন না। ওর পরিচয়ও জানতে চাইলেন না। সেদিন কতদূর এগিয়ে গেলাম তার হিসাব করতে পারিনি। আমাদের সম্বিৎ ফিরল ভোরের আযান ধ্বনিত হওয়ার পর। তখন দেখি অন্ধকার ফিকে হতে শুরু করেছে। থেকে থেকে পাখিরা ডাকছে। সামনে দিয়ে বয়ে চলেছে ব্রহ্মাণী নদী। জলপ্রবাহের কুলুকুলু শব্দ কানে আসছে। স্টেশন থেকে পঞ্চাশ কিমি দূরে এক মাঠের মধ্যে এক প্রাচীন এবং এক নবীন প্রজন্ম ক্লান্ত-বিধ্বস্ত হয়ে বসে পড়েছি। সারারাতের এই পরিভ্রমণ স্বপ্নের মতো মনে হল। আলো আর অন্ধকার এই দুইয়ের ভ্রান্তির শিকার আমরা।

ছোট গল্প - তেপান্তরের মাঠ || লেখক - ঈশিতা বিশ্বাস চৌধুরী || Short story - Tepantorere math || Written by Isita biswas Chowdhury



 তেপান্তরের মাঠ

          ঈশিতা বিশ্বাস চৌধুরী 




প্যানডেমিকের জন্যে অনেকদিন কোথাও যাওয়া হয়না তিতিরের। কি যে এক রোগ এলো অফিস কাছারি, স্কুল, কলেজ, মার্কেট এমনকি পার্কটাও বন্ধ। বাড়ি থেকে না বেরোতে পেরে খুব মন খারাপ ক্লাস সিক্সের তিতিরের। মা, বাবা দুজনেরই ওয়ার্ক ফর্ম হোম চলছে। কতদিন কোথাও না গিয়ে বাড়িতেই বন্দি জীবন কাটছে তাদের। সেই একঘেয়ে অনলাইন ক্লাস আর টিভিতে কার্টুন। কতদিন তার প্রিয় বন্ধুদের সাথে দেখা হয়না ।

আজ দুপুরে ফোনে গেম খেলার জন্য মার কাছে বকা খেয়ে মন খারাপ করে বসে আছে সে। তাদের ঊনত্রিশ তলার ফ্ল্যাটের সতেরো নাম্বার ফ্লোরের ব্যালকনিতে বসে এসব ভাবছিল সে। চোখের থেকে জল টপটপ করে গড়িয়ে পড়ছে। 


মায়ের মন দূর থেকে সবই লক্ষ করে। মেয়ের দুঃখের কারণ রুমা ভালোই বোঝে। তিতিরকে সুন্দর একটি ভ্যাকেশন উপহার দেবার জন্যে প্ল্যান করতে থাকে সে। তাই লকডাউনের শিথিলতা দেখা দিলেই একদিন ভোরে সবাই মিলে তারা বেরিয়ে পড়ে যে দিকে দুচোখ যায়। তিতির জানতে চায় "বাবা আমরা কোথায় যাচ্ছি?"

 বাবা বললেন, "এই কৃত্তিম শহর থেকে অনেক দূরে যেখানে শান্তি বিরাজ করে।"


তিতির তো এতদিন পরে বেরিয়ে ভীষণ আনন্দ পায় ।

বেশ কিছুটা আসার পর তারা একটা ছোট্ট ধাবায় এসে দাঁড়ালো ব্রেকফাস্ট করবার জন্য। খড়ের চাল এবং বাঁশ দিয়ে বানানো ছোট্ট দোকান। লালমাটি এবং রাস্তার দু'পাশে শাল সেগুনের বিশাল জঙ্গল । মা তাকে জিজ্ঞেস করল ,"কি খাবে তিতির ? দুধ কর্নফ্লেক্স পাওয়া যাবেনা, ব্রেড অমলেট খাবে কি? " ডিম খেতে সে ভালোবাসে তাই আপত্তি করল না। দোকানের আঙ্কেলটা কি সুন্দর গরম গরম ব্রেড-অমলেট বানিয়ে দিল তাদের। মা-বাবা সঙ্গে মাটির ভাঁড়ে চা খেলো।মাঝে মাঝে স্নিগ্ধ বাতাসে দু'ধারের জঙ্গল দুলে উঠছে। এক অদ্ভুত মর্মর ধ্বনি চারিপাশে। তিতির মুগ্ধ হয়ে প্রকৃতির শোভা দেখতে দেখতে খাবার খেতে থাকে। ব্রেকফাস্ট শেষ করে তারা গাড়িতে উঠে বসলো। এই রাস্তায় গাড়ি সেরকম চলে না মাঝে মাঝে দু একটা গাড়ি হুস করে বেরিয়ে যাচ্ছে তাদের পাশ দিয়ে। 

বেশ কিছুটা চলে আসার পর সে বললো,"আর কতক্ষন বাবা?" 

"এই তো এসে গেছি।" মা বলল ,"সামনেই লাভপুর বলে একটা জায়গা আছে সেখানে এক জঙ্গলের মধ্যে একটি রিসোর্ট গড়ে উঠেছে। যদিও সেটি সম্পর্কে খুব একটা তথ্য ইন্টারনেটে নেই তবে রিভিউ আছে খুব ভালো। তাই আমরা এখানে আসব স্থির করি। আশা করি তোমার ভালো লাগবে। তুমি তো আগে কোনদিন জঙ্গলে আসোনি তাই তোমাকে নিয়ে এলাম। এখানে জঙ্গলে হাতি, চিতাবাঘ নানারকম বন্যপ্রাণী, হরিণ বিভিন্ন রকম পাখি দেখতে পাবে । আমরা কাল একটা জিপ ভাড়া করে জঙ্গলটা ঘুরে দেখব । কি এখন খুশি তো ?"

তিতিরের আর অপেক্ষা সহ্য হয়না! কতক্ষণে গিয়ে রিসোর্টে পৌঁছাবে সেই কথা ভাবতে ভাবতে চঞ্চল হয়ে পড়ে সে। খানিকটা যাবার পর হাইওয়ে ছেড়ে একটি মেঠো রাস্তায় ঢুকে পরে তারা। তিতিরের বাবা সুবীর, জিপিএস অন করে রেখেছে । লালমাটির রাস্তা ধরে গাড়িটি জঙ্গলের ভিতর দিয়ে এগোতে থাকে। গাড়ি এসে দাঁড়ায় রিসোর্টের লোহার গেটের সামনে । দারোয়ান গেট খুলে দিলে তাদের গাড়ি এসে সোজা দাঁড়ায় একটি ঘাসের লনে। 

জঙ্গলের মধ্যে অবস্থিত রিসর্টটি অতীব সুন্দর। নাম 'প্রান্তিক রিসর্ট' । চারিদিকে বিভিন্ন নাম না জানা পাখিদের কলতান শোনা যাচ্ছে। সেরকম সূর্যালোক প্রবেশ করে না এখানে ।

 এখন দুপুরে বড় বড় গাছের ছায়া পড়ে অপূর্ব সুন্দর লাগছে চারপাশের পরিবেশ। পুরো অঞ্চল ঘিরে ছোট ছোট কটেজ বানানো। চারিদিকে কাঁটাতার দিয়ে ফেন্সিং করা। তাদের জন্য কটেজ আগে থেকে বুকড ছিল। সব ফর্মালিটি শেষ হলে, একটি ছেলে এগিয়ে এসে বলল ,

"স্যার আমার নাম নবীন, দিন আপনাদের জিনিসপত্র রেখে আসি।" গাড়ি থেকে জিনিসপত্র নিয়ে 

কটেজটি একদম জঙ্গলের প্রান্তে। কটেজের ঠিক পেছনে বিশাল জঙ্গল শুরু হয়ে গেছে। সুবীর জিজ্ঞেস করল, "রিসোর্ট কি ফাঁকা নাকি ভাই সেরকম কাউকে চোখে পড়ছে না?" "

"আমাদের কটেজটা কিছুদিন হল তৈরি হয়েছে, এখনও সেরকম কেউ এর সন্ধান জানেনা। তবে উইকেন্ডে ভালোই ভিড় হয়। আপনারা তো উইক ডেজে এসেছেন তাই একটু ফাঁকা ফাঁকা আর কি। তবে এই পরিবেশে খুব ভিড় হলে কি আপনাদের ভালো লাগতে স্যার?"

রুমা বলল, "হ্যাঁ সেটা অবশ্য ঠিক। আমরা শহর থেকে এত দূরে নিরিবিলিতে সময় কাটাবো বলে এসেছি, তবে আমরা ভালো সময় থেকে এসেছি বলতে হবে।"




তিতির এমন পরিবেশ দেখে আনন্দে আত্মহারা। সারা রিসোর্ট জুড়ে ছুটোছুটি করে বেড়াচ্ছে । কিন্তু এখন লাঞ্চের সময় হয়ে গেছে আর অতটা জার্নি করে এসে সবাই খুব ক্লান্ত। তারা খাবার অর্ডার করে দিলো। গরম গরম মাংসের ঝোল ভাত,আর স্যালাড। লাঞ্চ শেষ করে সুবীর, রুমা এবং তিতিরও শুয়ে পড়ল। রুমা এবং সুবীর গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হলেও তার চোখে ঘুম আসছেনা। বড় কাঁচের জানলা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে সে দেখল, ঘন জঙ্গলের মধ্যে পাখিরা ইতিউতি ওড়াউড়ি করছে। অনেক দূরে গাছের ঝোপের মধ্যে কি একটা সরে গেল। তিতিরের এখন মোটেই ঘুমোতে ইচ্ছা করছে না। মনে হচ্ছে এক্ষুনি বেরিয়ে জঙ্গলের মধ্যে ঘুরে আসে। কিন্তু মা বাবাকে ছাড়া একা একা যেতেও তার ভয় লাগে। তাই দরজা খুলে সে বারান্দায় এসে বসলো।তারপর সে চারপাশের সবুজের সমারোহ উপভোগ করতে লাগল। শহর থেকে বহুদূরে সবুজের এই জঙ্গলে চোখে যেন ধাঁধা লেগে যায় তার। হঠাৎ কার কণ্ঠস্বরে শুনে চমকে উঠে তিতির। সামনে নবীন নামে সেই ছেলেটি দাঁড়িয়ে সে বলল, "একি মামনি এখানে কি করছ? তোমার মা-বাবা কই? তুমি একা একা বারান্দায় বসে আছ?"



তিতির বলল, "আঙ্কেল আমার ঘুম আসছে না, মা-বাবা তো ক্লান্ত ঘুমিয়ে পড়েছে। তাই আমি এখানে বসে আছি। আচ্ছা ওই জঙ্গলের ভিতরে কি আছে? আমরা দেখতে যেতে পারবো?" 

নবীন চমকে উঠে বলল, "একা একা কোথাও যেওনা। আর এই জঙ্গলটা সেরকম নিরাপদ নয়। দেখছনা ফেন্সিং করা আছে? বন্যপ্রাণীরা ভিতর চলে আসতে পারে তাই জন্যে। সামনেই প্রতাপপুর অভায়ারণ্য, সেখানে জিপে করে তোমার মা বাবা তোমায় জঙ্গল থেকে ঘুরিয়ে আনবে 

পরে। এখনতো সাফারি বন্ধ হয়ে গেছে কাল সকালে যেও।"

"আমি এখন যেতে পারি না?"

"না না এখন যেও না। বরং রুমের ভেতরে গিয়ে বসো। মা বাবা জানলে চিন্তা করবে।"

সে বলল "আমি কোথাও যাবো না একটু এখানে বসে ভেতরে চলে যাব।" 

নবীন একটু ভেবে বললো বলল ,"তবে বস। কিন্তু তুমি জঙ্গলের মধ্যে যাবে না ,জঙ্গলে কিন্তু অনেক রকম বিপদ আছে।"

বলে নবীন নিজের কাজে চলে যায়। বিকেল বেলা ঘুম থেকে উঠে মা-বাবা গাড়ি নিয়ে বের হল।পাশেই একটা পুরনো জাগ্রত দেবীর মন্দির আছে সেটা দেখে এবং ফটোগ্রাফি করে সন্ধ্যেবেলায় বাড়ি ফিরল সকলে। কাল সকালে তারা জঙ্গল সাফারি করতে যাবে। 

রাত্রে শুয়ে শুয়ে এসব ভাবছে তিতির। হঠাৎ জঙ্গলের ভেতর থেকে অদ্ভুত এক শব্দ তার কানে এল। কোন বন্যপ্রানীর গর্জন ও মেঘের ডাকার শব্দ মিশে একটা অপার্থিব শব্দ তার কানে এলো। তিতির ভাবলো হয়তো কোন প্রাণী হবে তাই জন্য তো পুরো রিসোর্টটির ফেন্সিং করা আছে। কাল সকালে তাড়াতাড়ি গেলে কত বন্যপ্রাণীর দর্শন পাবে। এত কাছ থেকে জীবজন্তু দেখতে পাবে ভেবে, উত্তেজনায় তার রাত্রে ভালো করে ঘুমই হলো না। 

সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে সবাই মিলে রেডি হয়ে বেরিয়ে গেল জঙ্গল সাফারি উদ্দেশ্যে । হুডখোলা জিপে চড়ে তারা জঙ্গলের একটা বিশাল অংশ ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগল। নানান রকম প্রাণীর আনাগোনা সেখানে। কোথায় হরিন ছুটে বেড়াচ্ছে, কোথাও শূকর, বন্য মহিষ, গাছে হনুমানের দল এছাড়া অসংখ্য পাখপাখালি তো আছেই। আর জঙ্গলের ভেতরে একটি বিশাল ঝিল এবং সেখানে নানা পরিযায়ী পাখির সমাবেশ। দুচোখ ভোরে দেখতে লাগল এবং মা-বাবাকে নানা প্রশ্নবাণে জর্জরিত করতে লাগলো তিতির। এই জঙ্গলে চিতাবাঘও বাস করে কিন্তু সেগুলি থাকে কোর এরিয়াতে । তারা জনসমক্ষে সহজে আসেনা। সাফারির পর তারা রিসোর্টে ফিরে এলো। খেয়ে

সবাই দুপুরে বিশ্রাম নিচ্ছে ,তিতির মায়ের ফোন নিয়ে একটি কার্টুন সিরিজ দেখতে ব্যস্ত । বিকেলের সোনালী রোদ গাছগাছালির ফাঁক থেকে উঁকি মারছে। অদ্ভুত এক মন্মুগধকর পরিবেশ।। কাল রাতের সেই অদ্ভুত শব্দের কথা মনে পড়ল তার । ছোট্ট তিতিরের মনে হল আর এই জঙ্গলের মধ্যে নিশ্চয় অদ্ভুত কোনো প্রাণী আছে সেটাকে দেখতে হবে। সন্তর্পনে রুমের বাইরে আসে সে। সূর্যের সোনালী আভায় সারা আকাশ জুড়ে নানা
রঙের খেলা চলছে। লন ধরে হেটে যেতে যেতে কিচেনের সামনে এসে দাঁড়ালো সে। নবীন বিকেলের স্ন্যাকসের  আয়োজন করছে। তিতিরের সাথে দেখা হল, সে বলল "আঙ্কেল কাল রাতে জঙ্গলের ভেতর থেকে একটা অদ্ভুত শব্দ পেয়েছিলাম, সেটা কিসের বলতে পারো?" নবীনের হাসিমুখে একটু চিন্তার উদ্রেক হল, সে বলল ,"তোমায় তো বলেছি জঙ্গলের ভেতর অনেক বিপদ আছে, বন্যপ্রাণী আছে তাদের শব্দ হতে পারে।"

"আমি জঙ্গলের ভেতরে যেতে চাই। আমরা তো সাফারিতে জিপ থেকে নামতেই পারলাম না, একটু ঘুরে জঙ্গলটা দেখে চলে আসব। আর বাবা বলেছে চিতাবাঘ, হিংস্র বন্যপ্রাণী জঙ্গলের  'কোর' এরিয়াতে থাকে। নবীন একটু বিরক্ত হয়ে বলল ,"তোমায় বলেছি না জঙ্গলের ভেতরে যাবে না। তারপর ফিসফিস করে বলল ,"জঙ্গলের ভিতরে এক বিশাল তেপান্তর মাঠ আছে। একবার সেখানে গেলে কেউ আর ফিরে আসে না। বুঝলে? অনেক বাচ্চারা সেখান থেকে হারিয়ে গেছে। তুমি ভুলেও সেখানে যাবার চেষ্টা করবে না। এক্ষুনি রুমে যাও, মা-বাবার সাথে থাকবে সবসময়।"

বলে নিজের কাজে মন দেয়  নবীন। বেড়াতে এসে কারো কাছে বকা খেতে হবে এ কথা স্বপ্নেও ভাবেনি সে। খুব অভিমান হলো নবীনের ওপর। ওদিকে মা-বাবা এখনো ওঠেনি। কিন্তু তিতিরের নিজের কৌতুহল নিরসন করতে ও নিজেকে সাহসী প্রমান করার উদ্দেশ্যে একবার জঙ্গলের ভেতরে যাওয়ার খুব ইচ্ছা তার। 

3


তিতির সব কিছু কে এক্সপ্লোর করতে ভালোবাসে। এই বয়স টাই এমন। তাই মনের ইচ্ছে দমন করতে না পেরে  সবার অলক্ষ্যে ফেন্সিং দিয়ে ঘেরা রিসোর্টের ঘেরাটোপ পেরিয়ে জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে একাই হাঁটতে শুরু করে সে । মুক্তির স্বাদই আলাদা। আবছা সোনালী রঙে রাঙা বিকেলের আকাশ। জঙ্গলের মধ্যে কত নাম না জানা জংলি ফুলের সুবাস। গাছে গাছে পাখিরা বাসায় ফিরছে। আচমকা অদূরে কাল রাতের সেই কান ফাটানো আওয়াজটা শুনতে পায় তিতির।  সূর্য অনেক্ষন দিগন্তের অন্তরালে চলে গেছে। হালকা এক  লালিমা আকাশে বর্তমান। চারিদিক সুনসান। নির্জন জঙ্গলে সেই চিৎকার কি অদ্ভুতই না শোনালো।  তিতির ভয়ে ভয়ে এগিয়ে দেখল সামনে একটি  দিগন্ত বিস্তৃত খোলা মাঠ। সবুজ ঘাসে ঢাকা। মাঠটি কোথায় শুরু বা শেষ কিছুই বোঝা যাচ্ছেনা। এটাই কি তবে তেপান্তরের মাঠ? চমকে ওঠে সে। হঠাৎ তার মনে হল দূরে কে যেন তাকে ডাকছে , "এদিকে এসো! আমরা তোমার জন্য অপেক্ষা করছিলাম কবে থেকে! এসো এসো।" 

সম্মোহিতের মত এগিয়ে যায় ছোট্ট তিতির। আধো অন্ধকারের মধ্যে ধীরে ধীরে মিশে যায় সে।


ওদিকে  রুমা ও সুবীর উঠে বসে দেখে তিতির ঘরে কোথায় নেই। সমগ্র রিসোর্ট তন্নতন্ন করে খুঁজেও তিতিরকে কোথাও পাওয়া যায়না। রুমা  কাঁদতে শুরু করে দিয়েছে। সুবীর এবং রিসোর্টের বাকি লোকেরা হতবাক। পুলিশ এসে ছবি সহ বাকি সব তথ্য নিয়ে গেছে। তাকে খুঁজে বের করার জন্য তল্লাশি চলছে। তবে আসে পাশের সব জায়গায় খোঁজা হলেও তার চিহ্ন মাত্র পাওয়া যায়নি। পুলিশ রিসোর্টের লোক নিয়ে জঙ্গলের আসে পাশে খোঁজ চালাতে গিয়েছে অনেকক্ষণ। তিতিরের কোন খোঁজ নেই। 

রাত্রি নটা বাজে। রুমা ও সুবীর ঘরে চুপ করে বসে আছে। এরকম আনন্দ করতে এসে যেরকম চরম বিপদের সম্মুখীন হবে তা তারা স্বপ্নেও ভাবেনি। আচমকা হন্তদন্ত হয়ে ঘরের মধ্যে ঢুকে পরে নবীন। বলে ,"স্যার আমি জানি দিদিমণি কোথায় আছে। আমি খুঁজতে সেখানে গিয়েছিলাম কিন্তু আর তাকে বোধ হয় আর খুঁজে পাওয়া সম্ভব নয়।" সুবীর চেঁচিয়ে উঠলো,"কী বলছো কী নবীন?  ও কোথায় আছে? আমাদের এই মুহূর্তে জানাও। নাহলে আমি তোমাকে পুলিশে দেব। নির্ভীক কণ্ঠে নবীন বলল "পুলিশ কিছু করতে পারবে না স্যার, আমি আপনাদের আগেই বারণ করেছিলাম ওই জঙ্গলের মধ্যে কাউকে না যেতে। আমাদের এই অঞ্চলে এই জঙ্গল পেরিয়ে এক বিশাল মাঠ আছে যাকে আমরা বলি তেপান্তরের মাঠ। সেখানে কেউ গেলে আর কোনদিন ফিরে আসে না। রুমা রেগে বলল "তুমি আমাদের সাথে পুলিশের কাছে  চলো! কোথায় সেই মাঠ দেখাও আমরা খুঁজ বের করব।"

নবীন কাঁদো কাঁদো স্বরে বলল,"ম্যাডাম বোঝার চেষ্টা করুন! আমি এবং পুলিশের টিম মিলে  সমস্ত জঙ্গল খুঁজেছি। চারপাশে খুঁজে দেখা হয়েছে কিন্তু দিদিমণিকে খুঁজে পাওয়া সম্ভব হয়নি। কারণ তিনি এখন ভিনগ্রহীদের দেশে। এভাবেই আমি আমার ছোটভাই কেও হারিয়েছি। তাইতো আমি অনেকবার বারণ করলাম দিদিমণিকে ওদিকে যেতে, কিন্তু আমার কোন কথাই শুনলো না সে।"

রুমা একটু নরম হয়ে বলল ,"নবীন আমাদের একমাত্র মেয়ে কোথায় হারিয়ে গেছে।  আমাদেরকে নিয়ে চলো। ওকে খুঁজে না পেলে আমাদের আর বেঁচে থাকার কোন মানে হয় না।আমিও জঙ্গলে চলে যাব।"

"ঠিক আছে চলুন। তবে আমি আপনাদের মেয়েকে আমি কিভাবে ফিরিয়ে দেবো জানিনা। সম্ভব হলে আমার ভাইকেও ফিরিয়ে আনতাম। পারিনি। আপনারা চলুন বুঝতে পারবেন।"

একটা টর্চ সঙ্গে নিয়ে তিনজনে মিলে গভীর জঙ্গল পেরিয়ে দৌড়াতে দৌড়াতে এগিয়ে চলল। চারপাশে বন্যপ্রাণী এবং রাত পাখিদের ওড়াউড়ির শব্দ। তারাও যেন জঙ্গলের মধ্যে মানুষের এই অনধিকার প্রবেশে ভীষণভাবে বিরক্ত। অনেকটা পথ পেরিয়ে তারা এসে পৌছালো একটি খোলা মাঠের ভেতর। আজ পূর্ণিমা, তাই চারিদিক আলোয় ধুয়ে যাচ্ছে। সেই আলোয় বোঝা গেল মাঠের মাঝখানে একটি গোল বৃত্ত সৃষ্টি হয়েছে। কোন  প্রকান্ড এবং ভারী ধাতব জিনিস যেন সেখানে নেমে ছিল। তাতেই ওরকম একটি অদ্ভুত আকার সৃষ্টি হয়েছে।  

নবীন অত্যন্ত উত্তেজিত হয়ে বলল,"দেখছেন ম্যাডাম ঘাসের মধ্যে যে গোলাকার বৃত্তের মত চিহ্নটি দেখা যাচ্ছে ভালো করে লক্ষ্য করুন, আপনারা হয়তো বিশ্বাস করবেন না। কিন্তু এই অঞ্চলে ভিনগ্রহীদের আনাগোনা বহু বছর ধরে চলে আসছে। জানিনা কেন তারা আমাদের এই জঙ্গল অধ্যুষিত প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে বেছে নিয়েছে। হয়তো নিজেদের লুকিয়ে রাখার সুবিধার্থে। 

অনেক ছোটবেলায় আমার ভাই ঠিক এই অঞ্চল থেকে এক পূর্ণিমার রাত্রিতে হারিয়ে যায়। তাকে আর কোনদিন খুঁজে পাওয়া যায়নি। প্রত্যেকদিন রাত্রে আমি এই জঙ্গলে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখতাম যে ভাই ফিরে আসে কিনা। একদিন পূর্ণিমার সন্ধ্যেবেলায় আকাশের চাঁদ ওঠার পর দেখি এক অদ্ভুত শব্দ করে একটি বৃত্তাকার যন্ত্রের মতো বিশাল আকাশযান নেমে আসছে আমাদের এই মাঠের মধ্যে। আমি দূরে লুকিয়ে ছিলাম বলে তারা আমার উপস্থিতি টের পায়নি। তারপর থেকে প্রত্যেক পূর্ণিমায় এবং যখন আকাশে চাঁদ থাকে তখন ওরা এই প্রান্তরে পদার্পন করে সবার অলক্ষ্যে ।

 আমি এখানে  মাঝে মাঝে আসি ভাইয়ের খোঁজে,  কিন্তু তাকে কোনদিনই আর দেখতে পাইনি। সে বহুকাল আগের কথা, জানিনা সে বেঁচে আছে কিনা। সেই জন্যই আমার এই  রিসোর্ট কাজ নেওয়া। এখান থেকে আমি সহজেই  ভিনগ্রহের প্রাণীদের গতিপ্রকৃতি লক্ষ্য করতে পারি।একবার পূর্ণিমার চাঁদের আলোতে আমি তাদের দেখেছিলাম। বিশালাকায় দেহ, অত্যন্ত লম্বা। দুটি কালো বড়ো চোখ এবং কৃশকায় দেহ। আমি বিশেষ পড়াশোনা জানিনা কিন্তু তারা যে এই গ্রহের বাসিন্দা নয় এটুকু বুঝতে আমার এক মুহূর্ত দেরি হয়নি। তারা অন্য ভাষায় কথা বলে, আমাদের দেশের ভাষা তারা বোঝে না। তবে তারা আমাদের ভাষা নকল করতে পারে। আমার ধারণা আজকে সন্ধ্যেবেলায় দিদিমণি হাঁটতে হাঁটতে মাঠে এসে পড়ে এবং কোনভাবে সেই ভিনগ্রহীদের চোখে পড়ে যায তার পর  থেকেই সে নিরুদ্দেশ।"


রুমা চিৎকার করে কেঁদে ওঠে, "এটা হতে পারে না এ যে অসম্ভব!  তুমি কি বলছ? তোমার মাথা ঠিক আছে নবীন? না মজা করছো আমাদের সাথে?" নবীন আবার বলল, "গ্রামের অনেক মানুষ এই অঞ্চল থেকে নিরুদ্দেশ হয়ে যায় তাদের আর কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি। সত্যি কথা বলতে বিশেষ কেউ এ ব্যাপারে জানেও না। তারা একে তেপান্তরের মাঠ বলে আখ্যা দিয়েছে।

কিন্তু আসল সত্যিটা সকলেরই অজানা। তাই তারা এই জনহীন প্রান্তরে বিশেষ আসেনা। যারা হারিয়ে গেছে তাদের কেউই আর ফিরে আসেনি। এই অলৌকিক ঘটনা আমিও কাউকে বলিনি কাউকে  বললে বিশ্বাসও করবে না। পুলিশ প্রশাসনও তো নয়ই ।


সুবীর এতক্ষণ ধরে সমস্ত কথা শুনছিল, সে নবীনের হাত ধরে টেনে বললো, "চলো তুমি, ও যতসব বাজে কথা বলছে, ওই কোথাও লুকিয়ে রেখেছে তিতিরকে, এখন এসব বলে আমাদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। এক্ষুনি পুলিশের কাছে নিয়ে গেলে এমন মার মারবে, সব কথা বেরিয়ে যাবে।" রুমা বলল,"হ্যাঁ তাই চলো, একটা কথাও বিশ্বাসযোগ্য নয় ওর। আমাদের অসহায়তার সময় মজা করতে লজ্জা করছেনা তোমার?"

নবীন মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে রইল। সে বলল,"আমি জানতাম আপনারা এটাই বলবেন।"


হঠাৎ এক অপার্থিব শব্দ সবার কানে এলো। মাঠের মধ্যে বৃত্তাকার নীল আলো চোখে পড়ল সবার। আকাশের দিকে তাকাতেই তারা দেখল একটি গোলাকার বিশাল ধাতব বস্তু চক্রাকারে নেমে আসছে এবং তার থেকে এক অদ্ভুত নীলচে আলোক রশ্মি নির্গত হচ্ছে। সাথে সাথেই বইতে শুরু করে প্রবল হাওয়া। সুবীর এবং রুমা স্থানুর মতো দূরে দাঁড়িয়ে অবাক হয়ে দেখল। নিজের চোখকে যেন তারা বিশ্বাস করতে পারছিলোনা। মাটিতে আস্তে আস্তে নেমে আসার পর  সেই ধাতব আকাশযানের একটি অংশ শাটার এর মতন সরে গেল। সেখান থেকে অদ্ভুত দর্শন ভিনগ্রহীরা নেমে এসে আকাশের চাঁদের দিকে হাত বাড়িয়ে তাকিয়ে কিছু বলতে লাগলো। সুবীর এবং রুমা দেখে কি করবে স্থির করতে পারল না। হতভম্ভ রুমা ছুটে গেল সেই ভিনগ্রহীদের যানের দিকে। পেছন পেছন সুবীরও ছুটল। এতক্ষণ যে কথা তারা বিশ্বাস করছিল না মুহূর্তেই সেই চিন্তা ভুলে নিজের একমাত্র মেয়ের সন্ধানে দুজনে  ছুটে গেল সেদিকে। দুজনেই কিছু না ভেবে উঠে পড়ল সেই স্পেসশিপে। ভিনগ্রহীরা সেই দৃশ্য দেখে দ্রুত  উঠে স্পেসশিপটির দরজা বন্ধ করে দিল। মুহুর্তের মধ্যে বিকট আওয়াজ করে সেই আকাশ যান উড়ে গেল দূর কোন অজানা গ্রহের উদ্দেশ্যে। একটু পরে সেই নীল আলো আস্তে আস্তে মিলিয়ে গেল মহাশূন্যের অন্তরালে।   তেপান্তরের মাঠে অশ্রুসজল চোখে নির্বাক দর্শকের মত দাঁড়িয়ে রইল নবীন ।

পশ্চিমবঙ্গে বন্ধন ব্যাংকে প্রচুর কর্মী নিয়োগ || WB Bandhan Bank Recruitment 2022 || Bandhan Bank Job Vacancy 2022


 



##রাজ্য জুড়ে বন্ধন ব্যাংকে প্রচুর কর্মী নিয়োগের হবে। বিজ্ঞপ্তি ইতিমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে। বেকার যুবক যুবতীদের জন্য এটা একটা বড় সুযোগ। তাছাড়া এখানে চাকরি পাওয়া সোজা। শুধু বায়োডাটা ও ডকুমেন্ট জমা মাধ্যমেই আপনার চাকরি হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা। লিখিত পরীক্ষা দিতে হয় না এখানে। সরাসরি নিয়োগ হয়। বর্তমানে বন্ধন ব্যাংকে কর্মীর প্রয়োজন প্রচুর পরিমাণে। তাই নিয়োগ হচ্ছে প্রতিনিয়ত। শুধুমাত্র উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করলেই এই ব্যাংকে চাকরির জন্য আবেদন করার সুযোগ পাবেন। শিক্ষাগত যোগ্যতা, বয়সসীমা, আবেদন পদ্ধতি বিস্তারিত তথ্য নীচে দেওয়া হল--




মোট শূন্য পদ - ৩০টি



কোন কোন পদে নিয়োগ হবে:


বিভিন্ন যোগ্যতায় বিভিন্ন পদ রয়েছে। পদ গুলি হল-

Operation And Office Staff.




শিক্ষাগত যোগ্যতা: অবশ্যই উচ্চমাধ্যমিক পাস বা গ্রাজুয়েশন পাস হতে হবে।


বয়স- বয়স হতে হবে ১৮ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে।


বেতন - মাসিক ১৪,৫০০ থেকে ২১,০০০ টাকা পর্যন্ত বেতন দেওয়া হবে।


কাজের ধরন: এটা একটি পার্মানেন্ট চাকরি। 




আবেদন পদ্ধতি: অনলাইনের মাধ্যমে আবেদন করতে পারবেন।


 

 

কীভাবে আবেদন করবেন :

Online- আপনি নিজেই মোবাইল এর মাধ্যমে আবেদন করতে পারবেন। আপনি কেবলমাত্র ফোন করেও আবেদন করতে পারবেন। এছাড়াও আপনি ইমেলের মাধ্যমেও আবেদন করতে পারবেন। ইমেইল এ আপনার বায়োডাটা পাঠিয়েও আবেদন করতে পারবেন।


যে নম্বরে আপনি যোগাযোগ করবেন তা হলো-


৯৮৩১৪২০৮৭৫


এছাড়া যে ইমেল আইডিতে আপনি বায়োডাটা পাঠাবেন তা হলো-



bandhanbankdepatment@gmail.com




গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট-


এই চাকরিতে আবেদনের জন্য যে নথিপত্রগুলির প্রয়োজন সেগুলি হলো-


১) শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রমাণপত্র

২)বয়সের প্রমাণপত্র 

৩)নিজের সাক্ষর

৪)বাসস্থানের প্রমাণপত্র

৫)পরিচয়পত্র (আঁধার কার্ড, ভোটার কার্ড)

৬) কাস্ট সার্টিফিকেট (যদি থাকে)

৭) পূর্ববর্তী কাজের অভিজ্ঞতার প্রমাণপত্র (যদি থাকে)


এছাড়া যদি আরও কিছু জানতে চান আপনাকে অফিসিয়াল নোটিশটি ডাউনলোড (Download) করতে হবে। অফিসিয়াল নোটিশ ডাউনলোডের লিঙ্ক নিম্নে সবার শেষে দেওয়া আছে।




নিয়োগ পদ্ধতি: নিয়োগ করা হবে বায়োটাডেটার উপর ভিত্তি করে । কোনরকমের লিখিত পরীক্ষা ছাড়াই কেবলমাত্র ইন্টারভিউয়ের মাধ্যমে নিয়োগ করা হবে। আপনি যদি ইন্টারভিউয়ে সিলেক্ট হন তাহলে আপনাকে সরাসরি ট্রেনিংয়ের জন্য ডাকা হবে। 

 ট্রেনিংয়ের চান্স পাওয়া মানে কনফার্ম চাকরি পাওয়া। ট্রেনিং শেষে আপনাকে সরাসরি জয়েনিং করানো হবে। 





আবেদন মূল্য: সম্পূর্ণ বিনামূল্যে আবেদন করুন



OFFICIALWEBSITE: 

Click here 🔴



________________________________________


চাকরি সংক্রান্ত আপডেট পেতে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন




Telegram group-


https://t.me/Jobnewsgovtandpraivate




Whatsapp group-



https://chat.whatsapp.com/FOyQc45Ny1A7acqIc9mKdl

Tuesday, October 11, 2022

উপন্যাস - পদ্মাবধূ || বিশ্বনাথ দাস || Padmabadhu by Biswanath Das || Fiction - Padmabadhu Part -22


 

এবার ভয় আর নেই। সাহস নিয়ে কথা বলতে শিখেছি। অন্যায়ের প্রতিবাদ করার মতো ক্ষমতা অর্জন করেছি। ভয় আর কাউকেই করি না, করবো না। প্রয়োজন হলে ওর হাতেই মরবো তবু অন্যায়কে আর প্রশ্রয় দেবো না। শ্যামলীদির কাছে গিয়ে দেবীবাবুর কথা বললাম। তার আসার সময় হয়ে গেছে। যদি আমরা উভয়েই যেতাম তাহলে ভালো হতো না কি? কারণ যদি বাবুগুন্ডা মাথানাড়া দিয়ে উঠে ও শ্যামলীদিকে একা পেয়ে কিছু করে বসে।


 শ্যামলীদি আমার কথা কেড়ে নিয়ে বলল, কোন ভয় নেই পদ্মা, আমি মরিয়া হয়ে গেছি। কিছু ঘটবার পূর্বে কোন কান্ড না করে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ব না। তুই তৈরী হয়ে নে, দেবীবাবু হয়তো এসে পড়ল। সত্যিই দেবীবাবুর ট্যাক্সির আওয়াজ পেলাম।

 ট্যাক্সি হতে নেমে ধীরে ধীরে এগিয়ে এসে কাছে দাঁড়ালো। মুখখানি দেখে তাকে চিন্তাকূল মনে হল। আমি বসার জায়গায় গিয়ে নম্র কণ্ঠে বললাম, আপনাকে ভীষণ চিন্তিত মনে হচ্ছে ?

 দেবীবাবু ধীর কণ্ঠে বললেন, ভাবছি আপনাদের কথা। গত রাত্রের ঘটনা শুনলাম। 
দেবীবাবুর কথা শুনে হাসিমুখে বললাম, ও এই কথা? তাছাড়া আমাদের নিয়ে চিন্তা করেই বা কি করবেন? মনকে ভারাক্রান্ত করা ছাড়া করার কিছু নেই। আমার ডিউটি ফুরিয়ে গেলে আমাকে তো বিদায় নিতে হবে। আমাদের কি মনে রাখবেন?

দেবীবাবু নীরব থাকলেন। জানি না তিনি আমাদের দুঃখে কতখানি কাতর হয়েছেন। বিলম্ব না করে তার সাথে নার্সিংহোমে উপস্থিত হলাম।

ময়না আমাকে দেখে কেঁদে উঠল। বলল, মা তুমি এতো দেরী করলে কেন? তোমার জন্য মন আমার একেবারে ভালো লাগে না। ওকে বুকে চেপে বললাম, আমার উপর রাগ করিস না মা। বাড়ীর কাজ সারতে অনেক দেরী হয়ে গেল।

ময়না আবদারের গলায় বলল, তোমার সাথে আমি বাড়ি যাবো মামনি। অবোধ শিশুকে কি বলে যে প্রবোধ দেবো তার ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না। তবুও বেদনা ভরাক্রান্ত হৃদয়ে চোখের জলকে কোন রকমে আটক করে বললাম, এখানে আর আর রাখবো না মা। দিন কয়েক পরেই তোকে বাড়ীতে নিয়ে যাবো।

কোলে নিয়ে তাকে আদর করছি, এমন সময় ডাঃ দাস এসে বললেন, মিসেস রায় আপনার মেয়ে সম্পূর্ণ সুস্থ। আশা করছি দিন কয়েক পরে ছুটি দিতে পারবো।

বুকটা আমার কেঁপে উঠল ডাক্তারবাবুর ডাক শুনে। তবে কি দেবীবাবু - না, না এ হতে পারে না, এ কোনদিনই সম্ভব নয়। ময়নার সাথে শুধু অভিনয় করছি, ছলনা। করছি। কেন আমি ময়নার মা হতে যাবো? বামন হয়ে চাঁদে হাত! তবুও বুকটা কেমন যেন টনটন করে উঠল। বুকের অসহ্য যন্ত্রণা নিয়ে এক জায়গায় চুপ করে বসে থাকলাম। আপনা আপনি চোখ দুটো জলে ভরে গেলো।

কোন প্রকারে সামলে নিয়ে ময়নার কণ্ঠস্বরে, মা তুমি কাঁদছো ? তৎক্ষণাৎ চোখের জল মুছে বললাম, নারে কাঁদবো কেন? আরো গভীর আবেগে তাকে জড়িয়ে ধরলাম। একটু পরে দেবীবাবু এসে হাজির হলেন।

ময়নার ঠোটে ঠোট লাগিয়ে চুমু খেলাম। দেবীবাবু আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বললেন, এবার ওকে কোল হতে নামিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিন, হয়তো ডাক্তারবাবু এসে পড়বেন। যাও মামণি, তোমার বিছানায় শুয়ে পড়গে। মায়ের কোলে আর কতক্ষণ থাকবে?

দেবীবাবুর গম্ভীর মুখ দেখে আমর কেমন যেন সন্দেহ হল। হয়তো ময়নার চুমু খাওয়া পছন্দ করেননি। তবে কি দেবীবাবু আমাকে ঘৃণার চক্ষে দেখেন? আমাকে কি অবজ্ঞা করেন? তৎক্ষণাৎ মনের মধ্যে নিজের সত্ত্বাকে খুঁজে বের করবার চেষ্টা করলাম।

ময়নাকে চুমু খাওয়া আমার উচিত হয়নি। সে অধিকার আমার নেই। ওটা অনধিকার হস্তক্ষেপ। দেবীবাবু কেন মেনে নেবেন সেটা? তার কাছে আমি তার মানসিক রোগগ্রস্থ মেয়ের রোগ উপশমের জন্য মায়ের অভিনয় করার জন্য এসেছি। তিনি যা বলবেন সে মত করতে হবে। ময়নার সাথে তার মায়ের ভূমিকায় অভিনয় করায় চুক্তিবদ্ধ আমি। তাহলে কেন ওর প্রতি আমার মায়ার টান! ময়নার যে মা নই, তা ভালোভাবেই জানি। দেবীবা একজন সম্ভ্রান্ত বংশের ব্যাক্তি, তার আভিজাত্যপূর্ণ জীবনের সঙ্গে আমারপতিতাবৃত্তির জীবনের কোন সাদৃশ্য নেই। অন্তরের সুপ্ত কামনা বাসনাকে প্রকাশ না করে ময়নাকে বিছানায় শুইয়ে বাইরে এলাম। ময়নার ছল ছল চোখ আমার অন্তরের মাতৃত্বকে এক মুহুর্তের জন্য জাগিয়ে দিল।

 নিরালায় এসে চোখের জলে ভাসতে থাকলাম। বার বার অতীতের স্মৃতিচারণ করতে লাগলাম। কখন যে দেবীবাবু আমার পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন আমার খেয়াল ছিল না। তিনি আমার পিঠে হাত রেখে বললেন, ময়নার কাছ হতে যে চলে এলেন?

 দেবীবাবু কোনদিন আমার দেহ স্পর্শ করেননি। কেন তিনি আমার পিঠে হাত রাখলেন! তবে কি আমার উষর মরুময় রুক্ষ জীবনে শ্যামল মরূদ্যান হয়ে দেবীবাবু আমার জীবনকে শ্যাম-সমারোহে ভরিয়ে তুলবেন? এ কি আমার স্বপ্ন! এ কি আমর অলীক কল্পনা! কখনও কি আমার এই স্বপ্ন বাস্তবে রূপায়িত হবে না। মরা গাঙে জোয়ারের প্লাবন কি আসবে না। শীতের ঝরাপাতা গুলোর স্থানে আমার মনতরু কি বাসন্তী পরিবেশে সুশোভিত হবে না। না-না, এ আমার ভুল ধারণা। কেন যে আমার মনে এরকম এলোমেলো কথা আসে বুঝি না।

 কোন প্রকারে চোখের জল মুছে বললাম – আমাকে বাড়ীতে পৌঁছে দেবেন? দেবীবাবু ব্যথিত স্বরে বললেন, আমার উপর রাগ করলেন বুঝি? ম্লান হেসে বললাম, রাগ করব কেন? তাছাড়া অভিমান করে কি লাভ ? আমি বক্তী যাবো।

 নিশ্চয় যাবেন। আপনাকে কোনদিনই তো জোর করে আটকে রাখিনি। আপনার সাথে আমার যেরূপ কথা, আপনি সেইরূপ কাজ করবেন। তবে আমার অনুরোধ, বিকেলে আসতে ভুলবেন না। কারণ আনতে যাবার সময় হবে না, বিশেষ কাজে বাইরে যাবো।

 দেবীবাবুকে কথা দিয়ে ওর সাথেই বস্তীতে উপস্থিত হয় শ্যামলীদির মুখের দিকে তাকিয়ে একটুখানি যে অবাক হলাম না তা নয়। সে তার চোখ দুটোকে জবাফুলের মতো লাল টকটকে করেছে। মনে হলো কারো সঙ্গে যেন ঝগড়া করেছে।

 ধীরে ধীরে কাছে এসে জিজ্ঞেস করলাম, আজ আবার কার সাথে ঝগড়া করলে দিদি ?

 আমার আদরি মাসীর সাথে। তাছাড়া আর কার সাথে ঝগড়া করবো? এখানে আমার শাশুড়ীও নেই, ননদও নেই, সতীনও নেই যে ওদের সাথে ঝগড়া করবো। আদরী মাসী আমাকে জ্ঞান দিতে এসেছিলো। তা থাক, হ্যাঁরে পদ্মা, বাঁ চোখটা নাচছে কেন বল তো? শুনেছি, বাঁ চোখ নাচলে কিছু পাবার আশা থাকে।

 আমাদের পাওনা তো পেয়ে গেছি শ্যামলীদি, নতুন করে আবার কি পাবো ? সহসা বিদ্যুৎ বেগে একটা দশ বারো বছরের ছেলে আমাদের কাছে এসে দাঁড়ালো।

ওর হাতে একটা কাগজের টুকরো। শ্যামলীদির দিকে বাড়িয়ে দিতে শ্যামলীদি হোঁ মেরে কাগজটা হাতে নিয়ে দেখলো ওটা পত্র। শিবাজীদা পত্রটা লিখেছে হিন্দীতে লেখা। পত্রের সারাংশ হলো আজ সকালে আমাদের হিতৈষী বন্ধুকে পূর্ব নির্দিষ্ট ঠিকানায় আটক রেখেছে। আমরা আজ সন্ধ্যায় অর্থাৎ সাড়ে সাতটার মধ্যে যেন হাজির হয়ে যাই।

 সেই ঠিকানায় যাবার নক্সা করে দিয়েছে। শ্যামলীদির মুখটা ক্রমশঃ খুশীতে ভরে উঠল। এক সময় আমাকে জাপটে ধরে বলল, এবার আমার আশা পূর্ণ হবে পদ্মা। আজকে আমার আসল রূপ দেখবি। দীর্ঘদিন প্রতীক্ষার পর আমার দীর্ঘদিনের পাথরচাপা বেদনাকে হৃদয় থেকে মুক্তি দিতে পারব।

 সে ভেতরে প্রবেশ করে তার লুকিয়ে রাখা বেতের চাবুকটা বের করে তৈল নিষিক্ত করে আমাকে বলল-আজ রাতে একে ব্যবহার করতে হবে, অনেকদিন পর একে কাজে লাগাবো। বুঝতে পারলাম ওটা কার পিঠে বসবে। মনটা একটু আনন্দে দুলে উঠল, একারণে অনেক দিন পর আমার উপকারী বন্ধু রন্টুদাকে দেখবো বলে। সে কি উপকারই না করেছে আমার!

 অতীতের স্মৃতির পাতা যখন উল্টে চলেছি, তখনই আদরি মাসীর কণ্ঠস্বরে কল্পনার রাজ্য থেকে রূঢ় বাস্তবে ফিরে এলাম। আবার এসেছে বুড়ি! লজ্জাও নেই তার!

 শ্যামলীদিকে বলল, আজকের মতো কথা রাখিস মা। ভম্বলবাবু আমার পুরানো মক্কেল, তোকে ভীষণ পছন্দ করে। আমাকে বার বার বলে গেছে যদি তোকে না পেয়ে থাকে তাহলে আমার অনেক ক্ষতি হবে। তোর হাতে ধরে বলছি আমার মুখ রাখিস মা।

 শ্যামলীদি মুখ গম্ভীর করে বলল, আজ আর কারো বাপের হিম্মৎ নেই যে আমার পথে কাঁটা ফেলবে। আর কেউ যদি সে চেষ্টা করে, তাহলে সে যোগ্য জবাব পাবে। সন্ধ্যায় আমাকে বেরুতেই হবে। তাই সাত ঘন্টা আগে বলে রাখছি, যদি কেউ কোন রকম প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে তাহলে তাকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেবো। আদরী মাসী ভয়ে পিছিয়ে গেলো।

Monday, October 10, 2022

রাজ্য সরকারের হাউস ফাদার এবং হাউস কিপার পদে নিয়োগ, প্রতিটি জেলা থেকেই আবেদন করতে পারবেন || bankura.gov.in || WB govt House father and House keeper post Recruitment 2022 || House Father and Housekeeper Recruitment in Bankura


 



রাজ্য সরকারের নতুন নিয়োগ। সম্প্রতি বাঁকুড়া জেলার ডিস্ট্রিক্ট চাইল্ড প্রটেকশন ইউনিটের তরফ থেকে হাউস ফাদার এবং হাউস কিপার পদে কর্মী নিয়োগ হতে চলেছে।
বাঁকুড়া জেলাতে নিয়োগটি হলেও এই চাকরির জন্য পশ্চিমবঙ্গের সমস্ত জেলার চাকরি প্রার্থীরাই আবেদন করার সুযোগ পাবেন।
প্রথমেই বলে রাখি এটা শুধু মাত্র পুরুষরাই আবেদন করার সুযোগ পাবেন। এটা একটি চুক্তি ভিত্তিক পোস্ট। আবেদন করার সুযোগ পাবেন শুধু মাত্র অনলাইন এ।
কিভাবে আবেদন করতে পারবেন, শিক্ষাগত যোগ্যতা আপনার কি লাগবে, আপনার বয়স সীমা কত লাগবে, আপনি বেতন কত পাবেন, মোট শূন্য পদ কতগুলো, নিয়োগ পদ্ধতি টি কি কিভাবে হবে ইত্যাদি সমস্ত কিছুর আলোচনা নীচে করা হল।




নোটিশ নম্বরঃ 537/DCPS/BNK

নোটিশ প্রকাশের তারিখঃ 20.09.2022


আবেদনের মাধ্যমঃ শুধু মাত্র অনলাইনের মাধ্যমে আবেদন করার সুযোগ পাবেন।


নিয়োগের তথ্য (Post Details)-
(1) পদের নামঃ হাউস ফাদার (House Father) 

বেতনঃ  প্রতিমাসে 12,100 টাকা।

শিক্ষাগত যোগ্যতাঃ  উচ্চ মাধ্যমিক বা তার সমতুল্য কোন পরীক্ষা পাশ করতে হবে। এছাড়াও কমপক্ষে 3 বছরের জন্য এই কাজের অভিজ্ঞতা থাকা বাধ্যতামূলক।


বয়সসীমাঃ বয়স 21 থেকে 40 বছরের মধ্যে হওয়া বাঞ্ছনীয়।   SC/ST/OBC প্রার্থীরা সরকারি নিয়মে ছাড় পাবেন। 

মোট শূন্যপদঃ 1 টি।


(2) পদের নামঃ হাউস কিপার (Housekeeper) 

বেতনঃ  প্রতিমাসে 12,000 টাকা ।

শিক্ষাগত যোগ্যতাঃ  মাধ্যমিক বা তার সমতুল্য কোন পরীক্ষা পাশ করতে হবে।

বয়সসীমাঃ  বয়স 18 থেকে 40 বছরের হওয়া বাঞ্ছনীয়। SC/ST/OBC প্রার্থীরা সরকারি নিয়মে ছাড় পাবেন। 

মোট শূন্যপদঃ 1 টি।


নিয়োগ পদ্ধতিঃ
প্রার্থীদের নিম্নলিখিত পর্যায়ে নিয়োগ করা হবে।

লিখিত পরীক্ষা– 80 Marks
ইন্টারভিউ– 20 Marks

লিখিত পরীক্ষার সিলেবাসঃ
English – 20 Marks
GK & Current Affairs – 30 Marks 
Math & Reasoning – 30 Marks

আবেদন পদ্ধতিঃ
সরাসরি অনলাইনের মাধ্যমে আবেদন করার সুযোগ পাবেন। নিচে দেওয়া অফিসিয়াল ওয়েবসাইট (bankura.gov.in) থেকে আবেদন করার সুযোগ পাবেন।

#সর্ব প্রথমে নিজের নাম ও মোবাইল নম্বর দিয়ে সঠিক ভাবে রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করতে হবে।

রেজিস্ট্রেশন সম্পূর্ণ হলে আইডি এবং পাসওয়ার্ড দিয়ে লগইন করতে হবে।

লগইন হয়ে যাওয়ার পর সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়ে সঠিক ভাবে আবেদন পত্রটিকে পূরণ করতে হবে।

আবেদনপত্র পূরণ করা হয়ে গেলে সমস্ত দরকারি নথিপত্রগুলি স্ক্যান করে আপলোড করতে হবে।

আবেদন করার সময় অবশ্যই খেয়াল রাখবেন আপলোড করা ফটো JPEG ফরম্যাটে  হবে এবং এর সাইজ 30 Kb মধ্য হতে হবে। সিগনেচারের সাইজ 10 Kb মধ্যে হতে হবে।


যে সমস্ত দরকারি ডকুমেন্ট স্ক্যান করতে হবেঃ
১)দুই কপি রঙিন পাসপোর্ট সাইজ ছবি।
২)বয়সের প্রমাণপত্র।
৩)শিক্ষাগত যোগ্যতার সার্টিফিকেট।
৪)সিগনেচার।
৫)কাস্ট সার্টিফিকেট (যদি থাকে)

গুরুত্বপূর্ণ তারিখ (Important Dates)-
নোটিশ প্রকাশ - 20.09.2022
আবেদন শুরু  - 28.09.2022
আবেদন শেষ - 21.10.2022




Important Links:  👇👇

Official Website-

Official notice-

Apply Now-



_________________________________________________

চাকরি সংক্রান্ত আপডেট পেতে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন



Telegram group-






Whatsapp group-



Sunday, October 9, 2022

ছোট গল্প - সময় || লেখক - তপন তরফদার || Short story - Somoy || Written by Topan Torafdar

 




  সময়

                তপন তরফদার 

 


                 এক এক সময়ে মনে হয় এই দমবন্ধ সময়ের শেষ হবে না। আসলে মনের উপর এতো চাপ পরে সময়ের হিসাব রাখতে পারেনা। একজন পোয়াতি তার সন্তানকে পৃথিবীতে আনার সময় তাকে কষ্ট সহ্য করতে হবে জেনেও ভাবি মায়ের মনে হয় সময় শেষ হচ্ছে না। বাড়ির সবাই উদ্বিগ্ন। ভাবী পিতার মুখ পলে পলে শুকাতে থাকে। যেন চুরির দায়ে ধরা পড়েছে। পরিস্থিতি কয়েক মুহূর্তে বদল হয়ে বাঁধ ভাঙ্গা আনন্দে ভেসে যায় বসন্ত যখন বাড়িতে নতুন অতিথি আসার আওয়াজ আঁতুরঘর থেকে ভেসে আসে। গোয়ালঘর থেকে বসন্ত লাফিয়ে কাদাখোঁচা উঠানে নেমে আঁতুরঘরের বন্ধ দরজার দিকে মুখ করে দাইমা ক্ষণদার উদ্দেশ্যে বলে কী হয়েছে? ক্ষণদা এক সোহাগ মেশানো রসালো গলায় বলে - রসগোল্লা আনা, আমার জন্য গরদের শাড়ি নিয়ে আয় - তোর ছেলে হয়েছে।

                বসন্ত , যে বেশ কিছু সময় ধরে চোরের মতো গুটিসুটি মেরে বসে ছিল। খবর শোনার মুহূর্তেই বসন্তর বুকের ছাতি দীর্ঘ হয়ে যায়। মুখে লটারি পাওয়ার হাসি। ছেলে হয়েছে। সাত রাজার ধন এক মানিক।

                বলরামপুরের পঞ্চায়েত অফিস, সরযু বালা বিদ্যালয়ে যাওয়ার তেমাথা রাস্তার প্রথম বাড়িটা বসন্তদের। বসন্তদের ভিটে দুটো রাস্তা পেয়েছে। বসন্তর পিছনে হেমন্তর ভিটে। দূর সম্পর্কের আত্মীয়তার সূত্র ধরে এই দুই তেলি পরিবার এক হয়েই থাকে। কয়েক বছর আগে বসন্তর ও হেমন্তের বাবা এক সময়ে একই সঙ্গে গঙ্গাসাগরে নৌকা ডুবিতে মারা গেছে। বসন্ত, হেমন্তর বিয়ে প্রায় একই সময় হলেও হেমন্তের দুই ছেলে এক মেয়ে হয়ে গেছে। এতটা সময় পেরিয়ে গেলেও বসন্তর কোনো ছেলেপিলে হয়নি। গ্রামে রটেগেছে বসন্তের বউ উষা বাঁজা। উষার সময় কাটেনা। সবসময় বিমর্ষ হয়ে থাকে। হেমন্তর বউ সন্ধ্যা মনে মনে খুব খুশি ছিল - ওদের কোন বাচ্চাকাচ্চা না হলে - ওই ভিটেটার স্বত্ব হেমন্তর ছেলেরাই ভোগ করবে।

        বড় রাস্তার ধারে স্কুলে, পঞ্চায়েত অফিসে ঢোকার রাস্তা। রাস্তা ঢালাই হয়ে গেলেই লোক চলাচল বেড়ে যাবে। শোনা যাচ্ছে কিছু দিনের মধ্যেই সরযু বালা স্কুল উচ্চ মাধ্যমিক হয়ে যাবে। পঞ্চায়েত অফিসের পাশে ব্যাঙ্ক খোলা হবে। ওই তেমাথায় জমিতে যদি ‘মনিহারি স্টোর্স’ খোলা যায়, ভালই জমে যাবে। এ টু জেড সব পাওয়া যাবে। সব আশায় ছাই ফেলে দিল নবজাতক। সন্ধ্যা, হেমন্তকে বলে – চিন্তা করোনা। কাক-পক্ষীয়ও টের পাবে না-ঠিক সময়ে আমি সব ঠিক করে দেবো।

                    বসন্ত ছেলের নাম রাখলো অনন্ত। অন্ন প্রাশনের দিন সন্ধ্যা কোমর বেঁধে রান্না করে দিল। অনন্তর মুখে ঠুসে দিল পঞ্চব্যাঞ্জন। অন্ন প্রাশনেই প্রথম অন্ন পেটে যায়। সারা জীবন যেন অন্ন পায়। বাচ্চাকে পেট পুরে খাওয়াতে হয়। অনন্ত বিকালেই কেমন নেতিয়ে পড়ল। ওরা গ্রামের হাতুড়ে ডাক্তার যামিনীর কাছে নিয়ে যায়। যামিনী ডাক্তার মনে করে সমস্ত রোগের উৎস পেট। পেট যদি পরিস্কার থাকে - বিশেষ করে বাচ্চাদের স্ফূর্তি ভালই থাকবে। যামিনী ডাক্তার অনন্তর পেট-সাফার ওষুধ দিয়ে দেয়। বেশ কয়েকবার বাহ্ন্যি করার পর শান্তিতে ঘুমিয়ে পড়ল অনন্ত। ঘুম থেকে উঠে বাচ্চা হাসিখুশি, হাত-পা ছুঁড়তে লাগলো। হাসি শুনতে পেয় হেমন্ত সন্ধ্যাকে বলল - কি গো, সবতো ঠিকই আছে। সন্ধ্যা বলে – মনে হয় ধুতরোটা কম পরেছিল।

               অনন্ত ধীরে ধীরে বড় হতে লাগল। স্কুলের পিওন নিশীথের বউ, মেয়ে প্রভাতী সময় পেলেই অনন্তর সাথে গল্প করতে আসে। প্রভাতী-অনন্ত খেলনাপাতি খেলে। অনন্ত হয় বর, প্রভাতী হয় বউ। প্রভাতী পাকা গিন্নির মতো বলে - তুমি চান করে এসো, আমার ভাত রান্না হয়ে গেছে – তোমাকে খেতে দেবো।

              অনন্তের দশ বছরের জন্মদিন খুব ঘটা করে পালন না করলেও কাছের কয়েক জনকে নেমন্তন্ন করা হয়েছে। সন্ধ্যা পায়েস এনেছে অনন্তর জন্য। এখন অনন্তকে হাতে করে খাওয়াতে হয়না। লাউ-চিংড়ি খেয়ে উঃ আঃ করছে অনন্ত।উষা মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে বলে - লঙ্কা খেয়ে ফেলেছিস, পায়েস মুখে দে। ঝাল কমে যাবে। অনন্ত সন্ধ্যার আনা পায়েস মুখে দেয়। জিভে কেমন যেন ঠেকে। কিছু বলে না - হয়ত ঝালের জন্য পায়েসটার স্বাদ এমন তিতকুটে লাগছে।

                     বিকাল থেকেই পেটে অসহ্য যন্ত্রণা - বমি করতে যায় অথচ বমি হয় না। যন্ত্রণায় কাটা ছাগলের মতো ছটফট করতে থাকে অনন্ত। যামিনী ডাক্তার এবারও পেট পরিষ্কারের ওষুধই দিল - কিন্তু কোন কাজ হল না। মুখ দিয়ে গ্যাঁজলার মতো নিল রঙের থুথু বেরাতে থাকে। ডাক্তার বমির ধরন দেখেই বলে এখুনি একে বড় হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে। আমি ভাল বুঝছি না। বেশ কিছু সময় ধরে যমে মানুষে টানাটানি। মানুষ জিতে গেল। বেঁচে গেল অনন্ত কিন্তু বাঁদিকের হাত পা কেমন বেঁকে গেছে। বাঁদিকের ঠোঁটের ফাঁক দিয়ে লালা পরে। কথা বলতে গেলে চোখে মুখে অসহ্য যন্ত্রণার ছবি ফুটে ওঠে। সন্ধ্যা আপশোষ করে বলে - কলকের বিষ মেরে ফেলতে পারল না। বসন্ত একেবারে ভেঙে পড়ল। ভেবে কুল কিনারা পায়না বসন্ত – সুস্থ ছেলেটার এ কি হল? তাপ দেওয়া তাসার মত গুমগুম করে বেজে যায় মন। বেশ কিছু বছর পরেও বসন্ত মনে করে নিশ্চয় কোন পাপ করেছিল - তাই এই সাজা। সব কিছু ভুলে থাকার জন্য আদিবাসী পাড়ায় যাতায়াত শুরু করল। এখন আদিবাসীদের ডেরায় হাঁড়িয়ার সঙ্গে চোলাই ও চালু হয়ে গেছে। হেমন্তও লুকিয়ে লুকিয়ে ধেনোমদের বোতল কে এনে দেয়। সজনে ফুলের এক বিশেষ গন্ধ থাকে, যারা জানে তাদের নাকে ধাক্কা মারে। এই ধেনোর এক বিশেষ মহিমা আছে যা ছড়িয়ে পরে দাবানলের মতো - সবাই জেনে যায় বসন্ত “নেশা করে”। হেমন্তর এনে দেওয়া ধেনো খেয়ে বসন্তর বুকে যন্ত্রণা শুরু হয়। ওরও মুখ দিয়ে ফেনা বেরোতে থাকে। বুক চেপে শুয়ে পড়তেই উষা তালপাতার হাতপাখা দিয়ে হাওয়া করতে থাকে। এই সময়ে এই হাওয়া কোন কাজে লাগেনা। অকালেই উবে যায়। ওদিকে পিওন নিশীথ মারা গেল। যামিনী ডাক্তার রোগটা যে ‘ডেঙ্গু’, ধরতেই পারেনি। প্রভাতীর মা রাত্রি, স্কুল সীমানায় এক প্রান্তে নির্জন ডোবার ধারে বাঁশ বাগানের পাশে টিনের চালার মাটির ঘরে যেখানে থাকে, সেখানে রাতের অন্ধকারে দরজায় টোকা পড়তে লাগল। রাত হলেই মা-মেয়ে দুজনেই সিঁটিয়ে থাকে, বুঝতে পারে ওরা গ্রামেরই পঞ্চায়েতের লোক।

               ওদিকে হেমন্ত - উষা নিজেদের আকাঙ্খা পূরণ করতে কোন সুযোগ হাতছাড়া করতে চায় না। উষাকে পাখি পড়ানোর মতো সব সময় বলতে তাকে ছেলের চিকিৎসার জন্য, তোমাদের সংসার চালানোর জন্য ভিটেটা বিক্রি করে দিয়ে বাপের বাড়ি চলে যাও। মামার বাড়িতে ন্যালাখ্যাপা ছেলে অনেক সাহায্য পাবে।

 

            উষা নিজের শ্বশুর বাড়ির ভিটে ছেড়ে যেতে রাজি নয়। হেমন্তরা বুঝতে পারে, চালটা ঠিক ধোপে টিকল না। হাল ছাড়ার পাত্র নয় হেমন্তরা। কিছুদিন বাদে বলে - বউদি তোমরা তো মাত্র দুজন, এতবড় জায়গা নিয়ে কি করবে। তোমার ছেলেকে দিয়ে তো কিছু হবেনা। আমি তোমাকে ভিটের এক দিকে ঘর করে দেবো। জমির জন্য টাকাও দেব। উষা বুঝতে পারে বাঘের থাবার সামনে পড়েছে। দুর্বলের সাহায্যের জন্য এই সময়ে কেউ এগিয়ে আসেনা। এখন রাজনীতির ঝান্ডা না ধরলে বাঁচা যাবে না। হেমন্ত পঞ্চায়েতের দলের লোক হয়ে গেছে। উষা কিংকর্তব্যবিমূঢ়। সে অসহায়, ফুলের মতো ফুটে আছে। সবাই তাকে দখল করতে তৎপর। মুখ নীচু করে বলে - ঠাকুরপো তুমি যা ভাল বোঝো করো।

 

        নিশীথ নিজে ভাল লেখাপড়া করার সুযোগ পায়নি। মেয়েকে লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষের মতো মানুষ করতে চেয়েছিল। মেয়েরা নতুন কিছু সাহসী কাজ, প্রতিভার জোরে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার খবর মেয়েকে দিত। উৎসাহ দিয়ে বলতো - জানিসতো মা, এক মেয়ে এভারেস্ট জয় করেছে। প্রভাতী বলে, জানি অনেক মেয়েই পাহাড়ে উঠেছে। নিশীথ বলে, ওর নাম অরুণিমা সিনহা এক পায়ে ভর করে উঠেছে।মনে রাখিস প্রভাতী মনের জোরই আসল জোর।

 

          ছিপছিপে শ্যামাঙ্গী প্রতিমার মতো মুখ ও চুল প্রভাতীর তার শরীরে ক্লান্তি নেই, চনমনে চিতল হরিণী। গাঁইয়া মুখ হলেও মুখে বালি সরানো ফলগু নদীর মতো লাবণ্য। বুদ্ধিতে খনার থেকে কিছু কম নয়। প্রভাতী চায় প্রথমেই স্কুলের জায়গাটা ছাড়তে। ঝুপসি গাব, মহানীম গাছের মাঝে ফাঁকা জমিতে রাতের অন্ধকারে ভুতের নাচের আসর বসে - ওরাই রাত্রে দরজায় আওয়াজ তোলে। রুখে দাঁড়ালে বাঁশ ঝাড়ের ভিতরে পালায়। এইভাবে আর কতদিন। যদি ওরা রাতে দরজা ভেঙ্গে ঘরে ঢুকে পরে। মাথা ঘুরতে থাকে বিষয়টি মনে আসলেই।

                অনন্তর বাড়িতে যায় প্রভাতী ওদের খোঁজখবর নিতে। সুখ-দুঃখের গল্প করতে। উষাকে আশ্বাস দেয় - চিন্তা করবেন না মাসিমা, ভাল হয়ে যাবে। উষার মুখে শুকনো হাসি। সে দিনের সূর্য অনন্তদের বট গাছের পাতায় শেষ আলোর চুম্বন দিয়ে বিদায় নিচ্ছে। এই সময়েই হেমন্ত এসে বলে - বৌদি তোমাদের দলিলটা দাও। কালই রেজিষ্ট্রি করব, তোমাকে নিয়ে যাব - ওখানেই সব টাকা দিয়ে দেবো। বলে ওঠে - না “মা” – আপনি দলিল দেবেন না। আমার শ্বশুর বাড়ির ভিটে আমরাই রক্ষা করব।

           হেমন্ত রেগে গিয়ে বলে - সেদিনের ছুঁড়ি, আমার সাথে রসিকতা হচ্ছে। প্রভাতীর পাথরে খোদাই করা চোখ মুখ আরো দৃঢ় করে বলে - আমরা সবাই এক হয়েই সবাইকে বাঁচতে সাহস জোগাবো। আমার বাবা মারা গেছে – ওই শকুনরা আমাদের ছিঁড়ে খাবে। অসহায় বিধবার ভিটে হায়নারা খাবে, তা হবেনা।আমি অনন্তকে বিয়ে করে সব সামলে নেব। অনন্তকে নিয়ে সিধে প্রভাতী কালীতলায় চলে আসে। পূজারীর কাছ থেকে সিঁদুর চেয়ে নিয়ে অনন্তকে বলে পড়িয়ে দিতে। অনন্তর চোখে মুখে যুদ্ধ জয়ের ছবি। একটুও হাত কাঁপে না। বুদ্ধপূর্ণিমার আলো, সমগ্র জগতকে মোহময়ী করে তুলেছে। প্রভাতী অনন্তকে নিয়ে ঘরে ঢুকে খিল তুলে দিয়ে গাইতে থাকে - ও রজনীগন্ধা তোমার ..........। বেচারা, সন্ধ্যারা ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে। দুই বিধবা পরস্পরের হাত ধরে শরীরের ইশারায়

বুঝিয়ে দেয় প্রভাতী তাদের জীবনে নতুন প্রভাতের আলর দিশা দেখাবে।

ছোট গল্প - অশিক্ষক || লেখক - সন্দীপ কুমার পণ্ডা || Short story - Osikhokh || Written by Sandip Kumar panda


 


অশিক্ষক

  সন্দীপ কুমার পণ্ডা



          আজ সরস্বতী পূজা তাই রোহনের মন আবেগে, আনন্দে,উৎসাহে  সজনে ফুলের মতো দোলা খাচ্ছে , সকাল - সকাল  উঠে মুখে ব্রাস নিয়ে বাথরুমে চলে গেল সেখানে থেকে বেরিয়ে এসে মোবাইল খুলে দেখতে পেল হোয়াটসঅ্যাপে স্কুলের বন্ধুরা মেসেজ করেছে স্কুল যাবার জন্য সে রিনার বাদে সবার রিপ্লাই দিল ।রিনার রিপ্লাই না দিবার কারণ রিনাকে রাগিয়ে দেওয়া,তাকে রাগিয়ে দিলে অসম্ভব সুন্দর লাগে তার চেয়েও সুন্দর লাগে তার অভিমানের সুরে কথা গুলো।মনের মধ্যে মিটি মিটি হেসে ভাবল একবার কল করবে কিন্তু পরমুহুর্তেই মনে হল আর একটু রাগানো ভালো।তারপর ভাবতে লাগলো গতবছর এই দিনেই রিনাকে প্রথম দেখে রোহন আর প্রথম বার দেখেই চোখ সরাতে পারেনি রিনার সুন্দর  চোখের  চাহুনি ও হাসি দেখে মনে হয়েছিল স্বর্গ থেকে কোনো অপ্সরী নীচে নেমে এসেছে রিনারও একই অবস্থা দুজন দুজনকে দেখে স্থানু হয়ে গেয়েছিল। অল্প সময় পর রিনা লজ্জায় চোখ নামায় সেই থেকে ধীরে ধীরে আলাপ ও আলাপ থেকে বন্ধুত্ব সেই বন্ধুত্ব এক বৃষ্টির দিনে প্রেমে পরিণত হয়।তারপর অনেক দিন কেটে গেছে দুজনে দুজনকে চোখে চোখ রেখে ।পরস্পর পরস্পরকে হাতের ছোঁয়ায় রমাঞ্চ হত। এমনি করে বছরটা কেটে গেল। হঠাৎ মায়ের ডাকে তার সঙ্গা ফিরল-রোহন স্কুলে যাবি না আজ যে সরস্বতী পূজা। সঙ্গে সঙ্গে রোহন স্নানের জন্য বাথরুমে চলে গেল কিছুক্ষণ পর বেরিয়ে এসে নতুন পাঞ্জাবি সুগন্ধি সেন্ট,দামি হাতঘড়ি পরে বাবা বাইক নিয়ে স্কুলের দিকে বেরিয়ে পড়ল। সরস্বতী পূজা দিন বলে অনেক বলে - কয়ে বাবার কাছে বাইক নিয়ে যাবার অনুমতি পেয়েছে।এরপর সে সোজা স্কুলে বাইক রেখে হল ঘরে গিয়ে পুস্পাঅঞ্জলী দিয়ে বাইরে বেরিয়ে যেন‌ রোহনের চোখ কাওকে খুঁজছিল হঠাৎ সে রিনাকে তার দিকে এগিয়ে আসতে দেখতে পেল গতবছরের মতো এবারেও তাকে দেখতে খুবই সুন্দর লাগছে হলুদ রঙের শাড়ি লাল ব্লাউজ চোখের কাজল সেইসঙ্গে ঠোঁটের  রক্তিম আভা‌ চারিদিকে ছড়িয়ে অপরূপ লাগছিল রিনাকে। এগিয়ে এসে অভিযোগ সহিত বলতে লাগল'এত দেরি হল আসতে?আমার মেজেসের রিপ্লাইও দাও নি কেন? মিটিমিটি হাসতে হাসতে শুনছিল রোহন।তারপর কয়েক ঘণ্টা বেশ হাসিখুশি ভাবেই পেরিয়ে গেল। হঠাৎ সবার ডাক পড়ল খাবার প্যান্ডেলে যাবার রোহন ও রিনা আগে থেকেই ঠিক করে রেখেছিল ওরা একসাথেই খাবে ।সবাই কুপন‌দেখিয়ে প্যান্ডেলে প্রবেশ করতে লাগলো। রাজকীয় খাবারের আয়োজন তাই কুপনের ব্যবস্থা যাতে বহিরাগত কোনো ব্যাক্তি খাবারের স্বাদ অনুভব করতে না পারে।রোহন মনে মনে হাসল এমনিতেই  প্রচুর পরিমাণে খাবার বাড়তি পড়ে থাকে যেগুলো পরে কোথাও ফেলে দেওয়া হয় আর রাস্তার কুকুরগুলো খায় ওই সব খাবার দুই জন বা দশ জন খেলে কী যে মহাভারত অসুদ্ধ হয় তা রোহন বুঝতে পারেনা। হঠাৎ একটা গোলমাল শোনা গেল একজন লোক যার কুপন নেই সে প্রবেশ করতে যাচ্ছে কিন্ত একজন শিক্ষক তাকে বাধা দিয়েছেন। সেদিকে রোহনও গেল দেখতে পেল দাড়ি গোঁফে ভর্তি মুখ,পরনে একটা নোংরা ও ধুলোমাখা ধুঁতি একজন ৫৫-৬০বছর বয়স্ক লোক কাতরে বলে চলেছে'সার অনেক বেলা কুচু মুলে দি লাই।গরীব লোক আমি বাবু'আর কেঁদে চলেছে।ওদিকে ইংরেজি শিক্ষক ও অহংকারী মনের মানুষ তরুণ বাবু বলে উঠলেন খাবারের এমনি তেই সট্ তার উপর এক বেগার এসে উঠেছে।'দু -এক জন স্যারের বিরোধীতা করলেও কেও কিছু বলতে পারল না।আবার শিক্ষক মহাশয় বলতে লাগলেন 'এই চেহারার কোনো মানুষ বসলে ছেলেরা খেতে অরুচি বোধ করবে। ' এইসময় রোহন বলে উঠল 'স্যার একটা মাত্র লোক খেলে খাবারের অভাব হবে না তাছাড়া  উনি খেলে আমাদের কোনো অরুচি হবে না।' রোহনের কথার উত্তরে স্যার বললে 'একজনকে দিলে হাজার জন খাবার চাইবে আর খাবার সস্তা নাকি?'
____'এখন তো একজনই তো আছে তাছাড়া খাবার গুলো তো ড্রেনে ফেলে দেওয়া হয় আর রাস্তার কুকুরগুলো খায়।'
_____'তোমার যদি এতই দরদ তা তুমি তোমার কুপনটি দিয়ে দাও।একটি কুপন একটি মানুষ।বিনা কুপনে কেও খাবার পাবে না।'
_____'স্যার এম .এর .এ সাহেবের তো কোনো কুপন নেই তাহলে তিনি এসেছেন কেন?'
রিনাও যেন বলতে চায় এই সব ফালতু লোক নিয়ে মাথাব্যথা কীসের ? তারা পাশাপাশি বসে খাবার খাবে একটা উটকো লোককে নিয়ে স্যার দের সাথে ঝগড়া না করতে।
______'এম. এর. এ স্যারের সঙ্গে তুমি এই ইডিয়েট ,বেগার,নিগার  লোকটার কমপেয়ার (তুলনা)করছ। উনি একজন অতিথি।'
_______'না স্যার আমি আমি কুপনের কথা বলছি।'
______' তোমার কুপন যদি দিতে চাও তাহলে ও খাবার পাবে তাছাড়া নয় এটাই আমার ফাইনাল ডিসিসন।'
সঙ্গে সঙ্গে রোপনের নিজ কুপন ওই লোকটির হাতে দিতে গেল।'
কিন্তু লোকটি বলল 'ছোট বাবু তুমি কেন্ তোমার কুপন দিচ্চ আমি বুড়া মানুষ আর তুমি ছেলে ছোকরা এটাই তো তোমাদের সময়।'
 রিনাও চাইছিল না রহোন কুপনটা দিয়ে দিক কিন্তু রোহন বলে উঠল'আমি প্রতিদিন এই রকম খাবার খায় কিন্তু তুমি অনেকদিন না খেয়ে থাকো আমার একদিন এরকম খাবার না খেলেও চলবে। আর এই খাবার আমার মুখে উঠবে না যে খাবার রাস্তার কুকুর দিকে দেওয়া চলে এমএলএ, মন্ত্রী ,মিনিস্টার দেওয়া চলে শুধুমাত্র গরিব মানুষদের দেওয়া চলে না ।'
এই বলে রোহন বেরিয়ে এলো। তার চোখ জুড়ে এক প্রতিবাদের মেঘ।