Thursday, December 8, 2022

উপন্যাস - পদ্মাবধূ || বিশ্বনাথ দাস || Padmabadhu by Biswanath Das || Fiction - Padmabadhu Part -30


 

দাঁড়াও মুকুল, তুমি আমাকে তোমার মন থেকে দূরে সরিয়ে দিলেও আমি তোমাকে সরাতে পারব না। তবে ঐ প্রশ্নের উত্তর দিয়ে যাও তোমার কাছে কিভাবে প্রতারক হলাম।


 ঐ উত্তরটা বাচ্চু গুন্ডার কাছে জানতে পারবে। কিভাবে মিথ্যার অভিনয় করে আমাকে প্রেমের ফাঁদে ফেলেছিলে, তবুও তোমার আমার প্রেমের অঙ্কুর বৃক্ষে রূপ ধারণ করেছিল, কিন্তু সেই প্রেমের বৃক্ষকে অচিরে বিনাশ করলাম। কোনদিন আমার সাথে মিট্ করার চেষ্টা করবে না। আর আমিও চেষ্টা করবো যাতে তোমার মুখচ্ছবি। যেন আমার সম্মুখে না উদ্ভাসিত হয়। চলি গুড বাই

মুকুল হনহনিয়ে বেরিয়ে গেল। দেবী ছাড়বার পাত্র নয়। সে মুকুলের ভুলকে সংশোধন করবেই। দেবীর মাথার কোষে কোষে চিন্তার বাসা বাঁধলো।

দিন কয়েক পর একদিন বিকালে মুকুলদের বাড়ীতে হাজির হলো। মুকুসের সাথে সুমন্ত গল্পে মসগুল সে সময়। তাদের নানা বিষয়ে আলোচনা হচ্ছিল। মুকুলকে, সুমন্ত পড়াশুনা ব্যাপারে সাহায্য করত। মুকুল জানতো সুমন্ত অতি বুদ্ধিমান ছেলে ও পড়াশুনাতেও ভালছিল সুমন্তর কাছে জেনেছিল।

হঠাৎ আলোচনা চলাকালীন কোথা হতে একটা বিষাক্ত পোকা মুকুলের চোখের ভেতরে প্রবেশ করাতে মুকুল চিৎকার করে উঠল, সুমন্ত বুঝতে পারল মুকুলের চোখে কোন বিষাক্ত পোকা প্রবেশ করেছে। সুমন্ত বিলম্ব না করে মুকুলের চোখের পাতায় হাত দিয়ে চোখটাকে ফাঁক করে ফুঁ দিতে থাকল।

সেই সময় দেবী মুকুলদের বাড়ীতে প্রবেশ করে ঐ দৃশ্য দেখবে ভাবতে পারেনি। তাহলে ওরা ডুবে ডুবে জল খাচ্ছে। সুমন্তকে খুব ভালো ছেলে মনে করত, কিন্তু দেবী ওখানে দাঁড়ালো না। মনের মধ্যে তার দাবানলের সৃষ্টি হল ও সুমন্তর প্রতিহিংসার অঙ্কুর গজালো। সে কোন দিন কাকেও সুখী হতে দেবে না। তারা যদি উভয়েই প্রেমে আবদ্ধ হয় তাও টিকতে দেবে না। এর প্রতিশোধ নেবেই। বুকের মধ্যে যে যন্ত্রণার জন্ম নিলো, এর প্রতিকার কি করে করবে, কিভাবে মুকুলকে ভোলার চেষ্টা করবে।

হঠাৎ রন্টুর ডাকে সে দাঁড়িয়ে পড়ল, হ্যালো ব্রাদার, তোর খোঁজে তোদের বাড়ী গিয়েছিলাম। ওখানে জানলাম তুই বাড়ীতে নেই। ভাবলাম মুকুলদের বাড়ীতে তোকে পাবো। তাই এখানে এলাম। তা হ্যাঁরে, মুকুলদের বাড়ীতে সুমন্ত কি করছে। মুকুলের সাথে প্রেম করছে নাতো? তা যাক আজকে তোকে একটা নতুন জায়গায় নিয়ে যাবো।

দেবীদাসকে দেখে মনে হলো সে যেন অন্য রাজ্যে চলে গেছে। রন্টু দেবীদাসকে ধাক্কা দিয়ে বলল, কিরে চল্ দাঁড়িয়ে রইলি কেন? আমি বুঝতে পারছি মুকুল তেকে

বিট্রে করেছে। তোর পেটে লাল জল পড়লেই তোর মনটা চেঞ্জ হয়ে যাবে। রন্ট ট্যাক্সি বলে হাঁকাতে একটা ট্যাক্সি দাঁড়িয়ে পড়ল। জলা গলি যাবো, যাবে?

ট্যাক্সি ড্রাইভার বলল, উঠে পড়ুন। দেবীদাসকে এক রকম জোর করে ট্যাক্সির ভেতরে বসালো।

পুনরায় সেই অভিসার। তবে এখানকার রূপটা একটু আলাদা। রন্টু একটা মেয়ের কাছে গিয়ে কি যেন বলল। দেবী শুনতে পেলো না।

মেয়েটা তৎক্ষণাৎ দেবীদাসের কাছে হাত দুটোকে ধরে বলল, আজকে সারা রাতের অতিথি আপনি। আমার অ্যাপায়ণে আপনার অন্তর পুলকিত হয়ে উঠবে।

আমাদের এখানে যতগুলো নারী আছে সকলেই ভদ্র হয়তো পেটের দায়ে - না থাক আসুন আমার সাথে, আমি পতিতা হলেও আমার নারীত্ব লোপ পায়নি। আসুন আমার সাথে।

 মেয়েটি এক রকম জোর করেই ওর সাজানো রুমের মধ্যে প্রবেশ করিয়ে একটা সুসজ্জিত পালঙ্কের উপর দেবীকে বসালো। এবার বলুন কি খাবেন ? কাজুর সরবত, না মালাই এর সরবত ?

 দেবীর মুখে কথা ফুটল না। মুকুলকে নিয়ে তার স্বপ্ন। মেয়েটি বুঝতে পারে, তাছাড়া রন্টুর কাছে হালকা শুনেছে কোন মেয়ে ওকে আঘাত দিয়েছে, অর্থাৎ এই সময় ওকে কোন দাওয়াই দিলে ওর মনটা চাঙ্গা থাকবে তার জানা আছে।

 মেয়েটি কাবেরী বলে ডাক দিতেই একটি আঠারো বৎসরের অপরূপ সুন্দরী মেয়ে অর্থাৎ পানপাতার মতো মুখখানি পটল চেরা চোখ, বাঁশীর মত নাক, কোঁকড়ানো চুল বিশেষ করে ঠোটের নীচে একটা কালো তিল। ওটাতেই মেয়েটাকে আরো সুন্দরী দেখাচ্ছে।

 হাতে একটা ট্রে, ওতে দুটো গেলাস ও একটা নক্সা করা বোতল। সামনের ছোট্ট টেবিলে নামিয়ে সরবতের গ্লাসে পঁচিশ এম. এল. লালচে রংএর দামী মদ দিয়ে দেবীদাসকে উৎসর্গ করল এবং মৃদু কণ্ঠে বলল, এটা চুমু দিয়ে খেয়ে নিন। মনটা একেবারে হালকা হয়ে যাবে। তাছাড়া একটু পরে দেখবেন যে যন্ত্রণা আপনার ভেতরটাকে কুরে কুরে খাচ্ছে, তা একেবারে নির্মূল হয়ে যাবে। তাছাড়া আমার ছোঁয়া, আমার ভালোবাসা পেলে আপনার মন মোহিত হয়ে যাবে। আপনি সুখের সাগরে ভাসবেন। এই সরবতটুকু খেয়ে নিন। পুনরায় বলল।

 দেবীদাস গ্লাসখানি হাতে নিয়ে ওর মুখ পানে তাকিয়ে রইল।

 কি হলো খান। তাকিয়ে আছেন কেন? সারারাত দেখবেন।

 মেয়েটা দেবীর পাশে বসে বলল, রাত্রের পদ্ম আপনার অর্থাৎ নিশিপদ্ম। এই কাবেরী আমার ছোট বোন। যেন গোলাপের কুঁড়ি। একটু পরেই আপনার মন ভরিয়ে তুলবে কুঁড়ি থেকে ফুটন্ত পদ্ম হয়ে। কাবেরীকে বলল, কাবেরী তুমিতো জানো, আমি অসুস্থ, ইনি আমাদের নতুন অতিথি, ও সজ্জন ব্যক্তি। তোমার মধুতে ভ্রমর যেন আটকে যায় তার ব্যবস্থা করবে। আমি চললাম ।

 মেয়েটি প্রস্থান করতেই কাবেরী বলল, আমাকে পছন্দ নেই বুঝি?

 দেবীদাস কোন কথা বলল না।

 কখন থেকে দেখছি আমার মুখপানে তাকিয়ে আছেন, যাকে খুঁজছেন আমার মধ্যে তাকে দেখতে পাচ্ছেন মনে হয়। নিন আরেক গ্লাস সরবত খান। দেখবেন এবার মেজাজটা পাল্টে যাবে।

দেবীদাস ওর হাত থেকে গ্লাসটা নিয়ে গোগ্লাসে খেয়ে ফেলল। এরপর তৃতীয় গ্লাস পান করার পর সে আর ঠিক থাকতে পারল না। মনে হল চোখের সামনে কুয়াসায় আচ্ছন্ন হলো। ধীরে ধীরে বেহুস হয়ে পড়ল। কিন্তু অন্তরালে যে ষড়যন্ত্র ছিল তা দেবীদাস জানতো না। এমন প্রায়ই ঐ পতিতালয়ে যেতে শুরু করল এবং কখনো রাতও কাটাতো।

Wednesday, December 7, 2022

ছোট গল্প - একটু সাবধান || লেখক - সুমিত রায় || Written by Ektu Sabdhan || Short story - Sumit Roy


 একটু সাবধান!

সুমিত রায়


      ক্লাবে কয়েকদিন ধরে প্রতুলবাবু সান্ধ্য আড্ডায় অংশ নিচ্ছেন না দেখে, ক্লাব সম্পাদক মৃনালবাবু ফোন করে জিজ্ঞেস করলেন- না আসার কারণ। উত্তরে জানলেন, কয়েকদিন যাবৎ পেটে প্রচন্ড যন্ত্রণা। এপেনডিক্সের ব্যথা সন্দেহে বাজার থেকে ওষুধ কিনে খাচ্ছেন। ডাক্তার এখনও দেখাননি। মৃনালবাবু ফোনটা রেখে দিলেন!

      মৃনালবাবু ক্লাবের অন্য দুই সদস্যকে সঙ্গে নিয়ে চললেন প্রতুলবাবুর বাড়ি। প্রতুলবাবুর বাড়িতে গিয়ে তিনি রেগে গেলেন-যখন শুনলেন, একই ওষুধ দশ দিন ধরে বাড়ির পাশের ফার্মেসি থেকে কিনে কিনে খাচ্ছেন, ডাক্তার দেখানোর কোন নাম গন্ধ নেই। নিজে নিজেই বলছেন,-' এপেনডিক্সের ব্যথা।'

কি আশ্চর্য ব্যাপার! এই অবস্থায় কেউ ডাক্তার না-দেখায় থাকতে পারে কীভাবে? আগামীকাল ডাক্তার দেখানোর কথা জোর করে বললেন মৃণালবাবু।

      পরের দিন মৃণালবাবু , প্রতুলবাবুকে সঙ্গে নিয়ে মেডিকেল কলেজে গেলেন। সেখানে নানা পরীক্ষা করার পর জানা গেল, প্রতুলবাবু পেটের ব্যথা নিয়ে যে সন্দেহ করেছিলেন, তা সম্পূর্ণ ভুল সন্দেহ। আরও কিছুদিন এরকম এপেনডিক্সের ব্যথা সন্দেহে ওষুধ খেলে- সমস্যা অন্য দিকে মোড় নিত, অন্য কোনো কঠিন রোগের শিকারী হয়ে যেতেন প্রতুলবাবু।উনার পেটের ব্যথার কারণ হিসেবে ধরা পরল গ্যাস্ট্রিক। কয়েকদিনের চিকিৎসায় প্রতুলবাবু সুস্থ হয়ে উঠলেন। বাড়ি ফিরলেন।

          আজ রোববার, অনেকদিন পর প্রতুলবাবু ক্লাবের সান্ধ্য আড্ডায় আবার যোগ দিলেন। হাসি-ঠাট্টা চলল আগের মতন। ক্লাব সম্পাদক মৃনালবাবুর পরামর্শে ডাক্তার না দেখালে, না জানি কী বড় বিপদের সম্মুখীন হতেন-তা অকপটে স্বীকার করলেন ক্লাব সদস্য প্রতুলবাবু। নিজে নিজে রোগের সন্দেহ করে ওষুধ খাওয়া যে একেবারেই ঠিক নয়, তা কত বড় যে অন্যায়, সেটি হাঁড়ে হাঁড়ে বুঝতে পারলেন- প্রতুল বাবুসহ ক্লাবের আরও অনেক সদস্য।

        মৃনালবাবু হাসতে হাসতে প্রতুলবাবুকে বললেন,-"প্রতুল দাসকে কতটা উৎফুল্ল লাগছে! আজ অনেকদিন পর আমাদের সান্ধ্য আড্ডায় এসেছে, প্রতুল। প্রতুল, তুমি এতটা শিক্ষিত হয়ে কীভাবে এপেনডিক্সের ব্যথা সন্দেহে পেট ব্যথা নিয়ে বাড়িতে এতদিন কষ্ট করছিলে? -এটা ভাবলেই তোমার উপর আমার প্রচন্ড রাগ হয়। তুমি কি এটাও ভুলে গেছিলে, যে কোন রোগের উপযুক্ত ওষুধ একমাত্র দিতে পারেন স্বয়ং ডাক্তার। আমরা যদি নিজেরাই নিজেদের রোগের ওষুধ ঠিক করে ফেলি, তাহলে ডাক্তাররা আছেন কী জন্যে? তুমি যে পেটের ব্যথাকে এপেনডিক্সের ব্যথা সন্দেহে ওষুধ খেয়ে যাচ্ছিলে দীর্ঘদিন, তাতে কি সর্বনাশ হতে পারতো, তা কখনো ভেবেছো?তোমার পরিবারের দিকে তুমি একটিবারও চিন্তা করোনি? কপাল ভালো মেডিকেল কলেজে তোমাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। না হলে একটা ভয়ঙ্কর বিপদ হয়তো আমাদের সামনে এসে দাঁড়াত। 

        নিজে নিজেই রোগ সন্দেহ করে ওষুধ খেয়ে কী সর্বনাশ ঘটেছিল আমার অফিসের এক সহকর্মীর, যেটা আমি খুব ভালোভাবে জানি। সেটাই তোমাদের আজ বলব-

        অনিমেষ দত্ত, আমার অফিসের করণিক। আমার থেকে কয়েক বছরের বড়।সব বিষয়ে তার মাতব্বর ভাব কাজ করতো, এটা আমরা অফিসের সকলেই কয়েক বছরের মধ্যেই পুরোপুরি বুঝতে পেরেছিলাম। এইজন্য উনাকে আমরা কেউ কোন পরামর্শ দিতে যেতাম না। অনেকদিন ধরে তার ঘাড়ে ব্যথা, জিজ্ঞেস করলে বলতেন, -'স্পন্ডালাইসিস এর ব্যথা।'

কোন ডাক্তার দেখাতে চাইতেন না, ব্যথা বাড়লে ফার্মেসি থেকে ব্যথা কমানোর ওষুধ এনে খেতেন। ব্যথা কমলেই আবার যেই আর সেই। ডাক্তার দেখানোর কোনো ভ্রুক্ষেপ নাই।

     এরকমভাবে কয়েক বছর কেটে যায়। পরিবারের সদস্য সংখ্যা দুই থেকে চার-এ পৌঁছায়। ধীরে ধীরে ঘাড়ের ও কোমরের ব্যথা বাড়তে থাকে। ব্যথা কমানোর ওষুধ খান।বেশ কিছুদিন ভালো থাকেন, তারপর আবার ব্যথা শুরু হয়।

     গত দু'বছর আগে, একটু একটু শীত পড়তে শুরু করেছে । একনাগাড়ে বেশ কয়েকদিন আসছেন না অনিমেষ বাবু। জানতে পারলাম ঘাড় ও কোমরের অসহ্য ব্যথায় বাড়িতেই আছেন। কিন্তু সেবারের ব্যথার লক্ষণ একটু আলাদা রূপে দেখা দেয়। হাত-পা ক্রমশ অবশ হয়ে যাচ্ছিল। আস্তে আস্তে হাত-পায়ের জোর হারিয়ে ফেলছিলেন তিনি। হাঁটতে পারতেন না। হাত দিয়ে কোন কিছু খেতে পারতেন না। একেবারে শয্যাশায়ী হয়ে পড়লেন। চিন্তার মধ্যে পড়ে গেল বাড়ির সকলে।

   করণিক পদে চাকরি, আর্থিক স্বচ্ছলতা সেরকম ভাল না। কি করবেন একটাই প্রশ্ন ঘোরাফেরা করতে লাগল পরিবারের মধ্যে।

       একমাত্র বাড়ির ফাঁকা কিছুটা জায়গার, বিক্রির টাকায় অবশেষে ব্যাঙ্গালোরে নিয়ে যাওয়া হল। সঙ্গে আমি গিয়েছিলাম। ব্যাঙ্গালোরে নামকরা নার্ভের চিকিৎসালয়ে অনিমেষবাবুর চিকিৎসা আরম্ভ হল। প্রাথমিক পর্যায়ে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্য দিয়ে অনিমেষবাবুর সঠিক চিকিৎসার পথ খুঁজে চলছেন চিকিৎসকেরা।

      আমি চিকিৎসককে জিজ্ঞেস করেছিলাম,-'স্যার আপনার কী সন্দেহ হয়?

'সন্দেহ! সন্দেহ করে কিছু বলা যায় না, পরীক্ষা চলছে, রিপোর্ট এলে বোঝা যাবে- কী হয়েছে উনার।' কিছুটা জোর গলায় বললেন চিকিৎসক।

     আমরা হসপিটালের পাশে যে ঘরটি ভাড়া নিয়েছিলাম, সেই ঘরে যাওয়ার রাস্তায় অনিমেষবাবুকে যে চিকিৎসক দেখছিলেন তার সাথে দেখা হয়ে যায় একদিন। আমাকে চিন্তাম্বিত অবস্থায় দেখতে পেয়ে ডাক্তারবাবু হাঁটতে হাঁটতে নিজেই বললেন,-'আপনার পেশেন্টের ভয়ের কোন কারণ নেই। উনার ঘাড়ে ব্যথা দুটো কারণে হতে পারে, একটি টিউমারের ব্যথার কারণে , অন্যটি টি.বি.। মেরুদন্ডে অনেক ধরনের টি.বি. হয়। আগে অনেক বেশি হত, তবে এখন আমাদের সৌভাগ্য যে টি বি. অনেক কমে গেছে। অনেকে বুঝতে পারেন না, হাঁড়ে আবার কেন টি.বি. হবে।সাধারণ লোকের ধারণা কেবল ফুসফুসে টি.বি. হবে। কাজেই তাদের জেনে রাখা উচিত টি.বি. কিন্তু হাঁড়েও হয়। হাঁড়ে টি.বি হলে সেখান থেকেও ঘাড়ে ও কোমরে ব্যথার সূত্রপাত হয়।

        এছাড়া আমাদের ঘাড়ে ও কোমরে অনেক গ্রন্থি রয়েছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় যাকে বলে লিম্ফোয়েড গ্রন্থি, যেগুলোতে টি.বি. সংক্রামিত হয়। সংক্রামিত এই লিম্ফোয়েড গ্রন্থিগুলো এক সঙ্গে মিশে জোড়া পাকিয়ে যায়। মিশে জোড়া পাকানো লিম্ফোয়েড গ্রন্থির এই অবস্থাকে আমরা বলি- ম্যাটেট লিম্ফোয়েড, তখন এগুলোতে প্রচন্ড ব্যথা হতে থাকে। সেই ব্যথাই ঘাড়ে ও কোমরে প্রকাশ পায়।'

       পুরো দুদিন পর সমস্ত পরীক্ষার রিপোর্ট এলে জানা গেল অনিমেষবাবুর আর্থ্রাইটিস হয়েছে। সেই রোগের চিকিৎসা চলে প্রায় দশ দিন ধরে। অনেকটাই সুস্থতা ফিরে পেলে, অনিমেষবাবুর বাড়ি ফেরার অনুমতি মিলল।

       অনিমেষবাবুর ছুটির পর চিকিৎসক আমাদের বলেছিলেন, -'আপনারা কোন রোগের সন্দেহবশত ওষুধ খাবেন না। আজকে এই পেসেন্ট স্পন্ডেলাইসিস সন্দেহে যে ওষুধ খেয়েছিলেন, সেটি যদি আরও কিছু দিন খেতেন, তবে তার নার্ভ কার্যক্ষমতা হারিয়ে- উনাকে পঙ্গু করে ফেলত। ঈশ্বর সহায় উনি এখানে এসেছেন এবং সঠিক রোগের চিকিৎসায় উনি সুস্থ হচ্ছেন এবং আগামীতে সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠবেন।'

      আমি স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিলাম চিকিৎসকের কথা শুনে। ওই চিকিৎসকের ওই কথাগুলো আমি আজও অক্ষরে অক্ষরে পালন করে চলছি। অসুস্থ অনুভব করলেই, ডাক্তার না দেখিয়ে ওষুধ খাই না। আমার সহকর্মীকে সেদিন যদি ব্যাঙ্গালোরে না নিয়ে যাওয়া হত, তবে ভুল ওষুধের দাপটে তাকে আজ পঙ্গু হয়ে থাকতে হতো। আমি ক্লাবের প্রত্যেক সদস্যের উদ্দেশ্যে বলছি - শরীরের কোন জায়গায় ব্যথা হলে, আপনারা ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ খাবেন। আপনাদের যত পরিচিতি মহল রয়েছে, তাদের প্রত্যেককে এই কথাটি মানতে বলবেন।

     আজকের সান্ধ্য আড্ডাটা একটু অন্যরকম ভাবে পালন করলাম।আগামীতে এই বিষয়কে কেন্দ্র করে সচেতনতামূলক কর্মসূচি আমরা সকলের সামনে তুলে ধরব।"

ছোট গল্প - সৌরভ || লেখক - দীপক কুমার মাইতি || Written by Dipak Kumar Mayti || Short story - Sourav

 





সৌরভ


দীপক কুমার মাইতি

 

            কোন সুযোগ না দিয়ে মা হঠা চলে যায় রাতে পাশাপাশি শুয়ে গল্প করছিলাম মা বলে – বুকটা ব্যথা করছে বোধ হয় অম্বল হয়েছে বাবু অ্যান্টাসিডের শিশিটা দিবি

            শিশি এনে দেখি মা কেমন নেতিয়ে পডে়ছে মনে কু ডাকে তাড়াতাড়ি হাসপাতালে ভর্তি করে অপেক্ষা করতে থাকি কিছুপরে চরম সংবাদ পাই বিহ্বল হয়ে ডাক্তারবাবুর দিকে তাকিয়ে থাকি হুশ ফেরে মুখে জলের ঝাপটায় ডাক্তারবাবু বলেনমনটা শক্ত করুন সঙ্গে কাউকে দেখছি না আত্মীয়দের খবর দেন

            সংসারে মা  আমি অল্প বয়সে বাবাকে হারাই বাবার চাকরি  এক কামরার ফ্ল্যাট তখন আমাদের সম্বল। সাহায্য করার ভয়ে স্বজনেরা দূরে চলে যায় এখন তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থায় কর্মরত আমার অনুরোধে মা স্বেচ্ছাবসর নেয় এভাবে একা হতে হবে কখনও ভাবিনি ধীরে ধীরে মা-এর শয্যা পাশে দাঁড়াই স্নিগ্ধ শান্ত মা চোখ বন্ধ করে শুয়ে অমি মা-এর বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ি বুকে মুখ রেখে ডুকরে কাঁদতে থাকি হাতের স্পর্শে পিছনে ফিরে দেখি একজন নার্স দাঁড়িয়ে— সরি স্যার , আমাদের কয়েকটি ফরম্যালিটি সারতে হবে অফিসে কয়েকটি কাগজে সই করে মর্গ থেকে বডি পেয়ে যাবেন

            বাইরে বেরিয়ে কয়েকজন অফিস কলিগ  বন্ধু ময়ুখকে ফোন করি বাকি কাজ ওরাই করে বাড়ি ফিরতে সন্ধ্যে হয়ে যায় সবাই চলে যায়। রাতে ময়ুখ বলে – আমি  বাড়ি যাচ্ছি শুকনো খাওয়ার এনেছি খেয়ে নিবি কাল সকালেই আসবো

            ময়ুখ বরিয়ে যায় চুপচাপ বসে থাকি ফাঁকা ঘর সংসারে আজ আমি একা নিঃসঙ্গতা গ্রাস করতে থাকে তখন খুব ছোট রথের মেলায় গিয়েছিলাম মায়ের হাত ছাড়িয়ে হারিয়ে যাই জন-অরণ্যে মাকে খুঁজতে গিয়ে আরো হারিয়ে যাই একটা গাছের নিচে নিঃসঙ্গ আমি দাঁড়িয়ে চোখে জল ভরে আসে ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলি বেশ কিছুক্ষণ পর স্নেহের একটি হাত চেনা সৌরভ নিয়ে আমায় জড়িয়ে ধরে আমি বুকে মুখ গুজে কাঁদতে থাকি মা কপালে চুমু খেয়ে বলে –  ভয় কীএই তো অমি

            আজ চাখ বন্ধ করে সেই সৌরভ খুঁজত থাকি হঠাৎ সেই চেনা সৌরভর ঝাপটা লাগে চোখে মুখে চমকে চোখ মেলি খাটের মশারিদানে ঝুলছে মায়ের শাড়ি হাওয়ায় দুলছে ছড়িয়ে পড়ছে মায়ের ঐশ্বরিক সৌরভ জানালা দিয় জোছনা হয়ে মাযের স্বর্গীয় হাসি ছড়িয়ে ঘরে লুটোপুটি খাচ্ছে আমি মাতালের মতো ঘরে মাকে খুঁজতে থাকি মায়ের শাড়ি নামিয়ে আনি বুকে জড়িয়ে মায়ের ওম পেতে থাকি এক সময়ে মায়ের সৌরভে ঘুমিয়ে পড়ি

            সদিন থেকে আজ তিন বছর রাতে মায়ের শাড়ি বুকে জড়িয়ে কাটিয়ে দিচ্ছি এখন নিঃসঙ্গতা আমার আর্দশ সঙ্গী নিঃসঙ্গতা আমার কাছে ঈশ্বরের মতো নিঃসঙ্গ থাকলে মায়ের স্নিগ্ধ সৌরভ আমায় জড়িয়ে ধরে

            অবর্ণার ফোনে ঘুম ভাঙে – একটা  বিপদে পডে়ছি একমাত্র তুই সাহায্য করতে পারিস দশ মিনিটে  পৌঁছে যাব

            আমরা একই প্রোজেক্টে কাজ করি অবর্ণা ময়ুখের বাগদত্তা মায়ের মৃত্যুর পর ওরাই আমার পরম বন্ধু এখনও প্রতিদিন দুপুরে অবর্ণা আমার লাঞ্চ নিয়ে আসে ওর বিপদ শুনে চিন্তা হয়

            কিছুপরে এক বিদেশিনি সহ অবর্ণা আসে পরিচয় করিয়ে অবর্ণা বলে— এলিজাচিকাগো থেকে ভারত দেখতে এসেছে আমার কাছে উঠেছে অমাকে দেখিয়ে বলে , শাওন মাই বেস্টফ্রেন্ড

 দুজনের প্রাথমিক আলাপের পর অবর্ণাকে বলি – তোর বিপদটা কী?”

            কাল রাতে ম্যানেজার মেল করছে ,এক সপ্তাহের জন্য পুনা যেতে হবে এলিজার কাল দুপুরে ফ্লাইট কাল পর্যন্ত থাকা নিয়ে সমস্যা আমার মেসে রাখা যাবে না ভাল হোটেলে থাকার মতো ওর রেস্ত নেই কয়েকটা জায়গা ওর দেখার ইচ্ছে তুই একা থাকিস নিজের গাড়ি আছে এলিজাকে তোর কাছে রাখ ছুটি নিয়ে ওকে গাইড করে দিবি?

            আমার একটাই শোবার ঘর একা মেয়েকে রাখা ঠিক হবে কী?

            তুই ছাড়া কাউকে ভাবতে পারছি না এলিজা সব জানে ওর কোন আপত্তি নেই

            আমি কিন্তু কিন্তু করে বলি – তবুও  একটা মেয়ে বিদেশিনি ভাল করে চিন্তা করেছিস?

             অবর্ণার মুখে নিশ্চিন্তের হাসি – মাসিমার সৌরভ তোকে


Tuesday, December 6, 2022

Amazon Work from Home Job Recruitment 2022 || অ্যামাজন কোম্পানিতে কর্মী নিয়োগ || বেতন ২৫ হাজার টাকা





সকলের কাছে বিশ্বস্ত ও জনপ্রিয় ই-কমার্স প্লাটফর্ম অ্যামাজন (Amazon) কোম্পানিতে ওয়ার্ক ফর্ম হোম জবের জন্য কর্মী নিয়োগ শুরু হয়েছে, ইতিমধ্যেই অফিসিয়াল বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছে।

বর্তমান চাকরির বাজারে বেকার ছেলেদের এটি একটি বিরাট সুযোগ। রাজ্যের সমস্ত নারী-পুরুষ সকল বেকার চাকরিপ্রার্থীরা নিজেদের শিক্ষাগত যোগ্যতার ভিত্তিতে আবেদন করার সুযোগ পাবেন। আবেদন পদ্ধতি, শূন্যপদের সংখ্যা, বেতন কত পাবেন, শিক্ষাগত যোগ্যতা কি লাগবে ইত্যাদি নিয়োগ সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্য
নীচে আলোচনা করা হল -


পদের নামঃ HR কনট্যাক্ট অ্যাসোসিয়েট (HR Contact Associate – Work from home)



বেতনঃ  প্রতিমাসে প্রায় 25,000 থেকে 45,000 টাকা বেতন পাবেন।


শিক্ষাগত যোগ্যতাঃ শুধু মাত্র গ্রাজুয়েশন পাশ হলেই এখানে আবেদন করা যাবে এবং সঙ্গে ভালো কমিউনিকেশন স্কিল থাকতে হবে।



বয়সসীমাঃ 18 বছরের ঊর্ধ্বে সমস্ত চাকরিপ্রার্থীরাই আবেদন করার সুযোগ পাবেন। সংরক্ষিত প্রার্থীরা সরকারি নিয়মে ছাড় পাবেন।

শূন্যপদঃ ৫০০ এর বেশি।


নিয়োগ পদ্ধতি -
এখানে আবেদনকারী চাকরি প্রার্থীদের কোনো রকম লিখিত পরীক্ষা দিতে হবে না। সরাসরি ইন্টারভিউ দিয়ে চাকরি পাবেন। সব শেষে হবে ডকুমেন্ট ভেরিফিকেশন।



আবেদন পদ্ধতি-
শুধু মাত্র অনলাইনের মাধ্যমে আবেদন করার সুযোগ পাবেন। 

(1) নিচে দেওয়া আবেদন করার লিঙ্ক থেকে সবার প্রথমে আবেদন করার অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে বা পেজে প্রবেশ করতে হবে।

(2) অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে প্রবেশ করা মাত্রই আগে রেজিস্ট্রেশন অপশনে ক্লিক করে রেজিস্ট্রেশন করে নিতে হবে।

(3) রেজিস্ট্রেশন করার পর লগইন করে নির্দিষ্ট বিজ্ঞপ্তি নম্বর অনুযায়ী APPLY NOW বাটনে চাপ দিতে হবে। এরপরে সঠিকভাবে সমস্ত তথ্য দিয়ে আবেদনপত্র পূরণ করতে হবে।

(4)  আবেদনপত্র পূরণ করার সময় সমস্ত প্রয়োজনীয় নথিপত্রগুলি স্ক্যান করে আপলোড করতে হবে। শেষে ফাইনাল সাবমিট অপশনে ক্লিক করে আবেদন প্রক্রিয়া শেষ করতে হবে।

আবেদন শেষ: 24/12/2022 


 Important Links:  👇👇


Official Website-

Apply Now-



বিঃদ্র: সমস্ত ধরনের চাকরির আপডেট পেতে আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ এবং টেলিগ্রাম চ্যানেলে যুক্ত হয়ে যান। নিচে যুক্ত (Join) হওয়ার লিংক দেওয়া রয়েছে ঐ লিংকে ক্লিক করলেই যুক্ত হয়ে যেতে পারবেন। ওখানেই সর্বপ্রথম আপডেট দেওয়া হয়। আর আপনি যদি অলরেডি যুক্ত হয়ে থাকেন এটি প্লিজ Ignore করুন।





আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে জয়েন করতে পারেন --




আমাদের টেলিগ্রাম গ্রুপে জয়েন করতে পারেন --