Posts

হৃদের ভুলে - উৎপল মুখার্জী || গল্প || ছোটগল্প || বড় গল্প || অনুগল্প || Story || Short story

  হৃদের ভুলে...            উৎপল মুখার্জী দেখতে দেখতে বয়স এগিয়ে চলেছে, সাধুসঙ্গ ছেড়ে , মোহে আজ অমাবস্যার দিনে একাকী বসে আছি পাশের শ্মশানে, সাথে চৌরস, দুটো শালের কুচি দন্ড, প্রয়োজন ঘি, আগুনের ফুলকি, মরা টাটকা মানব মাথার ফুটকির ঝলসানো প্রেতাত্মা, পাশেই কুমারী মায়ের ভয়ার্ত চিৎকার "ছেড়ে দে আমাকে- আমি কোন দোষ করি নি, ভোগের মাঝে কি পেয়েছিস শুধু ই শুন্যতা... সমাজের চটকানো ভালোবাসার কুয়াশা, দুরন্ত ঝাপটা, আমার নরম দেহটার উপর অসামঞ্জস্য গঠনের ভারসাম্যের ভিড়ে উদগ্ৰীব রহস্য, হয়েছে তো"? .. মনের অবলোকনের রহস্য খুঁজতে গিয়ে আমি, অনিমেষ, বিবেকের কথন, যখন নাড়াচাড়া দিচ্ছে, যজ্ঞের আগুনের পাশেই । ভুতুড়ে বাতাসে ছনমনে হৃদয় স্থির হয়ে একাগ্ৰ চিন্তায় সেই কুমারী, নাড়া দেয়, বলে, "প্রায়শ্চিত্ত করছিস!....  কোন লাভ নেই, বল তুই সাধু হয়ে ছিলি কেন? - গোপন মনের তৃষা যেখানে, নরে র প্রতি নারী র আকর্ষণ ঘিরে, কিসের চেতন ছিলো?- ভালোবাসার -যা কুরুচি ভরা, তোর নিস্তার নেই, আমি নিস্তারিণী বলছি, তোর শাস্তি হবেই "। আমি, অনিমেষ- ছিলাম মনের ডাকাত, ধরা পড়ি, আজ, খুনের হুমকি মামলায়-যাবজ্জীবন

প্রত্যাবর্তন - চন্দন চক্রবর্তী || গল্প || ছোটগল্প || বড় গল্প || অনুগল্প || Story || Short story

  প্রত্যাবর্তন চন্দন চক্রবর্তী রঞ্জনা প্রণাম করে উঠে দাঁড়াতেই,আবেগ তাড়িত হয়ে,ওকে বুকে টেনে নিলাম । আমার দুই বাহুর বাঁধনে,ভীত কবুতরের মত,ও এখন কেঁপে কেঁপে উঠছে । সকালেই খবর পেয়েছি রঞ্জনার শিক্ষকতার চাকরিটা হয়েছে । পাঁচ ছটা বছর ওকে টিউশান দিয়েছি । সেই যেদিন ও হায়ার সেকেন্ডারি পাস করল,ওর বাড়ি গিয়ে প্রস্তাব দিয়েছিলাম,ওকে বিনা পারিশ্রমিকে পড়াবো । প্রথমে রাজি হয়নি । তার গভীর কারণ ছিল । ওর জীবনের উপর দিয়ে যে ঝড় বয়ে গেছে তাতে মাথা তুলে দাঁড়ানোর মত পরিস্থিতি ওর ছিলো না । রঞ্জনা পাড়ার মেয়ে । শুধু মেয়ে বললে একটা মেয়েকে আর কতটুকু বোঝানো যায় ! ওকে যারা আগে দেখেছে,এক কথায় স্বীকার করবে,চলন,বলন,আচার,আচরণ সব মিলিয়ে,ভীষণ মিষ্টি একটি মেয়ে । যে কোন যুবক ওকে একবার দেখলেই ওর প্রতি ভালোবাসা জন্মে যাবে । কিন্তু এখন,এখন ঠিক তার বিপরীত । মানুষেরও বলিহারি,কি করে এত নির্দয় হয় ! কৌতুহলী দৃষ্টি,কটূক্তি ওকে সর্বত্র উত্যক্ত করে মারে । জীবন মানেই সুখ-দুঃখ হাসি-কান্নায় মোড়া । সব জীবনেই থাকে,কিছু হেরফের হয় । কিন্তু জীবনে যদি শুধু কান্নাই থাকে,যদি হাসি না থাকে ? রঞ্জনা মাধ্যমিকে ভালো রেজাল্ট

ভালো বাসা - অন্নীষা মুখার্জ্জী || গল্প || ছোটগল্প || বড় গল্প || অনুগল্প || Story || Short story

  ভালো বাসা অন্নীষা মুখার্জ্জী ... অবশেষে হঠাৎ একদিন ফোনটা এলো। কিছুটা ঘাবড়ে ঘেঁটে যাওয়ার কথা। আমি তখনও বেশ নির্বিকার। -রাগের শেষে আমার একটা রোদ ঝলমলে সকাল চাই। দিবি আমায়?  -"সব শেষের নিষ্পত্তি হলেও যে সকালটা আর আসে না রে। রাগ নেই তোর ওপর আমার।" সে বললো, "কেমন যেন মনে হচ্ছে, ঢেউয়ের ওঠা পড়া বন্ধ হয়েছে! তুই কি সত্যিই আজ অব্যক্ত ভাষাদের দলে হারিয়ে গেছিস?" -"সব কথা বলে ওঠা হয়না আর। সেদিনের আমার সেই সিক্রেট বক্সটাকে আমি হারিয়ে ফেলেছি অনেক দিন হলো। আজ ফিরে পেতে আর ইচ্ছে হয়না রে। বলতে পারিস, ভয় পাই আবার নতুন কিছু সিক্রেট জমিয়ে আরও খানিকটা আপন করে নিতে।" -"হারায়নি, বিশ্বাস কর। সব আজও আছে একই রকম সুন্দর। মাঝে দিনগুলো বড্ড একঘেয়ে আর বস্তাপচা।" -"সত্য যদি বস্তাপচা হয়, তবুও সে সত্যের বদল হয়না। কি হারিয়েছি, কি পেয়েছি, তার হিসেব কষতে মন চায়না আর।" -"কি চায় তোর মন? আমাকে বল।" -"বসন্তের ভোররাতে শিশির ভেজা সোঁদা গন্ধটা মন ভরে মেখে নিতে। চোখ জোড়া সবুজ,চলে যেতে হবে জেনেও আপ্রাণ ভালোবাসা। উন্মাদনা ভরা চিরসবুজের দৃষ্টিকোণ।

জীবন আকস্মিক - মনোরঞ্জন গড়াই || গল্প || ছোটগল্প || বড় গল্প || অনুগল্প || Story || Short story

  জীবন আকস্মিক         মনোরঞ্জন গড়াই গত রোববার আমার বাইকটির জীর্ণ হয়ে যাওয়া সিট কভারটি পাল্টাতে গিয়েছিলাম দাদুর দোকানে।          যাই হোক সেখানে গিয়ে দেখলাম দোকানের মালিক অর্থাৎ বয়স্ক দাদুটি সেখানে নেই।  প্রতিবার এখানেই আমি সিটকভার পাল্টাই কারণ যে দাদুর কথা বললাম তাঁর আন্তরিক ব্যবহার আমাকে মুগ্ধ করে।           টাকা কম থাকলে বা অন্য কোন অসুবিধা থাকলে তাঁর কাছে কাজ করাতে কোন অসুবিধাই হয় না।  যাই হোক আমি তাঁকে না দেখে অনুমান করলাম হয় তিনি আসেননি নতুবা শরীর খারাপ হয়েছে।           যাই হোক যে লোকটি ছিল তাকে বলে সিটকভারটি লাগালাম।          পয়সা দিতে যাব এমন সময় কি মনে করে বলে ফেললাম - দাদুকে দেখছি না শরীর খারাপ নাকি?           লোকটি বললেন দাদু দেওয়ালে আছেন।           আমার মাথা ঘুরে গেল। দেওয়ালে আছেন মানে?            লোকটি বললেন - বাবু পেছনের দেওয়ালে তাকান।                   এতক্ষণে লক্ষ্য করলাম পর্দা থাকায় আমি পিছনের দেয়াল দেখতে পাইনি। লোকটি পর্দা সরিয়ে দিতে আমি দেখলাম দাদুর ছবিটি দেয়ালে টাঙানো  এবং ছবিতে মালা দেওয়া রয়েছে।           লোকটি বললেন - দাদা মানুষের জীবনের কোন দাম

দূরদৃষ্টি - রানা জামান || গল্প || ছোটগল্প || বড় গল্প || অনুগল্প || Story || Short story

  দূরদৃষ্টি         রানা জামান প্রিয় নেতার আশীর্বাদ নেবার জন্য ছেলে নবীনসহ হরিহরবাবু স্থানীয় সাংসদ রবিশঙ্করের শহরের বাড়িতে এলেন। হাতে মিষ্টির প্যাকেট। দারোয়ান আটকে দিলো ওদের। কিন্তু হরিহরবাবু জানেন দারোয়ান ওকে বেশিক্ষণ আটকে রাখতে পারবে না-সাংসদ ওর নাম শোনার সাথে সাথে ভেতরে ডেকে নেবেন। কারণ, সাংসদ জানেন ওর হাতে কত ক্ষমতা! ওর এই ক্ষমতা হলো ভোট। ওর হাতে প্রচুর ভোট। হরিহরবাবুর এলাকায় হাজার ভোটার আছে, যা প্রতিবছর বেড়েই চলেছে। এই সকল ভোটার হরিহরবাবুকে দেবতার মতো মানে এবং ওর কথামত ভোটও প্রদান করে থাকে। ঘটনাচক্রে নবীনের জন্মও হয়েছে রবিশঙ্করের গাড়িতে। ঐদিন এম্বুলেন্স আসতে বিলম্ব হওয়ায় রবিশঙ্কর তাঁর গাড়ি দিয়ে হরিহরের সন্তানসম্ভবা স্ত্রীকে হাসপাতালে পাঠাবার ব্যবস্থা করেন; কিন্তু গাড়িতেই নবীনের জন্ম হয়ে যায়। হরিহরবাবু বললেন, স্যার আমাদের চেনেন। আমরা হরিগাতি গ্রাম থেকে এসেছি। আমার নাম হরিহর। হরিহর দারোয়ানের হাতে পঞ্চাশ টাকা গুঁজে দিলে দারোয়ান ওদের ঢুকতে দিলো ভেতরে। নবীনসহ হরিহর ভেতরে ঢোকার সাথে সাথে স্থানীয় এক নেতা ভেতরে ঢুকে রগচটা স্বরে বললো, উপজেলা ইলেকশানে এবার আমাকে নমিনেশন না দিলে খবর আছে আপনা

মাতৃত্ব সে কেবলই অন্তরের - সঞ্চারী ব‍্যা্যানাজ্জী || গল্প || ছোটগল্প || বড় গল্প || অনুগল্প || Story || Short story

  মাতৃত্ব সে কেবলই অন্তরের       সঞ্চারী ব‍্যানাজ্জী খবরের কাগজে বড়ো বড়ো অক্ষরে লেখা "তিয়াশা" নামটা পড়ে বেশ প্রচ্ছন্ন গর্ববোধ করলাম।কাগজে লেখা আছে " বিভাস চক্রবর্তী পরিচালিত বিধবা ছবির জন‍্য সেরা অভিনেত্রীর জাতীয় পুরস্কার পেলেন তিয়াশা"।শুধু নামটাই লেখা পদবী ও ব‍্যাবহার করে না।বয়স মাত্র তেইশ।মাত্র পাঁচ বছরের কেরিয়ারেই জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত নায়িকা বনে গেল।মা হিসাবে ওকে নিয়ে গর্ববোধ তো হবেই তাই না! লক্ষী বেঁচে থাকলে আরও খুশি হত।শুধু লক্ষী কেন হারাধনও কি কম খুশি হত!চেয়ারে বসে পেপার পড়তে পড়তে আজ বড্ড পুরনো দিনের কথাগুলো মনে পড়ছে।এই হয়েছে আমার এক ব‍্যামো বয়স বাড়তে না বাড়তেই স্মৃতিচারণায় মেতে উঠি যখন তখন।আর স্মৃতির ঝাঁপি তো আপনা আপনিই খুলে যায়।আরে শরীরের বয়স বেড়ে গেছে তো কি হয়েছে?কিন্তু মনের বয়স তো আর বাড়েনি আমি বাড়তেও দিইনি।ওই যে এখন কার একটা গান আছে না "দিল তো বাচ্ছা হ‍্যা জি"।ওইরকম কিছুটা।আমার বয়স একষট্টি কর্তার বয়স সত্তর।আর মেয়ের বয়স তো বললামই,সব মিলিয়ে আমরা বাড়িতে সাত জন সদস্য ।কে কে?ওই তো আমরা তিনজন আর চারজনের মধ্যে হল গিয়ে একজন ড্রাইভার রমেশ,রান্নার কাজ

তুলি - অভিজিৎ দাস || গল্প || ছোটগল্প || বড় গল্প || অনুগল্প || Story || Short story

  তুলি     অভিজিৎ দাস  বাইরে সোনাঝরা নরম রোদ । মাঠের সবুজ ঘাসগালিচার ওপর যেন গুঁড়ো গুঁড়ো সোনা মুঠো ভরে ছড়িয়ে দিচ্ছে । ভাইয়ের হাত ধরে দৌড়ে বাগানে এল তুলি । এই সময়টা বাগানটা যেন আরও রঙিন হয়ে যায় । রং বেরঙয়ের প্রজাপতি দল বেঁধে গাছে গাছে উড়ে বেড়ায় । কোনোটা সাদা, কোনোটা হলুদ , কোনোটা নীল আর কালো , কোনওটার গায়ে আবার বিভিন্ন রঙ দিয়ে আঁকা । ভারী সুন্দর লাগে তুলির । শরৎ আসব আসব করছে । নীল আকাশে সাদা মেঘের দল পানসী ভাসিয়ে এক দিক থেকে আরেক দিকে চলেছে ।         “ দেখ দিভাই, কি সুন্দর ওই প্রজাপতিটা !” – টিটু বলল । “ হ্যাঁ , নীল আর সাদা রঙের ওপর কালো গোল গোল ফুটকি । খুব সুন্দর । ” ওহ , বলতে ভুলেই গেছিলাম । তুলির ভাইয়ের নাম টিটু । একমাথা ঝাঁকড়া চুল । টানা চোখদুটোতে স্বপ্ন ভরা । প্রতিদিন সকালে তুলি আর টিটু বাগানে চলে আসে । ওদের বাড়ির একপাশে লম্বা বাগান । সামনের দিকে সবুজ ঘাসের লন । সকালের দিকে একঝাঁক ছাতারে পাখি আসে । ওদের ক্যাঁচর-ম্যাচরে ঘুম ভেঙে যায় তুলির ।          একটা সাদা-কালো প্রজাপতি বসেছে ওই টগর ফুলের ওপরে । তুলি একটু এগিয়ে যায় । ধুস্ ! দু পা এগোতেই টুক করে উড়ে যায় । বড্ড দুষ্টু প্রজাপতিটা