Sunday, August 29, 2021

সপ্তম সংখ্যার সম্পাদকীয়






 মানসিক উত্তেজনায় বিকারগ্রস্থ মানুষের হৃদয় থেকে কবিতা বের হতে পারে। ভাববার বিষয় তার কাছে প্রেম ও আছে আবার বেকারত্বের আর্তনাদ আছে। তাই কবিতার কাঁচামাল হিসেবে এর থেকে ভালো আর কি হতে পারে! এক আকাশ ভাষান্তরে জর্জরিত না করে একটি গাছের পাতা গুণতে থাকার সমান শব্দ প্রয়োগে কবিতা গুচ্ছ হয়ে ওঠে আরও বেশি উজ্জ্বল এবং বেদনাদায়ক। ভালোবাসার আর অন্তর্নিহিত আর্তনাদ বলেও একটি কথা আছে। সেই নিয়ে কবি মন আরও বেশি উৎসুক। তাই লিখুন নতুন নতুন প্রেম। ভালোবাসার নরম ও বেদনাদায়ক চাদরে ভরে উঠুক আমাদের সকলের প্রিয় পত্রিকা World Sahitya Adda. ভালো থাকুন। সুস্থ থাকুন। পাশে থাকুন আমাদের।



                                           ধন্যবাদান্তে

                                 world sahitya adda



---------------------------------------------------------------------------




Saturday, August 28, 2021

সপ্তম সংখ্যার সূচিপত্র(২১ জন)

 সম্পূর্ণ সূচিপত্র




বাংলা কবিতা ও ছড়া---


তৈমুর খান, তীর্থঙ্কর সুমিত, সত্যেন্দ্রনাথ পাইন, মায়া বিদ, সুব্রত মিত্র, মিঠুন রায়, ক্ষুদিরাম নস্কর, অভিজিৎ হালদার, সুনন্দ মন্ডল, স্বপ্না বনিক, জয়তী দেওঘরিয়ার, গোবিন্দ মোদক।



বাংলা গল্প--


রানা জামান, অমিত পাল, ডঃ রমলা মুখার্জী




বাংলা প্রবন্ধ---


রামপ্রসাদ সরকার।




ইংরেজি কবিতা--


Soumendra Dutta Bhowmick.




Photography----


 Amit Pal, ARISHNA SARKAR.

Monday, August 23, 2021

Photography by ARISHNA SARKAR

 



Photography by Amit Pal

 



Poet ‎Sunanda Mandal's one English poem

 Blood 

                ‎ 

                ‎

My blood is the same as yours, 

Just different in humanity. 


You 

We 

The wind. 


Let's all run to reach the goal, 


You are selfish 

I try selflessly. 

Although selfish in your words. 

In fact blood speaks.

Poet Soumendra Dutta Bhowmick's one English poems

 UNDERNEATH


 


Under the ground you and I


          Try to purchase


The forbidden diabolical love.


Don’t care at all then,


Who cares for this insignificance


Than to look our ugly bluff?


 


Under the ground you and I


          Have no slightest shy!


To be sincerely unfold


We freely think and drink.


Who cares for such unaccounted meal


Than to lose our pure gold?

কথাসাহিত্যিক সুদীপ ঘোষাল -এর উপন্যাস (অন্তিম পর্ব)

 ইউরেকা ইউরেনাস



(৬)

নাটুবাবু বললেন, আমি বামুনের ছেলে। ভূত আছে বুঝলেন। শুনুন আমি বলি, শিবের অনুচর দেবযোনিবিশেষ (ভূতনাথ)। অশরীরী প্রেত বা পিশাচ জীব, প্রাণী (সর্বভূতে দয়া)। ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য বস্তুসমূহের মূল উপাদান পঞ্চভূত।পরিণত দ্রবীভূত, বাষ্পীভূত বিদ্যমান, রয়েছে এমন ̃ .কাল বি. অতীত কাল ̃ ভূতপ্রেতের দ্বারা আক্রান্ত বা আবিষ্ট। ̃ .চতুর্দশী. কার্তিক মাসের কৃষ্ণাচতুর্দশী তিথি। ভূত হলো অশরীরি পুরুষ আত্মা, আর পেত্নী অশরীরি মেয়ে আত্মা। অপঘাত, আত্মহত্যা প্রভৃতি কারণে মৃত্যুর পর মানুষের অতৃপ্ত আত্মা ভূত-পেত্নী হয়ে পৃথিবীতে বিচরণ করতে পারে। অন্যান্য জীবজন্তু বা প্রানীও তাদের মৃত্যুর পরে ভূতে পরিণত হতে পারে। বাংলায় ভূতকে মাঝে মাঝে প্রেতাত্মা হিসেবেও উল্লেখ করা হয়। প্রেতাত্মার নারীবাচক শব্দকে পেত্নী হিসেবে এবং পুরুষবাচক শব্দকে প্রেত বলা হয়ে থাকে। বাংলার সংস্কৃতিতে অনেক ধরনের ভূতের বিশ্বাস রয়েছে; তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু হলো -----

আর হলো নারী ভূত যারা বেঁচে থাকতে কিছু অতৃপ্ত আশা ছিল এবং অবিবাহিতভাবে মৃত্যুবরণ করেছে। পেত্নী শব্দটি সংস্কৃত প্রেত্নী শব্দ থেকে এসেছে এসব ভূত সাধারনত যে কোন আকৃতি ধারন করতে পারে, এমনকি পুরুষের আকারও ধারণ করতে পারে। এসব ভূত সাধারনত বেঁচে থাকতে কোন অপরাধ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকে এবং মৃত্যুর পর অভিশিপ্ত হয়ে পৃথিবীতে বিচরণ করে। পেত্নীরা সাধারনত ভীষণ বদমেজাজী হয়ে থাকে এবং কাউকে আক্রমনের পূর্ব পর্যন্ত স্পষ্টতই মানুষের আকৃতিতে থাকে। পেত্নীদের আকৃতিতে একটিই সমস্যা রয়েছে, তা হলো তাদের পাগুলো পিছনের দিকে ঘোরানো। সংস্কৃত শব্দ শাকচুন্নি থেকে এসেছে। এটা হলো অল্পবয়সী, বিবাহিত মহিলাদের ভূত যারা বিশেষভাবে তৈরি বাঙ্গালি শুভ্র পোষাক পরিধান করে এবং হাতে শঙ্খ বা শাঁখা পরিধান করে। শাঁখা হলো বাঙ্গালি বিবাহিত মহিলাদের প্রতীক। শাকচুন্নিরা সাধারনত ধনী বিবাহিত মহিলাদের ভেতর ভর করে বা আক্রমন করে যাতে করে তারা নিজেরা সেই মহিলার মত জীবন যাপন করতে পারে ও বিবাহিত জীবন উপভোগ করতে পারে। লোকগাঁথা অনুসারে জলাভূমির ধারে আম গাছে বাস করে এবং সুন্দর তরুণ দেখলে তাকে আকৃষ্ট করে ফাঁদে ফেলে। কখনো কখনো সে তরুণকে জলাভূমি থেকে মাছ ধরে দিতে বলে। কিন্তু সাবধান, শাকচুন্নিকে মাছ দেয়া মানে নিজের আত্মা তার হাতে সমর্পণ করা!

   কোনো চোর মারা গেলে চোরাচুন্নি হতে পারে। পূর্ণিমা রাতে এরা বের হয় এবং মানুষের বাড়িতে ঢুকে পড়ে অনিষ্ট সাধন করে। বাড়িতে এদের অনুপ্রবেশ ঠেকানোর জন্য গঙ্গাজলের ব্যবস্থা আছে। এ ধরনের ভূতেরা মাছ খেতে পছন্দ করে। মেছো শব্দটি বাংলা মাছ থেকে এসেছে। মেছো ভূত সাধারনত গ্রামের কোন পুকুর পাড়ে বা লেকের ধারে যেখানে বেশি মাছ পাওয়া যায় সেখানে বসবাস করে। মাঝে মাঝে তারা রান্নাঘর বা জেলেদের নৌকা থেকেও মাছ চুরি করে খায়। বাজার থেকে কেউ মাছ কিনে গাঁয়ের রাস্তা দিয়ে ফিরলে এটি তার পিছু নেয় এবং নির্জন বাঁশঝাঁড়ে বা বিলের ধারে ভয় দেখিয়ে আক্রমণ করে মাছ ছিনিয়ে নেয়।এ ধরনের ভূত সচরাচর দেখা যায় না। পেঁচাপেঁচি ভূত ধারনাটি পেঁচা থেকে এসছে এর স্ত্রী বাচক হলো পেঁচি। এরা জোড়া ধরে শিকার করে থাকে। বাংলার বিভিন্ন জঙ্গলে এদের দেখা যায় বলে বিশ্বাস করা হয়। এরা সাধারনত জঙ্গলে দুর্ভাগা ভ্রমণকারীদের পিছু নেয় এবং সম্পূর্ণ একাকী অবস্থায় ভ্রমণকারীকে আক্রমন করে মেরে ফেলে ও এরা শিকারের দেহ ভ্যাম্পায়ার স্টাইলে ছিড়ে ছিড়ে খায়। মনে করে মুসলমান ভূত হল এই মামদো। ব্রাহ্মণের আত্মা, সাদা ধুতি পরিহিত অবস্থায় দেখা যায়। এরা সাধারণত পবিত্র ভূত হিসেবে বিবেচিত। বলা হয়ে থাকে, কোনো ব্রাহ্মণ অপঘাতে মারা গেলে সে ব্রহ্মদৈত্য হয়। এছাড়া পৈতাবিহীন অবস্থায় কোনো ব্রাহ্মণ মারা গেলেও ব্রহ্মদৈত্য হতে পারে। এরা কারো প্রতি খুশি হয়ে আশির্বাদ করলে তার অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জিত হয়, কিন্তু কারো প্রতি বিরাগ হলে তার সমূহ বিপদ। দেবদারু গাছ , বেল গাছ কিংবা বাড়ির খোলা চত্বরে বাস করে। মাথাবিহীন ভূত। অত্যন্ত ভয়ংকর এই ভূত মানুষের উপস্থিতি টের পেলে তাকে মেরে ফেলে। কোনো দুর্ঘটনায়, যেমন রেলে কারো মাথা কাটা গেলে, সে স্কন্ধকাটা হতে পারে। ভয়ংকর হলেও, মাথা না থাকার কারণে স্কন্ধকাটাকে সহজেই বিভ্রান্ত করা যায়। গ্যাসীয় ভূত। এরা জেলেদেরকে বিভ্রান্ত করে, জাল চুরি করে তাদের ডুবিয়ে মারে। কখনো কখনো অবশ্য এরা জেলেদেরকে সমূহ বিপদের ব্যাপারে সতর্ক করে থাকে।খুব ভয়ংকর ভূত। অন্যান্য ভূত সাধারণত নির্জন এলাকায় মানুষকে একা পেলে আক্রমণ করে, কিন্তু নিশি গভীর রাতে মানুষের নাম ধরে ডাকে। নিশির ডাকে সারা দিয়ে মানুষ সম্মোহিত হয়ে ঘরের দরজা খুলে বেরিয়ে পড়ে, আর কখনো ফিরে না। কিছু কিছু তান্ত্রিক অন্যের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেয়ার জন্য নিশি পুষে থাকে।গভীর নির্জন চরাচরে মানুষকে পেলে তার গন্তব্য ভুলিয়ে দিয়ে ঘোরের মধ্যে ফেলে দেয় এই ভূত। মানুষটি তখন পথ হারিয়ে বার বার একই জায়গায় ফিরে আসে, এবং এক সময় ক্লান্ত হয়ে মারা যেতে পারে। অনেকটা নিশির মত এই ভূত গ্রামের পাশে জঙ্গলে বসে করুণ সুরে বিলাপ করতে থাকে। কান্নার সুর শুনে কেউ সাহায্য করতে এগিয়ে গেলে তাকে ইনিয়ে বিনিয়ে গল্প বানিয়ে জঙ্গলের আরো গভীরে নিয়ে মেরে ফেলে। ছোট বাচ্চারা এর কান্নায় বেশি আকৃষ্ট হয়। হলো সেইসব মানুষের আত্মা যারা বাঘের আক্রমনে মৃত্যুবরণ করেছে বলে বিশ্বাস করা হয়। সাধারনত সুন্দরবন এলাকায় এধরনের ভূতের কথা বেশি প্রচলিত কারণ বাঘের অভাশ্রম হলো সুন্দরবন। এসব ভুতেরা জঙ্গলে মুধ আহোরনে আগত গ্রামবাসীদের ভয় দেখায় এবং বাঘের সন্নিকটে নিয়ে যেতে চেষ্ঠা করে। মাঝে মাঝে এরা গ্রামবাসীদের ভয় দেখানোর জন্য বাঘের স্বরে কেঁদে উঠে।এ শ্রেণীর ভূতেরা পথিকের গন্তব্য ভুলিয়ে দিয়ে ঘোরের মধ্যে ফেলে দেয় এবং অচেনা স্থানে নিয়ে আসে। মাঝে মাঝে মানুষ একই রাস্তায় বারবার ঘোরপাক খেতে থাকে। ভূতরা কোন নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌচ্ছার পর তার শিকারকে মেরে ফেলে। এক্ষেতে শিকার তার জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। এধরনের ভূতদের রাতে গ্রামের মাঠের ধারে পথের মধ্যে দেখা যায়। শিকার সবসময় একাকী থাকে বা দল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।ডাইনি মূলত কোন আত্মা নয়, এরা জীবিত নারী। বাংলা লোকসাহিত্যে সাধারনত বৃদ্ধ মহিলা যারা কালো জাদু বা ডাকিনী বিদ্যাতে পারদর্শী তাদেরকেই ডাইনী বলা হয়ে থাকে। এটা বিশ্বাস করা হয় যে, ডাইনীরা গ্রামের ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের ধরে নিয়ে তাদের হত্যা করে এবং তাদের রক্ত খেয়ে ১০০ বছর বেঁচে থাকে। হাঁড়ি গড়গড়া ---- রাতে নির্জন পথে, হাঁড়িকে পিছু ধাওয়া করতে দেখা যায়। শুঁয়োরা ভুত ---- মাঠে যারা মল ত্যাগ করতে যান তারা দেখতে পান।

-

তোতন বললেন, ভূত কোথায় থাকে? 


নাটুবাবু বললেন, শেওড়া, তাল, দেবদারু, বেল, অশ্বত্থ প্রভৃতি গাছে একটি দুটি ভূতের দেখা পেতে পারেন। কিন্তু বেশি সংখ্যায় ভূত দর্শনের অভিলাষ থাকলে, আপনাকে যেতে হবে বিজন বনে, তেপান্তরে, কিংবা ভূষণ্ডির মাঠে।


সুমন্বাবু দেখলেন দোতলার জানলা দিয়ে হাত বাড়িয়ে পালিয়ে গেল একজন।


সুমন্ত বাবু আততুন বাবু কাউকে কিছু না বলে ছুটতে লাগলেন তার পিছন পিছন। না তবু কিছু বুঝতে পারলেন না কথা বলার থাকে ওদের চোখ যে এত তীব্রভাবে তাকে দেখতে পাবে জানতে পারেননি নাটক দেখতে পাননি কিন্তু সুমন্ত উপহার দিতে লাগলেন আর তার পিছনে পিছনে শত্রু তারা প্রায় মাইলখানেক পরে একটা পুকুরের ধারে এসে দাঁড়িয়ে পড়লেন।


সুমন্ত বুক রকমারি বারবার করে একটা ফাঁকা আওয়াজ করলেন সঙ্গে সঙ্গে সেই ভূতের সরদারের হাতজোড় করে দাঁড়িয়ে পড়ল তোতনের পায়ের সামনে।

সেই ভূত কাল জোব্বা পরা পায়ে রণপা নিয়ে বলছে আমি দোতালার উপরে সাহায্যে হাত বাড়ায় আর লোককে ভয় দেখায় আমাদের এখানে চোরাকারবারির ব্যবসা আছে সে চোরাকারবারির ব্যবসা মানুষ থাকলে অসুবিধা হয় তাই মানুষকে ভয় পাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখে।


সে আরও বললো যেটা সেটা আরো আশ্চর্য ঘটনা সে বলল বাবু আমরাতো নকল ভূত কিন্তু একটা আসল ভূত কিন্তু আমরা দেখেছি এটা আপনাকে কি বার করতেই হবে আমরা নয় অপরাধী আমাদের জেলা দেবেন ঠিক আছে কিন্তু এই ভূত থাকে না বার করতে পারলে গ্রামের লোক ষষ্ঠীতে বাঁচতে পারবে না।


সেই চোখে থানায় হ্যান্ডওভার করে সুমন্ত আপাতত ফিরে এলেন নাটক আছে নাটকের সুমন্ত বললেন পরকাল নিয়ে আপনার খুব চিন্তা না তাহলে শুনুন পরকাল সম্বন্ধে আমার কাছে কিছু কথা, পরকাল হল একটি জগতের ধারণা, যে ধারণা অনুসারে ব্যক্তির শরীরের মৃত্যু হয়ে গেলেও তার চেতনার অস্তিত্ব থেকে যায়। পরকালের বিভিন্ন ধারণা অনুযায়ী মৃত্যুর পরেও থেকে যাওয়া ব্যক্তির এসেন্স কোন আংশিক উপাদান অথবা পূর্ণাঙ্গ আত্মা হতে পারে। এই এসেন্স কোন ব্যক্তিগত পরিচয় বহন করতেও পারে আবার নাও পারে যেমন ভারতীয় দর্শনের কথা। পরকালের উপর বিশ্বাস দর্শন থেকে আসতে পারে অথবা অতিপ্ররাকৃত বিশ্বাস থেকে আসতে পারে।কিছু লোকায়ত মতবাদ অনুসারে, মৃত্যুর পরও অস্তিত্ববহন করা এই সত্তা কোন অতিপ্রাকৃত জগতে অবস্থান করে, আবার অন্যান্য লোকায়ত মতবাদ অনুসারে এই সত্তার নবজন্ম ঘটে এবং পুনরায় জীবনচক্র শুরু হয়। এক্ষেত্রে পূর্বের জীবন সম্পর্কে কোন স্মৃতি থাকে না। এই মতবাদ অনুসারে সত্তার একটি অন্য জগতে প্রবেশের আগ পর্যন্ত বারবার জন্ম ও মৃত্যুর প্রক্রিয়া চলতেই থাকে। পরকাল সংক্রান্ত বেশিরভাগ বিশ্বাসেরই উৎপত্তি মন থেকে।কিছু বিশ্বাস ব্যবস্থা বিশেষ করেপ্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী মৃত্যুর পর সত্তা জীবিতাবস্থায় পৃথিবীতে তার নিয়ম অনুযায়ী বা কোন নির্ধারিত বিশেষ স্থানে গমন করে। অন্যদিকে পুনর্জন্ম বিশ্বাস অনুযায়ী মৃত্যুর পর কৃতকার্য অনুসারে সত্তার প্রকৃতি সরাসরি নির্ধারিত হয়ে যায়, এতে ভিন্ন কোন সত্তার সিদ্ধান্তের প্রয়োজন হয় না।

তোতন বললেন, প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী, মৃত ব্যক্তির যা জীবিত ব্যক্তিদের সামনে দৃশ্য, আকার গ্রহণ বা অন্য কোনো উপায়ে আত্মপ্রকাশ করতে সক্ষম। গল্প প্রায়শই শোনা যায়। এই সকল বিবরণীতে ভূতকে নানাভাবে বর্ণনা করা হয়েছে: কখন অদৃশ্য বা অস্বচ্ছ বায়বীয় সত্ত্বায়, কখনও বা বাস্তবসম্মত সপ্রাণ মানুষ বা জীবের আকারে। প্রেতাত্মার সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করে ভবিষ্যদ্বাণী করার বিদ্যাকে কালাজাদু বলা হয়ে থাকে।প্রাক-শিক্ষিত সংস্কৃতিগুলোর মধ্যে ভূতের প্রথম বিবরণ পাওয়া যায়। সেযুগে কিছু নির্দিষ্ট ধর্মীয় প্রথা, অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া, ভূত-তাড়ানো অনুষ্ঠান ও জাদু অনুষ্ঠান আয়োজিত হত মৃতের আত্মাকে তুষ্ট করার জন্য। প্রচলিত বর্ণনা অনুযায়ী, ভূতেরা একা থাকে, তারা নির্দিষ্ট কিছু ঘুরে বেড়ায়, জীবদ্দশায় যেসকল বস্তু বা ব্যক্তির সঙ্গে তাদের সম্পর্ক ছিল সেগুলিকে বা তাদের তাড়া করে ফেরে। তবে ভূত বাহিনী, এমনকি ভৌতিক জীবজন্তুর কথাও শোনা যায়।


নাটুবাবু বললেন, মৃত্যুর মধ্য দিয়ে আত্মা দেহত্যাগ করে। জীবাত্মা অবিনশ্বর। তবে কখনো কখনো জীবিত সামনে আকার ধারন করে। এটি পূরাণভিত্তিক একটি আধিভৌতিক বা অতিলৌকিক জনবিশ্বাস। প্রেতাত্মা বলতে মৃত ব্যক্তির প্রেরিত আত্মাকে বোঝায় ।সাধারণের বিশ্বাস কোনো ব্যক্তির যদি খুন বা অপমৃত্যু(যেমন: সড়ক দুর্ঘটনা, আত্মহত্যা ইত্যাদি) হয় তবে মৃত্যুর পরে তার হত্যার প্রতিশোধের জন্য প্রেতাত্মা প্রেরিত হয় । বিভিন্ন ধরনের রয়েছে এ সম্পর্কে ।


সুমন্তবাবু বললেন, বিভিন্ন ধর্ম ও সংস্কৃতিতে ভূতের অস্তিত্ব বিশ্বাস করা হয়। আবার কিছু ধর্মে করা হয় না, যেমন ইসলাম বা ইহুদী ধর্মে। এসব ধর্মাবলম্বীদের মতে মানুষের মৃত্যুর পর তার আত্মা চিরস্থায়ীভাবে পরলোকগমন করে আর ইহলোকে ফিরে আসে না।


কিন্তু আজকের ভূত হল একটা সামান্য চোর। সে ভয় দেখাত সবাইকে। তবে ও আরেকটা ভূতের কথা বলল। তোতন বলল, আমার মনে হয় ওটা এলিয়েন। ওরা পৃথিবী দেখতে আসে আবার চলেও যায়।


নাটুবাবু বললেন, তাহলে বলছেন অন্য গ্রহেও প্রাণ আছে? 


সুমন্ত বাবুই সারাইনোডু বাবুকে চুপ করতে বললেন তারপর তিনজনই বেরিয়ে গেলেন চুপিচুপি জঙ্গলের ভেতর জঙ্গলের ভেতর তারা বসে থাকলেন মশা কামড় খেয়েও তারা প্রায় দু'ঘণ্টা বসে থাকলেন তারপর জঙ্গলে একটা ছায়ামূর্তি দেখলেন দেখলেন সেই ইউরেনাস গ্রহ থেকে আসা এলিয়েন সে জিজ্ঞেস করছে তোমরা জঙ্গলে কি করছো তখন সুমন্ত অবশ করে বললেন আপনাকে দেখার জন্যই আমরা বসে আছি এলিয়েন বললেন আমরা বেশিক্ষণ পৃথিবীতে থাকি না শুধু কিছুক্ষণ পর্যবেক্ষণ করেই আমাদের মহাকাশযানে চলে যায় আচ্ছা তোমরা ভালো থেকো।


এতক্ষণ নাটুবাবু কোন কথা বলেন নি। চুপ করে ছিলেন। এবার তিনি চিৎকার করলেন, ইউরেকা ইউরেকা। সুমন্তবাবু বললেন, ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে অ্যামেরিকান জোত্যির্বিজ্ঞানী পারিসভাল লোয়েল ভেবেছিলেন যে তিনি মঙ্গলের পৃষ্ঠে একটি খাল বয়ে যেতে দেখেছেন।সেখান থেকেই তিনি ধারণা করেছিলেন যে পৃথিবীর প্রতিবেশী এই গ্রহে শুধু প্রাণের অস্তিত্বই নয়, সেখানে হয়তো অগ্রসর এক সভ্যতাও থাকতে পারে।তখনই মানুষের কল্পনা আরো পাখা মেলতে শুরু করে। এইচ জি ওয়েলস লিখে ফেলেন তার বিখ্যাত উপন্যাস- দ্যা ওয়ার অব দা ওয়ার্ল্ডস।এছাড়াও বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর ওপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছে হলিউডের বহু সিনেমা।কিন্তু এই কল্পনায় জল ঢেলে দেয় মঙ্গল গ্রহ অভিমুখে পাঠানো কয়েকটি মহাকাশ যান।৬০ ও ৭০ এর দশকের এসব অভিযান থেকে ধারণা হতে থাকে থাকে যে মঙ্গলে কোনো অস্তিত্ব নেই খালের।তারপর ভাইকিং ল্যান্ডার থেকে ওই গ্রহের প্রথম ছবি পাঠানো হয় পৃথিবীতে। বিজ্ঞানীরা তখন মনে করলেন এটি অত্যন্ত ঠাণ্ডা একটি গ্রহ।ওখান থেকে পাঠানো হয় মাটির নমুনা। প্রথমে ধারণা করা হয়েছিলো প্রাণেরও নমুনা আছে ওখানে কিন্তু পরে সেটাও বাতিল হয়ে যায়।ফলে গত দুই দশক ধরে মঙ্গল গ্রহ সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন- এটি শুকনো, ধূলিময় লাল একটি গ্রহ।তারপর নব্বই এর দশকে এবং একবিংশ শতাব্দীর প্রথম দশকে ওই আরো বেশ কয়েকটি মিশন পরিচালিত হয়।সেখান থেকে যেসব তথ্য পাঠানো হয় সেখান থেকে বিজ্ঞানীরা এটা ধারণা করতে শুরু করেন যে ওই গ্রহের কোথাও কোথাও উপরিপৃষ্ঠের নিচে হয়তো বরফ থাকতে পারে। তারপর ধারণা করা হলো সেখানে কোনো এক কালে পানির প্রবাহ ছিলো। ছিলো হ্রদ, এমনকি সমুদ্রও ছিলো।কিন্তু মঙ্গলে তখন এমন এক বিপর্যয় ঘটলো, যা বিজ্ঞানীরা আজও বের করতে পারেনি, যে ওই গ্রহটির জল ও পরিবেশ ধ্বংস হয়ে গেলো।কিন্তু গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার বিজ্ঞানীরা তাদের নাটকীয় এক আবিষ্কারের খবর ঘোষণা করলেন মঙ্গলে আছে তরল পানির প্রবাহ।নাসা বলছে, “মঙ্গল গ্রহে তরলের অস্তিত্ব আছে বলে আমরা এই প্রথমবারের মতো প্রমাণ পেয়েছি। ওই গ্রহে আমরা এমন কিছু খুঁজে পেয়েছি যেটা থেকে স্পষ্ট যে আজকের মঙ্গল গ্রহে জল প্রবাহ আছে। বছরের পর বছর ধরে ওই গ্রহে যতো মহাকাশ যান, যতো মিশন পাঠানো হয়েছে, যেসব তথ্য ও ছবি পাওয়া গেছে, সেসব থেকে তরলের ব্যাপারে আন্দাজ করা গিয়েছিলো। তাহলে প্রাণী থাকাও আশ্চর্যকথা নয়। 


তোতন বলল, মানুষ নিজেই নিজের ক্ষতি করছে, আজ পর্যন্ত সেসবের পক্ষে কোনো প্রমাণ ছিলো না।”ব্যবহারের পর যে প্লাস্টিক আমরা ছুড়ে ফেলছি সেটা সমুদ্রে যে খাদ্যচক্র আছে তাকে বিনষ্ট করছে।বিজ্ঞানীরা বলছেন, প্লাস্টিকের বোতল ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে ছড়িয়ে পড়ছে সমুদ্রে আর সেসব প্লাস্টিক সামুদ্রিক প্রাণীর জন্যে বড়ো রকমের হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।ইংল্যান্ডের প্লেমাউথ ম্যারিন ল্যাবরেটরি একটি গবেষণা করে দেখিয়েছে, প্লাস্টিকের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কণা যখন পানির সাথে মিশে যায়, খাদ্যচক্রের একবারে তলদেশে থাকা প্রাণীরা এসব গলাধঃকরণ করে থাকে।ধারণা করা হয়, প্রতি বছর ৮০ লাখ টন প্লাস্টিক দ্রব্য সাগরে ফেলা হয়।এলিয়েন বলেছিল,মানুষ তোমরা সাবধান হও। তা না হলে ধ্বংস হয়ে যাবে পৃথিবীর অস্তিত্ব। 

লেখিকা ডঃ রমলা মুখার্জী -এর একটি গল্প

 ভূতের গিফট



গরমের ছুটিতে ছেলেদুটিকে নিয়ে গেলাম কালিংপঙ। আমার স্বামী গভঃ অফিসার, বাংলার বিভিন্ন স্থানে পোস্টিং হয়। এবারে পোস্টিং নর্থ বেঙ্গলে। আমি পশ্চিমবঙ্গের হুগলীতে ছেলেদের নিয়ে থাকি। আমি ঐখানেই একটি স্কুলে শিক্ষকতার কারণে ছুটি কাটাতেই কেবল স্বামীর কাছে ছেলেদের নিয়ে দেখা করতে আসি। দেখাও হয় আবার বেড়ানোও হয়। ছেলেদেরও খুব মজা হয়। ওরা তো বেড়াতে পেলে আর কিছু চায় না।

    কালিংপঙের কালিঝোরার পিডব্লুডির বাংলোতে আমরা পৌঁছালাম বেলা এগারোটা নাগাদ। বাংলোটা পাহাড়ের ওপর, সামনে বেশ কিছুটা বাঁধানো রাস্তা। দুপাশে সুন্দর ফুলের বাগান। আমি লক্ষ্য করলাম এখানকার লজ্জাবতী গাছের পাতাগুলো সমতলের লজ্জাবতীর গাছের তুলনায় বেশ বড় আর বেশ বড় বড় বেগুনী ফুলও হয়ে আছে গাছগুলোতে। ছেলেদের দেখাবো বলে যেই পাতা ছুঁয়ে পাতার মুড়ে যাওয়া দেখাতে গেছি দেখি ফুলের মধ্যে থেকে একটা অচেনা সাপ ফনা তুলেছে। ছেলে দুটোকে নিয়ে ছুটছি সেই বাঁধানো রাস্তা ধরে বাংলোর দিকে। সাপটাও হিস হিস আওয়াজ করতে করতে ছুটছে সেই বাগান ধরে, তারপর বাগানে মিলিয়ে গেল। হাঁপাতে হাঁপাতে বাংলোতে এসে ঘটনাটা বলতেই বাংলোর নেপালী কুক কাম চৌকিদার বাহাদুর বলল এসব পাহাড়ী সাপ খুবই বিষাক্ত। ছোঁবল মেরে যদি বিষ ঢেলে দেয় তো মৃত্যু ছাড়া গতি নেই কারণ পাহাড়ের এই প্রত্যন্ত এলাকাতে নৈসর্গিক দৃশ্য যতই মনোরম হোক না কেন কোন চিকিৎসালয়ই এখানে নেই। একটা সামান্য দেশলাই আনতেও এখন থেকে একমাইল পথ যেতে হয়, সেখানে ডাক্তার বা ওষুধ এসব তো দূরের কথা। আমার স্বামী তো খুব বকাবকি করলেন সবসময় আমি গাছপাতায় হাত দিয়ে ছেলেদের উদ্ভিদের অনেক জিনিস বোঝাই বলে। কি করবো উদ্ভিদবিদ্যা নিয়ে পড়াশোনা করার জন্যে ছেলেদের গাছপালা দেখিয়ে প্রাকৃতিকে যতদূর সম্ভব বোঝাতে চেষ্টা করি। 

     দুপুরে বেশ ভাল রকম খাওয়াদাওয়া হল। আমার স্বামী সমস্ত রকম জিনিসপত্র কিনেই বাংলোতে ঢুকেছিলেন। বাহাদুর দারুণ রান্নাও করেছিল। খাওয়ার পর বাহাদুর ঘুরে-ঘুরে সুবিশাল বাংলোটা আমাদের দেখালো। বড় ছেলে একটা ছোট্ট ঘরে ঢুকতে যাচ্ছিল। বাহাদুর ছুটে এসে তার হাত ধরে টেনে বলল, “মুন্না, উধারসে মত যানা, ও ধারমে ভূত রহতা হ্যায়।” বড় ছেলে তো ভূতের ভয়ে আমাকে জাপটে ধরল। ছোট ছেলে খুব সাহসী, ও বলল, “মা ভূত দেখবো।” ওর বাবা তাড়াতাড়ি ওদের টেনে অন্যপাশে নিয়ে গেলেন। আমার কিন্তু মনে ভীষণ কৌতূহল হতে লাগল। তারপর নির্ধারিত রুমে এসে ছেলেদুটো ও স্বামী ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়লেন। আমার চোখে ঘুম নেই। আমি কিচেনে গিয়ে বাহাদুরকে জিজ্ঞেস করলাম, “বাহাদুর, উসকে ঘরমে ঘোস্ট রহে গা, ডরো নেহি, সাচ বাতাও মুঝে।”

বাহাদুর খুব জোর দিয়ে বলে, “ঝুট নেহি, সাচ বাত হ্যায় মেমসাব, উস রুম পে এক আদমী কা ঘোস্ট থা।” তারপর ও যে ঘটনা বর্ণনা করল শুনে আমি এক্কেবারে তাজ্জব বনে গেলাম। 

      এক বটানীর তরুণ লেকচারার চার বছর আগে এই বাংলোতে এসেছিলেন তাঁর এক বন্ধুর সুপারিশে। তিনি তাঁর গবেষণার জন্যে নানান গাছ-গাছড়া রোজ সংগ্রহ করতেন। কিন্তু তিনি ঐ সংগ্রহ করতে গিয়ে বিষাক্ত সাপের কামড়ে মারা যান এবং তারপর থেকেই ভূত হয়ে নাকি এই ঘরে রয়ে গেছেন। ঐ ঘরে তাঁর অনেক কাগজপত্র এখনও রয়েছে। আমি সব কিছু শুনে কিছুতেই বিশ্বাস করলাম না, হেসেই উড়িয়ে দিলাম ওর কথা।

       রাত্রিবেলা সবাই ঘুমিয়ে পড়লে মোবাইলের টর্চটা জ্বালিয়ে পা টিপে টিপে ঢুকলাম সেই নিষিদ্ধ ঘরটায়। ঘরে ঢুকতেই একটা জোরালো হাওয়া গায়ে লাগল, এবার একটু ভয় পেয়ে গেলাম। মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ি নিয়ে একজন মাঝবয়সী লোক নাকি সুরে বলে উঠল, “কিঁরে আঁমায় চিঁনতে পাঁরছিস? আঁমি ইঁউনিভার্সিটিতে তোঁর ব্যাঁচ মেঁট পুঁলক রেঁ?” শুনে আমি মোটেই পুলকিত হলাম না, বরং বেশ ভয় পেয়ে গিয়ে বললাম, “পুলক তুই, তা এখান কি করছিস?” 

পুলকের ভূত বলল, “আঁমি এঁখানে এঁসেছিলাম এঁকটা রেঁয়ার প্রঁজাতির ফাঁর্নের খোঁজে, পেঁয়েওছিলাম, এঁই ফাঁর্নটার পাঁতার রঁস অঁনেকগুলো রোঁগের ওঁষুধ, বেঁশ কঁয়েকটা রোঁগের উঁপশম হঁবে খেঁলে, কিঁন্তু এঁই প্রঁজাতিটা এঁখনও অঁনাবিষ্কৃতই রঁয়ে গেঁছে রেঁ। কিঁন্তু আঁমার সঁব পেঁপারস এঁখানে রঁয়েছে। এঁগুলো নিঁয়ে আঁমায় মুঁক্ত কঁর প্লিঁজ রঁমু। আঁমার সঁব পেঁপারস তুঁই ইঁউনিভার্সিটিতে গিঁয়ে আঁমার গাঁইড ডঃ বিঁকাশকলি কুঁশারীর হাঁতে দিঁবি। তুঁই তোঁ চিঁনিস বিঁকাশ স্যাঁরকে। কোঁন বিঁশ্বাসযোগ্য লোঁক পাঁচ্ছিলাম নাঁ যেঁ কাঁগজগুলো তাঁর হাঁতে দেঁব। আঁমি জাঁনি তুঁই এঁই পেঁপারগুলোর কঁদর ঠিঁক বুঁঝবি, আঁর তুঁই এঁগুলো ঠিঁক জাঁয়গায় পৌঁছে দিঁবি। এঁগুলো ঠিঁক জাঁয়গায় পৌঁছে দিঁয়ে আঁমায় বাঁচা। তুঁই আঁমায় বাঁচা? এঁই নেঁ আঁমার সঁব পেঁপারস, ধঁর।”

       আমি কি করে ভূতকে বাঁচাবো বুঝতে পারলাম না, ভূত যে মরে গিয়েও বাঁচতে চায় এই প্রথম উপলব্ধি করলাম। বললাম, “ঠিক আছে, তুই চিন্তা করিস না, আমি ঠিক পৌঁছে দেবো, কথা দিলাম।” 

-আঃঁ তুঁই আঁমায় বাঁচালি আঁমার আঁত্মাকে মুঁক্ত কঁরার কঁথা দিঁয়ে।

পুলক ভূতকে বাঁচানোর শপথ নিয়ে বুক ঢিপ ঢিপ করতে করতে ঘরে এসে ওর সব কাগজপত্র সুটকেসের তলায় কাপড়ের ভাঁজে লুকিয়ে রাখলাম।

      কলকাতায় ছেলেদের নিয়ে ফিরে গেলাম। আমার স্বামী নর্থ বেঙ্গলে রয়ে গেলেন। ফিরেই ইউনিভার্সিটি গিয়ে বিকাশ স্যারের সঙ্গে দেখা করে পুলকের সব কাগজপত্র দিলাম। পেপারসগুলি পেয়ে স্যার ভীষণ পুলকিত হলেন। কিন্তু আমি ঘটনাটা এড়িয়ে গিয়ে বললাম যে ঐ কালিঝোরা বাংলোর একটা ঘর থেকে পেয়েছি। ওখানেই পুলকের সাপের কামড়ে মৃত্যু হয়েছে সেকথা স্যার জানতেন। স্যার আমাকে বললেন, “তুমি যে কি অমূল্য সম্পদ এনে দিলে তুমি জানো না। পুলক ওর জীবনে গবেষণাকেই ধ্যান জ্ঞান করেছিল, বড় মর্মান্তিক ওর মৃত্যু। ওর নামেই আমি এই অজানা ফার্নের নাম দেবো, যাতে ওর মৃত্যুর পরেও ও অমর হয়ে থাকবে।”

      স্যারকে সব জমা দিয়ে নিশ্চিন্ত মনে রাত্রে ঘুমিয়ে পড়লাম। মাঝরাতে দেখি আমার নাম ধরে কে নাকি সুরে ডাকছে, বুঝলাম পুলকের গলা। বললাম, “পুলক আমি তো স্যারকে জমা দিয়েছি, স্যার তোর নামেই ঐ অচেনা ফার্ন গাছটাকে বিশ্বের মাঝে পরিচিতি দেবেন বলেছেন।”

      পুলক বলে, “জাঁনি জাঁনি, সঁব শুঁনেছি। তোঁর সাঁথে ঐঁ পেঁপারগুলোর সঁঙ্গে আঁমার অঁশরীরী আঁত্মাও ঘুঁরে বেঁড়িয়েছে। এঁবার আঁমার মুঁক্তি। তাঁই তোঁর সঁঙ্গে শেঁষ দেঁখা কঁরতে এঁলাম। তুঁই এঁইটা নেঁ।”                    

          একটা খুব মলিন মানিব্যাগ পুলক আমার হাতের মধ্যে জোর করে গুঁজে দিল। কি ঠাণ্ডা পুলকের হাত। আমার তো হাড় হিম হয়ে গেল। ভয়ে তো কথাই বলতে পারলাম না। পুলক বলল, “মাঁনিব্যাগ যাঁ আঁছে তোঁদের ছেঁলেদের জাঁমা প্যাঁন্ট আঁর তোঁর এঁকটা ভাঁল শাঁড়ি হঁয়ে যাঁবে। তুঁই নাঁ কঁরিস নাঁ। আঁমার এঁত বঁড় উঁপকারের এঁই গিঁফটটা তোঁকে দিঁয়ে আঁমি নিঁশ্চিন্তে আঁমার আঁত্মাকে মুঁক্ত কঁরতে পাঁরব।” 

       এই বলে আমায় কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়ে পুলক হাওয়ায় মিলিয়ে গেল।

       আমি ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইলাম। তারপর কিন্তু সত্যিই আর পুলকের আত্মা কোনদিন আসে নি আমায় বিরক্ত করতে। ভূতের কাছ থেকে গিফট পাওয়ার মত স্মরণীয় ঘটনা আমার মনে চিরজীবনের মত গাঁথা হয়ে থাকল। 

প্রাবন্ধিক রামপ্রসাদ সরকার -এর একটি প্রবন্ধ




রমাপদ চৌধুরী 

(জন্ম ১৯২২, প্রয়াণ ২০১৮)

(বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কথাসাহিত্যিক প্রয়াত রামপাদ চৌধুরী গত মাসের ২৯ জুলাই, ৯৯তম জন্মবার্ষিকীতে পদার্পণ করেছেন। তাঁর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করছি একটি প্রতিবেদনের মাধ্যমে) 




প্রথম উপন্যাস পড়ার অনুভূতি





রেলওয়ে শহর খড়গপুরে স্কুল-জীবনের বেশিরভাগ সময়টাই কেটেছে তাঁর। পিতার কর্মসূত্রে খড়গপুরে থাকা। আমারও জন্ম, শিক্ষাদীক্ষা সবই সেই রেলওয়ে শহরে। রেলওয়ে কলোনিতে যে বাংলোয় (তখন ওঁদের বাংলোটিই একমাত্র দোতলা ছিল) ওঁরা থাকতেন তার ক’টা বাড়ির পরেই ছিল আমাদের রেলওয়ে কোয়ার্টার। উনি যে রেলওয়ে স্কুলে পড়াশোনা করেছেন— আমার অগ্রজ, আমিও সেই স্কুলে পড়াশোনা করেছি।

তখন আমাদের যৌবনের সন্ধিক্ষণ। হাতে এলো তাঁর প্রথম উপন‌্যাস ‘প্রথম প্রহর’। বইটি পেয়ে সে কী উন্মাদনা। পাতা উল্টে দেখি এ যে আমাদেরই নিয়ে লেখা— রেলওয়ে শহর খড়গপুরের একটা ছোটখাটো ইতিহাস। তারপর সে বই পড়ে দু’-তিন রাত ঘুমোতে পারিনি। আনন্দ-বেদনার আতিশয‌্যে ছটফট করেছি। এক অনন‌্য অনুভূতিতে মন ভরে উঠেছে।


।।দুই।।

রমাপদ চৌধুরী তাঁর প্রথম উপন‌্যাস “প্রথম প্রহর” লেখেন ১৯৫৪ সালে। সেটি আমি পড়ার সুযোগ পাই ১৯৫৮ সালে, সবে স্কুলের গণ্ডি পার হয়েছি। সেই আমার উপন‌্যাস পড়ার প্রথম অভিজ্ঞতা যার অনুভূতির রেশ আজও আমার মণিকোঠায় জাজ্বল‌্যমান। তার কিছু স্মৃতিচারণ করব। সেদিন বইটা হাতে পেয়ে এক নিঃশ্বাসে পড়ে রোমাঞ্চিত, শিহরিত হয়েছিলাম। এক অনাস্বাদিত প্রাপ্তিতে মনটা ভরে উঠছিল। উপন‌্যাসটির শুরু সেদিন আমার কিশোর মনে দোলা এনে দিয়েছিল।

লেখকের কথায়— “আলো-ঝলমল স্টেশনে এসে ট্রেন থামলো। পানিপাঁড়েটা বোধহ চিৎকার করে স্টেশনের নাম ঘোষণা করলো। সেই অনেক-চেনা নাম।”

সুদীর্ঘ একটি যুগ পার হয়ে গেছে, এ নাম শুনিনি বহুদিন, এ বাতাসে নিঃশ্বাস নিইনি কতকাল। জানালায় মুখ বাড়িয়ে যেন শৈশবের, প্রথম যৌবনের স্পর্শ নিতে চাইলো মন। তন্ন তন্ন করে কি যেন খুঁজলাম। না, সব বদলে গেছে। পুরোনো দিনের স্মৃতিকে বিদায় দিয়ে যেন নতুন ফুল ফোটাতে উন্মুখ হয়ে উঠেছে সেই ছোট্ট শহর। সেই ছোট্ট শহরটির নাম খড়গপুর—লেখকের জন্মভূমি, আমারও। আবাল‌্যের স্মৃতি জড়িয়ে আছে যে শহরের অলিতিগলিতে। স্টেশনে ট্রেনের কামরায় লেখকের সঙ্গে, এক সুবেশা সৌন্দর্যময়ীর দেখা। তাকে তিনি চিনেও চিনতে পারেন নি। অথচ নারীটি অনায়াসে লেখকের ডাক নাম ধরে ডেকে বলল, “তিমুদা না?” হঠাৎ দেখা নারীটি লেখকের কাছে অপরিচিতাই রয়ে গেলেন, বইটির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যা সেদিন আমার কিশোর মনে ঔৎসুক‌্যের ছায়া ফেলেছিল।


।।তিন।।

লেখকের ব‌্যর্থ প্রেম সেদিন আমার কিশোর মনে জ্বালা ধরিয়েছিল। লেখক পান্নাকে ভালবেসেছিলেন। তার প্রকাশ ঘটলো লেখকের কথায়—“পূজোর সময় রাত জেগে যাত্রা দেখছিলাম। হঠাৎ লক্ষ‌্য করলাম, পান্না ডাকছে। কাছে যেতেই বললে, আমাকে একটু বাড়ি পৌঁছে দিয়ে আসবে?

—চলো।

নির্জন রাস্তায় বেরিয়ে চুপচাপ পাশাপাশি হেঁটে চলেছিল.....

দেওদার গাছের নির্জন অন্ধকারটুকু পার হয়েই পান্নাদের বাড়ি, প্রায় পৌঁছে গেছি তখন।

তারপর হঠাৎ ফিরে দাঁড়ালো।

সমস্ত শরীরে কি এক উষ্ণতা বোধ করলাম।

কি এক অদৃশ‌্য প্রবৃত্তি। উন্মাদের মতো কাছে টেনে নিলাম, বুকে জড়িয়ে ধরলাম তাকে। —ছাড়ো তিমুদা, ছেড়ে দাও। ফিসফিস করে পান্না বললে। তবু সে কথা যেন স্পর্শ করলো না আমাকে।

চুম্বনের মধ‌্যে যে এমন এক অদ্ভুত আনন্দ, এমন এক বিচিত্র অনুভূতি, কে জানতো। কে জানতো নারীবক্ষের কোমল স্পর্শে এমন বিচিত্র উন্মাদনা জাগে।

আলিঙ্গন থেকে মুক্তি পেয়েই ছুটে পালালো পান্না।’

লেখকের শীতের রাতে ভীরু অভিসারের কথা পড়ে আমার কিশোর মনে এক অজানা অনুভূতির ছোঁয়া লেগেছিল। লেখকের বর্ণনায়—

“একে একে সব আলো নিভে যেতো। কাঠের সিঁড়িতে শব্দ হতো। তারপর একসময় টের পেতাম, মা, বাবা, সেজদি সকলে শুয়ে পড়েছে। চারদিক নিঃশব্দ আর অন্ধকার।

প্রচণ্ড শীতে গরম চাদরটা গায়ে জড়িয়ে এসে অপেক্ষা করতাম বাগানের এক কোণে, শিউলি গাছটার তলায়।

সেদিন ছিল পূর্ণিমার রাত। আর ঠান্ডা হাওয়ার দাপট। 

প্রতীক্ষার কাল গুণে গুণে হয়তো অধৈর্য হয়ে উঠেছিলাম। পায়চারি করতে করতে কেবলই তাকাচ্ছিলাম পান্নাদের বাড়িটার দিকে।

হঠাৎ নিঃশব্দে কপাট খুললো। দ্রুত পায়ে বেরিয়ে এলো পান্না।

কাছে আসতেই বিস্মিত হলাম।

—এ কি? গরম জামা গায়ে দাওনি? চাদর নাওনি কেন?

পান্না শীতে কাঁপতে কাঁপতে বললে, গরম জামা চাদর সব মা-র ঘরে। আনতে গেলেই ঘুম ভেঙে যাবে।

বললাম, তবে চলো আমার ঘরে।

না, না। প্রতিবাদ করে উঠলো পান্না।

হাসলাম—এত অবিশ্বাস?

কৌতুকের চোখ তুলে তাকালো ও মৃদু হেসে বললে, অবিশ্বাস তোমাকে নয়।

বলেই আমার চাদরের আধখানা টেনে নিয়ে গায়ে জড়ালে।

বুকের আরো কাছে পেলাম। এত কাছে বোধহয় আর কোনদিন পাইনি।

অথচ কতো স্বপ্নই না বুনতাম ওকে ঘিরে। কল্পনার রঙ ওরও মনে কম ছিল না।

তারপর হঠাৎ একদিন কান্নায় ভেঙে পড়লো। কোনো কথা বললে না, কোনো কারণ জানালো না, শুধু কাঁদলো আর কাঁদলো।”

অনুসন্ধান করে লেখক জানতে পারলেন, পান্নার বিয়ের ঠিক হয়ে গেছে উপাধ‌্যায়ের ছেলে অজয়ের সঙ্গে। লেখকদের বাগানেই বিয়ের মেরাপ বাঁধা হবে। লেখক কোনো কথা বলতে পারেননি। তাঁর সমস্ত বুক যেন ব‌্যথায় ভেঙে পড়েছিল।

বিয়ের দিন আলো ঝলমল করে উঠেছিল চারিদিক। লাল সামিয়ানার গায়ে যেন সলমা-চুমকির চমক। সমস্ত পৃথিবী যেন খুশিতে উছলে উঠেছিল। লেখকের চোখে শুধু কান্না আর কান্না।

লেখকের ভাষায়—

“আর আমার চোখে শুধু কান্না। এ এক অবাধ‌্য ব‌্যথা। ব‌্যর্থতার বেদনা, অভিমানের পাথর যেন চেপে বসেছিল বুকের ওপর।” লেখকের পান্নাকে না পাবার বেদনা, ব‌্যর্থতার গ্লানি, অভিমানের বোঝা সেদিন আমার কিশোর মনেও বিষাদের ছায়া ফেলেছিল।


।।চার।।

সেই বয়সে লেখকের চুরি করে বিলাইতির স্নানের দৃশ‌্য দেখার যে বর্ণনা বইটিতে তুলে ধরেছেন তা পড়ে আমার কিশোর মন রোমাঞ্চিত হয়েছিল।

তাহলে লেখকের কথায় আসি—

“— শালাই আছে বাবুজী?

কথাটা স্পষ্ট মনে আছে আজও। দেশলাই চেয়েছিল বিলাইতি, আর ফিরে তাকিয়ে চমকে উঠেছিলাম।

ভোর বেলায় ঘুম ভাঙতেই নীচে নেমে এসে উঠোনের কলে মুখে-চোখে জল দিচ্ছিলাম।

পাশে কে বাসন মাজছে লক্ষ‌্য‌ করিনি।

......পুরোনো রাউতানিটা যে চলে গেছে, নতুন কেউ এসেছে, তা জানতাম না।

উনোন ধরাবার জন‌্যেই হয়তো দেশলাই চেয়েছিল সে।

বাবার পকেট থেকে দেশলাইটা এনে দিলাম।

দেশলাইটা হাত পেতে নেবার সময় কেমন এক রহস‌্যের চোখে তাকালো বিলাইতি। তারপর ঠোঁটের হাসি চেপে রেখে উনোন ধরাতে চলে গেল। 

নেশা ধরিয়ে দিয়ে গেল আমার মনে।

স্বপ্ন বুনতাম মনে মনে কখনো পান্নাকে ঘিরে, কখনো বিলাইতিকে ঘিরে।

মনে আছে, সকালের কাজ শেষ করে চলে যাবার আগে উঠোনের কলে স্নান করতো বিলাইতি। আর সেই সময়টুকুর জন‌্যে দোতলার জাফরির আড়ালে দাঁড়িয়ে থাকতাম আমি।

লুকিয়ে লুকিয়ে দেখতাম বিলাইতির যৌবন জোয়ারের ছন্দ। নিটোল দুটি স্তনের মধ‌্যে পৃথিবীর রহস‌্য অনুভব করতাম।

যৌবনে এমন এক নির্বোধ মুহূর্ত আসে, যখন নিজের হাত রুচির বশ‌্যতা স্বীকার করে না।

তেমনি এক নির্বোধ মুহূর্তের অসংযমকে খিলখিল করে হেসে উড়িয়ে দিয়েছিল বিলাইতি।

এ যেন অতি তুচ্ছ নগণ‌্য এক পাগলামি। হেসে উড়িয়ে দেওয়া ছাড়া আর কিছুই করবার নয়, এমনি ভাবেই খিলখিল করে হেসে উঠেছিল বিলাইতি।

লজ্জায় আত্মধিক্কারে পালিয়ে এসেছিলাম।

লেখকের এই স্বীকারোক্তি পড়ে সদ‌্য যৌবনের চৌকাঠে পা দেওয়া আমি সেদিন রাতে ঘুমুতে পারিনি।


।।পাঁচ।।

আজ বয়সের প্রান্ত-সীমায় এসে ভাবি, যৌবনের সেই উন্মাদনা আজ আর নেই ঠিকই, তবু আজও তাঁর লেখা “প্রথম প্রহর” পড়লে বাতাসটা বড্ড ভারি ভারি লাগে, বুকের ভেতরটা ব‌্যথায় চিনচিন করে ওঠে, হয়তো বা পান্নার কথা ভেবে, নতুবা যেসব চরিত্রের কথা আমি এ লেখায় তুলে ধরিনি তাদের অবয়ব চোখের সামনে ভেসে ওঠে বলে। লেখক যেসব চরিত্র চিত্রিত করেছেন, বাস্তবে তাঁরা ছিলেন ঠিকই,লেখক তাঁর কলমের জাদুতে তাঁদের গ্রহণীয় ও বরণীয় করে তুলছেন। একটা ছোট্ট উদাহরণ দিই। আমার কাকা খড়গপুরে গোলবাজারে বাঙালি দুর্গা মন্দিরের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন গোড়াপত্তনের দিন থেকে। কোনো এক বছর দুর্গা মন্দিরে ইলেকট্রিক আলো লাগাতে গিয়ে তড়িতাহত হন, তাঁকে বাঁচাতে গিয়ে আরো দু-তিনজন। চিৎকার চেঁচামেচি শুনে কেউ একজন এসে সুইচ বন্ধ করে দেয়। কাকারা প্রাণে বেঁচে যান, কিন্তু কাকার ডান হাতটা চিরতরে অকেজো হয়ে যায়। এই ঘটনা লেখক “নিমাইদা”র চরিত্রের মাধ‌্যমে তুলে ধরেছেন। এই রকম আরও উদাহরণ আছে যা লিখে বোঝা ভারি করতে চাই না।

লেখক বয়োপ্রান্তে এসে স্মৃতিচারণ মূলক রচনা “হারানো খাতা” ধারাবাহিক ভেবে ‘দেশ’ পত্রিকায় লিখতে শুরু করেন। লেখাটি আবার আমায় খড়গপুরে ফেলে আসা দিনগুলোয় নিয়ে যায়। তাঁর এই লেখাটি পড়ে এতো বেশি সেন্টিমেন্টাল হয়ে পড়ি যে ওঁর সঙ্গে ফোনে কথা না বলে পারিনি। ফোন করার আগে মনে দ্বিধা ও সংকোচ ছিল, অত বড় মাপের মানুষ ফোনে যদি কথা না বলেন। উনিই ফোনটা ধরেছিলেন। পরিচয় দিতে খড়গপুরের কতো কথাই না জিজ্ঞেস করলেন। আমার কাকার খবরও নিলেন। বুঝলাম তাঁর হৃদয়ের গোপন কুঠুরিতে খড়গপুরের স্মৃতি এখনও জাজ্বল‌্যমান।


।।ছয়।।

দীর্ঘ দিন আমি খড়গপুর ছাড়া হলেও আমার শৈশব ও কৈশোরের স্মৃতি এখনও মানসপটে ভেসে ওঠে। কার্যকারণে খড়গপুরে গেলে স্মৃতির সরণি বেয়ে হারানো দিনগুলোকে খুঁজে ফিরি।

গোলাবাজারে বাঙালি দুর্গা মন্দিরে এসে কি যেন তন্ন তন্ন করে খুঁজি। পেছন দিকের কুয়োর পাড়ে যখন আসি, তখনই মনে হয় সদাশিব জ‌্যাঠা তাঁর উদাত্ত কণ্ঠে তুলসীদাস রামায়ণ থেকে পাঠ করছেন—

পহেলা প্রহরমে সবকোই জাগে

দোসরা প্রহরমে ভোগী।

তিসরা প্রহরমে তস্কর জাগে

চৌঠা প্রহরমে যোগী।।

লেখক সুমন সাহা -এর একটি মুক্ত গদ্য

 গোপন ঢেউ


আধোঘুমে বিশ্রামে তুমি উদাসীন হবার পরেত্তে বা'পকেটে কৌতূহল নিয়া তোমাদের বাসার বাউন্ডারি দেয়াল পেরিয়ে অনেক ভাবনার খসড়া করা গ্যাছে।...


গ্রাম্য সোঁদা মাটির গন্ধ কিছু শব্দ ভাবে। লিখে না। সেই শব্দগুলা তোমার অনুমতি চোখ ডাকলেই যায়। গিয়ে― থরোথরো প্রেমে আর জ্বরে ভুগে কিছুদিন বিছানা লয়ে―তোমারেই ভাবে।



লেখক অমিত পাল -এর একটি গল্প

 গরীবের ভূত

                              


একদা একটা গ্রামের ঘটনার কথা আজ বলব৷

ঘটনাটি শুনেছিলাম অবশ্য ঐ গ্রামের কিছু বয়স্কদের কাছ থেকে৷ গ্রামটির নাম লাভপুর৷

বীরভূম জেলার অন্তর্গত এই গ্রামটি খুব একটা বড়োও নয়, আবার খুব একটা ছোটও নয়৷ মোটামুটি একটা বটে৷ এই গ্রামে কিছু ধনী পরিবার, কিছু মাঝারি পরিবার এবং কিছু দরিদ্র পরিবারও ছিল৷ প্রাচীন প্রথা অনুযায়ী গ্রামের ধনী ব্যক্তিরা সর্বদায় পদতলে অবদমন করে রাখত, অত্যাচার করত গরীবদের উপর৷ এমনকি তখন জমিদারী প্রথাও প্রচলন ছিল৷ ফলে ধনীরা আরও ধনী ও গরীবরা আরও গরীব হতে লাগল৷


      এই গ্রামেই বাস করত এক দরিদ্র ব্রাহ্মণ৷

তার নাম কানু চট্টোপাধ্যায়৷ তিনি ছিলেন খুবই দরিদ্র এক ব্রাহ্মণ৷ তার কোনো বউ, ছেলে-মেয়ে ছিল না৷ ফলে সে একা অতি দারিদ্রতার সঙ্গে জীবন যাপন করত৷ ঐ গ্রামে একটা বড় এবং পুরাতন কালী মন্দির ছিল৷ সেখানেই সে নিত্য কালীপূজায় রত থাকত৷ আর সঙ্গে কিছু যজমানগিরি করে নিজের জীবিকা নির্বাহ করত৷


   ব্রাহ্মণটি অবশ্য সবার সাথেই ভালো ব্যবহার করত৷ সবার সাথে সৎ আচরণও করত৷ অবশ্য অন্যান্য সবাই ব্রাহ্মণটির সাথে ভালো আচরণ করত, ব্রাহ্মণটিকে শ্রদ্ধাও করত৷ এমনকি ব্রাহ্মণের অধিকাংশ কথা গ্রামের মানুষ জন মেনে চলত৷ ব্রাহ্মণটিও মনে মনে ভাবত গ্রামের লোকজন তাকে এই ভাবেই সহযোগীতা করে যাবে সারাজীবন৷ কিন্তু কি থেকে কি হয়ে গেল? থাক সে কথা, পরে আসছি৷


                       হঠাৎ ঐ গ্রামে একটা ঘটনা ঘটে গেল৷ ঘটনাটি হল এই, ঐ গ্রামের এক জমীদার, নাম তার বীররাম চৌধুরি৷ সে পার্শ্ববর্তী গ্রাম থেকে বাণিজ্য করে খুশি মনে বাড়ি ফিরছিল৷

সঙ্গে ছিল তার লোকজন তথা নায়েব, পনেরো জন লেঠেল, পনেরো জন অশ্বারোহী ইত্যাদি৷

এখানে বলে রাখি এই গ্রামের সাথে অন্য গ্রামে যাওয়ার রাস্তাটি ছিল বাঁশ বনে ঘেরা এক বন্য পথ৷ এখানে সূর্য্য অস্ত যাওয়ার আগেই যেন সন্ধ্যা নেমে আসে৷ বীররাম চৌধুরি আজ কুড়ি দিন পর নিজের গ্রামে ফিরছে৷ মন তার বড়ই আনন্দে আপ্লুত, এটা যে শুধু বাড়ি ফেরার তাগিদেই নয়, বরং সে বাণিজ্যে ভালো মুনাফা অর্জন করেছে৷

     

   সে যখন বাড়ি ফিরছিল তখন সন্ধ্যা হয়ে গেছে৷ সে যখন গ্রামের বড় রাস্তার মুখে এল, তখন সে দেখল রাস্তার একধারে তাদের থেকে পঞ্চাশ - ষাট হাত দূরে ডানদিকে বাঁশ ঝোপের আড়ালে সাদা কাপড় পরাহিত একটা কী দাঁড়িয়ে রয়েছে৷ এই দৃশ্য দেখা মাত্রই সবার মধ্যে এক ভীতির সঞ্চার ঘটল৷ বীররাম চৌধুরি নামে বীর হলে কী হবে? সে ভূতকে খুব ভয় পেত৷ তারা অবশ্য এই দৃশ্য দেখা মাত্রই সেখানে দাঁড়িয়ে পরেছিল৷ কিছুক্ষণের মধ্যেই ঐ মুর্তিটি তাদের দিকে এগিয়ে আসতে লাগল৷

তাকে এগিয়ে আসতে দেখে ভয়ে সবাই দে-দার

ছুট দিল৷ বীররামের লোকজন সমস্ত বাণিজ্যের জিনিস ফেলে পালিয়ে গেল যে যেখানে খুশি৷

           

                          পরদিন সকালে গ্রামের এই খবর প্রচার হয়ে গেল৷ জমিদার বীররাম চৌধুরি সকাল বেলাতেই ঐ দু'দিক বাঁশবন ঘেরা পথে তার ফেলে আসা বাণিজ্যের জিনিসপত্র গুলি আনার জন্য লোক পাঠাল৷ কিন্তু তার লোকজন সেখানে গিয়ে কোন জিনিসের হদিশ পেল না৷ ফলে ঐ জমিদার খুব চিন্তায় পরে গেল৷

   

   এই ভাবে কেটে গেল কয়েকদিন৷ ঐ রাস্তা ধরে অবশ্য গ্রামের লোকেরা সন্ধ্যার পর কোথাও যায় না৷ তবে কিছুদিন পরই আবার ঐ একই ঘটনা ঘটল৷ ঐ গ্রামেরই আর এক জমীদার

তার নাম ঘনশ্যাম মিত্র, সেও বীররামের মত অন্য এক গ্রাম থেকে বাণিজ্য করে ফিরছিল তিরিশ দিন পর৷ তখনও ছিল সন্ধ্যার সময়, আর একই ঘটনায় ঘটল৷ কি একটা সাদা কাপড় পড়া জিনিস দেখে তারা ভয়ে পালিয়ে এসেছে নিজেদের বাণিজ্যের জিনিস পত্রও হারিয়েছে বীররামের মতোই৷

         এই ঘটনাটি পুনরাবৃত্তি হওয়ার জন্য গ্রামে একটা হই হই উত্তেজনার সৃষ্টি হল৷ গ্রামবাসীরা সকলেই ভয় পেল এবং সকলের মনে একটা কৌতুহল বাসা বাঁধল৷ সবাই ঐ ব্রাহ্মণ টির কাছে পরামর্শ নিতে গেল৷

       গ্রামের একজন লোক বলে উঠল, আচ্ছা পন্ডিত মশাই ঐ জিনিস টা আসলে কি বলুন তো?

ব্রাহ্মণটিও বলল, হতে পারে কোন ভৌতিক লীলার খেলা!

আবার একজন লোক বলল, যদি ভৌতিক লীলার খেলা হয় তাহলে বাণিজ্যের জিনিসপত্র গুলো নিল কে? ভূতেরা তো আর টাকা-পয়সা নেয় না!

কি জানি? ব্রাহ্মণটি বলল৷ আবার এও বলল,

যদি অলৌকিক কিছু থেকে থাকে, তাহলে ঐ রাস্তায় দিকে না যাওয়ায় শ্রেয়৷

     গ্রামের দুজন সাহসী জোয়ান ছেলে নাম হল 

তাদের এক জগন্নাথ ডোম আর একজন হল রঘুনাথ ডোম, এদের সাহসীকতার নজির সর্বত্র৷

সমাজের বিভিন্ন কাজে এরা সকলকে সাহায্যও করেছে৷ এককালীন এই গ্রামে জগা ডাকাত নামে এক নৃশংস ডাকাতের উপদ্রব ছিল৷ এরা এই ডাকাতকে মেরে গ্রামের কাছ প্রচুর সম্মানও অর্জন করেছিল৷ তারপর থেকে এরা দুজন গ্রামের চৌকিদারের পদ অর্জন করল৷

                           এই ঘটনার বাড়বাড়ন্ত দেখে 

উভয়'ই একটু উৎসাহিত হয়ে বলে উঠল, আচ্ছা

চাটুজ্যে মশাই আমরা দুজনে যদি একবার দেখে আসি জিনিসটা কি? তাহলে কেমন হয়?

            

                       ব্রাহ্মণটি বলল, দেখ অলৌকিক শক্তির কাছে লৌকিক শক্তির সর্বদায় হারই হয়৷ তাই সেখানে তোমাদের নিজেদের সাহসিকতার পরিচয় দিতে যাওয়াটা মূর্খামির সামিল৷

কি জানি কি থেকে কি হয়ে যাবে? তাই তোমাদের সেখানে না যাওয়ায় শ্রেয়৷

   

                    কিন্তু এইভাবে কি চলতে দেওয়া যায় বলুন তো, রঘুনাথ ডোম বলে উঠল৷

না না আপনি যায় বলেন না কেন আমরা একবার জিনিসটা দেখতে চায়!

                তখন ব্রাহ্মণটি বলল, দেখ সেখানে যাওয়া মানে জীবন নিয়ে টানাটানি৷

এবার তোমরা দুজনে যখন সাহস নিয়ে যেতে চাইছ তখন যেতে পার৷ কিন্তু একটা কথা মনে রাখবে তোমাদের যদি কিছু হয়ে যায় তাহলে কিন্তু গ্রাম বাসীরা তোমাদের জন্য দায়ী থাকবে না৷


     ব্রাহ্মণটির বাড়ন সত্ত্বেও তারা দুজনে ঠিক করে নিল তারা যাবেই৷ তাতে তাদের যা হয় হোক৷ এই বলে তারা মন্দির থেকে নিজ নিজ বাড়ি ফিরে গেল৷ বিকেলের দিকে দু'জন মিলে যুক্তি করল সেখানে সন্ধ্যায় যাওয়ার জন্য তারা কি কি করবে এই বিষয়ে৷


                             পড়ন্ত সন্ধ্যায় তারা দু'জনে

হাতে মোটা মোটা দুটি লাঠি নিয়ে বেরিয়ে পরল এবং দু'জনেই এগিয়ে চলল বড়ো রাস্তার দিকে৷

সেই রাস্তায় তারা পৌঁছে কোথাও কিছু দেখতে পেল না৷

       আষাঢ় মাস, দুপুর থেকেই আকাশে মেঘ জমেছে৷ এই সন্ধ্যার দিকে হাল্কাভাবে একটু ঝড়ও দিতে লেগেছে৷ কোথাও কিছু নেই দেখে তারা দুজনে মনে মনে ভাবল সবাই মিথ্যা গুজব রটিয়েছে এবং সেই সময় বৃষ্টি নামার আশঙ্কা বুঝতে পেরে নিজের গ্রামের দিকে ফিরতে চাইল৷ ঠিক তখনই তারা একটা দৃশ্য দেখে থমকে দাঁড়িয়ে পরল৷


         আরে ওটা কি? জগন্নাথ বলে উঠল৷

তারা দুজনই দেখল একটা সাদা কাপড় পরাহিত মুর্তি তাদের সামনে কুড়ি - পঁচিশ হাত দূরে দাঁড়িয়ে রয়েছে৷


             তারা একটু ভয়ও পেল অবশ্য৷ কিন্তু তৎক্ষণাৎ একটা দমকা হাওয়া দিল আর ঐ মূর্তিটির গা থেকে সাদা কাপড়টি উড়ে গেল, তারপর সব পর্দা ফাঁস৷

                   মূর্তির ভিতর থেকে যে স্বরূপটি বেরিয়ে এল সে আর কেউ নয়, তাঁদেরই গ্রামের ব্রাহ্মণ কানু চাটুজ্যে৷

           তখন তারা রেগে গিয়ে ব্রাহ্মণটিকে বাঁশের লাঠি দিয়ে করাঘাত করল৷ আর বলল এগুলি তাহলে আপনারই কারসাজি?

        

                     আজ্ঞে হ্যাঁ, ব্রাহ্মণটি বলল৷ আবার এও বলল, দেখ আমি তো খুব গরীব মানুষ তোমরা তো সবই জান? কি করব বলো এছাড়া আমার কাছে আর কোনো উপায়ও ছিল না৷ জীবিকা অর্জনের জন্য আমাকে এটা করতেই হত৷ তাছাড়া আমি জানতাম মানুষ ভূতকে ভয় পাই, তাই যদি ঐ নিষ্ঠুর জমিদার গুলিকে ভয় দেখিয়ে যদি তাদের মালপত্র লুট করা যায় তাহলে সেটাকে পাপ কাজ বলা যায় না৷ তাই আমি এই পথ ধরেছি৷


আমাকে ক্ষমা করে দাও, ব্রাহ্মণ আবার বলে উঠল৷ তোমরা যেন আমার এই স্বরূপের কথা গ্রামের কাউকে বলো না৷ আমি আর এই কাজ কোনদিনও করব না৷ আমাকে ছেড়ে দাও৷

    

                   তখন জগন্নাথ ডোম বলল, দেখুন আপনি যেই কাজটা করেছেন সেটি অন্যায়ের কাজ৷ এর জন্য আপনাকে শাস্তি পেতেই হবে৷

এই বলে তারা দুজন ব্রাহ্মণটিকে ধরে নিয়ে গ্রামে ফিরে গেল এবং মন্দিরের একটি থামে বেঁধে রাখল৷

       সারা রাত তারা আর বাড়ি না ফিরে ব্রাহ্মণটিকে পাহারা দিতে লাগল৷ পরের দিন সকালে ব্রাহ্মণটির এই ঘটনার কথা সকলেই জানল৷ আর ব্রাহ্মণটির সাজাও হল৷

তবু আজও ঐ রাস্তায় সন্ধ্যার পর কেউ যায় না৷

লেখিকা স্বপ্না বনিক -এর একটি গল্প

 স্বার্থপর পৃথিবী


বাবাকে দাহ করে শশ্মান থেকে ফেরার পথে মিতালী ভাবলো এবার সে কি করবে? বাবার পেনসনের টাকা কটাতেই ওদের সংসার চলতো। মিতালীও দুটো বাচ্চাকে পড়াতো। ওর হাতখরচটা উঠে আসতো। একা নিঃসঙ্গ তরুণী মেয়ে বাড়িতে কি করে থাকবে? এবার বাবাও চলে গেল, Family Pension তো আরও কমে যাবে। মিতালী আর ভাবতে পারছেনা।

পাশের বাড়ির কাকিমা-জেঠিমারা ওকে সান্ত্বনা দিচ্ছে। কিন্তু রাত হলেই তো যে যার বাড়ি চলে যাবে। রাত্রিতে কি করে থাকবে মিতালী? দু’চোখ ভরে নেমে আসে অশ্রুর বন‌্যা। সবাই মিলে মিতালীর বাবার শ্রাদ্ধ সমাধা করে দিলো। মিতালীর এক মামা বর্ধমান থাকে। ছোটবেলায় মিতালীকে খুব ভালবাসতো। এই দুঃসময়ে মামার কথা মনে পড়লো, অনেক চেষ্টা করে মামার ফোন নং জোগাড় করে মামাকে ফোন করলো। কিন্তু মামা কোন আগ্রহ দেখাল না। দশ দিনের মাথা মিতালী মামার কাছ থেকে ৫০০ টাকার Money Order অর্ডার পেলো।

অনেক ভেবে মিতালী বর্ধমান যাওয়া ঠিক করলো কিন্তু সেখানে পৌঁছে মিতালী অবাক হয়ে গেল। মামী ওকে দূর দূর করে তাড়িয়ে দিল। মামাতো বোন রিন্ধি ওর বাবাকে বললো— ‘কাজের এই মেয়েটাকে কোথা থেকে আনলে বাবা? ভালোই হয়েছে, মায়ের খাটুনী কিছুটা কমবে।’ মিতালীর বাবা আজ নেই বলে ওকে এখানে আসতে হলো। মামা কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে বললো— ‘ও তো মিনিদির মেয়ে। ওর বাবা মারা গেছে, তাই এখানে থাকতে এসেছে।’ মিতালীর চোখ জলে ঝাপসা হয়ে এলো। মামার বাড়ি থেকে বেরিয়ে রাস্তার ধারে একটা পাথরের ওপর বসে পড়লো। এখন মিতালী কি করবে? কোথায় যাবে? ও কি আত্মহননের পথ বেছে নেবে? কে দেবে এর উত্তর?

কবি সম্রাট দে -এর একটি কবিতা

 গুটিয়ে রাখা নদী



একটা আস্ত নদী গুটিয়ে রেখেছি বুকপকেটের ভেতর। ভাঁজ ক'রে রাখিনি পরতে পরতে ক্ষয়ে যাওয়ার ভয়, কেটে যাওয়ার ভয় পিছু ছাড়েনি ব'লে। ধীর বহতা সেই নদীর উচ্ছ্বলতা বড়ই ম্লান, নিস্তরঙ্গ প্রায়। তবে যে সম্পদ নদীর গভীরতা বিদীর্ণ করেছে তাতেও তো কম নয় তার সম্মৃদ্ধি। তাই আজও মাঝেমাঝে গুটিয়ে রাখা নদী খুলে টানাটান ক'রে চোখজুড়নো স্বাদ নিয়ে মোহিত হই দীর্ঘদিনের অভ্যেসবশে। গুটিয়ে রাখা নদী খুললেই তার স্বভসবসিদ্ধ বৈশিষ্ট্যে ভিজিয়ে দেয় বুকপকেট, ভিজে যায় অন্তহীন সময়ের প্রবেশদ্বার। কোনও এক কৃষ্ণগহ্বরের গ্রাস হবার ভয়ে গুটিয়ে রাখি নদী, সামলে রাখি বুকপকেটের উন্মুক্ত মুখ এবং পকেটের সীমাহীন জঠর...