লেখিকা স্বপ্না বনিক -এর একটি গল্প
স্বার্থপর পৃথিবী
বাবাকে দাহ করে শশ্মান থেকে ফেরার পথে মিতালী ভাবলো এবার সে কি করবে? বাবার পেনসনের টাকা কটাতেই ওদের সংসার চলতো। মিতালীও দুটো বাচ্চাকে পড়াতো। ওর হাতখরচটা উঠে আসতো। একা নিঃসঙ্গ তরুণী মেয়ে বাড়িতে কি করে থাকবে? এবার বাবাও চলে গেল, Family Pension তো আরও কমে যাবে। মিতালী আর ভাবতে পারছেনা।
পাশের বাড়ির কাকিমা-জেঠিমারা ওকে সান্ত্বনা দিচ্ছে। কিন্তু রাত হলেই তো যে যার বাড়ি চলে যাবে। রাত্রিতে কি করে থাকবে মিতালী? দু’চোখ ভরে নেমে আসে অশ্রুর বন্যা। সবাই মিলে মিতালীর বাবার শ্রাদ্ধ সমাধা করে দিলো। মিতালীর এক মামা বর্ধমান থাকে। ছোটবেলায় মিতালীকে খুব ভালবাসতো। এই দুঃসময়ে মামার কথা মনে পড়লো, অনেক চেষ্টা করে মামার ফোন নং জোগাড় করে মামাকে ফোন করলো। কিন্তু মামা কোন আগ্রহ দেখাল না। দশ দিনের মাথা মিতালী মামার কাছ থেকে ৫০০ টাকার Money Order অর্ডার পেলো।
অনেক ভেবে মিতালী বর্ধমান যাওয়া ঠিক করলো কিন্তু সেখানে পৌঁছে মিতালী অবাক হয়ে গেল। মামী ওকে দূর দূর করে তাড়িয়ে দিল। মামাতো বোন রিন্ধি ওর বাবাকে বললো— ‘কাজের এই মেয়েটাকে কোথা থেকে আনলে বাবা? ভালোই হয়েছে, মায়ের খাটুনী কিছুটা কমবে।’ মিতালীর বাবা আজ নেই বলে ওকে এখানে আসতে হলো। মামা কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে বললো— ‘ও তো মিনিদির মেয়ে। ওর বাবা মারা গেছে, তাই এখানে থাকতে এসেছে।’ মিতালীর চোখ জলে ঝাপসা হয়ে এলো। মামার বাড়ি থেকে বেরিয়ে রাস্তার ধারে একটা পাথরের ওপর বসে পড়লো। এখন মিতালী কি করবে? কোথায় যাবে? ও কি আত্মহননের পথ বেছে নেবে? কে দেবে এর উত্তর?
Comments