প্রাবন্ধিক চাঁদ রায় -এর একটি কবিতা

 ছড়া ও তার প্রকারভেদ

   


প্রখ্যাত গ্রিক দার্শনিক অ্যারিস্টটল তাঁর লেখা 'কাব্যতত্ত্ব' গ্রন্থে বলেছেন-- "মানুষের স্বভাবের মধ্যে কাব্যের সম্ভাবনা রয়েছে। ছন্দ ও সুষমা বোধ মানুষের সহজাত। " এই সহজাত স্বাভাবিক প্রবৃত্তি পরিণতি লাভ করলে নানা পরীক্ষার মাধ্যমে জন্ম নেয় কাব্য। কাব্যের শ্রেণি দুরকম---যাঁরা গভীর প্রকৃতির তাঁরা প্রকাশ করেন মহৎ বা উন্নত ক্রিয়া, প্রকাশ করেন উন্নত ও মহৎ চরিত্র। এঁদের হাতে সৃষ্টি হয়েছে প্রার্থনা ও স্তুতি। অপর পক্ষে যাঁরা লঘু প্রকৃতির তাঁরা প্রকাশ করেন লঘু চরিত্রের লঘু কার্যকলাপ। এঁদের হাতে সৃষ্টি হয়েছে ব্যঙ্গাত্মক রচনা। 

দ্বিতীয় ধারাটির মধ্যে পড়ে ছড়া। ছড়া হচ্ছে মানুষের মুখে মুখে উচ্চারিত ঝংকারময় পদ্য। এটি সাহিত্যের একটি প্রাচীন শাখা। প্রখ্যাত পণ্ডিত ও সাহিত্যিক রামেন্দ্র সুন্দর ত্রিবেদী সর্বপ্রথম এই অমোঘ উচ্চারণ করেছেন, "ছড়া বাংলা সাহিত্যের একটি মূল ধারা। " ছড়া হচ্ছে সবচেয়ে জনপ্রিয় লোকসাহিত্য। গ্রামবাংলায় এমন কেউ নেই যে, সে ছড়া জানে না বা শোনে নি। ছড়া মনে রাখাও সহজসাধ্য। দুচার লাইনের ছড়া মানুষের মনে দারুণ ভাবে প্রভাব বিস্তার করে। গ্রামের রস পিপাসু মানুষ রসের সন্ধানে ছড়ার আশ্রয় নেয়। বিশেষত মেয়েলি ছড়া সেই ভূমিকা পালনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। 

বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রবাদপ্রতীম ব্যক্তিত্ব ও পণ্ডিত ড: আশুতোষ ভট্টাচার্য তাঁর লেখা, 'লোকসাহিত্য' গ্রন্থে ছড়াকে তিন ভাগে বিভক্ত করেছেন। ১) লৌকিক ছড়া ২) সাহিত্যিক ছড়া ৩) আধুনিক ছড়া। 

*লৌকিক ছড়া*

গ্রাম বাংলার লোকজ উপাদান থেকে উৎপত্তি লাভ করেছে এমন ছড়া হল লৌকিক ছড়া। এই ছড়াতে রচয়িতার নাম জানা যায় না। কারণ এগুলি মুখে মুখে প্রচলিত ও কোথাও এর লিখিত রূপ থাকে না। লৌকিক ছড়া বিভিন্ন ধরনের হয়। যেমন ছেলে ভুলানো ছড়া, সাধারণ নীতি মূলক ছড়া (খনার বচন, প্রবচন), ধাঁধার ছড়া এবং সর্বোপরি ব্রতের ছড়া। ব্রতের ছড়া গুলি কে সাধারণত শোলোক বলা হয়)। এই সব ছড়া গুলি নিতান্তই গ্রাম্য মহিলাদের নিজস্ব সম্পদ এবং দেশজ শব্দ যুক্ত আঞ্চলিক উপভাষায় ব্যক্ত। 

*সাহিত্যিক ছড়া*

ছড়া যখন কোনো কবি বা সাহিত্যিক দ্বারা রচিত হয়ে লোকের কাছে মুদ্রিত আকারে পরিবেশিত হয় তখন তাকে সাহিত্যিক ছড়া বলা হয়। এইসব ছড়ার রসদ লোক ছড়ার মধ্যেই অন্তর্নিহিত থাকে যা সযত্নে ব্যবহার করে থাকেন সাহিত্যিক তাঁর রচনায়। তবে একথাও সত্য যে, বহু সাহিত্যিক ছড়াও লোকজীবনে প্রভাব ফেলে অর্থাৎ লোক ছড়া সৃষ্টিতে প্রভাব ফেলে। 

*আধুনিক ছড়া*

বর্তমানে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সাধন করবার জন্য অথবা শিক্ষা বিষয়ক কিংবা স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে যেসব ছড়া সৃষ্টি করা হয় তাকে আধুনিক ছড়া বলা হয়।

Comments

Popular posts from this blog

শারদীয়া সংখ্যা ১৪৩০ || সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র || World Sahitya Adda Sarod sonkha 1430

TATA Steel Job Recruitment 2024 || টাটা স্টিল কোম্পানিতে নতুন করে 6000 শূন্যপদে কর্মী নিয়োগ || TATA company job

মাধ্যমিক পাশেই ভালো মাইনের চাকরি,জলের ট্যাঙ্কি দেখাশোনার স্থায়ী কাজ || Jal Jeevan Mission Registration 2024