লেখক রানা জামান -এর একটি গল্প

 ভালোবাসার শৈল্পিকতা



এবি পজেটিভ রক্তের প্রয়োজন। রোগী শমরিতা হাসপাতালে। রিয়াজুল দেরি না করে বাইকে চড়ে চলে এলো হাসপাতালে। রক্ত দিয়ে কক্ষ থেকে বের হলে এক তরুণী এসে দাঁড়ালো ওর সামনে।


রিয়াজুল শাহেদ স্মিত হেসে বললো, নো টেনশন, ডু ফুর্তি। এবি পজেটিভ রক্ত সচরাচর পাওয়া যায় না। যখন প্রয়োজন হবে,কল দেবেন। জিরো ওয়ান সেভেন ওয়ান টেন এইট টু সিক্স জিরো ফাইভ নাইন।


তরুণীর কথা বলার অপেক্ষায় না থেকে রিয়াজুল শাহেদ বেরিয়ে এলো হাসপাতাল থেকে।


এক মাস পর একটি অপরিচিত নম্বরের ফোনকল গ্রহণ করলে ওদিক থেকে মেয়ে কণ্ঠ বললো, আপনি কি ঢাকায় আছেন? সেদিন আপনার নামটাও জানা হয়নি।


রিয়াজুল বললো, আপনার কথা শুনে মনে হচ্ছে এর আগেও আপনার সাথে আমার কথা হয়েছে।


ঠিক ধরেছেন। মাস খানেক আগে শমরিতা হাসপাতালে রক্ত দিয়েছিলেন। আজও রক্ত লাগবে। আসবেন?


কোথায় আসতে হবে বলুন।


মগবাজার কমিউনিটি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে।


আধা ঘন্টায় রিয়াজুল শাহেদ হাসপাতালে পৌঁছে দান করলো রক্ত। কিন্তু এবার ঐ তরুণীর দেখা পেলো না কোথাও।


ঠোঁট উল্টে রিয়াজুল চলে এলো হাসপাতাল থেকে। Unnamed শিরোনামে তরুণীর মোবাইল ফোন নম্বরটা সেভ করে রেখেছিলো বলেই পরদিন ফোনকল আসায় অসুবিধা হলো না চিনতে।


কলটা গ্রহণ করে রিয়াজুল বললো, কোন হাসপাতাল?


কোন হাসপাতাল মানে?


রক্ত দিতে কোনো হাসপাতালে যেতে হবে না? নাকি এবার আপনার বাসায়?


আরে নাহ! আজ রক্ত দেবার জন্য কল দেই নি।


তাহলে?

আপনি মানুষটা খুব ভালো। কৃতজ্ঞতা জানাতে ফোন দিলাম।


শুধু ফোনে?


কিভাবে চাচ্ছেন আপনি?


সামনাসামনি।

কোনো সমস্যা নাই। কোথায় আসবো বলুন। কোনো পার্কে?


ঢাকার পার্কগুলো তো মোবাইল প্রস্টিটিউট।


তা যা বলেছেন। কোনো হোটেলে?


হোটেল? বাংলাদেশে? দাঁতাল পুলিশ রেইড মেরে প্রসটিটিউট বানিয়ে ফেলবে! আমি পুলিশ থেকে শত মাইল দূরে থাকতে চাই!

তাহলে আমার বাসায় চলে আসুন।


রিয়াজুল শাহেদ বিস্মিত হয়ে বললো, আপনার বাসায়!


অথবা আপনার বাসায়!


বাহ! আপনি খুব স্বতঃস্ফূর্ত ডেটিং-এর ব্যাপারে!


ওয়েস্টার্ন কাল্চার এডপ্ট করতে হলে এমন তো হতেই হবে! আমার বাসার এড্রেসটা আপনার মোবাইল ফোনে টেক্সট করে দিচ্ছি। চলে আসুন। বাই।


মেয়েটির কথাগুলো তখনো কানে বাজছে রিয়াজুল শাহেদের। বাংলাদেশের মেয়েরা এতো ফৃ হয়ে গেছে? ফৃ-সেক্সের দেশে ভালোবাসা নেই, আছে শুধু জৈবিক আকর্ষণ। বাংলাদেশও কি হয়ে যাচ্ছে তেমন?


উবারে করে রিয়াজুল শাহেদ চলে এলো মেয়েটির দেয়া ঠিকানায়। অর্কিডের স্টিক দিয়ে ওকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানালো মেয়েটি। ওকে বসতে বলে চলে গেলো ভেতরে। প্রায় সাথে সাথে একজন মধ্যবয়স্ক ভদ্রমহিলা এলেন। রিয়াজুল শাহেদ দাঁড়িয়ে সালাম জানালো।


ভদ্রমহিলা ইশারায় রিয়াজুলকে বসতে বলে নিজে মুখোমুখি একটা সোফায় বসে বললেন, আমার মেয়েটা দিনের পর দিন কেমন যেনো আলাদা ধরনের হয়ে যাচ্ছে। যে দুইজনকে তুমি রক্ত দিলে ওরা কেউ আমাদের আত্মীয় না-ওর দুই বান্ধবীর আত্মীয়। যখন শুনলো রক্ত পাওয়া যাচ্ছে না তখন নিজেই রক্ত সংগ্রহের দায়িত্ব নিলো। এই স্বভাবের জন্য ওর হাসবেন্ডও বিরক্ত হয়ে যাচ্ছে ওর প্রতি।

Comments

Popular posts from this blog

শারদীয়া সংখ্যা ১৪৩০ || সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র || World Sahitya Adda Sarod sonkha 1430

শারদীয়া সংখ্যা ১৪৩১ || Sarod sonkha 1431 || সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র