লেখিকা স্বপ্না বনিক -এর একটি গল্প
ঈশ্বরের দান
তিনটি দুধের শিশু আর গফুর মিঞাকে নিয়ে সাকিনা বিবির গরীবের সংসার। স্বামী গফুর মিঞা ভোরবেলায় দুটো পান্তা খেয়ে চলে যায় মাঠে। দিন ভর হাল বেয়ে সন্ধ্যেবেলা ফিরে আসে ঘরে। তিনটি বাচ্চাই তখন খেয়ে দেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। সাকিনা ভাতের থালা আগলে বসে থাকে মিঞার জন্য। মিঞা ফিরলে দুজনে একই থালায় খেয়ে শুয়ে পড়ে। মাটির মেঝেতে পাতা বিছানা। বিছানা বলতে দুটো বড় ছেড়া কাঁথা আর ছেড়া দুটো বালিশ। গফুরের মনে দীর্ঘদিন ধরে লালিত স্বপ্ন আবার ভীড় করে আসে।
তিনটে ছেলে-মেয়েকে মানুষ করতে হবে। পাঁচ বছরের আসিফকে গ্রামের স্কুলে ভর্তি করে দিয়েছে। ছেলেটার পড়াশোনায় ভীষণ উৎসাহ। স্কুল থেকে ফিরে একটু খেয়েই পড়তে বসে আসিফ্। দিনের আলো থাকতেই পড়া শেষ করে রাখে সে। রাত্রিবেলায় লণ্ঠন জ্বালাবার তেল নেই। ওইটুকু ছোট ছেলে মনে মনে ভাবে কবে সে বড় হয়ে বাবার মতো রোজগার করবে। সংসারের দুঃখ ঘোচাবে। বাড়ি বাড়ি কাজ করে মা যা দুটো পয়সা আনে, তাই দিয়েই ওদের খাওয়া-পরা কোন রকমে চলে যায়।
দেখতে দেখতে ঈদ এসে পড়ে। সারা মাস সাকিনা ও গফুর রোজা রাখে। রাত্রি বেলা কিছু খেয়ে উপোস ভাঙ্গে। ছোট্ট আসিফ্ দেখে বাবা-মা অভুক্ত থেকে ওদের মুখে খাবার তুলে দেয়। প্রতি রাতেই প্রার্থনা জানায় খোদার কাছে ওদের দুঃখ দূর করার জন্য। হঠাৎ একদিন স্কুল থেকে ফেরার পথে আসিফ্ দেখলো পথের ধারে একটি মানিব্যাগ পড়ে আছে। কৌতুহলবসে আসিফ্ ব্যাগটা তুলতেই বেরিয়ে পড়লো একগুচ্ছ নোটের তাড়া। ভয়ে, উত্তেজনায় আসিফের বুক্ ধক্ করে উঠলো। ব্যাগটা নিয়ে ছুটে এসে মায়ের হাতে দিয়ে সব ঘটনা বললো। সাকিনা ব্যাগটা মাথায় ঠেকিয়ে বললো— ‘এটা ঈশ্বরের দান বাবা’।
Comments