Sunday, February 12, 2023

হলদিয়ার কারখানায় কর্মী নিয়োগ || Haldia Industry Recruitment 2023


 



 রাজ্যের চাকরি প্রার্থীদের জন্য সুখবর। হলদিয়ার একাধিক শিল্পসংস্থায় বিভিন্ন শূন্যপদে চুক্তিভিত্তিতে ৮৮ জন স্কিলড, আনস্কিলড শ্রমিক নেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে এই মর্মে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছে হলদিয়ার জব পোর্টালে (Haldia Job Vacancy)। আপনাদের সুবিধের জন্য একলপ্তে একাধিক সংস্থার নিয়োগের বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেছি একটি প্রতিবেদনের মধ্যে দিয়েই। টেকনিক্যাল ও নন-টেকনিক্যাল নানান কাজের জন্য এই নিয়োগ হচ্ছে। আপনারা নিজেদের পছন্দ মতো কাজে অনলাইন বা অফলাইনে আবেদন করতে পারেন।

তাই বর্তমানে যেসমস্ত চাকরি প্রার্থী সরকারি চাকরির জন্য অপেক্ষা করছেন তাদের জন্য এটি একটি সুবর্ণ সুযোগ। কোন কোন পদে নিয়োগ করা হবে, মাসিক বেতন কত দেওয়া হবে, বয়সসীমা কত থাকতে হবে, শিক্ষাগত যোগ্যতা কি লাগবে এবং কিভাবে আবেদন করতে হবে তা নিচে থেকে পরপর জেনে নেব।




১। কাজের সাইট – HALDIA PETROCHEMICALS LTD.


নিয়োগকারী সংস্থা – MM AQUA TECHNOLOGIES LTD.

কাজের নাম – স্কিলড ওয়ার্কার ফর কুলিং টাওয়ার জব

শূন্যপদ – ২০টি

শিক্ষা – অষ্টম থেকে দশম শ্রেণী উত্তীর্ণ হলে আবেদন করা যাবে

অভিজ্ঞতা – কমপক্ষ্যে ২ বছর কাজের অভিজ্ঞতা থাকলে অগ্রাধিকার

বয়স – ৫০ বছরের নীচে

কাজের শ্রেণী – চুক্তিভিত্তিক

আবেদনের শেষ দিন – ৮ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩ বেলা ২টো পর্যন্ত অফলাইনে আবেদন নেওয়া হবে। রাত্রি ১২টা পর্যন্ত অনলাইনে আবেদন জমা করা যাবে।

এই কাজের অফিশিয়াল নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেখতে এবং কাজটির সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে MM AQUA TECHNOLOGIES LTD. JOB VACANCY এই লিংকে ক্লিক করুন।


২। কাজের সাইট – Hiranmaye Energy Limited


নিয়োগকারী সংস্থা – D.B. CONSTRUCTION

কাজের নাম – আনস্কিলড লেবার

শূন্যপদ – ২৮টি

শিক্ষা – শিক্ষাগত যোগ্যতা বা কোনও টেকনিক্যাল জ্ঞান প্রয়োজন নেই। অনভিজ্ঞরাও আবেদন করতে পারেন।

আবেদন কারী – পুরুষ/ মহিলা উভয়েই এই কাজের জন্য আবেদন করতে পারেন

বয়স – ২০ থেকে ৫৫ বছর

কাজের শ্রেণী – চুক্তিভিত্তিক

আবেদনের শেষ দিন – ৯ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩ বেলা ২টো পর্যন্ত অফলাইনে আবেদন নেওয়া হবে। রাত্রি ১২টা পর্যন্ত অনলাইনে আবেদন জমা করা যাবে।

এই কাজের অফিশিয়াল নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেখতে এবং কাজটির সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে D.B. CONSTRUCTION JOB VACANCY এই লিংকে ক্লিক করুন।

৩। কাজের সাইট – IOCL, Haldia


নিয়োগকারী সংস্থা – SANTRA ENTERPRISE

কাজের নাম – আনস্কিলড

শূন্যপদ – ২৪টি

শিক্ষা – কমপক্ষ্যে মাধ্যমিক পাশ, কোনও টেকনিক্যাল জ্ঞান প্রয়োজন নেই। অনভিজ্ঞরাও আবেদন করতে পারেন।

বয়স – ৩০ বছর বয়সের মধ্যে

কাজের শ্রেণী – চুক্তিভিত্তিক

আবেদনের শেষ দিন – ১০ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩ বেলা ২.৩০টা পর্যন্ত অফলাইনে আবেদন নেওয়া হবে। রাত্রি ১২টা পর্যন্ত অনলাইনে আবেদন জমা করা যাবে।

এই কাজের অফিশিয়াল নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেখতে এবং কাজটির সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে SANTRA ENTERPRISE JOB VACANCY এই লিংকে ক্লিক করুন।

৪। কাজের সাইট – CHLORIDE METALS LTD.


নিয়োগকারী সংস্থা – MIDNAPUR PLASTIC INDUSTRY PVT LTD

কাজের নাম – অপারেটর (FORKLIFT & HYDRA)

শূন্যপদ – ০৩টি

শিক্ষা – কমপক্ষ্যে মাধ্যমিক পাশ, সেই সঙ্গে কমপক্ষ্যে ৩ বছর হেভি ভেহিক্যাল ড্রাইভিংয়ের অভিজ্ঞতা থাকলে অগ্রাধিকার।

বয়স – ২৩ থেকে ২৮ বছর বয়সের মধ্যে

কাজের শ্রেণী – চুক্তিভিত্তিক

আবেদনের শেষ দিন – ১০ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩ বেলা ২.৩০টা পর্যন্ত অফলাইনে আবেদন নেওয়া হবে। রাত্রি ১২টা পর্যন্ত অনলাইনে আবেদন জমা করা যাবে।

এই কাজের অফিশিয়াল নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেখতে এবং কাজটির সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে MIDNAPUR PLASTIC INDUSTRY PVT LTD JOB VACANCY এই লিংকে ক্লিক করুন।

৫। কাজের সাইট – WEST BENGAL WASTE MANAGEMENT LTD, HALDIA


নিয়োগকারী সংস্থা – ARCON UDYOG


কাজের নাম – EPOXY PAINTER, শূন্যপদ – ০৫টি, টেকনিক্যাল নলেজ – সার্টিফিকেট, শিক্ষাগত যোগ্যতা – প্রয়োজন নেই, অভিজ্ঞতা – কমপক্ষ্যে ৪ বছর কাজের অভিজ্ঞতা থাকলে অগ্রাধিকার, বয়স – ২৩ থেকে ৪৫ বছর, কাজের শ্রেণী – চুক্তিভিত্তিক

কাজের নাম – FITTER (SHEET), শূন্যপদ – ০৩টি, টেকনিক্যাল নলেজ – সার্টিফিকেট, শিক্ষাগত যোগ্যতা – প্রয়োজন নেই, অভিজ্ঞতা – কমপক্ষ্যে ৩ বছর কাজের অভিজ্ঞতা থাকলে অগ্রাধিকার, বয়স – ২৩ থেকে ৪৫ বছর, কাজের শ্রেণী – চুক্তিভিত্তিক

কাজের নাম – FABRICATOR (STRUC), শূন্যপদ – ০১টি, টেকনিক্যাল নলেজ – সার্টিফিকেট, শিক্ষাগত যোগ্যতা – কমপক্ষ্যে মাধ্যমিক পাশ, অভিজ্ঞতা – কমপক্ষ্যে ৫ বছর কাজের অভিজ্ঞতা থাকলে অগ্রাধিকার, বয়স – ২৩ থেকে ৪৫ বছর, কাজের শ্রেণী – চুক্তিভিত্তিক

এই সমস্ত কাজে আবেদনের শেষ দিন – ৯ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩ বেলা ৩টে পর্যন্ত অফলাইনে আবেদন নেওয়া হবে। রাত্রি ১২টা পর্যন্ত অনলাইনে আবেদন জমা করা যাবে।


এই কাজের অফিশিয়াল নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেখতে এবং কাজটির সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ARCON UDYOG JOB VACANCY এই লিংকে ক্লিক করুন।


৬। কাজের সাইট – CHLORIDE METALS LTD., HALDIA


নিয়োগকারী সংস্থা – M/s. NU INDIA CONSTRUCTION


কাজের নাম – HYDRA DRIVER LEAD CASTING PRODUCTION WORK, শূন্যপদ – ০১টি, প্রয়োজনীয় স্কিল – সেমি স্কিলড, শিক্ষাগত যোগ্যতা – মাধ্যমিক পাশ, অভিজ্ঞতা – কমপক্ষ্যে ২ বছর কোনও কারখানায় প্রোডাকশান/ হাইড্রা ড্রাইভার অভিজ্ঞতা থাকলে অগ্রাধিকার, বয়স – ১৮ থেকে ৩৫ বছর, কাজের শ্রেণী – চুক্তিভিত্তিক

কাজের নাম – FORKLIFT DRIVER PRODUCTION WORKER FOR CASTING, শূন্যপদ – ০১টি, প্রয়োজনীয় স্কিল – সেমি স্কিলড, শিক্ষাগত যোগ্যতা – মাধ্যমিক পাশ, অভিজ্ঞতা – কমপক্ষ্যে ২ বছর কোনও কারখানায় প্রোডাকশান/ ফোর্কলিফট ড্রাইভার অভিজ্ঞতা থাকলে অগ্রাধিকার, বয়স – ১৮ থেকে ৩৫ বছর, কাজের শ্রেণী – চুক্তিভিত্তিক

এই সমস্ত কাজে আবেদনের শেষ দিন – ৯ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩ বেলা ২টো পর্যন্ত অফলাইনে আবেদন নেওয়া হবে। রাত্রি ১২টা পর্যন্ত অনলাইনে আবেদন জমা করা যাবে।


এই কাজের অফিশিয়াল নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেখতে এবং কাজটির সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে M/s. NU INDIA CONSTRUCTION JOB VACANCY এই লিংকে ক্লিক করুন।


৭। কাজের সাইট – CHLORIDE METALS LTD., HALDIA


নিয়োগকারী সংস্থা – IMPERIAL CONSTRUCTION


কাজের নাম – LEAD CASTING PRODUCTION WORKER (FURNISH REFINERY), শূন্যপদ – ০১টি, প্রয়োজনীয় স্কিল – সেমি স্কিলড, শিক্ষাগত যোগ্যতা – মাধ্যমিক পাশ, অভিজ্ঞতা – কমপক্ষ্যে ১ বছর যে কোনও কারখানায় প্রোডাকশান/ কনস্ট্রাকশান সাইটে ৫০ ডিগ্রীর ওপর হাইট টেমপারেচারে অভিজ্ঞতা থাকলে অগ্রাধিকার, বয়স – ১৮ থেকে ৩৫ বছর, কাজের শ্রেণী – চুক্তিভিত্তিক

কাজের নাম – PRODUCTION WORK FOR CASTING (AS AND WHEN REQUIRED)-RELIVER, শূন্যপদ – ০১টি, প্রয়োজনীয় স্কিল – সেমি স্কিলড, শিক্ষাগত যোগ্যতা – অষ্টম শ্রেণী উত্তীর্ণ, অভিজ্ঞতা – কমপক্ষ্যে ১ বছর যে কোনও কারখানায় প্রোডাকশান/ কনস্ট্রাকশান সাইটে ৫০ ডিগ্রীর ওপর হাইট টেমপারেচারে অভিজ্ঞতা থাকলে অগ্রাধিকার, বয়স – ১৮ থেকে ৩৫ বছর, কাজের শ্রেণী – চুক্তিভিত্তিক

এই সমস্ত কাজে আবেদনের শেষ দিন – ৯ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩ বেলা ২টো পর্যন্ত অফলাইনে আবেদন নেওয়া হবে। রাত্রি ১২টা পর্যন্ত অনলাইনে আবেদন জমা করা যাবে।


এই কাজের অফিশিয়াল নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেখতে এবং কাজটির সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে IMPERIAL CONSTRUCTION JOB VACANCY এই লিংকে ক্লিক করুন।


কিভাবে অনলাইন ও অফলাইনে আবেদন করবেন, কিভাবেই বা রেজিষ্ট্রেশান করবেন সরকারী জব পোর্টালে দেখে নিন নীচে দেওয়া লিংকগুলিতে ক্লিক করে–অনলাইন রেজিষ্ট্রেশান (কিভাবে অনলাইন রেজিষ্ট্রেশান দেখতে এখানে ক্লিক করুন), অনলাইন প্রোফাইল আপডেট (কিভাবেই বা করবেন অনলাইনে প্রোফাইল আপডেট জানতে এই লিংক-এ ক্লিক করুন)।



অফলাইনে আবেদন করতে হবে নির্দিষ্ট ড্রপবক্সে। এই সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য এই লিংকে দেওয়া রয়েছে। অফলাইনে আবেদনের পদ্ধতি ও নির্ধারিত ফর্ম (কোথায় কিভাবে অফলাইন আবেদন, এবং আবেদনের ফর্মটি পেতে এই লিংক-এ ক্লিক করুন)–এর লিংকগুলি আপনাদের জন্য দেওয়া হল।





Official from download -

Click here 🔴


Official notice -

Click here 🔴


Online registration link -

Click here 🔴

Saturday, February 11, 2023

ব্যাঙ্ক অফ বরোদা নিয়োগ 2023 || Bank of Baroda Recruitment 2023 || BOB Recruitment 2023


 


 BOB নিয়োগ 2023: (BOB) চিফ এবং সিনিয়র এইচআর অ্যানালিটিক্সের পদের জন্য যোগ্য প্রার্থীদের একটি চুক্তির ভিত্তিতে একটি নির্দিষ্ট মেয়াদী নিযুক্তিতে নিয়োগ করছে। অফিসিয়াল বিজ্ঞপ্তি অনুসারে, এই পদে 02 টি শূন্যপদ রয়েছে। ব্যাঙ্ক অফ বরোদা নিয়োগ 2023-এর অফিসিয়াল বিজ্ঞপ্তি অনুসারে, প্রার্থীর AICTE/UGC/সরকারি অনুমোদিত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যেকোনো বিষয়ে ডিগ্রী থাকতে হবে এবং প্রকৌশল, গণিত, অপারেশন রিসার্চ, এর মতো পরিমাণগত বিষয়ে অ্যাডভান্সড ডিগ্রি (স্নাতকোত্তর বা তার উপরে) থাকতে হবে। পরিসংখ্যান, ডেটা মাইনিং, ইকোনোমেট্রিক্স এবং পছন্দসই প্রার্থীদের এইচআর অ্যানালিটিক্সে ডিপ্লোমা/ সার্টিফিকেশন থাকতে হবে।


নিয়োগের অফিসিয়াল বিজ্ঞপ্তি অনুসারে, চিফ এইচআর অ্যানালিটিক্সের জন্য ন্যূনতম বয়স 29 বছর এবং সর্বোচ্চ বয়স 45 বছর হওয়া উচিত। সিনিয়র ম্যানেজার এইচআর অ্যানালিটিক্সের জন্য সর্বনিম্ন বয়স সীমা 27 বছর, এবং সর্বোচ্চ বয়স 45 বছর হওয়া উচিত। ব্যাঙ্ক অফ বরোদার নিয়োগের অফিসিয়াল বিজ্ঞপ্তি অনুসারে, বাছাই করা হবে শর্টলিস্টিং এবং পরবর্তী রাউন্ডের ব্যক্তিগত ইন্টারভিউ এবং/অথবা অন্য কোনও নির্বাচন পদ্ধতির উপর ভিত্তি করে। এর অফিসিয়াল বিজ্ঞপ্তি অনুসারে, প্রার্থীদের একটি বৈধ ব্যক্তিগত ইমেল আইডি এবং যোগাযোগ নম্বর থাকতে হবে। এই নিয়োগ প্রকল্পটি সম্পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত এটি সক্রিয় রাখা উচিত। ব্যাঙ্ক নিবন্ধিত ইমেল আইডিতে ব্যক্তিগত সাক্ষাৎকার এবং/অথবা নির্বাচন প্রক্রিয়ার জন্য কল লেটার পাঠাতে পারে। ক্ষেত্রে, একজন প্রার্থীর বৈধ ব্যক্তিগত ইমেল আইডি না থাকলে, আবেদন করার আগে তাকে তার নতুন ইমেল আইডি তৈরি করতে হবে। আবেদন করার শেষ তারিখ 02.03.2023।


 সূচি তালিকা

 ব্যাঙ্ক অফ বরোদা নিয়োগ 2023-এর জন্য পদের নাম এবং শূন্যপদ:

 ব্যাঙ্ক অফ বরোদা নিয়োগের বয়স 2023:

 ব্যাঙ্ক অফ বরোদা নিয়োগ 2023-এর জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতা:

 ব্যাঙ্ক অফ বরোদা নিয়োগ 2023-এর অভিজ্ঞতা:

 ব্যাঙ্ক অফ বরোদা নিয়োগ 2023-এর জন্য ব্যস্ততার প্রকৃতি:

 ব্যাঙ্ক অফ বরোদা নিয়োগ 2023-এর জন্য নির্বাচন প্রক্রিয়া:

 ব্যাঙ্ক অফ বরোদা নিয়োগ 2023-এর জন্য কীভাবে আবেদন করবেন:

 ব্যাঙ্ক অফ বরোদা নিয়োগ 2023-এর জন্য পদের নাম এবং শূন্যপদ:

 ব্যাঙ্ক অফ বরোদা নিয়োগের অফিসিয়াল বিজ্ঞপ্তি অনুসারে, চিফ এবং সিনিয়র এইচআর অ্যানালিটিক্সের পদের জন্য যোগ্য প্রার্থীদের একটি চুক্তির ভিত্তিতে একটি নির্দিষ্ট-মেয়াদী নিযুক্তিতে নিয়োগ দিচ্ছে। ব্যাঙ্ক অফ বরোদা নিয়োগের অফিসিয়াল বিজ্ঞপ্তি অনুসারে, এই পদে 02 টি শূন্যপদ রয়েছে


ব্যাঙ্ক অফ বরোদা নিয়োগের বয়স 2023:

 ব্যাঙ্ক অফ বরোদা নিয়োগের অফিসিয়াল বিজ্ঞপ্তি অনুসারে, চিফ এইচআর অ্যানালিটিক্সের জন্য ন্যূনতম বয়স 29 বছর এবং সিনিয়র ম্যানেজার এইচআর অ্যানালিটিক্সের জন্য সর্বোচ্চ বয়স 45 বছর হওয়া উচিত সর্বনিম্ন বয়স সীমা 27 বছর এবং সর্বোচ্চ বয়স 45 বছর হওয়া উচিত। বছর


 

 ব্যাঙ্ক অফ বরোদা নিয়োগ 2023-এর জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতা:

 ব্যাঙ্ক অফ বরোদার অফিসিয়াল বিজ্ঞপ্তি অনুসারে, নিয়োগ 2023 প্রদত্ত পদের জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতা নীচে দেওয়া হল:-


 প্রার্থীর AICTE/UGC/সরকারি অনুমোদিত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যেকোনো বিষয়ে স্নাতক এবং প্রকৌশল, গণিত, অপারেশনস রিসার্চ, পরিসংখ্যান, ডেটা মাইনিং, ইকোনোমেট্রিক্স এবং এর মতো পরিমাণগত বিষয়ে অ্যাডভান্সড ডিগ্রি (স্নাতকোত্তর বা তার উপরে) থাকতে হবে।


 কাম্য:- প্রার্থীর এইচআর অ্যানালিটিক্সে ডিপ্লোমা/ সার্টিফিকেশন থাকতে হবে।


 

 

 ব্যাঙ্ক অফ বরোদা নিয়োগ 2023-এর অভিজ্ঞতা:

 ব্যাঙ্ক অফ বরোদার অফিসিয়াল বিজ্ঞপ্তি অনুসারে, নিয়োগ 2023 প্রদত্ত পদের জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতা নীচে দেওয়া হল:-


চিফ এইচআর অ্যানালিটিক্সের জন্য:-


 প্রার্থীর অ্যানালিটিক্সে ন্যূনতম 7 বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে, যার মধ্যে 3 বছরের এইচআর অ্যানালিটিক্সে বড় প্রতিষ্ঠানে বিশেষভাবে BFSI সেক্টরে।


 সিনিয়র ম্যানেজার এইচআর অ্যানালিটিক্সের জন্য:-


 প্রার্থীর অ্যানালিটিক্সে ন্যূনতম 5 বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে, যার মধ্যে 2 বছরের এইচআর অ্যানালিটিক্সে বড় প্রতিষ্ঠানে বিশেষভাবে BFSI সেক্টরে।


 

 ব্যাঙ্ক অফ বরোদা নিয়োগ 2023-এর জন্য ব্যস্ততার প্রকৃতি:

 ব্যাঙ্ক অফ বরোদার অফিসিয়াল বিজ্ঞপ্তি অনুসারে, নিয়োগ 2023 চুক্তিভিত্তিক এনগেজমেন্ট 5 বছরের জন্য, পর্যায়ক্রমিক কর্মক্ষমতা পর্যালোচনা সহ, ব্যাঙ্কের বিকল্পে প্রসারিত।


 এছাড়াও পড়ুন

 দিল্লি মেট্রো রেল নিয়োগ 2023: মাসিক বেতন Rs. 115000, চেক পোস্ট, যোগ্যতা, অন্যান্য বিবরণ

 ব্যাঙ্ক অফ বরোদা নিয়োগ 2023-এর জন্য নির্বাচন প্রক্রিয়া:

 ব্যাঙ্ক অফ বরোদার নিয়োগের অফিসিয়াল বিজ্ঞপ্তি অনুসারে, বাছাই করা হবে সংক্ষিপ্ত তালিকা এবং পরবর্তী রাউন্ডের ব্যক্তিগত ইন্টারভিউ এবং/অথবা অন্য কোনও নির্বাচন পদ্ধতির উপর ভিত্তি করে


 এছাড়াও পড়ুন

 CMRL নিয়োগ 2023: এখানে পোস্ট, বয়স, যোগ্যতা এবং অন্যান্য বিবরণ দেখুন

 ব্যাঙ্ক অফ বরোদা নিয়োগ 2023-এর জন্য কীভাবে আবেদন করবেন:

 ব্যাঙ্ক অফ বরোদা নিয়োগ 2023 বিজ্ঞপ্তি অনুসারে, প্রার্থীদের একটি বৈধ ব্যক্তিগত ইমেল আইডি এবং যোগাযোগ নম্বর থাকতে হবে। এই নিয়োগ প্রকল্পটি সম্পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত এটি সক্রিয় রাখা উচিত। ব্যাঙ্ক নিবন্ধিত ইমেল আইডিতে ব্যক্তিগত সাক্ষাৎকার এবং/অথবা নির্বাচন প্রক্রিয়ার জন্য কল লেটার পাঠাতে পারে। ক্ষেত্রে, একজন প্রার্থীর বৈধ ব্যক্তিগত ইমেল আইডি না থাকলে, আবেদন করার আগে তাকে তার নতুন ইমেল আইডি তৈরি করতে হবে।


 আবেদন করার শেষ তারিখ - 02.03.2023


 Notice - 

Click here 🔴

Thursday, February 9, 2023

উপন্যাস - পদ্মাবধূ || বিশ্বনাথ দাস || Padmabadhu by Biswanath Das || Fiction - Padmabadhu Part -36


 

দেখলাম শ্যামলীদির চোখ দুটো ধীরে ধীরে বাষ্পাকূল হয়ে উঠলো। ও ঠোঁট কাঁপতে শুরু করলো। সেও তো একদিন সুখী সংসার গড়ার স্বপ্ন দেখছিলো। স্বামী সেবা করবে, গৃহবধূ হয়ে সংসারে দায় দায়িত্ব পালন করবে কিন্তু তার জীবনে সমস্ত আশা-আকাঙ্খা, চাওয়া পাওয়া হঠাৎ কোথায় মিলিয়ে গেলো ।


 গভীর যন্ত্রণাকে উপেক্ষা করে শ্যামলীদি নিজের আঁচলের খুঁট দিয়ে চোখের জলকে মুছবার চেষ্টা করলো। দেবীদাস তা লক্ষ্য করল ও এও বুঝতে পারলো শ্যামলী পদ্মার মতোই সমদুঃখিনী।

 দেবীদাস শ্যামলীকে নম্রকণ্ঠে বলল, আমি যে জন্যে তোমার সাথে দেখা করতে এসেছি, তা বলা হয় নি। তোমার সাথে আমার যে কি মধুর সম্পর্ক আছে তা হয়তো জানো না। তোমার মা আমাকে পুত্রের মতো দেখেন। তোমার দাদা সুভাষ আমার বন্ধু, সুতরাং তুমি আমার বোনের মতো কোন চিন্তার কারণ নেই, আমরা সকলে মিলে যত শীঘ্র পারি তোমাকে কারামুক্ত করবো। আমি আজই তোমার দাদার সাথে আলোচনা করবো। আজ আমরা বিদায় নিচ্ছি, পরে খুব শীঘ্রই তোমার কাছে আসছি।

 দেবীর মুখ থেকে এই কথা শুনে জেল কপাটের রেলিং ধরে স্টাচু হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। শ্যামলীকে দেখে দেবীদাসের মনে হলো, তার ঘৃণ্য জীবনের আবর্জনার মধ্যেও পদ্মার মত একটি সুখী সংসার খোঁজ পাওয়ার জন্য মনে মনে কাতর আকুতি জানাচ্ছে।

 শ্যামলী যখন অতীতের ধঞ্জা বিধস্ত জীবনে দুঃখ ও বেদনার সাগরে হাবুডুব খাচ্ছিলো সে সময় দেবীদাস সেখানে উপস্থিত হতেই শ্যামলীদি কিছুটা শান্তির আশ্রয়

খুঁজে পেলো। শ্যামলীদির মুখপানে তাকিয়ে থেকে কখন যে বাইরে এসে উপস্থিত হলাম টের পেলাম না।

 পরদিন দেবীদাসের সাথে যখন কয়েক জন লোক বাড়ীতে প্রবেশ করলো, তখন মনে হলো ওদের সাথে আমার যেন না পরিচয় হয়। আমি জানতে পারলাম এরা কারা, বা কেন এখানে এসেছে এবং আমাকে শ্যামলীদির নিয়ে কথা জিজ্ঞেস করবেন এর কোন ব্যতিক্রম নেই। শ্যামলীদির বাবার চেহারা দেখে মনে হলো তিনি গম্ভীর, নিষ্ঠাবান আভিজাত হলেও তার দেহমন একেবারে ভেঙ্গে পড়েছে। হয়তো শ্যামলীদির চিন্তায় শরীরের ঐরূপ দুর্দশা। সমস্ত সুখ, উল্লাস ও জীবনের আমোদ-প্রমোদকে পরিত্যাগ করে শ্যামলীকে খুঁজে পাবার জন্য চাতক পাখীর মত পথ চেয়ে থাকেন। মনে হয় আমর কাছে শ্যামলীদির সংবাদ শুনে মনকে অনেকখানি সান্ত্বনা দেবেন।

 কোন সময় যে দেবী আমার পেছনে এসে দাঁড়িয়েছে খেয়াল করিনি। ওর ডাক শুনে নিজের স্বম্বিৎকে ফিরে পেয়ে ওকে বললাম, আমার ঘৃণ্য অতীত ওদের সামনে উদ্ঘাটন করা কি আমার পক্ষে উচিত হবে ?

 দেবীদাস সাহস দিলো বলার জন্য। কারণ শ্যামলীকে যদি বাঁচাতে হয় তাহলে উকিল বঙ্কুবাবুর কাছে প্রকাশ করতেই হবে। তিনি শ্যামলীর গোপন সূত্র ধরে শ্যামলীর পক্ষে লড়াই করবেন। শ্যামলীকে বাঁচাতেই হবে, এ আমার কর্তব্য। তাই, একথা চিন্তা করে শ্যামলীদির পঙ্কিল জীবনের ইতিহাস একে একে প্রকাশ করলাম ওদের নিকট।

 বঙ্কুবাবু আমার কাছে শ্যামলীদির ঘৃণ্য, কদর্য ইতিহাস শুনে কিছুক্ষণ হেঁট মস্তকে থেকে ধীরে ধীরে মুখ তুলে বললেন, আমি তোমাকে কতকগুলো প্রশ্ন করবো, আশাকরি সঠিক উত্তর দিও।

 ঘাড় নেড়ে সম্মতি জানালাম। তিনি বললেন, তোমার সাথে শ্যামলীর ঐ বস্তীতেই

 পরিচয় ? হ্যাঁ।

 তোমাকে সে বোনের মতো ভালোবাসতো?

 হ্যাঁ।

 তাহলে আদালতে সাক্ষী দিতে পারবে?

 হ্যাঁ।

 শ্যামলী যে রন্টুকে খুন করেনি একথা বলতে পারবে?

 হ্যাঁ বলতে পারবো।

 বন্ধুবাবু আমাকে বললেন, এই সাহসটুকু রেখ মা। আমার বিশ্বাস সে সাহস তোমার আছে। কারণ তোমার কাহিনী শুনে জানতে পারলাম শ্যামলী তোমাকে
গভীরভাবে ভালোবাসতো। আমার মনে হয় তোমার জন্যই শ্যামলীকে কারামুক্ত করতে পারবো।

বন্ধুবাবু শ্যামলীদির বাবার মুখ পানে তাকিয়ে বললেন, কোন চিন্তা করবেন না বিকাশবাবু। কোন কেসে হারিনি। এই কেসেও হারবো না। কিভাবে কেশ ফাইল করবো তার পরিকল্পনা অতি শীঘ্র করছি।

দেবীদাসের কাঁধে হাত রেখে বললেন, আমি তোমার মানবিকতার পরিচয় পেয়ে যারপর ন্যায় সন্তুষ্ট হয়েছি। পতিতাদের জন্য আমাদের সমাজ দায়ী। অনেকাংশে এর জন্য আমরা অপরাধী। আমাদের সমাজের নারী জাতি দারিদ্রের দুর্বিষহ জ্বালা উপেক্ষা করেও কোন মতেই তারা নারীত্বকে নিয়ে ছেলেখেলা করে না। নারীত্বের সম্মান ও মর্যাদা রক্ষার জন্য আত্মত্যাগের ইতিহাস গৌরবজ্জ্বল। সমাজের কতিপয় স্বার্থান্ধ ও উৎশৃঙ্খল যুবক নারীদের অসহায়েত্বে ও দারিদ্রের সুযোগ নিয়ে তাদের পাপ পথে পরিচালিত করে এবং নিজেদের লালসার ইন্ধন যোগায়।

দেবীদাস তুমি যা করছো তার জন্য বর্তমান সমাজে তুমি অভিনন্দন যোগ্য। আমি কথা দিচ্ছি শ্যামলী মাকে মুক্ত করবই। তোমার প্রতি প্রীতি হয়ে আমি আশীর্বাদ করছি, তুমি সুখী হও ও দীর্ঘজীবি হও।

বন্ধুবাবু আমার মস্তকের কেশ স্পর্শ করে বললেন, তোমারও জীবন মধুময় হোক মা। বিগত দিনের ঘৃণ্য কাহিনী তোমার মনকে যেন কখনো আবিষ্ট করতে না পারে।

বঙ্কুবাবুর কথা শেষ হতেই আমি ধৈর্য্য ধরতে না পেরে তাকে আমি ভক্তিপূর্ণ প্রণাম জানালাম তিনি পুনরায় বললেন, আমি তোমাকে কায়মনো বাক্যে বলছি তোমার জীবন মধুময় হবেই। আমার আশীর্বাদ বিফলে যাবে না মা। দেবীদাস যখন তোমাকে গ্রহণ করেছে তখন তুমি নিশ্চিন্ত আশ্রয় লাভ করেছো। আজ আসি মা। পরে আবার আসবো।

তারা উভয়েই প্রস্থান করলেন। তাদের পিছন পানে তাকিয়ে থাকলাম। চোখ দিয়ে কয়েক ফোঁটা অশ্রু নিষ্প্রভ জ্যোতির ন্যায় চিক চিক করতে থাকল। এক সময় দেবীদাসের ডাকে আমার তন্দ্রা কাটলো।

দেবীদাস আমাকে ভেতরে প্রবেশ করতে বলল, কারণ আমার সাথে রেজেষ্টারী ম্যারেজ নিয়ে আলোচনা করবে। বঙ্কুবাবু আমাদের সম্পূর্ণ সহযোগীতা করবেন। তবে তারপূর্বে সুশীলবাবুর সাথে আলোচনা করতে হবে। আজকে সুশীল বাবু আসবেন। দেবীদাসের কাছে শুনেছি সুশীলবাবু দেবীর বাবার বিশ্বক্ত বন্ধু এবং শিল্পকার্য্যের পরিচালনার ভার তার উপর দিয়ে গেছেন। তিনি একজন বিশিষ্ট মানুষ, সৎ ও জানি না সেই পর উপকারী মানুষটির বিচারে আমার ভাগ্যে কি পরিবর্তন ঘটবে। পরোপকারী। জানি না আমি জয়ী হতে পারবো কিনা। শত চিন্তা ভাবনাকে মুক্তি দিয়ে বাড়ীর কাজে মনযোগ দিলাম।

 রাত্রে সুশীলবাবু কখন যে দেবীর বৈঠকখানায় হাজির হয়েছেন জানতে পারিনি। প্রয়োজনে দেবীকে ডাকার জন্য বৈঠকখানায় উপস্থিত হতে, উভয়ের কণ্ঠস্বর কানে ভেসে এলো । দুজনের আলোচনার মধ্যে আমার উপস্থিতি কোন কাম্য নহে শুধু আড়াল হতে সুশীলবাবুকে দর্শন করে তার উদ্দেশ্যে মনে মনে বললাম, আমাদের এই নবজীবনের প্রবেশের পথে তোমার বিচার যেন কোন প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করতে না পারে। অন্তরযামী জানেন কি পঙ্কিল অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেয়ে আজ আমি সামাজিক মর্য্যাদা ও নারীত্বের গৌরব লাভ করতে চলেছি।

 হঠাৎ সুশীলবাবুর গম্ভীর কণ্ঠস্বর আমার কানের মধ্যে প্রবেশ করতেই আমার চমক ভাঙ্গলো। তিনি দেবীকে বলে চলেছেন, ছিঃ ছিঃ দেবী, এ অন্যায় আমি মেনে নিতে পারবো না। তুমি নিশ্চয় জানো আমি তোমার বাবার একজন বিশ্বস্ত কর্মচারী ও বিশিষ্ট বন্ধু। সেই বিশ্বাসের “রজ্জু বন্ধন” ছিন্ন করতে বলো না। এক বারবনিতাকে কি করে তোমার বধূ রূপে স্বীকৃতি দেবো।

 দেবী বলল, এই বারবনিতার সামাজিক পদস্খলেনর জন্য আমি দায়ী। আমার অমানবিক ও অবিবেচনা প্রসূত কাজের জন্য একজন সম্ভ্রান্ত বংশীয় জমিদারের পৌত্রী বাধ্য হয়ে পতিতা গ্রহণ করেছে। আমার অন্যায়ের জন্য জমিদার সীতাংশুশেখর বাবু জমিদারী ত্যাগ করে পথের ভিখারী হয়ে মহানগরীর ফুটপাতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। সুমন্তর খুনের ব্যাপারেও বর্ণণা করলো।

 দেবীদাসের কথা শুনে সুশীলবাবু বললেন, কি বললে! রমার বাবার নাম সীতাংশুশেখর সিংহ।

 হ্যাঁ।

 ওর দাদুর নাম জানো ? ব্রজকিশোর সিংহ।

 বাড়ী ?

 চন্ডীপুর।

 সুশীলবাবু একদৃষ্টে জানালা পানে তাকিয়ে থেকে কিসের চিন্তায় যেন মগ্ন হলেন। আমি ঐরূপ সুশীলবাবুর অবস্থা দেখে বা বাবার ও দাদুর নাম জিজ্ঞেস করতেই গভীর কৌতুহলী হয়ে উঠলাম। মনে হলো দৌড়ে গিয়ে সুশীলবাবুকে সবিনয়ে জিজ্ঞেস করি তিনি কি আমার বাবা ও দাদুকে চিনতেন ? যদি চিনতেন তাহলে তাদের সঙ্গে সুশীলবাবুর সম্পর্ক কি। কিন্তু পারিনি, মনের কথা মনেই চাপা দিয়ে রাখলাম।
এক সময় সানন্দে সুশীলবাবু বিয়েতে সম্মতি দিলেন। আর এও বললেন বিয়ের দিন স্থির করে তাকে যেন জানান হয় । বিলম্ব না করে তিনি দরজার কাছে এগিয়ে এসে আমার সজল নয়ন পানে তাকিয়ে বললেন, তুমি সুখি হও মা। ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করছি তোমার জীবন এবার মধুময় হোক। একদিন সময় করে এসে তোমার সাথে গল্প করব। আজ সময় নেই।

বাধা দেব ভাবলাম কিন্তু পারলাম না। তিনি ধীরে ধীরে গেটের দিকে এগিয়ে গেলেন। আমি গভীর দৃষ্টি নিয়ে তার পিছন পানে তাকিয়ে দরদর করে চোখের জল ফেলতে শুরু করলাম।


Saturday, February 4, 2023

রাজ্যে নতুন আশা কর্মী নিয়োগ || কয়েক হাজার নতুন আশা কর্মী নিয়োগ || Asha karmi recruitment 2023


 



##রাজ্যের মহিলাদের জন্য একটা বড় সুখবর। জেলায় জেলায় স্বাস্থ্য কর্মী নিয়োগ। রাজ্যের প্রতিটি জেলায় জেলায় আশা কর্মী নিয়োগ হতে চলেছে প্রায় 13 হাজার, মুখ্যমন্ত্রীর নিজে ঘোষণা করেছেন বর্তমানে পূর্ব বর্ধমান জেলার বিভিন্ন ব্লকে আশা কর্মী নিয়োগ হতে চলেছে যার বিবরণ নিচে দেয়া হল।

তাই বর্তমানে যেসমস্ত চাকরি প্রার্থী সরকারি চাকরির জন্য অপেক্ষা করছেন তাদের জন্য এটি একটি সুবর্ণ সুযোগ। কোন কোন পদে নিয়োগ করা হবে, মাসিক বেতন কত দেওয়া হবে, বয়সসীমা কত থাকতে হবে, শিক্ষাগত যোগ্যতা কি লাগবে এবং কিভাবে আবেদন করতে হবে তা নিচে থেকে পরপর জেনে নেব।



পদের নাম - আশা কর্মী।

মোট শূন্যপদ - ১৭৪ টি।

শিক্ষাগত যোগ্যতা--- 
মাধ্যমিক ও সমতুল্য পরীক্ষায় উত্তীর্ণব্যক্তি আবেদন করতে পারেন। আবার উচ্চতর যোগ্যতার ব্যক্তিরাও আবেদন করতে পারবেন তবে মাধ্যমিকের প্রাপ্ত নম্বর দেখে বিবেচনা করা হবে।

 



বয়স--- বয়স 30 থেকে 40 বছরের মধ্যে হতে হবে
 সংরক্ষিত প্রার্থীরা সরকারি নিয়ম অনুসারে ছাড় পাবেন।






আবেদন পদ্ধতি--- শুধু মাত্র অফলাইনের মাধ্যমে আবেদন করতে পারবেন। আবেদন পত্র সম্পূর্ণ পূরণ করে নিজ নিজ এলাকার বিডিও অফিসে জমা করবেন। আবেদনপত্রের সঙ্গে প্রয়োজনীয় নথি যোগ করে একটি মুখ বন্ধ খামে ভরে তারপর বড় হাতে লিখতে হবে ‘APPLICATION FOR THE POST OF _______’ (কোন পদের জন্য আবেদন করছেন)।



কি কি ডকুমেন্ট লাগবে---

1) শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রমাণ পত্র।

2) স্থায়ী বাসিন্দার প্রমাণপত্র রেশন কার্ড ভোটার কার্ড।

3) বয়সের প্রমাণপত্র (জন্ম সার্টিফিকেট কিংবা মাধ্যমিকের এডমিট কার্ড)।

4) বিধবাদের ক্ষেত্রে স্বামীর ডেট সার্টিফিকেট।

5) বিবাহিতদের ম্যারেজ সার্টিফিকেট।
6) ডিভোর্স সার্টিফিকেট কাস্ট সার্টিফিকেট।
8) দুটি পাসপোর্ট ছবি।


আবেদন পত্র জমা দেওয়ার স্থান-
To The SDO & Member Secretary Asha Selection Committee, _____Sub Division, Purba Bardhaman.


আবেদনের শেষ তারিখ--- ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩



নিয়োগের স্থান --
পূর্ব বর্ধমান জেলার ( Sadar North- 70, Sadar South – 38, Kalna- 41, Katwa- 23) সাব ডিভিশনে প্রার্থীদের নিয়োগ করা হবে।


Official notice -


Official Website -


______________________________________

চাকরি সংক্রান্ত আপডেট পেতে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন




Telegram group-





Whatsapp group-



Friday, February 3, 2023

উপন্যাস - পদ্মাবধূ || বিশ্বনাথ দাস || Padmabadhu by Biswanath Das || Fiction - Padmabadhu Part -35


 

সেদিন মঙ্গলবার, ময়নাকে সাথে নিয়ে জগৎ জননী মায়ের পূজা দিতে গিয়ে মা, যে এক সৌভাগ্যবতী রমনীর সাথে আমার পরিচয় করিয়ে দেবে তা আমার অবিদিত ছিল না। তার দিন কয়েক পর ভদ্র রমনীর আমন্ত্রণ রক্ষার্থে তার বাড়ীতে উপস্থিত হলাম ময়নাকে সাথে নিয়ে।


ভদ্র রমনী অর্থাৎ গায়ত্রী দেবী যে দেবীদাসের পাশের বাড়ীতে থাকেন জানতাম না। ওর বাড়ীখানা দেখে বড় অবাক হলাম। এতো বড়ো বাড়ী যখন নিশ্চয় গাড়ীও আছে তাদের। কিন্তু গায়ত্রীদেবীকে দেখে মনে হয়েছে তিনি মানসিক যন্ত্রণায় ভীষণ কাতরাচ্ছেন ও নিজেকে তিলে তিলে দগ্ধ করছেন। তবে কি তিনি স্বামীর ভালোবাসা হতে বঞ্চিত।

এসব চিন্তা করতে করতে কখন যে ওদের বাড়ীর বারান্দায় এসে উপস্থিত হয়েছি খেয়াল ছিলো না। আমাকে দেখতে পেয়ে গায়ত্রী দেবীর বড় ছেলে মিন্টু গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে ওর মাকে ডাকতে শুরু করল। মা দেখবে এসো কে এসেছে।

গায়ত্রীদেবী কৌতুহলের সঙ্গে বেরিয়ে এসে আমার দিকে দৃষ্টি ফেলতেই বলে উঠল, কে, ও রমা? এসো বোন, ভেতরে এসো। একলা বসে থাকতে মন চায় না। এখানে এসে বড় অতীষ্ঠ হয়ে গেছি। যখন জামসেদপুরে ছিলাম, তোমার মতো অনেক সই পেয়ে ছিলাম। একি দাঁড়িয়ে রইলে যে, ভেতরে এসো।

ময়নাকে নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলাম। গায়ত্রীদেবী আমাকে বিশ্রাম ঘরে নিয়ে গিয়ে গল্পে মশগুল থাকবে তার মনোভাব দেখে বুঝতে পারলাম। কিন্তু বিধাতা আমার শরীরে দারুন আলোড়ন সৃষ্টি করলেন। মনে হলো ধীরে ধীরে আমি সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়বো। আমার দেহ যেন বরফের মতো ঠান্ডা হয়ে এলো। এ কোন বাড়ীতে এলাম।

এ যে কল্পনার বাইরে। কেন আমার চোখের সামনে ভেসে উঠলো শ্যামলীদির ছবি? তবে কি শ্যামলীদির সাথে গায়ত্রীদির কোন সম্পর্ক আছে।

 দেবীদাসের কাছে আশ্রয় পেয়ে স্বার্থপরের মতো শ্যামলীদিকে ভুলে গেছি। কোন দিনের জন্য শ্যামলীদির কথা আমার মনের মধ্যে ঠাঁই পায় নি। কত বড় স্বার্থপর আমি। শ্যামলীদির কথা মনে পড়তে কোন রকমে অশ্রু সংবরণ করে ওখান হতে দৌড়ে পালিয়ে এলাম। জানি না গায়ত্রীদির বিশ্রাম ঘরে কতক্ষণ শ্যামলীদির টাঙানো ছবির দিকে তাকিয়ে ছিলাম।

 ধরা যে পড়বো তা জানতাম। হয়তো একটুখানি নিজেকে চেপে রাখতে পারলে ধরা পড়তাম না, কিন্তু পারলাম না আমার প্রণম্য শ্যামলীদির প্রতিমূর্তি আমার চোখের সামনে হঠাৎ উদ্ভাসিত হওয়ায়। খুনের দায়ে সে আজ কারারুদ্ধ। হয়তো কারাগারের মধ্যে এক কোণে বসে নীরবে চোখের জল ফেলছে।

 বাড়ীতে এসে বিছানার উপর উপুড় হয়ে ডুকরে ডুকরে কাঁদতে থাকলাম। ময়না

 মা মা বলে ডাকা সত্বেও কোন ভ্রুক্ষেপ ছিল না। সহসা গায়ত্রীদির কণ্ঠস্বরে হকচকিয়ে উঠলাম। ভাবলাম নিজেকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে এনে ওর কাছে অভিনয় করবো। কিন্তু পারলাম না গায়ত্রীদির এজহারে দূর্বল হয়ে পড়লাম।

 গায়ত্রীদি বললেন, তুমি শ্যামলীর ছবি দেখে ওভাবে ব্যাকুল হয়ে কেন চলে এলে

 বোন ?

 আমি সরলভাবে বললাম, ও কিছু না গায়ত্রীদি, মানে শ্যামলীদির ছবি দেখে

 আমার মনটা বড় খারাপ হলো তাই -

 তুমি শ্যামলীকে চেনো ?

 কই না তো?

 কেন লুকোচ্ছ বোন। শ্যামলীকে যে চেনো তা আগেই বুঝতে পেরেছি নইলে তোমার মুখ দিয়ে শ্যামলীদি উচ্চারণ হতো না। কোথায় আছে সে বলতে পারো ? আমি ভীত হয়ে বললাম, বিশ্বাস করুন আমি ওকে চিনি না।

 আমি জানি তুমি শ্যামলীকে চেনো। কেন তার কথা বলতে চাইছো না। গায়ত্রীদি গভীর শ্বাস নিয়ে পুনরায় বললেন, আমি ও শ্যামলীর জামাইবাবু খবর পেয়েছি, শ্যামলী যাকে ভালবেসে বিয়ে করতে চেয়েছিলো সে বেইমানী করে তাকে নোংরা পথে ঠেলে দিয়েছে। বিশেষ করে ওকে খোঁজ করার জন্য ওর জামাইবাবুকে কলকাতায় বদলি নিতে বললাম। সন্ধান তোমারই কাছে পাবো এর কোন ব্যতিক্রম নেই। দয়া করে তার সন্ধানের পথ বলে দাও বোন। শ্যামলীর জন্য মা, বাবা কতখানি যে শোকে দূর্বল হয়েছেন তা প্রত্যক্ষ করলে তুমিও চোখের জলে ভাসবে।
গায়ত্রীদির চোখ দুটো জলে ভরে এলো দেখলাম। শ্যামলীদি যে গায়ত্রীদির অতি আদুরে বোন তা ওর কাছে বারবার শুনেছি কিন্তু ভাবলাম এই পরিস্থিতিতে বা এই পর্যায়ে কোন প্রকারে বলা সম্ভব নয় সে কোথায় আছে। যখন একটা নিশ্চিন্ত আশ্রয় পাওয়া গেছে তখন শ্যামলীদির অতীত জীবনের গুপ্ত ইতিহাস উদঘাটন করে দিয়ে আর নিজের সর্বনাশ ডেকে আনবো না। বিলম্ব না করে ময়নাকে টেনে নিয়ে উদভ্রান্তের মতো পাশের ঘরের খিল এঁটে কাঁদতে থাকলাম।

 গায়ত্রীদি বদ্ধদ্বারে করাঘাত করতে থাকল। ওভাবে কিছুক্ষণ আঘাত করার পর এক সময় দেবীদাস এসে গায়ত্রীদিকে ও অবস্থায় দেখে অবাক যে হলো না তা নয় । দেবীদাস হকচকিয়ে গিয়ে মুহুর্তের মধ্যে ক্রুদ্ধস্বরে বলল, কি ব্যাপার, ওভাবে আঘাত করছেন কেন?

 গায়ত্রীদি ধীরে ধীরে মুখ তুলে দেবীদাসের চোখে চোখ রাখতেই বিস্ময়ে পাষাণ প্রতিমার মতো দাঁড়িয়ে রইলো। সহসা দেবীদাসের মুখ দিয়ে বেরিয়ে এলো, গায়ত্রীদি তুমি এখানে?

 গায়ত্রীদি ভাবতে পারেনি এ বাড়ী দেবীদাসের। দেবীদাসকে ভাইয়ের মতো ভালোবাসেন, কারণ সুভাষের বন্ধু সে। একই সাথে পড়াশুনা করেছে। কিন্তু ও কথা থাক। গায়ত্রীদি ধীরে ধীরে নম্র কণ্ঠে বললেন, আমি তোমাকে এখানে দেখবো ভাবতে পারিনি। তোমার সাথে দেখা হয়ে ভালোই হলো, নতুবা আমি ভীষণ ভেঙ্গে পড়তাম। এখন তোমার সহযোগিতা আমার বিশেষ প্রয়োজন গায়ত্রীদির চোখ দুটো পুনরায় ছলছল করে উঠলো।

 দেবীদাসের মন বড় চঞ্চল ও কৌতুহলী দৃষ্টিতে তার মুখপানে তাকিয়ে বলল, কি ব্যাপার বলতো, আমি ঠিক বুঝতে পারছি না। আর এতো ব্যাকুল হবার কারণই বা কি।

 আর ধৈর্য্য ধরতে পারছি না ভাই। শুধু আমি নই ;শ্যামলীর জন্য বাবা, মা, সুভাষ সকলেই মন মরা হয়ে জীবন কাটাচ্ছে। তুমি আমাদের বাঁচাও দেবীদাস। শ্যামলীর খোঁজ তোমাকে করতেই হবে।

 কোন শ্যামলীর কথা বলছো? তুমি পরিস্কার করে আমার কাছে ব্যক্ত করো। আমি জানি না শ্যামলী কোথায় আছে। আমার অনুমান রমা জানে।

 রমা জানে। রমার নাম শুনে দেবীর হৃৎপিন্ড কাঁপতে থাকলো তবে কি রমার সহচরী সেই শ্যামলী। দেবীদাস দ্বিতীয় প্রশ্ন করলো, তুমি কি করে জানলে রমা শ্যামলীর খবর জানে?

 গায়ত্রীদি সংক্ষেপে প্রকাশ করলেন আমি শ্যামলীদির খবর জানি। দেবীদাস তাঁর কথার ছলে বুঝতে বারলো গায়ত্রীদির অনুমান অসত্য নয়। দ্বিতীয়তঃ

রমা যে শ্যামলীর কথা গোপন রাখতে চায় এও বিশ্বাস করল। রমা তার অতীতকে যে গায়ত্রীদির কাছে প্রকাশে অনিচ্ছুক। বুঝতে পারলো দেবীদাস কি করবে কিছুক্ষণের মধ্যে স্থির করে তাকে কথা দিলো, রমার মারফৎ শ্যামলীর সংবাদ নিয়ে আজই সন্ধ্যায় ওদের বাড়ীতে গিয়ে প্রকাশ করবে।

গায়ত্রীদি নিজেকে সংযত করে কোন প্রকারে বাড়ী মুখে পা বাড়ালেন। শত চিন্তাকে স্তুপীকৃত করে দরজার কাছে এসে অতি নম্রকণ্ঠে ডাক দিলো দেবী, রমা, দরজা খোল।

দরজা খুলে ওর বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ে বললাম, আমাকে রক্ষে করো। দেবীদাস সান্ত্বনা দিলো। সেই সময় মনে হয়েছিলো আমার হৃৎপিণ্ড যেন শতাধিক বিদীর্ণ হয়ে যাবে। বার বার মনের দরজায় করাঘাত করতে লাগলো।

শ্রীরামচন্দ্রের পাদস্পর্শে পাষানী অহল্যা যেমন মানুষ হয়ে ছিলেন, আমারও কি দেবীদাসের স্পর্শে পরিবর্তন ঘটবে না?

দেবীদাসের উক্তি, কোন ভয় নেই রমা। আমি তো জেনে গায়ত্রীদিকে বিদায় করলাম। তবে এ আমার বড় আশ্চর্য লাগছে বা আমি ভেবে পাচ্ছি না, শ্যামলী কি সুভাষের বোন? সুভাষের বাড়ী আমার যথেষ্ট যাতায়াত ছিল। তথাপি শ্যামলীর সাথে কখনো সাক্ষাৎ হয়নি। তবে শুনেছিলাম ওদের বংশের একজন মেয়ে মামাবাড়ী থেকে পড়াশুনা করছে। শ্যামলীর কথা সুভাষ মাঝে মাঝে বলতো, কিন্তু চাক্ষুষ পরিচয় ঘটেনি। তখনকার মতো নিজেকে সংযত করে শ্যামলীদি যে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত তা বিস্তারে প্রকাশ করলাম। তারপর আমাদের দুজনের পতিতা বৃত্তির জন্য ঘৃণ্য পথে নেমে আসার কথা গোপন রাখলাম না।

আমার কথা শুনে দেবীদাস গভীর চিন্তায় মগ্ন হলো। ঈশ্বরের নিকটে শ্যামলীদির সহজ মুক্তির জন্য প্রার্থনা করলাম। এই বর্তমান যুগে অর্থবল থাকলে নিশ্চয় খুনীকে বাঁচাতে পারা যায়। সঠিক প্রমাণ হলেও কেস হালকা করা যায় যদি উকিল ঠিক মতো প্রমাণ করতে পারেন। শ্যামলীদি খুন করলেও সেই খুনের পিছনে যুক্তিপূর্ণ কারণ আছে। যেহেতু সমাজ বিরোধীদের প্রশ্রয় দিলে সমাজে অপরাধের মাত্রা দিন দিন বৃদ্ধি পাবে। এ প্রসঙ্গে দেবীদাসকেও নির্দোষী বলা চলে না। তবুও ওর বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা অবলম্বন করা আমার সাধ্যাতীত।

কারণ পাঠক / পাঠিকার নিশ্চয় অভিজ্ঞ যে, কি কারণে দেবীদাসকে আমি শত্ৰু বলে অভিযুক্ত করতে পারিনি।

সহস্র বেদনা দুঃখকে বুকে নিয়ে কিছুক্ষণ চিন্তায় মগ্ন থাকার পর বিকেলে দেবীদাসের সাথে শ্যামলীদির কারাকক্ষের কাছে উপস্থিত হলাম। ভাবতে পারিনি শ্যামলীদিকে এতোখানি হর্ষোৎফুল্ল দেখবো। তার মানসিক দূর্বলতার কোন চিহ্ন লক্ষ্য করলাম না। অসীম ধৈর্য্য ও দৃঢ় মনোবলের সঙ্গে সে কারাবাস করছে।

এইরূপ মানসিক স্থৈর্য সাধারণতঃ লক্ষ্য করা যায় না। কিন্তু আমি নিজের চোখকে সংযত করতে পারলাম না। আমার এ অবস্থা দেখে শ্যামলীদি হাসি মুখে বলল, এতে কাঁদবার কি আছে? তুই বিশ্বাস কর পদ্মা আমি খুব সুখে আছি। ঐ বারাঙ্গনার প্রাসাদের চেয়ে কারাকক্ষে অনেকখানি শান্তির পরিবেশ বিরাজ করে। অতি সুন্দরভাবে আমার দিন কেটে যাচ্ছে। মনে কোন গ্লানি বা সংশয় আসেনি। এখানকার বিষাক্ত নিঃশ্বাস আমার মনকে কলুষিত করেনি। এখন কোথায় আছিস ?

দেবীদাসের পানে তাকিয়ে জানিয়ে দিলাম তার আশ্রয়ে আছি বাকি কথা আর বলতে হলো না, আভাসেই বুঝে নিলো। শ্যামলীদি দেবীকে কাছে ডেকে ওর হাত দুটো ধরে কাতর অনুরোধ করল, আমার মতো হতভাগিনী পদ্মাকে ও যেন দূরে সরিয়ে না দেয়।

দেবীদাস ঘাড় নেড়ে জানিয়ে দিলো সে তার কথা রাখবে।

রাজ্যে নতুন গ্রুপ-ডি কর্মী নিয়োগ|| WB Group D Recruitment 2023 || রাজ্যের বোস ইন্সটিটিউটে গ্রুপ-ডি কর্মী নিয়োগ, সম্পূর্ণ স্থায়ী পদে চাকরি || Kolkata Bose Institute Group-D Recruitment 2023

 





রাজ্যে বসবাস কারী প্রতিটি চাকরি প্রার্থীদের জন্য সুখবর আছে। আবার নতুন গ্রুপ -ডি পোস্ট এ নিয়োগ হতে চলেছে। রাজ্যের কোলকাতা বোস ইনস্টিটিউট (Kolkata Bose Institute) থেকে গ্রুপ-ডি (Group-D) পোস্ট এ নতুন চাকরির নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারের মিনিস্ট্রি অফ সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি (Ministry of Science & Technology)-র অধীনে এই নিয়োগ করানো হবে। 

সমগ্র দেশ তথা পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের অন্তর্গত সমস্ত জেলা থেকে পুরুষ ও মহিলা সকলেই আবেদন করতে পারবে। সবাইকে অনলাইনের মাধ্যমে আবেদন করে তার প্রিন্ট কপি স্পিড পোস্ট বা রেজিস্টার পোস্টের মাধ্যমে জমা করতে হবে।

তাই বর্তমানে যেসমস্ত চাকরি প্রার্থী সরকারি চাকরির জন্য অপেক্ষা করছেন তাদের জন্য এটি একটি সুবর্ণ সুযোগ। কোন কোন পদে নিয়োগ করা হবে, মাসিক বেতন কত দেওয়া হবে, বয়সসীমা কত থাকতে হবে, শিক্ষাগত যোগ্যতা কি লাগবে এবং কিভাবে আবেদন করতে হবে তা নিচে থেকে পরপর জেনে নেব।


নোটিশ নম্বরঃ BI/NON-ACA/11/2022-23


নোটিশ প্রকাশের তারিখঃ 14.01.2023


আবেদনের মাধ্যমঃ শুধু মাত্র অনলাইন।



(1) পদের নামঃ জুনিয়র মেকানিক (Junior Mechanic)     


বেতনঃ এই পদের জন্য পে লেভেল 2 অনুযায়ী বেতন দেওয়া হবে।


শিক্ষাগত যোগ্যতাঃ শুধু মাত্র অষ্টম শ্রেণি পাশ (Eight Pass) থাকতে হবে এবং সংশ্লিষ্ট ট্রেডে ট্রেড সার্টিফিকেট থাকতে হবে।


বয়সসীমাঃ প্রার্থীর বয়স 28 বছরের মধ্যে হতে হবে। সংরক্ষিত প্রার্থীরা সরকারি নিয়মে ছাড় পাবেন।



মোট শূন্যপদঃ


Electrical – 2 টি।

Mechanical – 1 টি।



(2) পদের নামঃ ড্রাইভার কাম মেকানিক (Driver Cum Mechanic)   


বেতনঃ এই পদের জন্যও একইভাবে পে লেভেল 2 অনুযায়ী বেতন দেওয়া হবে।


শিক্ষাগত যোগ্যতাঃ শুধু মাত্র অষ্টম শ্রেণি পাশ (Eight Pass) করে থাকতে হবে এবং 5 বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। এছাড়াও মোটর গাড়ি চালানোর ভ্যালিড ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকা আবশ্যক।


বয়সসীমাঃ প্রার্থীর বয়স 28 বছরের মধ্যে হতে হবে। সংরক্ষিত প্রার্থীরা সরকারি নিয়মে ছাড় পাবেন।


মোট শূন্যপদঃ 1 টি।


আবেদন পদ্ধতি

প্রতিবেদনে শুরুতেই বলা হয়েছে এখানে সকলকে অনলাইনের মাধ্যমে আবেদন করতে হবে। কিভাবে আবেদন করবেন তা নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে, আবেদন করতে চাইলে দেখে নিন- 


(1) কোলকাতা বোস ইনস্টিটিউট এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইট থেকে অনলাইনের মাধ্যমে আবেদন করতে হবে। আবেদনকারিদের সুবিধার জন্য নিচে আবেদন করার লিঙ্ক দেওয়া হয়েছে। 


(2) নিচের দেওয়া লিঙ্কে ক্লিক করলে নতুন পেজ ওপেন হবে। এরপরে নির্দিষ্ট বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী আবেদনপত্রটি খুলতে হবে।


(3) তারপরে নির্দিষ্ট পদ অনুযায়ী সমস্ত তথ্য দিয়ে আবেদনপত্রটি নিখুঁতভাবে পূরণ করতে হবে।


(4) আবেদনপত্র পূরণ করার পর শিক্ষাগত যোগ্যতা সহ সমস্ত প্রয়োজনীয় নথিপত্রগুলি স্ক্যান করে আপলোড করতে হবে।


(5) আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়ে গেলে আবেদনপত্রটি প্রিন্ট আউট (হার্ড কপি) করে বার করতে হবে।


(6) সবশেষে প্রিন্ট আউট করা আবেদনপত্র এর হার্ড কপিটি একটি খামে ভরে নিচের দেওয়া ঠিকানায় পাঠাতে হবে। 


আবেদনপত্রের হার্ড কপি দেওয়ার ঠিকানা -

The Registrar (Officiating), Bose Institute, Unified Academic Campus, Block-EN 80, Sector-V, Bidhannagar, Kolkata-700091. 



গুরুত্বপূর্ণ তারিখ :


নোটিশ প্রকাশ - 14.01.2023

আবেদন শুরু - 14.01.2023

আবেদন শেষ - 13.02.2023



গুরুত্বপূর্ণ লিঙ্কগুলি (Important Links) 

👇👇👇👇


Official Website -

Click here 🔴


Notice -

Click here 🔴


Apply Now-

Click here 🔴



______________________________________


চাকরি সংক্রান্ত আপডেট পেতে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন





Telegram group-

Click here 🔴






Whatsapp group-

Click here 🔴





Tuesday, January 31, 2023

গ্রামীণ ডাক সেবক (GDS) নিয়োগ 2023 || WB GDS recruitment 2023 || Post office peon recruitment 2023 || https://indiapostgdsonline.in/




পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের চাকরি প্রার্থীদের জন্য নতুন সুখবর আছে। আবার নিয়োগ হতে চলেছে গ্রামীণ ডাক সেবক তথা GDS পদে। বিজ্ঞপ্তি টি Indian post এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইট থেকে প্রকাশিত হয়েছে।

সমগ্র দেশ জুড়ে এই নিয়োগ চলবে। এর মধ্যে আপনাকে পশ্চিমবঙ্গের সার্কেল সিলেক্ট করতে হবে।

চাকরি সংক্রান্ত সম্পূর্ণ বিবরণ নীচে দেওয়া হল-






মোট শূন্যপদ - 40889 টি ( সমগ্র দেশে)

 

 

কোন কোন পদে নিয়োগ করা হবে - 


(1) ব্র্যাঞ্চ পোষ্ট মাস্টার (BPM)


(2) অ্যাসিস্ট্যান্ট ব্র্যাঞ্চ পোষ্ট মাস্টার/ ডাক সেবক (ABPM) 



বেতন- 

(1) BPM - 12,000 টাকা/মাস


(2) ABPM - 10,000 টাকা/মাস



বয়সসীমা- ১৮ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে হবে। সংরক্ষিত প্রার্থীরা সরকারি নিয়মে ছাড় পাবেন।




শিক্ষাগত যোগ্যতা - 


শুধু মাত্র মাধ্যমিক পাশ করে থাকলেই আপনি এখানে আবেদন করার সুযোগ পাবেন।

 



বিশেষ যোগ্যতা -

আবেদনকারীকে অবশ্যই সাইকেল চালাতে জানতে হবে। এর সাথে চাকরিপ্রার্থীদের স্থানীয় ভাষায় কথা বলতে, বুঝতে এবং লিখতে জানতে হবে।




নিয়োগ প্রক্রিয়া-


শুধু মাত্র মাধ্যমিকে প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে মেরিট লিস্ট তৈরি হবে। কোনোরকম লিখিত পরীক্ষা ও ইন্টারভিউ দিতে হবে না।




আবেদন প্রক্রিয়া -

 অফিসিয়াল ওয়েবসাইট এ গিয়ে অনলাইনে আবেদন করার সুযোগ পাবেন। 



আবেদন ফি -


সাধারণ প্রার্থীদের জন্য 100 টাকা। সংরক্ষিত প্রার্থী এবং মহিলাদের কোনো আবেদন ফি লাগবে না।





গুরুত্বপূর্ণ তারিখ-


আবেদন শুরু - 27/01/2023

আবেদন শেষ- 16/02/2023




Official Website-


Click here 🔴





 

Monday, January 30, 2023

গনিত বিস্ময় - পুষ্প সাঁতরা || প্রবন্ধ || নিবন্ধ || Article writing

 গনিত বিস্ময়

     পুষ্প সাঁতরা


গনিতে অসাধারণ প্রত্যুতপন্নমতিত্ব বিস্ময় ব্যক্তিত্ব শ্রীনিবাস রামানুজন! বিশ্বের অন্যতম সেরা গনিতজ্ঞ। স্বল্প আয়ুস্কালের মধ্যে তিনি এমন শীর্ষে পৌঁছেছিলেন যে, তাঁর সান্নিধ্যে বা গনিত ভাবনার সংস্পর্শে যাঁরাই এসেছেন প্রত্যেকেই রামানুজের প্রতিভার উজ্জ্বলতায় সম্মোহিত হয়েছেন। দুশত এগার র ছাব্বিশে ডিসেম্বর ভারত সরকারের পক্ষ থেকে প্রধান মন্ত্রী মনমোহন সিং ঘোষনা করেন শ্রীনিবাস রামানুজনের জন্মদিনটি 'জাতীয় গনিত দিবস '- হিসাবে পালিত হবে।

রামানুজনের পিতৃনিবাস তামিলনাড়ুর কুম্ভকোনম শহরে। বাবা কুপুস্বামী শ্রীনিবাস আয়েঙ্গার ছিলেন এক কাপড়ের দোকানের কর্মচারী, তাঁর ভক্তিমতী মা কোমলতাম্বল ছিলেন সু কন্ঠের অধিকারী ইরোড শহরের মামা বাড়িতে-- আঠারশ সাতাশি র বাইশে ডিসেম্বর রামানুজনের জন্ম। মা ছিলেন স্থানীয় জাগ্রত দেবী নামগিরির একান্ত ভক্ত। বাল্যে রামানুজনের খেলাধুলায় তেমন আগ্রহ ছিল না, তবে স্মৃতি শক্তি ছিল অসাধারণ! মায়ের কাছ থেকে আত্মস্থ করেছিলেন পুরাণের কথা, ভক্তি গীতি, রামায়ণ মহাভারত ও বিভিন্ন ধর্মের কাহিনি শুনতেও বড় ভালবাসতেন।

প্রাথমিকে শেষ পরীক্ষায় প্রথম হয়ে রামানুজন ভর্তি হয় কুম্ভকোনম টাউন হাইস্কুলে, সেখানেই গনিতে তাঁর অসাধারণ মেধা ও প্রখর বুদ্ধিমত্তার পরিচয় পাওয়া যায় নবম শ্রেনীতে পড়ার সময় এসএল লোনির লেখা একটি ত্রিকোনমিতির বই পান। সামান্য সময়ের মধ্যে তত্ত্ব অনুধাবন সহ বইটিতে প্রদত্ত প্রতিটি সমস্যার সমাধান করে ফেলেন সহজেই। ঊনিশ শ তিন সালে স্কুলের শেষ পরীক্ষায় গণিতে বিশেষ কৃতিত্বের জন্য রামানুজন লাভ করেন-'রঙ্গনাথ রাও 'পুরষ্কার। ওই বছরই মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন এবং বৃত্তি পান। পরের বছর কুম্ভকোনম সরকারী কলেজে এফ এ ভর্তি হন, তার আগেই তাঁর হাতে আসে জি এস কারের লেখা, 'এ সিনোপসিস অফ এলিমেন্টরি রেজাল্টস ইন পিওর ম্যাথমেটিক্স 'বই টি। সেই বইয়ে ছিল গণিতের বিভিন্ন শাখার সাড়ে চারহাজার সূত্র ও উপপাদ্য। রামানুজন সেগুলি প্রমাণ করার পর আবিষ্কার করতে থাকেন একের পর এক সূত্র ও উপপাদ্য। যা তিনি একটি খাতায় লিখে রাখেন, পরে সেটি রামানুজনের 'নোটবুক 'নামে খ্যাত হয়। কলেজে অঙ্কের প্রতি প্রবল আগ্রহ থাকলেও ইংরাজিতে কম নম্বর পাওয়ায় এফ এ কোর্সে দ্বিতীয় বর্ষে উঠতে পারেন নি, মনের দুঃখে কলেজ ছেড়ে দেন।

উনিশ ছ সালে মাদ্রাজের পাপাইয়াচ্চা কলেজে ফের এফ এ ভর্তি হন, সেখানেও একশ তে একশ পান, কিন্ত অন্য বিষয়ে পাশ নাম্বার ও তুলতে পারেন নি, ফলে এফ এ তকমা পাওয়া হয়নি, তবু তাঁর গনিত সাধনা থামেনি বরং বাড়তি গতি পায়। নতূন নতূন আবিষ্কারে স্ফীত হতে থাকে তাঁর নোটবুক।

রামানুজন ঊনিশ শ ন সালে বিয়ে করেন জানকী দেবীকে, এর মধ্যেই রামানুজনের গনিতের সমস্যা ও সমাধান ইন্ডিয়ান ম্যাথম্যটিক্যাল সোসাইটির জার্নালে প্রকাশিত হলে তিনি উচ্চ প্রশংসিত হন। তাঁর প্রতিভার কথা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। এর মধ্যে পারিবারিক প্রয়োজনে তাঁকে মাদ্রাজ পোর্টট্রাষ্ট অফিসে কেরানির চাকরি নিতে হয়। তবে গবেষণা অব্যাহত ছিল। মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সি কলেজের অধ্যাপক সেও আয়ারের পরামর্শে রামানুজন কেমব্রিজের ট্রিনিটি কলেজের অধ্যাপক জি এইচ হার্ডি কে চিঠি লেখেন এবং সেই সঙ্গে পাঠান নিজের আবিষ্কৃত কিছু সূত্র ও উপপাদ্য, সেসব দেখে অধ্যাপক হার্ডি অভিভূত হন, তাঁর চেষ্টায় রামানুজন কেমব্রিজে যান।

সেখান তিনি আরও সৃজন শীল হয়ে ওঠেন। অধ্যাপক হার্ডির সহায়তায় রামানুজন লেখেন একের পর এক গবেষণার পত্র। ষোল সালে কেমব্রিজ থেকে বি এ ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি সতর সালে লন্ডন ম্যাথম্যটিক্যাল সোসাইটির পদ লাভ করেন আঠার সালে নির্বাচিত হন কেমব্রিজ ফিলোসফিক্যাল সোসাইটির সদস্য এবং প্রথম ভারতীয় হিসাবে ফেলো অফ ট্রিনিটি হন রামানুজন।

মানুষ হিসাবেও মহান, তাঁর ব্যক্তিত্ব আচরণ আন্তরিকতা সকলকেই মুগ্ধ করত, তিনি নিজের প্রতিভা সম্বন্ধে উদাসীন ছিলেন, ঈশ্বরের উপর অগাধ বিশ্বাস 'যে সমীকরন ঈশ্বরের চিন্তাকে প্রকাশ করে না, তা আমার কাছে অর্থ হীন---- বলেছিলেন রামানুজন।

তিনি আরও বলতেন--'নামাক্কলের জাগ্রত দেবী স্বপ্নে তাঁকে সূত্র বলেদিতেন ' রামানুজনের কাজ ছড়িয়ে আছে তাঁর সাঁইত্রিশটি গবেষনামূলক প্রবন্ধ তিন হাজার দুশত চুয়ান্ন টি গানিতিক ফলে সমৃদ্ধ 'নোটবুক '।পাশাপাশি ইন্ডিয়ান ম্যাথম্যটিক্যাল সোসাইটির জার্নালে পাঠানো আঠান্নটি প্রশ্নে এবং গবেষক হিসাবে মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয়ের জমা দেওয়া তিনটি গবেষনা পত্রে।

রামানুজনের কাজ শুধু গনিত কে সমৃদ্ধ করেনি, গনিত কে ছাড়িয়ে বিজ্ঞানের অন্য শাখাতেও প্রয়োগ করাহচ্ছে। ঊনিশ শ সতের সালে লন্ডনে হঠাৎই অসুস্থ হয়েপড়েন, চিকিৎসা চললেও দ্রুত সেরে উঠবেন এই আশায় ভারতে আনা হয় রামানুজনকে, কিন্তু সব চেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়ে ঊনিশ শ কুড়ি সালের ছাব্বিশে এপ্রিল এই মহান গনিতজ্ঞের মহাপ্রয়ান ঘটে মাদ্রাজের চেতপাটে। তখন তাঁর বয়স মাত্র তেত্রিশ। এই প্রজন্মেও যাঁরা গনিত সাধনায় মগ্ন শ্রীনিবাস রামানুজন তাঁদেরকেও প্রেরনা জুগিয়ে চলেছেন!


মনের আমি মনের তুমি - স্নেহাশিস মুখোপাধ‍্যায় || প্রবন্ধ || নিবন্ধ || Article writing

 মনের আমি মনের তুমি 

           স্নেহাশিস মুখোপাধ‍্যায়



 


মন নিয়ে লিখতে বসে একটা সক্ষমতা এবং অসক্ষমতার প্রশ্ন খুব বড়ো হয়ে উঠছে। ‘দুই পাখি’ কবিতায় রবীন্দ্রনাথ খাঁচার পাখি এবং বনের পাখির ভেতরে যে মিল এবং পার্থক্য তৈরি করে দেখিয়েছিলেন, তার শেষে অসামর্থ্যের প্রশ্নটি বড়ো হয়ে দ্যাখা দিলো। খাঁচার পাখি নিরিবিলিতে থাকে, কিন্তু তার ভেতরে বাইরের পৃথিবীর স্বপ্ন রয়েছে। বনের পাখি অনেক খোলামেলা এবং উদার হলেও এবং তার সঙ্গে আকর্ষণীয় হয়ে উঠলেও, খাঁচার পাখির পক্ষে সেই দামালপনার সঙ্গে পূর্ণ সঙ্গতি দান করা মোটেই সম্ভব নয়। ফলে তার ভেতরে সুখ এবং দুঃখ দুই-ই সময়ে সময়ে মুহূর্ত তৈরি করে ফেলছে। আধুনিককালের মনস্বী মানুষেরা মানুষের মনোস্তত্ত্বের বিভিন্ন দিক নিয়ে কথা বলতে গিয়ে যে পর্যবেক্ষণগুলোকে সামনে রাখার চেষ্টা করেন, তার ভেতরে স্বপ্ন একটি অন্যতম বিষয়। ফ্রয়েড সাহেব তাঁর ‘স্টাডিস অন হিস্টিরিয়া’তে বাস্তব মানুষের জীবনে স্বপ্নের ধারণাকে ভ্রান্ত বলে ধরে নেননি। বরং তাকে বিজ্ঞানভিত্তিক আলোচনার ভেতর দিয়ে একটা রুপ দিতে চেয়েছেন। দুজন মানুষের মনের আলো-অন্ধকারের দিক যে আসলে সাফল্য এবং ব্যর্থতার দিক এবং তার বৈচিত্র্য, ফ্রয়েড বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রোগীর মানসিক অবস্থার রোগজনিত টানাপোড়েনের আলাদা আলাদা দৃষ্টান্ত দিয়ে বুঝিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন।


মন নিয়ে দু-কথা লেখা আর মনস্তত্ত্ব নিয়ে কথা বলা খুব সমার্থক নয়। কিন্তু মনের সঙ্গে মনস্তত্ত্বের একটা মিল থাকে বলেই লেখাটা সাহস করে লিখছি। মন নিয়ে কথা উঠলেই, মনের স্থিরতা এবং অস্থিরতা নিয়ে কথা ওঠে। তখন সময় তুল্যমূল্য হয়ে ওঠে। রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন, ‘সকলই ক্ষণিক, খণ্ড, ছিন্ন’...। অর্থাৎ সমস্ত কিছুই একটা মেয়াদের ভেতরে আবদ্ধ হয়ে থাকে। সেইজন্য অনেক বিষয় নিয়ে মানুষের চিন্তাভাবনাও মেয়াদী। তাহলে চিরন্তন বলে কি কিছুই নেই? কিছু হয় না? এক্ষেত্রে খণ্ড এবং ছিন্ন হওয়ার নিমিত্তকালটিকেই চিরন্তন বলে ধরে নেওয়া যেতে পারে। কারণ, এর ভেতরে ধারাবাহিকতার উপাদান রয়েছে। দেশ, কাল, ইতিহাসের ক্রমবিবর্তনের ধারার মধ্যে এই চিন্তাটাই হয়তো একমাত্র সত্য। কিন্তু মানুষের মনের ধারার বয়স, মানে একক মানুষের ক্ষেত্রে সময় অনেক কম থাকার জন্য একটা দীর্ঘমেয়াদী বিচ্ছিন্নতা যা দীর্ঘদিনের ইতিহাসের সঙ্গে সংযুক্ত, তাকে খুব বেশি ছুঁয়ে যায় না। একক মানুষের জীবন তো তাঁর মতোই হবে। ফলে, তাঁর মন এবং মনের গঠনের মেয়াদ আরো কম হওয়াই স্বাভাবিক। অথচ এই মানুষটিও ইতিহাসের বিরাট ব্যাপ্তির একটা অংশ। এবং খণ্ড ও বিচ্ছিন্ন। ফলে চিরন্তনের সেও একজন অংশীদারই হয়ে উঠছে। মানুষটি কিম্বা ব্যক্তিটির ভেতরে প্রত্যেকদিনের চিন্তার ঢেউ এবং শূন্যতা নিয়েই তাঁর নিজস্ব মনোজগৎ এবং মনোস্তত্ত্বের বোধটি তৈরি হয়ে চলেছে। এই মনোস্তত্ত্বকে একটি উন্নততর বিজ্ঞান বলেছিলেন মনোস্তত্ত্ববিদ নিৎসে। ফরাসী কবি বোদলেয়ারের কবিতায় খুব স্পষ্টভাবে ভালো এবং মন্দ চিন্তার মানুষের মন নিয়ে লেখা আছে, যা মানুষের ভেতরের অন্তর্গত ধারণা সম্পর্কে একটা রুপ তৈরি করতে কিম্বা বুঝতে আমাদের সাহায্য করে। বুদ্ধধর্মের চর্চার ভেতরেও এই ‘পজিটিভ’ এবং ‘নেগেটিভ’ চিন্তার কথা বলা হয়ে থাকে। উপনিষদের অনেক শব্দই পরবর্তীকালে তার মর্যাদা হারিয়ে ফেলেছে। কিম্বা সেই চর্চারও একটা ধারাবাহিক ইতিহাস তৈরি হয়ে উঠেছে। এই সামগ্রিকতা ব্যক্তির জীবন আর সামাজিক কিম্বা আরো বড়ো কোনো জীবনের অঙ্গপ্রত্যঙ্গের অংশীদার হয়ে মানুষের মনের আকার এবং রুপকে একটা বিবর্তনের ভেতর নিয়ে চলেছে। একেও একধরণের যান্ত্রিক প্রক্রিয়াই বলা যায়। বিবেকানন্দ মানুষের জীবনে দুঃখের বোধ তৈরি হওয়ার কারণ হিসেবে জ্ঞান কিম্বা অনুসন্ধিৎসার অভাব বলেই আলোচনা করেছিলেন। এই আলোচনা থেকে বোঝা যায়, বিবেকানন্দ খুব সাধারণ স্তরের মানুষের কথা বলেননি। ‘কুয়োর ব্যাঙ’ বলতে বিবেকানন্দ যা বুঝিয়েছিলেন, তাকে আজ হয়তো সর্বজনীন বলে দ্যাখাই যায়। কিন্তু একটা সময় এই কথাটিরও একটা সুনির্দিষ্ট ক্ষেত্র ছিলো।


সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রে বেঁচে থাকার কতোগুলো শর্ত থাকে। সাধারণ বলতে, সমস্ত মানুষের কথাই এখানে বলা হচ্ছে। বিজ্ঞান বলতে একটা সময় মানুষ বিশেষ জ্ঞানকেই বুঝতো। এখন বিজ্ঞান বলতে ব্যবহারিক জ্ঞানের দিকে মানুষের আগ্রহ বেশি তৈরি হয়েছে। এখানে অবশ্য সাধারণ এবং অন্য স্তরের মানুষের ভেতরে একটা শ্রেণীবিভাগ করাই যায়। বিজ্ঞানী আইনস্টাইন যে অর্থে একজন বিশেষ জ্ঞানসমৃদ্ধ মানুষ ছিলেন, সেই অর্থ ফলিত সত্যের আরো অনেক দূরবর্তী আলোর কথা ভাবতে পেরেছিলো। 


কিন্তু অন্য স্তরের মানুষরাও বিজ্ঞানের এই ব্যবহারিক জ্ঞানের উপযোগীতার বাইরে থাকা মানুষ নন। সাধারণ মানুষের প্রত্যেকদিনের দুঃখের কারণ হিসেবে প্রাথমিকভাবে অর্থের উপযোগীতার কথা মনে হয়। অর্থনীতির সাধারণ নিয়ম অনুযায়ী মানুষের চাহিদা প্রাথমিক শর্ত মিটিয়েও খানিকটা লোকাচারের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হয়ে ওঠে। হয়তো সেই অর্থে ততোটা লোকাচারও নয়। কিন্তু মানুষের বেঁচে থাকার এই বিশেষ একটি বৈশিষ্ট্যের বাইরে খুব কম মানুষ বাস করেন বলেই আমার ধারণা। ফলে উদ্দীপনার তারতম্যজনিত কারণে মানুষের মনে সুখ এবং দুঃখের জন্ম এবং লালনপ্রক্রিয়ার কাজে হ্রাসবৃদ্ধি ঘটে যেতে পারে।


 


একজন মানুষ অনেক কারণে দুঃখী হতে পারেন। সাধারণ স্তরের মানুষরা তাঁদের আর্থ-সামাজিক কারণেই সুখী কিম্বা দুঃখী হন। বিশেষ কোনো সিদ্ধান্তের সংশয়ের কারণেও তাঁদের মনে সুখ কিম্বা দুঃখের জন্ম হতে পারে। এবং কম-বেশি সমস্ত মানুষই এই সংশয়ের ভেতরে অবস্থান করেন। একটি পুজোর উৎসবে চাহিদা মতো পোশাক কিনতে না পারার জন্য মানুষের মনে তীব্র ক্ষোভের জন্ম হওয়াও কোনো আশ্চর্য ঘটনা নয়।ছোটোবেলায়, নিজেদের মনেও এমন দুঃখ কিম্বা সুখের বোধকে অনুভব করতে পারা যায়। রবীন্দ্রনাথ ‘কাঙালিনী’ কবিতায় ধনী এবং দরিদ্রের ভেতরে যে পার্থক্যটি শব্দের মধ্য দিয়ে এঁকেছিলেন, তার প্রাসঙ্গিকতা এখনো যথেষ্ট পরিমানে থেকে গেছে। এখান থেকে মানুষের মনে সুখ কিম্বা দুঃখের একটা চিরজাগরুক ছবিও মনের ভেতরে থেকে যেতে পারে। ছোটোবেলায় ঘটে থাকা বিশেষ কোনো আদর কিম্বা অনাদরের ঘটনাও একজন মানুষের মনস্তত্ত্বের নিয়ন্ত্রক হয়ে উঠতে পারে। যদিও সবটাই নির্ভর করে, মানুষটি তাঁর পরবর্তী জীবনে সেই বিষয় নিয়ে কি ভাবছেন, তার ওপরে। স্বাধীন-ব্যক্তিসত্তার যুগে, মনস্তত্ত্বের একটা বিরাট অবদানের কথা বহুলভাবেই স্বীকৃত হয়ে উঠেছে। এককভাবে একজন মানুষের জীবনের বৈশিষ্ট্য যে এক এবং একক নয়, অর্থাৎ সমভাববিশিষ্ট মানুষও যে পৃথিবীতে বাস করেন, তা অনেকেই জানেন। মানুষে মানুষে মিলমিশের সেটাও একটা কারণ হিসেবেই ধরা হয়। আবার অমিল কিম্বা সংঘাতের কারণ হিসেবেই সেটাই প্রধান আলোচ্য হয়ে ওঠে। কথা শোনা এবং না শোনার পক্ষে এবং বিপরীতে মানুষ তার অবস্থান সম্পর্কে ঠিক কতোটা সচেতন, মনোস্তত্ত্ব তার ওপরেও খানিকটা নির্ভর করে।


 


অন্তর্মনোজগতে যেকোনো চিন্তাই একটা গভীর প্রভাব ফেলতে পারে। ফুলের বাগান দেখে কবি ওয়ার্ডসওয়ার্থের বিমোহিত হয়ে পড়ার ঘটনাকে মনোস্তত্ত্বের অংশ বলেই হয়তো এখন ধরে নেওয়া হবে। ফ্রয়েডও এই ধরণের একটি ঘটনার উদাহরণ দিয়ে আলোচনা করেছিলেন। সেই সম্পর্কে এটাও স্বীকার করে নিতে হবে যে, মনোস্তত্ত্ব একটি স্নায়বিক কর্মপদ্ধতিরই অংশবিশেষ। আমাদের ভাব, ভালোবাসা, রাগ, ঘৃণা প্রভৃতি মানবিক এবং অমানবিক কাজকর্মের সাথে স্নায়ু ঘনিষ্ঠভাবে সংযুক্ত। ঠিক এখান থেকেই জীবনে বেঁচে থাকার শুদ্ধতার বোধ কিভাবে পাল্টে যায়, সেটাও একটা আলোচনার বিষয়। যে স্নায়ু প্রাণের অন্যতম ধারক, সেই স্নায়ুই তো রোগগ্রস্ত হয়ে পড়ছে। কিম্বা বলা যায় স্নায়ুতন্ত্রের কার্যশালা থেকে অন্য ফলাফলও তৈরি হচ্ছে। একক মানুষের জীবনে মনোস্তত্ত্ব এই এতোগুলো কাজে অংশগ্রহণ করে না হয়তো, কিন্তু তাঁর সুখ এবং দুঃখের বোধের ওপরে একটা প্রভাব রেখে যায়। কিম্বা করে ওঠে, সেকথাও বলা যায়। কারণ, একক মানুষটির গুরুত্বের পরিমাপ সামাজিক হলেও, তার একটি ব্যক্তিগত সাপেক্ষও থেকে যায়। সামাজিকভাবে অনেক বেশি সচেতন মানুষের ভেতরে এর সূক্ষ্মতা কখনো কখনো ব্যাধিরও সৃষ্টি করতে পারে। ব্যাধি বলতে সামান্য কিম্বা অনেকখানি অপ্রকৃতিস্হ অবস্থাকেই ধরে নেওয়া হয়। শারীরিক অপ্রকৃতিস্থ অবস্থা একটা স্পষ্ট রুপ থাকে। কিন্তু মানসিক অবস্থাটির রুপ সবসময় আকার পেয়ে ওঠে না। এখানে অপ্রকৃতিস্থ অবস্থা কি বিশেষ কোনো মনোনিবেশের ফল হিসেবেও আসতে পারে? ওয়ার্ডসওয়ার্থ আর রামকৃষ্ণ দেবের ভেতরে একটা মিল কি তবে খুব প্রকট? মোহিত এবং বিমোহিত হয়ে যাওয়ার মিল? রামকৃষ্ণদেব তাঁর কথামৃতের আলোচনাগল্পগুলোর ভেতরে একাধিক পৌরাণিক অবতারের কথা বলেছিলেন। এর থেকে খানিকটা বোঝা যায়, তাঁর ভেতরে একজন কল্পলোকের বাসিন্দাও বসবাস করতেন। মোহিত হয়ে পড়ার দৃশ্যকে অনেকেই উন্মাদের আচরণ বলে মনে করেছেন। খানিকটা অসংযত রুপের পরিচয় পাওয়াও গেছে। বিশেষ করে পঞ্চবটী বনের ভেতরে ঈশ্বর-আরাধনার বিভিন্ন ক্রিয়াকলাপকে তাঁর নিকট আত্মিয়েরা অনেকেই উন্মাদের আচরণ বলে মনে করেছিলেন। আমাদের ভারতীয় ধর্মের ভেতরে সমাধিস্থ হওয়ার অভ্যেসকে যতোটা স্নায়বিক প্রক্রিয়া বলা যায়, ততোটাই তা মনোস্তত্ত্ব হয়ে ওঠে কি না, জানা নেই। শূন্য অবস্থান কি মনোস্তত্ত্বের কোনো প্রক্রিয়ার ভেতরে পড়ে না? বলা খুব মুশকিল। তাহলে মানুষের ভেতরে নিশ্চেতন হয়ে পড়ার ভাবটিকেই বা কি বলে ব্যাখ্যা করবো? এক নয় অলসতা, এক নয় গভীর মনোযোগ, এক নয় স্বার্থপরতা, আর নাহলে কঠিন কোনো অসুখ বলেই ব্যাখ্যা করতে হবে। প্রশ্ন হলো, এই সব কটি ক্রিয়ার সঙ্গে মনোজগতের একটা বিরাট সম্পর্ক কি নেই? এমনকি, যাকে আমরা অবচেতন বলি, অনেক সময় ঘুমের ভেতরে স্বপ্নের মতো যা আমাদের আলোকিত কিম্বা অন্ধকারাচ্ছন্ন করে তোলে তার ভেতরেও এই ধরণের নিশ্চেতনার ভাবটিকে কি মনোজগতেরই একটা অংশ বলে ধরে নেওয়া যাবে না? বারট্রাণ্ড রাসেলের দর্শন এবং চিকিৎসক এবং মনোস্তত্ত্ববিদ ফ্রয়েডের মনোবিশ্লেষণের সমীক্ষার ভেতরেও এই চেতনা এবং অচেতনার অবস্থা একটা বিরাট ভূমিকা নিয়েছিলো। এবং এক ধরণের অতিমনোনিবেশ যে ঈর্ষার জন্ম দেয়, সেকথা রাসেল উদাহরণ দিয়েও আলোচনা করেছিলেন। ফ্রয়েডের ক্ষেত্রে সেটা রোগজনিত নিশ্চেতনার কারণ হিসেবে আলোচ্য হয়েছে। কিন্তু ফ্রয়েড সাহেব নিজেও কি এই অতিমনোনিবেশের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হননি? মানে অন্যের অতিমনোনিবেশের কারণে? তাঁর বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরি ও পদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলো। এও তো মানুষের অন্তর্মনোজগতের বিরাট একটি কার্যপ্রক্রিয়া। আপাতভাবে তা খুব সরল এবং শিশুসুলভ। কিন্তু সমুচিত বয়স পেরিয়ে যাওয়ার কারণে, তাই-ই বিশেষ সমস্যার হয়ে ওঠে। একভাবে দেখতে গেলে এই অতিমনোনিবেশনও এক ধরণের রোগ। কখনো কখনো তার ভেতরে একটা প্রকট অভিপ্রায় তৈরি হয়ে থাকে। সেটা মানুষ হিসেবে মনের গঠনের দিক থেকে একজন ব্যক্তির মানসিকতা এবং ব্যক্তিত্ব ক্ষতিগ্রস্ত করে তুলতে পারে। জীবনের প্রতি মারাত্মক লিপ্সা কিম্বা বিশেষ কোনো অবদমন অথবা তার প্রক্রিয়াও বিরাটভাবে একটা জাতির ক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তার করতে পারে। বিশ্বযুদ্ধ কিম্বা পৃথিবীতে বিভিন্ন সময়ে ঘটে যাওয়া ইতিহাস এবং খানিকটা কাল্পনিক কাহিনীতেও এমন বিভিন্ন চরিত্র খুঁজে পাওয়া যায়, যাঁরা অনেকেই মানুষ হিসেবে খুব স্বাভাবিক ছিলেন না। ট্রয় যুদ্ধের নায়ক এগামেমননের মেয়ে ইলেকট্রার ভেতরে এক ধরণের বিশেষ জটিলতা পর্যবেক্ষকরা লক্ষ্য করেছিলেন, যা খানিকটা তিনি তাঁর বাবার কাছ থেকেই পেয়েছিলেন। ইলিয়াডে এগামেমনন এবং একিলিসের কথোপকথন থেকেও এগামেমননের মানসিকতার একটা পরিচয় আমরা পাই। অথচ দুজনেই বীর যোদ্ধা ছিলেন। গ্রীক বীর ঈদিপাস কিম্বা সুন্দরী নার্সিসাসের ভেতরেও প্রতিশোধমুখ এবং অবদমিত দৃষ্টিভঙ্গি এবং এক ধরণের জীবনবিমুখতার ভাবনাচিন্তা আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে। মনোজগতে এর অনেক রকম প্রভাব থাকলেও, মনোস্তত্ত্ব এর একটি ব্যাখ্যা দিতে পারে। সাধারণভাবে শারীরিক পীড়ায় আচ্ছন্ন না হলে, এর কোনোটিকেই রোগ বলে ধরা হয় না। অর্থাৎ, এক ধরণের ক্লান্তি ঘনিয়ে না উঠলে, তাকে রোগ বলা এবং তার চিকিৎসা করা সম্ভবপর নয়।


 


পৃথিবীর বিভিন্ন সাহিত্য এবং মহাকাব্যের অংশ বিশেষেও মানুষের অন্তর্জগতের একটা রুপ পাঠক নিশ্চই লক্ষ্য করেছেন। অবদমন এবং তার প্রক্রিয়া এই অন্তর্মনোজগতে গভীরভাবে প্রভাব বিস্তার করে বলেই ধারণা করা হয়। অনেক সময় একটা বিশেষ তত্ত্বকেও প্রায় না বুঝেও মানুষকে তার প্রভাবে প্রভাবিত করার খারাপ অভিপ্রায় থেকেও একটা প্রজাতির ক্ষতিসাধনের কাজ সঙ্ঘটিত হতে পারে। তবে, সবাই ইচ্ছাকৃতভাবে এমন করেন, তা বোধহয় নয়। ব্যক্তিজীবনের ঠাট্টা, কিম্বা উপহাসের বোধ এক একজন মানুষের কাছে এক এক রকম মানে হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু সামগ্রিকভাবে বলা যায়, যে মানুষ ভীত কিম্বা অতিভীত, সেই মানুষের মনোজগতের ওপর বেশ কঠিন চাপ পড়ে। এই সময়ের শিক্ষাব্যবস্থা, যার ভেতরে থাকা এবং না থাকার মানে একই, অর্থাৎ, অবলুপ্ত হয়ে যাওয়া, তা শিশু এবং কিশোরদের পরবর্তী জীবনে কঠিন এবং গভীর প্রভাব ফেলতে পারে বলে অনেকেরই মনে হয়েছে। যদিও তাও ব্যক্তি বিশেষের শারীরিক এবং মানসিক গঠনের ওপর নির্ভর করে। ছোটোবেলায় স্কুলের অনুষ্ঠানে গিয়ে দেখেছি, এক এবং একাধিক ছাত্র দু-এক ঘণ্টা ছাত্রসারিতে দাঁড়িয়ে থেকে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলো। পরবর্তী সময়ে এই ধরণের অনুষ্ঠানগুলো ছাত্ররা যাতে বসে অংশগ্রহণ করতে পারে, তার ব্যবস্থা করা হতো। শারীরিক শক্তি বা ক্ষমতা যে মানুষের মানসিক অবস্থার গঠনে খানিকটা প্রভাব ফেলে, একথা স্বীকার না করে উপায় নেই।


একজন প্রতিবন্ধী মানুষের মনের জগৎ আর সম্পূর্ণ সুস্থ মানুষের মনের জগতে একটা তফাৎ নিশ্চই তৈরি হয়। বিশ্ববন্দিতা হেলেন কেলার খুব কঠিন পরিশ্রম এবং অধ্যবসায়ের সঙ্গে এই বাধা দূর করতে সক্ষম হয়েছিলেন। এই ধরণের সমস্যায় মানুষ যে রোজই যুদ্ধের পৃথিবীতে জন্ম নিচ্ছে, তা আরো ঘনিষ্ঠভাবে বোঝা যায়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপান মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলে হেলেন কেলার নিজে জাপানের মানুষের কাছে গিয়ে সৌহার্দ্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। এতো বড়ো জাগতিক ভালবাসার এবং বিশ্বভ্রাতৃত্ববোধের নায়িকা নিজে কিন্তু কঠিন কষ্টের মধ্যে থেকে অন্যতম মানুষ হয়েছিলেন, যা আমাদের সবার শিক্ষণীয়। এবং সেই কষ্টের বেশিরভাগটাই তাঁর শরীরজনিত। পাকস্থলী এবং মস্তিষ্কের রোগে হেলেন তাঁর নতুন জীবন পেলেন, একথা তাঁর আত্মজীবনীতে পড়ে, আপাতভাবে একটি কাব্য পড়ছি বলেই মনে হতে পারে, কিন্তু সেই সঙ্কট একজন মানুষের জীবনহানির একটা প্রচ্ছন্ন রুপ ছিলো, একথা অস্বীকার করার কোনো উপায় থাকে না। হেলেন লিখেছিলেন, “Gradually I got used to the silence and darkness that surrounded me and forget that it has ever been different…” . দেহের এই কঠিন পীড়ার ভেতরে যে দমচাপা আর্তনাদ থাকে, তা একটা যুক্তক্ষয়ের স্মারক ছাড়া আর কীই বা হতে পারে? অন্য মানুষের ক্ষেত্রে মনের অবদমনই হয়তো শারীরিক পীড়ার কারণ হয়ে উঠতে পারে। কিম্বা সাংঘাতিক রুপের আকার নিতে পারে, যা একধরণের রুপক্ষয় বলেই ধারণা করা যায়। কিন্তু হেলেন কেলার এই সমস্ত প্রতিকুলতার বিরুদ্ধে একজন বিজয়িনী। হেলেন তাঁর আত্মজীবনীতে লিখেছেন, তাঁর জীবনে শিক্ষক আসার আগেই জীবনের বেঁচে থাকার এই আলাদা সত্তা সম্পর্কে তিনি খানিকটা অনুভব করেছিলেন। কিন্তু সেই অনুভূতির কোনো ভাষা তৈরি করা হেলেনের পক্ষে তখনো সম্ভব হয়ে ওঠেনি। এ যেন গাছের ভাষা, কিম্বা পৃথিবীর যেকোনো প্রাণের অবদমনের ভাষা। যে ভাষা তৈরি হতে হতে হেলেনের চরিত্রে সামগ্রিক যে রুপ সৃষ্টি হয়ে চলছিলো, তা সম্পূর্ণ অন্য একটি ভাষার জঠর কিম্বা আশ্রয়স্থল। তাতে রাগ আছে, অভিমান আছে, দুষ্টুমি এবং আফশোস মিশ্রিত অনুভূতি আছে। হেলেনকে দেখভাল করা নার্সের সঙ্গে তার সময় কাটানোর অভিজ্ঞতার কাহিনী পড়তে পড়তে এই ধারণাটিই বদ্ধমূল হয়ে ওঠে। রাসেলের তত্ত্ব অনুযায়ী মানুষের ইচ্ছে অসীম নয়। কিন্তু ইচ্ছের দিকে এগিয়ে যাওয়ার ধারণাটিকে আমরা অসীম বলতে পারি। ভালোত্বের একটা ব্যক্তিগত মালিকানা বোধ কিম্বা সত্তা থাকে এবং রাসেলের লেখার বিশ্লেষণে পাই, যে সেটি সর্বজনীন হওয়াই উচিৎ। কিন্তু ফলিত জীবনে তা যে হয়ে ওঠে না, তাই বোধহয় দুঃখের আর একটি অন্যতম কারণ। কারণটি খুব জৈবিক, আগেই বলা হয়েছে। এর ভেতরে অর্থনীতির বণ্টন একটা খুব গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। কিন্তু তা যে অনেকক্ষেত্রেই সাধারণের সীমার মধ্যে আসে না, তা সত্যি। জৈবিকভাবে তা যে মনের জগতে গভীর প্রভাব বিস্তার করে তা আগেই বলা হয়েছে। এখানে ‘জৈবিক’ শব্দটি অনেক ব্যাপ্ত। কারণ খাদ্যের সঙ্গে তার ওতোপ্রতো সংযোগ রয়েছে। মানুষ খানিকটা ইচ্ছের অধীন হলেও, ইচ্ছে শব্দটিকে যদি আমি অবস্থা কিম্বা অনুভূতি বলেই ধরে নিই, তবে তারও তো একটা ঘর আছে, তাকেই কোথাও পুষ্ট হতে হয়। এখানে সাধ্যের ঘর খুব ছোটো হওয়ার জন্য ইচ্ছের আকার কম হয়, এমন কথাও কি খুব অনিশ্চিত? স্বাভাবিকভাবেই বারট্রাণ্ড রাসেলের আলোচনায় শিক্ষা অংশগ্রহণ করেছে। কারণ, আধুনিক পৃথিবীতে শিক্ষা একই সঙ্গে কাজ, রোজগার এবং অনুভূতি এই তিনটি প্রক্রিয়ারই সহায়ক। এবং সেক্ষেত্রে ইচ্ছে একটা বিরাট ভূমিকা পালন করলেও অর্থনীতির বাধাকে অতিক্রম করা বিশেষ শ্রম এবং সময়সাধ্য হয়ে ওঠে। রবীন্দ্রনাথ একটা সময় বিলেতে গিয়েছিলেন (নোবেল পাওয়ার পর) এবং বিশ্বভারতীর জন্য কিছু অর্থসংগ্রহের তাগিদে আমেরিকার কথাও ভেবেছিলেন। শেষপর্যন্ত তাঁর ভেতরের আবেগ যথেষ্ট ভরসা পায়নি। অর্থাৎ, আমি বলতে চাইছি, শিক্ষার প্রসারও অনেক ক্ষেত্রে কিম্বা কিছু ক্ষেত্রে বা সাময়িক অথবা পাকাপাকিভাবে নিরুপায় হয়ে পড়ে। রাসেল শিক্ষা নিয়ে আলোচনায় জানিয়েছেন, শিক্ষা এবং শিক্ষার্থীর কোনো দেশ নেই। উন্নত মানুষের মনের গঠনে তা একটা গভীর প্রভাব বিস্তার করে। রাসেল শিক্ষাব্যবস্থায় চার্চের প্রভাব খানিকটা খর্ব করার কথা বলেছিলেন। এখানে অবধারিতভাবে সক্রেতিসের কথা উল্লেখ করতে হয়। যদিও সক্রেতিস এবং তাঁর অনুগামীদের আলোচনা কতোটা কাজের মুখোমুখি দাঁড়াতে সক্ষম ছিলো, এই নিয়ে সেই সময়ে বোধহয় অনেকেই দ্বিধায় ছিলেন। তাঁরা নিজেরাও সেই দ্বিধা সমসাময়িককালে কাটিয়ে উঠতে পারেননি। সক্রেতিস এবং অ্যালসিবায়োডিসের কথোপকথনে ‘লজিক’ বলে যে বিষয়টিকে ধারণা করা হয়, তা আসলে দ্বিধারই এক সমন্বিত রুপ। যেহেতু সক্রেতিসের আলোচনায় দ্বিধা একটা অন্যতম বিষয় ছিলো। আরো পরিষ্কার করে বলতে গেলে কিম্বা তার পরবর্তী ফল হিসেবে যে শব্দটি তৈরি হতে পারে, তার নাম দ্বন্দ্ব। সেটা কোথাও শ্রমের স্বপক্ষেই বোধহয় কথা বলে যাচ্ছিলো, যা সেই সময়ের প্রতিষ্ঠানের পক্ষে মারাত্মক হয়ে উঠেছিলো। তবে, মানুষের ইচ্ছে যে কাজ করার আগের একটা প্রক্রিয়া, এটা রাসেলের আলোচনার বিশ্লেষণ থেকে জানা যায়। রাসেল এই ইচ্ছেকে স্বার্থপরতার বিপরীতে থাকা একটা উপাদান বলে চিহ্নিত করতে চেয়েছেন। কিন্তু আধুনিককাল শেষ হয়ে যাওয়ার পর মনে হয়, স্বার্থপরতাও এক ধরণের ইচ্ছেরই দাসত্ব করে। আরো সূক্ষ্ম এবং গভীরভাবে বলতে গেলে বলতে হয়, মানুষের মন এবং মস্তিষ্কের এক বিশেষ ধরণের অলসতার নাম স্বার্থপরতা। যা শেষ পর্যন্ত ইচ্ছে হয়েই ওঠে। সাধারণভাবে উন্নত মানুষের জীবনেই এই উপাদানটি অত্যন্ত প্রকট। উন্নত মানুষের পৃথিবীতে স্বার্থপরতা একটি বিচিত্র আকার নিতে পারে।


যুদ্ধের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক একটা শরীরের রক্তচলাচলের মতো। পরিপূরক। অথবা বলা যায়, সমার্থক হয়ে ওঠার কাছাকাছি। যুদ্ধ মানুষের জীবনে একটা অবশম্ভাবী নৈকট্য। মানুষ এবং গণ্য প্রাণীরা প্রায় সবাই বেড়ে ওঠার সময় প্রায় কাছ থেকেই তাদের মা, বাবার শ্রমের জীবনের পরিচয় পেয়ে বড়ো হয়ে ওঠে। তাদের জীবনে স্বার্থপরতা এবং পরার্থপরতার শিক্ষাও খানিকটা শৈশবমুখী। একে অপ্রাসঙ্গিক বলা যায়, কি যায় না, তাও নির্ভর করে ওই ধরণের আচরণের বিপরীতে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষ কিম্বা প্রাণীটির আচরণের ওপর। সেই যুদ্ধ যখন বিরাটভাবে ঘনীভূত হতে শুরু করে, তখন বোঝা যায় যে, খুব সূক্ষ্ম এবং ঠাণ্ডা মস্তিষ্কের নির্মাণকাজটি আগেই হয়ে গেছে। যুদ্ধ তারই অবধারিত ভবিষ্যৎ। ফলে এই সামগ্রিকতার ওপরে জাতিগতভাবেও একজন মানুষ আচরণ করতে পারেন।


 


মনোস্তত্ত্ব শব্দটি নিয়ে আলোচনা করতে গেলে, ‘পাগল’ কিম্বা ‘উন্মাদ’ শব্দটিকেও একটু নজরে রাখতে হয়। পাগলামি, কিম্বা অতিরিক্ত উন্মাদনাকেও একটি বিশেষ অবস্থাই বলা হয়। কোনো মানুষের অতিরিক্ত জাতিবিদ্বেষও মারাত্মক পাগলামো হয়ে উঠতে পারে। রাসেলের শিক্ষা নিয়ে আলোচনার ভেতরে সবচেয়ে বড়ো যে দ্বন্দ্ব খুঁজে পাই, তার নেপথ্যে সৎ এবং অসৎ হওয়ার ধারণা যে কাজ করে যাচ্ছে, তা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। সক্রেতিস কিম্বা যিশুর সঙ্গে সমসাময়িক প্রতিষ্ঠানের সংঘাত একটা ব্যাধির মতো ছড়িয়ে পড়েছিলো। মিলনোৎসবও বলা যেতে পারে। অর্থাৎ একটি কাজের দ্বিমুখী প্রতিফলন, কিম্বা প্রভাবের কথা লিখতে চাইছি। কিন্তু এঁরা দুজনেই বেশ খানিকটা সংগঠকও ছিলেন। ফলে নিজেদের গোষ্ঠির ভেতরে তাঁরা সবসময় খুব নরম হয়ে থেকেছেন, এমন বোধহয় হয়নি। সক্রেতিস খানিকটা বন্ধুভাবাপন্ন হলেও, প্লেটো অনেকটাই কঠোর অবস্থান নিয়েছিলেন। সুতরাং, প্রাতিষ্ঠানিকতার ভিত যতো শক্ত, তার ভেতরের ঘুণপোকারাও ততোটাই প্রবল, অন্যভাবে এ কথাটা বলাই যায়। প্লেটোর স্বপ্নের গণতন্ত্রে কবিদের প্রবেশ চিরস্থায়ি হওয়া উচিৎ নয়, এমন একটা ধারণাও তাঁর হয়েছিলো। কিন্তু অ্যারিষ্টটল তা মনে করেননি। তিনি অস্তিত্বের দিক থেকেও কবিসত্তা এবং অন্য মানুষের সত্তা যে আলাদা, সেটি বুঝতে এবং বোঝাতে পেরেছিলেন। অর্থাৎ, একটা ভারসাম্যের বোধ, যা গণতন্ত্রের মূল কথা হওয়া উচিৎ, তার কথা বলেছিলেন। প্লেটো নিজেও কবিতা লিখতেন। তবে কবিতায় উচ্চ আদর্শ থাকাই রাষ্ট্রের জন্য মঙ্গলজনক, এই কথা জানিয়ে তিনি সক্রেতিসের বিপরীত মতই পোষণ করে বসলেন। কবিতার যে একটা শিল্পগত দিকও থাকে, ভাব এবং কাজের ভেতরে একটা ফারাক যে থাকে, তাকে বেশ খানিকটা অস্বীকার করেছিলেন প্লেটো। প্লেটো কবি এবং কবিতাকে নতুন কোনো সম্ভাবনা বলে মনে করেননি। কিন্তু প্লেটোর চিন্তাও কি খুব নতুন ছিলো? কারণ, এ বিষয়ে আগেই সক্রেতিস ভাবনা-চিন্তা করে গেছেন। মানুষের মনোস্তত্ত্বের ভেতরেই অনুকরণ করার অভ্যেস নিহিত থাকে। তাহলে কবিই কেন দোষের ভাগী হবেন? প্লেটোর মারাত্মক সম্পৃক্ততাই হয়তো এই ধরণের বিদ্বেষের একটা কারণ বলে মনে হতে পারে। এটা অবশ্য জাতিগত আলোচনা বলে মনে হতে পারে। উদার মানুষের কাছে গোটা পৃথিবীই আত্মিয়। একথা তো আমাদের দেশের শাস্ত্রেই লেখা আছে। শব্দ সত্য কিন্তু তার মহিমা সবসময় প্রকট হয়ে ওঠে না। এর সঙ্গে কাছের কিম্বা দূরের সম্পৃক্ততা কতোটা সরল কিম্বা জটিল, তার ওপরে নির্ভর করেও একজন মানুষের মনের গঠন রুপ পেয়ে বড়ো হচ্ছে। সক্রেতিস এবং সমকালীন প্রতিষ্ঠানের দ্বন্দ্বের সঙ্গে ঈজিপ্টের একটি ছোটো প্রচলিত গল্পের সামান্য মিল পাই। রাজা অ্যাপোফিস আর সেকনেনারের সংঘাতের সঙ্গে সক্রেতিসের মিল এবং তফাতও অনেকখানি। এখানেও ঈশ্বরবাদ প্রকট এবং বিরাট। অন্যদিকে সক্রেতিস দরিদ্র। এবং তাঁকে খুব পরিহাস করেও সমকালে দ্যাখা হয়নি। সমকালীন রাষ্ট্রযন্ত্রের ভেতরে কোনো ভালো দিক খুঁজতে চাইলে, এই বিষয়টিকেই একমাত্র বলে ধরতে হবে। সেখানেও ধারণাটি অসীম। মানে অস্তিত্বহীন। ইনফিনিটি। তার মানে মানুষের মনের নিরন্তর দ্বন্দ্বেরও দুটো দিক আছে বলেই ধরে নেওয়া যায়। ধন এবং দারিদ্র্য, যার ভেতরের কথা হলো পারগতা এবং অপারগতা। এইভাবে দেখলে আমাদের আবার সেই ধর্মের কাছেই ফিরে যেতে হয়। তখন সক্রেতিস আমাদের কাছে কতো মহান হয়ে ওঠেন। কারণ সক্রেতিস দ্বন্দ্বমূলক আকাঙখার ভেতর দিয়ে ইনফিনিটির তত্ত্বকে চিনিয়ে গেলেন। মুসোলিনি তাঁর ‘ডকট্রিণ অফ ফ্যাসিজিম’-এ লিখেছিলেন, Fascism wants man to be active and to engage inaction with all his energies; it wants him to be manfully aware of the difficulties besetting him and ready to face them. শ্রমের প্রাথমিক কথাই তিনি লিখেছিলেন। প্রায় সংবিধানের মতো করে একটা চিন্তার ভাব তৈরি করার চেষ্টা করেছিলেন মুসোলিনি। জন্মগতভাবে একজন কাঠমিস্ত্রিরির সন্তান ছিলেন। ফলে ছোটোবয়স থেকেই তিনি শ্রমকে খুব কাছ থেকেই বুঝতে পেরেছিলেন। কিন্তু ‘অ্যাবসলিউট’ হওয়ার জন্য যে ধর্মীয় বোধ থাকার দরকার ছিলো, মুসোলিনি তা রপ্ত করে উঠতে পারেননি। হিটলারের সঙ্গে সম্পর্কে যথেষ্ট টানাপোড়েনও ছিলো। ‘higher personality becomes a nation’ এই ধারণাটি আর গোপন রইলো না। ফলে মুসোলিনিকে চেনা পর্যবেক্ষকদের কাছে খুব সহজ হয়ে উঠলো। কিন্তু শুধুমাত্র মুসোলিনি অথবা হিটলার নন, বিশ্বের যে কোনো প্রতিষ্ঠানই যখন সর্বাধিনায়ক হয়ে উঠতে গেছে, বিপদ এসেছে। ব্যক্তির ক্ষেত্রে তা খুব সহজে চিহ্নিত করা গেছে। প্রতিষ্ঠান টিকে থাকার মেয়াদ বাড়িয়েছে। কিন্তু মনের জগতে যখন বিচার করতে বসার ইচ্ছে কিম্বা অবকাশ তৈরি হয়, তখন বুঝতে পারি যে, অধিকার করার প্রবণতা খুব সাধারণ একটা প্রক্রিয়া এবং অভ্যেস। অথচ সেই প্রবণতা থেকেই পৃথিবীতে আজীবৎকাল জুড়ে যুদ্ধ হয়ে চলেছে।


 


আধুনিক পৃথিবী শেষ হয়ে যাওয়ার পর, মানুষের মন অধিকার করে নিয়েছে এক বিশ্রী ধরণের শীতলতা। ব্যক্তিজীবনে একজন মানুষ নিজেই নিজের কাছে গুপ্তচর হয়ে ওঠেন। বার্তোলুসির ছবিতেও এই ভয়ঙ্কর শীতলতার গন্ধ পাই। একে একটু অন্য রকম ভাষায় নাগচক্র বলা যেতে পারে। বুদ্ধ নিজেও হীন ধর্মকে শেষ পর্যন্ত গুরুত্ব দিতে চাননি। একমাত্র ব্যক্তির দর্শন ছাড়া, সামগ্রিক হয়ে ওঠার ক্ষেত্রে তারও আপত্তি ছিলো। এটি সম্ভবত তিনি তাঁর বাবার কাছ থেকে শিখেছিলেন। অর্থাৎ এই দর্শনও পরম্পরার দাবী রাখে। রামকৃষ্ণ দেবও একই কথা স্বামীজিকে বলেছিলেন। রবীন্দ্রনাথের ‘পোস্টমাষ্টার’ গল্পের পোস্টমাষ্টার আর রতনমণির সম্পর্ক যে সামগ্রিক হয়ে উঠতে পারে না, এবং তার ভেতরে যে আবহমানকালের ব্যথা লুকিয়ে আছে, তা বুঝে ওঠার কাজটি শুরু হয়। অথচ জ্ঞানের ক্ষেত্রে এই চক্রই কতো সমৃদ্ধ হয়ে ওঠে। আমাদের কালে বাংলা ভাষার অন্তত: দু-জন জীবিত কবির আধুনিকতম লেখার ভেতরে এই মনস্ত্বত্বের গ্রাসটি খুঁজে পাই। একে সামগ্রিক লেখকসত্তা ভেবে ভুল করলে সাহিত্যের পাঠক হওয়া অসম্ভব। 


 


একজন একক মানুষের বেড়ে ওঠার ভেতর দিয়ে রাজকীয় পৃথিবীকে সে অনুভব করতে পারছে, এর ভেতরে ক্লান্তিও আছে। আবার টানও আছে। সাপের জৈবিক ক্রিয়া আছে। ফ্রয়েড ‘প্যারানোইয়া’ বলতে যা বুঝিয়েছেন, ভারত এবং এশিয়ার ধর্মগুরুরাও প্রায় একই কথা বলেছিলেন। চ্যাপলিনের 'The great dictator' ছবিতে দুই রাষ্ট্রনায়ককে বাতুল বলেই দ্যাখানো হয়েছিলো। মানে একটা বৈশিষ্ট্যের কথা বলা হয়েছিলো। কিন্তু ফ্রয়েডের তত্ত্বটি ব্যক্তিজীবনের ক্ষেত্রে অনেকটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিলো। একই কারণ, অস্বাভাবিকতা। এবং সেই অস্বাভাবিকতার সঙ্গে থাকতে থাকতে মৃত্যুজনিত কোনো ভয় অন্য মানুষকেও গ্রাস করতে পারে, মানে তার পাশের মানুষকে। সেটা বোঝা অনেক সহজ হয়ে ওঠে। যেহেতু ঘর অনেক বেশি 'ক্লোজ'। সংকীর্ণও বলা যায়। আবার ঘর সোপানও। আবার একই সঙ্গে একটু একটু করে তা সহ্যের আয়ত্তের ভেতরেও চলে আসে। জাতিগত ক্ষেত্রে সেটাই একটা বৈশিষ্ট্য হয়ে উঠতে পারে, এবং সেক্ষেত্রে সন্দেহের বাতাবরণ থাকা এবং তৈরি হওয়ার কারণও থেকে যেতে পারে। আন্দামানের তিরন্দাজ- আদিবাসীরা ইতিহাসের বিচারে কি সত্যি সত্যিই তিরন্দাজ? কিন্তু স্থানিক বিচারে সম্পূর্ণ অপরিচিত মানুষের কাছে এই সেন্টিনেলিজরাই তাঁদের খর্বকায় চেহারা নিয়েও অতিকায় হয়ে ওঠেন। একটা বিরাট সংঘাতের মুখে পড়ে জাতি কিম্বা সভ্যতা আক্রান্ত হয়ে পড়েছে, এমন ঘটনা ইতিহাসে খুব বিরল নয়। কিন্তু ব্যক্তিজীবনই বলি, আর সামগ্রিক জীবনই বলি, অপ্রকৃতিস্থতার একমাত্র কারণ অবদমন। তার সঙ্গে স্মৃতিজনিত সংঘাত একটা বড়ো উপাদান হয়ে উঠতে পারে। রোগ কিম্বা দুর্ঘটনা এক ধরণের অবদমনের প্রক্রিয়াই। দুর্ভিক্ষ, কিম্বা মহামারীজনিত কারণে খাদ্য এবং স্বাস্থ্যের অভাব এক ধরণের অবদমন। মনের ভেতর ঘটে বলে অবদমন শব্দটি মনের ক্ষেত্রে বেশি গুরুত্ব পায়। অন্যদিকে অবদমনের পারস্পরিক এবং বিপরীতমুখী কার্যকলাপও লক্ষ্যণীয় হয়ে ওঠে। আবার ব্যক্তিজীবনে এর বিপরীত ঘটনাও লক্ষ্য করা গেছে। নাহলে, মানুষ কি করে মহৎ শিক্ষা পেলেন? পরিবেশ থেকে কিছুটা শিখলেন, কিছুটা শিক্ষা এবং বাকিটা নিজের মানসিকতা তাঁকে বেড়ে উঠতে সাহায্য করে। তাতে তিনি যে খুব সফল হলেন, এমন নয়। কিন্তু সফল শব্দটিও তো আপেক্ষিক।  



 


গল্পচ্ছলে লিখছি। সত্য ঘটনা। এক ভদ্রমহিলা রোগজনিত কারণে মস্তিষ্কের রোগে আচ্ছন্ন ছিলেন। তাঁর বাহ্যিক ক্রিয়াকলাপের ভেতরেও মন এবং শরীরের পাল্টে যাওয়া ক্রিয়াগুলোর ছাপ খুব স্পষ্ট ছিলো। বেশ কিছু সময় তিনি সুস্থ মানুষের মতো স্বাভাবিক থাকেন। কিছু সময় তিনি মারাত্মকভাবে পাল্টে যান। একদিক থেকে দেখলে, এটা খুব স্বাভাবিক একটা প্রক্রিয়া। কিন্তু তাঁর ক্ষেত্রে সেটা খুব মারাত্মক আকার নিতো। মানে স্বাভাবিকতার অনেক ওপরে সেই সূচকের মান ছিলো। তাঁকে যিনি দেখভাল করতেন, তিনি দু-একবার কঠিনভাবে আহত হয়েছিলেন। তাঁর শারীরিক জোরও তুলনামূলকভাবে কম ছিলো। অথচ মধ্যবিত্ত সংসারে খুব কাছের মানুষকে দেখভাল করার জন্য সমসময় ভাড়া করা কিম্বা মাইনে দিয়ে রাখা লোকজন নিয়োগ করা খুব শক্ত হয়ে ওঠে। মেয়েটির বিয়ে হয়ে যায়। তিনি মনের দিক থেকেও অত্যন্ত নম্র ছিলেন। রোগী স্বয়ং তাঁর মা। মেনিঞ্জাইটিস বা ওই ধরণের কোনো রোগ থেকে বিকারের জন্ম হয়েছিলো। তার ওপরে স্বাস্থ্য বেশ উন্নত মানের ছিলো। সংসারে অনেক সন্তানের মা হওয়া সত্ত্বেও তিনি শারীরিকভাবে বেশ শক্ত মানুষ ছিলেন। মেয়েটি একদিন সাঙ্ঘাতিকভাবে আহত হয়েছিলেন। মাথা ফেটে রক্তারক্তি অবস্থা। তাছাড়া মনের দিক থেকেও তিনি বেশ নম্র, সেকথা আগেই লিখেছি। উত্তর কোলকাতায় বসবাস করতেন। ইঞ্জেকশন দেখলে অজ্ঞান হয়ে যেতেন, এতোটাই তাঁর স্নায়বিক দুর্বলতা ছিলো। তাঁর ওপরে এই রোগীণীটিকে দ্যাখার ভার দেওয়া হয়েছিলো। যদিও তিনি একজন সুস্থ এবং সংবেদনশীল মানুষ ছিলেন বলেই হয়তো তাঁকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিলো। কিন্তু একদিন এই ধরণের একটা রক্তারক্তি কাণ্ড ঘটে গেলো। তারপর মেয়েটির বিয়ে হয়ে গেছে। রোগীণী ভদ্রমহিলারও বয়স একটু একটু করে বাড়ছে। কিন্তু ওই ধরণের ঘটনার কথা আর শোনা যায়নি। নতুন যাঁরা দেখভাল করতেন, তাঁরা মাঝে মাঝেই প্রখর হয়ে উঠতেন। আর তিনিও কখনো হেসে, কখনো মৃদু দুঃখ পেয়ে বসে থাকতেন। কাগজ পড়তেন। আতিথেয়তারও চেষ্টা করতেন। মাঝে মাঝে একা একা বসে বসে কথা বলতেন, যাকে আমরা ভুল বকা বলি। নিজের ব্যক্তিজীবনের অভিজ্ঞতা। রোগিণী আমার দিদা। আর আমার মা ছিলেন সেই মেয়েটি। মায়ের মুখে যেভাবে কাহিনী শুনেছি, তাতে মনে হয়নি, কাহিনীটি খুব ভয়ংকর গোছের কিছু ছিলো। যদিও আমার মা খুব যন্ত্রণা পেয়েছিলেন। আমার ঠিক এই কারণেই দিদার ওপর বাড়তি সহানুভূতি ছিলো, এটা খুব সাধারণ একটা কথা। সবারই হবে। কিন্তু নিত্যকালীন যাঁরা, তারা তো দু-একদিনের মেহমান নন। ফলে মৃদু কথা কাটাকাটি চলতো। মানুষটি অন্ততঃ একজনকে মেনে চলতেন। নাহলে খুব সংঘাতের একটি সময়ের ভেতরে কোলকাতার বাড়িতে(মামার বাড়ি) তাঁর থেকে যাওয়ায় আরো বাড়তি সমস্যা ছিলো। অবশ্য মেনে চলার মতো মানুষটি সংঘাতের অনেক পরে বেড়ে উঠেছিলেন। কিন্তু অমন আচমকা আঘাত পাওয়ার পর অনেক সময়তেই, বহিরঙ্গে, মানুষটির ভেতরে একটা পরিবর্তন আসে, কিম্বা আসতে পারে। মা শারীরিকভাবে আরো অনেকবার পীড়াচ্ছন্ন হয়েছেন। আমাদের যৌথ পরিবারের নিত্য সমস্যার ভেতর দিয়ে তাঁর জীবন অতিবাহিত হয়েছে। কিন্তু এতো শুদ্ধ প্রাণ তিনি কি করে ধরে রাখতেন, ভাবলে অবাক হতে হয়। প্ল্যাটফর্মের ওপর কয়েকজন ছিন্তাইকারিণী তাঁকে ঘিরে তাঁর হাত থেকে গয়না কেড়ে নিতে চাইছে, আর তাঁর কোলে তখন একটা ছোটো বাচ্চা...সেই দৃশ্যের বর্ণনা করতে গিয়েও তাঁর ভেতরে কোনো প্রতিশোধের চিহ্ন দেখিনি। মনোস্তত্ত্বের কঠিন কঠিন পাঠ তাঁর আয়ত্তে ছিলো না। কিন্তু এতো ধৈর্য তিনি পেলেন কোত্থেকে? ওই সামান্য একটু ভেঙে পড়া, তারপর আবার রোজকার জীবনকে আঁকড়ে ধরে একজন মানুষ সত্যি সত্যিই নারী হয়ে উঠলেন। মানুষ হয়ে ওঠা কথাটা কিভাবে দেখবো, এটা আবার ভাবাতে শুরু করে। মানুষের মোটিভ কি হওয়া উচিৎ, এটাও আবার নতুন করে ভাবতে ইচ্ছে করে। স্বার্থপর মানুষের কাছে অন্য সমস্ত মানুষ দোষী হয়ে ওঠেন। কিম্বা এভাবেই তাঁরা বাঁচতে শেখেন। এই শিক্ষা কিম্বা বোধ মানুষ খুব ছোটো গণ্ডি থেকে উপলব্ধি করতে পারে। নিজের বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই বোধের একটা চূড়ান্ত রুপ সে চর্মচোখে দেখে যাওয়ার সৌভাগ্য কিম্বা দুর্ভাগ্য অর্জন করে। শেষ পর্যন্ত মানুষের সাফল্যই তাঁর বেঁচে থাকার উপায়। কিন্তু সাহিত্য অথবা মনোস্তত্ত্ব এর খানিকটা বিপরীতমুখী হয়ে মূল স্রোতে ঢুকে পড়ার চেষ্টা করে। মনে রাখতে হবে সাহিত্য কিম্বা মনস্তত্ত্ব। সাহিত্যিক কিম্বা মনোস্তাত্ত্বিকেরও একটা নির্দিষ্ট গণ্ডী থাকে। সাহিত্য কিম্বা মনোস্তত্ত্ব জীবনের কথাই বলতে চায়, কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাও সম্পূর্ণ জীবন হয়ে ওঠে না। ‘নিত্য নব দিবসের মৃত্যুঘণ্টা’ বাজার মধ্য দিয়ে জীবন এবং বেঁচে থাকার বিভিন্ন উপায়ের উপাদানগুলোরও আকার এবং ভাবনা চিন্তায় বিবর্তন দ্যাখা দেয়। ‘The interpretation of dreams’ অধ্যায়ে ফ্রয়েড একজন মানুষের আশেপাশে থাকা বিভিন্ন সম্পর্ক এবং সমকালীনতার মৃত্যুর ভেতর দিয়ে যেতে যেতে নিজের বেঁচে থাকার ইচ্ছে যে প্রতিফলিত হচ্ছে, একটি ট্রেন যা একইসঙ্গে সৃষ্টি এবং ধংসের কারণ, তার সঙ্গে একটা সংযোগ তৈরি হয়ে ওঠার কথা আমাদের জানায়। হাইনরিখের কবিতাতেও ট্রেনের কথা বলা আছে। হাইনরিখ জার্মানির কবি ছিলেন। হিটলারের জীবনেও ট্রেন একটা গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। সত্যজিৎ রায়ের পথের পাঁচালীর ট্রেন আপাতভাবে তো একটা সৃষ্টিরই প্রকাশ। কিন্তু দুর্গার মৃত্যু এবং ঘটনাচক্রে অপুর জীবন স্থান, কাল এবং পাত্র ভেদে পাল্টে যাওয়ার মুহূর্ত এবং বিভূতিভূষণের লেখায় নিশ্চিন্দিপুরের কুঠির প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে আসা ইতিহাসই যেন নাগচক্রের মতো মানুষের মন এবং মনোস্তত্ত্বকে ঘিরে ধরে। এই তার নিত্যকালের ছোটো এবং বড়ো গণ্ডির সীমার পটচিত্র এবং প্রেক্ষাপট হয়ে ওঠে।


 


 


 


প্রেম আর প্রেমের বাধাও এক ধরণের আনন্দ কিম্বা অবদমন। আবার চিরন্তন শান্তি বলেও তো একটা ধারণার কথা মানুষই তাঁর জীবদ্দশার ভেতরে অক্ষয় করে রাখতে চেয়েছে। সেখানে চলিষ্ঞু কিম্বা অবিচল থাকা কতোটা এক কিম্বা আলাদা, তার ভারসাম্যের একক কিম্বা সূচকের আকারে কতোটা তারতম্য ঘটবে তার ওপরে নির্ভর করে যা গড়ে ওঠে, তাকে খুব প্রবীণ এবং বিজ্ঞের মতো করে বলতে ইচ্ছে করে ব্যক্তিকাল। কিন্তু ততোটা প্রবীণ এবং বিজ্ঞ নই। অসীমের ধারণার সঙ্গে সঙ্গে প্রতিনিয়ত মানুষ যে পরিসমাপ্তির কথা ভাবে, এবং ভেবে আপাত নিষ্কৃতি পায়, নিজের কাজের জগতে সেটা বোঝার সুযোগ হয়েছিলো। প্রেমের ক্ষেত্রে মানুষ বিপরীতমুখী ফলই আশা করে। মানে, প্রেম সম্পর্কে একটা সাংঘাতিক দ্বিচারিতায় আমরা প্রায় সবাই আচ্ছন্ন। প্রেমের শুধু উপযোগীতাই থাকবে, এটা ধরে নিয়েই আমরা একটা কাল্পনিক পৃথিবীর নির্মাণ করে যাই। কিন্তু লক্ষ্য করলে দেখবো, সেখানেও লেনদেনটিই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বড়ো হয়ে দাঁড়িয়েছে। এবং এই প্রক্রিয়াটি সর্বজনীন বললে ভুল বলা হয় না। অর্থাৎ, প্রায় সবার ক্ষেত্রেই সত্যি। সাধারণভাবে মনোস্তত্ত্ব শব্দটা নিয়ে ভাবলে তার ভেতরে একটা প্রকট যৌনতার কথা ভাবা আমাদের একটা অভ্যাস। সেটা অনেক ক্ষেত্রে সত্যিও। কিন্তু সেটাই অনেকটা ব্যক্তির সামাজিক, রাজনৈতিক এবং জাতিগত অবস্থানের ক্ষেত্রেও একটা সাহায্যকারি বিষয় হয়ে ওঠে, সেদিকে খেয়াল না রাখলে যৌনতার আসল মানে অনেক নিঃস্পৃহ হয়ে পড়ে। প্রেম জীবনের জরাজীর্ণতার ওপর একটা প্রলেপ বলেও অনেক কাজের মানুষেরা মনে করতে পারেন। আমার ধারণা, এটি একটি প্রক্রিয়া। কারণ, প্রেম না থাকলে কোনো কাজই ভালোভাবে করা যায় না। অনীহাও তো দুঃখের অন্যতম কারণ! প্রেম আর রাজনীতি খুব সম্পৃক্ত হওয়া উচিৎ কি উচিৎ নয়, সেটা আর একটা আলোচনার বিষয় হয়ে উঠতে পারে। প্রেমকে যেদিক দিয়েই ভাবি, তার একটা সামাজিক ভূমি থাকে। কল্পলোকের সুবিধার মাহাত্ম্য বোধহয় এখানেই। সেখানে জৈবিক প্রেমও জাগতিকতার বাইরের একটা অবস্থান বলে মনে হতে পারে। যেমন মীরার প্রেম। এই নিয়ে মতভেদও রয়েছে। কিন্তু ভগবানের প্রতি ভক্তের প্রেমে, একাকীত্বকে কি অবকাশ বলেও ধরে নেওয়া যায়? স্থিরভাবে বলা খুব মুশকিল। তবে প্রেম এবং বিচিত্র প্রেম যে, মানুষের স্বাধীনতার বোধের একটা সূচক, সে ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। ‘সুখের সন্ধানে’ বইটিতে রাসেল সাহেব জানিয়েছিলেন, ভালোবাসা যা দেওয়া হয়, তা থেকে নয়, যা পাওয়া যায় তা থেকেই নিরাপত্তার বোধ জন্ম নেয়। তাহলে বাকি কি থাকে? না, অপরাধবোধ। খুব সুস্থ প্রেমেও এই বোধের কাজ এবং পদ্ধতি অন্যরকম চেহারা নিতে পারে। মানুষের ভালোবাসা না পাওয়াই যে আত্মকেন্দ্রিকতার একটা অন্যতম কারণ, রাসেল সাহেব এই কথাটি মেনে নিলেও, তার কোনো সর্বজনীন সত্তা আজ পর্যন্ত তৈরি হয়ে ওঠেনি। ফলে, মানুষ ভাববাদী হন। কারণ, তাই-ই তাঁকে কিম্বা তাঁদের সাময়িক শান্তি কিম্বা স্বস্তির ক্ষেত্রে সহায়ক। ঠিক সেই কারণেই আজকের পৃথিবীতে বিভিন্ন ধর্ম এবং ধর্মের দ্বিচারিতার সিদ্ধান্ত সম্পর্কে সবারই একটা ধারণা থাকলেও, ঈশ্বর নামক একজন অলৌকিক ব্যক্তি ঠিক এই কারণেই মানুষের বন্ধু হয়ে ওঠেন। এক কথায় একজন ভালো মনোস্তত্ত্ববিদ কিম্বা মনের চিকিৎসক তাঁর রোগীকে সেই কাজটির ভেতরেই রাখার চেষ্টা করবেন, কিম্বা পরামর্শ দেবেন, যা তাঁকে মানসিকভাবে তৃপ্তি দেবে। এবং একই সঙ্গে অন্যের ক্ষেত্রেও তা পীড়াদায়ক হয়ে উঠবে না। সেটা ঈশ্বরের ভাবনা ছাড়াও অন্য কিছুও হতে পারে। মোট কথা, রোগী হলে, তাঁর সামাজিক কর্তব্য অনেকটাই কমে যায়।     


 


 


মনই তো সব কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রক। স্নায়ুর একটি কাব্যিক উপমা কিম্বা অংশ হিসেবেই মনকে বিশ্লেষণ করা যেতে পারে। সুকুমার রায়ের ‘গোঁফচুরি’ ছড়াটিকে একটু অন্য রকম করে শেষে এও বলা যেতে পারে, মনের আমি, মনের তুমি, মন দিয়ে যায় চেনা।  






 


 


 


টি টোকেন: চা বাগানের বিকল্প মুদ্রা ব্যবস্থা - অসিত কুমার পাল || প্রবন্ধ || নিবন্ধ || Article writing

 টি টোকেন: চা বাগানের বিকল্প মুদ্রা ব্যবস্থা 

          অসিত কুমার পাল



পলাশীর যুদ্ধের পরে একটু একটু করে গোটা ভারতের শাসন ক্ষমতা প্রথমে ব্রিটিশদের হাতে চলে গিয়েছিল । তারা স্থানীয় ভাবে প্রচলিত অর্থনৈতিক কাঠামো ভেঙে দিয়ে নিজস্ব কেন্দ্রীয় অর্থনৈতিক ব্যবস্থা চালু করেছিল , সেই সঙ্গে সারা ভারতে অর্থনৈতিক লেনদেনের মাধ্যম হিসাবে নিজস্ব মুদ্রা ব্যবস্থা ( বিভিন্ন মূল্যমানের কাগুজে নোট ও ধাতব মুদ্রা ) চালু করেছিল ।


 বহুদিন আগেই চিনে দেশের অধিবাসীরা লক্ষ্য করেছিল চা নামক এক প্রকার গুল্ম জাতীয় গাছের পাতার নির্যাস থেকে তৈরি এক প্রকার সুস্বাদু পানীয় দেহের ক্লান্তি দুর করে । অষ্টাদশ শতাব্দীর আগে পর্যন্ত চীন দেশের বাইরে পানীয় হিসাবে চায়ের ব্যবহার ততটা প্রচলিত ছিল না । ব্রিটিশরাই চীনের বাইরে চায়ের ব্যবহার ছড়িয়ে দিয়েছিল । তারা লক্ষ্য করেছিল ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চল চা চাষের উপযোগী । তাদেরই চেষ্টায় বর্তমান পশ্চিম বঙ্গের দার্জিলিং জলপাইগুড়ি জেলা , বর্তমান আসামের কিছু অঞ্চল ও বর্তমান বাংলাদেশের সিলেট অঞ্চলে অসংখ্য চা বাগান ও চা প্রক্রিয়া করন কেন্দ্র স্থাপিত হয়েছিল ।


 সেই সব চা বাগানের বিভিন্ন ধরনের কাজ করার জন্য বর্তমান ঝাড়খণ্ড ছত্তিশগড় ওড়িশা প্রভৃতি অঞ্চল থেকে আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষদের নিয়ে যাওয়া হয়েছিল । প্রধানত এজেন্ট বা দালালদের মাধ্যমে আদিবাসী সম্প্রদায়ের দরিদ্র পরিবারগুলোকে নানা সুযোগ সুবিধার লোভ দেখিয়ে চা বাগানগুলোতে নিয়ে যাওয়া হত । কিন্তু নারী পুরুষ শিশু নির্বিশেষে হাড় ভাঙ্গা পরিশ্রম করলেও চা শ্রমিকরা ন্যায্য পারিশ্রমিক থেকে বঞ্চিত হত । তাদের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে ছোট ঘরে গাদাগাদি করে থাকতে বাধ্য করা হত , খাদ্যের চাহিদা মেটাতে নিম্ন মানের খাদ্য শস্য বিতরন করা হত , চিকিৎসার তেমন কোন ব্যবস্থা ছিল না ।


 সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন ব্যাপার ছিল পারিশ্রমিক বাবদ কখনো শ্রমিকদের হাতে নগদ টাকা দেওয়া হত না । পরিবর্তে তাদের হাতে টি টোকেন ( Tea Token) নামে কিছু ধাতব চাকতি ধরিয়ে দেওয়া হত যার বিনিমনে নির্দিষ্ট পরিমাণ নগদ অর্থ পাওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল । চা বাগান কর্তৃপক্ষের তরফে দাবী করা হত উপযুক্ত যোগাযোগ ব্যবস্থার অভাবে তাদের হাতে পর্যাপ্ত নগদ অর্থ থাকে না বলেই তার বিকল্প হিসাবে ওইসব টোকেন দেওয়া হয়েছে । প্রয়োজনে টোকেন এর বিনিময়ে নির্দিষ্ট পরিমাণ নগদ অর্থ পাওয়া যাবে । কার্যক্ষেত্রে ওই সব টোকেন নির্দিষ্ট চা বাগানের বাইরে কার্যকর ছিল না , ফলে কোন শ্রমিক নিজের প্রয়োজনে টোকেন ব্যবহার করতে পারত না , এমনকি সেটার সাহায্যে বাড়ী ফিরে যাওয়ার জন্য ট্রেনের টিকিট কেনাও যেত না । অনেকে বলে থাকেন কোন শ্রমিক যাতে কাজ ছেড়ে নিজের বাড়িতে ফিরে যেতে না পারে সেজন্যই ইচ্ছাকৃত ভাবে নগদ অর্থের পরিবর্তে ওইসব টোকেন দেওয়া হত ।