প্রাবন্ধিক চাঁদ রায় -এর একটি প্রবন্ধ
লোকসংস্কৃতি ও সৌন্দর্যবিদ্যা
সৌন্দর্যবিদ্যা বা সৌন্দর্য বিজ্ঞানের ইংরেজি হচ্ছে ASTHETICS. Asthetics is the science dealing with the laws and principles of beauty in art and nature.
সৌন্দর্য বিজ্ঞানের অপর নাম নন্দনতত্ত্ব এবং কান্তি বিদ্যালয়। এটি Philosophy (দর্শন) -এর একটি শাখা যেখানে সৌন্দর্য, শিল্প, শিল্পের স্বাদ, সৌন্দর্য--সৃষ্টি ও তার উপভোগ আলোচনা করা হয়। এটি মানুষের সংবেদনশীলতা, আবেগের মূল্য এবং অনুভূতির কথাও ব্যক্ত করে। আরও ব্যাপক অর্থে এর বিশেষজ্ঞরা সংজ্ঞা নির্ধারণ করেছেন-- নন্দনতত্ত্ব শিল্প, সংস্কৃতি ও প্রকৃতি নিয়ে আলোচনা করে। এ প্রসঙ্গে একটা কথা মনে পড়ে যায় --- Nature is pleased with simplicity and nature has no dummy.প্রকৃতির মধ্যে পাওয়া যায় অকৃত্রিম সরলতার প্রকাশ। সেই পরিবেশ মনোমুগ্ধকর এবং অদ্বিতীয় আনন্দের উৎস।
রাঢ়বঙ্গের আদিম সৌন্দর্যবোধের রীতিনীতির মধ্য দিয়েই বস্তুবাদী নন্দনতত্ত্বের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে গেছে লোকসংস্কৃতির মূলধারা যা লোকজ মানুষের সঙ্গে সঙ্গে সহ প্রকটিত ও প্রকাশিত। আসলে সৌন্দর্যবোধ তথা অনুভূতিকে প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের সম্পর্কের ক্ষেত্রে আদিম ও অকৃত্রিমবোধ বলে মনে করা হয়। এটি মানুষের আবেগময় প্রতিক্রিয়া। প্রতিদিনের কাজের সঙ্গে প্রকৃতির ঘটনা গুলি ও তার শক্তির প্রকাশ কে আপন জীবনে মানুষ রপ্ত করতে শিখেছে।
রবীন্দ্রনাথ নন্দনতত্ত্ব শব্দটি ব্যবহার করেছেন সর্বপ্রথম। Aesthetics এর বাংলা প্রতিশব্দ নন্দনতত্ত্ব বহুল প্রচলিত। Asthetics শব্দ টির উৎস গ্রিক যার অর্থ, আমি অনুভব করি।
আধুনিক কালে সৌন্দর্য তত্ত্বকে জটিল, অপ্রাকৃত ও অবাস্তব বৈশিষ্ট্য যুক্ত মনে করা হলেও আদিকালে ছিল সহজ ও সরল। সৌন্দর্য তত্ত্বের উদ্ভব হয়েছিল প্রায় আড়াই হাজার বছর পূর্বে ব্যাবিলন মিশর চীন ও ভারতবর্ষে। পরে এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে একটি শব্দ Humanism বা মানবতাবাদ। সেই ঐতিহ্যের ধারা ধরে সাহিত্য সংস্কৃতি ও শিল্পে এর প্রভাব পড়েছে। আর এর উৎস অবশ্যই সাধারণ মানুষ ও তার কর্মজীবনের ব্যস্ততা।
সৌন্দর্য অনুভবের দুটি ধারা---একটি হল ভাববাদী এবং অপর টি হল বস্তুবাদী। প্রথমটির মাধ্যমে সমাজের উচ্চ শ্রেণির মানুষের পক্ষে একমাত্র সুন্দর কে উপলব্ধি করা সম্ভব। সাধারণ মানুষ কে অজ্ঞানতার অন্ধকারে রেখে তাদেরকে দমন করার প্রবণতা সর্বকালেই দেখা যায় উচ্চ শ্রেণির মানুষের মধ্যে। তাই সাধারণ মানুষ তথা লোকসমাজের ক্ষেত্রে বস্তুবাদী ধারায় মানুষের বাস্তব পরিবেশ ও জীবনের মধ্যে সৌন্দর্যানুভূতির সৃষ্টি ও বিকাশ ঘটেছে।প্রকৃতপক্ষে এটা শোষক ও শোষিতের মধ্যে বিরোধের প্রতিফলন মাত্র।
তাই আদিম অকৃত্রিম সরল সৌন্দর্য তত্ত্বের মূল বৈশিষ্ট্য লক্ষ করা যায় লোকজ তথা লৌকিক সংস্কৃতির মধ্যে। রাঢ়বঙ্গের লৌকিক সংস্কৃতির মধ্যেও সেই সৌন্দর্য তত্ত্বের অনুরণন সমভাবে দেখা যায়।
Comments