লেখক দীপক কুমার মাইতি -এর একটি গল্প

 উঠোন




একান্নবর্তী পরিবার ছিল আমাদর। বাড়ির মাঝখানে ছিল একটি বিশাল উঠোন। দিনের বেলায় কচিকাঁচাদের খিলখিল হাসিতে উঠোন ভরে যেত। দুপুরে শুকোত বিউলির ডালের বড়ি ও নানা ধরনের আচার। পাশে শুকোত নুন লংকা মাখা আম বা তেঁতুল বা কতবেল। প্রথম বিকেলে দিদিরা, বৌদিরা পরচর্চার আড্ডার মাঝে রসিয়ে খেতেন ওগুলো। ছোটরাও ভাগ পেত। পড়ন্ত বিকেলের রোদে মা,কাকিমা ও দিদারা কুলোয় চাল বাছতে বাছতে শুকিয়ে নিতেন নিজেদের ভিজে চুল। সন্ধ্যের সময় বসত বাবা-কাকদের মজলিশ। সামাজিক সমস্যা, খেলাধুলো থেকে রাজনীতি নিয়ে তুমুল তর্ক চলত তাদের মাধ্যে। বাল্য বিধবা পিসিদিদা ধমক দিয়ে বলতেন, “তোদের তর্ক কী থামবে না? রাত হল খেতে হবে না?”


        মা বলতেন, “রাজা উজির মরুক। নির্বাচনে কে জিতবে ঠিক হোক। তারপর তো খাওয়া।”


        দুজনে সব তর্কে জল ঢেলে দিতেন। তারপর উঠোনে গোল হয়ে বসে সকলে রাতের খাওয়ার সারতে। মা, কাকিমারা খাওয়ার পরিবেশন করতেন। খাওয়ারের স্বাদ নিয়ে বড়রা মা কাকিমাদের পিছনে লাগতেন। বড্ড ভালো লাগতো।


সময়টা নদীর জলের মতন বয়ে চলেছে। আজ উঠোনটা অনেক খণ্ডে বিভক্ত। অনেকগুলো অদৃশ্য দেওয়াল গডে় উঠেছে উঠোনে। উঠোনের সকাল সন্ধ্যেগুলো কেমন চুপচাপ। মজলিস আর বসে না। টিভিতে কারা যেন রোজ সন্ধ্যেতে জুডে় দেয় তুমুল তর্ক। সেই শব্দ মাঝে মাঝে অন্য ঘর থেকে ভেসে আসে। কিন্তু তেমন আর ভালো লাগে কই?


        মনটা কেবলই খুঁজে বেড়ায় পুরানো অখণ্ড উঠোনটাকে। ওখানে যে অনেক সুখ স্মৃতি বন্দী হয়ে আছে। বেজে ওঠে মুঠোফোন। ওপারে একজন বলে, “স্যার, কাল সকালে আসছেন তো? এবার স্বাধীনতা দিবসের পতাকা আপনাকেই তুলতে হবে।”


        মনটা ভারি হয়। আবার একটা স্বাধীনতা দিবস। একটা অখণ্ড উঠোন হারানোর দিন।

Comments

Popular posts from this blog

শারদীয়া সংখ্যা ১৪৩০ || সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র || World Sahitya Adda Sarod sonkha 1430

TATA Steel Job Recruitment 2024 || টাটা স্টিল কোম্পানিতে নতুন করে 6000 শূন্যপদে কর্মী নিয়োগ || TATA company job

মাধ্যমিক পাশেই ভালো মাইনের চাকরি,জলের ট্যাঙ্কি দেখাশোনার স্থায়ী কাজ || Jal Jeevan Mission Registration 2024