লেখক দীপক কুমার মাইতি -এর একটি গল্প
সুবাস
ত্বষ্টার তিন বছরের বিবাহিত জীবন। এত দিন নিতরঙ্গ ছিল। আজ দুদিন এক সুগন্ধের ঝাপটায় ত্বষ্টা আলোড়িত। তার বউ মউর চিরকাল একই ডিও ব্যবহার করে। একবার নতুন ডিও এনে দিয়েছিল। মউর বলেছিল, “আমার অন্য ডিও ভালো লাগে না গো। আমার পুরোনোটাই ভালো। তুমি রাগ করো না।”
রাতে চোখ বন্ধ করেই ঘরে মউর উপস্থিতি টের পায়। দুদিন আগে রাতে মউরকে জড়িয়ে ধরতেই ত্বষ্টা এক অচেনা সুগন্ধ পায়। হেসে ত্বষ্টা বলে, “তাহলে ডিও পরিবর্তিত হল?”
অবাক মউর বলে, “না তো! নতুন কোথায় পাব? এবারও তো তুমি আমার পছন্দেরটাই এনে দিয়েছিলে। তাই ব্যবহার করেছি।”
ত্বষ্টা অবাক হয়। মউর মিথ্যে বলে না। অথচ সে অন্য ডিওর সুগন্ধ পাচ্ছে। প্রথমে ভেবেছিল ধূপের গন্ধ। তার মনে পড়ে, মউর বেডরুমে ধূপ জ্বালায় না। তবে কি নতুন রুমফ্রেসনার! রুমফ্রেসনার শেষ হয়ে গেছে, আজই আনতে বলেছিল। তবে কিসের সুবাস সে পাচ্ছে? পাশ ফিরে মউরকে আবার জড়িয়ে ধরতেই সেই নতুন সুবাসের ঝাপটা নাকে লাগে। তবে কি মউর গোপন করছে কিছু? দুদিন মউরকে বিশ্বাস অবিশ্বাসের দোলায় দুলছে সে। আজ রাতে মউর ঘরে ঢুকতেই পুরোনো সুগন্ধ পায়। বিছানায় এসে মউর ওকে জড়িয়ে ধরে। নাকে লাগে সেই নতুন সুগন্ধ। অবাক চোখে ত্বষ্টা মউর দিকে তাকায়। মউর তখন তার কানে মুখ রেখে বলে, “তুমি বাবা হতে চলেছ। আমার কিন্তু ভালো উপহার চাই।”
ত্বষ্টার মনে পড়ে। বাবার সাথে এক আশ্বিনের ভোরে ধানের মাঠে গিয়েছিল। মাঠে এক মাতাল করা সুবাস তার নাকে লাগে। মোহিত হয়ে চারিদিকে তাকাতে থাকে। কিসের সুবাস বাবার কাছে জানতে চায়। বাবা বলেছিলেন, “বাবু, ধান গাছ এখন পোয়াতি। এ হচ্ছে পোয়াতির সুবাস। তুই তখন তোর মায়ের পেটে। তোর মায়ের শরীর থেকে আমিও পেতাম। বউমা যেদিন পোয়াতি হবে তুইও পাবি। এ মাতাল করা সুবাস সব সুবাসের সেরা সুবাস।”
আনন্দে আত্মহারা ত্বষ্টা মউরকে জড়িয়ে ধরে। মউর শরীরে মুখ ডুবিয়ে ঐশ্বরিক সুবাসে ত্বষ্টা মাতাল হতে থাকে।
Comments