Sunday, January 23, 2022

রম্যরচনা || শিরে সংক্রান্তি || অরবিন্দ সরকার

 শিরে সংক্রান্তি

                    

             


তখনকার দিনে স্বামী শ্বশুর ভাসুর বা গুরুজনদের নাম করা যেত না।যদি মুখ ফস্কে বেড়িয়ে যেত তাহলে গোবর দিয়ে মুখ শুদ্ধিকরণ করতে হত। তারপরেও অকথ্য আচরণ করা হত বৌ দের প্রতি। সে সময় রসগোল্লাকে অসগোল্লা,আখকে রাখ,রেনুকাকে এনুকা, প্রতিমাকে পিতন ইত্যাদি বলতো।

এমন দিনের একটি ঘটনা হল- পাতনা গ্রামের শঙ্কর দাসের বাড়িতে।শঙ্কর দাসের ছেলের নাম- পিতাম্বর ও পুলিন। দুই ছেলের দুই বৌমা।


আজ পৌষ মাসের সংক্রান্তি। মকর সংক্রান্তিও বলে। বাঙালির ঘরে ঘরে পিঠে পুলি শুরু। একেবারে সরস্বতী পূজা অবধি এই ধূমধাম।

শঙ্করের দুই বৌমা রাধারানী,ও কেতকী দুজনেই আলোচনা করছে আজ তো শিরে চালগুলো হবে। 

শাশুড়ি হৈমবালা বললো তোমরা কি বলছো গো - আজ যে সব পালন।

বৌমারা - কি পালতে হবে আমাদের। খাওয়া দাওয়া বন্ধ কি আজ?

শাশুড়ি- না না ,তোমরা এসো আমার সঙ্গে।আজ যে মাসের শেষ--

রাধারানী- জানি তো সংক্রান্তি। আজ পিঠে পুলি হবে।

শাশুড়ি - হেইমা রে হেইমা!রামো রামো ,ছিক্কো!- আস্পর্ধা দেখো! তোমার মুখে পোকা হবে। শ্বশুরের নাম করলে তুমি। আমি কোনদিন বিয়ের পর ওকথা মুখেও আনিনি।আর তুমি---

রাধারানী- মা ! সংক্রান্তি আর শ্বশুরের নাম একেবারেই আলাদা।

শাশুড়ি- ছোট মুখে বড় কথা। তুমি আগে এসেছো এ বাড়িতে না আমি এসেছি? মুখের ওপর কথা। এক্ষুনি একটু গোবর মুখে দাও ও গঙ্গাজল মুখে নাও। সহবত শেখো?

পীতাম্বর তার বৌকে বলল - তুমি মায়ের কথা অমান্য কোরো না। তাহলে হুলুস্থুল কাণ্ড হয়ে যাবে।এ বাড়িতে এসব চলবে না।

রাধারানী - আমার শিরে সংক্রান্তি! মুখটা অশুদ্ধ হয়ে গেল নাম নিয়ে। শঙ্কর, মহাদেব, কৃষ্ণ, গোপাল, হরি, কার্তিক, শিব, এসব নাম কেন রাখে লোকে? কেউ কি এরা দেবতা হতে পারবে ? তার চেয়ে ওদের বাহন ষাঁড় হয়তো হতে পারবে। তাহলে বাহনের নাম রাখাই ভালো। তখন আবার ছেলে মেয়েদের গরু বাঁদর বলতে পারবো না।কি কুলক্ষনে যে এ বাড়িতে পা দিয়েছি।বাবা আমার সদাশিব তাই এসেছি এ বাড়িতে।বহু জন্মের পাপ ক্ষয় করতে।

শাশুড়ি- আবার বললে? 

রাধারানী- না তো? কখন বললাম আবার! 

শাশুড়ি- ওই যে অপর নাম বললে? 

পিতাম্বর- ওই যে শিব বললে? শিব শঙ্কর একই ব্যাপার।

রাধারানী- ঠিক আছে আমি মুখ শুদ্ধিকরণ করছি আর মুখ খুলবো না।

পুলিন- কেতকী তুমি কিছু বলোনি তো?

কেতকী- আমি তো বলার সুযোগই পাইনি। দিদিভাইয়ের সঙ্গেই তো ঝামেলা হচ্ছে।ও পিঠে পুলি খেয়ে লাভ নেই। বাপের বাড়ীতে ঢেক্ খেয়েছি।

শাশুড়ি- বৌমা তুমি আমার ছেলের সামনেই ছেলের নাম করলে? পুলি বললে? মুখে পোকা হবে ।সোয়ামীর নাম জানো না? পুলিন নাম। তাও মাথা খেয়ে, ভুলে বসেছো?

কেতকী- তাহলে তো ওগুলো খাওয়াও যাবে না। তাহলে বলবেন সোয়ামীকে খেলি।থাক্ মা - ওসব খেয়ে লাভ নেই! গোবর গঙ্গাজল খেয়েই থাকবো।সবাই যদি অষ্টোত্তর শতনাম রাখেন তাহলে তো চলতেই পারবো না। রাস্তার নাম পুল , তাহলে হাঁটব কি করে। শুয়ে থাকতে হবে! কত্তাঠাকুরের নাম শ্রীবাস ,তাই এখনো বিছানা বলতে পারি না।

গ্রামের মোড়ল হাবলবাবু এই পথ দিয়ে যাচ্ছিলেন। হাঁক পাড়লেন কি হয়েছে গো শঙ্কর। চেঁচামেচি কেন?

শাশুড়ি হৈম - মাথায় মাথায়‌।

হাবল- মাথায় কি হল?

হৈম- আজ মাথায়!

হাবল- ঠিক আছে কাল শুনবো।আজ তাহলে থাক্।

হৈম- তা নয়!

হাবল- তাহলে?

হৈম - আজ পার্বন তাই বলছি। মাথায় !

হাবল- ও শিরে সংক্রান্তি বলছো!

No comments: