দরিদ্র্যতা - সৌমেন দেবনাথ || গল্প - Story || ছোটগল্প - Short story
দরিদ্র্যতা
সৌমেন দেবনাথ
পল্লবের হাতের লেখা খুবই সুন্দর। লিখলে মনে হয় না হাতের লেখা, মনে হয় যেন কম্পিউটারে টাইপ করা। তবে প্রতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই বলে বানান ভুল করে ফেলে। একারণে খসড়া করে নেয় আগে, দেখে দেখে লেখে। নির্ভুল লেখা আর চমৎকার লেখার কারণে প্রত্যেক দোকানদার তার হাত দিয়েই দোকানের নাম ঠিকানা লিখে নিয়েছেন। হাতে তার রংতুলি নাচে, আর শব্দের পর শব্দ বসে। লেখার নিচে ছোট্ট করে লিখে দেয়-পল্লব আর্ট।
কম্পিউটারেও দক্ষ পল্লব। প্রতিষ্ঠানিক শিক্ষা যাদের কম থাকে, তারা আবার হাতের কাজে চৌকস হয়। কম্পিউটারের স্ক্রিনে তাকিয়ে গান-বাজনা দেখা তার কাজ না। সে কম্পিউটারের সামনে বসে বসে কাজ শিখেছে। তার কম্পিউটার চালানো দেখলে কেউ বলবে না তার সার্টিফিকেট নেই। এডোবি ফটোশপের কাজ খুব ভালো জানে। দক্ষ দুটি হাতের অনেক মূল্য। সুরুচি কালার ওয়ার্ল্ডে কাজ পেলো সে। ফটোশপের কাজ।
সারাদিন কাজের চাপ। একের পর এক একেকজন আসেন, আর তাদের কাজ করে দেয় সে। বলা লাগে না, নিজের থেকেই চমৎকার করে কালার করে দেয় ব্যানারের লেখাতে। সরকারি লোক আসেন, সরকারি দলের লোক আসেন, বিরোধী দলের লোক আসেন, সমাজসেবী দলের লোক আসেন, বড়ো বড়ো ব্যবসায়ীরা আসেন, ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা আসেন। নিজেকে সমাজের মানুষের কাছে পরিচিত করে তুলতে কত মানুষই তার কাছে এসেছেন ব্যানার বানাতে তার ইয়ত্তা নেই। কাজ জানা মানুষের কদর অনেক। সবার কাজ আপন মাধুরী মিশিয়ে করে দেয় সে, বিরক্তিকর অভিজ্ঞতার শিকার হয়, তবুও বিরক্ত হয় না সে। মালিকের কাছেও একারণে পল্লবের গ্রহণযোগ্যতা বেড়েছে।
বাড়ি থেকে যখন পল্লব বের হয় যেদিকেই তাকায় সেদিকেই ব্যানার দেখে, পোস্টার দেখে আর ভাবে তার হাতের কাজ, তার হাতের ছোঁয়া, তার হাতের মমতা। সবার কাছেই পরিচিত সে, কেউ দেখলেই ডেকে কথা বলে। তার কাজের কারণে এলাকাতে তার সুনাম ছড়িয়ে পড়লো। কিন্তু তার ভেতর অন্য কষ্ট বিরাজ করে। মাসিক যে টাকা পায় সে, তাতে তার সংসার চলে না। মানুষের ভালোবাসায় তার হৃদয় ভরে, কিন্তু পকেট থাকে ফাঁকা, বাজারের প্যাকেট থাকে ফাঁকা।
সারাজীবন দল, প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তির নামে ব্যানার, পোস্টার, লিফলেট বানিয়েছে পল্লব। আজ তার নামেই সারা অঞ্চল ছেয়ে গিয়েছে পোস্টারে, ধরিয়ে দিন।
Comments