Posts

প্রাবন্ধিক চাঁদ রায় -এর একটি কবিতা

  ছড়া ও তার প্রকারভেদ     প্রখ্যাত গ্রিক দার্শনিক অ্যারিস্টটল তাঁর লেখা 'কাব্যতত্ত্ব' গ্রন্থে বলেছেন-- "মানুষের স্বভাবের মধ্যে কাব্যের সম্ভাবনা রয়েছে। ছন্দ ও সুষমা বোধ মানুষের সহজাত। " এই সহজাত স্বাভাবিক প্রবৃত্তি পরিণতি লাভ করলে নানা পরীক্ষার মাধ্যমে জন্ম নেয় কাব্য। কাব্যের শ্রেণি দুরকম---যাঁরা গভীর প্রকৃতির তাঁরা প্রকাশ করেন মহৎ বা উন্নত ক্রিয়া, প্রকাশ করেন উন্নত ও মহৎ চরিত্র। এঁদের হাতে সৃষ্টি হয়েছে প্রার্থনা ও স্তুতি। অপর পক্ষে যাঁরা লঘু প্রকৃতির তাঁরা প্রকাশ করেন লঘু চরিত্রের লঘু কার্যকলাপ। এঁদের হাতে সৃষ্টি হয়েছে ব্যঙ্গাত্মক রচনা।  দ্বিতীয় ধারাটির মধ্যে পড়ে ছড়া। ছড়া হচ্ছে মানুষের মুখে মুখে উচ্চারিত ঝংকারময় পদ্য। এটি সাহিত্যের একটি প্রাচীন শাখা। প্রখ্যাত পণ্ডিত ও সাহিত্যিক রামেন্দ্র সুন্দর ত্রিবেদী সর্বপ্রথম এই অমোঘ উচ্চারণ করেছেন, "ছড়া বাংলা সাহিত্যের একটি মূল ধারা। " ছড়া হচ্ছে সবচেয়ে জনপ্রিয় লোকসাহিত্য। গ্রামবাংলায় এমন কেউ নেই যে, সে ছড়া জানে না বা শোনে নি। ছড়া মনে রাখাও সহজসাধ্য। দুচার লাইনের ছড়া মানুষের মনে দারুণ ভাবে প্রভ

প্রাবন্ধিক তৈমুর খানের -এর একটি প্রবন্ধ

  প্রেমিক বাউল অনন্তের কবি কবিরুল  এক গূঢ় অভিমান আর তাচ্ছিল্যের হাসি রেখেই চলে গিয়েছেন কবিরুল ইসলাম(২৪ /৮/১৯৩২ —১৯ /৭ /২০১২)। পঞ্চাশের দশক থেকে নীরবে নিরবচ্ছিন্নভাবে সাহিত্য চর্চা করেছেন। বাংলা কবিতাকে তিনি গভীরভাবে ভালবেসেই প্রাণ ঢেলে দিয়েছেন। কিন্তু আশ্চর্য বাংলা সাহিত্যের কোনও নিয়ামক পর্যৎ কবিকে পুরস্কারের জন্য মনোনীত করেননি। সেই অভিমান কোনওদিন প্রকাশ না করলেও নীরব আর স্বগত সংলাপে কাব্যচর্চার মতো তিনি আশ্চর্য উদাসীনতায় এক তাচ্ছিল্যের হাসি হেসেছেন ওইসব পুরস্কার আর তাঁবেদারে। গ্রামজীবন, পরিবার-পরিজন এবং বন্ধুবাৎসল্যের পরিমণ্ডলেই তিনি বসবাস করতে ভালবাসতেন। আগাগোড়া রাঙামাটি বীরভূমের বাউল পথিক হয়েই তিনি সুফি-সহজিয়া সাধনমার্গের সন্ন্যাসীপ্রতিম মানুষ। সারাজীবন তিনি আত্মখননের মধ্যে দিয়েই আত্মান্বেষণ করেছেন। নিজের সঙ্গে নিজেরই সংলাপে তুলে এনেছেন কবিতার ভাষা। নিজের রূপে নিজেকেই দেখেছেন। বহুমাত্রিক দৃশ্য, বহুমাত্রিক রূপ, বহুমাত্রিক অনুভূতির পয়গামেও একজনই রহস্যচারী সত্তার অধিকারী। তিনি কখনও নারী, কখনও অন্তরদেবতা, আসলে কবি নিজেরই পরিচয় বুঝতে চেয়েছেন।      কবিরুল ইসলাম জন্মেছিলেন নলহাটির কাছে হ

প্রাবন্ধিক রামপ্রসাদ সরকার -এর একটি প্রবন্ধ

Image
  কলকাতার পরী ও স্মৃতিমেদুরতা ।।এক।। আমি এখন একটি জেনেরাল ইনসিওরেন্স কোম্পানীর প্রধান কার্যালয়ের ভিজিটিং রুমে বসে আছি, আমার স্ত্রীর চিকিৎসার খরচের কিছুটা অংশের চেক পাওয়ার আশায়। ছ’তলার খোলা জানালা দিয়ে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল দেখা যাচ্ছে। মাথার পরীটা ঘুরছে। স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। দীর্ঘদিন স্থবীর থাকার পর পরীটা আবার ঘুরছে। কলকাতার পরী প্রাচীন ঐতিহ‌্যের প্রতীক।   এই পরীর ইতিহাস জানতে হলে আমাদের পুরনো দিনে ফিরে যেতে হবে। রানী ভিক্টোরিয়ার মৃত‌্যুর পর তাঁর স্মৃতিকে শ্রদ্ধা জানাতে এই সৌধটি নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন লর্ড কার্জন। এই স্মৃতি সৌধটি নির্মাণ করতে ১৫ বছর সময় লেগেছিল ১৯০৬ সাল থেকে ১৯২১ সাল পর্যন্ত। ১৯২১ সালে সৌধটির মাথায় প্রায় সাড়ে ছয় টন ওজনের পরীটি বসানো হয়।  তখন পরীটি ঘুরতে ঘণ্টায় পনেরো কি.মি. বেগের বাতাসের প্রয়োজন হতো। বলবিয়ারিং প্রযুক্তির সাহায‌্যে পরীটি ঘুরতো। কালের প্রবাহে শহরের অনেক উন্নতি সাধন হয়। চারদিকে সুউচ্চ অট্টালিকা গড়ে উঠেছে, বেড়েছে বায়ুদূষণ। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কমেছে হাওয়ার বেগ। তাই এখন পরীটি ঘুরতে ঘণ্টায় কুড়ি কি.মি.-র বেশি হাওয়ার বেগের প্রয়োজন হয়। মাঝে ম

লেখক সুমন সাহার একটি মুক্ত গদ্য

দেড় তলা বাসার ছাদে𑁋ভুলগুলোর জার্নি  ভুলে যেতে চাইলেই ভুলে যাওয়া যায় না। ভুল হয়েই যায়। ভুলে𑁋কাউকে ছোট করে ভাবা। মনের অজান্তে, হতেও পারে, নাও হতে পারে। কাউকে ছোট ভেবে, নিজেই ছোট হয়ে আসা, ছোট কেমনে হয়, কেমন করে, ব্যাপারটা দেয়ালে ঘুষি দিয়ে নিজের হাতেই ব্যাথা। ব্যাথায় কাতরানো। আর ব্যাথাপ্রসঙ্গে, কাশফুল সাদামেঘকে ভুলে যায়। সাদামেঘ কাশফুলকে ভুলে যায়। একে অপরকে আগলে রাখবে। আগলে রাখতে পারে, অনেকেই পারলো না, পারবেও না।      সম্পর্কঘটিত দিকটা বিদিক হয়ে যায়। থুম মারে শালিক, কাক কাকের কাজই করছে। করবেই। নিন্দুক নিন্দাচর্চায় ব্যস্ত। অনেকের অনেক ব্যস্ততা। পৃথিবীতে কেউ বেড়াতে আসেনি। সবাই কিছু কাজ করেই যাচ্ছে। কাজ বলতে অনেক কিছুই। কোন প্রাণেরইতো অবসর নাই। একদিন দেখা গেলো অনেক করেও কাজের স্বীকৃতি নাই। না আসলেও কেউ কাজ থামাবে না। থামিয়েই লাভ কি। আনন্দ আসছে। অনেক আনন্দের অভাব টাকা বুঝে না৷ আনন্দের অভাবে যা যা হয়ে যায়। সেগুলোর একটা জার্নিতে গেলে বুঝা যাবে। যাবনে আরেকদিন...

লেখক তুলসী দাস বিদ -এর একটি গল্প

  গোধুলী মাটির পথ ধরে গরু গুলো পায়ে পায়ে ধুলো উড়িয়ে বাড়ি ফিরছে। পশ্চিমদিকে আবির ছড়ালো রঙের ছটা, আকাশকে সুন্দর করে কনে সাজানোর মতো সাজিয়ে তুলেছে। দিগন্তে বলাকার ঝাঁক যেন সোনার হারের মতো উড়ে চলেছে। গালগল্প সেরে নদীর ঘাটের কাজ ফেলে বাড়ি ফেরার চেষ্টা করছে আটপৌরে গায়ের বধূরা। মাঝিরা নৌকাটা পাড়ের খুঁটিতে বেঁধে বাঁশের মাচায় বসে মজলিশে ব্যস্ত হয়ে পরেছে। পানকৌড়ি চখাচখি কাঁদাখোঁচারা সময় বুঝতে পেরেছে। জোনাকিদের আনাগোনা বাড়লেও সাঁঝের প্রদীপ জ্বালেনি। দূরের গাছ গাছালি ঘেরা গ্রাম ঝাপসা দেখাচ্ছে। ষাট ঊর্ধ্ব রমাকান্ত বৈকালিক ভ্রমণে আসার ব্যতিক্রম হয়নি। এই সুন্দর মধুর ক্ষণকে জীবনের সাথে মিলিয়ে নেন প্রতিদিন। অভ্যাসগত ভাবে নদীর পাড়ে সবুজ দুর্বা ঘাসের গালিচায় শরীরকে এলিয়ে দিয়ে অতীতকে রোমন্থন করতে করতে অজান্তে চোখ বন্ধ হয়ে গেছে। এটাও বাস্তব সত্য নদীর পাড়ের নাতিশীতোষ্ণ ফুরফুরে হালকা বাতাস যেন মায়ের মতো স্নেহের হাত বুলিয়ে আদর করে। আচমকা কান্নার শব্দে তন্দ্রাচ্ছন্ন ভাব কেটে গেলো। অদূরে শ্মশানে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলে উঠলো। শ্মশান সঙ্গীরা বল হরি হরিবোল বলে থেমে গেলেন।

লেখিকা স্বপ্না বনিক -এর একটি গল্প

  ঈশ্বরের দান তিনটি দুধের শিশু আর গফুর মিঞাকে নিয়ে সাকিনা বিবির গরীবের সংসার। স্বামী গফুর মিঞা ভোরবেলায় দুটো পান্তা খেয়ে চলে যায় মাঠে। দিন ভর হাল বেয়ে সন্ধ‌্যেবেলা ফিরে আসে ঘরে। তিনটি বাচ্চাই তখন খেয়ে দেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। সাকিনা ভাতের থালা আগলে বসে থাকে মিঞার জন‌্য। মিঞা ফিরলে দুজনে একই থালায় খেয়ে শুয়ে পড়ে। মাটির মেঝেতে পাতা বিছানা। বিছানা বলতে দুটো বড় ছেড়া কাঁথা আর ছেড়া দুটো বালিশ। গফুরের মনে দীর্ঘদিন ধরে লালিত স্বপ্ন আবার ভীড় করে আসে। তিনটে ছেলে-মেয়েকে মানুষ করতে হবে। পাঁচ বছরের আসিফকে গ্রামের স্কুলে ভর্তি করে দিয়েছে। ছেলেটার পড়াশোনায় ভীষণ উৎসাহ। স্কুল থেকে ফিরে একটু খেয়েই পড়তে বসে আসিফ্‌। দিনের আলো থাকতেই পড়া শেষ করে রাখে সে। রাত্রিবেলায় লণ্ঠন জ্বালাবার তেল নেই। ওইটুকু ছোট ছেলে মনে মনে ভাবে কবে সে বড় হয়ে বাবার মতো রোজগার করবে। সংসারের দুঃখ ঘোচাবে। বাড়ি বাড়ি কাজ করে মা যা দুটো পয়সা আনে, তাই দিয়েই ওদের খাওয়া-পরা কোন রকমে চলে যায়।  দেখতে দেখতে ঈদ এসে পড়ে। সারা মাস সাকিনা ও গফুর রোজা রাখে। রাত্রি বেলা কিছু খেয়ে উপোস ভাঙ্গে। ছোট্ট আসিফ্‌ দেখে বাবা-মা অভুক্ত থেকে ওদের মুখ

কবি অভিজিৎ হালদার -এর একটি কবিতা

  কবিতাই জীবন কবিতাই মরণ আমার মরণ হবে কবিতার পাতায় বিরহের কলমে কতই যন্ত্রণা লিখতে গিয়ে আমার অদ্ভুত চোখ কিছু যেন একটা খুঁজতে চাই! আমার যত আশা ভালোবাসা কবিতাই জীবন কবিতাই মরণ। আমি মরে যাবো মনের সুখে আমার যাবতীয় লেখার ভাবনা কী যেন একটা খুঁজতে চাই! আমার লেখার অজান্তেই। আমি সত্যকে আকাশ ছুঁয়ে দেখতে চায় হৃদয়ের ঘরে। অসম্ভবকে সম্ভব করে লিখতে চাই কবিতার মানে। আমার মরণ হবে বিরহের কলমে তবুও এ জীবন চলে যাবে ফাগুনে ফোঁটা নতুন ফুলে, আমার গোপনীয় রক্ত ক্ষরণে গোলাপের পাপড়ি কেঁদে ওঠে গ্রীষ্মের উষ্ণ ভরা দুপুরে। আমি মরে যাবো বিষ পান করে তবু মিথ্যা অপমানকে বুকে নিয়ে ভেসে যাবো নদীর জলে দিনেদিনে প্রতিদিনে। আমি প্রকৃতির যন্ত্রণা দেখে নিয়েছি গলায় ফাঁসির দড়ি, বেদনার কলমকে সঙ্গী করে কবিতায় বাঁচবো কবিতায় মরবো।।