Sunday, October 9, 2022

ছোট গল্প - সময় || লেখক - তপন তরফদার || Short story - Somoy || Written by Topan Torafdar

 




  সময়

                তপন তরফদার 

 


                 এক এক সময়ে মনে হয় এই দমবন্ধ সময়ের শেষ হবে না। আসলে মনের উপর এতো চাপ পরে সময়ের হিসাব রাখতে পারেনা। একজন পোয়াতি তার সন্তানকে পৃথিবীতে আনার সময় তাকে কষ্ট সহ্য করতে হবে জেনেও ভাবি মায়ের মনে হয় সময় শেষ হচ্ছে না। বাড়ির সবাই উদ্বিগ্ন। ভাবী পিতার মুখ পলে পলে শুকাতে থাকে। যেন চুরির দায়ে ধরা পড়েছে। পরিস্থিতি কয়েক মুহূর্তে বদল হয়ে বাঁধ ভাঙ্গা আনন্দে ভেসে যায় বসন্ত যখন বাড়িতে নতুন অতিথি আসার আওয়াজ আঁতুরঘর থেকে ভেসে আসে। গোয়ালঘর থেকে বসন্ত লাফিয়ে কাদাখোঁচা উঠানে নেমে আঁতুরঘরের বন্ধ দরজার দিকে মুখ করে দাইমা ক্ষণদার উদ্দেশ্যে বলে কী হয়েছে? ক্ষণদা এক সোহাগ মেশানো রসালো গলায় বলে - রসগোল্লা আনা, আমার জন্য গরদের শাড়ি নিয়ে আয় - তোর ছেলে হয়েছে।

                বসন্ত , যে বেশ কিছু সময় ধরে চোরের মতো গুটিসুটি মেরে বসে ছিল। খবর শোনার মুহূর্তেই বসন্তর বুকের ছাতি দীর্ঘ হয়ে যায়। মুখে লটারি পাওয়ার হাসি। ছেলে হয়েছে। সাত রাজার ধন এক মানিক।

                বলরামপুরের পঞ্চায়েত অফিস, সরযু বালা বিদ্যালয়ে যাওয়ার তেমাথা রাস্তার প্রথম বাড়িটা বসন্তদের। বসন্তদের ভিটে দুটো রাস্তা পেয়েছে। বসন্তর পিছনে হেমন্তর ভিটে। দূর সম্পর্কের আত্মীয়তার সূত্র ধরে এই দুই তেলি পরিবার এক হয়েই থাকে। কয়েক বছর আগে বসন্তর ও হেমন্তের বাবা এক সময়ে একই সঙ্গে গঙ্গাসাগরে নৌকা ডুবিতে মারা গেছে। বসন্ত, হেমন্তর বিয়ে প্রায় একই সময় হলেও হেমন্তের দুই ছেলে এক মেয়ে হয়ে গেছে। এতটা সময় পেরিয়ে গেলেও বসন্তর কোনো ছেলেপিলে হয়নি। গ্রামে রটেগেছে বসন্তের বউ উষা বাঁজা। উষার সময় কাটেনা। সবসময় বিমর্ষ হয়ে থাকে। হেমন্তর বউ সন্ধ্যা মনে মনে খুব খুশি ছিল - ওদের কোন বাচ্চাকাচ্চা না হলে - ওই ভিটেটার স্বত্ব হেমন্তর ছেলেরাই ভোগ করবে।

        বড় রাস্তার ধারে স্কুলে, পঞ্চায়েত অফিসে ঢোকার রাস্তা। রাস্তা ঢালাই হয়ে গেলেই লোক চলাচল বেড়ে যাবে। শোনা যাচ্ছে কিছু দিনের মধ্যেই সরযু বালা স্কুল উচ্চ মাধ্যমিক হয়ে যাবে। পঞ্চায়েত অফিসের পাশে ব্যাঙ্ক খোলা হবে। ওই তেমাথায় জমিতে যদি ‘মনিহারি স্টোর্স’ খোলা যায়, ভালই জমে যাবে। এ টু জেড সব পাওয়া যাবে। সব আশায় ছাই ফেলে দিল নবজাতক। সন্ধ্যা, হেমন্তকে বলে – চিন্তা করোনা। কাক-পক্ষীয়ও টের পাবে না-ঠিক সময়ে আমি সব ঠিক করে দেবো।

                    বসন্ত ছেলের নাম রাখলো অনন্ত। অন্ন প্রাশনের দিন সন্ধ্যা কোমর বেঁধে রান্না করে দিল। অনন্তর মুখে ঠুসে দিল পঞ্চব্যাঞ্জন। অন্ন প্রাশনেই প্রথম অন্ন পেটে যায়। সারা জীবন যেন অন্ন পায়। বাচ্চাকে পেট পুরে খাওয়াতে হয়। অনন্ত বিকালেই কেমন নেতিয়ে পড়ল। ওরা গ্রামের হাতুড়ে ডাক্তার যামিনীর কাছে নিয়ে যায়। যামিনী ডাক্তার মনে করে সমস্ত রোগের উৎস পেট। পেট যদি পরিস্কার থাকে - বিশেষ করে বাচ্চাদের স্ফূর্তি ভালই থাকবে। যামিনী ডাক্তার অনন্তর পেট-সাফার ওষুধ দিয়ে দেয়। বেশ কয়েকবার বাহ্ন্যি করার পর শান্তিতে ঘুমিয়ে পড়ল অনন্ত। ঘুম থেকে উঠে বাচ্চা হাসিখুশি, হাত-পা ছুঁড়তে লাগলো। হাসি শুনতে পেয় হেমন্ত সন্ধ্যাকে বলল - কি গো, সবতো ঠিকই আছে। সন্ধ্যা বলে – মনে হয় ধুতরোটা কম পরেছিল।

               অনন্ত ধীরে ধীরে বড় হতে লাগল। স্কুলের পিওন নিশীথের বউ, মেয়ে প্রভাতী সময় পেলেই অনন্তর সাথে গল্প করতে আসে। প্রভাতী-অনন্ত খেলনাপাতি খেলে। অনন্ত হয় বর, প্রভাতী হয় বউ। প্রভাতী পাকা গিন্নির মতো বলে - তুমি চান করে এসো, আমার ভাত রান্না হয়ে গেছে – তোমাকে খেতে দেবো।

              অনন্তের দশ বছরের জন্মদিন খুব ঘটা করে পালন না করলেও কাছের কয়েক জনকে নেমন্তন্ন করা হয়েছে। সন্ধ্যা পায়েস এনেছে অনন্তর জন্য। এখন অনন্তকে হাতে করে খাওয়াতে হয়না। লাউ-চিংড়ি খেয়ে উঃ আঃ করছে অনন্ত।উষা মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে বলে - লঙ্কা খেয়ে ফেলেছিস, পায়েস মুখে দে। ঝাল কমে যাবে। অনন্ত সন্ধ্যার আনা পায়েস মুখে দেয়। জিভে কেমন যেন ঠেকে। কিছু বলে না - হয়ত ঝালের জন্য পায়েসটার স্বাদ এমন তিতকুটে লাগছে।

                     বিকাল থেকেই পেটে অসহ্য যন্ত্রণা - বমি করতে যায় অথচ বমি হয় না। যন্ত্রণায় কাটা ছাগলের মতো ছটফট করতে থাকে অনন্ত। যামিনী ডাক্তার এবারও পেট পরিষ্কারের ওষুধই দিল - কিন্তু কোন কাজ হল না। মুখ দিয়ে গ্যাঁজলার মতো নিল রঙের থুথু বেরাতে থাকে। ডাক্তার বমির ধরন দেখেই বলে এখুনি একে বড় হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে। আমি ভাল বুঝছি না। বেশ কিছু সময় ধরে যমে মানুষে টানাটানি। মানুষ জিতে গেল। বেঁচে গেল অনন্ত কিন্তু বাঁদিকের হাত পা কেমন বেঁকে গেছে। বাঁদিকের ঠোঁটের ফাঁক দিয়ে লালা পরে। কথা বলতে গেলে চোখে মুখে অসহ্য যন্ত্রণার ছবি ফুটে ওঠে। সন্ধ্যা আপশোষ করে বলে - কলকের বিষ মেরে ফেলতে পারল না। বসন্ত একেবারে ভেঙে পড়ল। ভেবে কুল কিনারা পায়না বসন্ত – সুস্থ ছেলেটার এ কি হল? তাপ দেওয়া তাসার মত গুমগুম করে বেজে যায় মন। বেশ কিছু বছর পরেও বসন্ত মনে করে নিশ্চয় কোন পাপ করেছিল - তাই এই সাজা। সব কিছু ভুলে থাকার জন্য আদিবাসী পাড়ায় যাতায়াত শুরু করল। এখন আদিবাসীদের ডেরায় হাঁড়িয়ার সঙ্গে চোলাই ও চালু হয়ে গেছে। হেমন্তও লুকিয়ে লুকিয়ে ধেনোমদের বোতল কে এনে দেয়। সজনে ফুলের এক বিশেষ গন্ধ থাকে, যারা জানে তাদের নাকে ধাক্কা মারে। এই ধেনোর এক বিশেষ মহিমা আছে যা ছড়িয়ে পরে দাবানলের মতো - সবাই জেনে যায় বসন্ত “নেশা করে”। হেমন্তর এনে দেওয়া ধেনো খেয়ে বসন্তর বুকে যন্ত্রণা শুরু হয়। ওরও মুখ দিয়ে ফেনা বেরোতে থাকে। বুক চেপে শুয়ে পড়তেই উষা তালপাতার হাতপাখা দিয়ে হাওয়া করতে থাকে। এই সময়ে এই হাওয়া কোন কাজে লাগেনা। অকালেই উবে যায়। ওদিকে পিওন নিশীথ মারা গেল। যামিনী ডাক্তার রোগটা যে ‘ডেঙ্গু’, ধরতেই পারেনি। প্রভাতীর মা রাত্রি, স্কুল সীমানায় এক প্রান্তে নির্জন ডোবার ধারে বাঁশ বাগানের পাশে টিনের চালার মাটির ঘরে যেখানে থাকে, সেখানে রাতের অন্ধকারে দরজায় টোকা পড়তে লাগল। রাত হলেই মা-মেয়ে দুজনেই সিঁটিয়ে থাকে, বুঝতে পারে ওরা গ্রামেরই পঞ্চায়েতের লোক।

               ওদিকে হেমন্ত - উষা নিজেদের আকাঙ্খা পূরণ করতে কোন সুযোগ হাতছাড়া করতে চায় না। উষাকে পাখি পড়ানোর মতো সব সময় বলতে তাকে ছেলের চিকিৎসার জন্য, তোমাদের সংসার চালানোর জন্য ভিটেটা বিক্রি করে দিয়ে বাপের বাড়ি চলে যাও। মামার বাড়িতে ন্যালাখ্যাপা ছেলে অনেক সাহায্য পাবে।

 

            উষা নিজের শ্বশুর বাড়ির ভিটে ছেড়ে যেতে রাজি নয়। হেমন্তরা বুঝতে পারে, চালটা ঠিক ধোপে টিকল না। হাল ছাড়ার পাত্র নয় হেমন্তরা। কিছুদিন বাদে বলে - বউদি তোমরা তো মাত্র দুজন, এতবড় জায়গা নিয়ে কি করবে। তোমার ছেলেকে দিয়ে তো কিছু হবেনা। আমি তোমাকে ভিটের এক দিকে ঘর করে দেবো। জমির জন্য টাকাও দেব। উষা বুঝতে পারে বাঘের থাবার সামনে পড়েছে। দুর্বলের সাহায্যের জন্য এই সময়ে কেউ এগিয়ে আসেনা। এখন রাজনীতির ঝান্ডা না ধরলে বাঁচা যাবে না। হেমন্ত পঞ্চায়েতের দলের লোক হয়ে গেছে। উষা কিংকর্তব্যবিমূঢ়। সে অসহায়, ফুলের মতো ফুটে আছে। সবাই তাকে দখল করতে তৎপর। মুখ নীচু করে বলে - ঠাকুরপো তুমি যা ভাল বোঝো করো।

 

        নিশীথ নিজে ভাল লেখাপড়া করার সুযোগ পায়নি। মেয়েকে লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষের মতো মানুষ করতে চেয়েছিল। মেয়েরা নতুন কিছু সাহসী কাজ, প্রতিভার জোরে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার খবর মেয়েকে দিত। উৎসাহ দিয়ে বলতো - জানিসতো মা, এক মেয়ে এভারেস্ট জয় করেছে। প্রভাতী বলে, জানি অনেক মেয়েই পাহাড়ে উঠেছে। নিশীথ বলে, ওর নাম অরুণিমা সিনহা এক পায়ে ভর করে উঠেছে।মনে রাখিস প্রভাতী মনের জোরই আসল জোর।

 

          ছিপছিপে শ্যামাঙ্গী প্রতিমার মতো মুখ ও চুল প্রভাতীর তার শরীরে ক্লান্তি নেই, চনমনে চিতল হরিণী। গাঁইয়া মুখ হলেও মুখে বালি সরানো ফলগু নদীর মতো লাবণ্য। বুদ্ধিতে খনার থেকে কিছু কম নয়। প্রভাতী চায় প্রথমেই স্কুলের জায়গাটা ছাড়তে। ঝুপসি গাব, মহানীম গাছের মাঝে ফাঁকা জমিতে রাতের অন্ধকারে ভুতের নাচের আসর বসে - ওরাই রাত্রে দরজায় আওয়াজ তোলে। রুখে দাঁড়ালে বাঁশ ঝাড়ের ভিতরে পালায়। এইভাবে আর কতদিন। যদি ওরা রাতে দরজা ভেঙ্গে ঘরে ঢুকে পরে। মাথা ঘুরতে থাকে বিষয়টি মনে আসলেই।

                অনন্তর বাড়িতে যায় প্রভাতী ওদের খোঁজখবর নিতে। সুখ-দুঃখের গল্প করতে। উষাকে আশ্বাস দেয় - চিন্তা করবেন না মাসিমা, ভাল হয়ে যাবে। উষার মুখে শুকনো হাসি। সে দিনের সূর্য অনন্তদের বট গাছের পাতায় শেষ আলোর চুম্বন দিয়ে বিদায় নিচ্ছে। এই সময়েই হেমন্ত এসে বলে - বৌদি তোমাদের দলিলটা দাও। কালই রেজিষ্ট্রি করব, তোমাকে নিয়ে যাব - ওখানেই সব টাকা দিয়ে দেবো। বলে ওঠে - না “মা” – আপনি দলিল দেবেন না। আমার শ্বশুর বাড়ির ভিটে আমরাই রক্ষা করব।

           হেমন্ত রেগে গিয়ে বলে - সেদিনের ছুঁড়ি, আমার সাথে রসিকতা হচ্ছে। প্রভাতীর পাথরে খোদাই করা চোখ মুখ আরো দৃঢ় করে বলে - আমরা সবাই এক হয়েই সবাইকে বাঁচতে সাহস জোগাবো। আমার বাবা মারা গেছে – ওই শকুনরা আমাদের ছিঁড়ে খাবে। অসহায় বিধবার ভিটে হায়নারা খাবে, তা হবেনা।আমি অনন্তকে বিয়ে করে সব সামলে নেব। অনন্তকে নিয়ে সিধে প্রভাতী কালীতলায় চলে আসে। পূজারীর কাছ থেকে সিঁদুর চেয়ে নিয়ে অনন্তকে বলে পড়িয়ে দিতে। অনন্তর চোখে মুখে যুদ্ধ জয়ের ছবি। একটুও হাত কাঁপে না। বুদ্ধপূর্ণিমার আলো, সমগ্র জগতকে মোহময়ী করে তুলেছে। প্রভাতী অনন্তকে নিয়ে ঘরে ঢুকে খিল তুলে দিয়ে গাইতে থাকে - ও রজনীগন্ধা তোমার ..........। বেচারা, সন্ধ্যারা ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে। দুই বিধবা পরস্পরের হাত ধরে শরীরের ইশারায়

বুঝিয়ে দেয় প্রভাতী তাদের জীবনে নতুন প্রভাতের আলর দিশা দেখাবে।

ছোট গল্প - অশিক্ষক || লেখক - সন্দীপ কুমার পণ্ডা || Short story - Osikhokh || Written by Sandip Kumar panda


 


অশিক্ষক

  সন্দীপ কুমার পণ্ডা



          আজ সরস্বতী পূজা তাই রোহনের মন আবেগে, আনন্দে,উৎসাহে  সজনে ফুলের মতো দোলা খাচ্ছে , সকাল - সকাল  উঠে মুখে ব্রাস নিয়ে বাথরুমে চলে গেল সেখানে থেকে বেরিয়ে এসে মোবাইল খুলে দেখতে পেল হোয়াটসঅ্যাপে স্কুলের বন্ধুরা মেসেজ করেছে স্কুল যাবার জন্য সে রিনার বাদে সবার রিপ্লাই দিল ।রিনার রিপ্লাই না দিবার কারণ রিনাকে রাগিয়ে দেওয়া,তাকে রাগিয়ে দিলে অসম্ভব সুন্দর লাগে তার চেয়েও সুন্দর লাগে তার অভিমানের সুরে কথা গুলো।মনের মধ্যে মিটি মিটি হেসে ভাবল একবার কল করবে কিন্তু পরমুহুর্তেই মনে হল আর একটু রাগানো ভালো।তারপর ভাবতে লাগলো গতবছর এই দিনেই রিনাকে প্রথম দেখে রোহন আর প্রথম বার দেখেই চোখ সরাতে পারেনি রিনার সুন্দর  চোখের  চাহুনি ও হাসি দেখে মনে হয়েছিল স্বর্গ থেকে কোনো অপ্সরী নীচে নেমে এসেছে রিনারও একই অবস্থা দুজন দুজনকে দেখে স্থানু হয়ে গেয়েছিল। অল্প সময় পর রিনা লজ্জায় চোখ নামায় সেই থেকে ধীরে ধীরে আলাপ ও আলাপ থেকে বন্ধুত্ব সেই বন্ধুত্ব এক বৃষ্টির দিনে প্রেমে পরিণত হয়।তারপর অনেক দিন কেটে গেছে দুজনে দুজনকে চোখে চোখ রেখে ।পরস্পর পরস্পরকে হাতের ছোঁয়ায় রমাঞ্চ হত। এমনি করে বছরটা কেটে গেল। হঠাৎ মায়ের ডাকে তার সঙ্গা ফিরল-রোহন স্কুলে যাবি না আজ যে সরস্বতী পূজা। সঙ্গে সঙ্গে রোহন স্নানের জন্য বাথরুমে চলে গেল কিছুক্ষণ পর বেরিয়ে এসে নতুন পাঞ্জাবি সুগন্ধি সেন্ট,দামি হাতঘড়ি পরে বাবা বাইক নিয়ে স্কুলের দিকে বেরিয়ে পড়ল। সরস্বতী পূজা দিন বলে অনেক বলে - কয়ে বাবার কাছে বাইক নিয়ে যাবার অনুমতি পেয়েছে।এরপর সে সোজা স্কুলে বাইক রেখে হল ঘরে গিয়ে পুস্পাঅঞ্জলী দিয়ে বাইরে বেরিয়ে যেন‌ রোহনের চোখ কাওকে খুঁজছিল হঠাৎ সে রিনাকে তার দিকে এগিয়ে আসতে দেখতে পেল গতবছরের মতো এবারেও তাকে দেখতে খুবই সুন্দর লাগছে হলুদ রঙের শাড়ি লাল ব্লাউজ চোখের কাজল সেইসঙ্গে ঠোঁটের  রক্তিম আভা‌ চারিদিকে ছড়িয়ে অপরূপ লাগছিল রিনাকে। এগিয়ে এসে অভিযোগ সহিত বলতে লাগল'এত দেরি হল আসতে?আমার মেজেসের রিপ্লাইও দাও নি কেন? মিটিমিটি হাসতে হাসতে শুনছিল রোহন।তারপর কয়েক ঘণ্টা বেশ হাসিখুশি ভাবেই পেরিয়ে গেল। হঠাৎ সবার ডাক পড়ল খাবার প্যান্ডেলে যাবার রোহন ও রিনা আগে থেকেই ঠিক করে রেখেছিল ওরা একসাথেই খাবে ।সবাই কুপন‌দেখিয়ে প্যান্ডেলে প্রবেশ করতে লাগলো। রাজকীয় খাবারের আয়োজন তাই কুপনের ব্যবস্থা যাতে বহিরাগত কোনো ব্যাক্তি খাবারের স্বাদ অনুভব করতে না পারে।রোহন মনে মনে হাসল এমনিতেই  প্রচুর পরিমাণে খাবার বাড়তি পড়ে থাকে যেগুলো পরে কোথাও ফেলে দেওয়া হয় আর রাস্তার কুকুরগুলো খায় ওই সব খাবার দুই জন বা দশ জন খেলে কী যে মহাভারত অসুদ্ধ হয় তা রোহন বুঝতে পারেনা। হঠাৎ একটা গোলমাল শোনা গেল একজন লোক যার কুপন নেই সে প্রবেশ করতে যাচ্ছে কিন্ত একজন শিক্ষক তাকে বাধা দিয়েছেন। সেদিকে রোহনও গেল দেখতে পেল দাড়ি গোঁফে ভর্তি মুখ,পরনে একটা নোংরা ও ধুলোমাখা ধুঁতি একজন ৫৫-৬০বছর বয়স্ক লোক কাতরে বলে চলেছে'সার অনেক বেলা কুচু মুলে দি লাই।গরীব লোক আমি বাবু'আর কেঁদে চলেছে।ওদিকে ইংরেজি শিক্ষক ও অহংকারী মনের মানুষ তরুণ বাবু বলে উঠলেন খাবারের এমনি তেই সট্ তার উপর এক বেগার এসে উঠেছে।'দু -এক জন স্যারের বিরোধীতা করলেও কেও কিছু বলতে পারল না।আবার শিক্ষক মহাশয় বলতে লাগলেন 'এই চেহারার কোনো মানুষ বসলে ছেলেরা খেতে অরুচি বোধ করবে। ' এইসময় রোহন বলে উঠল 'স্যার একটা মাত্র লোক খেলে খাবারের অভাব হবে না তাছাড়া  উনি খেলে আমাদের কোনো অরুচি হবে না।' রোহনের কথার উত্তরে স্যার বললে 'একজনকে দিলে হাজার জন খাবার চাইবে আর খাবার সস্তা নাকি?'
____'এখন তো একজনই তো আছে তাছাড়া খাবার গুলো তো ড্রেনে ফেলে দেওয়া হয় আর রাস্তার কুকুরগুলো খায়।'
_____'তোমার যদি এতই দরদ তা তুমি তোমার কুপনটি দিয়ে দাও।একটি কুপন একটি মানুষ।বিনা কুপনে কেও খাবার পাবে না।'
_____'স্যার এম .এর .এ সাহেবের তো কোনো কুপন নেই তাহলে তিনি এসেছেন কেন?'
রিনাও যেন বলতে চায় এই সব ফালতু লোক নিয়ে মাথাব্যথা কীসের ? তারা পাশাপাশি বসে খাবার খাবে একটা উটকো লোককে নিয়ে স্যার দের সাথে ঝগড়া না করতে।
______'এম. এর. এ স্যারের সঙ্গে তুমি এই ইডিয়েট ,বেগার,নিগার  লোকটার কমপেয়ার (তুলনা)করছ। উনি একজন অতিথি।'
_______'না স্যার আমি আমি কুপনের কথা বলছি।'
______' তোমার কুপন যদি দিতে চাও তাহলে ও খাবার পাবে তাছাড়া নয় এটাই আমার ফাইনাল ডিসিসন।'
সঙ্গে সঙ্গে রোপনের নিজ কুপন ওই লোকটির হাতে দিতে গেল।'
কিন্তু লোকটি বলল 'ছোট বাবু তুমি কেন্ তোমার কুপন দিচ্চ আমি বুড়া মানুষ আর তুমি ছেলে ছোকরা এটাই তো তোমাদের সময়।'
 রিনাও চাইছিল না রহোন কুপনটা দিয়ে দিক কিন্তু রোহন বলে উঠল'আমি প্রতিদিন এই রকম খাবার খায় কিন্তু তুমি অনেকদিন না খেয়ে থাকো আমার একদিন এরকম খাবার না খেলেও চলবে। আর এই খাবার আমার মুখে উঠবে না যে খাবার রাস্তার কুকুর দিকে দেওয়া চলে এমএলএ, মন্ত্রী ,মিনিস্টার দেওয়া চলে শুধুমাত্র গরিব মানুষদের দেওয়া চলে না ।'
এই বলে রোহন বেরিয়ে এলো। তার চোখ জুড়ে এক প্রতিবাদের মেঘ।

Saturday, October 8, 2022

অষ্টম শ্রেনি পাশে ভারতের ডাক বিভাগে চাকরি || বেতন 19 হাজার 900 টাকা প্রতি মাসে || Indian Post Eight Pass Job 2022 || https://www.indiapost.gov.in/


 


ভারত সরকারের অন্তর্গত ডাক বিভাগ (Indian Post Department) এ আবার নতুন নিয়োগ। এখানে শুধু মাত্র অষ্টম শ্রেনি পাশ করলেই আবেদন করার সুযোগ পাবেন। ‌ভারতের সমস্ত নাগরিক অর্থাৎ পশ্চিমবঙ্গের 

সমস্ত প্রার্থীই এখানে আবেদন করার সুযোগ পাবেন না।

চাকরি সংক্রান্ত সম্পূর্ণ বিষয়টি নীচে আলোচনা করা হল-



নোটিশ নম্বরঃ MSE/B-4/XI/2022



নোটিশ প্রকাশের তারিখঃ 19.09.2022


আবেদনের মাধ্যমঃ শুধু মাত্র অফলাইনের মাধ্যমে আবেদন করতে পারবেন।



নিয়োগ তথ্য -


কোন কোন পদে নিয়োগ?

#স্কিল্ড আর্টিসান্স (Skilled Artisans)



বেতন -

 প্রতিমাসে 19,900 থেকে 63,200 টাকা।


শিক্ষাগত যোগ্যতা -


অষ্টম শ্রেণী পাশ করতে হবে এবং আপনাকে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট ট্রেডে এক বছরের অভিজ্ঞতা অর্জন করে থাকতে হবে। 



#এছাড়া যে প্রার্থী MV মেকানিক পদে আবেদন করতে চাইছেন তাদের অবশ্যই বৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকতে হবে। 



বয়সসীমা-

 প্রার্থীর বয়স 18 থেকে 30 বছরের মধ্যে হতে হবে। এছাড়া SC, ST প্রার্থীরা সরকারি নিয়মে ছাড় পাবেন।



ট্রেড অনুযায়ী মোট শূন্যপদ-

M.V Mechanic – 2

M.V Electrician – 1

Painter – 1

Tyreman – 1




নিয়োগ পদ্ধতি - 

এখানে আপনাকে কম্পিটিটিভ ট্রেড টেস্ট দিতে হবে। তার প্রার্থী নির্বাচিত করা হবে। সংশ্লিষ্ট ট্রেড অনুযায়ী এই টেস্ট টি নেওয়া হবে।




আবেদন পদ্ধতি -


(1) এখানে আপনাকে অফলাইন এ আবেদন করতে হবে।


(2) অফলাইনের মাধ্যমে আবেদন করতে হলে প্রথমে অফিসিয়াল নোটিশ টি ডাউনলোড করতে হবে। সেখানে আবেদনের ফর্মটি পাবেন। সেটি প্রিন্ট করতে হবে। 


(3) এরপরে প্রিন্ট আউট করা ফর্মটি সঠিক ভাবে পূরণ করতে হবে এবং তার সঙ্গে প্রয়োজনীয় নথিপত্র সেল্ফ অ্যাটেস্টেড করে যুক্ত করতে হবে।


(4) সবশেষে আবেদনপত্র এবং প্রয়োজনীয় নথিপত্র গুলি একটি মুখবন্ধ খামে ভরে নিচের উল্লেখিত ঠিকানায় নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে স্পিড পোষ্ট অথবা রেজিস্টার্ড পোষ্টের মাধ্যমে পাঠিয়ে দিতে হবে।



গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট-


1)রঙিন পাসপোর্ট সাইট ছবি।

2)বয়সের প্রমাণপত্র।

3)শিক্ষাগত যোগ্যতার সার্টিফিকেট।

4)টেকনিক্যাল সার্টিফিকেট।

5)ড্রাইভিং লাইসেন্স।

6)ট্রেড এক্সপেরিয়েন্স সার্টিফিকেট।

7)কাস্ট সার্টিফিকেট (যদি থাকে)



আবেদনপত্র জমা দেওয়ার ঠিকানা-


The Senior Manager (JAG), Mail Motor Service, No. 37, Greams Road, Chennai – 600006




গুরুত্বপূর্ণ তারিখ -

নোটিশ প্রকাশ -19.09.2022

আবেদন শুরু - 19.09.2022

আবেদন শেষ - 19.10.2022 




Important Links: 👇👇


Official website link -

Click here 🔴



Official notice Download link -

Click here 🔴


________________________________________

চাকরি সংক্রান্ত আপডেট পেতে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন


Telegram group-


https://t.me/Jobnewsgovtandpraivate


Whatsapp group-


https://chat.whatsapp.com/FOyQc45Ny1A7acqIc9mKdl

Monday, October 3, 2022

উপন্যাস - পদ্মাবধূ || বিশ্বনাথ দাস || Padmabadhu by Biswanath Das || Fiction - Padmabadhu Part -21


 

ঠিক আছে , এ্যায়সা হোগা । হামার আড্ডামে আনবো না । দো রোজ বাদমে এ পত্তামে হাজির হবি । চলা যা বহিন , চিন্তা মত কর । 


শ্যামলীদি অত্যন্ত আনন্দিত হল ওর কথা শুনে । আমরা নিরাপদে যেন আমাদের কুঞ্জে পৌঁছতে পারি তার ব্যবস্থা করতে বললাম শিবাজীদাকে , কারণ অনেক রাত হয়ে গেছে । তিনি একজন তাঁর সাকরেদকে আমাদের সাথে দিলেন । আমরা যাতে সসম্মানে পৌঁছতে পারি তার সমস্ত রকম সতর্কতামূলক ব্যবস্থা করলেন । 

আমরা বিলম্ব না করে সাকরেদ রহিম মোল্লার সাথে বস্তীতে গিয়ে হাজির হলাম । ট্যাক্সি করে । শ্যামলীদি রহিম মোল্লাকে কিছু জলযোগ না করিয়ে যেতে দিলো না । সে অনিচ্ছা সত্ত্বেও আমাদের সাথে উপস্থিত হলো আমাদের বাসার আঙিনায় । শ্যামলীদি বাসাতে প্রবেশ করতে গিয়ে থমকে দাঁড়িয়ে পড়ল । আমি ওকে দাঁড়িয়ে পড়তে দেখে একরকম দৌড়ে গিয়ে হাজির হলাম ।

 দেখলাম বস্তির অধিপতি বাবুগুণ্ডা দেওয়ালের আড়ালে হতে শংকর মাছের চাবুক নাড়তে নাড়তে শ্যামলীদির কাছে এগিয়ে এসে বলল , বহুত আস্পর্স্কা দেখেছি তোর ! মনে হচ্ছে পিঠের দগদগে ঘা খুব তাড়াতাড়ি শুকিয়ে গেছে ! আমি জানতে চাইছি কার অনুমতিতে বাইরে গিয়েছিলি ? 

শ্যামলীদি কোন উত্তর দিলো না । শুধু মুখখানা ক্রোধে রক্ত রাঙ্গা হয়ে উঠল । আমি শ্যামলীদির হয়ে কিছু বলতে যাচ্ছিলাম শ্যামলীদি আমাকে বাধা দিল ।

 রহিম মোল্লা একটু দূরে নবাবী কায়দায় দাঁড়িয়ে ধূমপান করছে । শ্যামলীদির মুখ দিয়ে কোন উত্তর বেরুচ্ছে না দেখে বাবু গুন্ডা হুংকার দিয়ে চাবুকের ঘা মারল । 

যেই আরেকটা চাবুক মারতে যাবে ঠিক সে সময় রহিম মোল্লা ক্যাঙ্গারুর মতো লাফ দিয়ে চাবুকটা ধরে বাবুগুন্ডার তলপেটে এমন জোরে লাথি মারল যে মাটির উপর ছিটকে পড়ল বাবুগুন্ডা ।

 শ্যামলীদি রহিম মোল্লার কাছ হতে চাবুকটা ছিনিয়ে নিয়ে বাবুগুন্ডার কাছে ধীরে ধীরে এগিয়ে এলো । শ্যামলীদির চোখ দিয়ে যেন আগুনের ফুলকী বেরুচ্ছে । আজকে শ্যামলীদির বদলা নেবার দিন এসেছে । এই সুযোগ নেবার জন্য অধীর আগ্রহে দিন গুনছিল । 

গম্ভীর গলায় বলল শ্যামলীদি , উঠ বাবুগুন্ডা , আজ প্রতিশোধ নেবার দিন এসেছে ।

এবার তোর শরীরকে আলগা করে দিই । অতীতের পঞ্চাশ ঘা , আর আজকার এক , অর্থাৎ একান্ন ঘা তোকে আজ ফিরিয়ে নিতে হবে ।

 বাবুগুন্ডা উঠবার চেষ্টা করতেই মুখে একটা চাবুকের ঘা মারল । সে তীব্র চিৎকারে মাটিতে লুটিয়ে পড়ল । শ্যামলীদি ছাড়বার পাত্রী নয় ।

 কি রে খুব লাগল বুঝি ? না - না , আমার মনে হচ্ছে তেমন লাগেনি । তাহলে আরেকটা দিই কেমন ? বৃষ্টিধারার মতো সমস্ত শরীরে চাবুকের আঘাত পড়ল । সেই অবস্থায় কাটা ছাগলের মতো ছটপট করতে থাকল বাবুগুন্ডা । আদরী মাসী আটকাতে এসে কয়েক ঘা চাবুক তার গায়ে এসে পড়ল , সেই আঘাতে সেও মাটিতে কাতরাতে থাকল । 

শ্যামলীদি চাবুক থামিয়ে অবসন্ন হয়ে রহিম মোল্লার কাছে এসে হাঁফ ছেড়ে বলল , আমাকে সেদিন ঐ জানোয়ারটা রেহাই দেয়নি দাদা । পিঠের ঘা এখনো শুকায়নি । আমার অপরাধ একটা মেয়েকে এই নোংরা পথ হতে বাঁচাতে গিয়েছিলাম তাই ।

 শ্যামলীদিকে সান্ত্বনা দিয়ে রহিম মোল্লা বলল , হামার সব মালুম হুয়া বহিন । হমারা বস হামকো বতায়া । ডর মত কর । বাবুগুন্ডা বিষ মাখানো দৃষ্টি নিয়ে কাত হয়ে পড়ে আছে স্যাঁত স্যাঁত মাটিতে । রহিম মোল্লা ধীরে ধীরে ওর কাছে এসে কলার ধরে বলল , উঠিয়ে ভাইসব , বহুত পরেশান হুয়া । শোন্ কই জানানাকে জবরদস্ত এ লাইনমে লে আয়েগা তো তুমকো টুকরো বানাকর গঙ্গামে ফেক দেঙ্গে । হামকো পহচানতে হো ? শিবাজী সিংকা আদমী হ্যায় । 

বাবুগুন্ডার মুখ দিয়ে কোন বাক্য বের হয় না । কেউ যেন ওর বাকশক্তি রোধ করে । দিয়েছে । রহিম মোল্লা শ্যামলীদির কাছে এসে চিন্তা করতে নিষেধ করল । যদি কোন বিপদের ঝুঁকি আসে বিনা দ্বিধায় ওদের আড্ডায় গিয়ে খবর দিলে উপযুক্ত বিচার এসে করবে । বিলম্ব না করে সে সেখান হতে অদৃশ্য হল । 

হঠাৎ যে এরকম কান্ড ঘটে যাবে কখনো ভাবতে পারিনি । কারণটা হয়েছিল পর পর দুদিন কোন নিশিবন্ধু শ্যামলীদির খোঁজে এসেছিল । ওকে ঠিক সময়ে পায়নি বলে আদরী মাসীর লোকসান হওয়াতে সে বাবুগুন্ডাকে বলেছিল শায়েস্তা করতে । সেদিন রাতটা থমথমে ভাবে কেটে গেলো । শত চিন্তা বুকে নিয়ে শ্যামলীদি সারারাত্রি চোখের জলে ভেসেছিলো । এই সৌন্দর্যময় জীবনে যে এইরূপ অশান্তির ঝড় বইবে তা কি জানতাম ? 

কোন প্রকারে শ্যামলীদির অব্যক্ত যন্ত্রণাকে চাপা দিয়ে ওর কোমল হৃদয়কে শান্ত করেছিলাম । এছাড়া কিইবা করার আছে আমাদের ? এই অশান্ত পরিবেশের মধ্যে দিনের পর দিন অতিবাহিত করতে হবে । 

হায়রে বিধাতা কেন এই নির্যাতন সহ্য করার আগে আমাদের মৃত্যু দিলে না । পরদিন সকালে ঘুম হতে উঠতে একটু ইচ্ছে করেই দেরী করলাম । শ্যামলীদি ঘুম হতে উঠে বাইরে বেরুতে আমাদের সখীরা ওর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকল । একজন কাছে । এসে শ্যামলীদিকে সাবাস দিলো । কোন অন্যায় করেনি শ্যামলীদি । এবার বাবুগুণ্ডা । বুঝুক চাবুকের ঘা কতখানি শরীরকে আরাম দিয়ে থাকে । 

সেদিন বিনাদোষে শ্যামলীদিকে চাবুক মেরেছিল , কারণ ওর ইচ্ছা মতো কাজ করতে হবে । প্রয়োজন হলে তার সখিরা শ্যামলীদিকে সাহায্য করবে । আর অত্যাচার সহ্য করবে না তারা । ওদের কথা শুনে আমর মনে হল এখান থেকে এবার আন্দোলনের সৃষ্টি হবে । অফিস , কারখানায় যখন অন্যায় এর বিরুদ্ধে আন্দোলনের সৃষ্টি হয়ে থাকে , এখানে কেন হবে না । এখানের লড়াই হবে শান্তিতে বাঁচার অধিকারের জন্য । 

হঠাৎ নজরে পড়ল , আদরী মাসী কোমর বেঁকিয়ে লটপট করতে করতে আমাদের মজলিসে এসে উপস্থিত হলো । বলল , কাজটা ভালো হলো না পদ্মা । 

আমি শ্যামলীদির মুখের দিকে তাকিয়ে বললাম , প্রয়োজন হলে তোমার আদরের দুলাল আদালত করতে পারে , আমি সাক্ষী দেব । কিরে লতিকা , সাক্ষী দিবিতো তার হয়ে ? 

আদরি মাসীর ঠোঁট কাঁপতে থাকল । কিছু বলতে গিয়েও পারল না । মুখটা গম্ভীর করে ধীরে ধীরে কেটে পড়ল ।

Saturday, October 1, 2022

রাজ্যে গ্রুপ-D এবং ক্লার্ক পদে কর্মী নিয়োগ || WB group D and Group C Recruitment 2022 || Bench Clerk, Lower Division Clerk and Group D Recruitment 2022


 


রাজ্যের প্রতিটি বেকার যুবক - যুবতীদের নতুন চাকরির সুযোগ এসেছে। আবারও আমাদের রাজ্যে নিয়োগ হতে চলেছে বেঞ্চ ক্লার্ক, লোয়ার ডিভিশন ক্লার্ক এবং গ্রুপ-ডি (Group-D)  পদে। সম্প্রতি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছে। এই নিয়োগটি পশ্চিমবঙ্গের শিশু সুরক্ষা ইউনিট (Child Protection Unit)– এ করা হবে। অষ্টম শ্রেনি, মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিক পাশ করলে এখানে আপনি বিভিন্ন পদে আবেদন করার সুযোগ পাবেন। কোন কোন পদে, কোথায় কোথায় নিয়োগ টি হবে এবং কোন পদে কি কি যোগ্যতা দরকার, বয়সসীমা, মোট শূন্যপদ, আবেদন পদ্ধতি সমস্ত নীচে আলোচনা করা হল।




নোটিশ নম্বরঃ 722/DCPU/DARJ/2022

নোটিশ তারিখঃ 19 সেপ্টেম্বর 2022




আবেদনের মাধ্যমঃ অফলাইনের মাধ্যমে আপনাকে আবেদন করতে হবে।



নিয়োগের তথ্য -

(1) পদের নামঃ বেঞ্চ ক্লার্ক (Bench Clerk)

বেতনঃ প্রতিমাসে 13,500 টাকা ।

শিক্ষাগত যোগ্যতাঃ  উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করতে হবে 

মোট শূন্যপদঃ 01


(2) পদের নামঃ লোয়ার ডিভিশন ক্লার্ক (Lower Division Clerk)

বেতনঃ  প্রতিমাসে 13,500 টাকা।

শিক্ষাগত যোগ্যতাঃ মাধ্যমিক পাশ করতে হবে।

মোট শূন্যপদঃ 02

(3) পদের নামঃ অর্ডারলি (Orderly)

বেতনঃ প্রতিমাসে 12,500 টাকা।

শিক্ষাগত যোগ্যতাঃ শুধুমাত্র অষ্টম শ্রেণী পাশ। এক্ষেত্রে প্রার্থী কে অবূ বাংলা কিংবা নেপালি এবং হিন্দি ভাষায় কথা বলতে, লিখতে ও পড়তে জানতে হবে। 

মোট শূন্যপদঃ 07




বয়সসীমা: প্রতিটি চাকরি প্রার্থীর বয়স 21 থেকে 40 বছরের মধ্যে হতে হবে।  তপশিলি জাতি (SC) এবং তপশিলি উপজাতি (ST)  সরকারি নিয়ম অনুযায়ী ছাড় পাবেন।




নিয়োগ পদ্ধতিঃ
(1) বেঞ্চ ক্লার্ক এবং লোয়ার ডিভিশন ক্লার্ক পদের ক্ষেত্রে লিখিত পরীক্ষা হবে। এরপর উত্তীর্ণ প্রার্থীদের নেওয়া হবে কম্পিউটার টেস্ট। সবশেষে নিয়োগ করা হবে।




আবেদন পদ্ধতিঃ
(1) সম্পূর্ণ অফলাইন এর মাধ্যমে আপনাকে আবেদন করতে হবে। 

(2) প্রথমে অফিসিয়াল ওয়েবসাইট থেকে ফর্মটি ডাউনলোড করে নিতে হবে।

(3) ফর্মটি  A4 সাইজের পেপারে প্রিন্ট আউট করতে হবে।

(4) ফর্মটি পূরণ করে প্রয়োজনীয় নথিপত্র সেঁটে দিতে হবে। প্রতিটি নথিতে অবশ্যই সেল্ফ অ্যাটেস্টেড করতে হবে।

(5) সবশেষে আবেদন পত্র ফর্মে দেওয়া নির্দিষ্ট ঠিকানায় নির্দিষ্ট তারিখের মধ্যে স্পিড পোষ্ট অথবা রেজিস্টার্ড পোষ্টের মাধ্যমে পাঠাতে হবে। 




প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট -
সম্পূর্ণ ডিটেলস নোটিশে পেয়ে যাবেন। নীচে দেওয়া লিংক টি ক্লিক করলেই সমস্ত তথ্য পাবেন। এই নোটিশ থেকেই ফর্মটি ডাউনলোড করতে পারবেন।



প্রয়োজনীয় তারিখ-

আবেদন শুরু - 21.09.2022
আবেদন শেষ - 21.10.2022 


Official website -


Official notice -



_______________________________________________

চাকরি সংক্রান্ত আপডেট পেতে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

Telegram group-


Whatsapp group-

Friday, September 30, 2022

ছোট গল্প - ঈশ্বর কেন সৃষ্টি করলো মানুষ || লেখক - অষ্ট দেয়াশী || Short story - Iswar Keno sristi korlo manush || Written by Asto deayshi


 


ঈশ্বর কেন সৃষ্টি করলো মানুষ

    অষ্ট দেয়াশী



ঈশ্বর যখন পৃথিবী সৃষ্টি করলো তখন পৃথিবী শুধু জল আর জল। ঈশ্বর ভাবতে লাগলো ঈশ্বর সৃষ্টি করলাম পৃথিবী কিন্তু শুধু জল হলে চলবো না স্থল ভাগ করতে হবে। তাই তিনি পৃথিবীর তিন ভাগ জল আর একভাগ স্থল সৃষ্টি করলো। 

ঈশ্বর ভাবতে লাগলো স্থল ভাগটি কেমন যেন মরুভূমি। কি করা যায় ভাবছেন ঈশ্বর তাই তিনি উদ্ভিদ দের সৃষ্টি করলেন। উদ্ভিদ তো সৃষ্টি করলেন ঈশ্বর কিন্তু এই উদ্ভিদ কিভাবে বাঁচবে ঈশ্বর কে ভাবিয়ে তুললো তাই তিনি একদিন পশুদের সৃষ্টি করলেন পৃথিবীর বুকে। পশুরা সারা জঙ্গলে ঘুরে বেড়াতে লাগলো। একদিন ঈশ্বর পৃথিবীর বুকে এলেন তিনি ভাবলেন পশুদের বনে বানায় কিন্তু বাকি জায়গা যেন কেমন বেমানান। ঈশ্বর ভাবতে লাগলো কি করা যায়। তাই তার ভাবনা দিয়ে তিনি মানুষ সৃষ্টি করে ফেললেন। কিন্তু তারা বন মানুষ ঘুরে বেড়ায় শিকার করে। এই বন মানুষ দের নিয়ে ও চিন্তায় পড়ে গেলেন তিনি কি ভাবে তার গড়া পৃথিবী সুন্দর হবে। তাই ধীরে ধীরে বন মানুষ গুলো কে মানুষের পরিনত করলেন। তবুও ঈশ্বরের চিন্তার আর শেষ নেই। কিভাবে তার গড়া পৃথিবী সুন্দর হবে দিনরাত তাকে ভাবিয়ে তোলে। তাই তিনি মানুষ কে ঘর বাঁধার বুদ্ধি দিলেন। মানুষ বুদ্ধি করে ঘর বাঁধা শুরু করে দিলেন। ঈশ্বর ভাবতে লাগলো ঘর তো ওদের বাঁধা হলো কিন্তু খাবে কি ওরা তাই তিনি পৃথিবীর বুকে শস্য উৎপাদন করার বুদ্ধি দিলেন। মানুষ চাষ করার বুদ্ধি দিলেন। ঈশ্বর ভাবতে লাগলো কিন্তু ওরা শস্য রাখবে কোথায় জায়গা দরকার তাই তিনি পৃথিবীর বুকে নানা রকম জিনিস করার কারিগরী শিক্ষা দিলেন। একের পর এক বুদ্ধি ঈশ্বর দিলেন মানুষ কে। মানুষ বুদ্ধিমান হয়েই ভাবতে লাগলো আমি যা করেছি তা অন্য কে দেবো কেন❓ এই কথা যেদিন থেকে মানুষের মধ্যে এই ভাবনা উদয় হলো সেদিন থেকে মানুষের মধ্যে ভাগ হয়ে গেলো। প্রথমে ছিলো একটি জাতি পরে তারা নানা জাতিতে পরিনত হলো। তার পর থেকে শুরু হয়ে গেলো লড়াই। ঈশ্বর ভাবতে লাগলো তার গড়া পৃথিবী একি অবস্থা । ঈশ্বরকে দিনের পর দিন ভাবিয়ে তুললো কি করবেন তিনি প্রতি দিন ঘটে যাচ্ছে পৃথিবীর বুকে নানা ঘটনা। কিভাবে এর প্রতিকার করা যায়। আমি তো সৃষ্টি করলাম মানুষ কিন্তু মানুষ এ কি করছে নিজেদের মধ্যে। ঈশ্বর নিজে না এসে বিভিন্ন ধর্মসম্প্রদায়ের মধ্যে একজন করে জ্ঞ্যানী মানব মানবিকা কে পাঠিয়ে দিলেন ঈশ্বর রূপে। তারা পৃথিবীর বুকে এসে মানব প্রেমের বানী প্রচার করলেন। যুগে যুগে তারা এলেন মানুষ রূপে নানা বানী নিয়ে। 

সব ধর্মের জ্ঞ্যানী মানুষের একটাই কথা মানব প্রেম। কাউকে মেরে ভয় দেখিয়ে গায়ের জোরে কখনো ঈশ্বরকে লাভ করা যায় না। আজ যা তোমার এক নিমিষেই সব শেষ করে দিতে পারেন তিনি। ভবের ঘরে এসে এমন কিছু করো যাতে যুগে যুগে তোমাকে মনে রাখে মানব। আজ যা তোমার বলে ভাবছো তুমি কালতো ওটা অন্য জনের ছিল। এই পৃথিবীতে তোমার বলে কিছু নেই সব তার শুধু মায়ার খেলা ছাড়া আর কিছু নয়। ঈশ্বর সৃষ্টি করেছে তোমায় সুন্দর পৃথিবী কে গড়ে তোলার জন্য।

ছোট গল্প - বাতাসে বারুদের গন্ধ || লেখক - সামসুজ জামান || Short story - Batase baruder gondho || Written by Samsuz Zaman


 


বাতাসে বারুদের গন্ধ

          সামসুজ জামান



আমার পাগল সুবর্ণ, বাতাসে বারুদের গন্ধ ভেসে আসে। আমি ঘুমের মাঝে আতকে উঠি। এমন তো হবার কথা নয়। এই ঘরে আমি ছাড়া দ্বিতীয় প্রাণী নেই তাহলে কি বিদ্যুৎ বিভ্রাট হল? বিছানা ছেড়ে সারাঘর ঘুরে বেড়াই। সুইচ অন করি দুটো ঘরেরই। ডাইনিং স্পেসের আলো জ্বালি। বাথরুমে পরীক্ষা করে দেখি বিদ্যুতের পোড়া গন্ধ ওখানে তো নয়? তাহলে এই পোড়া গন্ধ রোজ রোজ আসে কেন আসে কেন? আর আসেই বা কোথা থেকে?

আসলে সুবর্ণ জানো, আমি অনেক চিকিৎসা করিয়েছি। তোমার অদৃশ্য উপস্থিতি আমার সারা ঘরে ছড়ানো। এ ঘরের প্রত্যেকটা অনুতে পরমাণু তে তুমি ঘুরে বেড়াও সুবর্ণ। তুমি কি আমার কাছে থাকো? দেখো, আমি তো এত চিকিৎসা করালাম। কতজন আমায় পরামর্শ দিলেন মনোবিদ এর পরামর্শ নিতে। তাই শেষ পর্যন্ত আমি তো ডক্টর অনিল চ্যাটার্জীর কাছেও ছুটে গেলাম। তাঁর মত সুপ্রসিদ্ধ মনোবিদ পাওয়া খুব দুষ্কর ব্যাপার। তিনিও তো আমার সাথে কথা বললেন। আমার বাড়ির লোকেদের তিনিতো জানিয়েছেন যে আমি কোন অসুস্থ অবস্থায়ই নেই। 

কিন্তু জানো সুবর্ণ, ঘরের মধ্যে আমি যখনই থাকি তখন আমি শুধু তোমারই ছায়া দেখি। চোখটা একটু বন্ধ করলেও আজও আমি প্রতি মুহূর্তে তোমার অস্তিত্ব টের পাই। বিছানায় মাঝে মাঝে হাঁতড়ে দেখি আমার মন তো বলে পরিষ্কার তুমি আমার পাশে শুয়ে আছো। কিন্তু বিশ্বাস করো সুবর্ণ, তৌঋঋৎঋআমি অন্ধকারে তোমাকে স্পর্শ করার জন্য হাত পর্যন্ত বাড়াই। কিন্তু কিছুই খুঁজে পাইনা। সুবর্ণ, আমার চোখ ফেটে জল আসে। আমি একথা কাকে কিভাবে বলব বলো তো? তুমি কি আমায় একটু বোঝো না? তুমি কি এখনো সেই অবিশ্বাস মনের মধ্যে ভরে রেখে দিয়েছে সুবর্ণ? আমি কি করলে বাঁচব বলতো একটু সুস্থ হয়ে?

এর মানে কিন্তু অপব্যাখ্যা করোনা। এর মানে আমি এটা বোঝাতে চাইনি যে তোমাকে আমি ভুলতে চাইছি। তোমাকে ভুলে আমি বাঁচবো কিভাবে বলতো? তুমি সেদিন তো সম্পূর্ণ অভিমান নিয়ে চলে গেলে আমার কাছ থেকে। তুমি কি সত্যিই জানো না. আমি তোমায় কতখানি ভালবাসতাম? সুবর্ণ, যেদিন কলেজে নবীনবরণে তোমায় প্রথম দেখেছিলাম সেদিনই তো আমি জানতে পারলাম যে তুমি আমার প্রতি কতখানি আকৃষ্ট ছিলে? যখন আমি ব্যাপারটা বুঝতে পারলাম আমি মনে করার চেষ্টা করলাম আমি কি তোমায় এর আগে কোনদিন কলেজের ক্যান্টিনে অথবা ছাত্রসংসদ হলে দেখেছি? আমার মন বলল আমি দেখিনি। কিন্তু আমি অবাক হলাম, দেখলাম. তুমি আমার নাড়ি-নক্ষত্র, প্রতিটা চালচলন অদ্ভুতভাবে যেন মুখস্ত করে নিয়েছো। আমি অবাক হলাম। লজ্জা পেলাম। কিন্তু অবাক হলাম এইজন্যে যে একটা ছেলে আমার মত এরকম একটা মেয়েকে এভাবে ভালোবেসেছে? সেই দিনই আমি নিজেকে তোমার প্রতি সমর্পণ না করে পারিনি সুবর্ণ। তবুও পরের দিন তুমি যখন ক্যান্টিনের টেবিলের নিচে দিয়ে আমার হাতটা ধরার জন্য হাতটা বাড়িয়ে ছিলে আমি নিজেকে সরিয়ে নিয়েছিলাম সে তো একটা নারীর সাধারণ লজ্জায়। আবার তুমি নিজেকে কী অদ্ভুতভাবে সংবরণ করে নিয়ে ক্ষমা চেয়েছিলে যখন বারবার, তখন আমার নিজেকেই ধিক্কার দিতে ইচ্ছে যাচ্ছিল। আমার মনে হচ্ছিল কি জানো, মনে হচ্ছিল হাত ধরে নয়, তোমাকে জড়িয়ে ধরে তোমার কপালে একটা আলতো চুমু দিলেও আমার মনের আশা এক কণাও মিটবে না। সুবর্ণ, তুমি বিশ্বাস করো, আমার ইচ্ছেটা আমার মনের ভেতরটা কুড়ে ফেললেও আমি তা পারিনি, কারণ আমি একেবারেই সেই মানসিকতার ছিলাম না। শুধু সেই মনোভাবের জন্য আমি নিজেকে অনেক কষ্ট করে ধরে রেখেছিলাম।কিন্তু আমার মন প্রাণ. আমার শরীরের প্রত্যেকটা অনু-পরমানু তোমাকে সেই দিনই আমি দিয়ে দিয়েছিলাম সুবর্ণ!

সুবর্ণ, এই দেখো তোমার যে ছবিটা আমার বেডরুমের শো কেসে উপস্থিত থেকে সব সময় আমার সাথে কথা বলে, তাকে নিয়ে আমি যে বুকের মধ্যে চেপে রেখেছি। তুমি বুঝতে পারছ সুবর্ণ, তুমি এই অনুভূতি টের পাচ্ছো? আমার উষ্ণতা তোমাকে কি একটুও ছুঁতে পারছে না সুবর্ণ? তুমি সত্যি বলতো, তুমি আছো কিনা আমার পাশে পাশে? আর তুমি যদি দুষ্টুমি করে বল যে, আমার পাশে নেই, সে কথাটা কি আমাকে বিশ্বাস করতে হবে? পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সত্যবাদিও যদি আমার পাশে দাঁড়িয়ে এই কথা বলে তা হলেও মেনে নেব না। আসলে তারা দেখবে কিভাবে বল তো? তোমাকে তো আমি রেখে দিয়েছি আমার হৃদয়ের কন্দরে কন্দরে। সেই অন্তস্থলের গোপন কথাটা জেনে নেয় কার সাধ্য? তোমার মনে পড়ে সুবর্ণ যেদিন তুমি সত্যিই আমায় ছাড়লে না, জোর করে একটা গান গাইতে বাধ্য করালে, সেদিন সকলের উপস্থিতিতে আমি তোমার উদ্দেশ্যেই গেয়েছিলাম রবীন্দ্র নাথের সেই ভালবাসার গান -- 'ও যে মানে না মানা। আঁখি ফিরাইলে বলে না না না'। তুমি সেদিন পড়তে পেরে ছিলে তো সুবর্ণ আমার মনের না বলা বাণীর সেই অনুরণন? তোমাকে আপ্লুত করতে পেরেছিল তো সেদিনের আমার মনের অব্যক্ত হাহাকার? আমার ভিতরটা জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া সেই যন্ত্রণার অনুভূতি ছুঁতে পেরেছিল তোমায়?

সুবর্ণ, যেদিন তুমি সেনাবাহিনীতে যোগদানের খবর দিয়ে আমার কোলের কাছে নামিয়ে দিলে একরাশ লাল গোলাপ, সেদিন আমি মেলাতে পারছিলাম না তোমার দুটো অনুভূতিকে। একজন সেনা হিসেবে ইউনিফর্মে তোমার ছবির কল্পনা করে আমার মনে হচ্ছিল যে এটা আমাদের ভালবাসার পথের বাধা হয়ে দাঁড়াবে কিনা! তখনই লাল গোলাপ গুলো যেন অন্য অনুভূতি জাগিয়ে তুলে আমাকে আবার ভিজিয়ে দিচ্ছিল মনের ভেতর থেকে। আমি ভাবছিলাম গোলাপের পাপড়ির মত তোমার মন সত্যিই কি পারবে তোমাকে তোমার কর্মস্থলে যোগ্য উচ্চতায় পৌঁছে দিতে? আমি আসলে নানাভাবেই বুঝতে পারছিলাম তোমার মনটা একেবারেই ফুলের পাপড়ির মত নরম।

তারপর তুমি আমাকে অনেক কাঁদিয়ে সেদিন চলে গেলে। গতবছরের প্রায় এই সময়। আজকের এই সেনা দিবসের হিসেবে সঠিকভাবে বললে ১১ মাস ২২ দিন। তোমার পোস্টিং হলো ভারত-চীন সীমান্তে। সুবর্ণ, আমরা কি এর আগে জানতাম এভাবে ভারত চীন সীমান্তের এত খুঁটিনাটি? তুমি জানালে সীমান্তের কাছে দৌলত বেগের কথা। তুমি জানালে আলভি সামরিক ঘাঁটির কথা। আমরা তোমার কাছ থেকেই জানতে পারলাম যে লাদাখের গাল ওয়ান সীমান্ত চিহ্নিতকরণ সংক্রান্ত লাইন অফ কন্ট্রোল এর পাশাপাশি দু শো পঞ্চাণ্ন কিলোমিটার সড়ক বানানোর কথা। সুবর্ণ তুমি তোমার কাজের অবসরে যখন আমায় জানাতে যে এই সড়ক বানানোর ফলে লেহ থেকে দৌলতবেগ পৌঁছতে আগে দুদিন লাগতো কিন্তু এখন নতুন রাস্তা ব্যবহারের ফলে মাত্র ছয় ঘন্টায় পৌঁছানো যাবে, তখন একজন ভারতীয় হিসেবে আমাদের কত গর্ব হতো। আর তুমি সেই সীমান্ত প্রদেশে তোমার একনিষ্ঠ সেবা দিয়ে আমাদের রাতের নিদ্রাকে কেমন অটুট রেখেছ! 

কিন্তু সেদিন হঠাৎই তোমার সুরের মধ্যে কেমন চঞ্চলতা ছিল। তুমি সেদিন হঠাৎই বললে আকসাই সীমান্ত চীন নিয়ন্ত্রিত হিসেবেই চিহ্নিত হয়ে আছে অথচ এটা ভারতের সীমান্ত থেকে মাত্র নয় কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। আর ওখানেই কেমন যেন একটু বেশি মাত্রায় উত্তেজনার ভাব। চীন এবং ভারত দুপক্ষের সেনাদের মধ্যেই অতিরিক্ত সতর্কতামূলক প্রস্তুতি চলছে। সেদিন তোমার কথাবার্তা শুনে বুঝতে পারছিলাম সুবর্ণ, তুমি অনেক কিছু গোপন করে যাচ্ছ। তোমার উত্তেজনা তুমি হয়তো ঠিক চেপে রাখতে পারছিলে না। আমি তোমার কথা বলার ছন্দের মধ্যে খুঁজে পাচ্ছিলাম একটা লালবাতির সতর্কতার মতো চিহ্ন। আমার চোখ থেকে জল ঝরে পড়লেও আমি গলার মধ্যে উত্তেজনা আনতে দিচ্ছিলাম না তবুও বোধহয় তুমি ধরে ফেললে সে উত্তেজনা। তুমি আমাকে বোঝানোর চেষ্টা করলে যে ভারতের হাতে অতিরিক্ত আধুনিক এবং উন্নত মানের একশ চারটে ক্ষেপণাস্ত্র আছে। আরো কত কি কথাবার্তা তুমি বলে যাচ্ছিলে কিন্তু আমি বোধহয় নিজেকে হারিয়ে ফেলেছিলাম। ককিছুক্ষণ পর তুমি হঠাৎ আমাকে তোমার দেওয়া সেই গোপন নাম ধরে ডেকে উঠলে। সুবর্ণ, কী ছিল তোমার গলায়? আমি আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলাম না। সেদিন আমি হাউমাউ করে কেঁদে ফেলেছিলাম। তারপর তুমি আমায় কত আদর করলে। আমার সেল ফোনের মধ্যে সেদিন সুবর্ণ তোমার প্রত্যক্ষ উপস্থিতি পুরোমাত্রায় টের পেয়েছিলাম। আমি জানিনা এমন অবাস্তব ঘটনা মানুষের জীবনে কখনো ঘটে কিনা! লোকে হয়তো বলবে এটা অলৌকিক কিন্তু আমি বুঝতে পারছিলাম -- সুবর্ণ, তুমি ষোলআনা আবির্ভূত হয়ে আমাকে সেদিন আদরে আদরে ভরিয়ে দিয়েছিলে। আমার চোখের জল তুমিই তো মুছিয়ে দিয়েছিল সেদিন তোমার দুটো হাত দিয়ে। সত্যি করে বলতো সুবর্ণ তুমি কি অস্বীকার করতে পারো সেদিনের সেই উপস্থিতির কথা?

 আর পনেরোই জুনের কথা কি আর বলব বল তোমায়? টিভির সুইচ অন করলাম। টিভি চ্যানেলে সংবাদ শুনতে গিয়ে আঁতকে উঠলাম। তখন বড় বড় অক্ষরে দেখানো হচ্ছিল ভারত চীন সীমান্তের সেই আকসাই-এ ভারতীয় সেনাবাহিনীর পনেরো জনের শহীদ হওয়ার খবর! জানো সুবর্ণ, আমি তখন ছুটে গিয়ে শোকেস থেকে তোমার ছবিটা তুলে আনতে গিয়েই হঠাৎ হাত ফস্কে ছবিটা পড়ে গেল একেবারে মেঝেতে। আর সঙ্গে সঙ্গে ভেঙে চুরমার হয়ে গেল। জানো, আমি তখন উত্তেজনায় কাঁপছিলাম থর থর, থর থর করে। আর তখনই সেলফোনটা বেজে উঠলো। তাকিয়ে দেখি তোমার মায়ের ফোন। মা ফোন করে কোনো কথা বলতে পারছেন না শুধু কাঁদছেন। হাউমাউ করে শুধু হাহাকার ধ্বনিই শোনা যাচ্ছে,কোন কথা নয়। মায়ের এভাবে কান্নায় ভেঙে পড়ার কারণটা তখন আমার কাছে আর বিন্দুমাত্র অস্পষ্ট নয়। 

সুবর্ণ আজ তো সেনা দিবস। দেশজুড়ে সেনাদের জয়গান গাওয়া হচ্ছে। কত বড় বড় ভাষণ দেয়া হচ্ছে সেনাদের জয়ধ্বনী দিয়ে। দেশের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী সেনাদের উদ্বুদ্ধ করে কত ভালো-মন্দ স্তোক বাক্য দিচ্ছেন। কিন্তু সুবর্ণ এসবের বাইরে তুমি শুনতে পাচ্ছ কি আজকের দিনে মায়ের প্রাণ ছেড়া সেই আর্তনাদের শব্দ? সুবর্ণ, তুমি দেখতে পাচ্ছো, এই হতভাগিনীর বুক ফাটা আফসোসের আর হা-হুতাশ এর ছবিটা!

জানো সুবর্ণ, আমি পরদিন মায়ের কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম। মা আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে কী যে বলেছিলেন সে কথা আমি বলে বোঝাতে পারবো না তবে তিনি আমায় অনুমতি দিয়েছেন যখনই আমার ইচ্ছে আমি তার কাছে যেতে পারি। আর সেই দিনই আমি আমার পরবর্তী সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছি সুবর্ণ। 

ইদানিং একটা সমস্যা হয়েছে আমার। জানো. সব সময় আমি বাতাসে বারুদের গন্ধ পাই। কিছুতেই সে গন্ধ আমায় ছাড়ে না। আমার শয়নে,স্বপনে, জাগরণে সেই বারুদের গন্ধ আমার ভিতরের সবকিছু কুড়ে কুড়ে খেয়ে নিতে চায় সুবর্ণ। আর ইদানিং আমার মুখের ভাষা হারিয়ে গেছে। কথা বলতে আমার একেবারেই ইচ্ছে করে না। আজকে তোমায় লিখে জানাচ্ছি তাই এই খোলা চিঠিতে। আমার মনের জমানো অনেক দুঃখ বেদনার কাহিনী --- খুব পরম ভক্ত যেমনভাবে ঠাকুর দেবতার কাছে নিজের মনের পরম শ্রদ্ধা বিশ্বাসের অঞ্জলি দেয়, ঠিক সেইরকম ভাবে তোমাকে উজাড় করে দিলাম সুবর্ণ আমার মনের না বলা কত কথা এই খোলা চিঠিতে। আমার এই খোলা চিঠির প্রত্যেকটা কথা ভগবান কি তোমার কাছে পৌঁছে দেবে না? দেবে, দেবে, নিশ্চয়ই দেবে। এটুকু পবিত্র বিশ্বাস আমার অন্তত আছেই। আর আজ এই সেনা দিবসে চোখের জলে চিঠিখানি লিখে তোমাকে আর একবার প্রণাম করে আমি পাকাপাকিভাবে মায়ের কাছে চলে যাচ্ছি ; তুমি যেন আমায় ফিরিয়ে দিও না সুবর্ণ!

চোখ ভরা জল আর একবুক ভালবাসার হা-পিত্যেশ নিয়ে অধীর অপেক্ষায় রইলাম তোমার জন্যে। 

Thursday, September 29, 2022

রাজ্যে ICDS এ অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী ও সহায়িকা পদে নিয়োগ || WB ANGANWADI Helper, Worker Recruitment 2022 || ICDS Recruitment 2022 || ICDS Worker New Recruitment in Hooghly


 

পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের চাকরি প্রার্থীদের জন্য আবার নতুন সুখবর। ICDS তথা অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী ও সহায়িকা পদে নতুন নিয়োগ হতে চলেছে। ইতিমধ্যেই আবেদন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আপনি যদি মাধ্যমিক পাশ করে থাকেন তাহলে আপনার জন্য এটা একটা বড় সুযোগ। নিয়োগ টি হবে পশ্চিমবঙ্গের কিছু ব্লকের শিশু বিকাশ সেবা প্রকল্পের অধীনে। চাকরি সংক্রান্ত সম্পূর্ণ বিবরণ নীচে দেওয়া হল।





পদের নাম: অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী ও অঙ্গনওয়াড়ি সহায়িকা।


মোট শূন্য পদ: 435টি।

নিয়োগ হবে হুগলি জেলায়। অফিসিয়াল ওয়েবসাইট নীচে দেওয়া আছে, সেখান থেকেই অনলাইন এ ফিলাপ করে নিন।




শিক্ষাগত যোগ্যতা: মাধ্যমিক পাশ করে থাকলেই আপনি এখানে আবেদন করার সুযোগ পাবেন।



বয়স: 18 থেকে 45 বছর। তবে এখানে 65 বছর পর্যন্ত আপনি চাকরি করার সুযোগ পাবেন।



নিয়োগ পদ্ধতি:

এই পদের জন্য 50 নম্বরের লিখিত এবং মৌখিক পরীক্ষা দিতে হবে।


*লিখিত পরীক্ষা হবে 35 নম্বরের-


গণিত – 10 নম্বর

ইংরেজি – 10 নম্বর

জনস্বাস্থ্য এবং সমাজে নারীর স্থান এবং মর্যাদা – 10 নম্বর

সাধারণ জ্ঞান – 5 নম্বর

*মৌখিক পরীক্ষা হবে 5 নম্বরের।


(3) 5 বছরের অভিজ্ঞতার ঊর্ধ্বে প্রতি 3 বছরের জন্য 5 নম্বর এই ভিত্তিতে সর্বাধিক 10 নম্বর।


তারিখ: 

আবেদন শুরু 15.09.2022 তারিখ পর্যন্ত। আবেদন চলবে 15.10.2022 তারিখ পর্যন্ত।



গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট:


1. বয়সের প্রমাণপত্র (Self Attested)।


2. বাসিন্দা প্রমাণপত্র (Self Attested)।


3. কাস্ট সার্টিফিকেট ।


4. শিক্ষাগত যোগ্যতার সার্টিফিকেট।


5. পাসপোর্ট সাইজের ফটো 3 কপি।


6. ভোটার কার্ড






Apply now:

Click here 🔴


OFFICIAL WEBSITE: 


Click here 🔴



______________________________________________


চাকরি সংক্রান্ত আপডেট পেতে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন


Telegram group-


Please click here


Whatsapp group-


Please click here



Tuesday, September 27, 2022

উপন্যাস - পদ্মাবধূ || বিশ্বনাথ দাস || Padmabadhu by Biswanath Das || Fiction - Padmabadhu Part -20




সাত 


শ্যামলীদি ও আমি ময়নাকে দেখাশুনা করে বাড়ী ফিরছি । শ্যামলীদি গুম হয়ে বসে আছে । আমিও ট্যাক্সির জানালা পথে তাকিয়ে শ্যামলীদির ময়নার প্রতি স্নেহ ভালোবাসার কথা ভাবছি । দেখেছি ময়নাকে কাছে পেয়ে শ্যামলীদি গভীর ভালোবসায় তাকে বুকে জড়িয়ে ধরেছে , যেন তারও মধ্যে মাতৃত্ব উদ্বেল হয়ে উঠেছে । সেই সময় আমার মনে হয়েছিল শ্যামলীদি যেন তার নিরুদিষ্টা মেয়েকে ফিরে পেয়েছে । মনে মনে কি যেন বিড় বিড় করে বলার সময় এই ফুটফুটে মেয়েটির মা হবার অধিকার চেয়েছিলো । এই রূপ কথা চিন্তা করার পর যেন বাহ্যজ্ঞান লোপ পেয়েছিলো ।

 ওর অবস্থা প্রত্যক্ষ করে এক সময় শ্যামলীদিকে বলে উঠলাম , এই শ্বাসরূদ্ধকর বিষাক্ত পরিবেশের মধ্যে থেকে কি কোন দিন মুক্তি পাবো না শ্যামলীদি ?

 না । গম্ভীর গলায় বলল শ্যামলীদি । যদিও কদাচিৎ পেয়ে থাকিস , এই মেকানিক্যাল রং করা সভ্য সমাজ আমাদের মতো পতিতাদের নারীত্বের মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করবে না , নোনা ধরা দেওয়ালের মতো আমাদের জীবন ধীরে ধীরে এইভাবে ধসে যাবে । এই ড্রাইভার ট্যাক্সি রূকো ?

 ট্যাক্সি দাঁড়িয়ে যেতে শ্যামলীদি বলল , পদ্মা দেখতো , তোর রন্টুদাকে মনে হচ্ছে না? 

রন্টু নামটা শুনতেই শরীর যেন ছ্যাঁক করে উঠল । বিস্ময় চোখে তাকিয়ে দেখলাম ও তো রন্টুদা । 

শোন্ পদ্মা , তুই বাড়ী যা , আমি একটু পরে যাচ্ছি । আমার হিতৈষী বন্ধুকে যখন অনেকদিন পর দেখা পেয়েছি , কোথায় থাকে কি করে একটু খোঁজ নেওয়া দরকার । শ্যামলীদিকে একা যেতে বাধা দিলাম । সে আমার বাধা না শুনে রন্টুকে অনুসরণ করে চলল । আমি নিরুপায় হয়ে বাড়ি মুখে রওনা হলাম । 

শ্যামলীদি যখন বাড়ী ফিরলো , অনেক বেলা গড়িয়ে গেছে । সূৰ্য্য তখন মাথার উপরে । তার শিমূল ফুলের মতো রাঙ্গা মুখ দেখে বুঝতে পারলাম নিশ্চয় কোন কাণ্ড ঘটেছে নইলে মুখটা এতোখানি রাঙা হয়ে উঠবে কেন ।

 শ্যামলীদি একরকম শক্ত বাহু দিয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে বলল , এবার আমি মরীয়া হলাম পদ্মা । আমার উপকারী বন্ধুর ঠিকানা দেখে এলাম । আর তার রেহাই নেই । আজ কালের মধ্যে শিবজীদাকে খবর দিতে হবে । বিলম্ব করা চলবে না নইলে শিকার হাত ছাড়া হবে । ওর কথা শুনে কিছুক্ষণ নীরব থাকার পর ঘাড় নাড়লাম । শ্যামলীদি আমার মত পেয়ে হাসি খুশি মনে ভেতরে প্রবেশ করল ।  

সেদিন সন্ধ্যায় শিবাজীদার আড্ডায় পৌঁছলাম । চারদিকে জমাট অন্ধকার ঘনীভূত হয়েছে । তারই বুক চিরে এগিয় চললাম শিবাজীদার আড্ডা বের করতে । বেগ পেতে হল না আড্ডায় পৌঁছতে । দুজন ষণ্ডা মার্কা লোক আমাদের কাছে এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করল , আমরা কাকে চাইছি ?

 শ্যামলীদি বলল , শিবাজীদার কথা । ওরা শিবাজীদার কথা শুনে আমাদেরকে তার নিকট হাজির করল । বেশ সুন্দর ঘরখানি । মনে হল ঘরটা যেন একটা ছোট্ট সিনেমা হল । সারি সারি চেয়ার পাতা । নানা রকম আলোতে এনে দিয়ছে ঘরের সৌন্দর্যকে । আমরা উভয়েই তাকিয়ে দেখছিলাম । শিবাজীদার কথায় ফিরে পেলাম পূর্বের অবস্থাকে । 

তিনি বলললেন , বোল কি জরুরতে আ গয়ে ?

 শ্যামলীদি সংক্ষেপে রন্টুর নিয়ে কথা বলল । কোথায় গেলে পাওয়া যাবে তার ঠিকানা দিলো ।

শিবাজীদা শ্যামলীদির কথা শুনে চোখ দুটোকে বড় করে বসলেন - চিন্তা মত্ কর বহিন , কব তোদের পাশ হাজির করতে হোবে ? 

আমাদের কাছে হাজির করতে হবে না দাদা । তোমাদের আড্ডাতে ওকে এনে রাখবে ।

Tuesday, September 13, 2022

ছোট গল্প - ইন্দুবালা হত্যা রহস্য || লেখক - আশিস চক্রবর্তী || Short story - Indubala Rohosyo || Written by Ashis Chakrabarti


 

ইন্দুবালা হত্যা রহস্য

আশিস চক্রবর্তী


আমার নাম হৃষিকেশ রক্ষিত ।আমি একজন রিটায়ার্ড সরকারী গোয়েন্দা। দীর্ঘ তিরিশ বছর লাল বাজার হেড কোয়ার্টারে ক্রাইম ব্রাঞ্চের স্পেশ্যাল অফিসার হিসেবে নিযুক্ত থাকা কালীন, বিশেষ কিছু মার্ডার কেস এর সমাধান করার পর, ঘটনা গুলি ডাইরী তে লিখে রাখি। আজ যে ঘটনা আপনাদের শোনাতে যাচ্ছি সেটা হলো ইন্দুবালা হত্যা রহস্য। ঘটনাটি ঘটেছিল মৌলালীর বিখ্যাত স্বর্ণ ব্যবসায়ী জয়চাঁদ বড়াল এর বাড়ি। হত্যার খবরটা পাওয়ার পর , আমার সহকারী ইন্সপেক্টর পঞ্চানন সিকদার কে সঙ্গে নিয়ে ঘটনা স্থলে পৌঁছে গিয়ে দেখি বাড়ির পরিবেশ একে বারে থমথমে । বাড়ির মধ্যে প্রবেশ করতেই প্রথমে যেটা আমার চোখে পড়ল সেটা হল ডাইনিং এর দেয়ালে টাঙানো একটা গোপালের ছবি। বিরাট বাড়ির , তিন তলার ঠাকুর ঘরের সামনে সকলে ভিড় করে দাঁড়িয়ে রয়েছে । ঠাকুর ঘরের ভেতর মুখ থুবড়ে পরে রয়েছে জয়চাঁদ বড়াল এর মা ইন্দুবালা বড়াল। মুখের ভেতর থেকে সাদা ফেনা বেরিয়ে মেঝেতে গড়িয়েছে খানিকটা। দেখলেই বোঝা যায় ইন্দুবালা দেবী কে বিষ দেয়া হয়েছে। ঠাকুর ঘরের পূজার উপকরণ সব ওলট পালট হয়ে আছে। অর্থাৎ মৃত্যুর আগে ইন্দুবালা দেবী ছটপট করেছেন খানিক ক্ষন। ডেডবডি ঠান্ডা। মৃত্যু অনেক আগেই হয়েছে। ঘড়িতে এখন সাড়ে বারোটা । সে হিসেবে মৃত্যুর সময় অনুমান সকাল আটটা থেকে নটার মধ্যে। লাশ এবং সমস্ত ঠাকুর ঘর খুঁটিয়ে দেখার পর আমি পঞ্চানন কে তদন্তের জন্য বিশেষ কিছু নির্দেশ যেমন ফটোগ্রাফার এবং ফ্রিঙ্গারপ্রিন্ট এক্সপার্টদের আনানোর নির্দেশ দিয়ে নিজের কাজে লেগে পড়লাম। প্রথমেই বাড়ির সকলের সঙ্গে কথা বলার প্রয়োজন। তাই উপস্থিত সকলের উদ্দেশ্যে বললাম , " লাশ প্রথমে কে দেখেছে ? "

একজন মাঝ বয়স্ক মহিলা সামনে এসে জবাব দিল , " আমি সাহেব ! " 

" তোমার নাম কি ? "

" বীনা স্যার ! আমি এ বাড়ির কাজের লোক। "

" ও আচ্ছা ! কত বছর এখানে কাজ করছ ? "

" আজ্ঞে দশ বছর হবে !"

" তোমার কাজের সময় কতক্ষণ ? " 

" আমি সকাল ছটার মধ্যে এ বাড়িতে আসি । তারপর সারাদিন এ বাড়ির কাজ কর্ম করে বিকেলে বাড়ি ফিরে যায়! "

" তোমার বাড়ি কোথায় ? "

" হঠাৎ কলোনী। " 

" কে কে আছে বাড়িতে ! "

" আমার স্বামী আর সাত বছরের একটি মেয়ে !" 

 "স্বামী কি করে ? "

" আজ্ঞে ও কলের মিস্ত্রি !" 

" এবাড়িতে অপরিচিত কাউকে আসতে দেখেছিল এর মধ্যে ? কিংবা বাড়ির আশে পাশে কাউকে ঘোরা ফেরা করতে দেখেছিলে কি ? "

" না সাহেব ! সেরম তো কিছু চোখে পড়েনি ? "

" হুম ! আজকে সকালে ঠাকুর ঘরে এসে তুমি কি দেখেছিলে ? "

" ঘরের কাজ কর্মের সাথে সাথে মাইজীর খেয়াল রাখা ভি আমার কাজ। মাইজী অনেক বেলা হয়ে গেল তবু নীচে নামছে না দেখে আমি ঠাকুর ঘরে দেখতে এসে দেখলাম মাইজী পড়ে আছে। তখন দাদা বাবু কে ডেকে দেখায়। দাদা বাবু মাইজীর গায়ে হাত দিয়ে বললেন পুলিশে খবর দিতে । এ অন্য রকম মনে হচ্ছে ! "

" দাদা বাবু কে ! "

একজন ভদ্র লোক সামনে এগিয়ে এসে বললেন , " আজ্ঞে আমি ! আমি এ বাড়িতে ভাড়া থাকি। আমি একজন ডাক্তার ! দেখেই বোঝা যাচ্ছে ওঁনাকে বিষ দিয়ে হত্যা করা হয়েছে। তাই আমি অন্য কেউ লাশের গায়ে হাত দেবার আগে পুলিশে খবর দেয়ার পরামর্শ করি। "

" আপনি কি করে বুঝলেন হত্যা করা হয়েছে ? এটা সুই সাইড কেসও তো হতে পারে ? "

" আমি পেশায় একজন ডাক্তার । ডেড বডি দেখেই আন্দাজ করতে পারি যে হত্যা না সুই সাইড । সুই সাইড করতে নেমে কেউ নিশ্চয় স্নান করে পূজার ঘরে পূজা দিতে বসবে না। আর তাছাড়া ইন্দুবালা দেবী কে আমি কিছুটা চিনি। কাল রাত্রি অব্দি ওঁর সাথে কথা বলেছি । একবারও মনে হয়নি যে ওঁ আত্মহত্যা করতে পারেন। "

" হুম ! আপনার কথা কে সম্মান জানিয়েই বলছি , হয়তো ওঁ কাউকে বুঝতে না দিয়েই আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলেন । তাই বাড়ির একেবারে নিরিবিলি স্থানে উঠে প্রত্যেক দিনের কাজ কর্ম সেরে ঈশ্বরের কাছে মান অভিমান জানিয়ে বিষ পান করলেন । যাক গে সে সব অনুমানের কথা। ক্রমশ প্রকাশ্যে আসবে এটা খুন না আত্মহত্যা ! এখন বলুন আপনার নাম ? "

" সুমিত ব্যানার্জী ! "

" আসল বাড়ি কোথায় ? "

" মেদিনীপুর ! "

" এখানে কত দিন আছেন ? " 

" বছর খানেক !" 

" আর কে থাকে আপনার সঙ্গে ? "

" কেউ নয় একা ! আমি ব্যাচেলর ! "

" কোথায় প্র্যাকটিস করেন ? "

" মৌলালীর মোড়ে আমার একটা চেম্বার আছে। " 

" ওকে ! ইন্দুবালা দেবী কি কোনো দিন কোনো শারীরিক সমস্যার কথার কথা আপনাকে জানিয়ে ছিলেন ? "

" বড় রকমের কিছু নয়। সাধারণ জ্বর সর্দি কাশি জন্য আমার কাছে আসতেন। " 

" রেগুলার কোনো ওষুধ কি খেতেন ? "

" যতদূর জানি , না ! "

"ওকে ! আপাতত এই টুকুই । প্রয়োজন পড়লে আরো কিছু কথা জানতে পারি !"

" ওকে অফিসার !এবার আমি কি আমার চেম্বারে যেতে পারি ? "

" আসুন ! কিন্তু আমাকে না জানিয়ে শহরের বাইরে নয় !"

" ওকে ! "

ডাক্তার সুমিত ব্যানার্জী চলে গেলেন। 


এরপর "ইন্দুবালা দেবীর অবর্তমানে এখন এ বাড়ির মালিক কে ? " এই প্রশ্নটা সর্ব সম্মুখেই রাখলাম। 

আমার কথা শেষ হতেই একজন মাঝ বয়স্ক লোক যে এতক্ষণ দূরে দাঁড়িয়ে ছিল , ধীর পায়ে এগিয়ে এসে বললেন , " আজ্ঞে আমার নাম জয় চাঁদ বড়াল। আমি ওঁর বড় ছেলে। " 

" হুম ! এবাড়িতে আর কে কে থাকে ? "

" এঁদের পরিচয় তো আপনি পেয়েইছেন । এছাড়া আমার স্ত্রী লীনা। আর আমার পাঁচ বছরের ছেলে রুপু। আমার ছোট ভাই আর্মিতে চাকরি করে ও খুব একটা এখানে আসে না। লাস্ট এসেছে আজ থেকে মাস চারেক আগে। আর আমার এক পিতৃ মাতৃ হীন দুঃসম্পর্কের ভাগ্নে থাকে ।ওর নাম বিমল !"

" সে কোথায় ? "

" ওর তো ওষুধের কোম্পানি তে সেলস এর কাজ করে । তাই ভোর বেলা বেড়োয়। বাড়ি ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যে হয়। " 

" কোন কোম্পানি ? "

" লং লাইফ কোম্পানি !"  

" ওকে ! ও ফিরলে ওর সঙ্গে একবার কথা বলবো ! আপনার বাড়ি থেকে কিছু চুরি গিয়েছে কিনা লক্ষ্য করেছেন ? "

" উঁহু ! সেরম কিছু তো এখনো টের পায়নি। এরম ঘটনা ঘটলে কারো না কারো তো চোখে পড়ত ! "

" আপনার মায়ের মৃত্যুর জন্য কি , কাউকে সন্দেহ হয় ? "

" না স্যার ! সেরম কাউকে তো এখন মনে পড়ছে না !" 

" আপনারা বাদে ইন্দুবালা দেবীর কেউ নিকট আত্মীয় আছে ? "

" না স্যার ! "

" ইন্দুবালা দেবী কি কোনো উইল করেছিলেন ? "

" হ্যাঁ ! মাস খানেক আগে একবার আচমকাই আমাদের বংশের পুরোনো উকিল প্রকাশ চন্দ্র দত্ত কে ডাকিয়ে একটা উইল করেন ।" 

" ও আচ্ছা ! প্রকাশ বাবু কোথায় থাকেন ? "

" ধর্মতলায়!বাস স্ট্যাডের উল্টো দিকের গলিতে ওঁর বাড়ি ! "

" ওকে ! আপনার স্ত্রীর সঙ্গে একবার কথা বলা প্রয়োজন। " 

" ওকে। আমি ডেকে দিচ্ছি। আসলে আমার মায়ের মৃত্যু তে ওই বেশি শক পেয়েছে। কারণ ওর সঙ্গেই মা বেশি কথা বলতো। "

" ওকে ! আমি ওঁকে এমন কথা বলবো না যাতে ওঁ কষ্ট পায়। " 


তারপর খানিক বাদে লীনা দেবী কে সঙ্গে করে উঠে এলেন জয়চাঁদ বড়াল। লীনা দেবী কাপড়ের আঁচলে চোখ মুছতে মুছতে আমার সামনে এসে দাঁড়ালেন। আমি ওঁকে জিজ্ঞাসা করলাম , " কয়েক দিনের মধ্যে ইন্দুবালা দেবীর আচরনে কোনো পরিবর্তন লক্ষ্য করে ছিলেন কি ? যেমন ধরুন খাওয়া দাওয়ায় মন নেই , কোনো দুশ্চিন্তা , অনিদ্রা কিংবা অপরিচিত কারো সঙ্গে দেখা করছেন এই জাতীয় ? "

"না !" খুব অল্প স্বরে জবাব দিলেন লীনা দেবী । 

" আপনি তো ওঁর সব সময়ের সঙ্গী ছিলেন , ওঁর কোনো শত্রু ছিল বলে আপনার মনে হয় ? বা আপনি কাউকে সন্দেহ করেন কি ? "

" ওঁর মতো মানুষের শত্রু থাকবে কি করে ? সকাল সন্ধ্যে ওঁ গোপাল সেবা নিয়েই থাকতেন। বাইরে খুব একটা বেরোতেন না। কারো সঙ্গে আজ অব্দি মুখ তুলে কথাও বলেননি ! ওঁর আবার শত্রু থাকবে কি করে ? আর বাড়ির সকলেই বিশ্বাসী মানুষ । ওঁকে মেরে কারো সুবিধে হবে বলে তো আমার মনে হয় না ! " 

" গত কাল তিনি সারা দিন কি কি করেছেন মনে আছে ? "

" হুম ! তিনি প্রতি দিনের মতো সকাল সকাল স্নান সেরে পুজো দিতে আসেন ঠাকুর ঘরে । তারপর ঘন্টা খানেক পর নীচে নামেন । এরপর সকালের খাবার খান। তারপর আমার সঙ্গে রান্না ঘরে ছিলেন। তারপর দুপুর বেলা পুনরায় গোপাল সেবা দিয়ে দুপুরের খাবার খান। তারপর ঘুমোতে যান। এরপর বিকেল বেলা ছাদে কিছুক্ষন ঘোরা ফেরা করেন। সন্ধ্যে বেলা ফের গোপাল সেবা দিয়ে গীতা পাঠে বসেন। তারপর রাত্রি বেলা খাবার খেয়ে শুতে যান। শুধু কাল বলে না , এই ছিল ওঁর প্রতিদিনের রুটিং। তবে সময় পেলেই গোপালের কাছে যেতেন। গোপাল কে তিনি নিজের সন্তান হিসাবেই মানতেন। " 


" হুম ! এর মানে গোপাল এর পূজার পর তিনি খাদ্য গ্রহণ করতেন। অর্থাৎ আজ সকালে তিনি খাবার খাননি। তাই খাবারের সঙ্গে বিষ মিশিয়ে দেবার কোনো সম্ভাবনাও নেই। এদিকে পূজা অসমাপ্ত । তাই পূজার প্রসাদ গ্রহণ করেছেন সে কথাও বলা যাচ্ছে না। লাশের গায়ে কোনো আঘাতের বা ধ্বস্তা ধ্বস্তির চিহ্নও নেই যে বলা যাবে কেউ জোড় করে বিষ খাইয়ে দিয়েছে । " 


জয়চাঁদ বড়াল ভুরু কুঁচকে জিজ্ঞাসা করলেন , " তাহলে স্যার আমার মা কে খুন করলো কে ? "

আমি বললাম , " সে প্রশ্ন তো রয়েইছে জয়চাঁদ বাবু তার সঙ্গে আরও একটা প্রশ্ন জুড়ে যাচ্ছে যে খুনটা কিভাবে হলো ? অর্থ্যাৎ বিষটা দেয়া হলো কিভাবে ? "  

জয় চাঁদ বাবুর সঙ্গে কথা বলা শেষ করে আমি পঞ্চানন কে বললাম , " পঞ্চানন ! তুমি লাশ টাকে পোস্ট মোর্টেম এর ব্যবস্থা করে রিপোর্ট নিয়ে আমার সঙ্গে সন্ধ্যে বেলায় দেখা করো । আমি ততক্ষণ বাইরে টা একবার চক্কর দিয়ে আসি। কয়েকটা বিষয় জানা ভীষণ জরুরী হয়ে পড়ছে। "

পঞ্চনন জবাব দিল , " ঠিক আছে স্যার ! আমি আপনার সঙ্গে সন্ধ্যে বেলায় দেখা করছি। " 

এরপর আমি জয়চাঁদ বড়াল কে বললাম , " রাত্রি বেলা সকলকে এই বাড়িতে উপস্থিত থাকতে বলবেন। আমি একবার আসবো। " 


সমস্ত দিন তদন্তের স্বার্থে খোঁজ খবর চালিয়ে বেশ কিছু আশ্চর্য জনক ইনফরমেশন আমার হাতে উঠে এলো। সন্ধ্যে বেলা নিজের রুমে বসে ইন্দুবালা হত্যা রহস্যের সমাধান এর সূত্র সাজাচ্ছি এমন সময় ইন্সপেক্টর পঞ্চানন আমার রুমে অনুমতি নিয়ে প্রবেশ করল। তারপর পোস্টমর্টেম রিপোর্ট টা আমার হাতে দিয়ে বলল , " বিষক্রিয়ার ফলেই মৃত্যু হয়েছে স্যার। কিন্তু প্রশ্ন এখন বিষটা কে দিল ? "

আমি পঞ্চানন কে বললাম , " আরো একটা প্রশ্ন পঞ্চানন ! বিষটা দিলো কি ভাবে ? কারণ ইন্দুবালা শেষ খাবার খেয়েছে রাত্রে ।আর জলের মাধ্যমে বিষ দেয়া খুব কঠিন কাজ। কারণ ওতে জলের স্বাদ ও গন্ধে পরিবর্তন আসে ! যে কেউ চট করে ধরে ফেলতে পারে ! " 

" হুম স্যার ! বড় জটিল কেস ! এদিকে আপনার কথা মতো গোপালের চরণামৃত পুজোর প্রসাদ সমস্ত কিছু পরীক্ষা করে দেখা হয়েছে , কোথাও বিষের অস্তিত্ব নেই।গোটা ঘর বাড়ি তন্ন তন্ন করে খুঁজেও, এমন কি বাড়ির আশ পাশ টাও খুঁটিয়ে দেখেও বিষের কোনো শিশি বোতল উদ্ধার হয়নি। "

" ওসবে থাকবে না , সে আমি আগেই বুঝেছি ! " 

" তাহলে কেস টা কি স্যার ? " 

" আচ্ছা পঞ্চানন ! তোমার কি মনে হয় ? খুন টা কে করতে পারে ? "

" আমার মনে হচ্ছে ডাক্তার টা স্যার !" 

" কেন ? ইন্দুবালা কে খুন করে ওর কি লাভ ? "

" হয়তো ইন্দুবালা এমন কিছু গোপন ব্যাপার জানতো ডাক্তারের সমন্ধে , যার থেকে বাঁচাতেই ডাক্তার খুন টা করেছে। আর ডাক্তারদের কাছে বিষ দেয়া কোনো ব্যাপার না স্যার ! ওষুধের মাধ্যমে বিষ খাইয়ে দেয়া যেতেই পারে। "  

"তার মানে তুমি বলছো ইন্দুবালা দেবী ডাক্তারকে ব্ল্যাকমেইল করতো ! তোমার কথা অস্বীকার করছি না । তবে ওষুধের কারবার তো জয়চাঁদ বাবুর ভাগনেও করে। এবং সেও খুব সকালে উঠে বাইরে বেরিয়ে যায়। অর্থাৎ সকালেই কাজটা সেরে ও বাইরে চলে যেতে পারে অনায়াসেই । "

" কিন্তু স্যার মোটিভ ? "

" মোটিভ সম্পত্তির ভাগ বাটোয়ারা ! খোঁজ খবর নিয়ে জানলাম ইন্দুবালা দেবী উইলে বিমলের জন্য কিছু রেখে যায়নি। আশ্রিত বিমল আশা করে ছিল কিছু পাওয়ার ! কিন্তু সে আশা ভঙ্গ হওয়ায় রাগ জন্মায় । আর তার থেকেই প্রতিশোধ। "

" হতে পারে স্যার ! আর কাজের মেয়ে বীনা ? "

" শোনো পঞ্চানন! একজন গোয়েন্দা হিসেবে আমার সন্দেহটা সবার প্রতিই ঘোরা ফেরা করছে। কারণ আমাদের কাজের সাফল্য নির্ভর করে অপরাধীর কাজ কর্ম ও মানসিক পরিস্থিতি বিচার করে । বিনার প্রতিও সন্দেহ নেই তা বলবো না । আজকে হটাৎ কলোনী গিয়ে যা জানতে পারি তা হলো , ও গরীব , অস্বচ্ছল, বিপদ যুক্ত পরিবারের সদস্যা । সে হিসেবে ওর খুন করার অনেক মোটিভ থাকতে পারে। সব থেকে সহজ যেটা তা হলো মূল্যবান কোনো জিনিস সরিয়ে ফেলা। যেটা হয়তো ইন্দুবালা দেবীর নজরে পড়েছিল। আর তার থেকেই খুন ! "

"কিন্তু স্যার জয়চাঁদ বড়াল তো বলছেন বাড়ি থেকে মূল্যবান কিছু খোয়া যায়নি ! "

" ধরে নিলাম জয়চাঁদ বড়ালের কথা সত্য ! কিন্তু এও তো হতে পারে মূল্য বান বস্তু টা ছিল ইন্দুবালা দেবীরই একার সম্পদ। যার সম্বন্ধে কেউ কিচ্ছু জানে না। আর সেটা টের পেয়ে বীনা হাতিয়েছে । এরম হয় জানতো পঞ্চানন ! বাড়ির বয়স্ক মানুষ জনের কাছে মহা মূল্যবান বস্তু সকলের অজান্তেই থেকে যায়। " 

" তা হয় স্যার ! আমার ঠাকুর দায় আমৃত্য আকড়ে ধরে ছিলেন একটা ব্রিটিশ পিরিয়ডের সোনার কয়েন। মৃত্যুর পর ওঁর বালিশের ভেতর থেকে সেটা উদ্ধার করা হয়। তাহলে বাকি থাকলো স্যার জয়চাঁদ বড়াল আর তার স্ত্রী লীনা দেবী ! "

" হুম ! ইন্দুবালা দেবীর মৃত্যুর জন্য দুঃখ টা ওরা দুজনেই বেশি পেয়েছে ! "

" হুম স্যার। নিজের সন্তান বলে কথা ! " 

" তাহলে এখন চলা যাক বড়াল বাড়ি। বাকি কথা ওখানেই হবে ! " 

" হ্যাঁ স্যার চলুন ! আপনি কি খুনি কে ধরে ফেলেছেন স্যার ? "

" হুম তা পেরেছি ! তবে আরো খানিকটা স্পষ্ট হওয়া দরকার আছে । তুমি ঠাকুর ঘরে তোলা লাশের ছবি গুলো সঙ্গে নিও । আরো একবার জেরা করার সময় ওগুলো দরকার হতে পারে। " 

" ওকে স্যার ! "



জয়চাঁদ বড়ালের বাড়ি পৌঁছে সেখানে দেখলাম ওরা সকলেই আমার অপেক্ষা করে একটা হল ঘরে বসে রয়েছে। প্রথমেই কাজের মেয়ে বীনার সঙ্গে আমার কথোপকথন শুরু করলাম। সারা দিন ঘুরে সংগ্রহ করা তথ্য এবারে আমার অস্ত্র হয়ে উঠল। বীনার আর্থিক অবস্থা ভালো নয় । সম্প্রতি ওর স্বামী রেলের লোহা চুরির দায়ে জেলে ঢুকেছে । অর্থ্যাৎ চুরির অভ্যাস ওর থাকলেও থাকতে পারে। আমার এসমস্ত কথা শোনার পর বীনা হাঁও মাও করে কেঁদে বলল , " আপনার সব কথা ঠিক সাহেব । কিন্তু আমি মাইজী কি খুন করিনি সাহেব। গঙ্গা মাইজীর কসম ! মাইজী আমাকে খুব ভালোবাসতো !" 


পরবর্তী কথা বার্তা শুরু হলো ডাক্তার সুমিত ব্যানার্জীর সঙ্গে । আমার মুখ থেকে , ওঁর চেম্বার যে এখন ঠিক ভাবে চলে না , আর বছর খানেক হলো মফস্বলের সরকারি হাসপাতালের চাকরি খুইয়ে এখানে এসে উঠেছেন, সে সব কথা মেনে নিলেন তিনি। তবে ওঁর সম্পর্কে শেষ তথ্য টা ছিল চমক প্রদ। ইন্দুবালা দেবীর স্বামী অর্থ্যাৎ জয়চাঁদ বড়ালের বাবা ডাক্তার সুমিত ব্যানার্জীর কাছে ভুল চিকিৎসায় মারা যান । এ কারণে ইন্দুবালা দেবীর সঙ্গে ডাক্তার বাবুর সম্পর্ক তেমন ভালো ছিলনা। তিনি বেশ কিছু বার সুমিত বাবুকে এ বাড়ি ছেড়ে উঠে যেতে বলে ছিলেন। কিন্তু সুমিত বাবু তাল বাহানা করে রয়েই গেছেন। এসমস্ত কথা শোনার পর ডক্টর ব্যানার্জী খানিক চোটে গিয়ে বললেন , " ভুল চিকিৎসায় মারা গিয়েছেন এ কথার কোনোমানেই হয় না অফিসার! এতে আমার পেশা কে অপমান করা হচ্ছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমাদের পেশাতে রিস্ক নিতেই হয় ! আমি রুগীর অবস্থা অনুযায়ী জরুরী ওষুধ প্রয়োগ করেছিলাম। কিন্তু তাতে তিনি কোনো রেসপন্স করেন নি। আমি সে সময় ওদের হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলি ! কিন্তু ওরা ডিসিশন নিতে দেরি করায় পেশেন্ট হার্ট ফেল করে মারা যায়। আর বাড়িয়ালার সঙ্গে মালিকের মনো মালিন্য থাকতেই পারে । এটা কমন ব্যাপার? এর জন্য কেউ কখনও কাউকে খুন করেছে বলে আপনি শুনেছেন কখনো ? "


" ডক্টর ব্যানার্জী ! খুন জিনিস টা আজকাল বড় সহজ ব্যাপার হয়ে পড়েছে । এর জন্য কোনো বড় মাপের মোটিভ এর প্রয়োজন হয় না ! আমি কিন্তু একবারও বলিনি ইন্দুবালা দেবীকে আপনি খুন করেছেন ! আমি কেবল আপনার বিষয়ে কিছু ইনফরমেশন শেয়ার করলাম। খুন শব্দটির উত্থাপন আপনি নিজেই করেছেন। আপনার প্রতি আমার সন্দেহটা খুব সামান্যই এই কারণে যে আপনি ইন্দুবালা দেবীর মৃতদেহ পরীক্ষা করে পুলিশে খবর দেবার কথা বলেছিলেন। আপনার মনে অন্য কোনো চিন্তা থাকলে আপনি এটাকে ন্যাচেরাল ডেথ হিসেব চালিয়ে দিতে পারতেন। আর তদন্তে এমন কিছু কথা এসে যেতেই পারে যা আপনার অনুকূল নাও হতে পারে। আমি কোনো মতেই আপনার পেশা কে অপমান করতে চাইনি। এবার আসি বিমলের কাছে। বিমল ইন্দুবালা দেবীর উইল এ নিজের অংশীদারীত্ব না থাকায় সামান্য অসন্তুষ্ট হয়েছে তাই তো ? "

বিমল কথাটা শুনে জবাব দিল , " দেখুন গোয়েন্দা বাবু। আপনার কথা সত্য। তবে আমি এও খুব ভালো মতো জানি যে আমার জন্মের পর বাবা মা মারা যাওয়ার কারণে আমাকে কেউ সহ্য করতে পারতো না। এছাড়া আমি এঁদের খুব কাছের কেউ না । ছেলে বেলা থেকে এখানে মানুষ হয়েছি তাই একটা কিছু আশা করেছিলাম । পাই নি। তাতে ঠিক আছে । ইটস ওকে ! " 

" কিন্তু আরো একটা বিষয় তুমি এড়িয়ে গেলে বিমল ! "

" কি বলুন তো ? "

"আমি খোঁজ করে দেখেছি তোমার কাজ টা আর নেই। তোমার ওষুধের কোম্পানি উঠে গেছে মাস দুই হলো। তুমি এখন সকাল থেকে রাত অব্দি কাজের সন্ধানে ছুটে বেড়াচ্ছো। হুট করে কিছু টাকা হাতে এলে একটা নতুন ব্যবসা ফাঁদতে সুবিধেই হতো কি বলো ? "

বিমল মাথায় হাত দিয়ে কিছু ক্ষণ বসে রইল। তারপর একটা আফসোসের শব্দ ছেড়ে বলল , " তা বলে টাকার লোভে কাউকে খুন করা আমার পেশা বা নেশা কোনো টাই নয় ! আমি মনে করি খুন কে করেছে তা আপনি ভালো মতোই জানেন। তাই আর জল না ঘোলা করে সঠিক জায়গায় এগিয়ে যান ! "

কথা শেষ করে বিমল চেয়ার ছেড়ে উঠে জানালার কাছে দাঁড়িয়ে বাইরে তাকিয়ে রইল। বুঝলাম বিমল বাস্তবতার চাপে কিছুটা দুশ্চিন্তায় আছে। তাই ওর কথা বলার ভঙ্গিমায় কিছুটা রুক্ষ ভাব। আমি জয়চাঁদ বড়াল কে বললাম , " আপনার বাড়িতে ডাইনিং রুমের দেয়ালে যে গোপালের ছবিটা বাঁধিয়ে টাঙানো রয়েছে , সেটা কি আপনাদের ঠাকুর ঘরের গোপালের ? "

জয়চাঁদ বড়াল জবাব দিলেন , " হ্যাঁ ! মা ই ওটা বাঁধিয়ে রেখে ছিলেন । " 

" এই গোপালের মূর্তিটির বয়েস কত ? " 

" তা কেউ জানে না। বংশ পরম্পরায় আমাদের বাড়িতে আছে। " 

" এটা সোনার তো ? "

" মা তো তাই বলতেন ! "

" ওকে ! পঞ্চানন এবারে তুমি ঠাকুর ঘরে লাশের যে ছবি গুলো তুলিয়ে ছিলে সে গুলো একটু নিয়ে এসো । "

পঞ্চানন ছবি গুলো খামের ভেতর থেকে আমার হাতে দিল। আমি এবারে বীণাকে দিয়ে ডাইনিং রুমের দেয়ালের গোপালের ছবিটা আনিয়ে পাশাপাশি রাখলাম। তারপর জয়চাঁদ বড়াল কে বললাম , " দেখুন তো ! কিছু বুঝতে পারছেন কিনা ? "

জয়চাঁদ বড়াল দুটো ছবিতে চোখ বুলিয়ে বললেন , " ঠিক কি বলতে চাইছেন আপনি বলুন তো ? "

" আমি বলতে চাইছি ইন্দুবালা দেবীকে আপনিই খুন করেছেন ! "

কথাটা শোনা মাত্র লীনা দেবীর মুখ স্তম্ভিত হয়ে গেল। জয়চাঁদ বড়াল লাফিয়ে উঠে বললেন , " হোয়াট ! কি বলছেন কি আপনি ? আমি নিজের মা কে খুন করেছি ?"

" হ্যাঁ করেছেন ! "

" অফিসার আপনি কি পাগল হয়ে গেছেন ? কি যা তা বলছেন ? আমি আমার নিজের মা কে খুন করতে যাবো কেন ? "

" আমি নই ! পাগল হয়ে গিয়েছিলেন আপনি মিস্টার জয়চাঁদ বড়াল ! ব্যবসায় মন্দা ! চতুর্দিকে ধার ! এতে আপনার মাথা খারাপ। এরই মধ্যে মা ইন্দুবালা দেবীর করা উইল যাতে আপনাদের ঈশ্বরের প্রতি কোনো ভক্তি ভাব না দেখে ইন্দুবালা দেবী নিজের সোনার গোপাল কে তাঁর মৃত্যুর পর দান করে গেছেন গোপীনাথ মন্দিরে। এটাতেই ছিল আপনার আপত্তি। কারণ প্রায় কয়েক কোটি টাকার গোপাল কে আপনি হাত ছাড়া করতে চাননি। এই নিয়ে ইন্দুবালা দেবীর সঙ্গে আপনার বচসাও হয়। এসব খবর জানতে পারি আপনাদের যিনি উইল লিখেছেন তাঁর কাছ থেকে । অর্থাৎ উকিল প্রকাশ বাবুর কাছ থেকে। তাই আপনি নিজেই নির্মাণ করেন একটা একই ছাঁচের গোপাল । যা ছিল সোনার জল করা সামান্য মূল্যের। তারপর সুযোগ খুঁজ ছিলেন সেটাকে কিভাবে বদলানো যায়। কারণ ঠাকুর ঘরে সব সময় থাকেন ইন্দুবালা দেবী ।আর গোপাল পরিবর্তন হলে ইন্দুবালা দেবীর নজরে সেটা পড়বেই। কারণ পূর্ব পুরুষের গোপালের চেহারার সঙ্গে তিনি ভালো ভাবেই পরিচিত।শেষ মেশ ইন্দুবালা দেবী কে সরিয়ে ফেলার সিদ্ধান্ত নেন আপনি। তাই ওঁকে খুন করে গোপাল পরিবর্তন করলেন। কিন্তু তাতেও আপনার মনের শান্তি মিটলো না। কারণ পরীক্ষা করে আপনি জানতে পারেন যে পূর্ব পুরুষের গোপাল টিও সম্পুর্ন সোনার নয় ! সোনার জল করা। তাই মা এর মৃত্যর আফসোস আপনার এবং লীনা দেবীর বেশি। আসলে আপনি কথার মার প্যাঁচ বুঝতে ভুল করেছেন। গোপাল ছিল ইন্দুবালা দেবীর সন্তানের মতো। আর সন্তান কে মা বাবারা সোনা ছেলে বলেই ডাকে। ইন্দুবালা দেবী বলতেন আমার সোনার গোপাল। সে সোনা কোনো ধাতু নয় ! আদরের ডাক ! আপনি একজন স্বর্ণ ব্যবসায়ী হয়েও সোনা চিনতে ভুল করলেন এতে আমার ভীষণ আফসোস হয় ! চক চক করলেই সব সোনা হয়না। তাই ছবির দুই গোপালের চেহারায় বিরাট পার্থক্য রয়েছে । যেটা প্রথম দিন আপনার বাড়িতে ঢুকেই আমার নজরে পড়েছিল ? " 

জয়চাঁদ বড়াল এবারে রক্ত চক্ষু নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন , "আপনার কাছে কি প্রমান যে আমি মা কে বিষ দিয়ে খুন করেছি ? "

আমি হেসে বললাম , " আপনি চালাকি করে ছিলেন কিন্তু শেষ রক্ষা করতে পারেন নি ? কারণ আপনাদের বাড়ির গোপালই আপনাকে ধরিয়ে দিয়েছেন। তাঁর সেবক কে খুন তিনি মেনে নিতে পারেন নি ! খুন করার পদ্ধতিটা আপনার বেশ অদ্ভুত। বিষ কথাটা মনে আসতেই সকলের মাথায় আসবে কোনো খাদ্য দ্রব্যে মিশিয়ে কাউকে খুন করা। যেহেতু ইন্দুবালা দেবী পুজো সেরে খাবার খেতেন । তাই তার আগে ওঁকে কিছুতে বিষ মিশিয়ে খাওয়ানোর কথা ভাবলেই প্রসাদ কিংবা চরণামৃত এর কথা সবার মাথায় আসবে। কিন্তু আপনি তা করেন নি। এদিকে পূজা অর্ধ সমাপ্ত অবস্থায় ইন্দুবালা দেবী মারা গিয়েছেন তাই ওসব খাবারে বিষ মেশানোর প্রসঙ্গ আসে না। "

পঞ্চানন এবারে আমাকে জিজ্ঞাসা করল , " তাহলে বিষ খেলো কিভাবে স্যার ! "

আমি বললাম , " খুব সাধারণ ব্যাপার পঞ্চানন। অনেক সময় খুব সামান্য ব্যাপার আমাদের চোখ কে ধোকা দিয়ে দেয়। পূজার মাঝে মাঝে আমাদের বাড়ির মেয়েরা শঙ্খ বাজান। আর এই সুযোগ টা কাজে লাগিয়ে জয় চাঁদ বড়াল শঙ্খের মুখে বিষ লাগিয়ে রাখেন। আর শঙ্খ বাজানোর কয়েক মিনিট পরেই ইন্দুবালা দেবী মারা যান। তবে এই ব্যাপারে অবশ্যই ধন্যবাদ দেয়া উচিত ডক্টর ব্যানার্জী কে। উনি খুনের ব্যাপারটা আঁচ করে ছিলেন বলেই বুদ্ধি খাটিয়ে পুলিশে খবর দিতে বলেন। কি ডক্টর বাবু তাই তো ? "

ডক্টর ব্যানার্জি বললেন , " বেশ কিছু দিন ধরে ইন্দুবালা দেবীর সঙ্গে জয়চাঁদ বড়ালের তর্ক বিতর্ক চলছিল। রাত বিরেতে আমার কানে এসেছিল ব্যাপারটা। তাই ইন্দুবালা দেবীর আচমকা মৃত্যুতে সন্দেহ টা মনে জাগে।"


আমি বললাম , " ধন্যবাদ ডক্টর ব্যানার্জী ! পঞ্চানন , জয়চাঁদ বড়াল কে থানায় নিয়ে চলো। ইন্দুবালা দেবী হত্যা রহস্য এর ফাইল ক্লোজড। "