Thursday, October 13, 2022
ছোট গল্প - তেপান্তরের মাঠ || লেখক - ঈশিতা বিশ্বাস চৌধুরী || Short story - Tepantorere math || Written by Isita biswas Chowdhury
পশ্চিমবঙ্গে বন্ধন ব্যাংকে প্রচুর কর্মী নিয়োগ || WB Bandhan Bank Recruitment 2022 || Bandhan Bank Job Vacancy 2022
##রাজ্য জুড়ে বন্ধন ব্যাংকে প্রচুর কর্মী নিয়োগের হবে। বিজ্ঞপ্তি ইতিমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে। বেকার যুবক যুবতীদের জন্য এটা একটা বড় সুযোগ। তাছাড়া এখানে চাকরি পাওয়া সোজা। শুধু বায়োডাটা ও ডকুমেন্ট জমা মাধ্যমেই আপনার চাকরি হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা। লিখিত পরীক্ষা দিতে হয় না এখানে। সরাসরি নিয়োগ হয়। বর্তমানে বন্ধন ব্যাংকে কর্মীর প্রয়োজন প্রচুর পরিমাণে। তাই নিয়োগ হচ্ছে প্রতিনিয়ত। শুধুমাত্র উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করলেই এই ব্যাংকে চাকরির জন্য আবেদন করার সুযোগ পাবেন। শিক্ষাগত যোগ্যতা, বয়সসীমা, আবেদন পদ্ধতি বিস্তারিত তথ্য নীচে দেওয়া হল--
মোট শূন্য পদ - ৩০টি
কোন কোন পদে নিয়োগ হবে:
বিভিন্ন যোগ্যতায় বিভিন্ন পদ রয়েছে। পদ গুলি হল-
Operation And Office Staff.
শিক্ষাগত যোগ্যতা: অবশ্যই উচ্চমাধ্যমিক পাস বা গ্রাজুয়েশন পাস হতে হবে।
বয়স- বয়স হতে হবে ১৮ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে।
বেতন - মাসিক ১৪,৫০০ থেকে ২১,০০০ টাকা পর্যন্ত বেতন দেওয়া হবে।
কাজের ধরন: এটা একটি পার্মানেন্ট চাকরি।
আবেদন পদ্ধতি: অনলাইনের মাধ্যমে আবেদন করতে পারবেন।
কীভাবে আবেদন করবেন :
Online- আপনি নিজেই মোবাইল এর মাধ্যমে আবেদন করতে পারবেন। আপনি কেবলমাত্র ফোন করেও আবেদন করতে পারবেন। এছাড়াও আপনি ইমেলের মাধ্যমেও আবেদন করতে পারবেন। ইমেইল এ আপনার বায়োডাটা পাঠিয়েও আবেদন করতে পারবেন।
যে নম্বরে আপনি যোগাযোগ করবেন তা হলো-
৯৮৩১৪২০৮৭৫
এছাড়া যে ইমেল আইডিতে আপনি বায়োডাটা পাঠাবেন তা হলো-
bandhanbankdepatment@gmail.com
গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট-
এই চাকরিতে আবেদনের জন্য যে নথিপত্রগুলির প্রয়োজন সেগুলি হলো-
১) শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রমাণপত্র
২)বয়সের প্রমাণপত্র
৩)নিজের সাক্ষর
৪)বাসস্থানের প্রমাণপত্র
৫)পরিচয়পত্র (আঁধার কার্ড, ভোটার কার্ড)
৬) কাস্ট সার্টিফিকেট (যদি থাকে)
৭) পূর্ববর্তী কাজের অভিজ্ঞতার প্রমাণপত্র (যদি থাকে)
এছাড়া যদি আরও কিছু জানতে চান আপনাকে অফিসিয়াল নোটিশটি ডাউনলোড (Download) করতে হবে। অফিসিয়াল নোটিশ ডাউনলোডের লিঙ্ক নিম্নে সবার শেষে দেওয়া আছে।
নিয়োগ পদ্ধতি: নিয়োগ করা হবে বায়োটাডেটার উপর ভিত্তি করে । কোনরকমের লিখিত পরীক্ষা ছাড়াই কেবলমাত্র ইন্টারভিউয়ের মাধ্যমে নিয়োগ করা হবে। আপনি যদি ইন্টারভিউয়ে সিলেক্ট হন তাহলে আপনাকে সরাসরি ট্রেনিংয়ের জন্য ডাকা হবে।
ট্রেনিংয়ের চান্স পাওয়া মানে কনফার্ম চাকরি পাওয়া। ট্রেনিং শেষে আপনাকে সরাসরি জয়েনিং করানো হবে।
আবেদন মূল্য: সম্পূর্ণ বিনামূল্যে আবেদন করুন
OFFICIALWEBSITE:
________________________________________
চাকরি সংক্রান্ত আপডেট পেতে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
Telegram group-
https://t.me/Jobnewsgovtandpraivate
Whatsapp group-
Tuesday, October 11, 2022
উপন্যাস - পদ্মাবধূ || বিশ্বনাথ দাস || Padmabadhu by Biswanath Das || Fiction - Padmabadhu Part -22
এবার ভয় আর নেই। সাহস নিয়ে কথা বলতে শিখেছি। অন্যায়ের প্রতিবাদ করার মতো ক্ষমতা অর্জন করেছি। ভয় আর কাউকেই করি না, করবো না। প্রয়োজন হলে ওর হাতেই মরবো তবু অন্যায়কে আর প্রশ্রয় দেবো না। শ্যামলীদির কাছে গিয়ে দেবীবাবুর কথা বললাম। তার আসার সময় হয়ে গেছে। যদি আমরা উভয়েই যেতাম তাহলে ভালো হতো না কি? কারণ যদি বাবুগুন্ডা মাথানাড়া দিয়ে উঠে ও শ্যামলীদিকে একা পেয়ে কিছু করে বসে।
Monday, October 10, 2022
রাজ্য সরকারের হাউস ফাদার এবং হাউস কিপার পদে নিয়োগ, প্রতিটি জেলা থেকেই আবেদন করতে পারবেন || bankura.gov.in || WB govt House father and House keeper post Recruitment 2022 || House Father and Housekeeper Recruitment in Bankura
Sunday, October 9, 2022
ছোট গল্প - সময় || লেখক - তপন তরফদার || Short story - Somoy || Written by Topan Torafdar
সময়
তপন তরফদার
এক এক সময়ে মনে হয় এই দমবন্ধ সময়ের শেষ হবে না। আসলে মনের উপর এতো চাপ পরে সময়ের হিসাব রাখতে পারেনা। একজন পোয়াতি তার সন্তানকে পৃথিবীতে আনার সময় তাকে কষ্ট সহ্য করতে হবে জেনেও ভাবি মায়ের মনে হয় সময় শেষ হচ্ছে না। বাড়ির সবাই উদ্বিগ্ন। ভাবী পিতার মুখ পলে পলে শুকাতে থাকে। যেন চুরির দায়ে ধরা পড়েছে। পরিস্থিতি কয়েক মুহূর্তে বদল হয়ে বাঁধ ভাঙ্গা আনন্দে ভেসে যায় বসন্ত যখন বাড়িতে নতুন অতিথি আসার আওয়াজ আঁতুরঘর থেকে ভেসে আসে। গোয়ালঘর থেকে বসন্ত লাফিয়ে কাদাখোঁচা উঠানে নেমে আঁতুরঘরের বন্ধ দরজার দিকে মুখ করে দাইমা ক্ষণদার উদ্দেশ্যে বলে কী হয়েছে? ক্ষণদা এক সোহাগ মেশানো রসালো গলায় বলে - রসগোল্লা আনা, আমার জন্য গরদের শাড়ি নিয়ে আয় - তোর ছেলে হয়েছে।
বসন্ত , যে বেশ কিছু সময় ধরে চোরের মতো গুটিসুটি মেরে বসে ছিল। খবর শোনার মুহূর্তেই বসন্তর বুকের ছাতি দীর্ঘ হয়ে যায়। মুখে লটারি পাওয়ার হাসি। ছেলে হয়েছে। সাত রাজার ধন এক মানিক।
বলরামপুরের পঞ্চায়েত অফিস, সরযু বালা বিদ্যালয়ে যাওয়ার তেমাথা রাস্তার প্রথম বাড়িটা বসন্তদের। বসন্তদের ভিটে দুটো রাস্তা পেয়েছে। বসন্তর পিছনে হেমন্তর ভিটে। দূর সম্পর্কের আত্মীয়তার সূত্র ধরে এই দুই তেলি পরিবার এক হয়েই থাকে। কয়েক বছর আগে বসন্তর ও হেমন্তের বাবা এক সময়ে একই সঙ্গে গঙ্গাসাগরে নৌকা ডুবিতে মারা গেছে। বসন্ত, হেমন্তর বিয়ে প্রায় একই সময় হলেও হেমন্তের দুই ছেলে এক মেয়ে হয়ে গেছে। এতটা সময় পেরিয়ে গেলেও বসন্তর কোনো ছেলেপিলে হয়নি। গ্রামে রটেগেছে বসন্তের বউ উষা বাঁজা। উষার সময় কাটেনা। সবসময় বিমর্ষ হয়ে থাকে। হেমন্তর বউ সন্ধ্যা মনে মনে খুব খুশি ছিল - ওদের কোন বাচ্চাকাচ্চা না হলে - ওই ভিটেটার স্বত্ব হেমন্তর ছেলেরাই ভোগ করবে।
বড় রাস্তার ধারে স্কুলে, পঞ্চায়েত অফিসে ঢোকার রাস্তা। রাস্তা ঢালাই হয়ে গেলেই লোক চলাচল বেড়ে যাবে। শোনা যাচ্ছে কিছু দিনের মধ্যেই সরযু বালা স্কুল উচ্চ মাধ্যমিক হয়ে যাবে। পঞ্চায়েত অফিসের পাশে ব্যাঙ্ক খোলা হবে। ওই তেমাথায় জমিতে যদি ‘মনিহারি স্টোর্স’ খোলা যায়, ভালই জমে যাবে। এ টু জেড সব পাওয়া যাবে। সব আশায় ছাই ফেলে দিল নবজাতক। সন্ধ্যা, হেমন্তকে বলে – চিন্তা করোনা। কাক-পক্ষীয়ও টের পাবে না-ঠিক সময়ে আমি সব ঠিক করে দেবো।
বসন্ত ছেলের নাম রাখলো অনন্ত। অন্ন প্রাশনের দিন সন্ধ্যা কোমর বেঁধে রান্না করে দিল। অনন্তর মুখে ঠুসে দিল পঞ্চব্যাঞ্জন। অন্ন প্রাশনেই প্রথম অন্ন পেটে যায়। সারা জীবন যেন অন্ন পায়। বাচ্চাকে পেট পুরে খাওয়াতে হয়। অনন্ত বিকালেই কেমন নেতিয়ে পড়ল। ওরা গ্রামের হাতুড়ে ডাক্তার যামিনীর কাছে নিয়ে যায়। যামিনী ডাক্তার মনে করে সমস্ত রোগের উৎস পেট। পেট যদি পরিস্কার থাকে - বিশেষ করে বাচ্চাদের স্ফূর্তি ভালই থাকবে। যামিনী ডাক্তার অনন্তর পেট-সাফার ওষুধ দিয়ে দেয়। বেশ কয়েকবার বাহ্ন্যি করার পর শান্তিতে ঘুমিয়ে পড়ল অনন্ত। ঘুম থেকে উঠে বাচ্চা হাসিখুশি, হাত-পা ছুঁড়তে লাগলো। হাসি শুনতে পেয় হেমন্ত সন্ধ্যাকে বলল - কি গো, সবতো ঠিকই আছে। সন্ধ্যা বলে – মনে হয় ধুতরোটা কম পরেছিল।
অনন্ত ধীরে ধীরে বড় হতে লাগল। স্কুলের পিওন নিশীথের বউ, মেয়ে প্রভাতী সময় পেলেই অনন্তর সাথে গল্প করতে আসে। প্রভাতী-অনন্ত খেলনাপাতি খেলে। অনন্ত হয় বর, প্রভাতী হয় বউ। প্রভাতী পাকা গিন্নির মতো বলে - তুমি চান করে এসো, আমার ভাত রান্না হয়ে গেছে – তোমাকে খেতে দেবো।
অনন্তের দশ বছরের জন্মদিন খুব ঘটা করে পালন না করলেও কাছের কয়েক জনকে নেমন্তন্ন করা হয়েছে। সন্ধ্যা পায়েস এনেছে অনন্তর জন্য। এখন অনন্তকে হাতে করে খাওয়াতে হয়না। লাউ-চিংড়ি খেয়ে উঃ আঃ করছে অনন্ত।উষা মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে বলে - লঙ্কা খেয়ে ফেলেছিস, পায়েস মুখে দে। ঝাল কমে যাবে। অনন্ত সন্ধ্যার আনা পায়েস মুখে দেয়। জিভে কেমন যেন ঠেকে। কিছু বলে না - হয়ত ঝালের জন্য পায়েসটার স্বাদ এমন তিতকুটে লাগছে।
বিকাল থেকেই পেটে অসহ্য যন্ত্রণা - বমি করতে যায় অথচ বমি হয় না। যন্ত্রণায় কাটা ছাগলের মতো ছটফট করতে থাকে অনন্ত। যামিনী ডাক্তার এবারও পেট পরিষ্কারের ওষুধই দিল - কিন্তু কোন কাজ হল না। মুখ দিয়ে গ্যাঁজলার মতো নিল রঙের থুথু বেরাতে থাকে। ডাক্তার বমির ধরন দেখেই বলে এখুনি একে বড় হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে। আমি ভাল বুঝছি না। বেশ কিছু সময় ধরে যমে মানুষে টানাটানি। মানুষ জিতে গেল। বেঁচে গেল অনন্ত কিন্তু বাঁদিকের হাত পা কেমন বেঁকে গেছে। বাঁদিকের ঠোঁটের ফাঁক দিয়ে লালা পরে। কথা বলতে গেলে চোখে মুখে অসহ্য যন্ত্রণার ছবি ফুটে ওঠে। সন্ধ্যা আপশোষ করে বলে - কলকের বিষ মেরে ফেলতে পারল না। বসন্ত একেবারে ভেঙে পড়ল। ভেবে কুল কিনারা পায়না বসন্ত – সুস্থ ছেলেটার এ কি হল? তাপ দেওয়া তাসার মত গুমগুম করে বেজে যায় মন। বেশ কিছু বছর পরেও বসন্ত মনে করে নিশ্চয় কোন পাপ করেছিল - তাই এই সাজা। সব কিছু ভুলে থাকার জন্য আদিবাসী পাড়ায় যাতায়াত শুরু করল। এখন আদিবাসীদের ডেরায় হাঁড়িয়ার সঙ্গে চোলাই ও চালু হয়ে গেছে। হেমন্তও লুকিয়ে লুকিয়ে ধেনোমদের বোতল কে এনে দেয়। সজনে ফুলের এক বিশেষ গন্ধ থাকে, যারা জানে তাদের নাকে ধাক্কা মারে। এই ধেনোর এক বিশেষ মহিমা আছে যা ছড়িয়ে পরে দাবানলের মতো - সবাই জেনে যায় বসন্ত “নেশা করে”। হেমন্তর এনে দেওয়া ধেনো খেয়ে বসন্তর বুকে যন্ত্রণা শুরু হয়। ওরও মুখ দিয়ে ফেনা বেরোতে থাকে। বুক চেপে শুয়ে পড়তেই উষা তালপাতার হাতপাখা দিয়ে হাওয়া করতে থাকে। এই সময়ে এই হাওয়া কোন কাজে লাগেনা। অকালেই উবে যায়। ওদিকে পিওন নিশীথ মারা গেল। যামিনী ডাক্তার রোগটা যে ‘ডেঙ্গু’, ধরতেই পারেনি। প্রভাতীর মা রাত্রি, স্কুল সীমানায় এক প্রান্তে নির্জন ডোবার ধারে বাঁশ বাগানের পাশে টিনের চালার মাটির ঘরে যেখানে থাকে, সেখানে রাতের অন্ধকারে দরজায় টোকা পড়তে লাগল। রাত হলেই মা-মেয়ে দুজনেই সিঁটিয়ে থাকে, বুঝতে পারে ওরা গ্রামেরই পঞ্চায়েতের লোক।
ওদিকে হেমন্ত - উষা নিজেদের আকাঙ্খা পূরণ করতে কোন সুযোগ হাতছাড়া করতে চায় না। উষাকে পাখি পড়ানোর মতো সব সময় বলতে তাকে ছেলের চিকিৎসার জন্য, তোমাদের সংসার চালানোর জন্য ভিটেটা বিক্রি করে দিয়ে বাপের বাড়ি চলে যাও। মামার বাড়িতে ন্যালাখ্যাপা ছেলে অনেক সাহায্য পাবে।
উষা নিজের শ্বশুর বাড়ির ভিটে ছেড়ে যেতে রাজি নয়। হেমন্তরা বুঝতে পারে, চালটা ঠিক ধোপে টিকল না। হাল ছাড়ার পাত্র নয় হেমন্তরা। কিছুদিন বাদে বলে - বউদি তোমরা তো মাত্র দুজন, এতবড় জায়গা নিয়ে কি করবে। তোমার ছেলেকে দিয়ে তো কিছু হবেনা। আমি তোমাকে ভিটের এক দিকে ঘর করে দেবো। জমির জন্য টাকাও দেব। উষা বুঝতে পারে বাঘের থাবার সামনে পড়েছে। দুর্বলের সাহায্যের জন্য এই সময়ে কেউ এগিয়ে আসেনা। এখন রাজনীতির ঝান্ডা না ধরলে বাঁচা যাবে না। হেমন্ত পঞ্চায়েতের দলের লোক হয়ে গেছে। উষা কিংকর্তব্যবিমূঢ়। সে অসহায়, ফুলের মতো ফুটে আছে। সবাই তাকে দখল করতে তৎপর। মুখ নীচু করে বলে - ঠাকুরপো তুমি যা ভাল বোঝো করো।
নিশীথ নিজে ভাল লেখাপড়া করার সুযোগ পায়নি। মেয়েকে লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষের মতো মানুষ করতে চেয়েছিল। মেয়েরা নতুন কিছু সাহসী কাজ, প্রতিভার জোরে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার খবর মেয়েকে দিত। উৎসাহ দিয়ে বলতো - জানিসতো মা, এক মেয়ে এভারেস্ট জয় করেছে। প্রভাতী বলে, জানি অনেক মেয়েই পাহাড়ে উঠেছে। নিশীথ বলে, ওর নাম অরুণিমা সিনহা এক পায়ে ভর করে উঠেছে।মনে রাখিস প্রভাতী মনের জোরই আসল জোর।
ছিপছিপে শ্যামাঙ্গী প্রতিমার মতো মুখ ও চুল প্রভাতীর তার শরীরে ক্লান্তি নেই, চনমনে চিতল হরিণী। গাঁইয়া মুখ হলেও মুখে বালি সরানো ফলগু নদীর মতো লাবণ্য। বুদ্ধিতে খনার থেকে কিছু কম নয়। প্রভাতী চায় প্রথমেই স্কুলের জায়গাটা ছাড়তে। ঝুপসি গাব, মহানীম গাছের মাঝে ফাঁকা জমিতে রাতের অন্ধকারে ভুতের নাচের আসর বসে - ওরাই রাত্রে দরজায় আওয়াজ তোলে। রুখে দাঁড়ালে বাঁশ ঝাড়ের ভিতরে পালায়। এইভাবে আর কতদিন। যদি ওরা রাতে দরজা ভেঙ্গে ঘরে ঢুকে পরে। মাথা ঘুরতে থাকে বিষয়টি মনে আসলেই।
অনন্তর বাড়িতে যায় প্রভাতী ওদের খোঁজখবর নিতে। সুখ-দুঃখের গল্প করতে। উষাকে আশ্বাস দেয় - চিন্তা করবেন না মাসিমা, ভাল হয়ে যাবে। উষার মুখে শুকনো হাসি। সে দিনের সূর্য অনন্তদের বট গাছের পাতায় শেষ আলোর চুম্বন দিয়ে বিদায় নিচ্ছে। এই সময়েই হেমন্ত এসে বলে - বৌদি তোমাদের দলিলটা দাও। কালই রেজিষ্ট্রি করব, তোমাকে নিয়ে যাব - ওখানেই সব টাকা দিয়ে দেবো। বলে ওঠে - না “মা” – আপনি দলিল দেবেন না। আমার শ্বশুর বাড়ির ভিটে আমরাই রক্ষা করব।
হেমন্ত রেগে গিয়ে বলে - সেদিনের ছুঁড়ি, আমার সাথে রসিকতা হচ্ছে। প্রভাতীর পাথরে খোদাই করা চোখ মুখ আরো দৃঢ় করে বলে - আমরা সবাই এক হয়েই সবাইকে বাঁচতে সাহস জোগাবো। আমার বাবা মারা গেছে – ওই শকুনরা আমাদের ছিঁড়ে খাবে। অসহায় বিধবার ভিটে হায়নারা খাবে, তা হবেনা।আমি অনন্তকে বিয়ে করে সব সামলে নেব। অনন্তকে নিয়ে সিধে প্রভাতী কালীতলায় চলে আসে। পূজারীর কাছ থেকে সিঁদুর চেয়ে নিয়ে অনন্তকে বলে পড়িয়ে দিতে। অনন্তর চোখে মুখে যুদ্ধ জয়ের ছবি। একটুও হাত কাঁপে না। বুদ্ধপূর্ণিমার আলো, সমগ্র জগতকে মোহময়ী করে তুলেছে। প্রভাতী অনন্তকে নিয়ে ঘরে ঢুকে খিল তুলে দিয়ে গাইতে থাকে - ও রজনীগন্ধা তোমার ..........। বেচারা, সন্ধ্যারা ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে। দুই বিধবা পরস্পরের হাত ধরে শরীরের ইশারায়
বুঝিয়ে দেয় প্রভাতী তাদের জীবনে নতুন প্রভাতের আলর দিশা দেখাবে।
ছোট গল্প - অশিক্ষক || লেখক - সন্দীপ কুমার পণ্ডা || Short story - Osikhokh || Written by Sandip Kumar panda
Saturday, October 8, 2022
অষ্টম শ্রেনি পাশে ভারতের ডাক বিভাগে চাকরি || বেতন 19 হাজার 900 টাকা প্রতি মাসে || Indian Post Eight Pass Job 2022 || https://www.indiapost.gov.in/
ভারত সরকারের অন্তর্গত ডাক বিভাগ (Indian Post Department) এ আবার নতুন নিয়োগ। এখানে শুধু মাত্র অষ্টম শ্রেনি পাশ করলেই আবেদন করার সুযোগ পাবেন। ভারতের সমস্ত নাগরিক অর্থাৎ পশ্চিমবঙ্গের
সমস্ত প্রার্থীই এখানে আবেদন করার সুযোগ পাবেন না।
চাকরি সংক্রান্ত সম্পূর্ণ বিষয়টি নীচে আলোচনা করা হল-
নোটিশ নম্বরঃ MSE/B-4/XI/2022
নোটিশ প্রকাশের তারিখঃ 19.09.2022
আবেদনের মাধ্যমঃ শুধু মাত্র অফলাইনের মাধ্যমে আবেদন করতে পারবেন।
নিয়োগ তথ্য -
কোন কোন পদে নিয়োগ?
#স্কিল্ড আর্টিসান্স (Skilled Artisans)
বেতন -
প্রতিমাসে 19,900 থেকে 63,200 টাকা।
শিক্ষাগত যোগ্যতা -
অষ্টম শ্রেণী পাশ করতে হবে এবং আপনাকে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট ট্রেডে এক বছরের অভিজ্ঞতা অর্জন করে থাকতে হবে।
#এছাড়া যে প্রার্থী MV মেকানিক পদে আবেদন করতে চাইছেন তাদের অবশ্যই বৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকতে হবে।
বয়সসীমা-
প্রার্থীর বয়স 18 থেকে 30 বছরের মধ্যে হতে হবে। এছাড়া SC, ST প্রার্থীরা সরকারি নিয়মে ছাড় পাবেন।
ট্রেড অনুযায়ী মোট শূন্যপদ-
M.V Mechanic – 2
M.V Electrician – 1
Painter – 1
Tyreman – 1
নিয়োগ পদ্ধতি -
এখানে আপনাকে কম্পিটিটিভ ট্রেড টেস্ট দিতে হবে। তার প্রার্থী নির্বাচিত করা হবে। সংশ্লিষ্ট ট্রেড অনুযায়ী এই টেস্ট টি নেওয়া হবে।
আবেদন পদ্ধতি -
(1) এখানে আপনাকে অফলাইন এ আবেদন করতে হবে।
(2) অফলাইনের মাধ্যমে আবেদন করতে হলে প্রথমে অফিসিয়াল নোটিশ টি ডাউনলোড করতে হবে। সেখানে আবেদনের ফর্মটি পাবেন। সেটি প্রিন্ট করতে হবে।
(3) এরপরে প্রিন্ট আউট করা ফর্মটি সঠিক ভাবে পূরণ করতে হবে এবং তার সঙ্গে প্রয়োজনীয় নথিপত্র সেল্ফ অ্যাটেস্টেড করে যুক্ত করতে হবে।
(4) সবশেষে আবেদনপত্র এবং প্রয়োজনীয় নথিপত্র গুলি একটি মুখবন্ধ খামে ভরে নিচের উল্লেখিত ঠিকানায় নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে স্পিড পোষ্ট অথবা রেজিস্টার্ড পোষ্টের মাধ্যমে পাঠিয়ে দিতে হবে।
গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট-
1)রঙিন পাসপোর্ট সাইট ছবি।
2)বয়সের প্রমাণপত্র।
3)শিক্ষাগত যোগ্যতার সার্টিফিকেট।
4)টেকনিক্যাল সার্টিফিকেট।
5)ড্রাইভিং লাইসেন্স।
6)ট্রেড এক্সপেরিয়েন্স সার্টিফিকেট।
7)কাস্ট সার্টিফিকেট (যদি থাকে)
আবেদনপত্র জমা দেওয়ার ঠিকানা-
The Senior Manager (JAG), Mail Motor Service, No. 37, Greams Road, Chennai – 600006
গুরুত্বপূর্ণ তারিখ -
নোটিশ প্রকাশ -19.09.2022
আবেদন শুরু - 19.09.2022
আবেদন শেষ - 19.10.2022
Important Links: 👇👇
Official website link -
Official notice Download link -
________________________________________
চাকরি সংক্রান্ত আপডেট পেতে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
Telegram group-
https://t.me/Jobnewsgovtandpraivate
Whatsapp group-
Monday, October 3, 2022
উপন্যাস - পদ্মাবধূ || বিশ্বনাথ দাস || Padmabadhu by Biswanath Das || Fiction - Padmabadhu Part -21
ঠিক আছে , এ্যায়সা হোগা । হামার আড্ডামে আনবো না । দো রোজ বাদমে এ পত্তামে হাজির হবি । চলা যা বহিন , চিন্তা মত কর ।
Saturday, October 1, 2022
রাজ্যে গ্রুপ-D এবং ক্লার্ক পদে কর্মী নিয়োগ || WB group D and Group C Recruitment 2022 || Bench Clerk, Lower Division Clerk and Group D Recruitment 2022
Friday, September 30, 2022
ছোট গল্প - ঈশ্বর কেন সৃষ্টি করলো মানুষ || লেখক - অষ্ট দেয়াশী || Short story - Iswar Keno sristi korlo manush || Written by Asto deayshi
ঈশ্বর কেন সৃষ্টি করলো মানুষ
অষ্ট দেয়াশী
ঈশ্বর যখন পৃথিবী সৃষ্টি করলো তখন পৃথিবী শুধু জল আর জল। ঈশ্বর ভাবতে লাগলো ঈশ্বর সৃষ্টি করলাম পৃথিবী কিন্তু শুধু জল হলে চলবো না স্থল ভাগ করতে হবে। তাই তিনি পৃথিবীর তিন ভাগ জল আর একভাগ স্থল সৃষ্টি করলো।
ঈশ্বর ভাবতে লাগলো স্থল ভাগটি কেমন যেন মরুভূমি। কি করা যায় ভাবছেন ঈশ্বর তাই তিনি উদ্ভিদ দের সৃষ্টি করলেন। উদ্ভিদ তো সৃষ্টি করলেন ঈশ্বর কিন্তু এই উদ্ভিদ কিভাবে বাঁচবে ঈশ্বর কে ভাবিয়ে তুললো তাই তিনি একদিন পশুদের সৃষ্টি করলেন পৃথিবীর বুকে। পশুরা সারা জঙ্গলে ঘুরে বেড়াতে লাগলো। একদিন ঈশ্বর পৃথিবীর বুকে এলেন তিনি ভাবলেন পশুদের বনে বানায় কিন্তু বাকি জায়গা যেন কেমন বেমানান। ঈশ্বর ভাবতে লাগলো কি করা যায়। তাই তার ভাবনা দিয়ে তিনি মানুষ সৃষ্টি করে ফেললেন। কিন্তু তারা বন মানুষ ঘুরে বেড়ায় শিকার করে। এই বন মানুষ দের নিয়ে ও চিন্তায় পড়ে গেলেন তিনি কি ভাবে তার গড়া পৃথিবী সুন্দর হবে। তাই ধীরে ধীরে বন মানুষ গুলো কে মানুষের পরিনত করলেন। তবুও ঈশ্বরের চিন্তার আর শেষ নেই। কিভাবে তার গড়া পৃথিবী সুন্দর হবে দিনরাত তাকে ভাবিয়ে তোলে। তাই তিনি মানুষ কে ঘর বাঁধার বুদ্ধি দিলেন। মানুষ বুদ্ধি করে ঘর বাঁধা শুরু করে দিলেন। ঈশ্বর ভাবতে লাগলো ঘর তো ওদের বাঁধা হলো কিন্তু খাবে কি ওরা তাই তিনি পৃথিবীর বুকে শস্য উৎপাদন করার বুদ্ধি দিলেন। মানুষ চাষ করার বুদ্ধি দিলেন। ঈশ্বর ভাবতে লাগলো কিন্তু ওরা শস্য রাখবে কোথায় জায়গা দরকার তাই তিনি পৃথিবীর বুকে নানা রকম জিনিস করার কারিগরী শিক্ষা দিলেন। একের পর এক বুদ্ধি ঈশ্বর দিলেন মানুষ কে। মানুষ বুদ্ধিমান হয়েই ভাবতে লাগলো আমি যা করেছি তা অন্য কে দেবো কেন❓ এই কথা যেদিন থেকে মানুষের মধ্যে এই ভাবনা উদয় হলো সেদিন থেকে মানুষের মধ্যে ভাগ হয়ে গেলো। প্রথমে ছিলো একটি জাতি পরে তারা নানা জাতিতে পরিনত হলো। তার পর থেকে শুরু হয়ে গেলো লড়াই। ঈশ্বর ভাবতে লাগলো তার গড়া পৃথিবী একি অবস্থা । ঈশ্বরকে দিনের পর দিন ভাবিয়ে তুললো কি করবেন তিনি প্রতি দিন ঘটে যাচ্ছে পৃথিবীর বুকে নানা ঘটনা। কিভাবে এর প্রতিকার করা যায়। আমি তো সৃষ্টি করলাম মানুষ কিন্তু মানুষ এ কি করছে নিজেদের মধ্যে। ঈশ্বর নিজে না এসে বিভিন্ন ধর্মসম্প্রদায়ের মধ্যে একজন করে জ্ঞ্যানী মানব মানবিকা কে পাঠিয়ে দিলেন ঈশ্বর রূপে। তারা পৃথিবীর বুকে এসে মানব প্রেমের বানী প্রচার করলেন। যুগে যুগে তারা এলেন মানুষ রূপে নানা বানী নিয়ে।
সব ধর্মের জ্ঞ্যানী মানুষের একটাই কথা মানব প্রেম। কাউকে মেরে ভয় দেখিয়ে গায়ের জোরে কখনো ঈশ্বরকে লাভ করা যায় না। আজ যা তোমার এক নিমিষেই সব শেষ করে দিতে পারেন তিনি। ভবের ঘরে এসে এমন কিছু করো যাতে যুগে যুগে তোমাকে মনে রাখে মানব। আজ যা তোমার বলে ভাবছো তুমি কালতো ওটা অন্য জনের ছিল। এই পৃথিবীতে তোমার বলে কিছু নেই সব তার শুধু মায়ার খেলা ছাড়া আর কিছু নয়। ঈশ্বর সৃষ্টি করেছে তোমায় সুন্দর পৃথিবী কে গড়ে তোলার জন্য।
ছোট গল্প - বাতাসে বারুদের গন্ধ || লেখক - সামসুজ জামান || Short story - Batase baruder gondho || Written by Samsuz Zaman
বাতাসে বারুদের গন্ধ
সামসুজ জামান
আমার পাগল সুবর্ণ, বাতাসে বারুদের গন্ধ ভেসে আসে। আমি ঘুমের মাঝে আতকে উঠি। এমন তো হবার কথা নয়। এই ঘরে আমি ছাড়া দ্বিতীয় প্রাণী নেই তাহলে কি বিদ্যুৎ বিভ্রাট হল? বিছানা ছেড়ে সারাঘর ঘুরে বেড়াই। সুইচ অন করি দুটো ঘরেরই। ডাইনিং স্পেসের আলো জ্বালি। বাথরুমে পরীক্ষা করে দেখি বিদ্যুতের পোড়া গন্ধ ওখানে তো নয়? তাহলে এই পোড়া গন্ধ রোজ রোজ আসে কেন আসে কেন? আর আসেই বা কোথা থেকে?
আসলে সুবর্ণ জানো, আমি অনেক চিকিৎসা করিয়েছি। তোমার অদৃশ্য উপস্থিতি আমার সারা ঘরে ছড়ানো। এ ঘরের প্রত্যেকটা অনুতে পরমাণু তে তুমি ঘুরে বেড়াও সুবর্ণ। তুমি কি আমার কাছে থাকো? দেখো, আমি তো এত চিকিৎসা করালাম। কতজন আমায় পরামর্শ দিলেন মনোবিদ এর পরামর্শ নিতে। তাই শেষ পর্যন্ত আমি তো ডক্টর অনিল চ্যাটার্জীর কাছেও ছুটে গেলাম। তাঁর মত সুপ্রসিদ্ধ মনোবিদ পাওয়া খুব দুষ্কর ব্যাপার। তিনিও তো আমার সাথে কথা বললেন। আমার বাড়ির লোকেদের তিনিতো জানিয়েছেন যে আমি কোন অসুস্থ অবস্থায়ই নেই।
কিন্তু জানো সুবর্ণ, ঘরের মধ্যে আমি যখনই থাকি তখন আমি শুধু তোমারই ছায়া দেখি। চোখটা একটু বন্ধ করলেও আজও আমি প্রতি মুহূর্তে তোমার অস্তিত্ব টের পাই। বিছানায় মাঝে মাঝে হাঁতড়ে দেখি আমার মন তো বলে পরিষ্কার তুমি আমার পাশে শুয়ে আছো। কিন্তু বিশ্বাস করো সুবর্ণ, তৌঋঋৎঋআমি অন্ধকারে তোমাকে স্পর্শ করার জন্য হাত পর্যন্ত বাড়াই। কিন্তু কিছুই খুঁজে পাইনা। সুবর্ণ, আমার চোখ ফেটে জল আসে। আমি একথা কাকে কিভাবে বলব বলো তো? তুমি কি আমায় একটু বোঝো না? তুমি কি এখনো সেই অবিশ্বাস মনের মধ্যে ভরে রেখে দিয়েছে সুবর্ণ? আমি কি করলে বাঁচব বলতো একটু সুস্থ হয়ে?
এর মানে কিন্তু অপব্যাখ্যা করোনা। এর মানে আমি এটা বোঝাতে চাইনি যে তোমাকে আমি ভুলতে চাইছি। তোমাকে ভুলে আমি বাঁচবো কিভাবে বলতো? তুমি সেদিন তো সম্পূর্ণ অভিমান নিয়ে চলে গেলে আমার কাছ থেকে। তুমি কি সত্যিই জানো না. আমি তোমায় কতখানি ভালবাসতাম? সুবর্ণ, যেদিন কলেজে নবীনবরণে তোমায় প্রথম দেখেছিলাম সেদিনই তো আমি জানতে পারলাম যে তুমি আমার প্রতি কতখানি আকৃষ্ট ছিলে? যখন আমি ব্যাপারটা বুঝতে পারলাম আমি মনে করার চেষ্টা করলাম আমি কি তোমায় এর আগে কোনদিন কলেজের ক্যান্টিনে অথবা ছাত্রসংসদ হলে দেখেছি? আমার মন বলল আমি দেখিনি। কিন্তু আমি অবাক হলাম, দেখলাম. তুমি আমার নাড়ি-নক্ষত্র, প্রতিটা চালচলন অদ্ভুতভাবে যেন মুখস্ত করে নিয়েছো। আমি অবাক হলাম। লজ্জা পেলাম। কিন্তু অবাক হলাম এইজন্যে যে একটা ছেলে আমার মত এরকম একটা মেয়েকে এভাবে ভালোবেসেছে? সেই দিনই আমি নিজেকে তোমার প্রতি সমর্পণ না করে পারিনি সুবর্ণ। তবুও পরের দিন তুমি যখন ক্যান্টিনের টেবিলের নিচে দিয়ে আমার হাতটা ধরার জন্য হাতটা বাড়িয়ে ছিলে আমি নিজেকে সরিয়ে নিয়েছিলাম সে তো একটা নারীর সাধারণ লজ্জায়। আবার তুমি নিজেকে কী অদ্ভুতভাবে সংবরণ করে নিয়ে ক্ষমা চেয়েছিলে যখন বারবার, তখন আমার নিজেকেই ধিক্কার দিতে ইচ্ছে যাচ্ছিল। আমার মনে হচ্ছিল কি জানো, মনে হচ্ছিল হাত ধরে নয়, তোমাকে জড়িয়ে ধরে তোমার কপালে একটা আলতো চুমু দিলেও আমার মনের আশা এক কণাও মিটবে না। সুবর্ণ, তুমি বিশ্বাস করো, আমার ইচ্ছেটা আমার মনের ভেতরটা কুড়ে ফেললেও আমি তা পারিনি, কারণ আমি একেবারেই সেই মানসিকতার ছিলাম না। শুধু সেই মনোভাবের জন্য আমি নিজেকে অনেক কষ্ট করে ধরে রেখেছিলাম।কিন্তু আমার মন প্রাণ. আমার শরীরের প্রত্যেকটা অনু-পরমানু তোমাকে সেই দিনই আমি দিয়ে দিয়েছিলাম সুবর্ণ!
সুবর্ণ, এই দেখো তোমার যে ছবিটা আমার বেডরুমের শো কেসে উপস্থিত থেকে সব সময় আমার সাথে কথা বলে, তাকে নিয়ে আমি যে বুকের মধ্যে চেপে রেখেছি। তুমি বুঝতে পারছ সুবর্ণ, তুমি এই অনুভূতি টের পাচ্ছো? আমার উষ্ণতা তোমাকে কি একটুও ছুঁতে পারছে না সুবর্ণ? তুমি সত্যি বলতো, তুমি আছো কিনা আমার পাশে পাশে? আর তুমি যদি দুষ্টুমি করে বল যে, আমার পাশে নেই, সে কথাটা কি আমাকে বিশ্বাস করতে হবে? পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সত্যবাদিও যদি আমার পাশে দাঁড়িয়ে এই কথা বলে তা হলেও মেনে নেব না। আসলে তারা দেখবে কিভাবে বল তো? তোমাকে তো আমি রেখে দিয়েছি আমার হৃদয়ের কন্দরে কন্দরে। সেই অন্তস্থলের গোপন কথাটা জেনে নেয় কার সাধ্য? তোমার মনে পড়ে সুবর্ণ যেদিন তুমি সত্যিই আমায় ছাড়লে না, জোর করে একটা গান গাইতে বাধ্য করালে, সেদিন সকলের উপস্থিতিতে আমি তোমার উদ্দেশ্যেই গেয়েছিলাম রবীন্দ্র নাথের সেই ভালবাসার গান -- 'ও যে মানে না মানা। আঁখি ফিরাইলে বলে না না না'। তুমি সেদিন পড়তে পেরে ছিলে তো সুবর্ণ আমার মনের না বলা বাণীর সেই অনুরণন? তোমাকে আপ্লুত করতে পেরেছিল তো সেদিনের আমার মনের অব্যক্ত হাহাকার? আমার ভিতরটা জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া সেই যন্ত্রণার অনুভূতি ছুঁতে পেরেছিল তোমায়?
সুবর্ণ, যেদিন তুমি সেনাবাহিনীতে যোগদানের খবর দিয়ে আমার কোলের কাছে নামিয়ে দিলে একরাশ লাল গোলাপ, সেদিন আমি মেলাতে পারছিলাম না তোমার দুটো অনুভূতিকে। একজন সেনা হিসেবে ইউনিফর্মে তোমার ছবির কল্পনা করে আমার মনে হচ্ছিল যে এটা আমাদের ভালবাসার পথের বাধা হয়ে দাঁড়াবে কিনা! তখনই লাল গোলাপ গুলো যেন অন্য অনুভূতি জাগিয়ে তুলে আমাকে আবার ভিজিয়ে দিচ্ছিল মনের ভেতর থেকে। আমি ভাবছিলাম গোলাপের পাপড়ির মত তোমার মন সত্যিই কি পারবে তোমাকে তোমার কর্মস্থলে যোগ্য উচ্চতায় পৌঁছে দিতে? আমি আসলে নানাভাবেই বুঝতে পারছিলাম তোমার মনটা একেবারেই ফুলের পাপড়ির মত নরম।
তারপর তুমি আমাকে অনেক কাঁদিয়ে সেদিন চলে গেলে। গতবছরের প্রায় এই সময়। আজকের এই সেনা দিবসের হিসেবে সঠিকভাবে বললে ১১ মাস ২২ দিন। তোমার পোস্টিং হলো ভারত-চীন সীমান্তে। সুবর্ণ, আমরা কি এর আগে জানতাম এভাবে ভারত চীন সীমান্তের এত খুঁটিনাটি? তুমি জানালে সীমান্তের কাছে দৌলত বেগের কথা। তুমি জানালে আলভি সামরিক ঘাঁটির কথা। আমরা তোমার কাছ থেকেই জানতে পারলাম যে লাদাখের গাল ওয়ান সীমান্ত চিহ্নিতকরণ সংক্রান্ত লাইন অফ কন্ট্রোল এর পাশাপাশি দু শো পঞ্চাণ্ন কিলোমিটার সড়ক বানানোর কথা। সুবর্ণ তুমি তোমার কাজের অবসরে যখন আমায় জানাতে যে এই সড়ক বানানোর ফলে লেহ থেকে দৌলতবেগ পৌঁছতে আগে দুদিন লাগতো কিন্তু এখন নতুন রাস্তা ব্যবহারের ফলে মাত্র ছয় ঘন্টায় পৌঁছানো যাবে, তখন একজন ভারতীয় হিসেবে আমাদের কত গর্ব হতো। আর তুমি সেই সীমান্ত প্রদেশে তোমার একনিষ্ঠ সেবা দিয়ে আমাদের রাতের নিদ্রাকে কেমন অটুট রেখেছ!
কিন্তু সেদিন হঠাৎই তোমার সুরের মধ্যে কেমন চঞ্চলতা ছিল। তুমি সেদিন হঠাৎই বললে আকসাই সীমান্ত চীন নিয়ন্ত্রিত হিসেবেই চিহ্নিত হয়ে আছে অথচ এটা ভারতের সীমান্ত থেকে মাত্র নয় কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। আর ওখানেই কেমন যেন একটু বেশি মাত্রায় উত্তেজনার ভাব। চীন এবং ভারত দুপক্ষের সেনাদের মধ্যেই অতিরিক্ত সতর্কতামূলক প্রস্তুতি চলছে। সেদিন তোমার কথাবার্তা শুনে বুঝতে পারছিলাম সুবর্ণ, তুমি অনেক কিছু গোপন করে যাচ্ছ। তোমার উত্তেজনা তুমি হয়তো ঠিক চেপে রাখতে পারছিলে না। আমি তোমার কথা বলার ছন্দের মধ্যে খুঁজে পাচ্ছিলাম একটা লালবাতির সতর্কতার মতো চিহ্ন। আমার চোখ থেকে জল ঝরে পড়লেও আমি গলার মধ্যে উত্তেজনা আনতে দিচ্ছিলাম না তবুও বোধহয় তুমি ধরে ফেললে সে উত্তেজনা। তুমি আমাকে বোঝানোর চেষ্টা করলে যে ভারতের হাতে অতিরিক্ত আধুনিক এবং উন্নত মানের একশ চারটে ক্ষেপণাস্ত্র আছে। আরো কত কি কথাবার্তা তুমি বলে যাচ্ছিলে কিন্তু আমি বোধহয় নিজেকে হারিয়ে ফেলেছিলাম। ককিছুক্ষণ পর তুমি হঠাৎ আমাকে তোমার দেওয়া সেই গোপন নাম ধরে ডেকে উঠলে। সুবর্ণ, কী ছিল তোমার গলায়? আমি আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলাম না। সেদিন আমি হাউমাউ করে কেঁদে ফেলেছিলাম। তারপর তুমি আমায় কত আদর করলে। আমার সেল ফোনের মধ্যে সেদিন সুবর্ণ তোমার প্রত্যক্ষ উপস্থিতি পুরোমাত্রায় টের পেয়েছিলাম। আমি জানিনা এমন অবাস্তব ঘটনা মানুষের জীবনে কখনো ঘটে কিনা! লোকে হয়তো বলবে এটা অলৌকিক কিন্তু আমি বুঝতে পারছিলাম -- সুবর্ণ, তুমি ষোলআনা আবির্ভূত হয়ে আমাকে সেদিন আদরে আদরে ভরিয়ে দিয়েছিলে। আমার চোখের জল তুমিই তো মুছিয়ে দিয়েছিল সেদিন তোমার দুটো হাত দিয়ে। সত্যি করে বলতো সুবর্ণ তুমি কি অস্বীকার করতে পারো সেদিনের সেই উপস্থিতির কথা?
আর পনেরোই জুনের কথা কি আর বলব বল তোমায়? টিভির সুইচ অন করলাম। টিভি চ্যানেলে সংবাদ শুনতে গিয়ে আঁতকে উঠলাম। তখন বড় বড় অক্ষরে দেখানো হচ্ছিল ভারত চীন সীমান্তের সেই আকসাই-এ ভারতীয় সেনাবাহিনীর পনেরো জনের শহীদ হওয়ার খবর! জানো সুবর্ণ, আমি তখন ছুটে গিয়ে শোকেস থেকে তোমার ছবিটা তুলে আনতে গিয়েই হঠাৎ হাত ফস্কে ছবিটা পড়ে গেল একেবারে মেঝেতে। আর সঙ্গে সঙ্গে ভেঙে চুরমার হয়ে গেল। জানো, আমি তখন উত্তেজনায় কাঁপছিলাম থর থর, থর থর করে। আর তখনই সেলফোনটা বেজে উঠলো। তাকিয়ে দেখি তোমার মায়ের ফোন। মা ফোন করে কোনো কথা বলতে পারছেন না শুধু কাঁদছেন। হাউমাউ করে শুধু হাহাকার ধ্বনিই শোনা যাচ্ছে,কোন কথা নয়। মায়ের এভাবে কান্নায় ভেঙে পড়ার কারণটা তখন আমার কাছে আর বিন্দুমাত্র অস্পষ্ট নয়।
সুবর্ণ আজ তো সেনা দিবস। দেশজুড়ে সেনাদের জয়গান গাওয়া হচ্ছে। কত বড় বড় ভাষণ দেয়া হচ্ছে সেনাদের জয়ধ্বনী দিয়ে। দেশের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী সেনাদের উদ্বুদ্ধ করে কত ভালো-মন্দ স্তোক বাক্য দিচ্ছেন। কিন্তু সুবর্ণ এসবের বাইরে তুমি শুনতে পাচ্ছ কি আজকের দিনে মায়ের প্রাণ ছেড়া সেই আর্তনাদের শব্দ? সুবর্ণ, তুমি দেখতে পাচ্ছো, এই হতভাগিনীর বুক ফাটা আফসোসের আর হা-হুতাশ এর ছবিটা!
জানো সুবর্ণ, আমি পরদিন মায়ের কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম। মা আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে কী যে বলেছিলেন সে কথা আমি বলে বোঝাতে পারবো না তবে তিনি আমায় অনুমতি দিয়েছেন যখনই আমার ইচ্ছে আমি তার কাছে যেতে পারি। আর সেই দিনই আমি আমার পরবর্তী সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছি সুবর্ণ।
ইদানিং একটা সমস্যা হয়েছে আমার। জানো. সব সময় আমি বাতাসে বারুদের গন্ধ পাই। কিছুতেই সে গন্ধ আমায় ছাড়ে না। আমার শয়নে,স্বপনে, জাগরণে সেই বারুদের গন্ধ আমার ভিতরের সবকিছু কুড়ে কুড়ে খেয়ে নিতে চায় সুবর্ণ। আর ইদানিং আমার মুখের ভাষা হারিয়ে গেছে। কথা বলতে আমার একেবারেই ইচ্ছে করে না। আজকে তোমায় লিখে জানাচ্ছি তাই এই খোলা চিঠিতে। আমার মনের জমানো অনেক দুঃখ বেদনার কাহিনী --- খুব পরম ভক্ত যেমনভাবে ঠাকুর দেবতার কাছে নিজের মনের পরম শ্রদ্ধা বিশ্বাসের অঞ্জলি দেয়, ঠিক সেইরকম ভাবে তোমাকে উজাড় করে দিলাম সুবর্ণ আমার মনের না বলা কত কথা এই খোলা চিঠিতে। আমার এই খোলা চিঠির প্রত্যেকটা কথা ভগবান কি তোমার কাছে পৌঁছে দেবে না? দেবে, দেবে, নিশ্চয়ই দেবে। এটুকু পবিত্র বিশ্বাস আমার অন্তত আছেই। আর আজ এই সেনা দিবসে চোখের জলে চিঠিখানি লিখে তোমাকে আর একবার প্রণাম করে আমি পাকাপাকিভাবে মায়ের কাছে চলে যাচ্ছি ; তুমি যেন আমায় ফিরিয়ে দিও না সুবর্ণ!
চোখ ভরা জল আর একবুক ভালবাসার হা-পিত্যেশ নিয়ে অধীর অপেক্ষায় রইলাম তোমার জন্যে।