Tuesday, February 28, 2023

বল্টু ও মাষ্টারমশাই - অদ্বয় দত্ত || গল্প - Story || ছোটগল্প - Short story

 

বল্টু ও মাষ্টারমশাই 

 অদ্বয় দত্ত


চৈত্র মাসের শেষ।সময়ের যিনি হিসেব রাখেন তিনি সন্ধ্যাকে ছুটি দিয়ে রাত্রিকে কাজ বুঝিয়ে দিচ্ছেন।কোন অসহায় দরিদ্রের বাড়িতে দুঃস্বপ্নের কালো অন্ধকারের আবহ তৈরি করতে হবে,কোন ধনীর বাড়ির চতু:সীমায় অন্ধকারকে মোটেই ঘেঁষতে দেওয়া চলবেনা-এইসবই বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন।কয়েকটা নাম না জানা পাখি এখনো টেনে টেনে ক্লান্তভাবে ডেকে চলেছে।দুপুরের গরম হওয়া এখনো মুখ ভার করে আছে,ঠান্ডা হতে আরো বেশ কিছু দেরি।হরমোহন বগলে একটা সেকেলে ছাতা আর হাতে একটা পলিথিন জড়ানো ধাতব টর্চ নিয়ে তড়িঘড়ি কাঁঠালের বনের পাশের রাস্তাটা দিয়ে পড়াতে যাচ্ছিলেন।গ্রামের দিকের অনেকের এই অভ্যেস থাকে;ধাতব টর্চের নতুন ভাবটা যাতে নষ্ট না হয়ে যায় তাই একটা পলিথিনের মলাট জড়িয়ে রাখেন।

হরমোহনের গন্তব্যে পৌঁছাতে তখনো অনেকটা পথ বাকি,ঘটনাটা ঘটতেই হলো।ঘটনাটা অস্বাভাবিক নয়।নিত্য দিনের স্বাভাবিক ঘটনা।কিন্তু ঘটনা ঘটার সময়টা অস্বাভাবিক।অন্যদিন হরমোহনের এরকম হয়না,কিন্তু আজ দুপুরে এক ছাত্রের বাড়িতে জন্মদিনের নেমন্তন্ন খেতে গিয়েছিলেন,তাতেই এই।

থেকে থেকে পেটটা কেমন যেনো মোচড় দিয়ে উঠতে লাগলো।তাঁর মনে হলো ব্যথাটা যেনো পেটের একদিক থেকে অন্যদিকে ছুটে বেড়াচ্ছে।নাহঃ আর বুঝি চেপে রাখা যায়না।চারপাশে আলো ফেলে একটু জলাশয়ের চিহ্ন খোঁজার চেষ্টা করতে লাগলেন হরমোহন।যদিও উনি ভালোভাবেই জানেন এদিকে দূরদূরান্ত পর্যন্ত কোনো জলাশয় নেই;এই পথ ওনার কাছে নতুন নয়। কাছাকাছি মাঠও নেই যে নালার জলে কাজ মিটবে।ভারী মুশকিলে পড়লেন হরমোহন।

নিজের ভাগ্যকে ক্রমাগত অভিসম্পাত করতে লাগলেন।মাছের বড়ো মাথাটা কেনো যে ফিরিয়ে দিলেন না।কেনো যে পাঁঠার মাংসটা আরো কয়েক টুকরো খেয়ে ফেললেন।কেনো যে পায়েসটা তৃতীয়বারও নিয়ে নিলেন।নাহ্ আর ভাবতে পারলেন না।

হঠাৎ ওনার মাথায় এলো বন্ধু সুরেন চাকলাদার একবার বলেছিল বিলেতে নাকি জল ব্যবহার করা হয়না।কাগজ দিয়ে কাজ সারা হয়।তাই কাগজের পরিবর্তে গাছের পাতা দিয়েও কাজ সারা যাবে এই ভেবে টর্চ ফেলে কয়েকটা কাঁঠাল গাছের পাতা পেরে নিলেন।তারপর নির্জন রাস্তায় চারিদিকে একবার তাকিয়ে নিয়ে কাঁঠাল গাছের অগভীর বনের ভেতরে ঢুকলেন।এবং একটা জায়গা দেখে গুরুর নাম করে বসে পড়লেন।


বল্টুরা কাকা জ্যাঠার ছেলে মিলিয়ে পাঁচ ভাই এক বোন।তার মধ্যে বল্টু বড়ো,অষ্টম শ্রেণীতে পড়ে।তবে বড়ো হলেও বড়ো বড়ো ব্যাপারটা তার মধ্যে একটুও নেই।মাথায় সারাদিন কীসব আজগুবি ভাবনা চিন্তা ঘুরে বেড়ায়।যা অবাস্তব তাকে বাস্তবতার ছাঁচে কীভাবে ফেললে তা বাস্তবের তকমা পাবে এটাই ওর ভাবনার বিষয় ছিল।

মাস্টারমশাই পড়াতে আসবেন বলে মা ডেকে ডেকেও বল্টুকে চা মুড়ি খাওয়াতে পারেননি।বল্টু বিকেলে থেকে কী একটা নিয়ে ভেবেই চলেছে।মা অনেকবার ডেকেও বল্টুর কোনো পরিবর্তন না দেখে একটা সময় আর ডাকলেন না।অবশ্য তাঁরও আজ মনটা ভালো ছিলনা।বল্টুর বাবা তাঁর স্ত্রীকে আজ ভালো মন্দ দুটো কথা শুনিয়েছেন।দুপুরে এক ফেরিওয়ালা বিছানার চাদর ইত্যাদি মাথায় করে নিয়ে ফেরি করতে এসেছিলেন।সারাদিন মাথায় করে মোট বয়ে বেড়ানো লোকটিকে বল্টুর মা জানালা দিয়ে ডাকলে লোকটির মনে একটা আশার সঞ্চার হয়েছিল।যদি একটা কিছু বিক্রি হয়!!কিন্তু আমাদের সমাজের কিছু নিত্যনৈমিত্তিক ভুল অভ্যাস সেই কবে থেকেই রয়ে গেছে সেটা লোকটিও জানতেন।সেইরকমই ঘটনা ঘটলো বল্টুর মায়ের ক্ষেত্রে।লোকটিকে ডেকে উল্টে পাল্টে নয় নয় করে দশ খানা চাদর খুলে দেখে,নাক সিঁটকিয়ে একটাও না কিনে লোকটিকে ফিরিয়ে দিতে বল্টুর মা বিন্দুমাত্র দ্বিধা করলেন না।বল্টুর বাবা সেটা নিয়ে অনেক কথা শুনিয়েছিলেন দুপুরে।তিনি বলেছিলেন,'যদি কিনবে না তো অত জিনিস খুলিয়ে দেখার কি দরকার?লোকগুলো কষ্ট করে বয়ে বেড়াচ্ছে দু-পয়সা রোজগারের আশায়।তোমার সেসব দিকে খেয়াল আছে?'তাতেই বল্টুর মায়ের মেজাজটা খারাপ হয়ে গিয়েছিল।বল্টুর তারপর ভয় হলো পাছে মা কোনোভাবে সেই রাগটা তার উপর না ঝেড়ে দেন।তাই মাষ্টারমশাই আসার সময় হয়ে গেলেও বল্টু দৌড়ে চা মুড়ি খেতে গেলো।

মাস্টারমশাই এসে পড়লেন।এবং এসেই গোয়ালঘরের খড়ের চালে গুঁজে রাখা চকচকে কাঁচা কঞ্চিটা পেড়ে নিয়ে এসে বসলেন।অন্যান্য ভাইরা আগেই নিজের নিজের জায়গায় চুপচাপ বই নিয়ে বসে পড়েছিল। হ্যারিকেনের আলো তাদের মুখে একটা লালচে ভীতিজনক ছাপ ফেলে রেখেছিল যেটা মাস্টারমশাই পড়িয়ে না যাওয়া অব্দি অদৃশ্য হওয়ায় নয়।এদিকে বল্টু তখনো বইপত্র নিয়ে আসেনি।মাস্টার একবার হাঁকও দিলেন,'কই রে বল্টু লাঠিটা নিয়ে যাবো নাকি?দেখবি কেমন মজা?'

'আজ্ঞে না মাষ্টারমশাই,আমি এসে গেছি।' বলে বল্টু এসে ধপ করে বসে পড়লো।তারপর সবাই মিলে সুর করে পড়া শুরু হলো।

বল্টুর কাকার ছোটো মেয়েটার চার বছর বয়স।সে দুরে একটা দরজার পাশে পর্দার আড়ালে পর্দার একটা অংশ খামচে ধরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মাস্টারের পড়ানো দেখছিল।তার অনুসন্ধানী শৈশবসম্পৃক্ত চোখে না জানি কত প্রশ্ন উঁকি দিয়ে যাচ্ছিল।বল্টুর মা সামান্য কিছু জলখাবার মাষ্টারমশাই-এর জন্য নিয়ে যাওয়ার সময় ছোট্ট মেয়েটিকে দেখতে পেয়ে বললেন,

'কিরে পড়াশোনা করবি?' 

'আমি সেলেট পিনসিল লিখবো।'

'তুই শশুরবাড়ি যাবি।তোর বর আসবে দেখবি পালকি করে।',বলে মা জলখাবারটা দিতে চলে গেলেন।

বল্টুর বাবা কাছেই একটা ঘরে ছিলেন।উনি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে মুখে 'উহ:' বলে শব্দ করলেন।তারপর ভাবলেন মেয়েটিকে এখন থেকেই বিয়ে শব্দটা কেনো বলা?বিয়ে নামক নিয়মটির সঙ্গে পরিচয় যথাসময়ে তো ঠিকই হতো বা হবে।এখন থেকে মেয়েটির শিশুমনে এসব না ঢোকালেই কি নয়?আমাদের সমাজ কি কোনদিন পাল্টাবে না?বাচ্চা মেয়েকে দেখলেই আশীর্বাদস্বরূপ 'তোমার ভালো বিয়ে হোক' বোধহয় কাঙ্ক্ষিত নয়।

এদিকে কিছুক্ষন হলো বল্টুর একটা সমস্যা শুরু হয়েছে।বেশ মনোযোগ সহকারেই সে পড়ছিল কিন্তু সকাল থেকে একবারও প্রাত্যহিক কাজে না যাওয়ায় এবং সন্ধ্যায় গরম চা পেটে পড়ায় প্রকৃতির ডাকে একবার সারা দিতে না গেলেই যে নয় সেটা সে বেশ ভালোই বুঝতে পারছিল।

তাই মাষ্টারমশাইকে কোনো রকমে আমতা আমতা করে সমস্যার কথা বলে ঘর থেকে বেরিয়ে সে বেশ কিছুদূরে মাঠের ধারের পুকুর পাড়ের দিকে গেলো।এদিকটা গ্রামের শেষের দিক।পায়ে চলা রাস্তা আছে।সাইকেল মোটরগাড়ি এদিকে যাবার জো নেই।বলাবাহুল্য রোজ সকালে এদিকে কাজ সারতে এলেও রাতে অন্ধকার নামলে কখনো বল্টুকে আসতে হয়নি,কাজেই অন্ধকার সয়ে এলেও গভীর পুকুরটাকে দেখে তার বেশ ভয়ই করছিল।অবশ্য পুকুরে নামার 'সময়' তখনো আসেনি।গতকাল সজনে ডাঁটা দিয়ে শুক্ত হয়েছিল,বল্টু বেশ কটা কাঁচকলা খেয়েছিল তাতেই আজকে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে অসুবিধা হয়ে পড়েছে।ও ভেবেছিল যেরকম বেগ এসেছে তাতে বুঝি পরিষ্কার হয়ে যাবে।কিন্তু হলনা।আবার যেই ও ভাবছে 'নাহ আজকে আর হবেনা,উঠে পড়ি।' সেই আবার পেটে পাক দিয়ে উঠছে!তাই বহুক্ষণ ধরে ও বসেই রইলো।

এদিকে মাস্টারমশাই দেখলেন বল্টু সেই যে গেল এখনো এলোনা,তাই তিনি ভেতর ভেতর রাগে ছটফট করতে লাগলেন।বার বার বলতে লাগলেন,'বল্টুটা কেন এলোনা এখনো?ঘরে পড়াশোনা করেনাই নাকি?',

'কিরে জংলা?তোর দাদা কই?'

জংলা দেখলো এই সুযোগে যদি পড়াটা কিছুক্ষন ফাঁকি দেওয়া যায় তাহলে বেশ হয়।তাই সে তাড়াতাড়ি বলে উঠলো,'একবার ডাকতে যাবো মাষ্টারমশাই?'

মাস্টারমশাই একটু ভেবে বললেন,'যাবি? আচ্ছা তবে যা।'

জংলা দৌড়ে বেরিয়ে গেলো।তারপর পুকুর ঘাটের কাছে আমগাছের জঙ্গলের বাইরে দাঁড়িয়ে চিৎকার করতে লাগলো, 'দাদা এ দাদা!কই রে? মাষ্টারমশাই এখুনি লাঠি নিয়ে আসচে তোকে জেংলে লাল করে দেবে।' 

ওদিকে বল্টু পড়েছিল মহাসমস্যায়।একে তার পরিষ্কার

হচ্ছিলনা আবার বসে থাকতে থাকতে সেই আজগুবি জিনিস গুলো মাথায় ঘুরছিল।একবার একবার তার চোখের সামনে ভেসে উঠছিল বিশালবপু মাষ্টারমশাইকে কারা যেন চ্যাংদোলা করে তুলে নিয়ে এসে হইহই করে এক-দুই-তিন বলে পুকুরে ছুঁড়ে ফেলে দিচ্ছে।আর মাষ্টারমশাই 'ছেড়ে দে ওরে ছেড়ে দে বাবাগো মরে গেলুম'- বলে পরিত্রাহি চিৎকার করছেন।তারপর 'কবাং' শব্দ করে জলে পড়লেন এবং হাত পা ছুঁড়ে একটা মান কচু গাছ ধরে পুকুরপাড়ে ওঠার বৃথা চেষ্টা করে গাছ সমেত আবার পুকুরে 'কবাং' করে পড়লেন।এবং পুকুরের মৎস্যশ্রেণীর প্রাণীরা তাদের নিজের জমিদারিতে বিশাল কোনো অজানা বৃহদাকার প্রাণীর উপস্থিতি টের পেয়ে ভয় পেয়ে ইতস্তত ঘুরে বেড়াতে শুরু করলো।পুকুরধারে কয়েকটা গোসাপ জলে নামার তাল করছিল তারাও ঘাবড়ে গিয়ে উল্টে ডাঙার দিকে পা বাড়ালো।

কিন্তু বল্টুর ভাইয়ের ডাকে বল্টুর চমক ভাঙলো।সে কোটর থেকে বেরিয়ে আসা গোল গোল পাকানো চোখে তেরে আসা মাষ্টারমশাই-এর বীভৎস মূর্তিটা কল্পনা করে ভিরমি খেয়ে উঠে পড়ে তড়িঘড়ি আম গাছের জঙ্গল থেকে বেরিয়ে এলো।তারপর ভাইয়ের সঙ্গে বাড়ির দিকে হাঁটা দিলো।

এদিকে জগতের সমস্ত কিছু যিনি দেখে চলেছেন তিনি মিটিমিটি হাসলেন।কেনো হাসলেন সেটা আর একটু পরে জানা যাবে।

বল্টু বাড়িতে গিয়ে মাষ্টারমশাই-এর সামনে দাঁড়াতেই মাষ্টারমশাই এক হাত নিলেন।বল্টুর সামনে 'মাষ্টারমশাই-এর কাল্পনিক জলে পড়ার দৃশ্যটা' বার বার ঘুরে বেড়াচ্ছিল তাই সে হঠাৎ ফিক করে হেসে দিল। ব্যাস,আর যায় কোথা।মাষ্টারমশাই কাঁচা কঞ্চি দিয়ে ঘা কতক লাগিয়ে দিলেন।তারপর হঠাৎ ধপ করে বসে পড়লেন।কারণ একটা গন্ধ তাঁর নাকে এলো।গন্ধটা দুর্গন্ধ।এবং সেটা উনি ছাড়াও যে আরো অনেকে পেয়েছে সেটা তাদের মুখের দিকে একবার তাকিয়েই উনি বুঝে গেলেন।বল্টুর কাকার ছেলে বলে উঠলো,'উঁহু কীসের গন্ধ!!অ্যা ছি।'

বল্টুর নিজের অপর এক ভাই বলে উঠলো,' মাষ্টারমশাই জানেন আমাদের বাঁশতলায় এরকম গন্ধ ছাড়ে সবসময়,দুনিয়ার লোক ওখানে সকালে পেট পরিষ্কার করতে যায় যে!' 

ভয়ানক কোলাহল শুরু হলো।সেই কোলাহলের শব্দ শুনে বল্টুর বাবা বেরিয়ে এলেন।বল্টুর দাদুর বৈঠকখানায় রোজ সন্ধ্যায় কয়েকজন গণ্যমান্য বয়স্ক ব্যক্তি এসে গান-গল্প করেন তাঁরা বেরিয়ে এসে নাকে চাপা দিয়ে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে এদিক ওদিক তাকাতে লাগলেন।বল্টুর মা কাকিমারা রান্নাঘর থেকে কিছু একটা হয়েছে শুনেও অত লোকজনের সামনে বাইরে আসতে না পারে আড়াল থেকে ব্যাপারটা বোঝার চেষ্টা করতে লাগলেন।এদিকে বল্টুর ভাইয়েরা স্ব স্ব স্থান থেকে উঠে পড়ে দুর্গন্ধের উৎস খোঁজার চেষ্টা করে চলেছে কিন্তু বল্টু এবং তার ভাই জংলা- এই দুজন চুপচাপ বসেই রইলো।জংলা মাঝে মাঝে মুখ টিপে হাসতে লাগলো।তখন মাষ্টারমশাই চোখ পাকিয়ে বললেন,'কী রে জংলা?খুব হাসছিস যে?তুই বুঝি সব জানিস?'

বল্টুর ভাই জংলা অমনি হো হো করে হেসে উঠে বললো,' হ্যাঁ মাষ্টারমশাই আমি সব জানি।'

বয়স্ক লোকজন বলে উঠলেন,'কী জানো বলে দাও না।কোথা থেকে গন্ধ আসছে এরকম?নাক যে জ্বলে গেল বাবা!'

'দাদা পুকুরপাড়ে বাহ্যে গেলো যে।দিয়ে তো আসার সময় পুকুরে নামলো না।বাহ্যে বসেই উঠে চলে এলো।তাহলে গন্ধ ছাড়বে না?'

'সেকি কথা?এটা সত্যি নাকি? কী রে বল্টু?' ভুরু কুঁচকে বল্টুর বাবা জিজ্ঞেস করলেন।

বল্টু ঘাড় নেড়ে বললো,'মাষ্টারমশাই ডাকতে পাঠিয়েছিলেন যে।তাই তো তাড়াতাড়ি চলে এলুম।'

'অ্যাহ বলো কি?বাবারে বাপ।ছি ছি।বল্টু তুমি এরকম করতে পারলে? ছি ছি।দুয়ারের কাছেই ঠাকুর ঘর।একটা বুদ্ধি বিবেচনা নাই? ছি', বয়স্ক লোকজন বলে উঠে লাফিয়ে তফাতে সরে গেলেন।

এবার সব শুনতে পেয়ে বাড়ির মা কাকিমারা বেরিয়ে এলেন এবং তারপর 'গেল গেল' রব করে চেঁচিয়ে বাড়ি মাথায় তুললেন।

ঠাকুমা ডুকরে কেঁদে উঠে বললেন,'সেদিন ওর দাদু একটা নতুন শতরঞ্জি কিনে আনলো।আমি মাষ্টারমশাই পড়াতে আসছেন বলে ওদেরকে বসতে দিলুম।আর নোংরা করে ফেললে গা?এবার ওইটা আর ঘরে তুলতে পারবো?ছি ছি ছি।ও পুঁটি গোবর জল নিয়ে আয় গোটা উঠোনে দুয়ারে লেপে দিয়ে যা।'

বল্টুর মা অন্য সময় হলে ছেলেকে ঘা কতক লাগিয়ে দিতেন।কিন্তু এখন বল্টুকে ছুঁলে এই রাত্রে আবার স্নান করতে হবে ভেবে দুর থেকেই বকাবকি করতে লাগলেন।

বল্টুর বাবা বলটুর কান ধরে সোজা করে দাঁড় করিয়ে আচ্ছা করে মলে দিতে দিতে বলতে লাগলেন,'ছি তুই একটা অপদার্থ।পুকুরে নামতে তোর কি হচ্ছিল? তুই জানিস না বাহ্যে গেলে জল ব্যবহার করতে হয়?উঠে চলে এলি?ছি একবারে মাথা কাটা গেলো!'

বল্টুর ভাইরা এই তালে বেশ মজা পাচ্ছিলো।তারা হইহই করে আরো গোলমাল সৃষ্টি করলো।বল্টুর দাদু এরপর বেরিয়ে এলেন।তিনিও ব্যাপারটা শুনে বল্টুকে যারপরনাই বকাবকি শুরু করলেন।

কিন্তু কেউ লক্ষ করলনা মাষ্টারমশাই কোনো কথা বলছেন না।তিনি চুপ করে দাঁড়িয়ে কাণ্ডকারখানা দেখে যাচ্ছিলেন।সব জানার পর তিনি বল্টুকে একবারও বকাবকি করলেন না।কারণটা বোধহয় তিনি আর উপরওয়ালা ছাড়া আর কেউ জানতেন না।আজ দুপুরে মহাভোজ খেয়ে সন্ধ্যায় পড়াতে আসার সময় জঙ্গলে প্রকৃতির ডাকে সাড়া তো তিনিও দিয়েছিলেন।এবং সেই রাস্তায় জলের কোনো চিহ্ন না থাকায় ওই অবস্থাতেই ধুতি সামলে বল্টুদের বাড়িতে পড়াতে চলে এসেছিলেন।কাজেই…



শুধু তোমাকেই ভালোবাসি - সংযুক্তা পাল || গল্প - Story || ছোটগল্প - Short story

 শুধু তোমাকেই ভালোবাসি

       সংযুক্তা পাল




বরুণ বড্ড সুন্দর। বেশ অনেক মেয়েকে খেলিয়েছে সরি নাচিয়েছে। মানে এখনকার সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে লিখতে গেলে যা হয়! তো সেই বরুণ প্রেমে পড়ল কার! না ও পাড়ার মন্টির। মন্টি ওর বাবার শাড়ির ব্যবসাটাই ধরেছে। নিজস্ব দোকান। বি.এ পাশ। এই হল যোগ্যতা। আর রূপ। বলব কি! আপনারা শুনে আবার রে রে করে তেড়ে আসবেন না। কারণ সত্যি কথাই বলছি। তাকে আমি ব্যঙ্গ করতে বসিনি। তাকে লোকেরা যা বলে তাই বলছি। আর আমি যদি বলি তবে ও হল কালো মেয়ের পায়ের তলায় দেখে যা আলোর নাচন। শুধু পায়ে নয়, পুরো মুখশ্রী আলোকিত করে রেখেছে ওর হাসি আর টানা টানা দু'টো চোখ। খুব চঞ্চলা আর মিশুকে। ওর পিসিরা ওকে বড় ভালোবাসে। মা নেই বলেই হয়তো। এদিকে পিসিদের আবার দুধে আলতা রঙ। ও মেয়ের রঙ কালো, আবার স্থুলকায়। নিন্দুকেরা বলে কালো মোষ।

আমাদের নায়ক বরুণ আবার ইঞ্জিনিয়ারবাবু তায় রাজপুত্রের মত দেখতে। সকল সুন্দরীদের কাঁদিয়ে মন্টির প্রেমে কি করে ডুবে গেল এটা তারা কিছুতেই আবিষ্কার করতে পারল না। ওদিকে বরুণের মা-কাকিমা কেঁদেই অস্থির। তারা মন্টিকে কিছুতেই বাড়ির বৌ করবে না। 'কেন রে, দেশে কি মেয়ের অভাব পড়েছে? তুই ওকে নিয়ে কোথাও বেরোতে লজ্জা পাবি। লোকে হাসবে'। বরুণের এত কথায় বয়ে গেছে। জেদ ধরল মন্টি ছাড়া কাওকে নয় বিয়ে। ওকে কেও মেনে না নিলে আলাদা হয়ে যাবে! তবু ওই ভালো। খুব ভালো।


আসলে যা হয়েছে এতদিন সে তো লম্বা ইতিহাস। সুন্দরী মেয়েগুলোর সাথে ঘুরে, খেয়ে, শুয়ে বরুণ এ'টুকু বুঝেছে সব ক'টার রুপের দেমাক। একটা কেও সংসারী না। তা বলে কি সুন্দরী তন্বীরা সংসারী হয় না! নিশ্চয়ই হয়। উদাহরণ ওর মা-কাকিমা। ওরা রুপের আগুনে বাপ কাকাদের ঝলসে মারছে। আর ওর বাবা-কাকারা ভয়েই জুজু যদি সুন্দরী বৌ ছেড়ে চলে যায়! অতএব এরা যেমন করে সংসার করছে মেনে নাও, যেমন করে রান্না করছে মেনে নাও। কেও তো বলতে পারবে না বাচ্চারা পড়াশোনা শেখেনি বা বাড়ির ছেলেরা না খেয়ে অফিস গেছে। তবে কি! ব্যস, ওই জরু কা গোলাম হয়ে থাকতে হবে। এটা হল বরুণের দেখা দু'জন ঘরোয়া সুন্দরী মহিলা। বরুণ তাই ঘরোয়া, সুন্দরীকে আনতে পারবে না। মন্টি মন্টির বিজনেস দেখবে, ও ওর চাকরি। দিনশেষে ওরা ওদের বেডরুমে থাকবে। রুপ.....এতদিন তো ওই আগুন নিয়ে খেলল। এখন অরুচি।

আসলে মন্টিকে দেখে বরুণ হান্ড্রেড পার্সেন্ট শিওর যে ওর কোনো চাহিদা নেই। ও ওর মা কাকিমাকে দেখেছে শুধু এই চাই, সেই চাই বলতে। শুধু গয়না আর শাড়ির পাহাড় করেছে লোককে দেখাবে বলে।(এই রে এবার আমায় সবাই জিগাবে, ও আবার কি কথা! শাড়ি তো মেয়েদের জাতীয় পোশাক। মেয়েরা চাইবে না তো কি ছেলেরা চাইবে! আর চাওয়ার কী আছে। তারা রান্না করে, বাচ্চা মানুষ করে। এসব তাদের হক। সে তো নিশ্চয়ই। তবে 'যা কিছু প্রয়োজনের অতিরিক্ত তাই লোভ'। এই রে। পাটকেল ছুড়বেন না। শ্রী রামকৃষ্ণ বলেছেন, আমি না। তবে আমি মন্টির গুণগান গাইতে বসিনি। ও ওরকমই। ঘুরতে খেতে ভালোবাসে। আপনি ওকে ছেড়া,ফাটা জামা পরিয়ে রাখুন, অপমান করুন। কিচ্ছুটি বলবে না। কিন্তু বেচারীর ঘোরার আর খাওয়ার খুব শখ। ভোজনরসিক যাকে বলে। বরুণ সে'বার মন্টি আর ওর বান্ধবীকে ফলো করে আসতে আসতে নিজে কানে শুনেছে। ব্যস, সেই থেকে শয়নে- স্বপনে মন্টি)


ওদিকে ওর মা-কাকিমা কোনো ভাবেই বরুণকে মন্টির থেকে দূরে আনতে না পেরে রণে ভঙ্গ দিল। অবশেষে মন্টির বাড়িতে বরুণদের বাড়ি থেকে বিয়ের প্রস্তাব গেল।


এইসব কথা শুনে কত সুন্দরীরা ঠাকুরের কাছে মন্টির মত হওয়ার জন্য মানত করল তার ঠিক নেই। যদিও শোনা কথা। আমি বাবা কিছু জানি না। কালোরা সুন্দর হয়, ফর্সারাও সুন্দর হয়।কেও অসুন্দর হয় না,কুৎসিত মানুষের মন। আমাকে কিল ঘুষি দিতে আসবেন না। আমি মন্টির গল্প বলতে এসেছি। কালো ফর্সা রোগা মোটা ইত্যাদি বৈষম্যমুলক আলোচনা করতে আসিনি। আমি নিজেও গমরঙা। কেও ভুল করেও ফর্সা বলবে না। যাইহোক তালে-গোলে, গোলে-মালে মন্টি সান্যাল বাড়ির বৌ। শুধু বৌ নয়, একেবারে বিজনেস ওম্যান। বরুণ ওকে অফিস যাওয়ার সময় দোকানে পৌঁছে দেয়। আবার ফিরে রাতে আনতে যায়। মন্টি বাপেরবাড়িতেও কিছুটা সময় কাটাতে পারে। বরুণ আসলে ভালো করেই জানে মন্টিকে ওদের বাড়িতে কেও দেখতে পারে না। ওকে একা পেলে ওর জীবন অতিষ্ঠ করে তুলবে। তাই ওর এই ব্যবস্থা। বৌকে আগলে রাখে।

এমন ভালোবাসা দেখে লোকে জ্বলবে না তাতো হয় না। কিন্তু বরুণ জানে ও তো আর জরু কা গুলাম হবে না। কারণ মন্টি সেই ধরনের নয়।এরপর দু'জনে লন্ডনে হনিমুন করে আসে। কিছু লোক একেবারে জ্বলে পুড়ে ছাই। এদিকে হিংসুটেদের দলে নাম লিখিয়েছে মন্টির দুই পিসিও। মেয়েরা শ্বশুরবাড়ির মানুষগুলোর কাছে চক্ষুশূল হবে এ তো খুব স্বাভাবিক কথা। কিন্তু তা বলে বাপেরবাড়ির মানুষগুলোর কাছেও। নিন্দুকেরা বলে ও মেয়েই দোষী। আর আমি ওর জন্য সহানুভূতিশীল কারণ ও আমার গল্পের নায়িকা, কর্ণধার গল্পের। অতএব আমার ভাষায় 'হতভাগী'। বরুণ ভাবতো ও ওর বাড়ির লোকজনের কাছ থেকে মন্টিকে সরিয়ে এনে ওকে ভালো রাখতে পারছে। আদতেই তা নয়। মন্টি ধীরে ধীরে ওর বাবার পরিবর্তন টের পেতে লাগল। বুঝতে পারল ওর বাবা তার ব্যবসা দুই অবিবাহিত বোনকে লিখে দিতে চায়। যেখানে মা হারা ভাইঝিকে তারা মানুষ করেছে, নিজেরা বিয়ে পর্যন্ত করেনি সেখানে তাদের এ হক'টুকু কিছুই না। আর তারা যদি দয়া করে মন্টিকে কিছু দেয় সেটা ওর ভাগ্য। মন্টি তো ওর বরের সাথে সুখেই আছে। আর অত বড়লোক শ্বশুরবাড়ি! এখানে দোকানে এসে রোজ রোজ বসতে হবে না। হায় রে ভাগ্য। বাবা এ'টুকু জানতে চাইল না মন্টির কী ইচ্ছে! ওনার মুখে এক কথা, 'তুই সুখেই আছিস। কিন্তু এ বয়সে তোর পিসিদের আর বিয়ে হবে কি না সন্দেহ'। মন্টি একদিন বরুণকে সব খুলে বলে। বরুণ বেশ অবাক হয়। এরপর মাস তিনেকের মধ্যেই বরুণ মন্টিকে নিয়ে পুনেতে চলে যায়। মন্টি এখানেও ব্যবসা শুরু করতে চেয়েছিল কিন্তু ও টের পায় ও সন্তানসম্ভবা। দেখতে দেখতে তিনমাস কেটে যায়। বরুণ কাওকেই কিছু জানাতে বারণ করে। বরুণের বাড়ি আর মন্টির বাড়ি দু'তরফকেই। বরুণ জানে কেও ওদের ওয়েল উইশার নয়। মন্টির ওপর এত বিদ্বেষ কেন এদের ও বুঝে পায় না। বরুণ সত্যিটা বোঝে। মন্টিকে বোঝানোর চেষ্টা করে। মন্টির সহজ মাথায় ঢুকলে তো! তবে ও এ'টুকু জানে বরুণ ওকে সব থেকে বেশি ভালোবাসে।এ তো ওর মৃত মায়ের আশীর্বাদ।তবু মাতৃত্বের সময়টা এমন একটা সময় মন অনেক দুর্বল থাকে। স্বামী ছাড়াও বয়োঃজ্যেষ্ঠ কারো সান্নিধ্য পেতে মন চায়। আর সেই দুর্বলতার সুযোগ নেয় ওর শাশুড়ি। ফোন করে মন্টি ওর শাশুড়িকে। মন্টির শাশুড়ি ফোনের মধ্যেই সুন্দর অভিনয় দিয়ে ওর মন জিতে নেয়। মন্টি ওনাকে আসার জন্য অনুরোধ করে। মন্টির শাশুড়ি এই সুযোগটাই খুঁজছিল। ছেলে যেতে বলে না, বৌ ওদের সংসারে যেতে বলছে। এবার সুদে-আসলে হতচ্ছাড়ীটার ঋণ শোধ করব। কিসের নাতি, কিসের নাতনী! শোনা যায় মুখপুড়ীটার বাপেরঘর থেকেও কেও পোছে না। শুধু আমার ছেলেটাকে বশ করে রেখেছে। ফোন ছেড়ে দিয়েই বরুণের মা দেওরকে টিকিটের ব্যবস্থা করতে বলে দেয়। সঙ্গে তিনি দোসর হিসেবে নিয়ে যাবেন দেওরের মেয়েকেও।


মন্টি বরুণকে বলে ওর মা আসবে।বরুণ তাতে খুব রেগে যায়। ও সোজা বলে দেয় বাচ্চাটার ভবিষ্যত যদি কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় সেই দায় তবে মন্টির। কারণ বরুণ ওর মায়ের পরিবর্তনের কথা ভাবতেই পারে না। এ অবিশ্বাস্য। মন্টি আশ্বস্ত করে। মানুষের পরিবর্তন হতে কতক্ষণ এও বলে। বরুণ তখন আসল সত্যি বলে। বিয়ের পর বরুণের সামনেই ওর মা রাগের মাথায় মন্টির মৃত্যু কামনা করেছে। মন্টি অন্যদিকে বাইরে তাকিয়ে থাকে। বাইরে পাখিরা তখন গোধূলীর আলোতে বাসায় ফিরতে ব্যস্ত। বড্ড তারা ওদের।

মন্টির শাশুড়ি আর ননদ এসে পৌঁছে যায় পুনেতে। ওদের ব্যবহারে মন্টির মনে হয় ওদের পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু নিয়তি অন্য কিছু হিসেব করেছিল। বরুণের সাথে মন্টির সুখী দাম্পত্য ওদের চক্ষুশূল ছিল। ধীরে ধীরে মন্টির খাবারে বরুণের মা বিষপ্রয়োগ করতে থাকে। আর একটু একটু করে মন্টি অসুস্থ হতে থাকে। ডাক্তারের কাছে চেকাপে গেলে ডাক্তার মন্টির ওয়েট না বাড়া নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে। শেষে আট মাসে বাচ্চাটার আর পালস রেট খুঁজে পাওয়া যায় না। মন্টিও মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়ে। পেট কেটে মৃত বাচ্চা বের করতে হয়। ডাক্তাররা মন্টিকে বাঁচালেও চিরতরে ওর মাতৃত্ব হারানোর কথা জানিয়ে দেয়। মন্টি বা বরুণ কেও কিছু বুঝতেই পারে না। ওদিকে শাশুড়ি ননদ তাদের কার্যসিদ্ধি করে বাড়ি ফিরে যাওয়ার আর্জি পেশ করে। মন্টি খুব আফসোস করে বলে, 'বাচ্চাটাকে বাঁচাতে পারলাম না। তবে তোমাদের মাঝে মাঝে আসার অনুরোধ রইল'।

এরপরের গল্প কি হতে পারে! বরুণ আর মন্টির মধ্যে কি ভাঙন ধরেছে? নাকি ওরা কোনো কিছুর তোয়াক্কা না করে অসময়ে একে অন্যের হাত শক্ত করে ধরে আছে? আচ্ছা দুটি মানুষ যারা বাইরে থেকে দেখতে বেমানান হলেও মনের দিক থেকে বড্ড মানানসই তারা মানিয়ে গুছিয়ে থাকতে পারলে অন্যদের এত ফাটে কেন?


না, বরুণ মন্টির হাত ছাড়েনি। সেই কথাটা তো বলিনি। মন্টির লাস্ট চেকআপের সময় ডক্টর বলেছিল, স্লো পয়েজনিংএর আশঙ্কার কথা। কিন্তু ততদিনে বড্ড দেরি হয়ে গেছে। প্রথম দিকে ডক্টর ধরতে না পারলেও পরে পেরেছিল। এর জন্য মন্টির শাশুড়ি কোন জাতীয় ওষুধ ব্যবহার করেছিল, তার কম্পোজিশন কি, কোথা থেকে তিনি পেয়েছিলেন এরকম ওষুধ অত ডিটেল দিলাম না। শুধু মন্টির মন থেকে কারো প্রতি বিশ্বাস ব্যাপারটা চলে গিয়েছিল। বরুণের কথা আলাদা। ভালোবাসার মানুষ সাচ্চা হলে সব বাধা পেরোনো যায়। মন্টির পুনরায় মা না হতে পারার কথাটা বরুণ ছড়িয়ে দিয়েছিল ওর মা-বোন আর ওর বাড়ির লোকের মধ্যে। ওর মা-বোন কলকাতায় ফিরে যেতেই বরুণ আর মন্টি উড়ে গেল এক নতুন দেশে। যে দেশের ঠিকানা কেও কখনো জানবে না, ওরা জানতে দেবে না কাওকে। আর রাজপুত্র নয়তো রাজকন্যা ঠিক আসবে আবার, তার সময় মতো। বরুণ মন্টিকে ভালোবাসে এটাই দিনশেষে সত্যি কথা আর শেষ ।



ডাকাতিয়া বাঁশি - সঞ্জীব সেন || গল্প - Story || ছোটগল্প - Short story

 ডাকাতিয়া বাঁশি

   সঞ্জীব সেন





কৃষ্ণ কদম গাছের নিচে এসে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকল ।মন ভালো নেই। কতদিন রাধার সাথে দেখা হয় নি । কৃষ্ণ রাধা বিরহে কাতর। মনমরা। রাধা কি আসবে না কি আসবে না! বসন্ত বাতাস বইছে গাছে গাছে। ফুল ফুটেছে। গাছে গাছে কচি পাতায় ভরে গেছে। পশু পাখিরা সব তাদের প্রেমিক প্রেমিকার সাথে মিলনে কাতর। কৃষ্ণ তার কোমরে গোঁজা মোহনবাঁশিটি বার করল তারপর তাতে সুর দিল । এ যে-সে বাঁশি তো নয় এ ডাকাতিয়া বাঁশি।‌কিন্তু রাধা ঠিক করে নিয়েছে সে আর সেই বাঁশির সুর কখনো শুনবে না । ডাকাতিয়া বাঁশির সুর কানের ভিতর দিয়ে মরমে এসে ধাক্কা মারে তখন মন কেমন যেন উথাল পাতাল হয়ে যায় । তাই আজ কৃষ্ণের কোনো দুষ্টুমিতে কান দেবেনা । রাধা বেশী করে কাজে মন দিল কিন্তু তারও মন‌ যে পড়ে আছে কৃষ্ণের ভাবনায় । রাধা উদ্ভিন্ন যৌবনা নারী। ঊর্ধাঙ্গে চোলি নিম্নাঙ্গে ঘাগড়া পরেছে । লেসে জড়ির কাজ। ওড়নাটা পাশে রাখা। রাধার মনোজগতে দারুণ ব্যথা।‌ কৃষ্ণ তার থোরাই কেয়ার করে । রাধা অনেকবার বলেছে আমি তোমাকে কতবার বলেছি কৃষ্ণ , আমি তোমার সম্পর্কে কে হই জানো না,আমাদের এই মিলন উচিৎ নয়। কৃষ্ণ ততো ছেলেমানুষীর মত জোর করেছে । রাধা ঠোঁট কামড়ে বলেছে খুব শখ না । উল্টে তারই হৃদয় দংশন‌ হয়েছে। ওড়ানা পাশে রেখে ঘরের কাজে ব্যস্ত রয়েছে । কৃষ্ণের মুখে তার রূপের অনেক প্রশংসা শুনেছে । কানে কানে বলেছিল। কৃষ্ণের বুকে মাথা রেখে শুনেছে আর লজ্জায় রাঙা হয়ে উঠেছে । বুকের ভিতর তোলপার করেছে । শ্বাস ফুলেছে । সেই শ্বাস কৃষ্ণের বুকে গিয়ে মিশেছে। আয়নায় নিজেকে দেখে মিলিয়ে নেয় কৃষ্ণের বলা কথা গুলো। কথাগুলো কী সত্যিই না শুধুই মনগড়া । বুকের থেকে খসে পড়েছে ওড়না । রাধা তার উন্নত স্তনের দিকে তাকাল সত্যিই কী সুমেরু পর্বতকে বঞ্চিত করে শোভিত হয়েছে তার এই কুচযুগ। কোমরে হাত রাখল সিংহের কাছে থেকে চুরি করেছে শোভিত হয়েছে এই কোমর । আর নিতম্ব যেন তাম্বুরা বাদ্য হরণ করে তৈরী হয়েছে! রাধা প্রথমে লজ্জা পেল তারপর আহ্লাদিত হল । তখনই কৃষ্ণের সেই ডাকাতিয়া বাঁশির সুর মরমে এসে বলল যমুনা পুলিনে কদম গাছের তলায় কানু অপেক্ষা করছে। রাধা ভাবল কী করে বেরুবে আজ বাইরে যাওয়ার কোনো উপায় নেই । পিসিশাশুড়ি আর দুই ননদ‌ সারাক্ষণ নজরে রাখছে । এদিকে মোহনবাঁশির সুর সারা দেহমনে ঝংকার তুলছে ।এইভাবে কিয়ৎক্ষণ কাটলো।তারপর এক ঘরা জল‌ কাত করে ফেলে দিয়ে পিসিশাশুড়িকে কে বলল‌ আমি যমুনায় চললাম জল‌ ফুরিয়ে গেছে। তাড়াহুড়োয় ওড়না নিতে ভুলে গেল। ছুট লাগালো কী অমোঘ আকর্ষণে।‌পথের মধ্যে সখী ধরল সাজিয়ে দিল ফুলের সাজে। ‌মথুরাহাট থেকে ফেরার পথে সখী সাজি নিয়ে ফিরছিল তখনই তার রাধার সাথে দেখা। রাধার মৃনালভূজে ফুলের অঙ্গদ পরাতে পরাতে চপল হাসি দিয়ে বলল ‘তুই তো গেলি ' হাসির দমকে তার ওড়না খসল। তখনই রাধার খেয়াল‌ হল সে ওড়না নেই নি । বলল ‘ছাড় তো মুখপুড়ি'।রাধা আজ সুন্দর সেজেছে।কন্ঠহার এমন ভাবে রেখেছে যাতে বক্ষযুগলের সাথে দুলতে পারে মৃদুছন্দে।রাধা দেখল কৃষ্ণ ঊর্ধাকাশের দিকে চেয়ে শুয়ে আছে ।রাধা চুড়ির শব্দে মন ভাঙার চেষ্টা করল । কৃষ্ণ ঘুরে দেখল রাধাকে দারুণ লাগছে ফুলের সাজে। কৃষ্ণ উঠে বসল পুলকে ঘনঘন নিঃশ্বাস পড়ল। কৃষ্ণ বলল ‘সত্যিই তুমি না মায়া !'রাধার হাত ধরল ঘন হল সেই আহ্বানে যতটা প্রেম ছিল তার চেয়ে বেশি জোর ছিল। রাধা জানতো এই জোর উপেক্ষা করা তার পক্ষেও সম্ভব নয়। রাধার অন্তর ভিজে উঠল । রাধা আজ বাধা দিল না যেন নিজেই চাইছে সমস্ত বাধা সম্ভ্রম ভেঙ্গে যাক আর নিজেকে দূরে রাখতে পারবে না। কৃষ্ণ প্রথমে চক্ষু মেলে দেখল তারপর প্রাণভরে আবৃত করল । রাধা বলল ‘তুমি খুব দুষ্টু ’এটা যে তার মনের কথা নয় মুখের কথা । আজ মন যা চাইছে তাই করবে । কৃষ্ণের গলা জড়িয়ে ধরলো তারপরে প্রবল আবেগে অধর গ্রীবা চুম্বন করতে লাগলো আর কৃষ্ণ! এক করে ফুলের আবরন সরিয়ে প্রতিদান দিল চুম্বনে বক্ষোদেশ থেকে সর্বাঙ্গে। তখনই তার মোহনবাঁশিটি পড়ে গেল আর পড়তে পড়তে কদম তলা তারপর সেখান হতে পড়তে পড়তে কোথায় হারিয়ে গেল । কৃষ্ণের খেয়াল পড়লো না । তারপর মোহনবাঁশিটি দ্বাপর থেকে কলিযুগের সীমায় ঢুকে মোহিন্দ্র দত্ত লেনের এক ফ্লাট বাড়ির ছাদে এসে পড়লো।





আজ ভোরের গাড়িতে বাড়ির সবার সঙ্গে নয়নারও ছোটমামার বাড়ি যাওয়ার কথা ছিল মামাতো দাদার বিয়েতে ।‌ সেইমত গোছগাছ করেও নিয়েছিল ,শেষ সময়ে এসে ডিসিসন চেঞ্জ করেছে । সে যাবে না, কারণ বাবা মা ওখানকার এক ছেলের সাথে বিয়ে ঠিক করতে চলেছে । সরকারি চাকুরে হলেও বয়সটা বেশি।‌নয়না বয়স্ক লোকের সাথে বিয়ে করতে পারবে না । বাবা মা কে জানাইনি এখনও । নয়নার পুরো নাম মৃগনয়না । মৃগনয়না নামে যে ডাকত সে রূপঙ্কর ।‌কলেজ ফ্রেন্ড । তারসাথে ভালবাসার বা প্রেমের কোনো সম্পর্ক ছিল না । তবে ভালোলাগত । শুধু তাই না রূপঙ্করের সাথে কথা বলতে সহজ লাগত । আজ মৃগনয়না ঠিক করেছে রূপঙ্করের সাথে দেখা করতে যাবে । কলেজ ছাড়ার পর একবারই দেখা হয় ছিল‌ এক মাল্টিপ্লেক্সে । পাশাপাশি বসে সিনেমাও দেখেছিল। পরিনীতা। তারপর যোগাযোগ নেই । ফোন নম্বর থাকলেও ফোন‌ করা হয় নি। কিন্তু মৃগনয়নার আজ রূপঙ্করের কথাই মনে হল । মহিন্দ্র দত্ত লেনের ফ্লাটবাড়িটির নাম "ঝাউপাতা " রূপঙ্কর এমনটাই বলে ছিল । রূপঙ্কর দুপুরের খাওয়া শেষ করে একটা বই নিয়ে শুয়ে পড়েছিল । সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় ‘ রাধাকৃষ্ণ’। দরজায় বেলের শব্দ শুনতে পেল । রূপঙ্করের মা সামনে একবাড়িতে পুজোর নেমন্তন্ন গেছে তবে কী ফিরে এলো । রূপঙ্কর দরজা খুলে অবাক হলো । শুধু অবাক নয় তার চেয়ে বেশী পুলকিত হলো । মৃগনয়না ! কলেজ ছাড়ার পর একবারই দেখা হয়েছিল । হিসাব করলে দশ বছর পর ‘‚মৃগনয়না তুই, এতদিন পর ’। যদিও পাঁচ বছর আগে সিনেমা হলে দেখা হয়েছিল তখনও ছিপছিপে ছিল আজকে একদম গর্জিয়াস লুকিং তারসাথে ডেঞ্জারাসও। মৃগনয়না বলল কি ভাবছিস , ‘এইখানেই দাঁড় করিয়ে রাখবি'। রূপঙ্কর বলল ‘আয় , সরি’ । ঘরে ঢুকে জানতে পারল রূপঙ্কর এর মা মানে কাকিমা নেই‌ । এই মুহূর্তে এই ফ্লাটে তৃতীয় কেউ নেই। রূপঙ্কর একটু ভীত হয়ে বলল ‘আসার সময় ফ্লাটের কেউ দেখেনি’? ‘দেখেছে তো, একজনকে জিজ্ঞেস করেই তো এলাম । কেন, এনি প্রবলেম!’ মৃগনয়না বলল । রূপঙ্কর বলল ‘ফ্লাট কালচার, বুঝবি না’। রূপঙ্কর বলল বোস ,অফিস থেকে তিন দিনের ছুটি‌ নিয়েছি, জ্বর’।আজ অনেকটাই ফ্রেশ‌ লাগছে । মৃগনয়না কপাল ছুঁয়ে এমন ভাবে দেখল মনে হবে যেন বিয়ে করা বউ। রূপঙ্কর বলল ‘ও কিছু না সামান্য ই।’ মৃগনয়না খাটের পাশে বসা রূপঙ্কর একটু দূরে বসা হেলান দিয়ে ।‌ মৃগনয়না ফ্যাশান ডিজাইন নিয়ে পড়েছে ব্লাউজের উপরে কাজ করছে। সম্ভবত নিজের ডিজাইন করা ব্লাউজ পরে এসেছে আর শাড়িটি ও দারুণ। রূপঙ্কর তাকিয়ে ছিল । তখন বাইরে যৌবনের দূত হয়ে টিয়া পাখিটি ট্রি ট্রি ,,,করে ডেকে এক প্রান্ত হতে অন্য প্রান্তের দিকে উড়ে গেল । আর ওদের ভিতরে কি যেন একটা হল । রূপঙ্কর বলল ‘তোকে কিন্তু হেব্বি লাগছে । এই ব্লাউজের ডিজাইন কি তোর নিজের করা '। মৃগনয়না হাসল কিছু বলল না । দুজনে চুপ ছিল । রূপঙ্কর ভালভাবে দেখছিল মনে মনে ভাবছিল এই বইটায় বর্ণিত রাধার যে রূপ লেখা হয়েছে ঠিক সেই রকমই । দুই লাইন কবিতা মনে পড়ে গেছিল । অনেক দিন আগের। মনিশ ঘটক এর । রূপঙ্কর হাসির ঝলক ঠোঁটে ফুটে উঠেছে ।‘ মৃগনয়না বলল হাসছিস কেন!' রূপঙ্কর বলল ‘ এমনি, ও কিছু নয়।’ মৃগনয়নার কি যে হল । রূপঙ্করের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ে বলল ‘তোকে বলতেই হবে নিশ্চয়ই দুষ্টু কথা ’ । রূপঙ্করের বুকের উপরে মৃগনয়না । ত্রিশ ছুঁয়েছে ওর বয়স। যৌবনের মাইলস্টোন। রূপঙ্কর মৃগনয়নাকে নিচের দিকে নিয়ে নিল । মৃগনয়নার খারাপ লাগছিল না বরং ভালোই লাগছিল নাহলে নিজেকে সরিয়ে নিত । রূপঙ্কর চোখ রাখল বুকের দিকে ক্রেপ সিল্কের শাড়ির ভিতরে স্পষ্ট স্তনদুটি। মেদহীন শরীর । মৃগনয়না শরীরের উপর দারুণ যত্ন নেয় জিমও করে নিশ্চয় । মৃগনয়না বলল কি ‘ভাবছিলি বল’ । রূপঙ্কর বলল বলছি, মৃগনয়নাকে আবার উপড়ে নিয়ে বলল 


'বক্কলশাষনমুক্ত শুভ্র স্তনদ্বয়


সহসা উদ্বেল হলো বক্ষময় ’



আজ মৃগনয়না কী একটু বেশি রোমান্টিক। মৃগনয়না বলল তাই না, চুলগুলো এলোমেলো করে দিল তারপর রূপঙ্করের কপালে চুমু খেল তারপর ঠোঁটে তারপর গালে । রূপঙ্কর প্রতিদানে ঠোঁট গভীর চুমু খেল যেন এর আগে অনেকবার’ চুমু খেয়েছে । মৃগনয়না এবার বলল‘ ছাড় , শাড়িটার কি অবস্থা হলো দেখেছিস’ । মৃগনয়না উঠল বুকের আঁচল অনেক আগেই সরে গেছিল । শুভ্র স্তনদ্বয় প্রকাশিত হয়েছিল শঙ্খের মতো । রূপঙ্কর মন্ত্রমুগ্ধের মতো দেখেছে । মৃগনয়না শাড়িটা ঠিক করবে বলে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে দেখল পুরো খুলে নতুন করে পরতে হবে । মৃগনয়না তাই করলো শাড়িখুলে নতুন করে পরল রূপঙ্কর দেখল সেই ছিপছিপে মেয়েটা কি সুন্দরী হয়েছে। ব্লাউজের ডিজাইনটা একদম অন্যরকম । মৃগনয়না বলল একটু ফ্রেশ হতে হবে । ওয়াশ রুম টা কোনদিকে? ওয়াশ রুম থেকে বেরিয়ে আয়নার সামনে চুলটা ঠিক করতে করতে বলল‘ কি একটা হয়ে গেল না !’ রূপঙ্কর বলল ছাদে যাবি , দারুণ হাওয়া দিচ্ছে। মৃগনয়নাকে ছাদে নিয়ে গেলেন আর তখনই ছাদের কোনায় মোহনবাঁশিটা খুঁজে পেল । এত সুন্দর একটা বাঁশি কারুর চোখে পরল না । রূপঙ্কর বাঁশিটি হাতে নিল কোন ছোট বেলায় মেলা থেকে বাঁশি কিনে বাজিয়েছিল মানে ফু দিয়েছিল তার থেকে কোন সুর বেরোয়নি ।এই বাঁশিটি একদম অন্যরকম। কারুকাজ করা । মৃগনয়না পশ্চিমপ্রান্তে ছিল । বিকাল হয়ে গেছে । কোকিল ডাকছে । দক্ষিণ দিক দিয়ে হাওয়া দিচ্ছে। রূপঙ্কর বাঁশিতে ঠোঁট রাখল আর সুন্দর সুর বেরিয়ে এলে ।রূপঙ্কর নিজেই অবাক হলো এমন সুন্দর সুর এটা কী বাঁশির কেরামতি না ওর নিজের । মোহন করা সুরটা ভাসতে ভাসতে মৃগনয়নার কান দিয়ে মনের গভীরে মরমে ধাক্কা মারল । মৃগনয়নার কি যেন একটা হলো মৃগনয়না দৌড়ে এসে রূপঙ্কর কে জড়িয়ে ধরলো বাহুবন্ধনে । ভাগ্যিস কেউ দেখেনি মৃগনয়না বলল ‘আমি বাড়ির দেখা ছেলেটাকে বিয়ে করতে পারবো না রূপ, প্লিজ । তুই কিছু একটা কর ’ রূপঙ্কর টি সি এসে সেক্টর ফাইভ এ চাকরি করে । দুই পরিবার চেনে সমস্যা হওয়ার কোনো কারণ নেই।‌রূপঙ্কর এসব নিয়ে ভাবছে না ভাবছে মৃগনয়না রূপ বলে ডেকেছে শুনতে কি ভালো লাগছিল। শুধু তাই না কিছুক্ষণ আগে মৃগনয়না যেভাবে চুমু খেয়েছে আর ও নিজেও । মৃগনয়নার বাহুবন্ধন থেকে আলগা করে মৃগনয়নার কপালে চুমু খেল তারপর ‘বলল তোদের বাড়িতে যাব বিয়ের প্রপোজাল নিয়ে ।’ কোকিলটা ডাকছে । তখন রূপঙ্করের হাতের মোহন বাঁশি টা অদৃশ্য হয়ে গেল আর মেঘের আড়ালে অস্পষ্ট ময়ূরপুচ্ছ দেখা গেল কিন্তু ওরা কেউ দেখতে পেল না।তখন তারা আলিঙ্গনে আবদ্ধ ।







স্বাধীনতার নব- উদযাপন - দেবপ্রিয় দাশ || গল্প - Story || ছোটগল্প - Short story

 

স্বাধীনতার নব- উদযাপন


দেবপ্রিয় দাশ



রনীতা সিদ্ধান্ত নিল যে তার নিজের দেওয়া শর্তে রাজি হলে তার ফ্ল্যাট নিতে কোন আপত্তি নেই। দু কামরার ফ্ল্যাট, যার একটা ঘরে গড়ে উঠবে দাদুর স্মৃতিবিজড়িত এক অসাধারণ মিউজিয়াম। প্রমোটার অভিষেক প্রামানিককে প্রস্তাব দিতেই সে একবাক্যে সম্মতি দিল। আর কোন সমস্যা রইল না।

     রনীতাদের দীর্ঘদিনের পুরনো বাড়ি মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে বর্ধমান জেলার দুর্গাপুর শহরের উপকন্ঠে। বাড়ির বয়স প্রায় পঞ্চাশ হতে চলল। রনীতার দাদু ইন্দ্রনারায়ন চৌধুরী তৈরি করেন এই বাড়ি। প্রশস্ত স্থানে যা প্রায় অট্টালিকার মত। প্রথম থেকেই আদি জমিদার বংশের বাড়িতে রনীতারা জয়েন্ট ফ্যামিলির মধ্যেই ছিল। একাধিকবার মেরামতিও হয়েছে এই বাড়ি। দাদুকে নিয়েই যথেষ্ট গর্ব ছিল রনিতার। তিনি ছিলেন প্রবীণ স্বাধীনতা সংগ্রামী। তিনি ছিলেন নাতনি অন্ত প্রাণ। রনীতাও দাদু বলতে অজ্ঞান। তিনি উদ্বুদ্ধ হন বিপ্লবের মন্ত্রে। ঋষি অরবিন্দের বিশ্বস্ত সঙ্গী ছিলেন তিনি। স্বাধীনতা সংগ্রামের লক্ষ্যে অরবিন্দ ঘোষকে নানাভাবে সহায়তা করেছিলেন। ধরা পড়ে কারাবরণও করেন। ব্রিটিশরা জেলে তার উপর নির্মম অত্যাচার করলেও তিনি সবকিছুর স্বীকারোক্তি করেন নি।

      স্বাধীনতার কয়েক বছর পর দাদু এই বাড়ি বানান । পুরনো পেশা বইয়ের ব্যবসায় আবার ফিরে আসেন। এছাড়া হোমিওপ্যাথিক ডাক্তারিও করতেন। পরে রনিতার বাবা তিনতলাটা বানান। এই বাড়ির প্রতি আত্মিক টান তাই খুব বেশি অনুভব করে রনীতা। ছোটবেলায় কয়েক বছর সে দেখেছে যে দাদু বছরের দুই দিন 15 ই আগস্ট ও 26 শে জানুয়ারি বাড়ির ছাদে পতাকা তুলতেন। এক বিশেষ পরিকল্পনা নিতেন দাদু। পাড়ায় সবার বাড়ি গিয়ে বলে আসতেন যে তারাও যেন সকাল সাড়ে এগারোটায় যে যার ছাদে ওঠে। দাদু নিজের ছাদে পতাকা তুলে গর্জে উঠতেন 'জয় হিন্দ, বন্দেমাতরম' ধ্বনি দিয়ে। সেই ধ্বনি শোনার পরই এলাকার সব বাড়ির বাসিন্দারা তাদের ছাদ থেকে একই ধ্বনিতে সমস্বরে গর্জে উঠত। প্রবীণ স্বাধীনতা সংগ্রামী বলে দাদুকে সবাই শ্রদ্ধা করত। পাশের পাড়াও যোগ দিত এই ভারত বন্দনায়।

     দাদু মারা যাবার কয়েক বছর পর থেকেই পরিবারে বিচ্ছিন্নতা দেখা দিল। রনিতার কাকা বাইরে চলে গেলেন। তার দুই ছেলেরা ব্যাঙ্গালোর ও হায়দ্রাবাদে সেটল করে গেল। রনিতার বাবাও মারা গেছেন, মায়ের আগেই অকালমৃত্যু হয়। এক বিধবা পিসির সাথে রনীতা থাকত এ বাড়িতে। তিনিও সম্প্রতি গত হলেন। রনীতা বর্তমানে বিবাহিতা তবে চাকরির সূত্রে এখানে থাকে ও মাঝেমধ্যে তার বরের সাথে আসানসোলে কাটায়। রনীতা নিজে একটা কলেজের নন টিচিং স্টাফ। বর্তমানে পিসির ছেলেও বদলি হয়ে ঝাড়খণ্ডে গেছে। রনিতার একার পক্ষে এত বড় বাড়ি সামলানো সম্ভব নয়। একা থাকা নিরাপদও নয়। দাদারা প্রস্তাব দিয়েছে বাড়ি দিয়ে দেবে প্রমোটারকে। ফ্ল্যাট হলে নিজেরা একটা নেবে। পিসির ছেলেও সস্তায় একটা ফ্ল্যাট কিনে নিতে চায়। রনীতা বুঝেছে এটাই বাস্তববাদী সিদ্ধান্ত কিন্তু তার অন্তর এতে সায় দিচ্ছে না। দাদু বা একজন স্বাধীনতা সংগ্রামীর সাধের বাড়ি গুঁড়িয়ে ফ্ল্যাট উঠবে এটা তার কাছে বেদনাদায়ক মনে হচ্ছে ! সোজা কথায় হাজারো মধুর স্মৃতিতে ভরা এই বাড়ির চিন্হ মুছে যাক এটা সে মানতে পারছিল না।

    এমতাবস্থায় রনিতার স্বামী স্বপন একটা প্রস্তাব দিল - বলল -"একটা কাজ করো, ফ্ল্যাট তৈরি হোক। হলে বরং আমাদের নিজেদের একটা ভাগ হবেই, সেখানে একটা বড় ঘরে দাদুর সব ব্যবহৃত জিনিসপত্র সাজিয়ে আমরা বরং একটা মিউজিয়াম গড়ে তুলব। দাদুর স্মৃতিবিজড়িত সেই যাদুঘর আমাদের প্রতিবেশী ও পরিচিতরা আমাদের উপস্থিতিতে দেখতে পারবে। মিডিয়াকেও জানানো যাবে। " রনিতার মনে অবশ্য এই প্রস্তাব নাড়া দিল। বলল -" তা অবশ্য করাই যায়। এতে আমার আপত্তি নেই।" স্বপন বলল - 'প্রমোটারকে ফোনে জানাও, রাজি হবেই।'

     দুর্গাপুর শহরে বছর দশেক আগেও প্রমোটারির এত রমরমা ছিলই না। পরে মানুষের চাহিদা বাড়ায় এই ব্যবসা জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। প্রমোটার অভিষেক প্রামানিক রনিতাদের পাড়ারই ছেলে। রনিতার চেয়ে তিন বছরের বড়। এ লাইনে কয়েক বছর হল এসে সুনাম পেয়েছে। সবার পূর্বপরিচিত, তাই ধরে নেওয়া যায় কাজটা ভাল করবে। রনীতা অভিষেককে ফোনে এই পরিকল্পনা জানাতেই সে একেবারে লুফে নিল। বলল --' আরে তুমি তো একেবারে কারেক্ট সিদ্ধান্ত নিয়েছ। মিউজিয়াম করলে তো খুবই ভাল হয়। চিন্তা নেই, দাদুর জন্য একটা ঘরে মিউজিয়ামের মত স্ট্যান্ড, শেলফ, গ্যালারি সবকিছুই বানিয়ে দেব। যেমন চাইবে তেমনি হবে।" রনিতা বলল - " বেশ তাহলে আমাদের ফ্ল্যাট নিতে কোন আপত্তি নেই। আমাদের রান্নাঘর দরকার নেই , প্রয়োজনে বাইরের খাবার কিনে খাব। বরং একটা ঘর বড় মাপে বানিয়ে তাতে গড়ে তুলব মিউজিয়াম"। অভিষেক খুশি হয়ে বলল-" ভেরী গুড, বিশিষ্ট কাউকে এনে উদ্বোধনও করাতে পারি যদি তুমি চাও। "-- "ওকে থ্যাংকস।" - দরকারে তাই করা যাবে।" জবাব দিল রনীতা।

     দাদাদের এ সুখবরটা দিল রনীতা। দাদারাও ফ্ল্যাট পাবে বলে খুশি। বাকি ফ্ল্যাটগুলো প্রমোটার নিজের মত বেচবে। কোন সমস্যা নেই। যথারীতি আয়োজন শুরু হল। সামনের মাসেই বাড়ি ভাঙা শুরু হবে। জিনিসপত্র সরিয়ে ফেলার মূল দায়িত্ব রনিতারই। অভিষেক একটা বাড়ি ভাড়া করে দিল। সেখানে রনীতা আর স্বপন মাঝেমধ্যে থাকবে। মালপত্র গোছগাছ শুরু হয়েছে। সব ভাড়া বাড়িতেই শিফট হবে । অভিষেক ফোন করে জানতে চাইল - 'কবে সম্পূর্ণ প্যাকিং করতে পারবে ?" রনিতা উত্তর দিল -" সামনের মাসের সেকেন্ড উইকে। মাল উঠিয়ে নেবার সময় একটা লরি ও লোকলস্কর পাঠিয়ে দিও"। -- "নিশ্চই, সে নিয়ে কোন চিন্তা নেই। মাল খালাসের লোক রেডি আছে। পাঠাবার দুদিন আগে ফোনে জানাব।" -- "ওকে থ্যাংকস"

    দাদারা বাড়ি ভাঙার পর ভিতপুজোর দিন আসবে। তাদের বাকি মালপত্র রনিতার তত্বাবধানেই খালি হবে। রনিতা প্যাকিং শুরু করে দিল। স্বপন দুদিন তাকে হেল্প করে গেল। টুকটাক হাবিজাবি মাল বেচেই দিল।

      নিজের ঘর সেরে ঢুকল দাদুর ঘরে। এখানকার প্রায় সব জিনিস মিউজিয়ামের জন্য ভালভাবে প্যাক করতে হবে। কাজের চাপে ক্লান্ত অবসন্ন হয়েও সেকাজ করতে লাগল রনীতা। প্রথমেই দাদুর কাঁচের আলমারি থেকে পুরনো বইপত্র ও জামাকাপড় বের করে বস্তাবন্দী করল। এরপর কলম, ছাইদানি, লাঠি, ছুরি, চিরুনি, টুপি ইত্যাদি আলাদা ব্যাগে ভরল। এরপর দাদুর খাট থেকে বালিশ, তোষক, কাঁথা বের করে মেঝেতে নামাল। ভালভাবে খাটের কাঠের পাটাতনের উপর তাকাতেই তার চক্ষু চড়কগাছ হল। খাটের বাম ও ডান পাশে তো দুটো গোল রিং বা আংটা লাগানো আছে। দুটো পৃথক অংশ পাশাপাশি আছে।

      সে ভালভাবে পর্যবেক্ষণ করে বুঝল যে এটা তো আদতে box খাট। কিন্তু সেযুগে বক্স খাটের তো কোন অস্তিত্বই ছিল না। আজকের দিনে ঘর ছোট থাকলে বক্স খাট করে তাতে জিনিসপত্র রাখতে হয় লোককে। দাদুর বিছানায় এই ব্যবস্থা তো অবিশ্বাস্য ! সে বুদ্ধি খাটিয়ে বুঝল এ আসলে বিশেষভাবে তৈরি করা খাট যাতে ব্রিটিশদের নজর এড়াতেই গোপনীয় মালপত্র লুকিয়ে রাখতে ব্যবহার করা হয়েছে। বাড়িতে পুলিশের রেড হলে যাতে জানা না যায় তাই এই আয়োজন। জরুরি কাগজপত্র বা অস্ত্রশস্ত্র লুকনো থাকত। ডানদিকের পাটাতনের আংটা তুলে সেটা দাঁড় করল দেয়ালে ঠেকিয়ে। এতে অবশ্য মামুলি ব্যাগ ও দড়ি ছাড়া কিছুই মিলল না। এবার বামদিকেরটা তুলতেই চোখে পড়ল কিছু অমূল্য সম্পদ। একটা ভগবদগীতা, একটা ফটো এলবাম আর ওনার নিজের হাতে লেখা একটা ডাইরি। একইসঙ্গে ভারতের এক জাতীয় পতাকা। পতাকাতে মাঝে চরকার ছবি রয়েছে। এর নিচের ডান দিকের কোনে লেখা 1947। অর্থাৎ স্বাধীনতার বছরেই। তখনও চরকাই ছিল পতাকায়। রনীতা অবাক হয়ে ভাবল এই সম্পদের অস্তিত্বের কথা দাদু একবারও তাকে জানায়নি কেন ? গোপন করে গেছেন। এলব্যাম খুলে দেখল বেশ কিছু পুরনো সাদা কালো ফটোগ্রাফ। চার পাঁচটা ফটোতে দাদুর সঙ্গে ঋষি অরবিন্দকে দেখা যাচ্ছে। অরবিন্দ সেলুলার জেল থেকে ছাড়া পাবার পরই হয়ত এগুলো তোলা হয়েছিল। জীবনের শেষ লগ্নে তো তিনি সন্ন্যাস জীবন গ্রহণ করেন। ডায়েরির পাতা ওল্টাতে গিয়ে সে হারানিধির সন্ধান পেল। দেখল দাদুর বিভিন্ন অভিজ্ঞতার সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেওয়া আছে। তাঁর বৈপ্লবিক কাজকর্মের ইতিহাসের টুকরো কথা লেখা রয়েছে। গোপন মিটিং, একে অপরকে খবর পৌঁছে দেয়া, গোপনে ব্রিটিশদের উপর নজরদারি ইত্যাদি এতে লিপিবদ্ধ। এই মহামূল্যবান সম্পদ মিউজিয়ামে রাখার পক্ষে একেবারে আদর্শ ! একটা দূরবীনও পাওয়া গেল।

      ডায়েরির শেষ পাতায় কয়েকটি কথা লিখেছেন দাদু। এর তারিখ দেখা গেল 2010 সালের মে মাসে। অর্থাৎ এটাই একমাত্র সাম্প্রতিক কালে লেখা। বাকি সব পুরনো। এতে লিখেছেন -- "এই খাটের গোপন কুঠুরিতে যা আছে তা আমি কাউকে জানাইনি। জানাজানি হলে বহু লোক দেখার আবদার করবে, হারাবারও ভয় আছে। তবে খুব তাড়াতাড়ি আমি আমার নাতনি রনীতাকে সব জানিয়ে যাব। বয়স হয়েছে, আর বেশিদিন বাঁচব না। রনীতাকে বলব ও যদি এইসব অমূল্য ঐতিহাসিক স্মৃতিবিজড়িত জিনিস দিয়ে কোন মিউজিয়াম করে তাহলে তা হবে সর্বোত্তম। স্বাধীনতার 75 বছর পূর্ণ হবার পর যদি তা সম্ভব হয় তাহলে আমার আত্মা শান্তি পাবে বেশি। পরিচিতরা এ মিউজিয়ামের দর্শন করবে, মিডিয়াও খবর কভার করবে। সামনের বছরই আমার নিজের জন্মদিনে নাতনিকে সব জানাব।"

       আনন্দে চিকচিক করে উঠল রনিতার দুই চোখ, দাদুরও একই স্বপ্ন ছিল। এখুনি স্বপনকে খবরটা জানাতে হবে কারন ওই তো জাদুঘরের প্রস্তাব দিয়েছিল। সে বুঝল দাদু ঠিকই জানাতেন সবকিছু কিন্তু আকস্মিক হার্ট এট্যাক হওয়ায় পৃথিবী ছাড়তে বাধ্য হলেন নিজের পরবর্তী জন্মদিনের আগেই। সব দ্রুত প্যাকিং করল রনীতা।

      অবশেষে ফ্ল্যাট উঠল মাথা উঁচু করে। প্রায় দু বছর লাগল। স্বাধীনতার 75 বছর পূর্ণ হয়ে গেল। পরিবারের সব সদস্যরা মিলে সাজিয়ে তুলল মিউজিয়াম, নেতৃত্বে রনীতা। সে আর বর স্বপন সব বাড়ি বাড়ি গিয়ে বলে এল যে এই ফ্ল্যাটে এবার থেকে স্বাধীনতার নব- উদযাপন হবে। দাদুর মতনই ছাদে উড়বে জাতীয় পতাকা। জয়ধ্বনি উঠবে - 'জয় হিন্দ, বন্দেমাতরম'। গোটা পাড়াও একই সময়ে যে যার ছাদে উঠে তুলবে সেই জয়ধ্বনি। মিউজিয়ামের উদ্বোধন হয়ে যাবে আগেই। সবাই রনিতার উপস্থিতিতে দর্শন করতে পারবে দাদুর অমূল্য ঐতিহাসিক সম্পদ- সংগ্রহ। বছরে 15 ই আগস্ট ও 26 শে জানুয়ারি ছাড়াও বিশেষ অনুমতি নিয়ে দেখা যাবে জাদুঘর। মিডিয়াও ডাক পাবে।

     কালজয়ী হয়ে উঠবে দাদুর অবদান ও স্বপ্ন। স্বাধীনতার নব - উদযাপনে সবই হবে মুখরিত।

 


ভোরের বেলায় - চাতক পাখি || Poetry || Poems

 ভোরের বেলায়...

      চাতক পাখি 


ঘন ঘোর রাত্রি 

ধীরে ধীরে হচ্ছে সমাপন ।

আবছায়া আঁধারে , 

নিচ্ছে প্রস্তুতি বুঝি দিয়ে প্রভাতী জাগরণ ।


ওই দূরে কুঁড়ি গুলিও তাই 

যেগুলোর ফোটার কথা ছিল ভোরের আলোয় ।

সেগুলো বুঝি পাপড়ি মেলেছে এবার

তাই তারই বুঝি চারিদিকে সুগন্ধ বিলয় ।


আর ওই যে কাঁঠালের বনে  

শুষ্ক পাতায় উঠে খসখস ধবনি।

কে যেনো সেথায় করে গমন ,

আর আমি কান পেতে শুনি।


তাই শুনে উঠে পড়ি বিছানা ছেড়ে ,

যেই না পড়েছে মনে মোর রূপকথার কথা।

ভাবলুম,তবে কি ভোরের আলোকে 

সেই চরিত্ররা নেমেছে হেথা!


ভেবে বড় ব্যাকুল আমি 

 তাই উঠে পড়ি চট করে।

আর ছুটে আসি দেখতে জানালার পাশে 

যদি পাই দেখা তাদের এই ঘুম ঘোরে।


কিন্তু ওই এসে তো অবাক   

চেয়ে দেখি এতো আরো আঁধার ।

চাইলাম তাই ঘড়ির পানে ,

দেখলাম,না সকাল হবার সময় হয়েছে এবার।


দেখাদেখি হটাৎই হাত পড়ে জানলার শিকে 

দেখি জানলার শিক বেয়ে শেষবেলার শিশির পড়ে।

যেনো অগণিত ইলশে গুঁড়ির ফোঁটা,

তাই বুঝি কিছুই যাচ্ছে না দেখা আর আঁধারে।


তখনই খেয়াল হলো মোর যেনো কে হঠাৎই  

দিয়েছে মুঠো ভরে মন্ত্রপৃত জাদু জপ করে।

তাই বুঝি তারই বলে 

লেগেছে মায়ার খেলা ভোরেরই আঁধারে।



কিন্তু মানুষ আছে - দীপঙ্কর বেরা || Poetry || Poems

 কিন্তু মানুষ আছে

দীপঙ্কর বেরা



সবাই জানে ভূত নেই প্রেত নেই 

খোক্ষস ধারে কাছে

ডাকিনী নেই যোগিনী নেই

কিন্তু মানুষ আছে।


বাঘের ভয়ে সিংহের গুহা

জঙ্গল ফাঁকা গাছে

পাকুড় তলায় প্রেতনীও নেই

কিন্তু মানুষ আছে।


প্রকৃতির রোষ হিংস্র পশু

যক্ষ কোথায় নাচে

রাত পাহারায় ভূতেরা নাই

কিন্তু মানুষ আছে।


তাবিজ কবজ মাদুলি সব

নজর লাগে পাছে

বিশ্বাসে তাই কোন জোর নাই

কিন্তু মানুষ আছে।


বন্ধু শত্রু ভালোবাসায় 

হয়তো ভয়ে বাঁচে

প্রেমের পথিক হৃদয় আকাশ

তাই তো মানুষ আছে।

When feelings were besiged - Ashim Kumar Samaddar || Poetry || Poems

 When feelings were besiged

           Ashim Kumar Samaddar



Frozen were my thoughts  

Saddened to express what I had lost .

When feelings were besieged to strike existence ,

How can I counter God's vengeance ?

Stop here to take me back to your lap ,

Dream I day and night to bridge the gap.