Posts

লেখক রানা জামান -এর একটি গল্প

  বাবার খোঁজে কানাঘুঁষায় শুনলেও এতোদিন বিশ্বাস করে নি লাভলি। এটা হতে পারে না। কত অমায়িক মা। ওকে সবসময় রাখেন আগলে। বাইরে কারো সাথে কথা বলতে দেন না। কখনো বাইরে যাবার প্রয়োজন হলে সাথে মা-ই যান। স্কুলেও মা নিয়ে যান। মা ওর প্রাণের বান্ধবী, খেলার সাথি। বাবাকে লাভলি দেখে নি কোনো দিন। বাবা নেই। কেনো নেই-এর কোন জবাব মা দেন না। বাবার কোনো ছবিও নেই ঘরে বা কোনো এলবামে। বাংলাদেশে এখনো কোথাও ভর্তি হতে হলে পিতার নাম লাগে। ওর বেলায় পিতার নাম নেই। তালাকপ্রাপ্তা মহিলার সন্তানের ক্ষেত্রে পিতার নাম উল্লেখ করা জরুরি না। তার মানে বাবা একজন আছে। কে সে? জবাব নেই। সেদিন স্কুল থেকে ফেরার পথে মাকে একটা গাড়িতে দেখে বেশ অবাক হলেও মাকে কিছু জিজ্ঞেস করে নি লাভলি। আজকে আরেকটা গাড়িতে দেখে নিজকে আড়ালে রেখে পিছু নিলো মায়ের। অভিজাত এলাকার এক হোটেলে গাড়িটা ঢুকলে সেও ঢুকলো। লিফট গিয়ে থামলো থারটিন্থ লেভেলে। সে-ও ঐ লেভেলে এলেও কোন কক্ষে ঢুকেছে তা সনাক্ত করতে না পেরে নিচে এসে বসে রইলো লাউঞ্জে। তাকিয়ে বুঝতে পারছে ওখানে যারা আছে তারা এবং যারা ঢুকছে ও বের হচ্ছে সবাই ওকে অনন্ত একবার দেখছেই। দুই একজনের সাথে চোখাচোখি হয়ে যাওয়ায় আর

লেখক দীপক কুমার মাইতি -এর একটি গল্প

  উঠোন একান্নবর্তী পরিবার ছিল আমাদর। বাড়ির মাঝখানে ছিল একটি বিশাল উঠোন। দিনের বেলায় কচিকাঁচাদের খিলখিল হাসিতে উঠোন ভরে যেত। দুপুরে শুকোত বিউলির ডালের বড়ি ও নানা ধরনের আচার। পাশে শুকোত নুন লংকা মাখা আম বা তেঁতুল বা কতবেল। প্রথম বিকেলে দিদিরা, বৌদিরা পরচর্চার আড্ডার মাঝে রসিয়ে খেতেন ওগুলো। ছোটরাও ভাগ পেত। পড়ন্ত বিকেলের রোদে মা,কাকিমা ও দিদারা কুলোয় চাল বাছতে বাছতে শুকিয়ে নিতেন নিজেদের ভিজে চুল। সন্ধ্যের সময় বসত বাবা-কাকদের মজলিশ। সামাজিক সমস্যা, খেলাধুলো থেকে রাজনীতি নিয়ে তুমুল তর্ক চলত তাদের মাধ্যে। বাল্য বিধবা পিসিদিদা ধমক দিয়ে বলতেন, “তোদের তর্ক কী থামবে না? রাত হল খেতে হবে না?”         মা বলতেন, “রাজা উজির মরুক। নির্বাচনে কে জিতবে ঠিক হোক। তারপর তো খাওয়া।”         দুজনে সব তর্কে জল ঢেলে দিতেন। তারপর উঠোনে গোল হয়ে বসে সকলে রাতের খাওয়ার সারতে। মা, কাকিমারা খাওয়ার পরিবেশন করতেন। খাওয়ারের স্বাদ নিয়ে বড়রা মা কাকিমাদের পিছনে লাগতেন। বড্ড ভালো লাগতো। সময়টা নদীর জলের মতন বয়ে চলেছে। আজ উঠোনটা অনেক খণ্ডে বিভক্ত। অনেকগুলো অদৃশ্য দেওয়াল গডে় উঠেছে উঠোনে। উঠোনের সকাল সন্

কবি চিরঞ্জিত ভাণ্ডারী -এর একটি

  আগমনী সঙ্গীত    স্নেহ আর মায়ার মাঝ খানে  অপেক্ষারত একটি প্রিয় ডাক,কানে আসতেই নেচে উঠে বৃক্ষের শাখা । আমার গলায় এসে বসে তৃষ্ণার্ত চাতক নাভি মূলে প্রশান্তি ঢালে ফোঁটা ফোঁটা ফটিক জল । ছাই দিয়ে ঘষতে ঘষতে সোনা হয়ে যাওয়া কাঁসার গ্লাসে  ভেসে উঠে মায়ের মুখ  ঠিক যেন ভোরের নরম আলোয় সদ্যফোটা শিউলি ফুল। আকাশে বাতাসে জলে স্থলে বেজে ওঠে  আগমনী সঙ্গীত ।

কবি রোকেয়া ইসলাম -এর একটি কবিতা

  প্রতীক্ষায় হীমেল ভোর  কুয়াশার কোমল চাদরে আঁটকে থাকে পূর্ণিমা শিশির স্পর্শে বিকশিত গোলাপ জীবনের ডিসেম্বর ঘ্রানটান আর মেকআপ খুব প্রাসঙ্গিক  অদেখা আঁধারে দৃশ্যমান শরীর -শিল্পিত,নির্ঝর।  বাতাসে হেঁটে যায় পৌষের দীর্ঘরাত  নির্ঘুম যাপনে অনুভবের বেহালা জমাট  জানে শুধু একজন -বনমালী সময় খুব অল্প আঁটসাঁট।  পুষ্প আর চাঁদের গভীর মাখামাখিতে ক্লান্ত শিশির  প্রেম ও প্রার্থনায়  সব রাত আঁধারস্তুপ আলো প্রহরের সীমানায়  সূর্য প্রতীক্ষায় থাকা প্রতিটি হিম ভোর আপন সুনিবিড়....

কবি ইমরান শাহ্ -এর একটি কবিতা

  কমলিনী বলছি...  এই একুশ শতকের আধুনিকায়নের বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে দাড়িয়ে  আমি কমলিনী আপনাদের বলছি... একটি সাম্প্রদায়িক প্রেমের আখ্যান ;যেখানে হৃদয়ের, মানবতার কোন মূল্য নেই। আপনাদের কাছে প্রশ্ন, আধুনিক পৃথিবীতে আজও কিসের ধর্মান্ধতা, কিসের বিভাজন  দেশ -মানুষের মাঝে কেন এত বিভেদ?  আছে এসবের কোন উত্তর!  ভালোবাসার কোন ধর্ম-বর্ণ হয় না  শুধু মানুষ হতে হয়। ভালোবাসলে হতে হয় দুটি সত্ত্বাকে সমুদ্র অথবা আকাশের মত উদার।  তেমনি আমি, না ভুল বললাম, আমরা ভালোবেসেছি মনুষ্য তৈরি দু'টি  ভিন্ন দেশ, ধর্মে জন্ম নেওয়া মানবতাপ্রেমী ধর্ম-বর্ণহীন প্রেমীয় অন্তর।  আপনারা জানেন, কবিতা আমাদের জীবনের প্রথম প্রেমের নাম দু'জন দু'জনার পরিচয় কবিতায়, আর কবিতাকে কণ্ঠে ধারণ করতাম বরাবর  সংসার যাপনের মত করে। আমরা কখনো জানতে চাইনি একে অপরের দেশ-জাতপাত উঁচুনিচুর কথা কাব্যিকতার মোহনায় কখন যে মিশে গেছি বিশ্বাস করুন; বুঝতে পারিনি। আজ যখন জানতে পারলো সমাজ পরিবার আমাদের স্বর্গীয় প্রেমের কথা টেনে আনলেন সবাই সমাবেত হয়ে ধর্মকে; এঁকে দিলেন অনুশাসনের সীমারেখা।  অথচ এই সমাজ, পরিবার প্রতিদিন লক্ষকোটি  কন্যার দায়মুক্তির প্রার্থনা কর

কবি নবকুমার -এর একটি কবিতা

  আনন্দ,কোথায় আছিস ?  বন্ধু,আনন্দ এলো না? কোথায় গেল আনন্দ ? সে কী হাসপাতালের শয্যায়  করোনায় ধুঁকছে ? প্রকৃতির পরিক্রমায় শিউলি - কাশ ফুটেছে ,দোলাচ্ছে মাথা শরত বাতাসে,শিউলি ঝরে পড়েছে গাছতলা আলো করে কিন্তু সে সু-ঘ্রাণ কোথায় গেল ? সে কী আনন্দ নেই বলে ! লোকাল ট্রেনের হকাররা ধূপবাতি বিক্রি করছে দুয়ারে দুয়ারে  আর বাবুদেরকে জিজ্ঞেস করছে-- বাবু,লোকাল ট্রেন খুলবে কবে ? বাবু ব্যাজার মুখে উত্তর দিচ্ছেন- জানিনা ,যত্তসব--- ঢাক বাজছে প্যান্ডেলে -প্যান্ডেলে  তবু সব যেন ম্লান -বড় ফাঁকা -- আনন্দ,এখনো শোভা পাচ্ছে  মায়ের বেদিতে তোর আল্পনা আঁকা ।

কবি বন‍্যা গুপ্ত -এর একটি কবিতা

  দেহদান প্রাপ্তির আর এক নাম   রাতের তারারা আজ পরীদের সাথে আলাপচারিতায় ব‍্যস্ত। মায়াবী পূর্নিমা চকোরির হাতছানি কস্তুরির ঘ্রাণে দিক্ -শূণ‍্য মৃগ ছুটে যায় দিগন্তের পথে। বৈচিত্র্যময় জীবনের কত কাহিনীর চিত্রনাট্য  পথের খাঁজে খাঁজে.. নীরবতার আচ্ছাদনে পড়ে থাকে একান্তে.. প্রত্নতাত্ত্বিকের খননে তার ভাষা উদ্ধার হয় না। শৈশবের রঙিন প্রজাপতির দিন ; কৈশোরে চাঁদের রাজ‍্যে ঘোড়সওয়ার ; যৌবনে প্রেমের আলোয় ঘরকন‍্যা। বাস্তব! কংক্রিটের মত নিরস...সম্পর্কের প্রতি গ্রন্থিতে স্বার্থপরতার ধোঁয়া। তবু, মায়াময় পৃথিবীর প্রতি  তৃণ আমাকে দু হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে.. প্রতিটি মহীরূহ শিকড় বিছায়ে আকঁড়ে আছে  স্মৃতির শিকল, ভালোবাসার  স্নেহের বন্ধন অবিচ্ছেদ‍্য। অনেক পাওয়ার মাঝে,কোথায় যেন না পাওয়ার হিসাবের খাতাটা খালি প'রে থাকল দীর্ঘশ্বাসের ঘরে।  কর্তব্যের লম্বা মাইলস্টোন পেরিয়ে  অবশেষে... জীবনে শেষযাত্রার লগ্ন এলো। . মুক্তি ! খোলা আকাশে বন্ধন ছিঁড়ে এগিয়ে চলা। কান্নাভেজা পথ পেরিয়ে ...দূরে দূরান্তে রেখে গেলাম কিছু আত্মীয়তার সেতু....স্মৃতির কিছু ঝিলিক কালের নিয়মে মুছে যাবে একদিন। চোখ দুটৌ রেখে গেলাম  চোখ দুটো আজও নূতনকে দেখে তৃপ