Sunday, December 12, 2021

অনুগল্প || পঞ্চাশটা মেয়েকে || সিদ্ধার্থ সিংহ

 পঞ্চাশটা মেয়েকে




মেয়েটি এসে বলল, কী ব্যাপার বলুন তো... তখন থেকে খেয়াল করছি আপনি আমাকে দেখছেন...

ছেলেটি বলল, আমি আপনাকে দেখছি? আপনি কি পাগল? আপনার মতো পঞ্চাশটা মেয়েকে আমি রোজ ঘোরাই, বুঝেছেন?

ভ্রু কুঁচকে গেল মেয়েটির। এই ছেলেটা রোজ পঞ্চাশটা মেয়েকে নিয়ে ঘোরে! কী বলছে এ! কত টাকা রোজগার করে! কৌতূহল হওয়ায় সে বলল, কী করেন?

ছেলেটি ওর চোখের দিকে তাকিয়ে বলল, অটো চালাই।

গল্প || কালু ডাকাতের গল্প ও তার আবেদন || আব্দুস সাত্তার বিশ্বাস

  কালু ডাকাতের গল্প ও তার আবেদন

      

                

                              এক

   যে কাজটা করে মানুষ খায় ওটাই হল তার পেশা।কালু এখন ভিক্ষা করে খায়,সুতরাং ভিক্ষা করাটাই হল তার পেশা।তার আগে সে একটা দুর্ধর্ষ ডাকাত ছিল।নাম ছিল 'কালু ডাকাত'।

   তার নামের সঙ্গে চেহারার দারুণ মিল ছিল।এই বড়ো বড়ো গোঁফ ছিল।আর তা পাক দিয়ে সে সবসময় খাড়া করে রাখত। তার ওই গোঁফ দেখেই মানুষ তাকে ভয় পেত।তাছাড়া তার শরীরে ছিল জোড়া মোষের শক্তি।কোনো মানুষকে সে পরোয়া করত না।মুরগি কাটার মতো করে সে মানুষ কাটত।জীবনে কত মানুষ যে সে কেটেছে তার কোনো ইয়ত্তা নেই।যার জন্য তার নাম শুনলেই মানুষের হৃদস্পন্দনের ধুকপুক বেড়ে যেত।ছেলে-বুড়ো,নারী-পুরুষ কাউকেই ছেড়ে কথা বলত না।যে তার সামনে এসে দাঁড়াত,তার কাজে বাধা সৃষ্টি করত,তাকেই মেরে কাফাত করে দিত।তার কাছে গুলি ভর্তি একটা পিস্তল আর ধারালো একটা ছুরি সবসময় থাকত।তার যে তখন ওটাই পেশা ছিল।

    কিন্তু বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কালের নিয়মে তার শরীরে যখন নানারকম পোকামাকড় ঢুকে গেল বিক্রম হারিয়ে ফেলে সে তখন ডাকাতি করা ছেড়ে দিয়ে ভিক্ষা করা ধরল।না হলে এই বয়সে ডাকাতি করতে গেলে পাবলিকের হাতে ধরা পড়ে গিয়ে যে বেঘোরে মারা পড়ে যাবে।সেদিক থেকে এই কাজটা বেছে নিয়ে সে এক রকম ভালোই করেছে বলা যায়।কারণ,এখানে নো রিস্ক,নো পুলিশ।ঝোলাটা শুধু ঘাড়ে নিয়ে বেরোলেই হল।

    কিন্তু শুধু কি এই জন্যই সে ভিক্ষা করা ধরেছে?না।তার ভিক্ষা করার পিছনে আরও অনেক কারণ রয়েছে।সে গুলো কী,তা জানতে হলে আমাদের আরও একটুখানি পথ হাঁটতে হবে,আরও একটুখানি পথ।

                              দুই

    ডাকাতি করে জীবনে সে অনেক কিছু করেছে।যা তার বসে খেলেও জীবনে ফুরোত না।কিন্তু তার নিজের বলতে এখন কিছুই নেই।সব তার ছেলেদের মধ্যে বিলিয়ে দিয়েছে।

    কারণ,সে তখন একটা দাগি আসামি ছিল।পুলিশ যেকোনো মুহূর্তেই তার সমস্ত বিষয় সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে দিতে পারত। সেটা যাতে না হয় তার জন্য সে তার সমস্ত বিষয় সম্পত্তি তার ছেলেদের নামে করে দিয়েছে।

    ফলে তার ছেলেরা এখন সবাই প্রতিষ্ঠিত,ভালো আছে।সবার বাড়িতে খাট,পালঙ্ক,ফ্রিজ,টিভি ও আরও কতরকম মূল্যবান শখের জিনিস রয়েছে।সবাই সমাজে পাঁচটা দশটা মানুষের সঙ্গে ওঠাবসা করে। সামাজিক জ্ঞান সবার আছে।পুণ্যের আশায় সবাই মসজিদে যায়।

    তবু তার নিজের নজরে তার ছেলেরা কেউই প্রতিষ্ঠিত নয়;সবাই দীন।না হলে দুটো ভাতের জন‍্য তাকে আজ ভিক্ষা করতে হয়?বৃদ্ধ বয়সে ভিখারি সাজতে হয়?তার নিজেরই এটা খুব খারাপ লাগে;খুব খারাপ।

                               তিন

    যাইহোক,লাল্টু তার একটা নাতির নাম। বড়ো ছেলের ছেলে।বয়স তার খুব বেশি হলে দশ-এগারো বছর হবে।তার বেশি হবেনা। গ্রামের প্রাইমারি স্কুলে ক্লাস ফোরে পড়ে। পড়াশোনায় খুব ভালো।মাস্টাররা যেটা শেখায় সেটাই শিখে নেয়।স্কুলের হেড মাস্টার নিরঞ্জন বাবু তাকে ধরে একদিন বলেছেন।

    যেকারণে সে যাতে উচ্ছন্নে না যায় তার জন‍্য প্রতি রাতে সে তাকে একটা করে গল্প শোনায়।না,অন্য কোনো গল্প নয়।যে গুলো শুনে উপকার হয় এমন অনুপ্রেরণা মূলক গল্প।যা থেকে সে নিজেকে তৈরি করতে পারে।

    কিন্তু রোজ রোজ একই রকমের গল্প শুনতে লাল্টুর ভালো লাগেনা।যার জন্য সে আজ একটা অন্য রকমের গল্প শুনতে চায়।

     "অন্য রকমের কী গল্প?"কালু জিজ্ঞেস করে জানতে চাইলে সে বলল,"দাদু,তুমি বলে আগে একটা ডাকাত ছিলে গো!"

     কালু বলল,"হ‍্যাঁ,ডাকাত ছিলাম।"

     "কী রকম ডাকাত ছিলে?"

     "বিরাট ডাকাত ছিলাম।'কালু ডাকাত' আমার নাম ছিল।"

     "তাই নাকি?"

     "হ‍্যাঁ।"

     "তোমার ডাকাতির একটা গল্প শোনাও তাহলে।"লাল্টু আবদার করল।

     "আমার ডাকাতির গল্প শুনে ভয় করবি না?আমার ডাকাতির গল্প খুব ভয়ানক হবে কিন্তু।"

     "না,শোনাও "

     "বেশ,শোন তাহলে।"

                               চার

     কালু তার ডাকাতির একটা গল্প শোনাল,"আমরা একদিন মাদলপুরে ডাকাতি করতে গেলাম।বিশটা ডাকাত।মাদলপুর হল,নদী পারের একটা গ্রামের নাম এবং যে বাড়িটায় গেলাম ওই বাড়িটা হল দোতলা বাড়ি আর তার বাউন্ডারিটা হল বিরাট উঁচু পাঁচিল দিয়ে ঘেরা।শুধু তাই-ই নয়,বাউন্ডারির পুরো পাঁচিলটা আবার তারকাঁটা দিয়ে ঘেরা।যা টপকে ভেতরে ঢোকা আমাদের কারুর পক্ষেই সম্ভব ছিল না।বাড়ির ভেতরে ঢুকতে হলে আমাদের সদর দরজা ভেঙে ঢুকতে হতো।কিন্তু কাজটা আমাদের পক্ষে তখন খুব সহজ ছিল না।কেননা,সদর দরজা ভাঙতে হলে যে কুড়ুল দরকার।অথচ আমাদের কাছে কুড়ুল বা ওই জাতীয় কোনো জিনিস ছিল না।ফলে এক‍রকম বাধ্য হয়েই আমরা সেদিন বাড়ি ফিরে এলাম এবং পরেরদিন রাতে আবার গেলাম।যাকে বলে এবার একেবারে প্রস্তুত হয়ে।কুড়ুল,শাবল,হাতুড়ি,ছেনি নিয়ে।তারপর আমরা সদর দরজা ভেঙে বাড়ির ভেতর ঢুকে গেলাম। গিয়ে দেখলাম,নিচের তলায় কোনো মানুষ নেই।একটা গোয়ালে শুধু কয়েকটা ছাগল আর কয়েকটা গরু বাঁধা রয়েছে।শুয়ে শুয়ে তারা জাবর কাটছে।আমরা তো আর গরু বা ছাগল ডাকাতি করতে যাইনি।আমরা গিয়েছি বাড়ির অর্থ ভাণ্ডার ডাকাতি করতে।কিন্তু ওটা রয়েছে ওই উপরে,দোতলায়।আমাদের খুঁজি এমনটাই আমাদের জানিয়েছে।খুঁজে খুঁজে কোনো গোপন জিনিসের সন্ধান ডাকাতদের যে এনে দেয় ডাকাতরা তাকে 'খুঁজি' বা 'খুঁচি' বলে।ওটা ডাকাতদের নিজস্ব ভাষা।যার ব‍্যাখ‍্যা হল ওটা।

    সুতরাং,আমরা এবার সিঁড়ি ভেঙে উপরে উঠে গেলাম।উঠে দেখলাম,দোতলার সিঁড়িটা উপরে গিয়ে যেখানে শেষ হচ্ছে ওখানেও একটা দরজা রয়েছে।লক্ষ্যে পৌঁছাতে হলে আমাদের এই দরজাটাও ভাঙতে হবে। আমরা এই দরজাটাও ভাঙলাম।বাড়ির মানুষ সবাই তখন জেগে গিয়েছে।গিয়ে আমাদের ঢাকা মুখ আর পরনের কালো পোশাক দেখে তারা জোরে চিৎকার আরম্ভ করে দিয়েছে,"ডাকাত!ডাকাত!ডাকাত!কে কোথায় আছো,তাড়াতাড়ি এসো গো,আমাদের বাঁচাও!বাঁচাও!বাঁচাও!বাঁচাও!..."

    যাশ্শালা!মুখ বন্ধ করার জন্য আমাদের তখন তাদের কষে একটা ধমক মারতেই হল,"চোপ!"

     কিন্তু তারা চুপ করল না।তাদের চুপ করানোর জন্য আমাদের তখন একটা কাজ করতেই হল।না হলে যে তাদের চিৎকারে গ্রামবাসীরা চলে এলে আমরা ভীষণ বিপদে পড়ে যাবো,তাদের হাতে ধরা পড়ে যাবো। তাই,কাজটা আমাদের করতেই হল।আমরা তাদের মেরে দিলাম।ছুরি দিয়ে কুপিয়ে কুপিয়ে নলি কেটে ভীষণ কষ্ট দিয়ে।দিয়ে আমরা তাদের উপর দিয়ে ভেতরে ঢুকে গেলাম।উরিব্বাস!কী জিনিস!কাঁসার হাঁড়িকুড়ি,থালাবাসন থেকে শুরু করে সোনাদানা ও টাকা পয়সা।কী নেই!ফলে আমরা আগে কোনটা নেবো আর পরে কোনটা নেবো ভাবনা চিন্তা না করে সব বস্তায় ভরে নিলাম।নিয়ে বাড়ি চলে এসে পরের বছর দশ বিঘা জমি ও চারটে পুকুর কিনলাম।যে গুলো তোর বাপ-চাচারা এখন করে খাচ্ছে।আর আমি দূর থেকে শুধু তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছি।যাইহোক,লাল্টু?"

     "বলো,দাদু!"

     "বলছি,বড়ো হয়ে তুই কী হতে চাস?"

     কয়েক মুহূর্ত ভেবে লাল্টু বলল,"আমিও তোমার মতো বড়ো ডাকাত হতে চাই। তোমাকে যেমন সবাই ভয় করত,আমাকেও তেমনি সবাই ভয় করবে।"

     অমনি কালু বলল,"না লাল্টু,না।আমার মতো তুই ডাকাত হতে যাসনে!"

     "কেন,হলে কী হবে?"

     "কারণ,ডাকাতরা কেউ মানুষ হয় না,প্রচুর পাপী হয়।জানিনা,আমার পাপের কোনোদিন ক্ষমা হবে কিনা।তাইতো,তোর কাছে আমার একটাই আবেদন,ভালো করে লেখাপড়া শিখে বড়ো হয়ে তুই একটা মানুষ হোস,বড়ো মানুষ।"

গল্প || মুক্তিযোদ্ধা রওশন আরা || রানা জামান

 মুক্তিযোদ্ধা রওশন আরা


 


পিরোজপু্র মহকুমার রামনগর গ্রামে রওশন আরার বাড়ি। উনিশ শ একাত্তর খৃস্টাব্দের জুন মাসের কোনো এক সময়। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এক সকালে চলে এলো গ্রামটায়। বেশ কয়েকটি বড় ট্রাক, ছোট পিকাপ ও জিপ ভর্তি হানাদার বাহিনীর সৈন্যে। গ্রামের রাজাকাররা পথ দেখিয়ে ওদের নিয়ে এসেছে। ভয়ে গ্রামের লোকজন আহাজারি করতে করতে এদিক সেদিক ছুটাছুটি করতে লাগলো।


হৈ চৈ কান্নাকাটির শব্দে রওশন আরা বিরক্ত হলো। সে এসএসসি পরীক্ষার্থীনী। পড়া করছিলো। মনযোগে বিঘ্ন ঘটায় চিৎকার করে বললো, কী হইছে মা? এতা চিল্লাপাল্লা চেচাচেচি হইতাছে ক্যান? গ্রামে কি ডাকাইত পড়ছে?


মা মতিজান বিবি বললেন, আমি কী জানি! আমিও তোর মতো ঘরে কাম করতাছি। তুই দেইখ্যা আয় না!


বইটা বন্ধ করে রওশন আরা ঘরের বাইরে এসে বারান্দায় দাঁড়ালো। উঁকি দিয়ে বাইরে দেখার চেষ্টা করলো। কিন্তু খাটো হওয়ায় কিছুই দেখতে পেলো না। সে বরান্দা থেকে নেমে দৌড়ে বাড়ির বাইরে এসে হতভম্ব হয়ে গেলো। চিৎকার করে মাকে ডাকতে লাগলো, মা মা দেইখ্যা যাও। গ্রামে এইসব কী হইতাছে?


মেয়ের ডাকে মতিজান বিবি শাড়ির আঁচলে ভেজা হাত মুছতে মুছতে বেরিয়ে এলেন বাইরে। মেয়ের কাছে এসে আশেপাশে তাকিয়ে হতবাক হয়ে গেলেন। দাউ দাউ করে জ্বলছে আগুন। মনে হচ্ছে পুরো গ্রামটা জ্বলে-পুড়ে যাচ্ছে। তালুকদার বাড়ি, মাতবরবাড়ি, হাওলাদার বাড়ি ও মোল্লাবাড়ি পুড়ছে। বোমা ফাটার শব্দে পুড়ছে বাঁশ।


মতিজান বিবি বেদনার্ত কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলেন, অমন কইরা কেডা আগুন দিলো রে? এই শত্রুটা কেডা? তোর বাপ বাইচ্যা থাকলে সবার আগে দৌড়ায়া আগুন নিভাতে যাইতো।


রওশন আরা বললো, আমিও হেই কথা ভাবতাছি। আমি যাই মা? দেইখ্যা আসি?


মা নিষেধ করলেন, তোর একলা যাওনের কাম নাই।


রওশন আরা ডান হাত তুলে সামনে দেখিয়ে বললো, ঐ দেখো মা, মানুষজন কেমন ছুটাছুটি করতাছে। আগুন নিভাইতে না গিয়া কেমন যেনো ছুটাছুটি কইরা পালাইতাছে। ব্যাপারটা কী মা?


মতিজান বিবি বললেন, তুই বাড়িত থাক। আমি দেইখ্যা আহি।


রওশন আরা বললো, আমারও যাইতে ইচ্ছা করতাছে মা!


মতিজান বিবি বললেন, হুড়াহুড়ির মধ্যে খালি বাড়িতে চুরি হয়। তুই এইখানেই খাড়ায়া থাক। আমি তাড়াতাড়ি চইলা আসবো।


মতিজান বিবি এগিয়ে গেলেন। ছুটন্ত একজন মতিজান বিবিকে ওদিকে যেতে দেখে বললেন, ঐদিকে যাইও না ভাবি।


মতিজান বিবি জিজ্ঞেস করলেন, ক্যান? কী হইছে ঐদিকে? গ্রাম জুইড়া আগুন দিছে কেডা?


লোকটি বললেন, গ্রামে পাক বাহিনী আয়া পড়ছে। ঐ শয়তানরা আগুন দিতাছে আর লুট করতাছে। জোয়ান মাইয়াগুলারে ধইরা নিয়া যাইতাছে। তুমি তোমার মাইয়া নিয়া অহনই পালাও।


মতিজান বিবি আর সামনে না গিয়ে ফিরে এলেন নিজ বাড়িতে।তখন বিদ্যালয় থেকে শাহ আলমও ফিরে এলো। সে হাপাচ্ছে হাপড়ের মতো।


মতিজান বিবি জিজ্ঞেস করলেন, তুই অতো হাপাইতাছস ক্যান রে বাপ? দৌড়ায়া আইছস?


শাহ আলম দম সামলে নিতে নিতে বললো, হ মা। গ্রামের অবস্থা ছেড়াবেড়া হয়া গেছে মা। পাক বাহিনী সব বাড়িঘর পুড়ায়া দিছে।


মতিজান বিবি বললেন, জানি। আমিও দেখতে গেছিলাম।


শাহ আলম বললো, গ্রাম ছাইড়া সবাই চইলা যাইতাছে মা। আমাদেরও চইলা যাইতে কইছে।


মতিজান বিবি বললেন, আমারেও কইছে। কিন্তুক কই যামু?


রওশন আরা বললো, বহুদিন মামার বাড়ি যাই না। চলো মামার বাড়ি চইলা যাই।


মামার বাড়ি কই যাবি? তোর মামারা কেউ বাইচা নাই। খালি ভিটা পইড়া আছে।


শাহ আলম জিজ্ঞেস করলো, কোনো ঘর নাই ভিটায় মা?


ভিটায় কেউ না থাকলে কি ঘর থাকে? ভাইঙ্গা টাইঙ্গা কবেই মাটির সাথে মিশ্যা গেছে।


তাইলে আমরা কোথাও যাইতাম না? এখানে থাকলে যদি পাক বাহিনী ধইরা লইয়া যায়? তখন কী হইবো?


মতিজান বিবি বললেন, চুপ থাক। আমারে ভাবতে দে।


মতিজান বিবির দুই সন্তান নিয়ে গ্রাম ছেড়ে কোথাও যাওয়া হলো না। কোথায় যাবেন? এই গ্রামের বাইরে কিছুই চিনেন না। না যেতে যেতে বাবার বাড়ি যাবার পথটাও স্মৃতিতে ঝাপসা হয়ে গেছে। দুই সন্তান নিয়ে তিনি সাহস করে গ্রামেই রয়ে গেলেন; তবে মেয়েকে ঘরের বাইরে যেতে নিষেধ করলেন। মেয়ের কথা গ্রামের কেউ জিজ্ঞেস করলে মিথ্যে করে বলেন যে রওশন আরাকে মামার বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছেন। শাহ আলমকে আল্লাহর কিড়া দিয়ে বোনের ব্যাপারে কাউকে কিছু বলতে নিষেধ করেছেন। শাহ আলম তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করে যাচ্ছে।


এই ঘটনার কিছুদিন পরে গ্রামে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দল এলো। তাঁরা গ্রামের যুবকদের মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিতে উৎসাহিত করতে লাগলেন। যারা মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেবার জন্য এলেন, তাঁদের প্রশিক্ষণ প্রদান করতে লাগলেন।


একদিন রাতে রওশন আরা মাকে বললো, মা, আমি ও শাহ আলম মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেই?


মতিজান বিবি আঁতকে উঠে বললেন, কী কস তুই! তোরা বাচ্চা পোলাপান। তোরা যুদ্ধ করবি কিভাবে? না না! তাছাড়া তোদের কিছু হইলে আমি কারে লইয়া থাকুম? তোদের যাওনের দরকার নাই।


ঐ রাতে দুই ভাইবোন আর কিছু বললো না। শাহ আলমের বিদ্যালয়ে আর ক্লাশ হয় না। সে সারাদিন ঘুরে বেড়ায়; আর রওশন আরা ঘরের ভেতর ঘাপটি মেরে ইচ্ছের বিরুদ্ধে বসে থাকে। ঘরের বাইরে গেলে কী বিপদ হতে পারে আঁচ করতে পেরে সে চুপ মেরে গেছে। শাহ আলম মাঝে মাঝে মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্পের আশেপাশে ঘুরঘুর করে ওদের কার্যকলাপ তথা গ্রামের যুবকদের প্রশিক্ষণ প্রদান দেখে।


রাতে দুই ভাই বোন পাশাপাশি শুয়ে থেকে ভাই-এর কাছ থেকে গ্রামের খবরাখবর জেনে নেয় রওশন আরা; বিশেষ করে মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পের বিষয় আশয় জানতে চেষ্টা করে। আর ওর মনে মুক্তিযুদ্ধে যাবার কামনা বাসনা আকুলি বিকুলি করতে থাকে। এক রাতে রওশন আরা ফের মার কাছে মুক্তিযুদ্ধে যাবার ইচ্ছা ব্যক্ত করে।


মা মতিজান বিবি আবেগে দুই সন্তানকে বুকে চেপে ধরে নিরবে অশ্রুপাত করে বলেন, তোদের যখন এতই ইচ্ছা মুক্তিযুদ্ধে যাওনের, তখন যা। আামি আর নিষেধ করুম না। আগামীকাল আমি তোদের মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে লইয়া যামু। এখন ঘুমা।


পরদিন মতিজান বিবি দুই সন্তানকে নিয়ে গ্রামের মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্পে গেলেন। কথা শুনে মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ডা. গোলাম মোস্তফা বললেন, তোমরা দুই জন এখনো বাচ্চা। যুদ্ধ করবে কিভাবে?


তখন কিশোরী রওশন আরা বললো, আমরা যুদ্ধ করতে পারুম কমান্ডার ভাইজান। আমারে বন্দুক চালনা শিখায়া দেন।


কমান্ডার ডা. গোলাম মোস্তফা বুঝতে পারছেন না কী করবেন।ওদের গ্রুপে কোনো মহিলা মুক্তিযোদ্ধা নেই। একজন কিশোরীকে দলে নিলে কী ধরনের সমস্যায় পড়বেন বুঝতে পারছেন না। রওশন আরা ও শাহ আলমকে একবার দেখে বললেন, তোমরা এখন যাও। আগামীকাল আসো। আমি ভাবি।


রওশন আরা বললো, ভাবার কিছু নাই ভাইজান। আমি জান দিয়া যুদ্ধ করুম।


মতিজান বিবি বললেন, আপনার গ্রামে ক্যাম্প করার পর থাইকা যুদ্ধে যাওনের কথা কইতাছে। প্রথমে আমি রাজি হই নাই। পরে ভাইবা দেখলাম, যাউক যুদ্ধে। ঘরে বইসা থাইকা পাক বাহিনীর হাতে ধরা পড়নের চাইতে যুদ্ধে গিয়া মইরা যাওয়া অনেক ভালো হইবো, অনেক সম্মানের হইবো।


ঠিক আছে। আপনারা আগামীকাল আসেন।আমি রাতটা ভেবে দেখি।


তিনজন চলে এলো বাড়িতে। দিনের বাকিটা ও পুরো রাত দুশ্চিন্তায় কাটলো কিশোরী রওশন আরার। যদি মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার রাজি না হন, তাহলে কী হবে? কী করবে তখন ওরা? কী করবে?


রওশন আরা মাকে জিজ্ঞেস করলো, কমান্ডার ভাইয়া রাজি না হলে কী হইবো মা? তখন আমরা কী করুম?


শাহ আলম জিজ্ঞেস করলো, আমরা একা যুদ্ধ করতে পারুম না মা?


মতিজান বিবি বললেন, একলা কী আর যুদ্ধ করন যায় রে বেটা। যুদ্ধ করতে হইলে টেরেনিং লাগে, অস্তর লাগে। তোরা টেরেনিং পাইবি কই, অস্তর পাইবি কই।


অনিশ্চয়তার ভাবনা নিয়েই ওরা ঘুমিয়ে গেলো। পরদিন ভোর হবার সময় থেকে ওরা ছটফট করতে লাগলো ক্যাম্পে যাবার জন্য। আনুমানিক সকাল দশটায় ওরা বেরিয়ে পড়লো বাইরে। দ্রুত হেঁটে চলে এলো ক্যাম্পে। ওদের দুশ্চিন্তাকে মাটি করে দিয়ে কোম্পানি কমান্ডার ডা. গোলাম মোস্তফা দুই ভাইবোনকে দলে যোগ করে নিলেন।


বীরপাশা উচ্চ বিদ্যালয়ে শুরু হলো ওদের প্রশিক্ষণ। অন্যান্যদের সাথে দুই ভাইবোনের প্রশিক্ষণ চলতে থাকলো। এক সময় মুক্তিযোদ্ধারা ওদের বাড়িতে ঘাঁটি স্থানান্তর করলো। প্রশিক্ষণের ফাঁকে ফাঁকে রান্নার কাজে রওশন আরা মাকে সহায়তা করতে থাকলো।


প্রশিক্ষণ শেষ। অপারেশনে যেতে হবে। অপারেশন কোথায় হবে তা ঠিক করার পর রাতে রওশন আরা দেশাত্ববোধক গান গেয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের মনোবলকে চাঙ্গা করতো।


শাহ আলম ছোট থাকায় সরাসরি যুদ্ধে না গিয়ে পাক হানাদার বাহিনীর ক্যাম্পে গিয়ে খবর নিয়ে আসতো। ও ছোট থাকায় পাক বাহিনী ওকে সন্দেহ করতো না। শাহ আলম মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্ন ক্যাম্পে খবর পৌঁছে দেবার পাশাপাশি খাবারও পৌঁছে দিতো।

কবিতা || নিঃশর্ত প্রণয়সত্তা || সৌরভ বাগচী

 নিঃশর্ত প্রণয়সত্তা




      সাংখ‍্যমান কিছু নয় যদি ; মনে থাকে

                    নবীনের উদ‍্যমতা, 

   প্রেমে পড়া প্রাকৃতিক ব‍্যাপার ; সেখানে

           বড় কথা নয় ; বয়সের সীমাবদ্ধতা।

কবিতা || অতলান্ত সাগরে || ইব্রাহিম সেখ

 অতলান্ত সাগরে




মহাসিন্ধুর অতলান্ত গহ্বরে জীবনের ঢেউ

প্রতিনিয়ত তরঙ্গের তুফান তুলে,

মহাবিশ্বের দুর্গপ্রাচীরে জীবনের কারাবাস।

মুক্তির সোপানে উঠতে অপারগ--

প্রতিদিন--প্রতিক্ষণ অসমাপ্ত সংগ্রাম

ব্যর্থতার জঞ্জালে অতৃপ্ত আত্মার আর্তনাদ!

কান্নার সাইরেন ধ্বনি বাজছে আকাশে --

বাতাসে,জলে স্থলে হৃদয়ের লোহিতাভ সাগরে।

ঝরা পাতার মতো জীবনের ঝরে পড়া--

কুয়াশার অন্তরালে উষ্ণ অশ্রুসিক্ত চোখ

কয়জন খুঁজে দেখে জীবনের ধারাপাত!

মৃত্যুর সাথে হামাগুড়ি, শেষ সীমান্তে সফেদ---

ছায়াপথে অগণিত আশার করব,

নীলাদ্রির শিখরে সমাধি সৌধমালা!

পূর্বে যারা গিয়েছে কেউ ফিরেনি,

আর যারা যাবার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে ---

সাপ্ত সগরের কোন ঢেউয়ের দোলায়

কোন তীরে নঙ্গর বাঁধবে কেউ জানে না।

মানব সাগরে-- মানবতার নিস্তেজ স্রোত

ডুবুরি ও খুঁজে পায়না পরশ পাথর,

পৃথিবী ঘুরছে, আমারা দেখছি স্থির --

বুঝতে পারিনা-জীবনের অন্তরালে

মহাবিশ্বের মৃতুর চলছে বাসর!

কবিতা || জগৎঘর || সৈয়দ শীষমহাম্মদ

 জগৎঘর 

   


দীর্ঘ সময় আছিলামে 

        পাই নাই অবসর,

ছিলাম দেশ পাড়ি দিয়ে 

        হয়েছি আপন-পর,

আছিতে আছিতো বেশ 

         পেয়ে গেছি বৃক্ষধড়,

থাকিবতে থাকবো গিয়ে 

          অনন্ত সে জগৎঘর l

কবিতা || ইচ্ছেডানা || হরিহর বৈদ্য

 ইচ্ছেডানা

 



ইচ্ছে ডানায় ভর করে সব

   ইচ্ছেটাকে পূরণ করে,

ইচ্ছে যদি না থাকে ভাই

    সেজন নিচেই পড়ে রবে।


ইচ্ছে ছিল বলে তেনজিং নরগে

     হিমালয়ের চূড়ায় চড়ে,

ইচ্ছে ছিল বলেই কলম্বাস

    সমুদ্র পাড়ি দিয়ে চলে।


ইচ্ছে ছিল বলে মিহির সেন

     ইংলিশ চ্যানেল পার হয়েছে,

ইচ্ছে ছিল বলেই নীল আর্মস্ট্রং

    চাঁদের বুকে পৌঁছে গেছে।


ইচ্ছে ছিল বলে রবীন্দ্রনাথ

     হয়েছিলেন বিশ্বকবি,

ইচ্ছে ছিল বলেই লিওনার্দো দা ভিঞ্চি

     এঁকেছিলেন শ্রেষ্ঠ ছবি।


ইচ্ছে ছিল বলেই এডলফ হিটলার

    আজ বিশ্ব জয়ের প্রতিচ্ছবি,

ইচ্ছে ছিল বলে আবুল কালাম

     সবার মনের রাষ্ট্রপতি।


ইচ্ছে ছিল বলে সুভাষচন্দ্র বোস

      হয়েছিলেন তাই নেতাজী,

ইচ্ছে ছিল বলেই সেদিন

     রামায়ণ লেখেন ঋষি বাল্মিকী।


ইচ্ছে ছিল বলেই ক্ষুদিরাম

    লড়াই করে হলেন শহীদ,

কত বীরের প্রাণের বিনিময়ে

    তাই তো ভারত আজকে স্বাধীন।


ইচ্ছে ছিল বলেই বিবেকানন্দ

    হয়েছিলেন বিশ্ববরেণ্য,

ইচ্ছে ছিল বলে মেরি টেরিজা

   আজ মাদার হয়ে ধন্য ধন্য।


ইচ্ছে ছিল বলে রতন টাটা

    আজ এত বড় শিল্পপতি,

ইচ্ছে ছিল বলেই জগদীশচন্দ্র বোস

   প্রমাণ করেন গাছের মধ্যে প্রাণের গতি।


ইচ্ছে ছিল বলেই পেলে

    সর্বকালের ফুটবল সম্রাট,

ইচ্ছে ছিল বলে যে আজ

    ক্রিকেট শ্রেষ্ঠ সচিন তেন্দুলকার।


তাই ইচ্ছেগুলো বন্দি করে

    রেখোনা কেউ মনের ঘরে,

মনের পাখা উড়িয়ে দিয়ে

     ইচ্ছে চলুক জগত পারে।

কবিতা || হাইফেন জীবন || নবকুমার

 হাইফেন জীবন


 


জন্ম-মৃত্যুর মাঝে একটি হাইফেন । 

এই হাইফেনটিই হলো জীবন নড়াচড়া 

এতো ছোট্ট জীবন -আশ্চর্য !


সাইকেলে কোন দূরত্ব মিটার থাকে না 

শুধুই প্যাডেল ঘুরিয়ে যাই-

টপকাই সিঁড়ির পর সিঁড়ি --

আর কতোটা সিঁড়ি আছে জানি না ।


তবুও রক্তে শ্বাপদকে জাগাই

দাঁত-নখ-চেরা জিভ বা'র করে 

খণ্ড খণ্ড করে মানুষের দেহ

মেতে উঠি বীভত্স চিৎকারে -- ।


তারপরও ভাঙতে চাই অন্ত:পুরের দেয়াল

একদিনও যে বলা হয়নি--ভালোবাসি

সে কথার থাকে না খেয়াল।

কবিতা || মেঘলা দিনে || ফরমান সেখ

 মেঘলা দিনে

               


এমন মেঘলা দিনে পড়ে গো প্রিয়ার মনে

          ভাসে যে তার আনন খানি।

হেথায় একলা লাগে সঘনে বাঞ্ছা জাগে

          ঝরে যে মোর নয়ন পানি।


গগনে নীরদ ডাকে বাজে তা আমার বুকে

          কাঁপে যে মোর কোমল মন।

ভূলোকে বৃষ্টি পড়ে মন যে কেমন করে

          মন উভরায় সারাক্ষন।


যেন প্রিয়া সৌদামিনী সে নীরদ নন্দিনী

          মেঘের কোলে চমকি আলা।

এমনিই প্রিয়া মোর মাড়াইনা মোর ঘর

          যেন হৃদয় স্বপনবালা।


মেঘে শুধু আনে স্মৃতি দুখের লহরী ভীতি

          নিতই জ্বলে হৃদয় শালা।

বাড়ে তবু করে নাই হৃদয়েরে কুঁরে খায়

          শুধু উঠে উদাত্ত জ্বালা।


প্রিয়ার সে শুভানন মনে পড়ে সারাক্ষন

           অনিবারে কাঁদে মোর হিয়া।

শুধু মনে মনে ভজি যেওনা গো মোরে ত্যজি

             চলে এসো কাছে মোর প্রিয়া।

কবিতা || আমি || দিলীপ কুমার মধু

 আমি



আমি হিংস্র ।

আমি দুর্বল মানুষের মাথা খাই,

আমি নারীদের বুকে ঢুকে ঋণী হই ।


আমি সবুজ ।

আমি প্রকৃতির বুকে মলম লাগাতে চাই

আমি এই প্রকৃতির সাথে আর প্রকৃতির সম্বন্ধ ঘটাই ।


আমি সাবধানী ।

আমি খালি পায়ে হেঁটে গন্তব্যে পৌঁছাই ,

আমি মানুষের লোভে করাত চালাতে চাই ।


আমি বিদঘুটে ।

আমি চামচে করে যাবতীয় জঞ্জাল সরাই ।

আমি সবুজ ঘাসের সাথে বন্ধু পাতাই ।


আমি ইচ্ছেধারী ।

আমি দুটো জামা পরে এলোমেলো বোতাম লাগাই 

আমি পকেটে আঁশ রেখে মাছ কেনার সাধ মেটাই ।

কবিতা || স্বপ্নরা ছুঁয়ে যায় জীবনের রঙ || মৌসুমী চন্দ্র

 স্বপ্নরা ছুঁয়ে যায় জীবনের রঙ



ওই তো দূরে, ওই দেখা যায়

রঙবাহারি ফুলের বাহার।

কুমোরটুলির দেবীর মত কে যায়

কি অপরূপ রূপ তাহার!


আমার স্বপ্নরা উড়ে উড়ে খেলে

রঙে রঙে জীবনকে রাঙায়।

ফুলেরা পাপড়ি মেলে ডাকে

মনেতে কি আবেশ মাখায়....


সব রঙ ঢেলে ঢেলে কে যায়

কি বাহার তার, কে যায়?

তুমি কি রূপকথা এক স্বপ্নের?

জীবন ছন্দ ফিরে ফিরে পায়।


এ কি! এ কি স্বপ্ন স্বপ্ন আমার?

কি মধুর পরশ তোমার!

জীবনের পাতা রঙে রঙে ভরে

কি অপরূপ তার বাহার!

কবিতা || অভিসার || বিশ্বেশ্বর মহাপাত্র

 অভিসার



আজ এলেম আমি চাইতে তোমার দ্বারে

রাজ ঐশ্বর্য নয় মনের ঐশ্বর্যই মুল সুর,

যে গানের বানীর তরণী বেয়ে জীবন সাগর

পাড়ি দেবো কান্না হাসিতে দুজনায় দুর বহুদুর৷

মোদের সে পথ চলার পথে কতদিনের কত না

রাগ অনুরাগের পলাশ চম্পা চামেলী বেলী,

উঠিবে ফুটিয়া নয়নে নয়নে অভিসারে রূপসী

শতদল সম সময়ের অঙ্গনে আপন দলেরে মেলি৷

কবিতা || ছলনার ভিখারি || সুব্রত মিত্র

 ছলনার ভিখারি



আমি আবারও লোভের আকাশে নিজেকে ভাসালাম

পোশাকি বর্ণনায় কতিপয় ভিন্ন ছবি আঁকলাম,

নিজের প্রকৃত ছবিটাকে ঢেকে রেখে নকল ছবিতে নিজেকে রাঙালাম। 


চারিদিকে এত সাজ

আজ বড় সুন্দর লাগে এই ভদ্র সমাজ,

মনোবিকাশের ভাণ্ডার ভুলে যাব; হয়তো আজ কিছু পাব

নাব্যতার সীমাবদ্ধতায় থাকে যেন মার্জন,

নাটকীয় মনোরম করবে আমাকে জানি বিভ্রম

অগত্যা কর্ণের পাশে হবে সেই বাণী শ্রবণ,

সময়ের কাছে আছে মোর ইতিহাস

সময়ই হয়তো জানাবে সমন। 


তবু বলি একটি কথা বারবার

এই সময়ের কাছে নেই ভাষা জানাবার কৃতজ্ঞতার

নিয়েছিল কেড়ে সব হয়েছিল ছারখার

সময়ের হাত ধরে সময়ই ফিরিয়ে দিল তাহা আবার

সার্থক তোমাদের দেয়া ভালোবাসা; প্রেরণা; সার্থক জনম আমার।