Sunday, November 27, 2022
ছোট গল্প - অভদ্র || লেখক - সান্ত্বনা ব্যানার্জী || Written by Sawntana Banerjee || Short story - Aovdro
ছোট গল্প - রিকভারি স্টেজ || লেখক - ডা: অরুণিমা দাস || Written by Arunima Das || Short story - Recovery stage
রিকভারি স্টেজ
ডা: অরুণিমা দাস
ডা: রায় নিজের চেম্বারে বসে পেশেন্ট প্রোফাইল গুলো চেক করছিলেন। পেশায় একজন বড়ো সাইকিয়াট্রিস্ট ডা: সুশান্ত রায়। রোগীদের মানসিক স্বাস্থের প্রতি খুবই যত্নবান তিনি।খুব মন দিয়েই ফাইল গুলো দেখছিলেন।
হঠাৎ দরজায় কেউ নক করলো,
মে আই কাম ইন ডক্টর।
ফাইল থেকে মুখ তুলে দেখলেন সিস্টার অহনা চেম্বারে ঢোকার জন্য অনুমতি চাইছেন। একগাল হেসে ডা: রায় বললেন ইয়েস,প্লীজ কাম ইন অহনা।
অহনা এগিয়ে গিয়ে একটা ফাইল তুলে দেয় ডা: রায়ের হাতে, আর বলে স্যার এটা মোনালিসার ফাইল, ও এখন আগের থেকে অনেকটাই সুস্থ আছে। মেডিসিন গুলোও সময় মত খাওয়াচ্ছি। স্যার ওকে কবে নিয়ে যেতে পারবো বাড়ী, সময় এলেই নিয়ে যেতে পারবেন,বললেন ডা: রায়। বলেই চট করে একবার চোখ বুলিয়ে নিলেন ফাইলটাতে। হেসে বললেন অহনা ইট ওয়াস নট পসিবল উইদাউট ইউ। অহনা বলল স্যার আমি তো শুধু কেয়ার নিয়েছি ওর, আর আপনি তো ওকে অ্যাসাইলামে আনা থেকে শুরু করে প্রপার মেডিসিন আর রেগুলার কাউন্সেলিং করে রিকভারি স্টেজে নিয়ে এসেছেন। ডা: রায় হেসে বললেন এটাই তো আমার কাজ সিস্টার। আর এই কাজের মধ্যে এক অদ্ভুত প্রশান্তি খুঁজে পাই আমি। একগাল হেসে অহনা বলে জানিতো স্যার,আপনি রোগীদের কতো টা ভালোবাসেন। আপনি তাহলে ফাইলটা চেক করুন স্যার, আমি একটু পরে আসছি। মোনালিসার লাঞ্চের টাইম হয়ে গেছে, বললো অহনা।
ও শিওর, প্লীজ গো। অহনা বেরিয়ে গেলো।
মোনালিসার ফাইলটা দেখতে দেখতে ডা: রায় ক্রমশঃ হারিয়ে যেতে লাগলেন অতীতের দিনে,মনে পড়ে গেলো বছর দুই আগেকার কথা। এক ঝড় বৃষ্টির দিন হসপিটাল থেকে রাউন্ড দিয়ে ফেরার সময় হঠাৎ গাড়ীর সামনে এসে পড়ে একটি মেয়ে। গাড়ির ধাক্কায় রাস্তায় পড়ে গিয়ে অজ্ঞান হয়ে যায়। অত রাতে কোনো উপায়ান্তর না দেখে মেয়েটিকে নিজের বাড়িতে নিয়ে আসেন উনি। জ্ঞান ফিরলেও নিজের নাম বলতে পারেনি সেই মেয়েটি। কেমন একটা শূন্য দৃষ্টি আর এলোমেলো চুলে তাকিয়েছিল সে। সেই রাতে আর কিছু জিজ্ঞেস করেননি ডা: রায়। পরদিন সকালে অ্যাক্সিডেন্টের জায়গায় গিয়ে ডা: রায় কিছু লোকজনকে মেয়েটির ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করে জানতে পারেন মেয়েটি মানসিক ভারাম্যহীন,নাম মোনালিসা,থাকে রিকশা স্ট্যান্ডের পাশের এক ঝুপড়িতে। ওর বাড়ি কোথায় আর কেনোই বা ও এভাবে রাস্তায় পড়ে থাকে এসব জিজ্ঞাসা করতে গিয়ে ডা: রায় অনেক কিছু জানতে পারেন। একটি ছেলেকে ভালোবাসতো মোনালিসা, কিন্তু বাড়ির কেউ সেটা মেনে নেয়নি। পালাবার প্ল্যান করেছিল ছেলেটির সাথে। ধরা পড়ে যায় দাদার হাতে আর বেধড়ক মার খেয়ে ছেলেটির মৃত্যু হয় সেদিন। এই নৃশংস দৃশ্য সহ্য করতে না পেরে মোনালিসা পাগলের মত হয়ে যায়, নিজের চুল ছিঁড়তে থাকে। দাদারা ওকে ঘরের মধ্যে নিয়ে গিয়ে দরজা লাগিয়ে আটকে রাখে। চেঁচামেচি করলেই জুটতো মারধর আর অকথ্য গালাগাল। খেতেও দিতো না ঠিক করে। একদিন দাদারাই বোনের পাগলামিতে অতিষ্ঠ হয়ে রাস্তায় ছেড়ে দিয়ে আসে। ওখান থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে ক্লাবের ছেলেরা ওকে রিকশা স্ট্যান্ডের পাশের কুঁড়েতে রেখে আসে। খাওয়াদাওয়া কিছু করেনা, সারাদিন রাস্তার দিকে চেয়ে থাকে। শুনতে শুনতে ডা: রায়ের মনটা ভার হয়ে ওঠে। উনি বলেন আজ থেকে ওর চিকিৎসার দায়িত্ত্ব আমার। ওকে মেন্টাল অ্যাসাইলামে রাখবো,দেখি কতটা সুস্থ করে তুলতে পারি ওকে। সবাই বললো, চেষ্টা করে দেখুন স্যার। সেইদিন থেকে মোনালিসা কে সুস্থ,স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য লড়াই শুরু করেন ডা: রায়।
প্রথম প্রথম একটা ঘরে বেঁধে রাখা হতো মোনালিসা কে। ইলেকট্রিক শক থেরাপি থেকে শুরু করে কগনিটিভ বিহেভিয়ার থেরাপি সব কিছু চলতো। আর সাথে অ্যান্টি সাইকিয়াট্রিক মেডিসিন এবং সিস্টার অহনার রুটিন কেয়ার। এই সব কিছুর সম্মিলিত প্রয়াসে আজ মোনালিসার হাত পায়ের বাঁধন খুলে গেছে, মুক্ত বাতাসে প্রাণ ভরে শ্বাস নিতে সক্ষম। সময় ওর মধ্যে অনেক পরিবর্তন এনে দিয়েছে। কঠিন বাস্তবের প্রেক্ষাপট তার মানসিক কাঠিন্য আরো সুদৃঢ় করে তুলেছে। আত্মনির্ভর হয়ে নিজের পায়ে দাঁড়াতে চায় সে। আর যাইহোক,বাড়িতে কোনোভাবেই ফিরতে রাজি নয় মোনালিসা। বাড়ির লোকেদের নির্মম অত্যাচার কিছুতেই ভোলেনি সে। সিস্টার অহনা ঠিক করেছে মোনালিসা কে নিজের বাড়িতে নিয়ে যাবে,অনাথ জীবনে বোনের অভাব দূর হবে। ডা: রায় ও পারমিশন দিয়েছেন। মোনালিসাও অহনাকে দিদির মতোই ভালোবাসে।
স্মৃতির পাতা থেকে চোখ তুলে মোনালিসার ফাইলে নতুন মেডিসিন গুলো লিখতে লাগলেন ডা: রায়। কল করে অহনাকে ডাকলেন তিনি। অহনা এলে বললেন জাস্ট দুটো মেডিসিন দেওয়া আছে, লো ডোজ, উদ্বেগ কমাবে আর মন শান্ত রাখবে। এগুলোই এখন থেকে খাবে মোনালিসা। আর ওষুধের থেকেও ওর দরকার এখন ভালোবাসা,সহমর্মিতা যেটা ওকে রিকভারি স্টেজ থেকে সম্পূর্ণ স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে দেবে। অহনা বলল আমি সবটুকু দিয়ে চেষ্টা করবো স্যার। ডা: রায় বললেন আমি জানি আপনিই পারবেন একমাত্র,তাই আপনাকে পারমিশন দিয়েছি। ফর্মালিটি গুলো পূরণ করে আপনি আগামী সপ্তাহেই আপনার নতুন বোনকে নিজের বাড়ী নিয়ে যেতে পারবেন। অহনা ধন্যবাদ জানিয়ে একছুটে মোনালিসার কেবিনে গিয়ে বললো আমার সাথে যাবি তো নাকি। ছোট্ট একটা হাসি দিয়ে মোনালিসা বললো হ্যা দিদি, তোমার আর ডা: রায়ের হাতেই আমার পুনর্জন্ম হয়েছে, নতুন করে বাঁচার পথ খুঁজে পেয়েছি আমি। তোমাদের কাছে আমি চিরকৃতজ্ঞ থাকবো। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তোমার সাথেই থাকবো আমি। কোথাও যাবো না তোমায় ছেড়ে।কেবিনে ঢুকতে গিয়েও ঢুকলেন না ডা: রায়। দিদি আর বোনের ভালোবাসার কথোপকথন তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করতে লাগলেন ও ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করলেন এই বন্ধন যেনো অটুট থাকে চিরকাল আর মোনালিসার নতুন জীবন যেনো সবসময় খুশি আর আনন্দে ভরপুর থাকে। কোনো দুঃখ যেনো ওর মনকে ছুঁতে না পারে কোনোদিন। কেবিনের দরজা বন্ধ করে ডা: রায় হাঁটা দিলেন অন্য পেশেন্ট গুলো দেখবেন বলে। আরও কেউ হয়তো রিকভারি স্টেজ থেকে সুস্থ জীবনে পৌঁছনোর জন্য অপেক্ষা করছে যে দুটোর মধ্যে একটা অদৃশ্য সেতুবন্ধন গড়ে দিতেই তিনি সর্বদা সচেষ্ট থাকেন।
Friday, November 25, 2022
উপন্যাস - পদ্মাবধূ || বিশ্বনাথ দাস || Padmabadhu by Biswanath Das || Fiction - Padmabadhu Part -28
দেবীদাসের সাক্ষাৎ ডায়েরীতে ভদ্রলোকের নামতো নেই-ই, এই প্রথম দেখল ভদ্রলোককে। তবে কি তার বাবার সাথে পরিচয় আছে! হতে পারে, বাবার সাথে বহুজনের পরিচয় আছে যেহেতু তিনি একজন বিগ ইন্ডাষ্ট্রিয়ালিষ্ট।
Thursday, November 17, 2022
ছোট গল্প - বদ || লেখক - অলভ্য ঘোষ || Written by Alabhya Ghosh || Short story - Bod
বদ
অলভ্য ঘোষ
আমি তখন স্কুলে পড়ি একটি ছেলে বখে গিয়েছিল।লুকিয়ে লুকিয়ে বিড়ি সিগারেট খেত কেবল না গঞ্জিকা সেবন ও করতো।আমাকে অনেকে বারণ করতো ও খারাপ ছেলে তুই ভালো ছেলে ওর সাথে মিশিস কেনো।খারাপ হয়ে যাবি।আমার ভালো ভালো ছেলে গুলোর চাইতে খারাপ ছেলেটাকেই বেশি ভালো মনে হতো।কারণ তার ভালো সাজার কোন দায় ছিলনা।কে তাকে খারাপ বলবে তাতে তার কিছুই যেত আসতো না।আর আতু আতু পাতু পাতু ভালো ছেলে গুলোর ছিল সর্বদা লোকের কাছে ভালো হবার চেষ্টা।গজ-দম্ভ মিনারে বাস!আমার মনে হত একটা খারাপ ছেলে যদি একটা ভালো ছেলেকে খারাপ করেদিতে পারে তবে একটা ভালো ছেলে একটা খারাপ ছেলেকে কেন ভালো করতে পারবে না।যদি সে সত্যিই ভালো হয়।যদি ভালো ছেলেটা খারাপ ছেলেটার ভালো না করতে পারে তবে ভালো ছেলেটার ভালো গুণে খামতি আছে।অমন ভালো হওয়ার চাইতে না হওয়া ভালো। আমি ছেলেটার সাথে স্কুলে যেতাম।ক্ষুদিরাম, প্রফুল্ল চাকী ,নেতাজি সুভাষ-চন্দ্র বসু,মাস্টারদা সূর্য সেন, বাঘা যতীন, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার,মাতঙ্গিনী হাজরা, রবিনহুড প্রতিদিনই এক একটা গল্প শোনাতাম।
"উত্তম নিশ্চিন্তে চলে অধমের সাথে,
তিনিই মধ্যম যিনি চলেন তফাতে !"
ছেলেটা আমাকে একদিন একটা মাঠের মাঝে নিয়ে গিয়ে বলল;
-তুই তোর জ্ঞানের কথা রাখ।কত বড় হিম্মত আছে বিড়ি খেয়ে দেখা।
আমি বললাম;
- বিড়ি খেতে আবার হিম্মত লাগে নাকি।
ছেলেটা বলল;
-মুখে বললে হবে কেন খেয়ে দেখা।
ওর হাত থেকে একটা বিড়ি নিয়ে মুখে ধরলাম।দেশলাই কাঠি জ্বেলে ও আমার মুখাগ্নি করার সাথে সাথে ওর মুখটা যেন প্রজ্বলিত হয়ে উঠলো আনন্দে। বিড়িটা ঠিকমতো জ্বলেনি তখনো ফিরিয়ে দিতেই সে ফুরফুর টান দিতে লাগলো আমার মুখের বিড়িটা আনন্দের চোটে।এ আনন্দ কিসের আনন্দ আমি আন্দাজ করেছিলাম। কিছুক্ষণের মধ্যে তার প্রকাশও পেলাম।ছেলেটা জনে জনে স্কুলে সকলকে বলে বেড়াতে লাগলো আমাকে সে বিড়ি খাওয়াতে পেরেছে।কেউ কেউ বিশ্বাস করলো ছিঃ ছিঃ করে বলল আমি উচ্ছন্নে গেলাম।কেউ কেউ কিছুতেই বিশ্বাস করতে চাইল না।আমার মত ভালো ছেলে তেমন কোন কাজ কখনোই করতে পারে না।বরং ছেলেটার ওপর তাদের বিশ্বাস ছিল না।
আমি ছেলেটার সাথে পরের দিনও প্রস্তুত হলাম স্কুলে আসতে নতুন একটা গল্প শোনাতে।ছেলেটা তখন আমায় তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করছে ভাবটা এমন তার আর আমার মধ্যে এখন কোন ফারাক নেই।তবে কেন বাপু জ্ঞানের কথা অতো।
আমার খুব হাসি পেয়েছিল।আমি বিড়িটা মুখে ধরেছিলাম কিন্তু ধোঁয়াটা কখনোই মুখের ভিতর টানিনি।ছেলেটাকে বলেছিলাম শোন কে আমাকে ভাল-বলবে তার চেয়ে ঢের বেশি গুরুত্বপূর্ণ আমি নিজের কাছে নিজে কতটা ভাল।আমার পথ যদি তোর পথের থেকে উৎকৃষ্ট হয় তোকে আমার পথে আসতেই হবে। তোর পথ যদি আমার পথের থেকে ভালো হয় আমি তোকে কথা-দিলাম নির্দ্বিধায় তোর পথে হাঁটব।
ছেলেটাকে আমি সেদিন বুদ্ধদেবের গল্প বলেছিলাম পথ হাঁটতে হাঁটতে।
সময় টা বর্ষাকাল জঙ্গলের মধ্যে সিক্ত বুদ্ধদেব তখন ধ্যানে মগ্ন থাকেন সারাদিন।কর্দমাক্ত পথে বেশিদূর যাওয়া সম্ভব হয় না জঙ্গল সন্নিকট নগর থেকে ভিক্ষানুসন্ধানে বেড়য় শিষ্যগণ।কোনদিন ভিক্ষা জোটে কোনদিন ভিক্ষা জোটে না।যেদিন জোটে সেদিন আহার্য গ্রহণ করে।যেদিন জোটে না খেতে পায় না।খাদ্যের চেয়েও অন্তরায় প্রকৃতি বর্ষা মুখর দিনে জঙ্গলে থাকা দুরূহ।একটা ছাউনি খুব প্রয়োজন।
বুদ্ধ শিষ্যদের বলেন;
- যাও দেখো নগরে একটি ছাউনি মেলে নাকি।
কিন্তু নগরে কিছু লোক তাদের ভিক্ষা দিতে সম্মত হলেও ছাউনি দিতে কেউয়ই চায় না।অবশেষে এক পতিতা তাদের ভিক্ষা ও ছাউনি উভয় দিতে সম্মত হয়।
শিষ্যরা ফিরে এসে গুরুকে জানাল;
- ছাউনি পাওয়া গিয়েছে গুরুদেব। কিন্তু......
বুদ্ধ বলেন;
-কিন্তু কি?
শিষ্যরা সংশয়ের সাথে বলেন;
-কিন্তু গুরুদেব তা বেশ্যালয়।
বুদ্ধ বললেন;
-আমরা সন্ন্যাসী ভিক্ষুক।আমাদের কাছে বেশ্যালয় আর দেবালয়ের মধ্যে কোন ফারাক নেই।চলো সেই উত্তম স্থানে আমাকে নিয়ে চলো।
শিষ্যরা বুদ্ধকে সেই বেশ্যালয়ে আতিথেয়তার জন্য নিয়ে গেলত বটে কিন্তু মনের মধ্যে সংশয়ে দোদুল্যমান রইলো এই ভেবে যে তাদের সন্ন্যাস ব্রত থেকে স্খলন ঘটতে আর বেশি দেরি নেই।এদিকে বুদ্ধকে অতিথি হিসেবে পেয়ে লাস্যময়ী বারবনিতা টি কি করবে কিছুই ভেবে উঠতে পারছিল না।কিভাবে কতটা সেবা করলে প্রভু পরিতৃপ্ত হবেন।বুদ্ধের সিক্ত বস্ত্রের বদলে তিনি তাকে রেশমের কোমল গরম কাপড় পরিধান করতে দিলেন।সুগন্ধি খাদ্য পানীয় আহার করতে দিলেন; এমনকি তার মনোরঞ্জনের জন্য নৃত্যও পরিবেশন করতে লাগলেন।আর এই প্রতিটি পদক্ষেপে শিষ্যরা আঁতকে উঠতে লাগলেন তবেকি তাদের গুরুদেব বশীভূত হয়েছেন এই সামান্য কয়েক কড়ির বেশ্যার!
বুদ্ধ শিষ্যদের ডেকে বলেন;
-শোন বাইরের কোন কিছুতেই মানুষের স্খলন ঘটে না।মানুষের স্খলন ঘটে ভেতরের দ্বিচারিতায়!
আমি থেমে বলেছিলাম;
- তারপর কি হয়েছিল জানিস?
ছেলেটা বোকার মত বলেছিল;
-কি?
আমি বলে ছিলাম;
-বুদ্ধদেব যখন সেই বেশ্যাখানা ছেড়ে চলে গেলেন।সেই বেশ্যাও তার পিছু নেয় সন্ন্যাস গ্রহণ করে।
ছেলেটা তীব্র প্রতিবাদ করেছিল।
-এসব ঢপের গল্প।শোন নগরের পথে ওই ভিখারি আর খানকি টা যদি এক সাথে বেড়য় লোকে ভিখারি কে ছেড়ে খানকির পেছনে ছুটবে কারণ সে বেশি আকর্ষণীয়।
কয়েক দিনের মধ্যেই আমি স্কুলে পেট ধরে বাবাগো মাগো করে উঠলাম।সর্বাগ্রে যে এগিয়ে এল সে ওই বিড়ি খাওয়া ছেলে টা।ওই টিচার্স রুমে গিয়ে শিক্ষকদের খবর দিল কেবল নয়।রিকশা ডেকে আমাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে উদ্যত হলো।শিক্ষক মহাশয় রা জরুরি অবস্থার জন্য স্কুলে সংরক্ষিত সাধারণ পেট ব্যথার ট্যাবলেট দিয়ে ছেলেটাকে আমার বাড়িতে পাঠাল খবর দিতে।
মায়ের কাছে কোন কিছু লুকানোর সাধ্য আমার নেই।তড়িঘড়ি আমার মা খবর পেয়ে ছুটে গেল স্কুলে এবং আমাকে বাড়ি নিয়ে এসে প্রথম যে কথাটি বলেছিল সেটি হল;
- তোমার কিছুই হয় নি।
আমি মায়ের মুখের দিকে চেয়ে হেসেছিলাম।
মা কেবল বলেছিল;
- আর যেন এমন করোনা।
মা আমাকে জানতে চায়নি কেন আমি পেট ব্যাথার অভিনয় করেছিলাম।আমার স্কুল কখনো কামাই হতো না স্কুল থেকে পালিয়ে আসাত দূর।মা ভালকরেই জানতো এর পেছনে আমার কোন স্কুলের চাইতেও বড় কোন জীবন পাঠ লুকিয়ে রয়েছে।পাঠটি ছিল; আমি কি ঠিক না ভুল?Am I right or wrong?সমগ্র জীবনটা তো একটা পাঠশালা।
বহুদিন বাদে সেই ছেলেটি পথে আমায় ধরে বলল গল্প বলেবলে তুই আমার মাথাটা বিগরেদিলিরে।
আমি বললাম;
-যে মানুষ তার বদ বুদ্ধিকে অতিক্রম করতে পারে সেই বুদ্ধ।আর যে মানুষ তার বদ বুদ্ধির নিচে চাপা পড়ে থাকে তারা বুদ্ধু।
Wednesday, November 16, 2022
ছোট গল্প - যমজ || লেখক - অমিত কুমার জানা || Written by Amit Kumar jana || Short story - Jomoj
Tuesday, November 15, 2022
উপন্যাস - পদ্মাবধূ || বিশ্বনাথ দাস || Padmabadhu by Biswanath Das || Fiction - Padmabadhu Part -27
Saturday, November 12, 2022
ছোট গল্প - দরজার পাশে || লেখক - রোহিত দাস || Written by Rohit Das || Short story - Dorjar pase
দরজার পাশে
রোহিত দাস
সাহিত্য বিষয়টা চিরকালই আমার কাছে বিরক্তিকর। তবে আজ হঠাৎ করে এভাবে খাতা কলম নিয়ে যে আকারনে তা নয়। বিগত কয়েক মাসে আমি যে পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছি, সত্যি-মিথ্যে, ভালো-মন্দের যুদ্ধের মাঝে এসে পড়েছি তা আমকে এই কাঠগড়ায় এনে দাঁড় করিয়েছে। এতদিন মনের কথা শুনে আসা আমি পড়েছি আজ মাথার কোটি কোটি প্রশ্নের জালে। এই ঘটনার শুরু প্রায় আট মাস আগে।
গত বছর বাবার আদেশে এম.এ কমপ্লিট করে বেশ কিছু বেসরকারি সংস্থায় চাকরির জন্য ছুটেও যখন কোন ফল হলো না, তখন বাবার অবাধ্য হয়ে নিজের গিটারিস্ট হবার লক্ষ্যে এগিয়ে গেলাম। এই নিয়ে বাবা বেশ রাগারাগি করলেও একপ্রকার জোর করেই করি। কলেজ শুরুর সময় যে দলের সঙ্গে পারফর্ম করতাম তারা এককথাতে রাজি হয়ে গেল আমায় দলে নিতে। আসলে গিটারে আমার হাত চিরকালই ভালো, এটা বাবাও অস্বীকার করতে পারবেন না। বেশ নাম করেছে এরই মধ্যে আমার দল। বছরের শেষ তখন, বেশ কিছু জায়গা থেকে শো এর ডাক পায় আমারা। কয়েক সপ্তাহে বেশ কিছু টাকা জোগাড় করে একবারে বাবার হাতে তুলে দেবো ভেবে একের পর এক জমজমাট শো করতে লাগলাম। রাত করে বাড়ি ফেরা আর শো করতে একটু হলেও নেশা করা হয় বলে বাবা একেবারে কঠোর বিরোধি। মা একটু রাগারাগি করেন তবে তিনি জানেন আমি ওসব খায়না বেশি। তাই তিনি বাবাকে সামাল দেন।
এভাবে একের পর এক শো করে আর একটা মোটা অঙ্কের টাকা বাবার হাতে তুলে দিতে পেরে আমি একটু নিশ্চিন্ত। তবে গত ছ মাস আগে একটা শো করতে গিয়ে সেবার হঠাৎ করেই পেটে ব্যথা ওঠে। কোন রকমে শো শেষ করে দেড় ঘন্টা গাড়ি জার্নি করে যখন পৌনে একটার সময় বাড়ি ফিরলাম তখন যন্ত্রনায় আমার চোখ বুজে আসছে। কাঁধের গিটারের ব্যাগটা শ্লিপ করে পরে যাচ্ছে সেটা সামলানোর ক্ষমতাও নেই। বাবা দরজা খুলে আমাকে এঅবস্থায় দেখে তৎক্ষণাৎ আমাকে সোফায় শোয়াতে শোয়াতে চিৎকার করে মা কে ডাকলেন। আমাকে মাও নাড়াতে নাড়াতে ডাকতে লাগলেন। মা'র গলায় কান্নার স্বর।বাবার গভীর গলায় রুদ্র রুদ্র ডাকটা শুনতে শুনতে আমার চোখ বন্ধ হয়ে গেল। যখন জ্ঞান ফিরলো আবছা চোখে কাঁচের ওপারে কিছু মুখ দেখলাম। একটা একটা করে চিনতে পারলাম। মা বাবা আর পাড়ার ড: অতুল কাকু। জ্ঞান এসেছে দেখে বাবা ছুটে এলেন বাবার মুখে কঠোরতার জায়গায় কষ্ট আর চিন্তার ছাপ স্পষ্ট। কান্নার স্বরে মা বললো “ এখন আর ব্যাথা হচ্ছে না তো বাবা!!”
দুপাশে মাথা নাড়িয়ে না বললাম। বাবা ভাঙ্গা গলায়দেখে বললেন “কথা বলতে কষ্ট হচ্ছে, জল খাবি রুদ্র?”
কষ্ট করে হ্যা বলাতে বাবা জলের গ্লাসটা মুখের সামনে ধরলো ঢকঢক করে পূরো জলটায় খেলাম। বাবা গ্লাস রেখে বেরিয়ে গেলন। দুদিনে চার বার ব্যাথা ওঠার পরেও যখন ডাক্তাররা এর কারণ খুঁজে বের করতে পারলো না তখন বাবা আমাকে ভেলোর নিয়ে যাবেন বলে ঠিক করলেন। তবে সেখানে গিয়েও তে খুব লাভ হলো এমনটা একেবারেই নয়। তারা ব্যাথার কারণ খুঁজে পেল না। কোনো ওষুধেয় আমার রোগ সারেনা। সময়ে সময়ে ব্যাথা আসে ওষুধে ব্যথা কমে কিন্তু একেবারে সেরে ওঠে না। ব্যথায় জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। এভাবে দু মাসে অনেক টাকা খরচ করেও আমার অবস্থা বিন্দুমাত্র ভালো হলো না দেখে অগত্যা বাবা আমাকে আগের হসপিটালে ফিরিয়ে আনেন। বাবার দোকান বহু দিন বন্ধ। বহু টাকা পয়সা খরচের পরও এই অবস্থা।দিন দিন ব্যাথায় ভুগে মুখের স্বাদ নেই। শরীরও ভেঙ্গে গেছে। পেটে ব্যাথা,মা'র কান্না আর বাবার ধরে আসা গলা শুনে আমার তখন বাঁচার ইচ্ছা প্রায় শেষ। উঠে বসতেও কষ্ট হয়।দলের সবাই প্রায় দেখা করে গেছে।আমার দেখাশোনার জন্য একজন নার্স আছেন। সময়ে সময়ে তিনি ওষুধ দেন। একদিন সকাল থেকেই বৃষ্টিটা মুশোল ধারায় শুরু হয়েছিল। সকালে সেদিন ব্যাথাটা একবারই এসেছিল। শুনলাম অনেক নার্স আসেননি। অপর্না দিদিও আসেননি বৃষ্টির জন্য।অন্য একজন ওষুধ দিয়েছিল আমাকে। রাত্রেও বৃষ্টির বেগ কোমলো না। খেয়ে নিয়ে শুয়ে ছিলাম।কখন ঘুমিয়ে গেছি জানি না। তীব্র যন্ত্রনায় ঘুমটা ভেঙে গেল। যন্ত্রনায় ছটফট করতে করতে কোনরকম করে দুবার নার্স নার্স বলে ডাকলাম। কিন্তু কোন উত্তর এলো না। ব্যাথাটা ক্রমশ যেন বেরেই চলেছে। প্রান তখন ওষ্ঠাগত হবার উপক্রম। ঠিক তখনই পুরোনো কাঠের দরজাটা ঠেলে কেও ভেতরে এলো। ধীর পায়ে সে আমার মাথায় কাছে এসে দাঁড়ালো। মুখ ঘুরিয়ে তাকে দেখার ক্ষমতাও আমি তখন হারিয়েছি। সে তার নরম হাতটা আমার একঝাকড়া চুলের ওপর বোলাতে বোলাতে বললো শান্ত হও তুমি। পাশের টেবিল থেকে একটা ওষুধ মুখে দিলো, জল খাওয়ালো। আমার দুচোখে অন্ধকার নেমে এলো। আধ বোঝা চোখেই দেখলাম সে আমার মাথার কাছে বসে।
ঘুম যখন ভাঙলো ঘড়িতে দেখলাম সারে আট্টা। নিজেই কোনোরকমে টেবিল থেকে খাবার আগের ওষুধ গুলো খেয়ে নিলাম। কাল রাতের ঘটনা কিছুটা মনে পরতেই মাথায় ঝিম ধরে এলো। খুব স্পষ্ট না হলেও মনে আছে সেই মানুষটির কথা। কে ছিলো জানিনা কিন্তু নতুন কেও। আশ্চর্য রকম ভাবে সেদিন সকাল থেকে আর ব্যথা ওঠেনি কিন্তু সন্ধ্যে হতে না হতেই অন্যদিনের তুলনায় যেন হাজার গুণ বেশি জোরে ব্যথা উঠলো পরপর দু বার।শুধু পেটে না সারা শরীর জুড়ে, চোখ-মুখ কুঁকড়ে যাচ্ছিল। জ্ঞান হারিয়ে ছিলাম। জ্ঞান যখন ফিরলো বাবা-মা দুজনেই বসে, মা কাঁদছে বাবা তাকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন।আমার চোখ খোলায় তারা যেন প্রাণ ফিরে পেল। বিছানা শুয়েয় মায়ের হাতে রাতের খাওয়া খেয়ে নিলাম।বাবা-মাকে অনেক বুঝিয়ে সুঝিয়ে বাড়ি পাঠালাম। আমি শুয়ে শুয়ে ভাবতে লাগলাম আগের রাতের ঘটনা। কে ছিল সে? আজ সন্ধ্যেয় কি এসেছিল, সেই কি আমার বাবা-মাকে খবর দিয়েছে? ব্যথার সময় কেন আসে? সারাদিন তো তাকে দেখলাম না! আজ রাতে কি তবে সে আসবে? জেগে বসে আছি তার অপেক্ষায়।হঠাৎ আবার ব্যথা, কিছুক্ষনে তার উপস্থিতি অনুভব করলাম।একইভাবে আমায় সান্তনা দিচ্ছ,আমার মাথার কাছে দাঁড়িয়ে আছে। আজ আবচ্ছা চোখে দেখলাম মানুষটি একটা মেয়ে। বয়স কম হয়তো আমারই মতো। এভাবে আরও দুদিন কেটে গেছে,সে রোজ রাতে আসে আমার মাথার কাছে দাঁড়িয়ে আমাকে সান্ত্বনা দেয়, ওষুধ দেয়,আমি জ্ঞান হারায়। বলে রাখা ভালো ইদানিং আমার ব্যথাটা যেন কিছুটা কমেছে আগের তুলনায় অনেকটা কম জোরালো। বলতে গেলে এখন সারাদিনে ব্যথা হয় না খালি রাত হলেই ব্যথা আসে সাথে সেও। এভাবে চলতে চলতে একদিন ঠিক করলাম যতই ব্যথা আসুক কিছুতেই আর জ্ঞান হারালে চলবে না তার সাথে আমাকে দেখা করতেই কে সে? কেনই বা সে খালি রাতেই আসে?আমাকে জানতেই হবে।
সেদিন রাত্রে যখন ব্যথা উঠলো তখন ব্যথার কথা ভুলে আমি জ্ঞান না হারাবার চেষ্টায় মত্ত। প্রতিদিনের মতো সেদিনও আমার মাথার কাছে দাঁড়িয়ে আমাকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করেছে। কিছুক্ষণ ব্যথায় ছটফট করার পর সে টেবিলে রাখা কোন ওষুধ দিল।না সেদিন আমি অজ্ঞান হয়নি। কিছুক্ষণ পর আমি স্পষ্ট দেখলাম আমার মাথার কাছে দাঁড়িয়ে একটা বছর বাইশের মেয়ে। তাকে দেখতে অপূর্ব সুন্দর। আমি স্কুলে-কলেজে সত্যি এত সুন্দরী আমি কাউকে দেখিনি।এই প্রথম দেখলাম। খুব লম্বা নয় মাঝারি লম্বায়, লম্বা চুলে তার ছোট্ট মুখখানা আমার দৃষ্টিটাকে কিভাবে যে বেঁধে রেখেছিল তা আজও আমি বলে বোঝাতে পারিনা। আমি বেশ কিছুক্ষণ তার দিকে খালি চেয়েছিলাম। সে হেসে বলল আর কষ্ট হচ্ছে না তো। আমার গলা থেকে খালি না ছাড়া আর কিছু বেরোলো না। ধীর পায়ে সে দরজার পাশে গিয়ে বসল। ঘরটায় একটা নীল আলো জ্বলছে অতটা জোরালো না হলেও তাকে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি। সে কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল "তোমার খুব কষ্ট হয়না যখন এই ব্যথা ওঠে" আমি বললাম তা হয়।তবে এতদিনে কষ্ট পাওয়াটা অভ্যাস হয়ে গেছে এখন অতটা কিছু মনে হয়না। মেয়েটা অবাক হয়ে বলল কিন্তু কেন হয়? আমি বললাম জানিনা এর উত্তর হয়তো স্বয়ং উপরওয়ালার কাছেও নেই। মেয়েটা তার মিষ্টি নরম গলায় কোন অচেনা গান গুন গুন করে দু'লাইন গেয়ে আমাকে প্রশ্ন করল তুমি গান গাইতে পারো। আমি হেসে বললাম একটু-আধটু পারি,তা তুমি ওরকম মনমরা হয়ে বসে আছো কেন? অসুবিধা থাকলে আমায় বলতে পারো। এই কথাটা কেন বললাম আমি জানিনা। আমি তাকে চিনিও না। এখনো পর্যন্ত নামই জানি না, আমার উঠার ক্ষমতাও নেই তবু কেন যেন ওকে খুব আপন বলে মনে হলো। সে বলল “তোমার ব্যথা দেখলে না আমারও ব্যাথার কথা মনে পড়ে।এইতো সেদিন যেন খুব ব্যথা উঠেছিল ওরা আমাকে খুব ব্যথা দিয়েছিল।” আমি জিজ্ঞাসা করলাম কারা তোমাকে ব্যথা দিয়েছিল আর কেন? জবাবে সে কিছু বললো না, মাথা নামিয়ে নিলো। শুধু বলল “আজ তবে আসি”। সে নিঃশব্দে দরজাটা টেনে বেরিয়ে গেল। পরদিনও ঘুম থেকে উঠে খুব বেলা হয়ে গেল ঘুম থেকে উঠে ওষুধ খেয়ে নিলাম।অন্যদিনের তুলনায় আজ কিছুটা নিজেকে সুস্থ বলে মনে হচ্ছে। অনেকদিন হলো ফোনটা দেখিনি। ফোনে ডাটাটা অন করতে একগুচ্ছ মেসেজ এল হোয়াটসঅ্যাপে।বন্ধুদের মেসেজ, খোঁজ নিচ্ছে সকলেই আমি কেমন আছি কিন্তু কাউকেই রিপ্লাই করা হয়নি তাই সবাইকেই একসাথে গ্রুপে বলে দিলাম এখন কিছুটা সুস্থ আছি। মিনিটের মধ্যেই গ্রুপে একসাথে সকলের আড্ডা আবার জমে উঠলো। ফেসবুক টা খুলে নোটিফিকেশন গুলো চেক করতে দেখলাম প্রোফাইল পিকচারের লাইক কমেন্টের বন্যা হয়েছে।প্রোফাইল খুলে পোস্টটা দেখলাম চারশোর বেশি রিয়াক্ট পড়েছে অনেক কমেন্টও এসেছে। ছবির দিকে চোখ পড়তেই চোখটা ভারী হয়ে এলো। শেষ শো এর আগের শো তে ছবিটা তোলা। কবে যে আবার আগের জীবনে ফিরে যাব জানিনা। ফোনটা পাশে রেখে কিছুক্ষণ আগে রেখে যাওয়া খাবারটা খেয়ে নিলাম। রাত্রে বাবা-মাকে সেই মেয়েটার কথা বলতে চেয়েও বলিনি,এইসময় এ কথা শুনলে তারা হয়তো ভাববে আমার শরীর হয়তো আর বিগ্ৰেছে, তাই উল্টাপাল্টা জিনিস দেখছি। ন'টা নাগাদ ওষুধ খেয়ে আমি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। সে আমাকে নাড়িয়ে ডাকলো আমি উঠতেই সে বাধা দিয়ে বলল উঠো না! শুয়ে থাকো আমি দরজার পাশে গিয়ে বসছি। সে দরজার পাশে বসে বলল ”আচ্ছা ঘুমিয়ে পড়েছিলে বুঝি!” হ্যাঁ দু চোখ জুড়িয়ে এসেছিল। তুমি কেমন আছো? সে বলল “আমি তো নেই বললেই চলে..। আচ্ছা আমি “তুমি অসুস্থ হওয়ার আগে কি করতে?” আমি বললাম আমি গিটার বাজাতাম আমার একটা দল আছে তাদের সাথে একসাথে গিটার বাজিয়ে প্রোগ্রাম করতাম। “জানোতো আমারোনা গান শেখার খুব ইচ্ছে ছিল। ভর্তিও হয়েছিলাম গান শেখার জন্য। অনেক কিছু শিখেছি। তারপর তারপর হঠাৎ একদিন...”। ওর কথা শেষ হতে না হতেই হঠাৎই কারেন্ট চলে গেল সারা ঘর অন্ধকার। সে সেখানেই বসে বলতে লাগলো। “বাবা রিক্সা চালায়, মা বেশকিছু ঘরে ঝিয়ের কাজ করে, বড় অভাব ঘরে। পড়াশোনা শেখার সুযোগ হয়ে ওঠেনি কোনদিনও কিন্তু গান শেখার ইচ্ছা ছিল। কোনদিনও বলিনি বাবাকে। ভয় লাগতো। সারাদিন তো বাবাকে দেখতে পায়না আর রাত্রে বাবা নেশা করে বাড়ি ফেরে। মাকে মারে, কখনো কখনো আমাকেও..তাই বলতে পারিনি। আমি যখন 18 বছরের হয় তখন মা আমাকে একটা ঘরে কাজ খুঁজে দিলো,বেশ কিছু বছর টাকা জমিয়েছিলাম। আমাদের বাড়ির পেছনদিকে অনেকটা গিয়ে মোরের বাঁকে একজন গান শেখায় তার কাছে গান শিখতে শুরু করেছিলাম।” এতটা বলেই সে থামল। পরিবেশ টা কেমন যেন হয়ে গেছে, তখনই কারেন্ট চলে এলো।ওই আলোতেই দেখলাম মেয়েটির চোখে জল। “আমি কিছু বলতেই যাচ্ছিলাম সে বলে উঠলো আলো এসে গেছে আজ আসি তবে”। সে উঠে চলে গেল।
আরও দু দিন কেটে গেলো একই ভাবে।এখন আমার শরীর বেশ সুস্থ বলে মনে হচ্ছে। শরীরে বেশ বল ফিরে পেয়েছি। সে রোজ রাতে আমার সাথে অনেক ক্ষন গল্প করে। দুদিনে তার নাম জানতে পেরেছি, ইন্দিরা...।
আশ্চর্য রকম ভাবে সেদিন সকাল থেকে একবারও ব্যাথা এলোনা, সন্ধ্যেতেয় না, এমনকি রাত দশটার আগে পর্যন্ত না। শুয়ে শুয়ে তার আসার অপেক্ষা করতে লাগলাম।কিন্তু আজ যেন আমার অপেক্ষার শেষ খুঁজে পাচ্ছিলাম না। একঘন্টা.. দুঘন্টা.. কতক্ষণ অপেক্ষা করেছি জানি না। একসময় অধৈর্য হয়ে যখন সে আসবে না মনস্থ করেছি ঠিক সেই সময় খুব জোরে ব্যথা উঠলো। এত জোরে ব্যথা এই দীর্ঘ কয়েক মাসে কখনো উঠেনি। কষ্টে মরেই যাচ্ছিলাম।ব্যথায় গলা দিয়ে আওয়াজ বেরোচ্ছে না যে চিৎকার করে কাউকে ডাকবো। ব্যথায় ছটফট করতে করতে যখন বিছানা থেকে পড়েই যাচ্ছি তখন সে দরজা ঠেলে ঘরে ঢুকে আমার কাছে এসে আমার মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে বলল “কিচ্ছু হবে না তোমার একটু শান্ত হও আমি এক্ষুনি ওষুধ দিচ্ছি।” পাশের টেবিলে হাতরে কোন ওষুধ না পেয়ে সে ছুটে বাইরে গিয়ে কোন একটা ওষুধের বাক্স হাতে করে নিয়ে এল।বাক্সের একটা প্যাকেট থেকে একটা ওষুধ আমার মুখে দিয়ে কিছুটা জল খাইয়ে আমার মাথাটা বালিশের উপর রেখে দিল।এরপর কি হয়েছে আমি আর জানি না।
আজ সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে গেছি। মা বাবা অতুল কাকু সবাই এসেছিলো।
বিগত কয়েক মাসের তুলনায় আজ নিজেকে অনেক বেশি অসুস্থ বলে মনে করছি। বিছানা ছেড়ে উঠার ক্ষমতা হয়েছে। অবস্থার উন্নতি দেখে মা-বাবা অতুল কাকু সবার মনে আশার আলো দেখা দিয়েছে,আমারও নিজেকে অনেক বেশি সুস্থ বলে মনে হচ্ছে। আর ব্যথা ওঠেনি। এই নিয়ে পাঁচ দিন হল। চলাফেরার ক্ষমতা ফিরে পেয়েছি মুখে খাবারের স্বাদ এসেছে। বলতে গেলে কিছুটা আগের জীবনে আবার ফিরে এসেছি। আরো দু-তিন দিন আমাকে অবজারভেশনে রেখে তারপর রিলিজ করে দেবে বলে ঠিক করেছেন অতুল কাকু। সকালের ওষুধ দিয়ে তিনি যখন চলে যাচ্ছিলেন হঠাৎই আমি তাকে ডেকে বসলাম। অতুল কাকু বলল “হ্যাঁ কিছু বলবি?” আমি জিজ্ঞেস করলাম আচ্ছা তোমাদের এখানে কি আমার বয়সে বেটে সুন্দর দেখতে কোন নার্স আছে? অতুল কাকু কিছুটা অবাক হয়ে বলল “কেন তুই জেনে কি করবি?” আমি বললাম না আসলে কিছুদিন আগে পর্যন্ত রাত্রিবেলা যখন আমার ব্যথা হতে তখন একজন অল্প বয়সী মেয়ে আমাকে ওষুধ দিত আর আমার সাথে অনেকক্ষণ গল্প করতো। দিনের বেলা কোন দিনও আসেনি তো তাই ভাবলাম হয়তো রাতে ডিউটি পরে খালি।
“রাত্রে! কিন্তু বিগত কয়েকদিন ধরে তো রাত্রে সন্ধ্যা দিদি আর তুলসী ছাড়া বাকি তো সব ছেলে নার্স ডিউটিতে আছে। তুই কাকে দেখেছিস? ঠিক দেখেছিস তুই ওটা মেয়ে ছিল?” আমি গলার স্বর দৃঢ় করে বললাম আমি ঠিকই বলছি অতুল কাকু আমি ঠিকই শুনেছি ও মেয়ে ছিল। আমি দেখেছি ওকে। “না সেটা তো হতে পারে না তবে.....” তবে কি অতুল কাকু? পকেট থেকে মোবাইলটা বের করে কিছুক্ষণ ঘাটাঘাটি করে একটা ছবি বার করে আমার চোখের সামনে ধরে বলল “দেখতো এই মেয়েটা কি না?” আমি দেখলাম ছবিটা একটা খবরের কাগজের। তাতে একটা রঙিন ছবি একটা মেয়ের বছর বাইশের। হ্যাঁ..হ্যাঁ..হ্যাঁ.কিন্তু মেয়েটা...। মেয়েটির ছবির মাথার ওপরে বড় বড় করে যা লিখা আছে সেটা দেখে আমার চোখ ঠিকরে বেরিয়ে আসতে চাইল। অতুল কাকু দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল “জানিনা তুই সত্যি বলছিস কিনা তবে তুই যদি সত্যিই একে দেখে থাকিস তবে এটা অলৌকিকে থেকে কম কিছু নয়।” কিন্তু এটা কি করে সম্ভব কাকু। মারা যাবার পর কাওকে কিভাবে দেখতে পাওয়া যায়? অতুল কাকু বলল “জানি না রে... কিচ্ছু বছরে পরছি না।” খবরের কাগজে ছবিটা উপরে লেখা ছিল...“২২ বছর বয়সী এক যুবতী ধর্ষিত”। অতুল কাকু বলল “সপ্তাহ খানেক আগেই কয়েকজন মেয়েটিকে হাসপাতালে ভর্তি করে। যখন নিয়ে এসেছিল তখন ওর অবস্থা খুব খারাপ ছিল। দুদিন আমাদের এখানে ট্রিটমেন্টে ছিল। হঠাৎ হঠাৎ করেই তোর মতই পেটে যন্ত্রণা উঠত। তারপর মেয়েটির মৃত্যু হয়। পুলিশ খোঁজখবর করে জানতে পারে মেয়েটি গান শিখতে গিয়েছিলো, বাড়ি ফেরার পথে কেউবা কারা তার সাথে এই দুষ্কর্ম টি করে। অনেকক্ষণ যন্ত্রণায় ছটফট করে আশেপাশে কেউ ছিল না,অন্ধকার গলি তার পাশেই ফাঁকা মাঠ সেখানেই। মেয়েটির বাবা রিক্সা চালায় এবং জুয়া এবং মাদে সব টাকা ওড়াতো। মেয়েটি একটা বাড়িতে কাজের লোকের কাজ করতো। পুলিশ বাড়ির লোকের খবর দেয়।”
আরো দুই দিন আমাকে অবজারভেশনে রাখার পরও আমার ব্যথা উঠেনি। জানি না কি বলবো? কিভাবে আমার এই অজানা রোগ সেরে উঠলো? শুধু এটুকু জানি হয়তো সেই মেয়েটির জন্যই আজ আমি আমার সুস্থ জীবনে ফিরে যেতে পেরেছি কষ্ট শুধু একটাই তাকে ধন্যবাদ টুকু জানানোর উপায় আমার কাছে নেই। শুধু তার নান আর অপূর্ব সুন্দর মুখখানা আমার কাছে তার স্মৃতি হিসেবে থেকে গেল। অনেকটা সময় পেরিয়ে গিয়েও এখনো পর্যন্ত তার কথা ভুলে উঠতে পারিনি। নিজের শেষ রক্ষা না করতে পারলেও আমাকে দিয়ে গেল একটা উপহার।
Wednesday, November 9, 2022
উপন্যাস - পদ্মাবধূ || বিশ্বনাথ দাস || Padmabadhu by Biswanath Das || Fiction - Padmabadhu Part -26
Tuesday, November 8, 2022
ছোট গল্প - মৃত্যুই শেষ নয় || লেখক - তনিমা সাহা || Written by Tanima Saha || Short story - Mrityuy ses noi
মৃত্যুই শেষ নয়
তনিমা সাহা
সাবিত্রীর হাত-পা গুলো শুষ্কতার জন্য ফেটে গেছে। সেখান থেকে এখন রক্ত বেরোচ্ছে। সাবিত্রীর দুচোখ বেয়ে ঝরে পরছে গরম নোনা জল। তবে যতটা না শারীরিক কষ্টের জন্য সে কাঁদছে, তার চেয়েও বেশি কাঁদছে মনের যাতনার জন্য। আজ দুমাস হয়ে গেল মকবুল নেই। পুরোনো অভ্যেসে বালিশের তলায় হাত দিয়েই জোর চমকে উঠল সাবিত্রী।
ভালবাসার বিয়ে মকবুল আর সাবিত্রীর। গরীব বলেই হয়তো বিধর্মে বিয়ে করতে বেগ পেতে হয় নি তাদের বিশেষ। পয়সাওয়ালাদের তো দেখে কিছু একটা হলেই ইয়া বড়ো বড়ো করে খবর ছড়িয়ে পড়ে চারিদিকে! কিন্তু তাদের বেলায় পরম দয়াময়ের কৃপায় সেসব কিছুই হয় নি। রিক্সা চালাতো মকবুল আর সাবিত্রী তিনটে বাড়ির রান্নার কাজ করত। কোনোরকমে টেনেটুনে ঠিক চলে যেত ওদের সংসার। খুব সুন্দর হাতের কাজ জানতো মকবুল। কিন্তু অভাবের তাড়নায় তার পড়াশোনা বা শিল্প ওইসব দিকে কিছু করা হয়ে ওঠেনি। তবে মকবুলের তাতে কোন আফসোস ছিল না।
সে বলতো, 'জানো তো সাবিত্রী আল্লাহ্ কখনোই সবদিক থেকে আমাদের মারে না। বই পড়া হয়তো বা হয়নি কিন্তু শিল্পকে আমি ছাড়িনি।'
বিবাহবার্ষিকীতে মকবুল বিভিন্ন সাজের জিনিস দিয়ে কখনও ফুলের মতো বা কখনো অন্য কিছুর আকার বানিয়ে উপহার দিত সাবিত্রীকে। সারাবছর সাবিত্রীর তাতে চলে যেত। মকবুল কী করে যেন আগে থেকেই সাবিত্রীর সব প্রয়োজনের কথা বুঝে যেত। সাতটা বছর ধরে যেন আলোর বন্যায় ভাসছিল তারা। প্রথম প্রথম তারা বাচ্চা নেওয়ার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু কিছুতেই গর্ভধারণ করতে পারছিল না। ডাক্তারের কাছে যেতে তিনি কি যেন বড়োসরো একটা রোগের নাম বললো, আর তার নামের থেকেও বড়ো ছিল চিকিৎসায় খরচের অঙ্ক। স্পষ্টতঃই সাবিত্রী বুঝতে পেরেছিল যে তাদের কখনো বাচ্চা হবে না। খুব কেঁদেছিল তখন সে।
মকবুল তাকে দুবাহুতে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলেছিল, 'আল্লাহ্ যা করেন মঙ্গলের জন্যই করেন। একদিকে ভালই হয়েছে! আমাদের এই টানাটানির সংসারে যদি সে আসতো তাহলে সত্যিই কি আমরা তার জন্য কিছু করতে পারতাম। তারচেয়ে একটা কাজ করলে হয়! আমরা যদি এক/দুজন পথশিশুর খাওয়াপরার দায়িত্ব নেই তাহলে কেমন হয়। হয়তো খুব বেশি কিছু করতে পারবো না। কিন্তু ওদের একবেলার খাবার, বছরে একবার জামা-কাপড় দিতে পারবো। তাতে তুমি একজনের নয় অনেকজন বাচ্চার মা হতে পারবে।'
সাবিত্রী বলল, 'কিন্তু মকবুল তাহলে তো আমরা কখনও টাকা-পয়সা কিছুই জমাতে পারবো না। যখন আমাদের বয়েস হবে বা ভগবান না করুক যদি আমরা অসুস্থ হয়ে যাই তখন তো আমাদের কাছে চিকিৎসার জন্যও পয়সা থাকবে না। তখন আমাদের কী করে চলবে মকবুল।'
হেসে মকবুল বলেছিল, 'ওসব চিন্তা আল্লাহর উপরই ছেড়ে দাও! যখন উঁনি আমাদের উপায় বলেছেন তখন দেখবে ওই উপায়কে পাওয়ার পথটাও উঁনিই বলে দেবেন।'
মকবুল কখনওই সাবিত্রীকে ধর্মবিশ্বাস নিয়ে কিছু বলেনি। মকবুল বলতো সবই 'এক শক্তি'। আমরা আমাদের মনের মতো তাকে সাজিয়ে নেই। তাই তাদের ভিন্ন ভিন্ন নাম ভিন্ন ভিন্ন আকার। সাবিত্রী মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিল মানুষটির মানসিকতায়। নিজেকে মনে মনে গরীব হওয়ায় ভাগ্যবতী ভাবলো সে। ভাগ্যিস! মকবুলকে জীবনসঙ্গী হিসেবে পেয়েছিল। আর্থিক ভাবে নির্ধন হলেও মানুষটি মনের দিক থেকে ছিল চরম ধনী। এরজন্য কতবার যে সাবিত্রী নিজের ঠাকুরকে ধন্যবাদ জানিয়েছে তার হিসেব নেই।
একদিন এমনই পথশিশুদের খাওয়ানোর সময় কোথা থেকে এক বেপরোয়া লড়ি এসে চোখের সামনে রাস্তায় পিষে দিল মকবুলকে। সাবিত্রীর গোটা জীবনটা যেন সেখানেই শেষ হয়ে গেল। কতবার ভেবেছিল নিজেকে শেষ করে মকবুলের কাছে চলে যাবে। কিন্তু তখনই পথশিশুগুলোর মুখ ভেসে উঠতো তার চোখের সামনে। আজকাল তো তার মনে হয় মকবুল যেন তার আশেপাশেই কোথাও আছে। মকবুলের মনটা খুব শৈল্পিক ছিল। যখন কথা বলতো তখন যেমন গুছিয়ে বলতো তেমনই সব জিনিসকে জায়গামতো গুছিয়ে রাখতো যাতে হাত দিলেই পাওয়া যায়। যেমন গরমের সময় পাঁচবাড়ির কাজ করতে করতে বেশি জলঘাঁটার জন্যে সাবিত্রীর সারা পায়ে হাজা হতো। তখন মকবুল একটা হাজার মলম নিয়ম করে সাবিত্রীর মাথার বালিশের নিচে রাখতো যাতে সাবিত্রী হাত দিলেই পেয়ে যায়। শীতকালে তার জায়গায় স্থান নিত বোরোলিন। বিয়ে হওয়া ইস্তক এই নিয়মই চলে আসছে।
আজ ফিরতে বড্ড রাত হয়ে গেছে সাবিত্রীর। যে পথশিশুগুলোকে সাবিত্রীরা দেখাশোনা করতো তারমধ্যে বুলবুলি হল সবচেয়ে ছোটো। বুলবুলিটা আজ হঠাৎই অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। রান্নার কাজগুলো শেষ করেই বুলবুলিকে নিয়ে ছুটেছিল ডাক্তারের কাছে। সব সেরে ফিরতে ফিরতে বেশ রাত হয়ে গেছে তাই। রাত বেড়ে যাওয়ায় রাস্তায় মাতালদের আনাগোনাও বেড়ে গেছে। জোরে পা চালিয়ে হাঁটছে সাবিত্রী। এই তো এই মোড়টা পেরোলেই ওর বাড়ির রাস্তাটা পড়বে। মোড়টা একটু অন্ধকার-অন্ধকার মতো! একটু ভয়ও করছে সাবিত্রীর। মোড়ের সামনে আসতেই হঠাৎ অন্ধকার ফুঁড়ে তিনটে লোক বেরিয়ে এল। আপাদমস্তক টলছে তাদের। গা থেকে ভুরভুরিয়ে মদের গন্ধ বেরোচ্ছে। সাবিত্রীর বমি পেয়ে গেল ওই দুর্গন্ধ শুঁকে। সেটা দেখে তিনজনের একজন খ্যানখ্যানে গলায় বলল, 'আরেব্বাস! ফুলটুসি…. এতো রাতে কোথায় যাচ্ছো। শরীরটা তো খারাপ মনে হচ্ছে। একটু এগিয়ে দেবো নাকি বাড়ি পর্যন্ত।'
সাবিত্রী গলায় জোর এনে বলল, 'পথ ছাড়ো! নইলে...ভাল হবে না বলে দিচ্ছি।'
আরেরজন বলল, 'এই, এই ছেড়ে দে...ছেড়ে দে...নইলে এক্ষুনি 'হালুম' করে উঠবে রে', বলে তিনজনই বিচ্ছিরি ভাবে হাসতে লাগল।
তৃতীয়জন ধমকের স্বরে বলল, 'আমরা যাকে ধরি তাকে যে অত সহজে ছাড়িনা ফুলটুসি! ভালয় ভালয় মেনে যাও। নইলে তোমারই কষ্ট বেশি হবে।'
কথাটা বলে আরেক চোট তারা হেসে উঠল। হাতের খালি মদের বোতলগুলো ফেলে দিয়ে এবার ওরা তিনজন সাবিত্রীর দিকে পায়ে পায়ে এগোল।
সাবিত্রী আবার ধমকে উঠল, 'ভাল হবে না বলছি! পেছনে যা! যেতে দে আমায়।'
প্রথমজন সাবিত্রীর শাড়িতে ধরে টান দিলে দ্বিতীয় জন সাবিত্রীর পড়নের ব্লাউজটাতে টান মারতে যেতেই হঠাৎই চোখমুখ বিকৃত করে কাটা কলাগাছের মতো ধপ্ করে রাস্তায় পড়ে গেল। লোকটি চিৎকার করে এলোপাথাড়ি হাত-পা ছুড়তে লাগল। কিছুপরেই তার চোখ মুখ ফেটে ফিনকি দিয়ে রক্ত বেরিয়ে এল। প্রথম জন এই দৃশ্য দেখে মারাত্মক চমকে সাবিত্রীর শাড়ি ছেড়ে কেমন একটা স্থবিরের মতো দাঁড়িয়ে পড়ল। তৃতীয়জন এইসব দেখে ক্রমাগত চিৎকার করতে লাগল, 'এই পল্টু, এই টনি..কি হল রে তোদের! কথা বলছিস না কেন?'
বলতে বলতে সে তার স্থবির হয়ে যাওয়া সাথীর কাঁধে হাত দিতেই সঙ্গে সঙ্গে স্থবির লোকটি ভষ্মে পরিনত হয়ে গেল। তৃতীয়জন এইবার প্রচণ্ড আক্রোশে সাবিত্রীর দিকে তেড়ে আসতেই কোথা থেকে এক ঘূর্ণি বাতাস এসে তৃতীয় লোকটিকে উড়িয়ে নিয়ে চলে গেল। সাবিত্রী এই সমস্তকিছু দেখে বেশ আতঙ্কিত হয়ে পড়ল। একটু পর হঠাৎই অন্ধকার মোড়টা উজ্জ্বল হয়ে ওঠে এবং রাস্তার ধুলোরাশি সরে গিয়ে সেখানে কিছু শব্দ ফুটে উঠল…
'ভয় পেয়ো না সাবিত্রী….আমি মকবুল। আমি থাকতে তোমার কেউ কোন ক্ষতি করতে পারবে না। জীবিত থাকা অবস্থায় যেমন করে তোমায় আগলে রাখতাম মৃত্যুর পরেও তেমনি তোমায় আগলে রাখবো। তারপর যখন সময় হবে তখন দুজনের দেখা হবে মৃত্যুর ওপারে। মৃত্যুই শেষ নয় সবকিছুর.. সাবিত্রী আমি অপেক্ষা করবো তোমার জন্যে। কিন্তু ততদিন পর্যন্ত তোমার পাশে থাকবো আমি…..এভাবেই।'
এবার সাবিত্রীর কাছে সবকিছু স্পষ্ট হল। কিকরে বালিশের তলায় বোরোলিন আসলো বা কেনই তার চারপাশে মকবুলের উপস্থিতি মনে হত। সেসব কিছুর উত্তর তার ক্রন্দনরত ঠোঁটে হাসি হয়ে ফুটে উঠল।
ছোট গল্প - ব্রাত্য জীবন || লেখক - মিঠুন মুখার্জী || Written by Mithun Mukherjee || Short story - Bratto jibon
ব্রাত্য জীবন









