Sunday, July 30, 2023

চিনের কবিতা - শংকর ব্রহ্ম || Chiner Kobita - Sankar Brhama || প্রবন্ধ || নিবন্ধ || Article

চিনের কবিতা

শংকর ব্রহ্ম



              চিনা সাহিত্যের প্রধান ঐতিহ্য তার সুদীর্ঘ কালের ব্যাপ্তি ও অভিজ্ঞতা, অভিন্নতা এবং যুক্তিগ্রাহ্যতা।


      খ্রীষ্টপূর্ব ছয়শো বছর আগে চিনের যে কবিতা বা গদ্য সাহিত্য পাওয়া গেছে তা (প্রকাশের ভাষার ও ভঙ্গির ভিন্নতা ছাড়া) মূলতঃ অভিন্ন রয়ে গেছে আজও। ধ্বনির পরিবর্তে ভাবমূলক লিপি পদ্ধতি ও ব্যাকরণের সল্পতায় তা সম্ভব হয়েছে।


          চিন যুগে কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে একতাবদ্ধ করার পর প্রকাশের একতার প্রচেষ্টা হান যুগে (২০৬ খ্রীস্ট পূর্ব- ২২০ খ্রীষ্টাব্দ) আরও দৃঢ়মূল হয়েছে। এই সময় তারা

বহির্জগত বিচ্যুত হওয়ায় সাহিত্যের স্থিতবস্থা থেকে গেছে। দ্বিতীয় শতাব্দীতে বৌদ্ধ ধর্মের প্রসারে তার কিছুটা পরিবর্তন হয়।


    বিংশ শতাব্দীতে পাশ্চাত্যের সংস্পর্শে এসে এখন অনেকটা পরিবর্তন হয়েছে।


    প্রাচীন কনফুসীয় সাহিত্য এবং পাঁচ ও সাত

অক্ষরে লেখা 'শিহ্ কবিতা' (জাপানী হাইকু কবিতার মতো) এদের প্রাচীন সাহিত্যের সম্পদ।

       প্রাচীনতম যুগ থেকে আধুনিক যুগ পর্যন্ত

চিনের কাব্য রচনা মূখ্যত রাজকর্মচারীর ব্যাপার ছিল, একমাত্র ব্যতিক্রম তাং যুগের শ্রেষ্ট এবং বিশ্বের অন্যতম কবি 'লি পো'।


কবি  তু ফু এবং লি পো দুই বন্ধু ছিলেন।


লি পো (৭০৫- ৭৬২ খ্রীষ্টাব্দ)

----------------------------------


টিয়া

----------


দল বেঁধে কুঞ্জবনে সুন্দরীরা রত্ন সাজে

মনে মনে ভাবে কত কি যে,

কুঠরীর গোপন খবরগুলি,

বলি বলি করেও বলে না,

আকুলি বিকলি করে মনে।

কিন্তু টিয়ার খাঁচা বড় বেশী কাছে এসে দেখে

কোন কথা বলার সাহস নেই বুকে।


স্তব্ধ রাতে

---------------


খাটের পায়ার কাছে কি এতো করছে চিক্ মিক্

এখনই কি তুষার পাত শুরু হয়ে গেল?

উঠে বসে দেখি তা আলোর ঝিক্ মিক্

চাঁদ এসে ঘরে ঢুকে আছে,

আবার শরীর এলিয়ে দিয়ে ভাবি

ঘরে একা প্রিয়া বসে আছে।


নানকিং পানশালা বিদায়

--------------------------------------


শিমূলের তুলো বয়ে আনা দমকা বাতাস

সহসা এ পানশালা মদির গন্ধে ভরে তোলে

উ-প্রদেশের তরুণী সুরা ঢেলে বিদায় জানাতে এসে 

শহরের বন্ধুদের সাথে পানে পীড়াপীড়ি করে,

পেয়াল উজার করে তারা পান করছে যখন,

আমার বিদায় সম্ভাষণ,

আহা যাও পুবে ছোটা ওই নদীটিকে বলো,

বন্ধুর প্রেমের চেয়ে 

আরও দূরে কখনও সে যেতে পারে কিনা?


           সাধারণ মানুষের দুঃখ-কষ্ট ,মানবিকতা বোধ, যুক্তিবাদ ,ব্যক্তিগত অনুভূতির সহজ প্রকাশ,অতীন্দ্রিয়তার স্পর্শ চীনা কবিতার চিরন্তন বৈশিষ্ট।


           বিখ্যাত চীনা সাহিত্যের সমালোচক

'লিউ হ্ সি এহ্'( ৪৬৫-৫২২ খ্রীষ্টাব্দ) বলেছেন,

" বৎসর ও মাস ছুটে চলে যায়, আত্মা চিরস্থায়ী নয়, শুধু লেখার মধ্য দিয়েই মানুষ তার খ্যাতিকে উর্ধ্বে তুলে ধরতে পারে এবং আপন কীর্তিগুলোকে ব্যাপ্তি দিতে পারে।"


        তাই দেখা যায়, সরকারী আধিকারিক থেকে

সম্রাট , সম্রাট-প্রিয়া , প্রধান মন্ত্রী , সেনাপতি , রাজনীতিবিদ ,সন্ত  ও সাধারণ নর-নারী সকলেই কবিতা লিখেছেন।


         গ্রীক বা সংস্কৃত কাব্যে যেমন মহাকাব্য আছে চীনা কাব্যে সেরকম কিছু নেই।

শুধু পাওয়া যায় গীতি কবিতা। চীনা সাহিত্যে কাব্যের নায়ক নায়িকারা কোন দেব-দেবী নয়, মর্তের মানব-মানবী।

         বিপুল চিনা সাহিত্য সম্ভারে, দেশপ্রেম থাকলেও যুদ্ধের প্রশস্তি বা যৌনতার কোন নাম গন্ধ নেই। বাস্তব জীবনের দুঃখ কষ্টের রূপয়ণ করেই তারা চরম আনন্দ পেয়েছেন।

       চীনের আদিতম কাব্যগ্রন্থ কনফুসিয়াস ( তার চিনা নাম - কুং ফু ৎজু- জন্ম ৫৫১ খ্রী.পূঃ) সংকলিত  'শিহ্- চিং'। 

তিন হাজার কবিতা থেকে নির্বাচন করে এই গ্রন্থে তিনশ' পাঁচটি (৩০৫) সুরানুক্রমিক সাজানো হয়েছে।

এর অধিকাংশই লোকগীতিন,বাকী অংশের নাম

কুয়ো পেং বা 'দেশের হালচাল'।

          তাং যুগকে (৬১৮-৯০৭ খ্রীষ্টাব্দ) চীনা কবিতার স্বর্ণযুগ বলা হয়। এই সময়ের বিখ্যাত কবিরা হলেন-লি পো (যাদুকর কবি নামে খ্যাত) , তু ফু ( ঋষি কবি নামে খ্যাত), পাই চু-য়ি মেং ,হাও জান প্রমুখ।


   তু ফু (৭১২-৭৭০ খ্রীষ্টাব্দ)

------------------------------


রাতের ভাবনা,যুদ্ধ ও শান্তি

------------------------------------


বাগান থেকে ঠান্ডা বাতাস ঘরে ঢোকে জ্যোৎস্নায়

চাঁদের কিরণ নাচে পাগলের মতো,

বাইরে পড়ছে শিশির ,আকাশের তারাগুলি দেখে।

জোনাকিরা এধারে ওধারে ভেসে চলে যায়

নদীচরে জলচর পাখি ডাকে তার সঙ্গীনীকে।


আর আমি?

যুদ্ধ বিদীর্ণ পৃথিবীর কথা ভেবে

অশান্তিতে ঘুমাতে পারি না।



ফুলের দিকে তাকিয়ে

--------------------------------


জীবনের চেয়ে ফুল বেশি ভালবাসি

ভেবো না ভুলেও,

কুসুম শুকিয়ে গেলে ভয়ে হীম হয়ে যাই,

চোখের পলকে আমিও জরাজীর্ণ হবো।


ফুলের পাপড়িগুলি কত না সহজে

শুকিয়ে ছড়ায় চারিদিকে,

আহা কুঁড়িগুলি আরও ধীরে বিকশিত হলে

কত না যে ভাল হতো বলো?


লি পো-র কবিতার 'যাদু বাস্তবতা' মায়াময় করে 

তুলেছে তার কাব্যকে। হৃদয় নিঙড়ানো তার সব শব্দ ব্যবহার পাঠককে আকুল করে তুলেছে।


   এর পাশাপাশি লোকায়ত সাহিত্য ধারাও অব্যাহত ছিল নিশ্চিৎ ভাবেই।

     তাং যুগের শেষ দিকে কাব্যে বিষয়বস্তুর চেয়ে, ধ্বনি উৎকর্ষের প্রাধান্য দেখা দেয়।


     বিংশ শতাব্দীর শুরুতে বিদেশী সাহিত্যের প্রভাবে (বিশেষ করে অনুবাদ সাহিত্য পড়ার ফলে) তাদের ঐতিহ্যবাহী চিন্তাধারায় কিছুটা চিড় ধরে। তারা তখন নতুন কাব্য ধারার মধ্য দিয়ে আপন সত্তাকে খুঁজে পেতে চাইল।


     আফিনসেবী দরিদ্র চীন দেশের উর্বর মাটিতে , মার্কসবাদ বীজ বপনের উর্বরক্ষেত্র খুঁজে পেল।

         ১৯১৯ সালের আন্দোলন মূলতঃ রাজনৈতিক হলেও, এর ফলে আধুনিক চিনা কবিতার জন্ম হলো। 


ওয়েন ই-তো ,হ্ স্ উ , চিহ্-মো , কুয়ো-মো-জো প্রমুখ চীনা কবিরা পাশ্চাত্য সাহিত্যের রোমান্টিকতার সঙ্গে পরিচিত হলেন। তাঁরা ভাষার সৌকুমার্যের উপর জোর দিলেন।

        সাম্প্রতিক কালে চিনা সাহিত্যের প্রেরণা রাজনৈতিক সাম্যবাদ প্রচারের ফলে ,কবিতা তার মূল উদ্দেশ্য থেকে অনেকটা বিচ্যুত হয়ে প্রচার সাহিত্যে পরিণত হয়েছে।


মাও ৎসে তুং (১৮৯৩-১৯৭৬ খ্রীঃ)

--------------------------------------------


তিনটি কবিতা

--------------------

১).


গিরি চূড়াগুলি

দ্রুত অশ্বে, উদ্যত চাবুক,পৃষ্ঠাসন কখনও না ছেড়ে

পিছনে তাকতে ছিল ভয়,

কারণ আকাশ মাথার উপরে দু'হাতের সামন্য

তফাৎ।


২).


গিরি চূড়াগুলি

ঝাপিয়ে চূর্ণতাকামী সমুদ্রের উত্তাল তরঙ্গ যেন তারা,

কিংবা পূর্ণ উল্লম্ফনের ছোটা

দশ সহস্রাশ্ব যেন,সংগ্রাম সাগরে।


৩).


গিরি চূড়াগুলি

সুনীল ত্রিদিবভেদী,শীর্ষ বিন্ধু নয় অনুজ্জ্বল

আকাশ পড়ত বুঝি ভেঙে

এই স্তম্ভগুলির অভাবে।


            অন্যদিকে জাতীয়তাবাদী চীন অর্থাৎ তাইওয়ানের বর্তমানের কবিতা একটি অপূর্ব রূপ নিয়েছে। ১৯৪৯ সালের আগে প্রায় পঞ্চাশ বছর ধরে তাইওয়ান জাপানীদের দখলে ছিল।

            জাপানী ভাষা ছাড়া অন্যকিছু ছাপা হতো না। এমনকি পান্ডুলিপি আকারেও কিছু পাওয়া যায়নি।

        ১৯৪৯ সালে মূল ভূখন্ডের সংস্কৃতি বহন করে কুড়ি লক্ষ চীনা সৈন্য তাইওয়ানে আসে।

         মূল ভূখন্ড থেকে তাইওয়ান এক সংকীর্ণ উপসাগর দিয়ে বিচ্ছিন্ন। তাই তাদের  মানসিকতার বিচ্ছিন্নতাও হয়তো অতলান্তিক। তাইওয়ানের কবিরা একদিকে যেমন চিনের প্রাচীন ঐতিহ্যকে ভোলেনি , অন্যদিকে তেমনি বহির্জগতের সঙ্গে নিবিড় সংযোগের ফলে নতুন ধ্যান ধারণা , আঙ্গিক গ্রহণ করে , অকল্পনীয় সৌন্দর্যময় কাব্য সৃষ্টি করেছে।

         দুই ধারার কাব্য স্রোত স্ব স্ব বর্ণবৈশিষ্টে

অভিন্ন হলেও সতন্ত্র বৈচিত্র নিয়ে বয়ে চলেছে।

কোনদিন ওতপ্রতভাবে একধারা হবে কিনা

সে প্রশ্নের উত্তর আজও অমীমাংসীত।

 

       কিছু তাইওনান কবিতা

      --------------------------------------


য়াং হুয়ান (১৯৩০-১৯৫৪ খ্রীষ্টাব্দ)

----------------------------------------


কবিতা

-------------


কবিতা অমর পুষ্প

জীবন মৃত্তিকায় উপ্ত হতে হয় তাকে,

কবিতা কাকলি ভরা পাখি

গীতিময় প্রাণবন্ত হৃদয়ে সবার।


মরি যে লজ্জায়

তুমি এলে যে কবিতা লিখি হৃদয়ে আমার,

তারা শুধু কালো অক্ষর

কবিতার বিবর্ণ নমুনা?


য়া হ্সুউয়ান (১৯৩৩ খ্রীষ্টাব্দ  - মৃত্যু জানা নেই)

--------------------------------------------------------


ঈশ্বর

----------


ঈশ্বর একা

চুপচাপ বসে গীর্জার জানলার নীচে,

কেননা বেদীটি থাকে

পুরহিতের জবর দখলে।



ফাং হ্সিন ( জন্ম - ১৯২৯ খ্রীষ্টাব্দ - মৃত্যু জানা নাই)

---------------------------------------------------------


খোলা টেরিফোন বুথ

----------------------------


সঙ্গীহীন জনৈক যুবক

যুবতীর হাসি যেন একমুঠো চকচকে টাকা

মেঝেতে ছড়াল টুং টাং,

আমি নই খোলা টেলিফোন বুথ

আঃ নয় কখনোই -


এমন কি প্রত্যাশার মুদ্রাটিও তাতে

ফেলা যাবে না কখনও।



হ্সিউং হুং ( জন্ম- ১৯৪০ খ্রীষ্টাব্দ - মৃত্যু জানা নেই)

--------------------------------------------------------


প্রতিশ্রুতি

---------------


একদিন তোমাকে তো আর আমি লিখব না চিঠি

তখন জানবে তুমি আমি আর নেই,

যখন অনেক দেরী হয়ে যাবে সখী

আমার দরজায় এসে যদি তুমি কর করাঘাত।


মরে গিয়েও প্রাণবন্ত থেকে যাব

শুধু প্রাণটুকু মিশে যাবে পঞ্চ উপাদানে,

স্রোতশীল নদীকে বলে যার আমার বেদনা

ঝিরি ঝিরি বাতাসকে বলে যাব

তোমাকে পাঠাতে সোহাগের কথা।


কাঁপা কাঁপা বাতাস এসে ছড়াবে আমার দীর্ঘশ্বাস

আগুনের শিখায় হবে বিচ্ছুরিত আমার কামনা

তুমি তুলে নেবে তাই ,পৃথিবীতে এ দেহের রক্ত

জন্ম দেবে অজস্র সুগন্ধী গোলাপ।


-----------------------------------------------------------




       


কবি ও অকবি - দর্পণা গঙ্গোপাধ্যায় || Kobi oo Okobi - Darpana Gangapadhyay || Short Story || ছোটগল্প

 কবি ও অকবি

দর্পণা গঙ্গোপাধ্যায়



হিপ্রোটিজম বোঝো ? হিপ্রোটিজম করে করে মানুষকে কিভাবে মেরে ফেলা যায় । আজ তোমাদের তারই এক কাহিনী শোনাবো ‌। বধির


 করে দেওয়া যায় অনায়াসে।


পাড়ায় জগা আর সোমেন দুই ভাই খেলা করে। হাজার বন্ধু বান্ধব, জগা সবার সঙ্গে মেশে,

সোমেন সব সময় বন্ধুদের বলে ওর সাথে বেশি খেলার দরকার নেই ও ভালো ছেলে না।  

 নম্বর আমি ক্লাসে বেশি পাই সুতরাং আমি ভালো--- তোমরা আমার সঙ্গে মেশো আমার সঙ্গে খেলো ওর সাথে না, --- এভাবে বন্ধুদের থেকে আস্তে আস্তে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে জগা ।

সব বন্ধুরাই জগাকে নিয়ে হাসি ঠাট্টা তামাশা করে সকলেই অ্যাভয়েড করে এভাবে জগা মানসিকভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে ।

বাড়িতেও সবাই জগা যেহেতু বড় ছেলে বাবা রিটায়ারের পর জগার ওপরই সব দায়িত্ব পড়ে।

ছোট বলে সোমেন গা বাঁচিয়ে বাড়ির বাইরে দূরে পড়াশোনার জন্য চলে যায়।

একদল টিউশনি এবং কোচিং এ পড়িয়ে বোনেদের পড়াশোনার দায়িত্ব বড় বোনের বিয়ের দায়িত্ব সব গ্রহণ করার পরেও নিজের লেখাপড়া পাশাপাশি চালিয়ে যায় ।

তার সঙ্গে নিজের লেখা লিখি ও চালিয়ে যায়। কলকাতার বিভিন্ন বড় বড় জায়গায় সে কবিতা পাঠে ডাক পায় ।

বড় বড় পত্রিকায় তার লেখা ছাপা হয়। 

এভাবে বেশ কিছু বছর চলে যাওয়ার পর সে এমএ পাস করে বিএড করে এবং চেষ্টা করে পিএইচডি করার 

এসময় সে অনেক ইমপ্রুভ করে ফেলে নিজেকে কিন্তু ইহার ভাগ্য সহায় হয় না। কোন ভালো চাকরি জোটে না। সেই কোচিং এ পড়িয়েই বউ বাচ্চার দায়িত্ব পালন করতে হয়।

 এভাবে তার ছেলেপুলেরাও বড় হয়ে যায় সে অনেক লেখালেখি করে যায় ,পত্রিকা চালিয়ে যায় ।

কিন্তু আর যোগাযোগ কারো সঙ্গে রাখতে পারে না ,অনেক চাপ থাকে তার সংসারের জোয়াল টানার।

 রিটায়ারমেন্টের পর অসুস্থ হয়ে পড়ে মানসিকভাবে এবং শারীরিকভাবে তার ফলে সে বাড়িতে বসে এবার লেখালেখি করার কথা ভাবছে যখন তখন এক অকবি তাকে বিভৎস ভাবে হিপ্রোটিজম করতে থাকে। প্রতিদিন সে তার কবিতা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা করে এবং বলতে থাকে সে কবিতার হোল টাইমার সে বড়লোকের বকে যাওয়া ছেলে। বাবার পয়সায় বসে বসে খায় আর কবিতার দালালি করে। কিন্তু এই জগার পেছনে পড়ে যায়।


দিনের পর দিন সে প্রচার করতে থাকে যে সেই বিখ্যাত কবি তার ভীষণ নাম ডাক এবং সে খুব বড় বিখ্যাত কিন্তু তোমাকে কেউই চেনে না অথচ প্রতিদিন তাহলে বিখ্যাত কবি জগারবাড়ি কি করে ?

এখনো জগা একটি পত্রিকা চালায় এবং বেশ কিছু ভূমিকা লেখা ,পুস্তক সমালোচনা করা, প্রুফ দেখা ,নিজস্ব কাব্যগ্রন্থ লেখা চালিয়ে যায়।


এই অকবি তার কিছু দালাল


 দিয়ে সে নিজেকে বড় প্রমাণ করার চেষ্টা করে ,তারাও তার আশেপাশে ঘোরে এবং বলে হ্যাঁ উনি বড় কবি উনি খেতে পারেন না ও কষ্টে থাকেন আসলে সব মিথ্যে ! ভাওতাবাজি।

 দূরের লোকজন এসব কায়দা কানুন বুঝতে পারেনা তারা ভাবে হয়তো ছেলেটি খুব অভাবী 

কেন অভাব ?

 একটা সুস্থ সবল ছেলে কেন কিছু কাজ করতে পারে না ? যা থেকে তার পয়সা রোজগার হয় এবং নিজের সংসার টা চালাতে পারে। আসলে না, সে নিজেই গলাবাজি করে চিৎকার করে সবার সামনে,--- আমি বড় কবি ,আমি বড় কবি, বলে চিৎকার করে এবং বিখ্যাত, বিখ্যাত ,বলে চিৎকার করে--- জ্ঞানী গুণী এবং চেনা পরিচিত মানুষেরা ওর চিৎকারে চুপ হয়ে যায় ,মনে মনে সব বুঝলেও প্রকাশ্যে সেটা বলেনা ,কিন্তু অজ্ঞানী মানুষেরা ওকেই বড় করে তোলে ,দিনের পর দিন চলতে থাকে এইরকম অত্যাচার জগার ওপর ,---ফলে জগা বধির হয়ে যায়।

জগার লেখা কবিতার কোন সমালোচনা হয় না ,কেউ পড়ে না ,কেউ পাঠ করে না ,কোন আলোচনা হয় না।

 এদিকে অকবি নিজের মনের কথা বানিয়ে গুছিয়ে সাজিয়ে চিৎকার করে বলতে থাকে পয়সা দিয়ে অন্য বাচিক শিল্পী দিয়েও তা বলাতে থাকে--- ফলে ক্রমশ বিখ্যাত হয়ে উঠতে থাকে ।

এভাবে কত কত সত্য রহস্য চাপা পড়ে যায় কে জানে।।

পুতুলের অন্নপ্রাশন - সান্ত্বনা ব্যানার্জী || Putuler Onnoprasan - Santwana Banerjee || Short Story || ছোটগল্প|

    পুতুলের অন্নপ্রাশন

                সান্ত্বনা ব্যানার্জী


 

   "আরে অনু দাঁড়িয়ে পড়লে কেন? এসো 

এসো, হারিয়ে যাবে কিন্তু!" বলতে বলতে ওর হাতটা ধরে হাঁটতে থাকে তপতী। এই প্রথম কলকাতায় দুর্গাঠাকুর দেখতে বেরিয়েছে অনু

বন্ধুদের সঙ্গে। ওরে বাপরে!কি সুন্দর!!! যেমন

প্যান্ডেল, তেমন লাইট, তেমন থিম! আলোয় আলোয় একেবারে ইন্দ্রপুরী। তার ওপর কি নেই!

নানা রকমের খাবারের স্টল, সেরামিকের বাসন,

ঘর সাজানোর রকমারি শোপিস, পোশাক , সাজের জিনিস কত কি!গ্রামেই জন্ম কর্ম, শহরের সঙ্গে এভাবে মেশার সুযোগ এই প্রথম।

তাই যা দেখে তাই দেখেই অবাক হয়ে হাঁ করে

দাঁড়িয়ে পড়ে অনু।

             ছেলের চাকরির সূত্রে মাস ছয়েক কলকাতায় ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে এসেছে,আর পার্কে

হাঁটতে গিয়ে কয়েকজন বন্ধু পেয়েছে। নিজের

ভাগ্যকে কুর্নিশ জানায় অনু। ওর মত সাধারণ

গ্রামের মেয়েকে ওরা খুব অল্প দিনেই বড়ো আপন করে নিয়েছে। সামান্য একটু খালি গলায় গান যে ওদের এত ভালো লাগবে কে জানতো!ওদের আগ্রহেই পার্কে, কারও না কারও বাড়ীতে গান,কবিতার আসর বসে যায়। তপতী, সুমনা তো ওকে ছাড়া কোথাও যায় না। ওদের দৌলতে বেশ কয়েকটা ভালো সিনেমা, থিয়েটার, দেখে ফেলেছে অনু। এই দলে ক ' দিন

পর যুক্ত হলো পর্না। ভারি সুন্দর দেখতে। খোদ

কলকাতায় জন্ম, পড়াশোনা, গ্রাম দেখেনি সে ভাবে। কথাবার্তা সাজসজ্জা সব কিছুই কেতাদুরস্ত, একেবারেই অন্যরকম। কনভেন্টে

পড়া মেয়ে, বিলেত ফেরত হাজব্যান্ড, কথার মধ্যে বেশির ভাগই ইংরেজী শব্দ। কিন্তু আশ্চর্য

বন্ধুত্ব হতে একটুও সময় লাগলো না। খুব হাসিখুশি সহজ সরল। আর একটা অভিনব 

অনুষ্ঠানের নিমন্ত্রণ পেয়ে গেলো, পুতুলের অন্নপ্রাশন। অবাক হয়ে যায় অনু। তপতী হেসে

বলে," আরে পর্নার এক মেয়ে আর একটি পুতুল

ছেলে। তাকে উপলক্ষ্য করে একটু গেট টুগেদার

এই আর কি"। 

              অন্নপ্রাশন বাড়ীতে এসে তো অবাক! এলাহি আয়োজন। সঙ্গে সত্য নারায়ণ পুজো। পুজোর পর মানব শিশুর মতোই ধুতি, পাঞ্জাবী,

মালা চন্দন টোপর পরে সুসজ্জিত পুতুল ছেলের

অন্নপ্রাশন হলো মহা সমারোহে। আসন পেতে ,পঞ্চব্যঞ্জন কাঁসার থালা বাটিতে সাজিয়ে,

ছেলেকে বসিয়ে , ধান দূর্বা উলু শঙ্খধ্বনি সহযোগে আশীর্বাদ, পুতুল পুত্র কোলে নিয়ে স্বামী স্ত্রীর আনন্দে মাখা রাঙা মুখ, ফটো তোলা,

কিছুই বাদ গেলনা!তার পর রীতিমত ক্যাটারার

দিয়ে ভোজবাড়ীর মতোই খাওয়া দাওয়া!

                   বাড়ী ফিরে কি এক ঘোরের মধ্যে থাকে অনু। একটা পুতুল নিয়ে ওদের এই আনন্দ

আয়োজনে তো কোনো খামতি নেই! এমন কি আনন্দ খুশী তে ওরা যে ভরপুর হয়েছিল সে তো

মিথ্যে নয়! পুতুল সন্তান নিয়ে যদি ওরা এত আনন্দ পায় তবে মানব সন্তান নিয়ে তো আনন্দের বন্যা বয়ে যাবে!

              হঠাৎই অনুর চোখ আলোয় ঝলমল করে ওঠে! চোখের সামনে ভেসে ওঠে গত মাসে

ছেলে বৌমার সঙ্গে দেখে আসা অনাথ আশ্রমটি।

ছোটো ছোটো মলিন মুখের শিশু গুলি যেন চেয়ে

আছে স্থির চোখে অনুর দিকে! তাড়াতাড়ি সেলাই মেশিনটা টেনে নিয়ে জড়ো করে রাখা ছিট গুলো নিয়ে বসে পড়ে অনু। অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে বৌমা রূপসা,"কি হলো মা, এখন আবার সেলাই মেশিন নিয়ে বসলে যে!"ছোট ছোট জামা প্যান্ট তৈরী করার জন্য কাঁচি নিয়ে ছিট কাটতে কাটতে বলে অনু,"আজ একবার আমায় বাজার নিয়ে যাবি তো রূপসা, অনেক জামা, প্যান্ট, বিস্কুট লজেন্স, মিষ্টি কিনতে হবে, অনেক...!"

                





বিশ্ব নিখিল - দেবাংশু সরকার || Biswa Nikhil - Debanshu Sarkar || Short Story || ছোটগল্প

    বিশ্ব নিখিল 

          দেবাংশু সরকার



      "শুধু বিঘা দুই, ছিল মোর ভুঁই,

       আর সবই গেছে ঋণে।

      বাবু বলিলেন ...।"



      আবৃত্তি করছে তেরো বছরের ছোট্ট মধু। বেশ মন দিয়ে শুনছে মেজো বাবু। আবৃত্তি করতে করতে আটকে যাচ্ছে মধু। বারে বারে ভুল হচ্ছে। মেজো বাবু নিজেই ধরিয়ে দিচ্ছে,



     "...বুঝেছো উপেন, এ জমি লইব কিনে..."



      আবার আবৃত্তি করতে শুরু করলো মধু। এক নিঃশ্বাসে আবৃত্তি করলো বড় কবিতাটা।



      আবৃত্তির শেষে খুব প্রশংসা করলো মেজ বাবু। বললো, "এত টুকু বয়সে এত বড় কবিতা আবৃত্তি করা চট্টিখানি কথা নয়। একটু আধটু ভুল হতেই পারে। আর কবিতাটাও দারুন। শুনলে মন ভরে যায়। অসাধারণ লিখেছেন আমাদের রবি ঠাকুর।"



        - "জ্যাঠা বাবু আমরা স্কুল থেকে দার্জিলিং যাচ্ছি।"



      - "বাঃ খুব ভালো। কবে যাচ্ছিস মধু।"



      -"পরশু।"



      - "রাম, তোরাও সঙ্গে যাচ্ছিস নাকি?" 



      - "রাম উত্তর দেয় - "না, কেবল মধু বন্ধুদের সঙ্গে, স্যারেদের সঙ্গে যাচ্ছে।"



      - "তোরাও এই সুযোগে ঘুরে আসতে পারতিস। আমি যদি আগে জানতাম, তোদের দুজনের হোটেল, ট্রেনের টিকিট সব কিছুর ব্যবস্থা করে দিতাম। সারা জীবনটাতো পার্টিকে দিলি। এবার নিজের বউয়ের দিকে একটু তাকা।"



      রথীন রায় চৌধুরি ওরফে মেজো বাবু। উচ্চ শিক্ষিত। গত পনেরো বছর ধরে স্থানীয় এম এল। বনেদি বংশে জন্ম তার। এক সময়ে জমিদারী ছিল তাদের পূর্বপুরুষদের। ছোটো থেকে অভাব কাকে বলে সে দেখেনি। পড়াশোনা করেছে মন দিয়ে। স্কুল জীবনে বেশ ভালো ছাত্র ছিল। জমিদার পরিবারে জন্মালেও নাক উঁচু ভাব তার ছিল না। অত্যন্ত মিশুকে রথীন ছোট থেকেই এলাকার মানুষদের সঙ্গে মেলামেশা করত। রাজনীতিতে আসার আগে থেকেই তার যথেষ্ট জন সংযোগ ছিল। গ্রাম্য জীবনে জমিদার বাড়ির প্রভাব এবং জন সংযোগের ক্ষমতা রথীনের রাজনৈতিক জীবনে বেশ প্রভাব ফেলেছিল। জমিদার বাড়ির ছেলে হলেও গ্রামের মানুষজন তাকে তাদের একজন ভাবতো। তার প্রভাব ভোট বাক্সেও পড়তো। যখনই রথীন ভোটে দাঁড়িয়েছে, প্রতিদ্বন্দ্বীকে বিপুল ভোটের ব্যবধানে হারিয়েছে। তার দেখাদেখি তার দাদা এবং অনান্য ভাইরা রাজনীতি আসে এবং সাফল্য লাভ করে। অবশ্য রথীন প্রথম থেকেই রাম, পলাশ, নীলদের মত পরিশ্রমী সাথীদের সঙ্গে পেয়েছে। রাম, পলাশ, নীলদের নিরলস পরিশ্রম রথীনের এগিয়ে যাওয়ার পথকে সুগম করেছে।



      দোষ গুন নিয়েই মানুষ। রথীনও তার 

ব্যতিক্রম নয়। শরীরে জমিদার বংশের রক্ত বইছে বলেই হয়তো তবলা, সারেঙ্গী, ঘুঙুর এবং ডবল ডবলিউর প্রতি তার একটা আসক্তির কথা শোনা যেত। নিয়মিত না হলেও মাঝে মাঝে এসবের মাধ্যমে নিজের মনকে রিচার্জ করতো সে। হাতে অগাধ টাকা, রথীন ভাবতো টাকা দিয়ে সব কিছু হাসিল করা যায়। প্রথম যৌবনে শীলাকে বেশ ভালো লাগে রথীনের। সে কথা ব্যক্ত করে শীলার কাছে। কিন্তু রথীনের চরিত্রে কিছু দোষ আছে বলে, শীলা সরাসরি না করে দেয়। হয়তো এই ধাক্কাটা রথীনের দরকার ছিল। এরপর সে নিজেকে শুধরে নেয়। ভুলে যায় শীলাকে। কিন্তু সত্যিই কি সে সব কিছু ভুলতে পেরেছে? ভুলতে পেরেছে সেই অপমান? হয়তো পারে নি! হয়তো অবচেতন মনে রয়ে গেছে সেই অপমান! এই অপমান চাবুক চালায় তার নীল রক্তে। কিন্তু তার রাজনৈতিক ভবিষ্যতের কথা ভেবে হজম করে নেয় সেই অপমান।



      দিন যায়, মাস যায়, বছর যায়। বিশ্বাসী মাঝি রাম, নীল, পলাশদের সহায়তায় তরতরিয়ে এগিয়ে চলে তার রাজনীতির পালতোলা নৌকা। 



      এর মধ্যে রথীন বিয়ে করে সংসারী হয়। বিয়ে করে রাম, পলাশরাও। রাম বিয়ে করে ঘরে আনে তার বহু দিনের প্রেয়সী শীলাকে। শীলা অবশ্য রথীনের দেওয়া প্রস্তাবের কথা গোপন করে যায় রামের কাছে। রাম সব কিছু জেনেও না জানার ভান করে।



      সময় এগিয়ে চলে। সফল এম এল এ রথীন এখন স্বপ্ন দেখছে এম পি হওয়ার। তাহলে কে বিধানসভা উপ নির্বাচনে দাঁড়াবে? নীল নাকি রাম? ওপর মহলও দ্বিধায়। উচ্চাকাঙ্ক্ষী নীল এই সুযোগটা কিছুতেই ছাড়তে চায় না। সে জানে এই বিষয়ে শেষ রায়টা রথীন দেবে। চক্রান্তের জাল বুনতে থাকে নীল। বারে বারে সে রথীনকে মনে করাতে থাকে সেদিনের অপমানের কথা। শীলার ঔদ্ধত্বের কথা। রথীনের জমিদারী রক্ত ক্রমশ গরম হতে থাকে। প্রতিশোধের জন্য ছটফট করতে থাকে সে।



      রামের ছেলে মধু বেড়াতে গেছে। কয়েক দিন বাড়ি থাকবে না। অর্থাৎ একটু হলেও বাড়ি ফাঁকা থাকবে। এই সুযোগটাকে কাজে লাগাতে হবে। যা করার এর মধ্যে করতে হবে। চক্রান্তের জাল বুনতে থাকে নীল। রথীনকেও সঙ্গে পেয়ে যায়।



      পরের দিন রাম, নীলকে ডেকে রথীন বললো, "তোদের দুজনকে কাল পার্টির হেড অফিসে যেতে হবে। জানিসতো এবার আমি লোকসভা ভোটে দাঁড়াবো। এম এল এ পোস্ট খালি হবে। সেই উপ নির্বাচনে কাকে দাঁড় করানো হবে সেটা নিয়ে কেন্দ্রীয় কমিটি তোদের মত পার্টির অ্যাক্টিভ কর্মীদের মতামত নেবে, তাই ডেকে পাঠিয়েছে। লোকসভা ভোটের জন্য এখন পার্টি অফিসে সবাই খুব ব্যস্ত। তোদের দুপুরের পরে যেতে বলেছে। বেশি রাত হলে ওখানে থেকে যাবি। থাকার খুব ভালো ব্যবস্থা আছে। কোনো অসুবিধা হবে না।



      পরের দিন তারা পার্টির হেড অফিসে হাজির হল। কথা বার্তা সারতে সারতে প্রায় মাঝ রাত হয়ে গেল। আর ফেরার উপায় নেই। বাধ্য হয়ে সেখানে থেকে গেল তারা। পুরানো আমলের তৈরি পার্টি অফিসের ছাদের কড়ি কাঠ গুনতে গুনতে রাত কেটে গেল রামের। কোনো এক অজানা আশঙ্কা যেন জড়িয়ে ধরে তাকে। নিজের অজান্তেই সে বারে বারে কেঁপে ওঠে।



      অন্যদিকে সেই রাত এক কাল রাত হয়ে নেমে এলো শীলার জীবনে। সেই রাতে তার সঙ্গে যা ঘটেছিল সেটাকে পাশবিক অত্যাচার বললে হয়তো পশুরা মানহানির মামলা করতে পারে। 



      শ্লীলতাহানি ছাড়াও চোদ্দটা ছুরিকাঘাত নিয়ে মাটিতে পড়ে থাকা শীলার মৃত দেহটা পরের দিন সকালে রাম আবিষ্কার করে। নীল কিছু একটা চক্রান্ত করছে সেটা আন্দাজ করতে পেরেছিল রাম। কিন্তু সেটা যে এত বড়, এত মারাত্মক হতে পারে সেটা সে স্বপ্নেও ভাবেনি! সেই সঙ্গে মেজো বাবুও যে এর সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে সেটাও তার বুদ্ধির অগম্য ছিল।



      শোকগ্রস্থ রাম নিজেকে সামলে নিয়ে থানায় যায়। সরাসরি নীল আর রথীনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিল করে। বিরোধীরা এই ইস্যুটাকে লুফে নিয়ে জোরদার প্রচার শুরু করেছে। শাসক দলের অন্তর্কলহকে সামনে আনতে চাইছে। এর মধ্যে মধু বাড়ি ফিরে এসেছে। তার দিকেও নজর দিতে হচ্ছে। অন্যদিকে নীল, রথীন আত্মরক্ষার জন্য, দলের ভাবমূর্তি অক্ষুণ্ণ রাখার জন্য নতুন করে চক্রান্তের জাল বুনে যাচ্ছে। তারাও রটাতে শুরু করেছে যে রাম আসন্ন উপ নির্বাচনে টিকিট না পেয়ে বিরোধীদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে।



      মাঝ রাতে দরজায় টোকা। ভেতরের ঘরে মধু ঘুমোচ্ছে। রাম দরজা খুলতেই হাত পড়লো রিভলভরের ট্রিগারে। ছুটলো গুলি। গুলিবিদ্ধ হয়েও আর্তনাদ না করে চিৎকার করে রাম বললো, "মধু পালা। এরা আমাদের কাউকে বাঁচতে দেবে না।" কথা শেষ হতেই রামের নিথর দেহটা ধড়াস করে মাটিতে পড়ে গেল।



      খিড়কির দরজা খুলে উর্দ্ধশ্বাসে ছুটতে লাগলো মধু। মা, বাবা, বাড়ি, ঘর, জমি, জায়গা সব হারিয়ে সে প্রাণপণে ছুটে চলেছে কেবল প্রাণটুকু বাঁচানোর জন্য। প্রাণ ভয়ে ছুটে চলেছে মধু। কোথায় যাচ্ছে, কোন দিকে যাচ্ছে সে নিজেই জানে না। ছুটতে ছুটতে হোঁচট খেয়ে পড়ে যায়। মাথায় চোট লাগে। অজ্ঞান হয়ে যায়।



      জ্ঞান ফিরলে মধু নিজেকে একটা ঘরে আবিষ্কার করে। তাকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছেন কয়েকজন গেরুয়াধারী। গেরুয়াধারীদের দেখে মধুর মনে হচ্ছে তারা যেন কেউ মানুষ নন। একেক জন স্বর্গীয় দেবদূত। বিগলিত করুণা যেন চুঁইয়ে পড়ছে তাদের শরীর থেকে। খুব আপন মনে হচ্ছে তাদের। মনে হচ্ছে তাদের কাছে সব কথা খুলে বলা যায়। ডুকরে কেঁদে ওঠে মধু। সব কথা খুলে বলে তাদের।



      - "কে বলেছে তুমি সব কিছু হারিয়ে ফেলেছো? এই বিশ্ব নিখিল তোমার। একে গড়ে তোলো নতুন পৃথিবী হিসেবে। যেখানে হিংসা থাকবে না, দ্বেষ থাকবে না, অভাব থাকবে না, অনাহার থাকবে না। কে বলেছে তুমি নিঃস্ব হয়ে গেছ? তোমার মধ্যেই আছে সেই অমোঘ শক্তি। সেই শক্তিকে সঠিক কাজে লাগাও, সত্যের কাজে লাগাও, ধর্মের কাজে লাগাও। আমি মানস চক্ষে দেখতে পাচ্ছি তোমার মধ্যে আছে সেই ক্ষমতা, সেই দক্ষতা, সেই তেজস্বীতা, সেই বলিষ্ঠতা। হয়তো সর্ব শক্তিমানের বিশেষ কোনো পরিকল্পনা আছে তোমাকে নিয়ে। হয়তো তিনি চান না তোমাকে চার দেওয়ালের মধ্যে আটকে রাখতে। হয়তো তিনি তোমাকে দেখতে চাইছেন বিশ্ব নাগরিক হিসেবে। তোমাকে দিয়ে হয়তো তার বিশেষ কোনো কাজ করাতে চাইছেন। হয়তো সেই জন্যই তুমি ছুটতে ছুটতে ঠিক আশ্রমের সামনেই অজ্ঞান হয়ে গেলে। এখন তুমি ছোট। অনেক কিছুই বুঝতে পারবে না। তার জন্য ধৈর্য ধর। আশ্রমের শিক্ষায় নিজেকে তৈরী কর।"



      - "কিন্তু আমি যে আমার বাবা মাকে হারিয়ে ফেলেছি!"



      - "না, তাঁরা হারিয়ে যায় নি। তাঁরা আছেন।হয়তো এই ধরাধামে নেই। অন্যত্র আছেন। তুমি তাদের দেখতে পাচ্ছো না। কিন্তু তাঁরা সব সময়ে তোমাকে দেখতে পাচ্ছেন। সব কিছু এখন বুঝতে পারবে না। বড় হও সব বুঝবে।"



      আশ্রমের শিক্ষায়, আশ্রমের আদর্শে বড় হতে থাকে মধু। শিক্ষার বাইরেও অনেক কিছু সে জানতে চায়।



      - "গুরুদেব এর নাম আশ্রম কেন?"



      - "কারন আমরা বৈদিক আশ্রমিক আদর্শে জীবন যাপন করি তাই এর নাম আশ্রম। আর মানুষ হিসেবে ব্যক্তিগত ভাবে আমরা তুচ্ছ, অতি তুচ্ছ। একাকি আমরা কিছুই করতে পারি না। সেইজন্য প্রয়োজন একতা এবং সংহতি। সেইজন্য আমাদের আশ্রমের নামের সঙ্গে 'সংঘ' শব্দটা যুক্ত। যেদিন আমরা সমস্ত মানুষকে সংঘবদ্ধ করতে পারবো, সেদিন পৃথিবীর রূপ পাল্টে যাবে।"



      বড় হতে থাকে মধু। বুঝে নিতে থাকে তার দায়িত্ব। এতদিনে সে আত্মস্থ করেছে চার দেওয়ালে ঘেরা কংক্রিটের মেঝে, কংক্রিটের ছাদ তার জন্য নয়। সবুজ পৃথিবীটা তার ঘর। নীল আকাশ তার ছাদ।



      ক্রমশ ছড়িয়ে পড়ছে তরুণ সন্ন্যাসী মধুর নাম। যেখানে বিপর্যয় সেখানেই হাজির মধু। সঙ্গে পৃথিবীকে নতুন করে গড়ে তোলার আদর্শে উদ্বুদ্ধ আরো কিছু তরুণ। এরা ধর্মযোগী নয় কর্মযোগী। গীতা পাঠের থেকে ফুটবল খেলা এদের কাছে বেশি গুরুত্বের। মানুষের মন থেকে লোভ, হিংসা, দ্বেষকে সরিয়ে দেওয়াই এদের লক্ষ্য।



      ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবে তছনছ হয়ে গেছে সুন্দর বন। লোনা জলে ভরে গেছে চরাচর। খাবার নেই, পানীয় জল নেই। পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে স্থানীয় চাষাবাদ। অসহনীয় অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে প্রান্তিক মানুষগুলো। ঘরে ঘরে হাহাকার, মৃত্যু যেন নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই অবস্থা দেখে শুনে চুপ করে থাকতে পারে না মধুর দল। তারা পৌছে গেছে সেখানে। ঝাঁপিয়ে পড়েছে সুন্দরবন এলাকায়। সংগ্রহ করে আনা ত্রাণ সামগ্রী পৌছে দিচ্ছে ঘরে ঘরে। অসুস্থ মানুষদের তুলে নিয়ে আসছে সদর হাসপাতালে। তাদের সুস্থ করিয়ে ফিরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। ভেঙে পড়া ঘরগুলো নিজের হাতে মেরামত করছে তরুণ সন্ন্যাসীর দল। যথেষ্ট কষ্ট করতে হচ্ছে তাদের। দিনে দুবেলা তারা যা খাচ্ছে সেটা প্রায় অখাদ্যের পর্যায়ে পড়ে। রাতে যেখানে শুতে হচ্ছে, গোয়াল ঘর সেই স্থানের থেকে কোনো অংশে খারাপ নয়! মুখ বুজে সেই সব কষ্ট সহ্য করছে তারা। তার পরেও এক অনাবিল হাসির রেখা ফুটে রয়েছে তাদের মুখে।



      অবশেষে লোনা জল নামলো। ঘরে ফিরলো প্রান্তিক মানুষগুলো। তাদের মধ্যে কৃতজ্ঞতার শেষ নেই তরুণ সন্ন্যাসীদের প্রতি। কাজ শেষে মধুরাও তৈরি হচ্ছে আশ্রমে ফেরার জন্য। গ্রামবাসীরা দল বেঁধে এসেছে তাদের কৃতজ্ঞতা জানানোর জন্য। হাত জড়ো করে দাঁড়িয়ে আছে তারা। কি বলবে ঠিক ভেবে পাচ্ছে না।



      মধু গ্রামবাসীদের উদ্দেশ্যে বললো, "কাল সকালে আমরা চলে যাব। আমাদের এখন অনেক কাজ।"



      মধুর দল কালই চলে যাবে শুনে অনেকের চোখে জল এসে গেল। সজল চোখের নীরব ভাষা পড়তে মধুর বিন্দুমাত্র অসুবিধে হল না। গ্রামবাসীদের উদ্দেশ্যে সে বললো,



      - "বুঝতে পারছি তোমরা কি বলতে চাইছো। তোমরা কৃতজ্ঞতা জানাতে এসেছোতো। কিন্তু কৃতজ্ঞতা লাভের জন্য আমরা এতদুরে আসিনি। এত পরিশ্রম করিনি। আমার একটা কথা যদি তোমরা রাখো তাহলেই আমরা খুশী হব।"



      - "কি কথা ঠাকুর?" হাজার কন্ঠ থেকে প্রশ্ন ভেসে এলো।"



      - "কথা দাও এবার থেকে তোমরা নিজেরা নিজেদের দেখবে।"



      - "হ্যাঁ ঠাকুর দেখবো। তোমার কথা আমার কাছে আদেশ। সেই আদেশ আমরা অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলবো।"



      - "নিজেদের বলতে তোমরা কাদের বোঝো?"



      - "আমাদের বাড়ির লোক, পাড়ার লোক, গাঁয়ের লোক।"



      - "ভিন গাঁয়ের লোক কেন তোমাদের নিজেদের লোক নয়? ভিন জেলার লোক কেন তোমাদের নিজেদের লোক নয়? ভিন রাজ্যের লোক কেন তোমাদের নিজেদের লোক নয়? এবার থেকে সবাইকে নিয়ে ভাবতে থাকো।"



      - তাই ভাব ঠাকুর। এবার থেকে সবাইকে নিয়ে ভাববো। সবাইকে নিয়ে বাঁচবো।"



      - "এখানে আমরা মাত্র বারোজন এসেছি। যদি আমাদের সঙ্গে পাঁচশো জন লোক থাকতো তাহলে কত সুবিধা হত! তোমরা আরো তাড়াতাড়ি ঘরে ফিরতে পারতে। অনেক কম মানুষ মারা যেত। তাই বলছি দুর দুরান্তরে যদি কখনো কোনো বিপদ বিপর্যয় ঘটে, তোমরা তোমাদের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবেতো?"



      - "দেবো ঠাকুর দেবো। না হলে যে আমরা নিজেদের মানুষ বলে ভাবতে পারবো না।"



      মধু জানে আজ এরা যা বলছে, কাল সব ভুলে যাবে। নিজেদের ক্ষুদ্র স্বার্থের গন্ডির মধ্যে আটকে যাবে। কিন্তু তাই বলে হতাশ হলে চলবে না। বারে বারে ঘা দিয়ে ঘুমন্ত অচৈতন্য মানুষদের জাগাতে হবে। তাদের চেতনা ফেরাতে হবে। তারজন্য ধৈর্য ধরতে হবে। একটা ঘুমন্ত জাতিকে জাগিয়ে তুলতে কঠোর থেকে কঠোরতম প্ররিশ্রম করতে হবে। সাধনা করতে হবে। 



      মধু এর আগে উত্তর বঙ্গে মানুষের হিতার্থে কাজ করে এসেছে। বাঁকুড়া, পুরুলিয়ার মত আদিবাসী অধ্যুষিত অনুন্নত জেলাগুলোতেও মানুষের জন্য কাজ করে মানুষের মন জয় করেছে। তাদের হৃদয়ে নিজের একটা ছাপ রেখে এসেছে। এবার সে জিতে নিল দক্ষিণ বঙ্গের প্রান্তিক মানুষদের মন। এখন সে ভাবছে সত্যিই এই পৃথিবী তার ঘর। অজস্র তারা খচিত নীল আকাশ তার ছাদ। আজ সে এখানে। হয়তো কাল অন্য কোথাও যেতে হবে। যেতে হবে কোনো পথে, প্রান্তরে, গুহায়, কন্দরে। ছুটে চলেছে সে। বিরামহীন ছুটে চলেছে। নতুন পৃথিবী গড়ে তোলার আনন্দে সে ছুটে চলেছে। ছুটে চলেছে সে সৃষ্টি সুখের উল্লাসে। 



      রাতের দিকে মধু ফোন করে আশ্রমের অধ্যক্ষ তথা তার গুরুদেবকে,



      - "গুরুদেব, আমাদের এখানের কাজ আপাতত শেষ। কাল ফিরছি। দেড় হাজার মানুষকে আমরা উদ্ধার করেছি। ঘরে ফিরিয়েছি।"



      - " মাত্র দেড় হাজার মানুষকে উদ্ধার করলে হবে না মধু। দেড়শো কোটি অসহায় ডুবন্ত মানুষ তোমার দিকে তাকিয়ে আছে। তাদের যে টেনে তুলতে হবে। মহা সংগ্রামের জন্য নিজেকে প্রস্তুত কর। ওঠো, জাগো।"



      হ্যাঁ, বেশ ভোরেই উঠে পড়েছে মধু। উদিত সূর্যের প্রথম কিরণের চোখে চোখ রেখে আজ আবার সে আবৃত্তি করছে,



      "...মনে ভাবিলাম, 

        মরে ভগবান রাখিবে না মোহ গর্তে।

        তাই লিখি দিল বিশ্ব নিখিল,

        দুবিঘার পরিবর্তে...।"



      না, আজ আর তার কোনো ভুল হচ্ছে না।



                 

একটা খাস্তা কঙ্কাল - প্রদীপ কুমার দে || Ekta khasta konkal - Pradip Kumar de || Short Story || ছোটগল্প

 একটা খাস্তা কঙ্কাল 

     প্রদীপ কুমার দে 


সন্ধ্যাবেলায় লোডশেডিং হয়ে গেল। প্যান্ট জামা গায়ে সেঁটে বেড়িয়ে পড়লাম। হঠাৎই যেন সব কালো অন্ধকারে মুড়ে গেল। বাড়ি থেকে বেড়িয়ে কয়েক পা এগিয়েছি, পিছন থেকে ডাক এলো,

-- কি প্রদীপবাবু রাগ করেছেন ?


ঘুরে দেখি পিছনে কাকের মতো চেহারা নিয়ে দাঁড়িয়ে নিলয়দা। উনি আমার প্রতিবেশী এবং লেখালেখি করার সুবাদে ঘনিষ্ঠ। কিন্তু ওনার ব্যবহার এযাবৎ আমাকে ভীষণই পীড়া দিত তাই এড়িয়ে চলতাম। একবছর ধরে এড়িয়ে চলছি ওনাকে আর অবশ্যই উনিও আমাকে। উনি পিছুডাক দিয়েছেন, আমি উত্তর দিয়েই দিলাম,

-- এ বয়সে আর রাগ?


-- তাহলে চলেন না আমার ঘরে, বসে আমি আর আপনি মিলে কবিতা আর গল্প পাঠ করি ?


-- এই লোডশেডিং অন্ধকারে আলো কোথায় পাবেন?


-- আপনার সাথে অনেকদিন পর দেখা হল তাই জানেন না, আমি একটা এমার্জেন্সি লাইট কিনেছি। অসুবিধা হবে না। 


-- কি বলেন ? এমার্জেন্সি আলো? তাতে কি হবে?


-- প্রচুর আলো। কোন অসুবিধা হবে না, বলছি তো। নচেৎ অন্ধকারে কোথায় যাবেন?

কথাগুলো বলে দাঁত বার করে হাসলো নিলয়দা।


চললাম ওনার সাথে। ঘুটঘুটে অন্ধকার কাটিয়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠলাম। উনি ঘরে আমাকে নিয়ে ঢূকেই দরজায় চিটকানি দিয়ে দিলেন। ঘরের মধ্যে ঢুকতেই কিরকম একটা পচা গন্ধ নাকে এল। আমি বললাম,

-- নিলয়দা আগে লাইটটা জ্বালান।


-- হ্যাঁ এই যে …


আমি একপাশে অপেক্ষায়। লাইট কই। একটু অন্ধকার সহ্য করে নিলে যা হয় চোখ যেন কিছু দেখতে পেল। দেখি কই নিলয়দা তো নেই। ওমাঃ কি দেখছি? একটা লিকলিকে কঙ্কাল তার সরু সরু আঙুল দিয়ে একটা বই তুলে আমার দিকেই এগিয়ে আসছে।

ভয়ে চিৎকার করে উঠলাম,

-- নিলয়দা? নিলয়দা?


বিকট শব্দ হল। কেমন ' হে -হে ' শব্দে নেকো সুরে হাসলো কেউ।


ভীষণ ভয় পেয়ে গেলাম। অন্ধকারে দরজার চিটকিনি খুঁজতে লাগলাম। মুখে রামনাম।


বরাত জোরে বেঁচে গেলাম। হঠাৎই আলো চলে এল। ঘরে আলোর সুইচ অন করাই ছিল। আলো জ্বলতেই দেখি বিছানায় শায়িত একটি লিকলিকে কঙ্কাল।


চিটকিনি খুলে পড়িমড়ি করে সিঁড়ি দিয়ে নীচে নামছি। আওয়াজে নীচের ফ্ল্যাটের বৌদি বেরিয়ে এসে জিজ্ঞাসা করলেন,

-- কি ভয় পেয়েছেন তো? ইদানীং আমরা সব্বাই পাচ্ছি।

প্রণয় পাশা - তপন তরফদার || Pronoy pasa - Tapan Tarafdar || Short Story || ছোটগল্প

    প্রণয় পাশা

              তপন তরফদার



 তাস পাশা সবই সর্ব নাশা। তাস খেলা সর্বনাশা কেন। কারণ সময়ের অপব্যবহার করার অন্যতম উপকরন এই তাস। তাস আবার জুয়া খেলার খেলায় মাথা গলিয়ে লাগাম ছাড়া জনপ্রিয়তা পেয়েছে। সবাই ইশারায় তিন পাত্তি খে লতে চায়। পাশা যে সর্বনাশের খেলা, বাড়ির বৌকেও বাজি রেখেছে তা সবাই জানে। প্রণয় ও এক রকমের হাইভোল্টেজের খেলা তাই সমাজে এই প্রণয় পাশাকে গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করে আছে ও থাকবে। এই প্রণয় পাশা খেলায় প্রণয়ীরা প্রণোদিত হয়ে অনেক অনেক এগিয়ে গেছে।


       যুগের পরিবর্তন হয়েছে, মেয়েরা স্বাবলম্বী হতে চায় এবং হচ্ছেও। মুক্ত বাজারে ক্রেতারা তাদের পচ্ছন্দসই দোকানের থেকে মাল খরিদ করতে পারে, সেরকমই বিক্রেতাও তার পছ্ন্দের দাম ক্রেতা অনুযায়ী ঠিক করে।


বাজারে চালু আছে ছেলরাই মেয়েদের পিছনে ঘুরঘুর করে।এটি এখন সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা। আমি একজন সুর্দশন সুপুরুষ। আমি বুঝতে পারি কেষ্টর কোনো দোষ ছিলনা। অনেকে মনে করে কেষ্ট বাঁশী বাজিয়ে রাধিকাদের ঘর থেকে ফুসলে আনতো।বাজে কথা, সত্যের অপলাপ করা হয়। ঘরে সম্পুর্ন অসত্য কথা বলে মিথ্যাচার করে কলসিতে জল ভরার ছুতো করে কেষ্টর সঙ্গে ফষ্টিনষ্টি করতে আসতো। ক্লাস টুয়েলভে উঠেই মালুম হলো আমার ক্ষমতা। বন্ধুরা পরামর্শ দিলো সাতজন্ম তপস্যা করেও এমন সুঠাম-সুন্দর-সুললিত হওয়া যায়না। তুই উশুল করেনে।আমাদের পৌরাণিক যুগের সব থেকে বর্ণময় চরিত্র কৃষ্ণ। ঝালে,ঝোলে,অম্বলে এমনকি দুগ্ধজাত দ্রব্যেও ওই ক্ষীর-ননীতেও ডন দায়ুদ গ্যাং স্টার থেকেও অনেক অনেক এগিয়ে। বালগোপাল থেকে শেষ বয়সেও জ্ঞান ছড়িয়ে নরলোকের আলোয় সর্বদাই বিরাজমান। আমি কৃষ্ণকেই গুরু মেনে চলি। এরকম সর্বগুনাসম্পন চরিত্র আমাদের দেশেতো বটেই অন্য কোনো দেশের পৌরাণিক চরিত্রে পাওয়া দুস্কর। সর্বকালের সর্ব ঘটের কাঁঠালি কলা ওই “কৃষ্ণ”।


     আমি এখন সাতদিনে সাত প্রণয়ী রাধিকার সঙ্গে তাল মিলিয়ে ওদের সঙ্গ দিয়ে থাকি। প্রত্যেকেই বলেছে, আমার জন্য ঘর ছেড়ে গাছ তলায় থাকতে রাজি। হাসতে হাসতে জীবন দিতে রাজি। পালা করে ওদের সঙ্গ দিই। আজ ভুল হয়ে গেছে মৌমিতা আর জয়িতাকে একই সময়ে একই জায়গায় মিলিত হবার ডাক দিয়ে ফেলেছি। আহাম্মকের কাজ হয়ে গেছে। অবশেষে ভেবে ঠিক করলাম আমি লুকিয়ে থেকে দেখবো কে বেশিক্ষন আমার জন্য অপেক্ষা করে। কে বেশি ভালোবাসে।একটু পরীক্ষা করা কোনো দোষের নয়।


          দুজনেই এ্যসপ্লানেড মেট্রো স্টেশনের সামনে দাঁড়িয়ে। আরও অনেক মেয়েরা উগ্র সাজগোজ করে দাঁড়িয়ে আছে। পথচলতি কিছু লোক কিছু মেয়ের সঙ্গে কথা বলে ট্যাক্সিতে নিয়ে চলে যাচ্ছে। মৌমিতাকে কোনো একজন লোক কি বললো কে জানে। মৌমিতার হাত নাড়া দেখে বুঝতে অসুবিধা হয়না ও লোকটাকে কড়কে দিচ্ছে। এই যা ওরা দুজনে এক হয়ে কি গল্পকথন শুরু করলো। একঘন্টা কেটে গেছে।দুজনেই ফোন করতে শুরু করলো। আমি বুদ্ধি খাটিয়ে আমার ফোন সুইচ-অফ করে রেখেছি।


অবাক হয়ে হঠাৎই দেখি আমাদের সঙ্গে পড়তো নিখিলেশ হাজির।মাথায় কিছু ঢুকছেনা। নিখিলেশ বেশ অন্তরঙ্গ হয়ে আন্তরিকতার সঙ্গে মৌমিতার হাত ধরে কি কথা বলছে কে জানে।মৌমিতার মুখের উচ্ছল হাসি চলকে পড়ছে। দুজনে একটা ট্যাক্সিতে উঠে রঙ্গমঞ্চ থেকে বিদায় নিল। এরপরেই এক অবিশ্বাস্য ঘটনা ঘটলো। আমি চোখ চলকে দেখি দুধসাদা রঙের বিদেশি চারচাকা থামিয়ে জয়িতাকে তুলে নিল অনিমেষ চন্দ্র, বিখ্যাত জুয়েলারির মালিকের ছেলে।


এইক্ষণেই আমার বোধগম্য হলো, কোনো কিছু ফাঁকা পড়ে থাকেনা। প্রকৃতই পূরণ করে দেয়। অর্জুনকে বলেছিল আমার গুরু ওই শ্রীকৃষ্ণ।



বিনির সৌর খোঁজ - মনোরঞ্জন ঘোষাল || Binir Soura kojh - Monoronjon Ghosal || Short Story || ছোটগল্প

 বিনির সৌর খোঁজ

  মনোরঞ্জন ঘোষাল



ডোমস শুধু আমাকে মেরে ফেলার প্লান করেছিল এমনটা নয়। সে আমার গবেষণাকে অসম্মান করেছে। তাই আমার গবেষণাকে প্রতিষ্ঠিত করার জন‍্য জেদ খানিকটা সে আমার বাড়িয়েই দিয়েছে। তার মত গবেষকদের মুখে ঝামা ঘসে দিতে আমি আবার আমার গবেষণা ভীত্তিক খোঁজ শুরু করলাম। আগে তো চাঁদের দিকে তাকিয়ে জীবের দর্শন পেয়ে ছিলাম। সেই কথা বিজ্ঞানী মহলে জানিয়ে দিয়েছি। এবারে সূর্যের দিকে একবার নজর দেব বলে মনে করছি। প্রখর আলোর জন‍্য তার দিকে তো তাকানো যায় না। তার জন‍্য এক বিশেষ ব‍্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।


এদিকে মাইক্রোস্কোপিক দূরবিক্ষন যন্ত্রটি এখন আমার কাছে একটা মস্ত বড় হাতিয়ার। যেমনটি ছিল গ‍্যালিলিয়ের। তবে এটি গ‍্যালিলিওর টেলিস্কোপের থেকে অনেক উন্নত। আসলে আমি এটিতে অত‍্যাধুনিক প্রযুক্তি ব‍্যবহার করেছি। আমি এক বিশেষ প্রকার লেন্স ব‍্যবহার করেছি এই যন্ত্রে। যেটি সাধারণ লেন্সের কার্যকারিতা বহু গুণে বাড়িয়ে দিতে পারে। এই পদ্ধতি টিও আমার নিজস্ব।


এক বিশেষ সংকর লেন্স। লেন্সের কাঁচের সঙ্গে বিশেষ ধাতুর একটা শতকরা ভাগ মিশ্রিত করলে তার স্বচ্ছতার কোন পরিবর্তন ঘটে না। মানে কাঁচটি ঘোলাটে হয়ে যায় না। সেই কাঁচ দিয়ে লেন্স তৈরী করলে লেন্সের বিস্ফারিত করার ক্ষমতা বহু গুণে বৃদ্ধি পেয়ে যায়। আসলে ঐ অপদ্রব‍্যটি অর্থাৎ যেটিকে এক সামান‍্য ভাগে গলিত কাঁচে লেন্স তৈরীর সময় মেশানো হল। সেটি স্বাভাবিক কাঁচের তুলনায় অনেকটা ক্ষমতা শালী হয়ে ওঠে। সেই অপদ্রব‍্য মিশ্রিত কাঁচ দ্বারা গঠিত লেন্সের মধ‍্যে আলোর প্রতিসরণ ঘটলে তার চ‍্যুতি কোনকে বাড়িয়ে দেয় বেশ অনেকটা পরিমানে। বহু পরীক্ষা নিরীক্ষা করার পর আমি এই সত‍্যটি উদ্ভাবন করতে সমর্থ হয়েছি। সেই বিশেষ ভাবে তৈরী লেন্স আমি আমার মাইক্রোস্কোপিক টেলিস্কোপে ব‍্যবহার করে অসাধারণ ফল পাচ্ছি। 


এতদিন ওই দিয়ে আমার সৌর গবেষণাকে যাচাই করার কথা মনে আসে নি। সেটিকে গাণিতিক ভাবে আমি তাত্ত্বিক প্রতিষ্ঠা করেছি। পরীক্ষা দ্বারা প্রমাণ করা হয় নি। আজ ডোমসের ওখান থেকে প্রত‍্যাবর্তন করার এক বৎসর কাল অতিবাহিত হল। সকালে আমার হাত ঘড়িটি আমাকে স্বরণ করিয়ে দিল। আমার এই ঘড়িটি এমন স্মরনীয় ঘটনা গুলিকে ওর স্মৃতিতে ধরে রাখে। আর সময় মত আমাকে মনে করিয়ে দেয়। মোবাইল ফোনেও ঐ কাজ করা যায় তবে মোবাইলের ক্ষতিকর বিকিরণের জন‍্য আমি ওটির ব‍্যবহার প্রায় বন্ধ করে দিয়েছি। বদলে একটি অন‍্য যন্ত্র তৈরী করায় মনযোগ দেবো বলে মনে করে আছি। 


ডোমসের ওখানে আমি ষোলোই আগস্ট গিয়ে ছিলাম। আর ফিরেছি তেইশে আগস্ট। আজও সেই তেইশে আগস্ট। 


আজ তেইশে আগস্ট ২০১৩ সকাল দশটা। আমার অদৃশ‍্য কাঁচ ঘরটায় সৌর খোঁজে মন নিবেশ করব বলে মন স্থির করে নিলাম। সকলের দৃষ্টিকে আড়াল করে আমি আমার সাধের ল‍্যাবে প্রবেশ করলাম। সেখানে এখন অনেক কাজ করতে হবে। বিশেষ করে ক দিনের জন‍্য আমাকে টেবিলে সৌর দর্শনের যন্ত্রপাতি সব সাজিয়ে নিতে হবে। তা ছাড়া প্রয়োজনীয় সব কিছু হাতের কাছেই সাজিয়ে রাখতে হবে। নইলে সময় মত সব জিনিস পত্র দরকারে পাওয়া যাবে না। আমার স্টেচিং চেয়ারের পাশে যন্ত্রপাতি সজ্জিত করতে শুরু করলাম। মাইক্রোস্কোপিক টেলিস্কোপ যন্ত্রটিকে একটি স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত করলাম। যাতে সেটি সূর্যের গতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে সমান ভাবে একই কৌনিক মাণের হারে আপনা থেকেই সরতে থাকবে। আমি তো আর সারাটা রাত আর দিন ধরে সব সময় সেই অনুবিক্ষনিক দূরবিন যন্ত্রের কাছে বসে থাকব না। মাঝে মাঝে অন‍্য কাজে সেখান থেকে সরে যেতে হতে পারে। তাই তার পর্যবেক্ষণের ছবি সে আপনা থেকেই তুলে রাখবে। আমার খোঁজের যাতে কোন রকম আসুবিধা না হয় তার পাকা পোক্ত ব‍্যবস্থা বলতে পার। এই সব জিনিস পত্র যথাযথ ভাবে সাজাতে বিকেল হয়ে গেল। সূর্য তখন দিগন্ত রেখার কাছে পৌঁছায় নি। একটি বার যন্ত্রের নলে চোখ ঠেকিয়ে তাকালাম সেই হেলে পড়া সূর্যের দিকে। ভাল দেখতে পেলাম না। লাল রঙের বড় তরঙ্গ দৈর্ঘ‍্যের আলোক রশ্মি গুলি আকাশে ছেয়ে দৃষ্টিকে অস্পষ্ট করে তুলছে। বুঝলাম তার প্রতিরোধের ব‍্যবস্থা করতে হবে। এই নিয়ে এক সময় মনযোগ দিয়ে ছিলাম। তখন এর প্রতিকার করার জন‍্য এক বিশেষ কোটেড চশমা তৈরী করে ছিলাম। আজ তার কথা মনে পড়ে গেল। সেই তৈরী করা স্পেশাল কোটেড চশমার কথা। যেটি চোখে পরে থাকলে চোখে আছড়ে পড়া উজ্জ্বল বেগ বান আলোক রশ্মিকে বাধা দেয়। ফলে চোখকে অযথা আলোর ঝাপটা সহ‍্য করতে হয় না। ঐ নীতি প্রয়োগ করলাম আমার মাইক্রোস্কোপিক টেলিস্কোপ যন্ত্রের উপরের লেন্সে। একটি লেয়ার সেই স্পেশাল কোট লাগিয়ে দিলাম তার ওপরে। ফলে অযথা অযাচিত আলোর ঝলকানি আর লেন্সের ভেতর দিয়ে যন্ত্রের ভেতরে প্রবেশ করতে পারল না। তাতে আমার দেখাতে কোন বাধা সৃষ্টি হল না। ফলে আমি আরামে বিনা বাধায় সব কিছু দেখতে পাচ্ছি। সেই জন‍্য আমার আলোক বিশ্লেষণটা অনেকটা সহজ হয়ে পড়ল।  


আলোক বিশ্লেষণ হল এক বিশেষ কৌশল। যেখানে আলোক রশ্মি গুলিকে পছন্দ মত ভাবে আলাদা করে নেওয়া যায়। আলোক রশ্মি যে কণিকার প্রবাহ তা আমরা জানি। সেই কণিকার নাম নিউটন দিয়েছিলেন ফোটন। তিনিতো আলোর কণিকা তত্ত্বের উদ্ভাবক। প্রমাণ করেছিলেন আলোকের কণিকা ধর্ম। তিনি আলো যে কণিকা সেটি বললেও সে কণিকারা যে আকার ও ভরে ভিন্ন হতে পারে তা বলেন নি। তিনি বলেছিলেন আলোর কণিকা গুলি ধর্মে অভিন্ন। 


এই কথা সত‍্য নয়। আইন্সটাইন তার সমীকরণে সেই কথা স্পষ্ট দেখিয়েছেন। তা ছাড়া সনাতনী বলবিদ‍্যার ধারণাকে বিশ্লেষণ করলেই তা জানতে পারা যায়। সাধারণ আলো আর এক্স লশ্মির কথা ভেবে দেখ? সাধারণ আলোকের তুলনায় এক্স রশ্মির ভেদন ক্ষমতা অনেক বেশি। তা হলেই বোঝ? হয় এক্স রশ্মির কণিকা গুলোর গতিবেগ সাধারণ আলোর কণার তুলনায় বেশি। নতুবা এক্স রশ্মির কণিকা গুলো সাধারণ আলোক কণিকার তুলনায় আকারে অনেকটা ছোট। তবে সম্প্রতি প‍্যারিস-জার্মানিরর এল এইচ সির গবেষণায় প্রমাণ মিলেছে যে আলোর থেকে বেশি গতি সম্পন্ন কণিকা আছে। সত‍্যেন বসুর নামে সেই কণিকা কে বোসন বলে অভিহিত করা হয়েছে। অনেকে অবশ‍্য ঈশ্বর কণা বলে সেই ক্ষুদ্রতর কণাকে অভিহিত করছেন। ওই ক্ষুদ্রতর না ওর থেকেও ছোট ক্ষুদ্রতম কণিকার কথা আমি অনেক আগেই বলে ছিলাম। তার নাম দিয়েছিলাম একক কণিকা বা ইউনিট পার্টিকল। এটিও আমার এক অমোঘ ধারণা। আমার বস্তুবাদ তত্ত্বে এর উল্লেখ আছে। 


আসলে বস্তু ছাড়া যে বস্তুর সৃষ্টি হতে পারে না সেটাকেই বলা হয়েছে সেখানে। তার সঙ্গে ইউক্লিডের জ‍্যামিতির ধারণা কে জুড়ে দিয়েছি মাত্র। শক্তি আর বস্তু আদতে এক জিনিস। বস্তুর এক বিশেষ অবস্থা হল শক্তি। বস্তুকে যেমন শক্তিতে রূপান্তর করা যায়। তেমন শক্তিকে বস্তুতে রূপান্তর করা যায়। আমার ল‍্যাবে আমি তা করে দেখেছি। একটা আলোক রশ্মি থেকে ভারি কণার বস্তু গঠন করেছি। আলোক রশ্মি তো একটি কণা না। অজস্র কণার একটা স্রোত। কোয়ান্টামের ধারণায় এক ঝাঁক কণিকার সমাবেশ বলতে পার। এখন থাক সে কথা।


নানা বর্ণের আলোক রশ্মি আসলে নানা প্রকারের কণিকার প্রবাহ। নিউটনই আলোক রশ্মিকে প্রীজমের মধ‍্যে দিয়ে পাঠিয়ে আলাদা করে দেখিয়ে ছিলেন। চুম্বক ঐ নানা বর্ণের আলোক রশ্মির ওপর ভিন্ন ভিন্ন প্রতিক্রিয়া দেখায়। এই যেমন লাল বর্ণের আলোক রশ্মি চুম্বক দ্বারা বেশি আকর্ষিত হয়। কারণটা খুবই সাধারণ। এতে লোহার কণা থাকে তাই। এই ভাবে বিশেষ বিশেষ পদ্ধতিতে আলোর কণা গুলিকে আলাদা করে দিয়ে আমি আমার পছন্দ মত আলোক রশ্মি টিকে কাজের জন‍্য বেছে নেবার পদ্ধতি অবলম্বন করে থাকি। একেই আলোক বিশ্লেষণ বলে থাকি। 


সন্ধ্যা হবার কিছুটা আগে যখন সূর্য অনেকটা দূরে সরে গেছে। তার থেকে নির্গত আলো বেঁকে তেরছা হয়ে ধেয়ে আসছে আমার কাছে। সে আলোর বেগ অনেক কমে গেছে। ঠিক তখনই কিছুটা আলো আমি ধরে নিলাম আমার আলোর ফাঁদ যন্ত্রে। এটি আমার তৈরী এক বিশেষ যন্ত্র। যেটিতে আলো ধরে রাখা যায়।


সকলেই জানে আলো প্রতিফলিত হয়। এবং দর্পণে তা অনেকটাই বেশি পরিমানে হয়ে থাকে। কতগুলো দর্পণকে বিশেষ কোনে স্থাপন করে তাতে আলো ফেললে। সেই আলো যদি সর্বদা এই সকল দর্পণের মধ‍্যে প্রতিফলিত হতে থাকে। তো সে আর কখনো প্রকৃতিতে মুক্ত হতে পারে না। তৈরী ঐ যন্ত্রে আটকা পড়ে থাকবে অনন্ত কাল। প্রয়োজন মত তুমি কোন একটি দর্পণকে সরিয়ে আলোকে ফাঁদ মুক্ত করে ব‍্যবহার করতে পারবে। আমি তাই করি। প্রয়োজন হলে আলো ধরে রাখি আর প্রয়োজনে সেই আলোকে কাজে ব‍্যবহার করে থাকি। আজ


দিন শেষ হবার আগে আমি কিছুটা আলো তাই ধরে নিলাম আমার আলোক ফাঁদ যন্ত্রে। এবার রাত ঘনিয়ে এল। আমি আমার অদৃশ্য কাঁচ ঘরেই সময় কাটিয়ে চলেছি। যন্ত্রের সঙ্গে যন্ত্র সাজিয়ে নজর দিয়ে বসে আছি। অদৃশ‍্য কাঁচ ঘর এমন কিছুই না। আলোর প্রতিফলন ধর্মকে কাজে লাগিয়ে গড়ে তোলা। 


বস্তু থেকে আলো বেরিয়ে আমাদের চোখে এসে পড়লে আমরা সেই বস্ত টিকে দেখতে পাই। সেই আলো বস্তুর নিজের দহনের আলো হতে পারে আর হতে পারে অন‍্য কোন উৎসের আলো। যা তার গায়ে প্রতিফলিত হয়ে ছোটে চলেছে । যখন বস্তু আলো প্রতিফলন করে এবং সেই আলো কারো চোখে ফিরে না আসে। তবে সেই বস্ত টিকে আর দেখা যাবে না। আমার কাঁচ ঘরের সূক্ষ্ম কাঁচের দেওয়াল ভেদ করে আলো আনায়াসে ভেতরে চলে আসতে পারে প্রতিসৃত হয়ে। যৎ সামান‍্য যা কাঁচের দেয়ালে বাধা পেয়ে প্রতিফলিত হয় তা চোখে মালুম হয় না। আর ঐ প্রতিসৃত আলোক রশ্মি গুলিকে দর্পন দ্বারা বিশেষ কোনে প্রতি ফলিত করে একত্রিত করে এক বিশেষ কোনে মহাকাশে মুক্ত করে দিয়ে থাকি। ফলে আসে পাশের কেউ আমার ল‍্যাব দেখতে পায় না। উপর থেকে দেখলে আগুনের গোলা বলে মনে হয় । তাই ভয় পেয়ে উড়ন্ত কোন কিছুই এখানে উপর দিয়ে যায় না। সন্দেহের বসে অনেকে সে দৃশ‍্য দেখার পর খোঁজ করতে এসেছিল কিন্তু নীচে এসে দেখলে তারা কিছুই খুঁজে পায় নি। তবে আমার যন্ত্রটি পেলে তারা খুঁজে পাবে। আমি বাহিরে কোথাও গেলে এটিকে সঙ্গে নিয়ে যাই। নইলে আমি নেজেই আর ল‍্যাব খুঁজে পাব না। এটি এক প্রকার ডিটেক্টর। ল‍্যাবের মধ‍্যে থাকা এক বিশেষ যন্ত্রের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে বাইরে থেকে এর অবস্থান জানতে সাহায‍্য করে। অবস্থান সূচিত হবার পর আমি কম্পাসে দিক নির্ণয় করে ল‍্যাবের ভেতরে প্রবেশ করি। ভেতরে ঢোকার পর সব কিছু দৃশ‍্যমান হয়ে পড়ে। এটি তৈরীর মেকানিজম আমি লিখছি না। তাহলে সকলে বানিয়ে আমার ল‍্যাব খুঁজে বের করবে। আমি বড় বিরক্ত বোধ করব। 


যদিও রাতে সূর্য আলো দেওয়া বন্ধ করে দেয় না। মনে করলে আমি স‍্যাটেলাইটের দ্বারা প্রতিফলিত আলোকে গ্রহণ করে কাজে লাগাতে পারি। অনেকে একটা কথা ঠিক বুঝতে পারে না। যে আকাশে সূর্যের আলো ছড়িয়ে থাকলেও আকাশ রাতে কালো থাকে কেন? আসলে আলো প্রতিফলিত বা প্রতিসৃত হয়ে আমাদের চোখে না আসলে আমরা উৎস বা প্রতিফলককে দেখতে পাবো না। কারণ আলোক রশ্মিকে চোখে দেখা যায় না। তাই আকাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা আলোক রশ্মিগুলো কোথাও প্রতিফলিত বা প্রতিসৃত হয়ে আমাদের চোখে আসে না। তাই কিছুই দেখা যায় না। সে যাক।


রাতে আলোর ফাঁদে থেকে আলো নিয়ে একটা আলাদা যন্ত্রে একটু নাড়াচাড়া করলাম। কোন লাভ হল না। কারণ তার সূর্যের সঙ্গে সংযোগ সূর্য থেকে অনেক আগেই বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। তাই তার চলার পথ আর সূর্য পর্যন্ত বিস্তৃত নেই। সেই আলো সূর্যকে প্রত‍্যক্ষ করাতে পারছে না। এবার আর প্রতিফলিত আলোকে উৎস খোঁজায় ব্রতি হলাম না। জানি সে কাজ ভষ্মে ঘি ঢালার মত হবে। আগুনও জ্বলবে না আর ঘি টুকুও নষ্ট হবে।


পরের দিন সকাল হলেই আবার বসে পড়লাম টেবিলে সৌর খোঁজের কাজে। একেবারে সকাল এখনো সৌর কিরণ এখানে এসে পড়ে নি। দেখি বড় একটি মেচলার মত সূর্য সবে উঠে আসছে উপরের দিকে। যেন মনে হয় জ্বলন্ত কয়লা। একেবারে টক টকে লাল হয়ে জ্বলছে। দেখে মনে হয় না সেটি পৃথিবীর থেকে বড়। ধীরে ধীরে তাকে কাছে টেনে এনে বড় করতে থাকলাম। ক্রমে বড় হচ্ছে একটা ঘরের মত বড় হয়ে গেল। আরো বড় করতে লাগলাম। এবার একটা গোটা গ্রামের মত হয়ে পড়ল। তখন তাতে সৌর কলঙ্ক খুঁজতে শুরু করলাম। কিচ্ছু পাওয়া গেল না। তাকে আরো বড় করতে করতে একেবারে হাতের কাছে ছুঁয়ে ফেলার মত কাছে নিয়ে চলে এলাম। এবার তার দেহে আমাদের ঘরের মত এতটুকু জায়গা দেখতে কয়েক ঘন্টা সময় লেগে যাচ্ছে। এতটাই বড় করা হয়ে গেছে তার দেহটি। ভেবে দেখলাম তাহলে তো গোটা গ্রামের মত একটা অংশ স্থান পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে পর্যবেক্ষণ করতে বহু সময় লেগে যাবে! সম্পূর্ণ তার দেহের পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে খোঁজ করতে সারাটা জীবন লেগে যাবে! তাই তার আকার কিছুটা ছোট করে নিলাম। ছোট করতেই এক অদ্ভূত দৃশ‍্য নজরে পড়ল! 


দেখলাম একটা আগ্নেয়গিরি! তার জ্বলা মুখ দিয়ে অগ্নুৎপাৎ হচ্ছে। কোন লাভার নির্গমন হচ্ছে না। বড় বড় জালার মত আগুনের গোলা নির্গত হয়ে ছুটে আসছে আমাদের দিকে। কয়েকটা তো আমাকে লক্ষ‍্যঃ করে ছুটে এল! আমি ভয় পেয়ে গেলাম! দেখলাম সেগুলি ঠিক যেন আমার মাথার উপর এসে আছড়ে পড়ছে। আমি জানি ওতে আমার কোন অসুবিধা নেই। আমি আমার ল‍্যাবের চারিদিকে অদৃশ‍্য লেজার শিল্ড প্রোটেকশন চালু করে রেখেছি। বড় ধুমকেতু এসে আছড়ে পড়লেও কিছু হবে না। তবে সূর্য এসে আছড়ে পড়লে কী হবে বলতে পারবো না। হয়তো কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তবে সেটি যে হবার না তা আমি ভাল মত জানি। আর আমি তো কেবল আমার কথা ভাবি না। পার্থিব সকল জীব জগতের কথা আমাকে ভাবতে হয়। ঐ আগুনের ছুটে আসা গোলা আমার কোন ক্ষতি না করলেও পার্থিব বাকি সব কিছুর ক্ষতি করছে। মনে মনে তাই খুব ভয় পেয়ে গেলাম। সঙ্গে সঙ্গে ল‍্যব থেকে বাহিরে বেরিয়ে এলাম দেখার জন‍্য। এই কথা ভেবে যে ঐ ধেয়ে আসা আগুনের গোলা গুলো আসে পাশের পরিবেশের কতটা ক্ষতি করছে। বাহিরে বেরিয়ে এসে অবাক হয়ে গেলাম! কোথায় সেই ছুটে আসা আগুনের গোলা? কোথাও কিচ্ছু তো নেই! পরিবেশের এতটুকু ক্ষতি তো কোথাও হয় নি! চারি পাশে গাছ পালা জীব জন্তু সব কিছুই বহাল তবিয়তে রয়েছে। 


বরং রৌদ্রে ঝলমল করে গাছেরা যেন খিল খিলিয়ে হাসছে। দিঘির জল হালকা সেই রোদে তাথৈ তাথৈ নৃত‍্য করছে। পানকৌড়ী মনের আনন্দে টুপ টুপ করে জলে ডুব দিচ্ছে। প্রকৃতিতে মহা সমারোহ। এতটুকু বিমুর্ষতার চিহ্ন কোথাও চোখে পড়ল না।


মনে সনন্দেহ হল! তবে কী আমি যন্ত্রে ভুল দেখলাম! আমার যন্ত্র কী সঠিক দিশা দেখাতে পারছে না?মনটা ভাবনায় ভরে গেল। সমস‍্যাটি কী খুঁজে নেবার চেষ্টা করলাম। অনেকক্ষণ ভেবে একটা আন্দাজ করলাম তবে একবার পরখ না করে একেবারে নিশ্চিত হলাম না। 


আবার গিয়ে বসলাম ল‍্যাবের ভেতরে আমার চেয়ারে। এবারে মন টাকে শান্ত করে চেয়ে দেখলাম সূর্যের দিকে তাক করে থাকা টেলিস্কোপের মুখে লাগানো স্ক্রীন টার উপর। প্রত‍্যক্ষ করলাম আবার সেই দৃশ‍্য। ঝাঁকে ঝাঁকে সেই ভাবেই আগুনের গোলাগুলো সূর্যের দেহের আগ্নের গিরির জ্বালা মুখ দিয়ে ছিটকে বেরিয়ে আসছে আমার দিকে। যেন ছড়িয়ে পড়ছে সর্বত্র! তখনও ঠিক ভাবে আমার মাথায় আসছিল না কেন এমন দেখতে পাচ্ছি? অনেক ভাবনা চিন্তার পর বুঝতে পারলাম আসল সত‍্য টিকে! প্রত‍্যক্ষ করলাম কোয়ান্টাম তত্ত্ব! শক্তির কণা গুলো দল বেঁধে নির্গত হয় উৎস থেকে। আর এ তো সেই ঘটনা। এগুলো আলোর কণা ফোটন। আমার ম‍্যাগনিফাইং গ্লাসে সেই অতিব সূক্ষ্ম ফোটন কণা গুলিকে এত বিশাল আকারে দেখাচ্ছে। তাই আলোর কণার নিক্ষেপকে গোলা বর্ষণ বলে মনে হচ্ছে। আমার যন্ত্রে এতটাই বর্ধিত করা সম্ভব হয়েছে যে আলোর ঐ তীব্র গতিও ক‍্যামেরায় ধীর গতি সম্পন্ন মনে হচ্ছে। সিনেমার পর্দায় যেমন স্লো মোশনে ছবি দেখা যায়। এখানে তেমন সর্বোচ্চ গতিতে ছুটে চলা আলোক কণাদের একটি সিধারণ কণার মত গতি শীল দেখাচ্ছে। কী আশ্চর্য! এমনটাও হতে পারে? তাহলে পরমাণুর নিউক্লিয়াসের চারিদিকে যে ইলেকট্রন গুলো প্রচণ্ড গতিতে ঘুরে বেড়ায় তাকেও তো একটি স্বাভাবিক গতিতে কেন্দ্রকের চারিদিকে ঘুরে বেড়াতে থাকা কণার মত দেখাবে? পরমাণু পর্যবেক্ষণের একটা খুব ভাল দিক উন্মোচন হল আমার কাছে এই গবেষণা করতে গিয়ে। সেই নিয়ে আর এক সময় কাজে বসা যাবে। এই অভাবনীয় দৃশ‍্য সচক্ষে দেখে


একবার মনে হয়েছিল এই দৃশ‍্য আমি বৈজ্ঞানিক সমাজকে প্রত‍্যক্ষ দর্শন করাব। কিন্তু সেটি যে সম্ভব না। আমার এই ল‍্যাবরেটরী আর যন্ত্রের সেটাপ ছাড়া এই দুর্লভ দৃশ‍্য দেখা অসম্ভব। সেটি যে দ্বিতীয় কোথাও সেট করা যাবে না। আর আমার ল‍্যাবের সন্ধানও কাউকে দেওয়া যাবে না। একটা প্রমাণ স্বরূপ এই লেখাটি রাখলাম। তাতে যে যা বোঝে বুঝুক। অসত‍্য বলে মনে করে করুক। তবে কেউ কেউ সত‍্য বলে মনেও তো করতে পারে? তাদের উদ্দেশ্যে জানিয়ে রাখি আমার এই উক্তি যথার্থ সত‍্য এবং সচক্ষে দেখা বর্ণনা। এটিকে বিশ্বাস করে গবেষণায় লেগে থাকলে সাফল‍্য আসবেই।


এবার মনে এল আলোর কণা গুলো অগ্নুৎপাতের মত নির্গত হচ্ছে ঠিকই। তাবে তা সূর্যের দেহের সমগ্র তল থেকে নির্গত হচ্ছে না। তার দেহের কোথাও কোথাও টর্চ জ্বেলে রাখার মত এমন আগুনের গোলা বের করার আগ্নেয়গিরি রয়েছে। আর বাকি বেশির ভাগ অংশটাই ফাঁকা। আমাদের পৃথিবীর মাটির মত। সমগ্র পৃথিবীর বুকে কয়েকটা মাত্র আগ্নেয় গিরি আছে তাও আবার সব গুলি জ্বলন্ত নয়। বেশির ভাগ দেহ তলই ফাঁকা। তবে আমাদে দেহ তলের মত এতটা ফাঁকা নয় সূর্যের দেহ তল। তবে সমগ্র তল যেমন আগুনের গোলা বলে মনে হয়। সূর্যের সেই দেহ তল তেমনটি না। সেখানে পাহাড় পর্বত ঘর বাড়ি সব রয়েছে। বড় বড় গর্তও রয়েছে চাঁদের মত। যেখানে কোন আগ্নেয় গিরি নেই তাই আলো জ্বলে না। বাহিরে কোথাও থেকে আলো পৌঁছে গেলেও সে আলো আর ফিরে আসে না কোথাও। তাই কালো হয়েই থাকে সব সময়। এই কালো অংশ গুলো হল সৌর কলঙ্ক।আমরা এগুলো খুব একটা দেখতে পাই না। কারণ সৌর ঝড় আর সূর্যের আবর্তণ গতির জন‍্য। 


সূর্যের দেহে ঝড় বয়ে চলেছে প্রবল বেগে সর্বক্ষণ। সে ঝড় আলোর কণা গুলিকে তাড়িয়ে নিয়ে বেড়ায় তার দেহে সর্বত্র। তাই সে দিকে তাকালে ও সব আর দেখা যায় না। শুধু জ্বলছে সারা দেহ বলে মনে হয়। যদিও এর জন‍্য বহুলাংশে দায়ী তার আবর্তণ গতি। পৃথিবীর মত সূর্যও তার নিজের অক্ষের চারিদিকে পোঁ পোঁ করে ঘুরছে। এতটাই তার বেগ যে মুহুর্তের মধ‍্যে আগ্নেয় গিরির জ্বলা মুখ আবার ঘুরে আসছে চোখের সামনে এক পাক ঘুরে। তাই সব সময় ঐ জ্বলা মুখই আমাদের চোখে ধরা দেয়। অনেকটা চরকা বাজি মত ঘটনা বলে মনে করতে পার। চরকার মুখে আগুন জ্বেলে দিলে সে বোঁ বোঁ করে ঘুরতে থাকে। দেখে মনে হয় তার দেহের সর্বত্র দিয়েই আগুন জ্বলছে যেন। আদৌ তাই কি জ্বলে? এমন ঘোরার গতি আমাদের মনে করতে বাধ‍্য করায় তার এমন সর্ব দেহ জ্বলমান অবস্থার কথা। 


তাই সূর্যের সারা গায়ে আগুন জ্বলছে বলে দেখালেও আদৌ তার সারা গায়ে আগুন জ্বলছে না। তার দেহের বিস্তৃত জায়গা রয়েছে ফাঁকা পড়ে। সেখানে বাস করে সৌর মানব। আমাদের থেকে দীর্ঘাকায় ও সোনার মত তাদের গায়ের রং। সোনা রদ্দুরের দেশে বাস করে বলে হয়তো এমনটা হয়েছে। পরিবেশের প্রভাবে এমনটা হয়ে থাকে। ইন্ডাস্ট্রিয়াল মেলানিজম বলে একটা ব‍্যাপার আছে। আমরা অনেকেই জানি। যেখানে এক এক ইন্ডাস্ট্রি অঞ্চলে ঐ ইন্ডাস্ট্রির জন‍্য বিশেষ পরিবেশ গড়ে ওঠে। সেই পরিবেশে খাপ খাইয়ে নেবার জন‍্য জীব দেহে নানা রকম পরিবর্তন ঘটে থাকে। একেই ইন্ডাস্ট্রিয়াল মেলানিজম বলে। সূর্যের বাসিন্দাদের ঐ রকম সোনালী গড়ন হয়েছে সোনালী রদ্দুরের জন‍্য। আর দেহের আকার বড় হবার কারণ ওদের আবর্তন গতি। যেমন আমাদের বিষুব রেখার বা তার আসে পাশের অঞ্চলে থাকা লোক গুলোর আকার বেশ বড়। ততার পর অক্ষাংশ কমার কারণে আকার কমতে থাকে। অক্ষাংশ কমতে থাকলে তার আবর্তন গতিবেগ ও কম হয়। তাই বাহিরের দিকে ছিটকে যাবার বেগও কম হয়। অর্থাৎ কেন্দ্রাতিগ বল মানুষের লম্বা হয়ে বেড়ে ওঠার পক্ষে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। বল যত বেশি হবে তত তাকে খাঁটো করে দেবে। এটিকে অভিকর্ষ বলা হয়। অভিকর্ষের টান কাটিয়ে মানুষ কে বড় হতে হয়। মেরু দেশে মানুষের ওপর অভিকর্ষ টান বেশি তাই তারা লম্বা বেশি হতে পারে না। তাই বলে ঐ একটি কারণ শুধু লম্বা হবার জন‍্য দায়ী তা বলা যাবে না। অনেক কারণের মধ‍্যে এটিও একটি কারণ। না হলে গোর্খা জাতিদের বেঁটে হবার কারণ আর গাণিতিক হিসাব নিয়ে সংশয় দেখা দেবে। কারণ ঐ একই অক্ষাংশে পাহাড়ের মাথায় আর ঠিক সেই পাহাড়ের নীচের মানুষদের আকারের উল্টো পরিণতি ঘটবে কেন? সেখানে তো পাহাড়ের ওপরে বসবাসকারী গোর্খাদের লম্বা আর নীচে বসবাসকারী দের বেঁটে হবার কথা। এখানে আর একটা যে সত‍্য লুকিয়ে আছে তা বলে রাখি। তাহল অস্বাভাবিকতা। মানুষের ভর অনুযায়ী পৃথিবীর একটি নির্দিষ্ট অঞ্চল তার জন‍্য বরাদ্দ আছে। সেই অঞ্চলের নীচের দিকে বা ওপরের দিকে বাস করলে তার শরীর একটা অস্বভাবিকতা অনুভব করে। ফলে সে স্বাভাবিক ছন্দে নিজেকে মেলে ধরতে পারে না। তখন তার সমস্ত চরিত্রে বৈশিষ্ট্যগত নানা পার্থক‍্য গড়ে ওঠে যেটি তাকে ঐ পরিবেশে মানিয়ে নিতে সাহায‍্য করে। এখন থাক ও কথা। কী আশ্চর্য! সূর্যের দেশে মানুষ!


সেখানে মানুষ দেখে উৎসাহ আরো বেড়ে গেল। আরো ভাল করে খোঁজ করতে থাকলাম সেখানের মাটি। কী আশ্চর্য! তাল তাল সোনায় পাহাড় তৈরী করে রেখেছে সেখানে! আমরা একটু সোনার টুকরোর জন‍্য হাপিত্তেষ করে মরছি।আর সেখানের লোকে সোনা পা দিয়ে মাড়াচ্ছে। সোনার ওপর দিয়ে হেঁটে বেড়াচ্ছে। সোনার বাড়ি তৈরী করে তাতে বাস করছে। আরো একটু লেন্সটি সরিয়ে নিয়ে গিয়ে দেখলাম সাদা কিসের যেন পাহাড় রয়েছে মনে হল। প্রথমে মনে হয়ে ছিল অভ্র। তার পরক্ষণেই বুঝলাম সেটি অভ্র না। সে তো হালকা ধাতু। তার তো ওখানে হাওয়ায় ভেসে বেড়ানোর কথা। তবে এটি কী? প্লাটিনাম নয় তো?



আলোর দ‍্যুতি পরীক্ষা করে দেখলাম যে ঠিক তাই। যা মনে ভেবেছিলাম!সেটি প্লাটিনামের পাহাড়। ওরে বাবা! এত বড় প্লাটিনামের পাহাড়! এ মুলুকে থাকলে না হয় এক ধামা নিয়ে ঘরে রেখে দিতাম। এখানে তো ওটি সহজে পাওয়া যায় না তাই বেশ দামি ধাতু। তার পর নজর পড়ল এক ঝকঝকে গাছের ওপর। ঠিক যেমন বড় দিনে আমাদের এখানে গাছকে সাজিয়ে বানানো হয় তেমন ঝকছে কিন্তু কোথায় বাতি লাগানো তা দেখতে পাচ্ছি না। বেশ কিছুক্ষণ পর্যবেক্ষণ করে তবে বুঝলাম যে সেটি কোন সাজানো গাছ নয়। ওটি ওখানের স্বাভাবিক গাছ। আমাদের যেমন সবুজ পাতার গাছ হয় ওখানে তেমনই গাছ তবে তার পাতা সবুজ না। রোদের মত সোনালী। 


সাধারণ টেলিস্কোপে এ সব কিছুই দেখা যায় না। ওরা তো দৃষ্টিকে আলোক বলয় ছাড়িয়ে ভিতরে নিয়ে যেতে পারে না। তাই ও সব টেলিস্কোপে সূর্যকে জ্বলন্ত আগুনের গোলা বলে মনে হয়। আলোক বলয় তেমন বিশেষ কিছু নয়। অপেক্ষা কৃত ভারি আলোর কণা গুলো দেহ থেকে নির্গত হয়ে বেশি দূর পর্যন্ত ছুটে যেতে পারে না। কিছুটা দূরে গিয়ে তারা একটা নির্দিষ্ট অঞ্চলে অবস্থান করে সূর্যের মূল দেহকে বেষ্টন করে আবর্তন করতে থাকে। ঠিক যেমন শনির বলয়। শনির বলয় তো ঘন ধুলি কণার স্তর। যেটি তার দেহের চারি পাশে বলয়ের মত ঘুরতে থাকে। নানা ভরের ছোট ছোট কণা সেখানে ভীড় করে এমন বলয় গঠন করেছে। সূর্যের দেহের চারি পাশেও তেমন ভারি আলোর কণার স্তর ঘুরে বেড়িয়ে আলোক বলয় গঠন করে। সূর্যের দেহ থেকে নির্গত সূক্ষ্ম আলোর কণা গুলোই প্রচন্ড গতিতে ঐ আলোক বলয় ভেদ করে বাহিরে বেরিয়ে আসে। সেই সূক্ষ্ম রশ্মিকে অনুসরণ করা সাধারণ টেলিস্কোপের ধরা ছোঁয়ার বাহিরে। এমন কি হাবল টেলিস্কোপেও তাকে ধরতে পারবে না। যদি পারতো তো ওদেরকে পদ্ধতি বলে দিয়ে তা প্রত‍্যক্ষ দর্শন করাতাম। 


অনেকে বলে থাকেন সূর্যের দেহে এত উত্তাপ ওখানে জীবন থাকা সম্ভব না। তাই গাছ পালা মানুষ এ সব কিচ্ছু নেই। তারা যে এত বোকার মত কথা বলে তা বলে বোঝাতে পারবো না। আগেই তো বললাম যে সূর্যের দেহে সর্বত্র আগুন জ্বলছে না। তাই যেখানে আগুন জ্বলছে না সেখানে জীব থাকতে পারে এবং আছে তা আমি প্রত‍্যক্ষ করলাম। আগুন তো অল্প কিছু জায়গাতে জ্বলছে। সেই আগুন ঝড়ে ছড়িয়ে পড়ছে দেহের অন‍্যত্র। তাই সূর্যের সমগ্র দেহ জুড়ে আগুন জ্বলছে বলে মনে হয়। সেখানের উত্তাপ যতটা মনে করা হয় ঠিক ততটা নয়। তবে আমাদের এখানের থেকে সেখানের উত্তাপ অনেক বেশি। তাই বলে ঠিক ততটাও না যতটা আমরা অনুমান করি অসহ‍্য বলে। আমরা তো জানি আগুনের কাছে পাশাপাশি যতটা হাত নিয়ে যাওয়া যায় উপর থেকে ততটা কাছে হাত নিয়ে যাওয়া যায় না। ঘূর্ণনে অপ কেন্দ্রিক বলের কারণে ঐ ফোটন কণা গুলি ঘূর্ণন কেন্দ্রের বিপরীতে ছুটে চলে যায়। তাই উপরের দিকে হাত বেশি কাছে আনা যায় না। ঐ কণারা তাদের চলার পথে বাধা পছন্দ করে না। যদি কোন বাধা চলার পথে পড়ে তবে তাকে হয় বিদ্ধ করে ফুঁড়ে বেরিয়ে যায়। নতুবা সে নিজে তার গায়ে ধাক্কা মেরে প্রতিফলিত হয়ে অন‍্য দিকে চলে যায়। আরো একটা কথা বলতেই হয়। যে মরুতে বা মেরুতে জীবেরা বসবাস করতে পারবে বলে আমরা কখনো ভেবেছিলাম! না তো? অথচ সেখানে জীব রয়েছে। মরুতে বিষাক্ত বালি বোড়া সাপ। কাঁকড়া বিছে ইত‍্যাদিরা উষ্ণ বালির ভেতরে বেশ আরামেই থেকে যাচ্ছে। আর মেরুর প্রচন্ড ঠান্ডায় ক্রায়োজেনিক্স ছত্রাক আর শৈবাল তো রয়েইছে। সঙ্গে মানুষও রয়েছে। এস্কিমো। কেউ ভেবেছিল এ সব কথা! তবে এরা সকলে ঠিক আমাদের মত না। শিতের দেশের পাখি পেঙ্গুইন কে যেমন গরমের দেশে নিয়ে গেলে তাকে তার মত ব‍্যবস্থা নিয়েই নিয়ে যেতে হবে। তেমনই অস্ট্রিচ এমু এদেরকে বরফের দেশে নিয়ে যেতে গেলে তাদের তার মত পরিবেশ গড়ে নিয়ে যেতে হবে। অর্থাৎ শিতের পাখিকে গরমের দেশে নিয়ে গেলে তাকে শিতের পরিবেশ তৈরী করে সেখানে রাখতে হবে। আর গরমের পাখিকে শিতের দেশে নিয়ে গেলে তাকে গরমের বাঁসা বানিয়ে সেখানে রাখতে হবে। ঐ দুই পরিবেশের পাখি দুটি তাদের পরিবেশে বেঁচে থাকতে পারলেও বিপরীত পরিবেশে বেঁচে থাকতে পারে না। তাই বলে গরমের পাখি কী মনে করতে পারে যে শীতের দেশে কোন পাখি বাস করতে পারে না? ওদের ক্ষেত্রেও তাই। সূর্যের দেশের জীবেরা তারা তাদের পরিবেশে বসবাস করায় অভ‍্যস্থ জীব থাকে। তারা গরম সহ‍্য করতে পারে। আবার আমরা অপেক্ষা কৃত ঠান্ডার ভূখণ্ডে বাস করি ওদের মত গরমে থাকতে পারবো না। তাই বলে ওখানে জীব থাকতে পারে না বলে আমাদের মনে করাটা কল্পনা। এটিকে বৈজ্ঞানিক সত‍্য বলে মেনে নেওয়া যাবে না। তবে বিজ্ঞান তো না দেখে সহজে বিশ্বাস করবে না। আমি দেখেছি ফলে সেটিই প্রমাণ এই কথা কেউ মেনে নেবে না। তাদেরকে হাতে নাতে দেখিয়ে দিয়ে প্রমাণ দিতে হবে যে আমার কথা সত‍্য। সেটি যে করা সম্ভব না তা আমি আগেই স্বীকার করেছি। তাই আমার এই নিজের সচক্ষে দেখা ও তার সম্পর্কে লেখা বিবরণ সকলে বিশ্বাস করতে চাইবে না। সে যাই হোক ওরা বিশ্বাস না করে করুক তাই বলে আমার চোখের দেখা সত‍্য তো আর মিথ‍্যা হয়ে যাবে না। আরো একটু মনযোগ দিয়ে সূর্যের দেহ তল পর্যবেক্ষণ করছি। নানান দৃশ‍্যের মাঝে


এ বার আরো একটা অদ্ভূত দৃশ‍্য দেখতে পেলাম। সেই দৃশ‍্য আমাকে কেবল অবাক করে দিল না বরং এক বিশেষ ভাবনার মধ‍্যে ঠেলে দিল। আমি ঠিক নাস্তিক না হলেও আস্তিক বলতে পারবো না। অর্থাৎ আমি ধর্মকে তেমন অবিশ্বাস না করলেও তেমন বিশ্বাস করি তা বলা যায় না। তাই এই দৃশ‍্য দেখে দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়লাম! তবে কী পুরাণ কাহিনী সব সত‍্য! তবে কী দেবতা আর অসুরেরা এখনো জীবিত? এখনো কী তাদের মধ‍্যে ঘটে চলেছে মহা সগ্রাম! এমন কথা মাথার মধ‍্যে ভীড় জমাতে থাকছে। যখন দেখলাম সেখানে রয়েছে দু প্রকার মানুষ! কাল আর সাদা যেটি সোনালী দেখায়।


এক দল কালো যারা দল বেঁধে থাকে ঐ অন্ধকার ময় কালো গহ্বরে। আর এক দল সোনালী মানুষ যারা থাকে আলোর দিকে জড়ো হয়ে। এখন বুঝতে পারলাম তাই আলো এত উজ্বল আর অন্ধকার এতটা কালো।


তাকিয়ে আছি ঐ দিকে। দেখি ঘন কালো অন্ধকারে ভিতর থেকে বিশাল দৈত্যাকার কিম্ভূত কিমাকার সব মানুষ বেরিয়ে আসছে। হাতে তাদের অস্ত্র। তারা এগিয়ে চলেছে আলোর দিকে। সেই আলোর দিকেও চলছে তোড়জোড়। আলো আর আঁধারের দুটি দল। তারা পরস্পরের শত্রু। দিন আর রাতের মত। অসুর আর দেবতাদের মত। এখনি বোধহয় বেধে যাবে যুদ্ধ যা অনন্ত কালের আলো আঁধারের বিরোধ। কেন? কিসের জন‍্য যুদ্ধ তা জানি না। বোধহয় অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই। একে অপরকে পরাস্ত্র করে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চায় সে জগতে। তাই আঁধার আলোকে গ্রাস করতে চায় সর্বদা। আর আলো অন্ধকারকে প্রতি হত করে চলেছে সর্বদা। একজন হল ধ্বংসের প্রতীক। আর অন‍্য জন সৃষ্টির। আমি অহিংস। হিংসাকে পছন্দ করি না আর প্রশ্রয় দিই না। তাই আমার ওই যুদ্ধ দেখার আর আগ্রহ থাকলো

 না। আমি চোখ সরিয়ে নিলাম টেলিস্কোপ থেকে।


ছেলেবেলা - সত্যেন্দ্রনাথ পাইন || Chelebela - Satyendra nath Paine || ছড়া || Rhyme || Bengali Poem || Poetry || বাংলা কবিতা

    ছেলেবেলা

        সত্যেন্দ্রনাথ পাইন


            বৃষ্টি আমার ফিরিয়ে দিও

                  সেই ছোট্টবেলা

             তোমায় ভিজে খুনসুটিতে

                কাটতো বিকেলবেলা ।


    

আজকে আমি দাঁড়িয়ে আছি 

   শুনতে তোমার গান

ভিজে যাওয়া স্বপ্ন দেখতে

   মন করে আনচান ।


           মায়ের বকুনি বাবার হাত

                 আর ভিজে যাওয়া মন

          কত আপন ছিল সেসব

                  আজ খুঁজি সারাক্ষণ।     



 আষাঢ় মাসে একবার তুমি

        এলে যখন ভাই

 দাওনা জুগিয়ে মনের ফসল

        পাকুড়তলায় যাই।।


বৃষ্টি তুমি বাদল বরষ

    ফিরিয়ে দিও অতীত

 যখন মোরা পুকুর ঘাটে

   করতাম বেসুরো সঙ্গীত।।


আজ আমি বড় হয়েছি

    কেউ শোনে না কথা

তুমি মনে করিয়ে দিও সেই 

       ক্ষত দিনের ব্যথা ।।


ছেলেবেলা তুমি কি গো

    নিশ্ছিদ্র আলপনা?

আঁকা ছবির শুটিং শুরু

    পুতুলের ভেঁপু বাজনা।।

ছেলেবেলার সেকাল একাল - রাসমণি ব্যানার্জী || Chelebelar sekal ekal - Rashmoni Banerjee || ছড়া || Rhyme || Bengali Poem || Poetry || বাংলা কবিতা

 ছেলেবেলার সেকাল একাল

    রাসমণি ব্যানার্জী



তখন ছিল ছেলেবেলা

 বড় মধুর মধুর

এখন সবার ছেলেবেলা

 এক চিলতে রোদ্দুর।


এখন কচিকাঁচা গুলো

লেখা পড়ার সাথে,

গেমে মত্ত হয় নিত্য

দেখি গভীর রাতে।


তখন ছেলেবেলা মানে

পড়াশোনা আর দুষ্টুমি

এখন ছেলেবেলা মানে

শুধুই গোঁয়ারতুমি ।


তখন ছেলেবেলা মানেই

দুটো কঞ্চির অসি 

এখন ছেলেবেলা কাটে

কম্পিউটার বসি।


চু-কিৎ কিৎ লুকোচুরি

তখন ছিল বেশ

ছেলেবেলা এখন কোথায়

সবটা নিরুদ্দেশ।