Tuesday, December 21, 2021

ইন্ডিয়ান অ্যাগ্রিকালচারাল রিসার্চ ইনস্টিটিউটে ৬৪১ টেকনিশিয়ান নিয়োগ || Indian Agricultural research Institute recruitment 2022 || government jobs news 2022

 

মাধ্যমিক ছেলে মেয়ে দের জন্




***ইন্ডিয়ান অ্যাগ্রিকালচারাল রিসার্চ ইনস্টিটিউটে ৬৪১ টেকনিশিয়ান***




আই.সি.এ.আর. ইন্ডিয়ান অ্যাগ্রিকালচারাল রিসার্চ

 ইনস্টিটিউট সারা ভারতের বিভিন্ন রিজিওন্যাল অফিসে

 কাজের জন্য ‘টেকনিশিয়ান (T-1)' পদে ৬৪১ জন

 ছেলেমেয়ে নিচ্ছে। 


মাধ্যমিক পাশরা আবেদন করতে পারেন।

বয়স হতে হবে ১৮ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে। তপশিলীরা ৫

 বছর, ও.বি.সি.'রা ৩ বছর ও প্রতিবন্ধীরা যথারীতি বয়সে

 ছাড় পাবেন।


মূল মাইনে : ২১,৭০০ টাকা।


শূন্যপদ : ৬৪১টি (জেনাঃ ২৮৬, ও.বি.সি. ১৩৩,

 সি.ডব্লু.এস. ৬১, তঃজাঃ ৯৩, তঃউঃজাঃ ৬৮)। শূন্যপদের

 সংখ্যা প্রয়োজনে বদল হতে পারে।

এই পদের বিজ্ঞপ্তি নং: 1-1/2021 Recit

 Cell/Technician



প্রার্থী বাছাই হবে লিখিত পরীক্ষার মাধ্যমে। ১০০ নম্বরের

 দেড় ঘন্টার পরীক্ষায় অবজেক্টিভ মাল্টিপল চয়েজ

 টাইপের প্রশ্ন থাকবে এইসব বিষয় (১) জেনারেল নলেজ

 ২৫ নম্বর, (২) অঙ্ক ২৫ নম্বর,

(৩) সায়েন্স ২৫ নম্বর, (৪) সোশ্যাল সায়েন্স ২৫ নম্বর।



দরখাস্ত করবেন অনলাইনে, ১৮ ডিসেম্বর থেকে ১০

 জানুয়ারি পর্যন্ত।


এই ওয়েবসাইটে -- www.iari.res.in 


 বৈধ ই-মেল আই.ডি. থাকতে হবে। এছাড়াও পাশপোর্ট

 মাপের ফটো ও সিগনেচার স্ক্যান করে নেবেন। প্রথমে

 ওপরের ওই ওয়েবসাইটে গিয়ে যাবতীয় তথ্য দিয়ে

 সাবমিট করলেই নাম রেজিস্ট্রেশন হয়ে যাবে। তারপর

 স্ক্যান করা প্রমাণপত্র আপলোড করবেন। তখন পরীক্ষা

 ফী বাবদ নির্দিষ্ট টাকা দেবেন।


আরো বিস্তারিত তথ্য পাবেন এই ওয়েবসাইটেে--

www.iari.res.in


______________________________________________




সম্পূর্ণ বিজ্ঞপ্তি পড়তে নীচের লিঙ্কে ক্লিক করুন-

https://worldsahityaadda.blogspot.com/2021/12/duare-sarkar-new-requirements.html


_______________________________________________



সম্পূর্ণ বিজ্ঞপ্তি পড়তে নীচের লিঙ্কে ক্লিক করুন--

https://worldsahityaadda.blogspot.com/2021/12/sbi-new-recruitment-2022-state-bank-of.html


______________________________________________



সম্পূর্ণ বিজ্ঞপ্তি পড়তে নীচের লিঙ্কে ক্লিক করুন--

https://worldsahityaadda.blogspot.com/2021/12/asha-karmi-recruitment-2022.html

Monday, December 20, 2021

দুয়ারে সরকার প্রকল্পে ১০০০০ কর্মী নিয়োগ || Duare Sarkar new requirements || দুয়ারে সরকার প্রকল্পে নিয়োগ || government jobs news 2022




 **পশ্চিমবঙ্গ সরকারের দুয়ারে সরকার প্রকল্পে 10 হাজার চাকরির ব্যবস্থা**

 

 


এতদিন দুয়ারে সরকার প্রকল্প ছিল একটি সরকারি পরিষেবা

 মাত্র , কিন্তু এবার বেকার যুবক যুবতীদের সরকারি চাকরির

 সুযোগ করে দেবে এই দুয়ারে সরকার প্রকল্প। এই উদ্যোগটি

 গ্রহণ করা হয়েছে কারিগরি শিক্ষা দপ্তরের তরফ থেকে।

 বেকার যুবক যুবতীদের বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ এর মাধ্যমে

 সরাসরি কর্মে নিযুক্ত করা হবে দুয়ারে সরকার শিবিরে।

 আসন্ন এই শিবির টি অনুষ্ঠিত হবে জানুয়ারি মাসে।

 ইতিমধ্যেই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে "ডিরেক্টর অফ

 ভোকেশনাল এডুকেশন এন্ড ট্রেনিং" সংস্থা। কারিগরি শিক্ষা

 দপ্তরের মন্ত্রী শ্রী হুমায়ুন কবীর ইতিমধ্যেই জানিয়েছেন যে,

 প্রথম পর্যায়ে রাজ্যে 10000 কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেবে

 রাজ্য সরকার। কিন্তু পরবর্তীকালে এই কর্মী নিয়োগ সংখ্যা

 আরো বৃদ্ধি প্রাপ্ত হবে।

 



ইতিমধ্যেই এই উদ্যোগ শুরু হয়ে গিয়েছে। রাজ্য সরকার

 একটি অ্যাপ লঞ্চ করেছে যার নাম 'আমার কর্মদিশা'। এই

 অ্যাপ এর একমাত্র লক্ষ্য হল বেকার যুবক-যুবতীদের

 প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সরাসরি কর্মসংস্থানের সুযোগ করে

 দেওয়া। চাকরিপ্রার্থীরা এই অ্যাপ এর ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য

 সংগ্রহ করতে পারবে ও এর ব্যাপারে আলোকপাত করতে

 পারবে আসন্ন জানুয়ারি মাসের দুয়ারের সরকার শিবিরে। ওই

 দুয়ারে সরকার শিবিরে বৃত্তিমূলক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এর শিক্ষক

 ও ইন্সট্রাক্টর থাকবেন যারা চাকরিপ্রার্থীদের বিস্তারিত তথ্য

 দিয়ে সহায়তা করবেন এবং একই সঙ্গে ওই শিবিরে

 কাউন্সিলারের ভূমিকা পালন করবেন। ইতিমধ্যেই জেলাস্তরে

 ও ব্লক স্তরে এই কাউন্সিলরদের 2885 জনের একটি তালিকা

 তৈরি করা হয়েছে। এমনকি প্রতিটি জেলায় একজন করে

 প্রজেক্ট ম্যানেজার ও দায়িত্বে থাকবেন। একমাত্র বেকার

 যুবক যুবতীদের কথা ভেবেই দুয়ারে সরকার প্রকল্পের মাধ্যমে

 সরাসরি চাকরির সুযোগ করে দিচ্ছে রাজ্য সরকার।




মন্ত্রীসভার তরফ থেকে জানানো হয়েছে যে, এখানে

 আপনাকে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। উপরন্তু

 সরকার আপনাকে প্রশিক্ষণ চলাকালীন মাসিক ভাতার

 ব্যবস্থা করে দেবে। রাজ্য সরকার নিজেই প্রশিক্ষণ শেষে

 আপনাদের সরাসরি চাকরির ব্যবস্থা করে দেবে। এখানে

 সরকার দ্বারা চাকরি করার সুযোগ দেওয়া হবে ছেলে ও

 মেয়ে উভয়কেই। দীর্ঘদিন ধরেই রাজ্য সরকারের চিন্তা ভাবনা

 ছিল এইরকম একটি প্রকল্প তৈরি করার কিন্তু করোনা

 পরিস্থিতিতে সরকার তা করে উঠতে পারেনি। অবশেষে

 আসন্ন জানুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিত হতে চলা দুয়ারে সরকার

 শিবিরের মাধ্যমে বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ এর দ্বারা রাজ্য সরকার

 সকল বেকার যুবক যুবতীদের কর্মমুখী করে তোলার জন্য

 উদ্যোগী হয়েছে।


___________________________________________________






সম্পূর্ণ বিজ্ঞপ্তি পড়তে নীচের লিঙ্কে ক্লিক করুন--

https://worldsahityaadda.blogspot.com/2021/12/sbi-new-recruitment-2022-state-bank-of.html


________________________________________________




সম্পূর্ণ বিজ্ঞপ্তি পড়তে নীচের লিঙ্কে ক্লিক করুন ---

https://worldsahityaadda.blogspot.com/2021/12/aiims-c-kalyani-aiims-recruitment-2022.html


_________________________________________________




সম্পূর্ণ বিজ্ঞপ্তি পড়তে নীচের লিঙ্কে ক্লিক করুন---

https://worldsahityaadda.blogspot.com/2021/12/asha-karmi-recruitment-2022.html

Sunday, December 19, 2021

Photography || Dr Atef kheir


 

Photography || Sohini Shabnam


 

Photography || Moushumi chandra

 


Photography || Nilanjan de


 

Photography || Amit pal

 


গদ্য || প্রতিবন্ধী || প্রদীপ কুমার লাহিড়ী

প্রতিবন্ধী



আমরা যারা শরীরের বিভিন্ন অর্গান হারিয়ে প্রতিবন্ধী জীবনের মধ্যে দিয়ে দিন কাটাচ্ছি আবার আমাদের মধ্যে অনেক আছেন যারা সো বাঁধা বিপত্তি কাটিয়ে স্বাভাবিক জীবন ফিরে পেয়ে ছেন তারই একটা চেষ্টা তুলে ধরলাম আমার লেখার মাধ্যমে l

কি কোইন্সিডেন্স !১৯৯২ এএপ্রিল বিশ্ব বছর আর ১৯৯২ এপ্রিলএ ক্যান্সারে আমার কণ্ঠনালী চিরকালের মতো হারাতে হয় l যদিও সরকার আমাদের প্রতিবন্ধী মনে করেননি,

আর ভারত বা বিশ্বের কোনো মেডিকেল হেল্প ছিলোনা, যা আমাকে কথা ফেরত পাবার উপায় বলতে পারে , অবশ্য আর্টিফিশিয়াল যান্ত্রিক সাহায্য ব্যতীত l

তাই আমাকে বহুদিন বোবাজীবন বইতে হয় নির্বাক প্রতিবন্ধী হয়ে l

মনুষ্যত্বের অসীম আশীর্বাদে আমি

 খাদ্য নালীকে মিডিয়াম হিসেবে ধরে কাজ চালানোর মতো কথা বলতে শিখি l কালক্রমে প্রায় স্বাভাবিক কথা বলা শিখে যাই l আর বহু লোককে, আমার মতো, দেশে বিদেশে শিখিয়ে আসছি , বহুবছর ধরে l

এমনকি স্পিচ থেরাপিস্টরা ও আসেন, এটার ট্রেনিং নিতে আমার প্রতিষ্টিত একটি ক্ষুদ্র সংস্থার মাধ্যমে l

 কিন্তু বাস্তবিক বিচারে একটা ভাইটাল অর্গান যখন আমার নেই তাই একদিক থেকে আমি ও প্রতিবন্ধী l

 তাই সমস্ত পৃথিবীর প্রতিবন্ধী দের জন্যে আমি মর্মবেদনা অনুভব করি l

আজকের দিনে এই কথা গুলি পাবলিকলি জানাতে পেরে মনটা খুব হালকা লাগছে আশা করি এই অপ্রচারিত একটি অবাক করার উপায় 

সহজেই রপ্ত করা যায় যদি নিজের ওপর আস্থা থাকে এত এই বিরল প্রচেষ্টা আমারি শুধু দিতে পারি সংস্থার মাধ্যমে বিনা পারিশ্রমিকে এত আমাদের অহংকার !

রম্যরচনা || তাড়ির কড়চা || অরবিন্দ সরকার

তাড়ির কড়চা

                



কান্দি থানার একেবারে শেষের গ্রাম পলশী। গ্রামের পরেই বিল তেলকর।বন্যায় বর্ষায় ফসল হয়না তবে গ্রামে বন্যার জল প্রবেশ করে না।

বছরে তখনকার দিনে একবারই ফসল হতো।আমন ধান বৃষ্টির জলে উঁচু জমিতে। বন্যায় ডুবে যাওয়া জমিতে খেসারি, মসুর, মটরশুঁটি, ইত্যাদি চাষ হতো।


জানকি মন্ডলের ছেলে তারাপদ তালগাছে তাড়ির চাষ করে।হালে বিয়ে হয়েছে জামনা নামক গ্রামে। মানুষের চৈত্র বৈশাখ মাসে কাজ থাকে না।তাই অভাব লেগেই থাকতো সেসময়। গাছের তাড়ি খেয়েই তাদের উদর পূর্ণ হতো।কচুর শাক, লতাপাতার তরকারি ইত্যাদি সহযোগে তাড়ি সেবা হতো।কেউ কেউ বিল কাঁকড়া, কাদামাছ ধরে রান্না করতো,অথবা মরাবিলে গুগলি শামুক ঝিনুক খাদ্য।


তালের গাছের মালিক কিন্তু মোড়লেরা। তাদের জমির আইলে, পুকুর পাড়ে প্রচুর তালের গাছ। মোড়লের ছেলেরা তেল মেখে চান করার সময় ওদের বাড়িতে বাড়িতে তাড়ি খেয়ে চুপিসারে নিজবাড়ি ফিরে ভাত খেয়ে ঘুম।কেউ কেউ বাড়ি ফিরতো না। মুড়ি গামছায় বেঁধে নিয়ে তাদের দিত ও তাড়ি খেয়ে নেশাগ্রস্ত হয়ে ওদের বৌয়ের সঙ্গে একটু মেশা মিশি করতো।


সেদিন তারাপদ মাঠ থেকে শামুক গুগলি এনে তার বৌকে বললো এগুলো বেছে রান্না করো। আমি গায়ের কাদা ধুয়ে চান করে পরিষ্কার হ'য়ে আসি।

চান করে গোয়াল ঘরে ঢুকে চক্ষু চড়কগাছ। হ্যাঁ গো ভাগু ! (ভাগ্যবতী নাম) বাড়িতে কে এসেছিল? তাড়ির ভাঁড় যে শুন্য।

ভাগু বললো - তুমি তো না শুনেই চান করতে দৌড়ালে? বলি কি যাদের তাড়ি তারায় খেয়েছে?

তারাপদ তাকে তারু বলেই সবাই ডাকে ? তারু পেটের খিদে তার উপর ওর নাম বলছে তাড়ি! 

একটা গরু চড়ানো পাঁচন দিয়ে পিঠে দুই সাট্ । পাঁচন দিয়ে আঘাতকে সাট্ বলে।

ভাগা শালীর বিটি শালী! কে খেয়েছে আর একবার বল্ ?

ভাগু- বললাম তো যাদের তাড়ি তারায় খেয়েছে তুমি জানকি?

এবার তারু পাঁচন নিয়ে ঘা মেরেই যায়।বলে শালি আমার নাম করছিস্ আবার আমার বাবার নাম করছিস্ জানকি? তোর একদিন কি আমার একদিন। এভাবে ভাগুকে মেরেই চলেছে।ভাগু হাত পা ছড়িয়ে উঠোনে পড়ে গেলো! পাড়াময় লোক ছুটে এসে ভাদুকে চেপে ধরে।যেন আর আঘাত না লাগে। 

এবার তারাপদ চেঁচিয়ে বললো - নষ্টা মেয়ে।সবাই মিলে তোকে চেপে ধরছে আর তুই মজা লুঠছিস্ ? পাড়ার লোকেরা তারাপদর পাঁচন কেড়ে নিয়ে সপাটে গালে চড় থাপ্পর মারতে লাগলো।

তারাপদ- তোমাদের কে ডেকেছে আমার বাড়ীতে? বেরোও বাড়ী থেকে? 

এক পড়শি বললো কেন মারছিস্ তোর বৌকে? খাওয়াবার ক্ষমতা নাই তার উপর মার।

তারাপদ- তোমরা জান ও আমার নাম বলছে আবার আমার মড়া বাবা জানকীর নাম তুলছে? স্বামীর নাম কেউ করে? না শ্বশুরের নাম করতে আছে? ওকে জিজ্ঞাসা করো।

ভাগু আধমরা হয়ে পড়ে আছে।ওকে সবাই তুলে ধরে জিজ্ঞেস করলো - মা বলতো কি হয়েছে? 

তখনই তারাপদ চেঁচিয়ে বললো বল শালী কে খেয়েছে?

ভাগু - তারস্বরে বললো , কতবার বলবো তোমাকে যে যাদের তাড়ি তারায় খেয়েছে? তুমি জান কি?

তারাপদ - এবার মারতে উদ্যত হ'লে সকলে তাকে জড়িয়ে ধরলো।

সকলেই বললো - তাড়ির নামের সঙ্গে তারাপদ নামের মিল নাই।আর তোমার মরাবাবা এখানে নাই।সে সগ্গে গেছে। জানো - কি? এর সঙ্গে জানকির অনেক তফাৎ।


ভাগু এবার সবার কাছে বললো আমি আর এর ভাত খাবো না! আমি বাপের বাড়ি চলে যাবো! সকলের নিষেধ অমান্য করে ভাগু বাড়ীর বাইরে বেরিয়ে এলো।

তারু তাড়াতাড়ি ওর পায়ের কাছে পড়ে বললো - আমার ভাত খাবিনা বলছিস্ ? ভাত তো দিতেই পারি না! তুই আমার কাছে সালুন খেয়েই থাক্। ভাগুর পা আর ওঠে না! চেপে ধরা আছে।

ভাগু- ছিঃ ছিঃ! তুমি স্বামী! আমার পায়ে হাত দিলে যে আমি মহাপাতকিনী হবো। ঠিক আছে আমি আর যাবো না। তোমারই থাকবো।

রম্যরচনা || অন্তরা || সুজিত চট্টোপাধ্যায়

 অন্তরা 



সেই গানটা মনে আছে , 

" তুমি আর আমি শুধু জীবনের খেলাঘর হাসি আর গানে ভ`রে তুলবো ,

 যত ব্যথা দুজনেই ভুলবো "

 গায়ক শ্যামল মিত্র , 

মনে আছে ? 

আচ্ছা , বলুন দেখি এখানে তুমি আর আমি বলতে কোন দু'জন কে বোঝানো হয়েছে ? নিঃসন্দেহে বলা যায় , রোমান্টিক গান সুতরাং প্রেমিক প্রেমিকার ব্যাপার। এখানে বাবা মা ভাই বোন বা অন্য কেউ না শুধুই ভালবাসার কপোত-কপোতী দের মনোভাব ব্যক্ত করা হয়েছে। 

" যত ব্যথা দুজনেই ভুলবো "

অর্থাৎ অন্য কারোর ব্যথায় ব্যথিত হবার কোনও দায় নেই। শুধুমাত্র দু'জন দু-জনের ব্যথায় ভোলিনি মলম বুলিয়ে ভুলিয়ে দেবো। দুনিয়া ভোগে যাক। 

এ-ই যে যুগলবন্দী ঘুপচি প্রেম, এর স্থায়িত্ব সম্মন্ধে কেমন যেন সন্দেহ জাগে , তাইনা ?

তুমি আমার আমি তোমার মার্কা এই একবগগা প্রেম, ভ্যানিশ হতে খুব বেশি সময় নেয় না। তুমি আমির ন্যাকামি তখন ঘোর কাটিয়ে রণংদেহী। লাগ লাগ ভেলকি লাগ ,,,,,,,,। 

এবার একঘেয়েমির পালা। সেই একঘেয়েমির দমবন্ধ দশা কাটাতে তৃতীয় কারোর উপস্থিতি চাহিদা তুঙ্গে উঠতে লেগেছে। 

সেইসময় ও-ই শ্যামল মিত্রের গান , মেশিনগান হয়ে বুকে শেল হয়ে বিধছে।  


বেশ ,, ধরা গেল ইচ্ছে হয়ে যে ছিল মনের মাঝারে সে সশরীরে এসে গেল এই ধরাতলে। এইবারে অনিবার্য ভাবেই যত প্রেম ভালবাসা ভাললাগা,,,, উউম আউম চুউম চাউম সব গিয়ে জড়ো হলো সেই নবাগতের চারপাশে। এখন তাকে ঘিরেই যাবতীয় সব। ব্যথাও সেখানে সুখও সেখানে। 

তাহলে শ্যামল মিত্রের গানের সেই গদগদ বাণী " তুমি আর আমি শুধু জীবনের খেলাঘর " , তার কী হবে ? 

খেলাঘর এখন তৃতীয় প্রাণীর কব্জায়। জীবনের খেলাঘর এখন রাতজাগা আঁতুড়ঘর।  

মনের লুকোনো কুঠুরি তে চাপা অনভিজ্ঞতার আক্ষেপ মাঝেমাঝেই সংলাপ হয়ে বেরিয়ে আসছে,,,, 

" দু'একজন বয়স্ক কেউ থাকলে ভালো হতো। ওরা সব জানে বোঝে কিনা। "

পুনরায় প্রমাণ হলো অভিজ্ঞতা বড়ই মহার্ঘ্য । 

জীবনে চলার পথে অপরিহার্য । ভালবাসায় না হোক স্বার্থের চাহিদায় তো বটেই । 


" জীবনের খেলাঘর হাসি আর গানে ভ`রে তুলবো।"  

হায়রে , বাস্তব বড়ই কঠিন নিষ্ঠুর। কপোত-কপোতীর মোহ ভাঙা জটিল হিসেবি মনের মধ্যে জ্বলজ্বল করছে দু-একটি অতি পরিচিত অবহেলিত ভাঙ্গাচোরা মুখের ছবি ।

"দেখা হয় নাই দুই পা ফেলিয়া "

হায় ভবিতব্য ,, যারা ছিল তারা নেই। 

যে ছিলনা সে শুয়ে শুয়ে হাত-পা ছুঁড়ছে । 

অজানা ভবিষ্যৎ এর দূত কাঁদছে। 

এখন গাওয়া যেতেই পারে গানের অন্তরা,, 

" শুধু বলো তুমি কি গো জানতে 

যেতে যেতে এই পথ  

শেষ হবে কোনও মরুপ্রান্তে ? "

নিবন্ধ || বাংলা কবিতা উৎসব কোন্ পথে || তৈমুর খান

 বাংলা কবিতা উৎসব কোন্ পথে


  

     


কবিতা উৎসবগুলি এক একটি গড্ডলিকা প্রবাহ। কবিগণ উৎসবে সামিল হন, অংশগ্রহণ করেন তারপর আবার হারিয়েও যান। কবিতা নামে লেখকর্মটির তাতে কোনো উৎকর্ষতা বাড়ে না, বরং অনেকের ভিড়ে তা চুপসে যায়, হতাশ হতে পারে। কবিতার জন্য যে নিভৃতি বা স্তব্ধতা দরকার,উৎসবগুলি সেই পরিবেশ নষ্ট করে দিতে পারে। যারা মনে করেন হইচই আস্ফালন জনসমাগমে কবিতার পরিপুষ্টি লাভ হয়, তাদের ধারণা সর্বার্থেই ভুল। কবিতা উৎসবে নেই, ভিড়ে নেই, এমনকী মাইকের সামনে সরব পাঠেও নেই। কবিতার পাঠক ও লেখক উভয়কেই কবিতার জন্য একটা স্পেস দরকার হয়। যেখানে একান্ত নিজস্ব সময়ের বাতাবরণ তৈরি হয়। অন্যকারও যেন উঁকি না ঘটে। কবিতা খুবই স্পর্শকাতর শিল্প। আগে উচ্চকিত পাঠে যে আবেগ ধারণ করে একমুখী কবিতা রচিত হত, বর্তমানে প্রকৃত কবিতায় তা আর থাকে না। কবির ব্যক্তিক্ষরণের সঙ্গে সময়ের এক নিবিড় জিজ্ঞাসা সেখানে উপস্থিত হয়। কবির ব্যক্তিক্ষরণের সঙ্গে সময়ের এবং সমাজের পরিচয়টিও উঠে আসে। হৃদয়ের সূক্ষ্মাতি সূক্ষ্ম বোধের তীব্র মোচড়ে ভেঙে যায় ধারাবাহিক বক্তব্যও। কবি নাথিংনেস্ প্রজ্ঞায়ও পৌঁছাতে পারেন। সেখানে শূন্যতার অবধারিত প্রলাপে জীবনের নশ্বর মুহূর্তগুলি পাক খায়। কবিতা পাঠে সেগুলি ধরা যায় না। অনেক সময় তা অবাঞ্ছিত মনে হতে পারে। সুতরাং কবিতা সেই শ্লোগান থেকে বেরিয়ে এসে একান্ত অনুভূতির নিরীক্ষণে ভাষাহীন ভাষার মর্মরিত বোধে জারিত হতে চায়। উৎসবের আলো ঝলমলে মঞ্চে সাজসজ্জা পরিবেষ্টিত জবরজং কবিকে দেখা গেলেও তাঁর কবিতার সঙ্গে বসতি স্থাপন করা যায় না। এই মঞ্চ তো বিয়ে বাড়ির মতো আচার অনুষ্ঠানের মঞ্চ। পাঠকও স্থূল বরযাত্রীর মতো হতে বাধ্য। তাদের আত্মিক অন্বয় এবং চেতনার সর্বস্তরের বিকাশ সম্ভব নয়।

    সারা বছর ধরেই কোথাও না কোথাও চলে কবিতা উৎসব। কবিরা বহুদূর থেকে আমন্ত্রিত হয়ে আসেন। অনেক ধৈর্য ধরে বসে থেকে একটা বা দুটো বা অধিক কবিতা পড়ার সুযোগ পান। কিন্তু সেই কবিতা পাঠ কতটা জরুরি ছিল তা ভাবেন না। শ্রোতারা তাঁর কবিতা শুনছেন কিনা সেদিকেও কোনো ভ্রুক্ষেপ থাকে না। অনেক সময় নিজের কবিতা নিজেকেই শুনে মঞ্চ ছাড়তে হয়। যতটা আড়ম্বর করে, টাকা-পয়সা খরচ করে উৎসবগুলি করা হয় এবং যেসব কবিদের আমন্ত্রণ জানানো হয় তার কোনো সদর্থক উপযোগিতা আছে বলে আমি মনে করি না। কারণ কবিরা কখনো নিজেদের দীনতা স্বীকার করেন না। তাঁর যোগ্যতা কতখানি সে বিষয়ে তাঁর আত্মসমালোচনা বোধ করেন না। সর্বদা এক ধরনের অহংকারে আচ্ছন্ন থাকেন। ফলে রাজনৈতিক কারণে, কিংবা পরিচিতির কারণে বা কাব্য প্রকাশের কারণে এইসব উৎসবগুলিতে অকবিদেরও ডাক পড়ে। তখন তাঁরা নিজেকে শ্রেষ্ঠ কবি ভাবতে থাকেন। এতে তাঁর প্রতিভার অঙ্কুরেই বিনাশ ঘটে। প্রতিভা কখনো অহংকারকে সহ্য করে না। সুতরাং উৎসবগুলি উৎসাহ প্রদানের বদলে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয় কবিকে। সব অনুষ্ঠানে ডাক পান, বহু বইও প্রকাশিত হয়েছে, পত্রিকা সম্পাদনা করেন—এমন কবিকেও আমার কবি বলে মনে হয়নি। কারণ বহু প্রসবার মতো একদিকে তিনি কবিতার মাফিয়ায় পরিণত হয়েছেন। দালাল ও ব্যবসায়ী হিসেবে সব আসনগুলিই তিনি দখল করে নিতে জানেন। কিন্তু এমনও কবি আছেন, যাঁরা কখনোই কোনো অনুষ্ঠানে ডাক পান না, থাকেন কোনো প্রান্তিক শহর বা গ্রামে। তেমন নামকরা কোনো পত্রপত্রিকায়ও তাঁর লেখা প্রকাশিত হয় না। সেরকম কবিকেই আমার প্রকৃত কবি বলে মনে হয়।

        উৎসবগুলি উৎসব হিসেবেই পরিচালিত হয়। নাগরদোলার মতো তোলান পান কিছু সংখ্যক কবি। রাজনৈতিক ক্ষমতার কারণে তা অপব্যবহারও করেন। নিজের পছন্দের কবিদের ডাকেন (তাঁরা অকবি হলেও)। আর ভালো লিখেও কোনোদিন ডাক পান না, সারাজীবন উপেক্ষিত হতে হয়। কিন্তু শেষ জয় তাঁদেরই হয়। প্রতিটি উৎসবকেই আমার পক্ষপাতমূলক, আড়ম্বর সর্বস্ব, কবিতার ও কবির শত্রু বলে মনে হয়। দায়সারা এইসব উৎসব না হলেই ভালো। কবি তো জনতার ভিড়ে থাকতে পারেন না। উৎসবে যে জনতার মিছিল থাকে, সেখানে শুধু শ্লোগান-ই সাফল্য পায়, কবিতা নয়। আলাপচারিতার কিছুটা সুযোগ থাকে, বই আদান-প্রদান হয়, পত্রিকায় লেখার সুযোগ ঘটে, কিন্তু সেসব সুযোগে কবির বা কবিতার উৎকর্ষতা থাকে না। আলাপের পরবর্তী পর্যায়ে বিস্ময়কর বিস্মৃতি বাস করে। বইপত্রগুলি কোনো বড় কবিকে দিলেও তিনি সেগুলি পড়া তো দূরের কথা, ঘর পর্যন্ত নিয়ে আসেন না। কেউকে দিয়ে দেন, কিংবা আবর্জনার স্তূপে ফেলে দেন। যেসব পত্রপত্রিকায় লেখা ছাপানোর সুযোগ ঘটে বলে কবিরা মনে করেন, সেসব পত্রপত্রিকায় না লিখলেই ভালো হয়। কারণ লেখার গুণ ও মান বিচার করে সেসব পত্রপত্রিকা প্রকাশিত হয় না। তবে একটা বিষয় হয়, তা হলো উৎসবগুলিতে খানাপিনা ভালোই চলে। আড়ম্বরের পংক্তিতে বসে বাতেলা মারা সহজ হয়। নিজের গৌরব নিজেই প্রচার করতে পারেন কবিরা। কিছু টাকাও পাওয়া যায়।

       এবছর একটা সরকারি কবিতা উৎসবের অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে নিজেকে খুব অসহায় লেগেছে। যে উদ্যোক্তারা সরকারি আনুকূল্যে আমাকে ডেকেছিলেন, তাঁদের কারোরই দেখা পাইনি। কতকগুলি বেতনভুক কর্মচারি ২০০০ টাকার ড্রাপ লিখে দিয়ে ফাঁকা মঞ্চে কবিতা পাঠ করালেন। টাকা নেওয়ায় এবং কবিতা পাঠ করে মনে যে অসন্তোষ জন্মালো তা সহ্য করা কঠিন। অবশ্য অন্যকারও মনে তা (এমনটি) নাও হতে পারে। তবে বেসরকারি কবিতা উৎসবগুলিতে নির্বাচিত কবিদের কবিতা পাঠে ভিন্ন ভিন্ন অভিজ্ঞতা হতে পারে। সেসব ক্ষেত্রে কিছু পজেটিভ দিক অবশ্যই আছে। কবিতা পাঠ এবং আলোচনায় অনেক দিক খুলে যেতে পারে। তবে তা খুবই নির্বাচিত এবং নির্ধারিত বিষয় হলেই ভালো হয়।

       তাহলে কি কবিতা উৎসবের দরকার নেই?

 একথাটি ভেবে দেখা দরকার। প্রকৃত কবি কে তা নির্বাচন করা খুবই মুস্কিল। জনপ্রিয় কবি এবং প্রকৃত কবির মধ্যে বিস্তর তফাত আছে। জনপ্রিয় কবি তাে আমজনতার কবি। তিনি সরাসরি বক্তব্যপ্রধান কবিতা লেখেন। তিনি হাততালি পান। তাঁর কবিতা শ্লোগান হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। কিন্তু প্রকৃত কবি, প্রথমত তিনি কবির কবি; তারপর ভিন্নরুচির মানুষের। তিনি আড়ালে থাকতেই পছন্দ করেন। তথাকথিত যশ-খ্যাতির ঊর্ধ্বে তাঁর অবস্থান। অনুষ্ঠানে বা উৎসবে স্বাভাবিকভাবেই তিনি অনুপস্থিত হন। আর জনপ্রিয় কবি মঞ্চ আলো করে কখনো কখনো স্যুট টাই কোট পরে সেন্ট মেখে উপস্থিত থাকেন। তাঁর কবিতা আবৃত্তিযোগ্য, বিবৃতি ও বক্তব্য মানুষকে আকৃষ্ট করে। বর্তমানে যতগুলি কবিতা উৎসব হয় তার বেশিরভাগগুলিতেই এঁরা থাকেন, ডাকও পান। এঁদের কাব্যপ্রকাশও করেন অন্যান্য কবিরা। সুতরাং উৎসব কেবল তাঁদেরই উৎসবে পরিণত হয়।

      কবিতার নির্দিষ্ট কোনো মানদণ্ড নেই। বিচার করারও কেউ নেই। স্বাভাবিক কারণেই এই পক্ষপাত চলে আসছে। আর এঁরাই অভিজাত কবি, মেট্রো কবি, স্মার্ট কবি, পুরস্কৃত কবি হয়ে উঠছেন। অপরপ্রান্তে ভিন্নজগতের কবি হিসেবে নতুন পথের দিশারি কবি চিরদিন ব্রাত্যই থেকে যাচ্ছেন। উৎসব এখন রাজনৈতিক দলের মতোই ভিন্নমত ও ভিন্ন আদর্শে পরিচালিত একটি কর্মকাণ্ড। একজন নতুন কবিও এই অভিজ্ঞতা তাঁর কবিতায় এভাবে ব্যক্ত করলেন:

 "সেদিন কবি সম্মেলনে

 বাঙালি সাজার উৎসবে সাজো সাজো রব…

 ষোলোআনাই বাঙালিয়ানা…

 একে একে শুরু হলো কবিদের কবিতা পাঠ।

 থেকে থেকে গর্জে উঠলো করতালি।

 আত্মশ্লাঘার তৃপ্তিতে পরিপূর্ণ অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকে থেকে ঢেকুর ওঠে

 পরস্পরের পিঠ চাপড়ে এগিয়ে যায়…

 আবার আসে কবিতামঞ্চ…

 আবার আসে কবিসম্মেলন…

 আবার চলে কবিতা পাঠ…

 কিন্তু

 সবাই ঘরে ফেরে শূন্য হয়ে। শূন্য মনে।

 কেউ কবিতা নিয়ে ফেরে না…

 কেউ কবিতা হয়ে ফেরে না…"

                                     (সংগ্রাম সিংহ)

 এই অংশটিতেই ধরা পড়ে কবিতা উৎসবের ব্যর্থতা কতখানি। বাঙালি সাজের উৎসব, কবিতা পড়ার উৎসব এবং কবি হওয়ার উৎসব যে শূন্যতার দম্ভে পূর্ণ এবং অন্তঃসারশূন্য জাঁকজমকে শুধু হাততালি সর্বস্ব একটি অনুষ্ঠান তা বলার অপেক্ষা রাখে না। হয়তো সেই কারণেই জীবনানন্দ দাশ কখনোই কবিতা উৎসবে যোগ দিতেন না। এখনও সেরকম অনেক কবিকেই আমরা উপস্থিত হতে দেখি না। এমনকী পুরষ্কারও প্রত্যাখ্যান করে দেন।


গল্প || বচনবাগীশ || ডঃ রমলা মুখার্জী

   বচনবাগীশ



    সুমন দুম করে উপমাকে বিয়ে করে নিয়ে এল। মীরাদেবী মনে খুব আঘাত পেলেন। কিন্তু সুমন নিচুশ্রেণীর মেয়ে উপমাকে বিয়ে করার কথা বলেনি কারণ সে জানত প্রাচীনপন্হী মীরাদেবী কখনই এই বিয়েতে মত দেবেন না।  তাই মীরাদেবীর যত রাগ গিয়ে পড়ল বৌমা উপমার ওপর।

নিচু জাত বলে উঠতে বসতে তিনি হেনস্হা করতেন উপমাকে।        

       পাঁচ বছর হয়ে গেল উপমার সন্তান আসছে না। বাক্যবাগীশ মীরাদেবী উপমাকে প্রায়ই কথা শোনাতেন। বেশি কথাবলাই ছিল মীরাদেবীর একমাত্র দোষ। সারাদিন অনর্গল কথা বলতেন তিনি। বাঁজা বলে উপমাকে অপমান করতেও ছাড়তেন না। উপমাও দু-চার কথা ইদানীং শুনিয়ে দিত, প্রায়ই অশান্তি লেগে যেত দুজনকার।

     অনেক চেষ্টা করে উপমার ছেলে হল। উপমার চাকরি বজায় রাখার জন্য আয়া রাখা হল। আয়ার সামনে পদে পদে অপমান উপমা কিছুতেই মেনে নেবে না। তাই বাক‍্যবাগীশ  মীরাদেবীর স্হান হল বৃদ্ধাশ্রম। ছেলে বড় হচ্ছে কিন্তু কথা বলতে পারছে না। ডাক্তারবাবু বললেন ছেলের সঙ্গে সবসময় কথা বলা দরকার যা নিজের জন ছাড়া অসম্ভব। সুমন মীরাদেবীকে বৃদ্ধাশ্রম থেকে বাড়িতে নিয়ে এল। 

    বাকপটু মীরাদেবীর সহায়তায় সুমনের ছেলে অনুপমের মুখে আধো আধো বোল অচিরেই ফুটল। মীরাদেবীও বকবক করার নতুন সঙ্গী পেয়ে খুব খুশি। উপমাও নিশ্চিত মনে চাকরি করতে যেতে পারল। তাদের আর আয়া রাখারও প্রয়োজন হল না, কারণ অনুপমের দেখভাল মীরাদেবী স্বেচ্ছায় কাঁধে তুলে নিলেন। কত আশার নাতি তাঁর, আর সে কিনা মানুষ হবে আয়ার কাছে! কভি নেহি!



ছোট গল্প || বকখালিতে একরাত || সামসুজ জামান

বকখালিতে একরাত

           

    

বকখালিতে সমুদ্র-কিনারে চাঁদের আলোয় সোনালীর কোলে মাথা রেখে শুয়েছিল প্রভাত। সোনালী তার মাথার চুলে বিলি কেটে দিচ্ছিল। ফুরফুরে হাওয়া গঙ্গার জোয়ারের জল ছুঁয়ে ছুঁয়ে এসে মনটাকে ভিজিয়ে দিচ্ছিল প্রভাতের। 

একটু পরে প্রভাতকে জড়িয়ে ধরে সোনালী বলল – চল না, হটেলের রুমে ফিরে যাই। 

যাবে? ভাল লাগছে না আর এখানে? 

না,না,না, ভাল লাগবে না কেন? আমাদের কী আর এমন ভাগ্য হয়? একটু থেমে আবার যোগ করল – আসলে আমাদের তো কেউ এত ভাল বাসেনা! আমরা হলাম এঁটো পাতার জাত! 

মুখে হাত চেপে ধরে প্রভাত বলল- ছিঃ, বোলো না ! 

আরও কিছু পরে হোটেলের সি ফেসিং রুমে বসে, জানালা দিয়ে আসা চাঁদের আলো গায়ে মাখিয়ে সোনালীকে উপভোগ করছিল প্রভাত। মেয়েটা আদরে আদরে ভরিয়ে দিতে দিতে বলছিল – তুমি এত ভাল! আমাদের কেউ এভাবে কখনও আদর করে না! শুনে খুশী হয়ে প্রভাত, সোনালীর মাথাটা বুকের কাছে টেনে নিয়ে আদর করে দু-চোখের পাতায় চুমু খেল আর একবার।  

রাতটা অদ্ভুদ এক নেশার মধ্যে দিয়ে কথা দিয়ে কেটে গেল। একসময় সময় ফুরিয়ে যেতেই ককিয়ে উঠল সোনালী – বাড়ি ফিরে গিয়ে আমাকে মনে পড়বে তো? আবার আসবে তো? কবে আসবে?

-আসবনা আবার ? কী যে বল? যত তাড়াতাড়ি পারি আবার ----- কথাটা বলতে গিয়েও গলায় আটকে গিয়েছিল প্রভাতের। 

বিদায় নেবার সময় পাঁচশ টাকা সোনালির হাতে গুঁজে দিতেই চিক চিক করে উঠল ওর চোখ – বাবু, আবার কবে আসবে, বলনা? 

-এই তো সামনের মাসেই – বলেই সোনালীর চোখের ওপর থেকে চোখ সরাল প্রভাত। অনেক কষ্টে অমলাকে বুঝিয়ে, অফিসের অডিটের ঝামেলার কথা বলে একরাতের জন্যে বকখালিতে আসা। এরপর আবার আসা? পাগল নাকি! সোনালীকে সঙ্গে নিয়েই আরও এগোচ্ছিল প্রভাত। পখে পড়ে এঁটো শালপাতা, গর্ভ নিরোধকের মোড়ক। কিন্তু এসব ছাপিয়েও মনে পড়ে মেয়েটার চোখ দুটো। বড় মায়াবী সুরে সোনালী বলতে থাকে – আবার আসবে তো? বলো না কবে আসবে? 

প্রভাত আর একবার ভয়ে ভয়ে সোনালীর দিকে শেষবারের মত তাকিয়ে দেখল। মেয়েটার বড় বড় দুটো চোখ জলে ভরে উঠেছে। শুধু তাই নয়, নিজের মুখটা চেপে ধরে এবার ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠল সোনালী। অদ্ভুদ এক পিছুটানকে অনেক কষ্টে উপেক্ষা করে জোরে জোরে সামনের দিকে পা ফেলল প্রভাত। কিন্তু অনেক দূর পর্যন্ত যেন তার কানে আসতে লাগল সোনালীর ফুঁপিয়ে কান্নার আওয়াজ।