Tuesday, December 20, 2022

ছোট গল্প - এমনও হয় || লেখক - সিঞ্চিতা বসু || Written by Sinchita Basu || Short story - Emono Hoi


 

এমনও হয়


সিঞ্চিতা বসু 



যন্ত্রমানবের শতবর্ষে এসে আজ আপনাদের এক যন্ত্র দুনিয়ার গল্প শোনাই l প্রথিতযশা বিজ্ঞানী ডঃ রজত গোস্বামীর কাছ থেকে জানা ঘটনাটি বলছি,যদিও এর শেষ আমার জানা নেই l কারণটা হলো টেলিপ্যাথির মাধ্যমে ওনার সাথে যতটুকু যোগাযোগ ছিল,ততটুকুর কাহিনী আমরা জানতে পেরেছি l ক্রমে যোগাযোগ ছিন্ন হয়েছে,সিগন্যাল  ক্ষীণ হতে হতে হারিয়ে গেছে l

               ডঃ রজত গোস্বামীর কাজ ছিল এসকেপ ভেলোসিটি বা মুক্তি বেগ নিয়ে l পাঠকরা নিশ্চই মুক্তিবেগ কি তা জানেন,মানে গতিবেগে ছেড়ে দিলে কোনো কিছু পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তিকে তুচ্ছ করে মহাকাশে বেরিয়ে যাবে,আর পৃথিবী নিজের কেন্দ্রের দিকে তাকে টানবে না l এতদিন বিজ্ঞানীরা মুক্তিবেগ কাজে লাগিয়ে রকেট,কৃত্তিম উপগ্রহ ইত্যাদি পাঠিয়েছেন,কিন্তু রজতবাবুর মাথায় কি যে ভূত চাপলো,উনি এটমিক এনার্জি দিয়ে একটা ছোটো অ্যালুমিনিয়াম নির্মিত এরোপ্লেন মুক্তিবেগে উড়িয়ে দিলেন l প্লেনটি পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে মহাকাশে এসে পড়লো,তারপর দিকবিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে  সূর্যের মতো আর একটি নক্ষত্রের একটি প্ল্যানেটে গোঁত্তা খেয়ে পড়লো l একটা ছোটো টিলাতে ধাক্কা খেয়ে ছোট্ট  মহাকাশযানটি ভেঙে গুঁড়ো গুঁড়ো হয়ে গেল,সেই সাথে রজতবাবুর  নিজেভূমে ফিরে যাওয়ার স্বপ্নও খানখান হয়ে গেল l উনি বেশ কিছুটা সময় অচৈতন্য হয়ে পড়ে থাকার পর ঠান্ডা বাতাস চোখে মুখে মেখে উঠে বসলেন l এস্ট্রোনটদের মাথায় যে হেলমেট থাকে তা ছিটকে গেছে,ফলে অক্সিজেন সাপ্লাই বিচ্ছিন্ন হয়েছে,কিন্তু তা সত্ত্বেও তিনি উঠে বসে দেখলেন দিব্যি নিঃশ্বাস প্রশ্বাস নিতে পারছেন l মনে মনে ভাবলেন -"জায়গাটা তো বেশ,প্রায় পৃথিবীর মতোই l তবে কি বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং এর ধারণাটাই সঠিক?সূর্য থেকে পৃথিবীর দূরত্ব যতটা,ঠিক ততটা দূরত্ব বজায় থাকলে বায়ুমন্ডল,জল থাকা সম্ভব,প্রাণের অস্তিত্বও থাকতে পারে হয়তো l এটা কি তেমনই একটা গ্রহ বা উপগ্রহ?"

              রজত স্যারের রিপোর্ট

             ----------------------------------

                পৃথিবীর মতো তবু পৃথিবী নয় l এখানে সবকিছু যন্ত্রচালিত,মানুষ পুরোপুরি যন্ত্রনির্ভর l যন্ত্র গ্রাস করেছে এ শহরের মানুষদের শরীর,মন,মেধা অনুভূতি,চাহিদা সবকিছু l চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যায়না,এ যেন সেই ছোটবেলায় দেখা সত্যজিৎ বাবুর হীরক রাজার দেশের যন্তর মন্তর l সারা শহরে এমন কতই না কেন্দ্র,সবগুলোই কম্পিউটার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত,রোবট চালিত l গ্রিক শব্দ রোবোটাস থেকে রোবট কথাটি এসেছে,মানুষের অনুচরবৃত্তি করার জন্য সৃষ্ট যান্ত্রিক দাস এখন মানুষকেই দাস বানিয়ে ছেড়েছে l এখানে সবুজ গাছপালা,ফুল ফল সবজির কোনও চিহ্ন নেই l এদের কোনো ভাষা নেই,নির্ভর করে বাইনারি ইন্সট্রাকশন আর কোডিং এর উপর l এলাকা বেশির ভাগ সময়ই ফাঁকা,যে কজন মানুষ আছে,তারা দেখতে অনেকটা মানুষের মতো হলেও,আদপে আগাপাশতলা এক একটা রোবট l

তারা উচ্চ প্রযুক্তির গাড়ি বানায়,ব্রিজ বানায়,গগনচুম্বী বাড়ি বানায় l সবই নিক্তিতে মাপা, কোথাও কোনো ভুল হওয়ার উপায় নেই l মানুষের প্রয়োজন হলে কম্পিউটারের মাধ্যমে বিশ্লেষণ করে নারী পুরুষের জোড় নির্বাচন করে তাদের থেকে ডি.এন.এ  সংগ্রহ করে তার ক্লোন বানানো হয় l যন্ত্রই ঠিক করে দেয় ভ্রূণটিতে কতো শতাংশ জল,কার্বন,অক্সিজেন,লোহা ইত্যাদি থাকবে l হিসেবের জন্য ফর্মুলাও কম্পিউটারে মেমোরিতে পুরে রাখা আছে l এরপর শিশুটির জন্মের দুমাস পর থেকেই শুরু হয় ব্রেন ওয়াশ l ঢুকিয়ে দেওয়া হয় কিছু বাইনারি ডিজিটের সংকেত,বের করে নেওয়া হয় মানবিক অনুভূতিসমূহ lখাবার দাবারের দরকারই হয় না,কারণ শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় প্রোটিন,কার্বহাইড্রেট,মিনারেল ইত্যাদির চাহিদা মেটানোর জন্য আছে নানারকম ট্যাবলেট,ক্যাপসুল,ইনজেকশন l 

        এহেন বাইনারি শহরে তো কোনো সমস্যা থাকার কথা না,কিন্তু গোল বাঁধলো অন্যত্র l ম্যানুফ্যাকচারিং ডিফেক্টের কারণে এমন কিছু মানুষের জন্ম হয়েছে,যাদের মনের অনুভূতি ও সুকুমার প্রবৃত্তিগুলো রয়ে গেছে ভীষণভাবে l  যান্ত্রিক গোলযোগের জন্য ভালোবাসা,গান,সুর ইত্যাদি মান্ধাতার আমলের অনুভুতিগুলি তাদের মনে প্রাণে জড়িয়ে গেছে,অনুভূতির নৈবেদ্য সাজিয়ে বসে আছে l একেবারে গোড়ায় গলদ! যাদের জন্ম হয়েছে তারা সবাই নারী l বাইনারি শহরে এদের স্থান হয়নি,বিজ্ঞান নগরী এদের ত্যাগ করেছে l জন্মের সময়েই এই ডিফেক্ট পূর্ণ ভ্রূণগুলোকে নষ্ট করার জন্য প্রোগ্রাম বানিয়ে কম্পিউটারের মগজে ভরে দেওয়ার আগেই সুকুমার প্রবৃত্তি নিয়ে জন্মে গেছে কিছু কন্যাসন্তান l শহরের প্রান্তে দেওয়াল তুলে,যন্ত্র মানব মানবীদের থেকে একেবারে বিচ্ছিন্ন হয়ে এরা বাস করে l এরা প্রযুক্তি ও যন্ত্র নির্ভর না l শহরের বাকি অঞ্চলের তুলনায় একেবারেই অনুন্নতl প্রত্যেকের হৃদয় আছে,হৃদয়ে সুর আছে,আর আছে বেদনা l এরা প্রায় সবাই প্রবীণা l ব্যাতিক্রম শুধু একজন,তার নাম  অরোরা l পুরুষের এভাবে বংশবৃদ্ধি একেবারে থমকে গেছে l সব সময় একটা ভয় এদের তাড়া করে বেড়ায়,মৃত্যুর পরে সব শেষ l তাদের এই স্থানটির দখল নেবে যন্ত্র,ভুখন্ড থেকে মুছে যাবে সুর,ভাষা,মানবিক অনুভূতি সমূহ l 

                   ডঃ গোস্বামীর বয়ানে

              ---------------------------------------

   আমি এদের ভাষা বুঝিনা,কিন্তু সাথে থাকা কালো বোতামের মতো ইন্টারপ্রেটর যন্ত্রের সাহায্যে এদের মনের ভাব বুঝে নিতে খুব একটা অসুবিধা হচ্ছে না l আমি আসলে মহাকাশযান ভেঙে এদের এরিয়ার মধ্যে এসেই পড়েছিলাম,যন্ত্র সভ্যতার কথা এদের থেকেই জেনেছি l পৃথিবীতে ফিরে যাওয়ার উপায় নেই বুঝে এদের সঙ্গে মিশে যাওয়াই শ্রেয় বলে মনে হয়েছিল l আশ্রয় যখন দিয়েছে,ঠিক করলাম যথাসাধ্য সাহায্য করার l যন্ত্র দুনিয়ার গ্রাস থেকে এদের বাঁচাতেই হবে l সামান্য উপকরণ জোগাড় করে কাজ শুরু করলাম l অরোরার শরীরের ডিম্বাণু আর আমার স্পর্ম নিয়ে তৈরি হলো জাইগোট l ধীরে ধীরে টিউবের মধ্যে বড়ো হতে লাগলো l অরোরার শরীর তা স্থাপনও করলাম l একদিন একটা ফুটফুটে শিশু ভূমিষ্ঠ হলো,এদের সমাজের প্রথম ছেলে l আমার পড়া বায়ো কেমিস্ট্রির বিদ্যে নিয়ে শিশুটির ক্লোন তৈরির কাজ শুরু করলাম l বারবার ব্যর্থ হচ্ছি,কিন্তু হাল না ছেড়ে চললো উদায়াস্ত পরিশ্রম l স্বপ্ন দেখছি এদের সমাজ ভরে উঠবে,সংখ্যায় বেড়ে উঠে যন্ত্র সভ্যতার মোকাবিলা করবেl

      পুনশ্চ : এর পরে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়াতে আর বিশেষ কিছু জানা যায়নি l তবে আমার স্থির বিশ্বাস যে ডঃ গোস্বামীর মতো ট্যালেন্টেড বিজ্ঞানী নিশ্চই সফল হয়েছেন l হয়তো আবার কোনো নভশ্চর ওখানে গিয়ে পড়লে দেখতে পাবেন বাইনারি শহরের সাথে টেক্কা দিয়ে বেড়ে উঠেছে আর এক মানবিক গুনসম্পন্ন শহর l হয়তো দেখতে পাবেন নারীপুরুষের চিরন্তন আকর্ষণে বাঁধা পড়েছে রজত স্যার আর অরোরা,হয়তো টেস্ট টিউব বেবি না -তাদের কোলে এসেছে তাদের ভালোবাসার ফসল,হয়তো,হয়তো......

ছোট গল্প - বিপণন || লেখক - দর্পণা গঙ্গোপাধ্যায় || Written by Darpana Gangapadhay || Short story - Biponon


 


বিপণন

দর্পণা গঙ্গোপাধ্যায়




লকডাউনে বীথিদের অবস্থা বড়ই খারাপ গেছে ,ওদের রোজগার পাতি তলানিতে ঠেকেছে। যা জমানো ছিল তাও খেতে খেতে শেষ। এ বছর ওর বর একটা কারখানায় কাজ পেয়েছে। আগেরটা গেছে, যা হোক যা পাওয়া যায় তাই সই। বীথি ভাবলো দুটো কানের দুল আছে। ওগুলো বেচে পুজোর কাপড় তুলে বেচবে ,যেমন ভাবনা তেমনি কাজ দুল বেছে বড়বাজারে একটা বড় দোকান থেকে কিছু তাঁত ছাপা সিন্থেটিক শাড়ি কিছু বিছানার চাদর  আর কুর্তি লেগিন্স লুঙ্গি ইত্যাদি নেবে।


 শুনেছে বড় দোকান ধার দেয় ছেঁড়াফাটা ফেরত নেয় ,আবার দাম দিয়ে আরো নতুন জিনিসও নেওয়া যায়। কিছুটা বেচেই আবার যাওয়া যায় নতুন জিনিসের জন্য। তাহলে বেচার এবং কেনার বেশ সুবিধা হয়।

সেদিন বুধবার সকাল সকাল খেয়েদেয়ে বেরিয়ে পড়ল বড়বাজারের দোকানের সন্ধানে।

পেয়েও গেলো, দোকানের মালিক বসেছিল, তো তার সঙ্গে কথা হলো। মালিক বলল বেশ,--- কিন্তু একটা শর্ত আছে তোমাকে আমার দোকানে এসে সপ্তাহে তিন দিন বসতে হবে শিখতে হবে কিভাবে শাড়ি বেচতে হয় তারপর তোমাকে আমি সম্পূর্ণ ধারেই সবকিছু দেব,--- বিক্রি করে দাম দেবে। বীথি তো খুব আনন্দ পেল এবং বাড়ি ফেরার উপক্রম করছে ঠিক তখনই দুজন মহিলা ও একজন পুরুষ দোকানে প্রবেশ করল। আর বলল তারা দামি শাড়ি দেখাতে। মালিক বলল বীথি তুমিও বসে যাও । দামি শাড়ি দেখার শখ কোন মেয়ের না থাকে বসে গেলাম বড় কালো ট্রাঙ্ক থেকে একের পর এক বালুচড়ি বেরোতে লাগলো কোনোটা ৬০০০ কোনটা ১০০০০ কোনটা ১২000 কোনটা কুড়ি হাজার চলতেই থাকে চলতেই থাকে যতই দেখায় কিছুতেই মন ভরে না, একটা একটা শাড়ি রাখছে আর বলছে আরো শাড়ি দেখান এভাবে এক ঘন্টা ধরে দুজন কর্মীর কাল ঘাম ছুটে যাচ্ছে ,অবশেষে মালিক বলল (ইশারায় চুপ মুখে আঙুল দিয়ে। একটাও কথা নয় প্রথমে ঢুকেই আমি একটা সুন্দর রানী কালারের শাড়ি পছন্দ করে জিজ্ঞাসা করেছিলাম শাড়িটার কত দাম তখন মালিক বলেছিল কত আর হাজার খানেক হবে,) সেই শাড়ি খানা অত দামি শাড়ির ওপর ফেলল। বলল দেখুন তো দিদি। এটা গায়ে দিয়ে কেমন লাগছে সঙ্গের পুরুষটিও বলল আঙুল তুলে দারুণ। ব্যাস এবার দুজনেই বলে তাহলে আমি? মালিক বললে কোন চিন্তা নেই। আর একটা আছে,একই রঙের ডুপলিকেট।

আগের একটি দামী শাড়ি বাছা ছিল,

 মোট তিনটি হচ্ছে আরেকটি চাই মালিক বললে অসুবিধে নেই ওই যে গাট্টি আছে ওই গাট্টিতে আরেকটা আছে ঐরকম ডুপলিকেট শাড়ি আরেকটি শাড়ি ও একই রকম এনে দিল মালিক এবং বিল করল কুড়ি হাজার টাকা আর ওরা সেই চারটি শাড়ি কুড়ি হাজার টাকায় নিয়ে চলে গেল। এরপর ব্যস্ত হয়ে পড়ল মালিক সমস্ত শাড়ি তোলার জন্য আর বলল বীথি তুমি ওদের একটু সাহায্য কর ওরা দুজনে যথেষ্ট এক্সপার্ট শাড়ি তোলার কাজে, তবুও আমাকে সঙ্গে নিল। আমিও কিছু শাড়ি পাট করে ওদের এগিয়ে দিতে লাগলাম বড় ট্রাঙ্ক  দুটো ভরে আসার সময় এক বয়স্ক ভদ্রমহিলা এসে ঢুকলেন । বেশ সুন্দর দেখতে সাজগোজ করা এসে বসে হাঁপাতে লাগলেন মালিক বলল চা নিয়ে আয় ততক্ষণ একটু জিরিয়ে নিক ,তারপর আমি শাড়ি দিচ্ছি । মাসিমা বলল আমার পুজোর শাড়ি চাই আমি পছন্দ করব না ঠাকুর সবার তাই তোমরাই পছন্দ করে দেবে আমি শুধু নেব দেখো কালো না থাকে।বললে ঠিক আছে মা আপনি চিন্তা করবেন না মালিক সঙ্গে সঙ্গেই বলল গনসা ওই যে শাড়ি আমি একটু আগে ওনাকে  দিলাম ওই শাড়ি তিনখানা নিয়ে আসো বিস্কুটেতে লাল  যে শাড়িটা ওটা মা দুর্গার, আর হলুদ খোলে লাল পাড় যেটা ওটা মা সরস্বতীর ,আর সবুজে লালেতে যেটা সেটা মা লক্ষ্মীর আর তিনটি  কুঁচোনো ধুতি আনো, একটা শিবের একটা গণেশের একটা কার্তিকের তিনটে পাঞ্জাবি দিও একটা হলুদ একটা সবুজ একটা সাদা ।সাদাটা শিবের, হলুদটা গনেশের ,আর সবুজটা কার্তিকের ।আর ছটা  গামছা দিও, আর কলা বউয়ের একটা লাল পেড়ে শাড়ি দিয়ো। এছাড়া ছটা ধুতি ছটা লাল পেড়ে আলাদা।এতে বীথি মনঃক্ষুন্ন হয়ে বলল সবার জন্য দামি শাড়ি আর বাড়ির বউ এর জন্য একটা কম দামি লাল পেড়ে শাড়ি ! এ কথা শুনে মালিক বলল যে মায়ের এবার বেশি দামি শাড়ি পরার শখ হয়েছে শাড়িটা তুলে রাখো। মায়ের জন্য একটা দামি লাগবে ,মাসিমা বলল আমি কিন্তু দশ হাজার ই দেব এর বেশি দেব না তখনই ওর অপর কর্মী চা নিয়ে এসে হাজির হলো এবং মাসিমাকে চা দিতে লাগলো চা খেতে খেতে বলল আর শোনো মেয়ে,--- কলা বউ গণেশের বউ না কলা বউ নবপত্রিকা মা দুর্গার নয় রূপ কলা গাছের সাথে বাকি আটটি গাছ একত্র করে দুটো বেল মাঝখানে দিয়ে বাঁধা হয়। কলা গাছকে চান করানোর পর এবং এই নব পত্রিকাকে ৯ রূপ দুর্গা হিসাবে পুজো করা হয় দুর্গার ডানদিকে এই নবপত্রিকা থাকে। আবার দুর্গার ডানদিকে গণেশ ও থাকে ফলে মনে হয় গণেশের বউ। কিন্তু বউ হলে গণেশের ডান দিকে থাকতো না বাম দিকে থাকতো মানুষ এটা ভুল করে এই নটি গাছ হল হল কলা কচু হরিদ্রা, জয়ন্তী বিল্ব  দারিম্বো মান ধান অশোক আর যথাক্রমে দেবীর নয়রূপ হলো , ব্রহ্মনি কালিকা উমা কার্তিকী শিবা রক্তদন্তিকা চামুন্ডা লক্ষ্মী শোকরোহিতা এসব বলার পর দশ হাজার টাকা দিয়ে জিনিসপত্র গাড়িতে তুলে নিয়ে গাড়িতে উঠে চলে গেল।

 মালিক বলল কি শিক্ষা হলো আজ তোমার? আমি বললাম দু'রকম ধনী দেখলাম। ছ্যাঁচড়া আর বনেদি ! মালিক বিস্ময়ে আমার দিকে চেয়ে রইল ,

কিছুক্ষণ পর বললো দুজনকেই শাড়ি বিক্রি করতে হবে, তবে পদ্ধতি আলাদা।

উপন্যাস - পদ্মাবধূ || বিশ্বনাথ দাস || Padmabadhu by Biswanath Das || Fiction - Padmabadhu Part -31


 

এইভাবে মাস, বছর অন্ধকারের অভিসার সুশীল বাবুর কর্ণগোচর হলো সুশীল বাবু হেমন্তবাবুর বিশ্বস্ত কর্মচারী ও বিশিষ্ট বন্ধু। দেবীদাসের অধঃপতিত জীবনকে বাঁচাতে হলে এমন কোন পথ অবলম্বন করতে হবে যাতে হেমন্তবাবুর মান মর্যাদা যেন ক্ষুন্ন না হয়। একমাত্র পথ দেবীদাসের বিয়ের ব্যবস্থা করা। দেবীদাস যদি এই অসৎ পথের পথিক না হতো তাহলে কোন প্রশ্নই উঠতো না ।


হেমন্তবাবু সুশীল বাবুর সাথে একমত। হেমন্তবাবু টেবিলে রাখা এক টুকরো কাগজ নিয়ে পত্র লিখে সুশীল বাবুর হাতে দিয়ে বললেন, এই পত্রটি নিয়ে উল্লেখিত ঠিকানায় গিয়ে ভদ্রলোককে খোঁজ করবেন। উনি পত্রটা পড়ার পর কি মতামত করছেন, সেই অনুযায়ী আপনি কাজ করবেন। মতামত হলে তৎক্ষণাৎ তাকে ও তার মেয়েকে কলকাতায় নিয়ে আসবেন।

সুশীলবাবু রওনা হয়েছিলেন, এবং তাদের সন্ধান না পাওয়ার জন্য হতাশ হয়ে ফিরে এলেন। তিনি হেমন্তবাবুকে বিস্তারিত জানালেন, বর্তমানে ঐ নামে কেউ নেই। যদিও ছিলেন তারা কোথায় আছে তা জানেন না ।

হেমন্তবাবু ওদের পলাতকের কথা শুনে গভীর ভাবে দুঃখ পেলেন। সুশীলবাবু এও বললেন ওদের সন্ধান পাওয়া সহজ সাধ্য নয়। অন্যত্র ব্যবস্থা করতে হবে।

হেমন্তবাবু কিছুক্ষণ নীরব থাকার পর উনি সুশীল বাবুর উপর ভার দিলেন যত শীঘ্র পারেন দেবীদাসের বিয়ের ব্যবস্থা করতে।

দেবীদাসের বিয়ের এক বছর কেটে যাবার পর দেবীদাস জনক হলো ঠিক, কিন্তু পতিতালয়ের অঙ্গন ভুলতে পারল না। দেবীদাসের এই অধঃপতন কোন মতেই জানতে পারলেন না। তিনি স্থির করলেন, সমস্ত ব্যবসার ভার সুশীলবাবুকে দিয়ে তীর্থে যাবেন। কদাচিৎ যদি দেবীদাস ঐ নোংরা পথ ত্যাগ করে ব্যবসার দিকে মনোনিবেশ করে তাহলে তিনি পুনরায় বাড়ীতে পা রাখবেন নচেৎ নয়।

দেবীদাসের তথাপি কোন পরিবর্তন হলো না। ঐ সব কথা ভাবতে ভাবতে মনে হলো সে অতল জলে তলিয়ে গেছে।

হঠাৎ ড্রাইভারের ডাকে তার তন্দ্রা কাটলো। ড্রাইভার বলল, কি ভাবছেন দেবীবাবু? দেবীদাস মুখখানি মুছে বলল, ও কিছু না। ড্রাইভার ফের বলল, দেবী বাবু দেখুন তো এই মেয়েটিকে চিনতে পারেন কি না।

দেবীদাসকে একটা ফটো দিল। ফটো হাতে নিয়ে দেবী দাস বলল, চেনা মনে হচ্ছে, তবে এর সাথে আমার সম্পর্ক কি?

 সম্পর্ক নিশ্চয় আছে দেবীদাস বাবু। জলাগলি পতিতালয়ে এই মেয়েটিকে নিয়ে সারারাত কাটিয়ে ছিলেন এবং বারংবার পাশবিক অত্যাচারের জন্য মেয়েটি হার্টফেল করে।

 দেবীদাস চিৎকার করে বলল, নেভার। এহতে পারে না, এটা ষড়যন্ত্র। আমাকে বিপদে ফেলার কৌশল।

 মনে করুন আপনাকে আমার বস বিপদে ফেলছেন।

 তাহলে এই বিপদ হতে কি করে উদ্ধার পাবেন তার ব্যবস্থা করুন। নতুবা আপনার বার বৎসর জেল নয় ফাঁসি।

 দেবীদাস এক রকম চমকে উঠল। কি বলছেন আপনি? আমি বলছি না। আদালত বলবে। এই দেখুন মেয়েটির ডেথ সার্টিফিকেট। এই তার মর্গের রিপোর্ট। আপনি একজন মেডিক্যাল ছাত্র ছিলেন, আশাকরি এই রিপোর্ট দেখলে বুঝতে পারবেন এ সত্য না মিথ্যে। আপনার টর্চারের জন্য মেয়েটি মারা গেছে, রিপোর্টে তাই বলছে।

 একথা শুনে দেবীদাস চমকে উঠলল। তার দেহের সমস্ত শিরা উপশিরা যেন কাজ করতে চাইছে না। মনে হল ওর মাথায় যেন বাজ পড়ল। এই ভদ্রলোক কি চাইছেন? দেবীদাস এও বুঝতে পারল, সে মারাত্মক ফাঁদে পা দিয়েছে। এই জাল হতে মুক্তি পাওয়া সহজ সাধ্য নয়। সে বুঝতে পারল এদের গ্রুপ অত্যন্ত শক্তিশালী। ওকে ফাঁসিয়ে ভালো টাকা উপার্জন করতে চাইছে।

 দেবীদাস নম্র কণ্ঠে বলল, আপনি ও আপনারা কি চাইছেন? কত টাকা আপনি ও আপনাদের প্রয়োজন?

 ড্রাইভার বললেন, আপনি অতি বুদ্ধিমান, যাক এবার আপনি সহজ পথ অবলম্বন করতে চলেছেন। খুব খুশী হলাম। তবে আপনি স্বীকার করছেন মেয়েটি অর্থাৎ কাবেরী আপনার অত্যাচারের জন্য মারা গেছে।

 দেবীদাস, কাবেরীকে মাত্র এক ঘন্টার জন্য দেখেছিল। তবে হ্যাঁ, সেই দিন রাত্রের কথা, কাবেরী ওকে মদ ও কাজু সরবত খাইয়ে মাতাল বা বেহুস করেছিল ঠিকই, তবে ওকে পাশবিক অত্যাচার - না হতে পারে না। ওরা আমাকে ব্ল্যাকমেল করতে চাইছে। কিন্তু চামেলী অর্থাৎ কাবেরীর দিদি ভোরের দিকে আমার তন্দ্রা কাটিয়ে বলেছিল,

 আপনি চলে যান নইলে বড় বিপদে পড়বেন। চামেলী ট্যাক্সি ডেকে ওতে উঠিয়েছিলো।

 ড্রাইভার বলল, এই ছবিটা দেখলে আপনার সন্দেহ স্বচ্ছ কাঁচের মতো ক্লিন হয়ে যাবে। দেবীদাসকে একটা ছবি দিলেন। ও বলল, ভালো করে দেখুন মেয়েটা প্রায় বিবস্ত্র হয়ে মৃত অবস্থায় পড়ে আছে। আপনি তাকে বারবার আপনার বাসনা চরিতার্থ করে, নিজেকে পরিশ্রান্ত করে ওর বুকের উপর মাথা রেখে ঘুমুচ্ছেন। কখন যে মেয়েটি। মারা গেছে আপনি জানতে পারেন নি।

দেবীদাস এবার রাখান্বিত হয়ে বলল, এই ব্যাপারে আপনার অভিপ্রায় কি? ড্রাইভার বলল, আমি কিছু জানি না। আমার কাজ আপনাকে আমাদের বস মিঃ

জ্যাকির কাছে আপনাকে পৌঁছে দেওয়া। উনি আপনাকে কি উপহার দেবেন আমি

বলতে পারবো না। তাহলে আর বিলম্ব না করে আমাদের আড্ডায় গিয়ে হাজির হই কেমন? দেবীদাস বাকরুদ্ধ। আড্ডাতে গিয়ে হাজির হলো। এ আড্ডা যেন আসামীদের কারাকক্ষ।

ওদের বস মিঃ জ্যাকি আধা বাংলা, আধা হিন্দি মিশ্রিত ভাষায় বললেন, আইয়ে মিষ্টার দেবীবাবু। হাপনাকে বার বার নমস্কার জানাচ্ছি। আপনি হামার আড্ডায় এসে আপনি আমার দিল খুস করে দিলেন। হামি বহুত দিনোসে হাপনাকে হামি টার্গেট করেছিলাম। কব হাপনাকে হামি হামার ছোটা ঘরমে আনতে পারবো। আজভী সে আশা পূরণ হলো।

দেবীদাস প্রায় রুক্ষ কণ্ঠে বললেন, ভণিতা ছেড়ে বলুন কেন আমাকে এখানে আনা হয়েছে।

• মিঃ জ্যাকি বলল, আলবাত বোলবে। লেকিন কি খাবেন বলিয়ে। হুইস্কি, থ্রি এক্স

রাম, বিয়ার। কোনটা হাপনার পসন্দ আছে। দেবীদাস মেজাজে বলল, কোনটাই আমার পছন্দ নেই বা প্রয়োজন নেই। কাজের

কথায় আসুন।

জ্যাকি হাসি মাখা মুখে বলল, আরে ভাই এতো ছটপট করছেন কেনো? কামভী জরুর আছে, লেকিন থোড়া ঠর জাইয়ে। হাপনি হামাকে চিনবেন, হামি হাপনাকে চিনবো। তব কামের কথা হোবে। এক সময় জ্যাকি চিৎকার করে হাঁক দিলো - আরে, ও রাতনা, দেবীবাবুকে লিয়ে সরবত লিয়ে আয়।

তৎক্ষণাৎ একটা বেঁটে লোক একটা ট্রে করে দুটো গ্লাস এনে দেবীদাসকে দিল। দেবী দাস না করতেই জ্যাকি বলল, সোচিয়ে মত দেবীবাবু, এ শরাব না আছে, কাজু কা সরবত আছে, পিজিয়ে।

দেবী চুমু দিয়ে সটান স্টমাকে চালান করল। এবার হাপনাকে হামার কামকা বাত বলছি। হামি এক মতলব করেছি দেবীবাবু। এই মতলবে হামাকে সাহায্য করতে হোবে।

কি মতলব কিসের মতলব জরুর হাপনাকে বাতাবে। লেকিন হাপনি হামাকে মদত না করলে হামার কাম হোবে না।

দেবীদাস বলল, আপনাকে কিভাবে সাহায্য করতে হবে?

ও বাত বাদমে বলছি। ইসকো পহেলে হাপনি বলেন তো দেবীবাবু, একটা বিউটিফুল লেড়কী কো যানসে মেরে দিলেন?

দেবীদাস রাগত স্বরে বলল, এ মিথ্যা। আমাকে ষড়যন্ত্র করে ফাঁসানো হয়েছে। বিলকুল সবাত বোলেছেন দেবীদাসবাবু। লেকিন হাপনি জানলেন কি করে হাপনাকে বিনা মতলবে ফাঁসানো হয়েছে?

তবে এখন আমি তর্কে যেতে চাইছি না বলুন আমায় কি করতে হবে। মিঃ জ্যাকি বলল, ঠিক হ্যায় তব শুনিয়ে, হামার মতলব হলো হাপনি মেডিকেল কলেজ মে পড়াশুনা করতেন, ইসলিয়ে হাপনাকে হামি চয়েস করেছি, আপনাকে হামার একটা ছোটা কাম করতে হোবে। কলেজ কা ল্যাবরেটারিমে যে EGC মেসিন ভী আছে ও ভী হামার হাতে তুলে দিতে হবে।

অসম্ভব, এ কাজ আমি করতে পারবো না। দেবীদাস বলল। পারবেন দেবীবাবু পারবেন।

যদি আমি ঐ মেসিনের মূল্য দিই তাহলে ঐ মেসিনকে চুরি করার কি প্রয়োজন ? ও হাপনি বুঝবেন না দেবীবাবু। ও মেসিন হামার লাইফকে বদলে দেবে। ও মেসিন ভী কি চিজ আছে হাপনি জানবেন না। হাপনি যদি রাজী ভী না থাকেন, তব হাপনাকে কারাবাস করতে হোবে। হাপনাকে কোইভি বাঁচাতে পারবে না দেবীবাবু। হামি হাপনাকে তি রোজ টাইম দিলাম, কামভী কোরবেন কিনা হামাকে বাতায়ে দেবেন, লেকিন হামার সাথে বেইমানী করলে হাপনার বাবা হেমন্ত বাবু হামাদের হাতমে মারা পড়বেন। এই বাত দেমাক মে রাখ লিজিয়ে। হামার লোক হাপনাকে বাড়ী পৌঁছে দেবে, হামি এখন আসছি।

মিষ্টার জ্যাকি না দাঁড়িয়ে বিদায় নিলেন। জ্যাকির লোক দেবীদাসকে বাড়ীতে পৌঁছে দিল।

Monday, December 19, 2022

ছোট গল্প - রিন্টু ও পিঁপড়ে || লেখক - ইমরান খান রাজ || Written by Imran Khan Raj || Short story - রিন্টু ও পিঁপড়ে


 


রিন্টু ও পিঁপড়ে 

ইমরান খান রাজ 



আজ রিন্টুর ২য় সাময়িক পরীক্ষার ফল প্রকাশ হবে। তাই সে খুব চিন্তিত। কারণ বাবা বলেছে পরীক্ষায় ভাল রেজাল্ট করতে হবে। না করতে পারলে ভয়াবহ শাস্তি ! সবেমাত্র চতুর্থ শ্রেণীতে পড়াশোনা করে রিন্টু। এরপরও বাবার কঠোর নির্দেশনা। আজ ক্লাসে গিয়ে সবার পেছনের বেঞ্চে বসে সে। কারও সাথে কথা না বলে, মাথা নিচু করে চুপটি মেরে বসে থাকে। এদিকে স্যার প্রবেশ করেছে ক্লাসে। এক এক করে ডেকে সবার রেজাল্ট তাঁর তাঁর হাতে তুলে দিচ্ছেন স্যার। হঠাৎ ডাক পড়লো রিন্টুর। স্যারের ডাকে সারা দিয়ে সামনে এগিয়ে যায় সে। স্যার রেজাল্ট হাতে দিয়ে বললেন, বাবা রিন্টু, তুমি পড়াশোনা করো না কেনো? এইবারও তোমার দুই বিষয়ে ফেল এসেছে। বার্ষিক পরীক্ষায় কিন্তু ভাল ফলাফল করতে হবে৷ 


স্কুল ছুটির পর ধীর পায়ে হেঁটে বাসার দিকে যেতে থাকে রিন্টু। বাসায় পৌঁছে প্রথমে মা'কে রেজাল্ট কার্ড দেখালে মা কিছু না বলে সরাসরি রিন্টুর বাবার কাছে নিয়ে যায়৷ বাবা তো রেজাল্ট দেখে বেজায় চটে যান রিন্টুর ওপর। খুব রাগারাগি করে তাঁকে। পরে তাঁর মা বুঝিয়ে-শুঝিয়ে রিন্টুকে নিয়ে পাশের রুমে চলে যায়। বাবা-মায়ের একমাত্র ছেলে রিন্টু। খুব আদরের। বাবার স্বপ্ন, রিন্টু একদিন অনেক বড় হবে। তাই ছোটবেলা থেকেই তাঁর পড়াশোনার ব্যাপারে বাবা খুব কঠোর। তবে বাবার খুব প্রিয় এবং আদরের ছেলে সে। কিন্তু আজ রিন্টুর খুব মন খারাপ। বাবা বকেছে তাঁকে ! মা খাবার টেবিলে দিয়ে খেতে বলে। তবে সে খাবার না খেয়ে শুধু এক বোতল পানি নিয়ে চলে যায় মাঠে। 


মাঠের এক কোণে বসে সে একটু একটু করে পানি খায়। হঠাৎ সে লক্ষ্য করে, তাঁর পাশেই একটা গর্ত। সে খুব আগ্রহ নিয়ে গর্তের ভিতরে চোখ দেয়, দেখার জন্য। কিন্তু ভিতরে অন্ধকার থাকায় কিছুই দেখতে পারে না। তখন সে তাঁর হাতে থাকা পানির বোতল নিয়ে পুরো পানি ঢেলে দেয় গর্তের ভেতর। কিন্তু কোন সারা শব্দ নেই। হঠাৎ বাঁচাও বাঁচাও চিৎকার শুনতে পায় রিন্টু। তারপর দেখে গর্তের ভেতর পানির মধ্যে হাবুডুবু খাচ্ছে এক পিঁপড়া। রিন্টু তো অবাক! পিঁপড়ে আবার কথা বলতে পারে ? পিঁপড়ের আর্তনাদ শুনে, রিন্টু দৌড়ে গিয়ে একটা গাছ থেকে ডাল ভেঙে আনে। সেই ডালটি গর্তে ঢুকিয়ে পিঁপড়েটিকে উপরে তুলে আনে রিন্টু। জীবন বাঁচানোর জন্য রিন্টুকে ধন্যবাদ জানায় পিঁপড়ে। তখন পিঁপড়েটি বলে, তুমি কি আমার বন্ধু হবে? রিন্টু পিঁপড়ের কথা শুনে রাজি হয়ে যায়। তারপর রিন্টু, পিঁপড়ে'কে জিজ্ঞেস করে, তুমি এই গর্তে একা কেনো? তোমার বাবা-মা কোথায়? বাবা-মায়ের কথা শুনে পিঁপড়েটির মন খারাপ হয়ে যায়। তারপর মৃদুস্বরে উত্তর দেয়, গত বর্ষায় আমার বাবা-মাসহ আমার প্রজাতির সকল পিঁপড়ে পানিতে ডুবে মারা যায়। এখন একমাত্র আমিই বেঁচে আছি। আমার কোনো বন্ধু নাই। আমি খুব একা। এই কথা শুনে রিন্টু বলে, কে বলেছে তুমি একা! আজ থেকে তো আমরা দু'জন বন্ধু। আমরা সারাজীবন বন্ধু হয়েই বেঁচে থাকবো৷ রিন্টুর কথা শুনে পিঁপড়েটি অনেক খুশি হয়। তারপর রিন্টু ও পিঁপড়ে মনের আনন্দে গল্প করতে থাকে। 

ছোট গল্প - মাস্টার মশাই || লেখক - অমিতাভ ভট্টাচার্য্য || Written by Amitabh Bhattacharya || Short story - Master moshay


 

মাস্টার মশাই 

অমিতাভ ভট্টাচার্য্য


ওদের দুজনের বন্ধুত্ব সেই ছেলেবেলা থেকে। কখন যেন একসাথে খেলাধূলো করায় টান পড়ল। তারপর এক সময় দুজনের মধ্যে সলজ্জ দৃষ্টি বিনিময় শুরু হল। তখন ওরা দূজনেই ইস্কুল জীবনের শেষের দিকে। গরমের ছুটির এক নির্জন দুপুরে, হঠাৎ সমীরণ খুব উচাটন মন নিয়ে একটা বই শর্বরীকে ফেরৎ দেবার অছিলায় ওর একটা হাত ধরে বলেছিল, ‘তুমি আমাকে কোনদিন ভূলে যাবে না তো?’ শর্বরী তাকে কথা দিয়েছিলো যে সে ওর জন্যে আজীবন অপেক্ষা করে থাকবে। কিন্তু সে কথা রাখেনি। বিএ পরীক্ষার আগেই বাবা-মার পছন্দের পাত্রের সঙ্গে বিয়েতে বসে যায়। বাবা-মার চাপের কাছে ও যে কতো অসহায়, তা একটা কাগজে বিস্তারিত লিখে এক বান্ধবীর হাত দিয়ে বিয়ের দিন সকালে সমীরণের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছিলো। সমীরণের বড়দা বেশ কিছুদিন হল সংসারের হাল ধরেছে। মেজদা একটা ভাল সরকারী পদে চাকরি পাবার পর বড়দার সঙ্গে যোগ দেয়। আস্তে আস্তে সংসার বড় হতে থাকল। একদিন বড়দা অসুস্থ অবস্থায় অফিস থেকে তারাতারি বাড়ি ফিরে রাতের দিকে ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়ল। ডাক্তার ডাকা হল সঙ্গে সঙ্গে। ডাক্তার বড়দাকে পরীক্ষা করে বলল, ‘ম্যাসিভ স্ট্রোক’। বড়দা হাসপাতালে ভর্তি হল। এক সপ্তাহ পরে ছাড়া পেয়ে প্যারালাইজড অবস্থাতে আজও শয্যাশায়ী। বড়দার এই অবস্থায় মেজদা বাবাকে বলল, ‘আমরা চারজন এই সংসারে না থাকলে, আর্থিক চাপটা তোমার অর্ধেক হয়ে যাবে। সুবিধে হবে সংসার চালাতে। আমরা না হয় মাঝে মাঝে এসে দেখে যাবো তোমাদের।’ যেদিন মেজদা, মেজবৌদি আর তার দুই ছেলেমেয়ে নিয়ে আলাদা হয়ে গেল, বাবা সেদিন সমীরণের একটা হাত নিজের দুহাত দিয়ে আঁকড়ে ধরে অঝোরে কাঁদতে কাঁদতে বললেন, ‘সমু, আমি আবারও  হেরে গেলাম রে।’ এই প্রথম সমীরণ তার বাবাকে কাঁদতে দেখল। বড়দা যেখানে কাজ করত তারা মানবিকতা দেখিয়েছিল। সমীরণ পড়াশুনো বন্ধ করে সেই চাকরিতে মন দিল। এর কিছুদিন পরে বাবা মারা গেলেন। মাঝে মাঝে শর্বরীর কথা সমীরণের মনে আসেনা তা নয়। যে অল্প সংখ্যক মানুষের সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেবার ক্ষমতা আছে, সমীরণের ধারণা শর্বরী তাদের মধ্যে একজন।  



ট্রেনটা আজ খুব দেরিতে যাচ্ছে। বাড়ি পৌঁছতে নির্ঘাৎ রাত হয়ে যাবে সমীরণের। কিছুদিন ধরে চোখ নিয়ে সমস‍্যায় পড়েছে। ওর বন্ধু দেবাশীষ ওকে পরামর্শ দিয়েছে চোখের ডাক্তারের কাছে যাবার জন‍্যে। কিন্তু সমীরণের সাহস হচ্ছে না। কত টাকা ডাক্তারের ফি তাই বা কে জানে। যদি চশমার কাঁচ পাল্টানোর কথা বলে, তার জন্য খরচ কত পড়বে সমীরণ জানেনা। জানবেই বা কি করে? অসুখ বিসুখ সর্দি কাশি মাঝে মধ‍্যে যে হয়না তা নয়। তবে তার জন্যে ডাক্তার বদ‍্যি দেখিয়ে ওষুধ খাওয়ার চল অনেকদিন হল বাড়ি থেকে উঠে গেছে। মাস গেলে মাইনের টাকাটা বড় বৌদির হাতে দিয়ে দেয়। বড় বৌদি সেই টাকা থেকে ওকে ওর হাত খরচ আর ট্রেনের মান্থলীর খরচ বাবদ টাকা দেন। এছাড়া দুটো রুটি আর আলু ভাজা বা কোনো একটা তরকারী অফিসে যাবার সময় টিফিন বাক্সে ভরে ওর হাতে দেন। হাত খরচ বলতে তেমন কোনো খরচ ওর নেই।  টাকাটা সমীরণ জমিয়ে রাখে।   



ষ্টেশন থেকে বাড়ি যাবার জন্যে একটা শর্টকাট রাস্তা আছে। রাস্তাটা সন্ধ্যের পর অন্ধকার থাকে। ঐ রাস্তা দিয়ে যাবে কি যাবেনা এই নিয়ে যখন দোটানায়, তখন একজন যুবক সমীরণের পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করে বলল, 'মাস্টারমশাই কেমন আছেন?' সমীরণ খুব অবাক হল। পায়ে হাত দিয়ে আজকাল তাকে কেউ বড় একটা প্রণাম করে না। তিন ভাই দুই বোনের মধ‍্যে সে সবার ছোট। ছোটবেলা থেকে সে বড়দের প্রণাম করেই এসেছে। সমীরণ যুবকটিকে বলল, 'আমি তো ঠিক চিনতে পারলাম না তোমাকে।'


আমাকে চিনতে পারলেন না মাস্টারমশাই? আমি অরুণাভ; আপনার ছাত্র ছিলাম।


আমি তো কোনদিন স্কুলে পড়াইনি। তুমি বোধহয় আমাকে অন‍্য কারোর সাথে গুলিয়ে ফেলেছ।


আপনি আমাকে বাড়িতে পড়াতেন মাস্টারমশাই; মাধ‍্যমিক পর্যন্ত পড়িয়েছেন।



অরুণাভর চেহারাটা মনে পড়ল সমীরণের। অরুণাভ যখন মাধ‍্যমিক পরীক্ষা দেয় তখন ছিল ছিপছিপে চেহারার কিশোর। একেবারে চিনতে না পারার মতো পরিবর্তন ওর চেহারায় আসেনি বটে। তবে সমীরণের ওকে চিনতে একটু সময়ই লাগল। অরুণাভকে স্নেহ করত সমীরণ। সবাই অবশ‍্য এই স্নেহ করাকে তির্যক দৃষ্টিতে দেখত, "বড়লোক বাড়ির টিউশনি, মাস গেলে অনেক টাকা মাইনে। তার ওপরে ভারী টিফিন খেতে দেয়। ছাত্রকে স্নেহ না করে উপায় আছে?" 



সমীরণ হাত বাড়িয়ে ওর কাঁধ দুটো ঝাঁকিয়ে দিয়ে বলল, আরে অরু, কতো বড়ো হয়ে গেছিস! কি করছিস এখন?


বাবার ব‍্যবসা দেখছি মাস্টারমশাই।


লেখাপড়া আর করলি না?


বাবা একদিন বললেন, 'এতো বড় ব‍্যবসা, আমার অবর্তমানে সাতভূতে খাবে। ছেলেকে লেখাপড়া শিখিয়ে কি লাভ হোলো?' আমি তখন ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছি। পাশ করে সোজা বাবার ব‍‍্যবসায় ঢুকে পড়লাম।


সাতভূতকে একেবারে অভুক্ত রেখে দিলি? 


দুজনেই হেসে উঠল এই কথায়।  



অরুণাভর বাবার খুব শখ ছিল ছেলেকে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে পড়াবেন। নিজে বিশেষ লেখাপড়া করতে পারেননি। সাহস করে একমাত্র ছেলেকে ইংরেজি মাধ‍্যম স্কুলে পর্যন্ত ভর্তি করাতে পারেননি। সমীরণ যেদিন পড়ানোর খবর পেয়ে দেখা করতে গেল, সেইদিন অরুণাভর বাবা নিজের মনের কথাটা ওকে বলে ফেললেন, 'বাড়িতে তো ইংরেজিতে কথা বলা হয়না, তাই মাস্টার রাখা'। কথাটা শুনে অরুণাভ বলেছিল, 'আমি তো ইংরেজিতে কথা বলতে পারিনা। আপনি বরং অন‍্য কোন টীচার দেখুন, যিনি পড়ানো আর ইংরেজিতে কথা বলা দুটোই একসাথে শেখাতে পারবেন।’ অরুণাভর বাবা সমীরণের এই কথা শুনে অপ্রতিভ হয়ে বললেন, 'না, না, আমি ঠিক তা বলতে চাইনি। আপনারা শিক্ষিত পরিবারের ছেলে, যা পড়াবেন তাতেই আমার ছেলের অনেক হবে।' 



অরুণাভ আর তার মাস্টারমশাই একই পাড়াতে থাকে। একই পাড়াতে থাকলেও দুজনের মধ‍্যে দেখা সাক্ষাৎ অরুণাভর মাধ‍্যমিক পরীক্ষার রেজাল্ট বেরোবার পর এই প্রথম। অরুণাভ ভালো ফল করেছিল মাধ‍্যমিকে। রেজাল্ট বেরোবার পর মিষ্টির বাক্স নিয়ে মাস্টারমশাইয়ের বাড়ি গিয়েছিল খবরটা দিতে। দরজায় কড়া নাড়তে, একটি মিষ্টি দেখতে মেয়ে এসে দরজা খুলে ওর দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল কয়েক মুহূর্ত। মেয়েটিকে আগে কখনো অরুণাভ দেখেছে বলে মনে করতে পারল না। সে মেয়েটিকে দেখে নার্ভাস হয়ে গেল। ওর বাবা ওকে কো-এডুকেসন স্কুলে ভর্তি করাননি। ওর বাবার ধারণা, কো-এডুকেসন স্কুলে গিয়ে মেয়েদের সাথে মেলামেশা করে ছেলের লেখাপড়া একেবারে বারোটা বেজে যাবে। মেয়েদের সাথে মেলামেশা না করার ফলে, মেয়েটির সাথে কথা বলতে গিয়ে অরুণাভ তোতলাতে শুরু করলো। কোনরকমে মেয়েটিকে বলল, 'আমি মাধ‍্যমিকে নাইন্টি থ্রি পারসেন্ট পেয়েছি। মাস্টারমশাইয়ের জন‍্য মিষ্টি এনেছি।' কথাটা শেষ করে মেয়েটির হাতে মিষ্টির বাক্স তুলে দিয়ে দ্রুত পেছন ফিরে চলে যেতে যেতে শুনতে পেল মেয়েটি বলছে, 'কাকুকে কি বলব ?' অরুণাভ আদৌ এই কথার উত্তরে কিছু বলতে পেরেছিল কিনা, আজ আর ওর মনে নেই। সেদিন সোজা বাড়ি চলে এসেছিল। পড়াশুনোর ব‍্যস্ততায় তারপর অনেকগুলো বছর কেটে গেছে। 



অনেকদিন পরে আপনার সঙ্গে দেখা হলো মাস্টারমশাই। আসুন আপনাকে বাড়ি পৌঁছে দিই।


আমাকে বাড়ি পৌঁছে দিবি মানে? আমিতো নিজে হাঁটতে চলতে পারি।


না, না তা বললে হবেনা। ড্রাইভারকে বলে দিয়েছি ষ্টেশনে গাড়ি নিয়ে আসার জন‍্যে। 


আমার সাথে হেঁটে চল। কথা বলতে বলতে দিব‍্যি কখন পৌঁছে যাব বুঝতেই পারবি না। এতে শরীর মন দুটোই ভালো থাকবে। ড্রাইভারকে ফিরে যেতে বলে দে।



স্টেশন থেকে বেরিয়ে, রেললাইনকে বাঁ দিকে রেখে ডান দিকে পুকুরের পাশ দিয়ে সোজা গেলে শর্টকাট রাস্তায় গিয়ে পড়বে। ঐ রাস্তা ধরে এগো্তে থাকল ওরা দুজনে। গাড়ি ঘোড়া খুব কমই যায় ঐ রাস্তা দিয়ে। পুরো রাস্তাটাই নিরিবিলি আর  অন্ধকার। দুপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কয়েকটা বাড়ির জানলা দিয়ে যেটুকু আলো রাস্তায় এসে পড়ে তা সমীরণের দেখার পক্ষে যথেষ্ট নয়। দু'পা এগোতেই সমীরণ হোঁচট খেল। পুরোনো চটিটা এই হোঁচট খাবার ফলে ছিঁড়ে গেল। সমীরণ ছেঁড়া চটিটা হাতে তুলে নিয়ে অরুণাভকে বলল, ‘গল্প করতে করতে এগোতে থাকলে রাস্তার দূরত্ব অনেক কমে যায়। আমি যখন একা যাই, নিজেই নিজেকে নানা রকম গল্প বলি।  অনেক রাস্তা পেরিয়ে এলাম বলে মনেই হয় না। সমাজ সেবা করতে গিয়ে সমাজের কাছে যে অপদস্ত হতে হবে, এমনটা  কেউ ভাবে না। কিন্তু আমাদের জীবনে ঘটেছিলো যখন আমরা বন্ধুরা মিলে সমাজ সেবা করতে উদ্যোগ নিয়েছিলাম।  



তখন আমি কলেজে পড়ি। কেন জানিনা পাড়াতে সবাই আমাকে ভালোছেলে বলে ভাবতো। বাবা হেডমাস্টার মশাই ছিলেন বলে হয়ত হতে পারে। আমার বন্ধুরা অবশ্য সত্যিই ভালোছেলে ছিল। ভালোছেলেদের দলে থাকার দৌলতে আমার নামের ওপরে একটা ভালোছেলের ছাপ পড়ে গিয়েছিল। সেই সময় পাড়ায় কোন সমস্যা হলে পাড়ার ছেলেদের ডাক পড়ত। এখনকার মত তখন পিচের রাস্তা ছিলোনা আমাদের পাড়াতে। ছিলো কাঁচা মাটির রাস্তা। রাস্তার দুপাশে কাঁচা নর্দমা। বর্ষায় নর্দমার জল উপছে রাস্তা ভেসে যেত। বৃষ্টি থেমে গেলে সেই রাস্তা দিয়ে হাঁটা মুশকিল হত। কাদায় ভর্তি হয়ে থাকত গোটা রাস্তাটা। লোকে জুতো বা চটি খুলে হাতে নিয়ে ঐ রাস্তাটুকু পার হয়ে যেত। চটি ছিঁড়ে যাবার সম্ভাবনা ছিলোনা । 



বর্ষাকালে রাস্তা দিয়ে চলাফেরা করার সমস্যা হচ্ছে দেখে পাড়ার কয়েকজন বয়ঃজ্যেষ্ঠ আমাদের বললেন, রাস্তায় ইঁট পাতার বন্দোবস্ত কর। এভাবে যাতায়াত করা যায়না।


কিন্তু ইঁট কোথায় পাবো? 


কেন? পাড়াতে কত নতুন নতুন বাড়ি হচ্ছে, তারা দিতে পারবে না?


কিন্তু তারাই বা এতগুলো ইঁট দেবে কেন? রাস্তা তো সকলের।


না দিলে রাত্রি বেলা তোরা গিয়ে নিয়ে আসবি। ভালো কাজের জন্য নিলে তাকে চুরি করা বলে না।



বয়ঃজ্যেষ্ঠরা যে সব উপদেশ দেন, তা যে সব সময় গ্রহণযোগ্য হবে তার কোন মানে নেই। আমরা চাঁদা তুলে ইঁট কেনার সিদ্ধান্ত নিলাম। চাঁদা তুলতে বেরিয়েছি আমরা দুই বন্ধু। আমাদের নিকটতম প্রতিবেশী শ্রী রমেন্দ্র নাথ মুখার্জীর বাড়ি থেকে শুরু করলাম। দরজা খুলে বেরলেন মুখার্জী কাকীমা, অর্থাৎ রমেন কাকুর স্ত্রী। কাকীমা আমাদের ডেকে বললেন, ‘আয় আয়, তোদের কথাই ভাবছিলাম। এ পাড়ায় আর থাকা যাবেনা দেখছি। কিছু একটা ব্যবস্থা তোদের করা উচিৎ।’ আমি অবাক হয়ে বললাম, ‘কী হয়েছে কাকীমা?’ কাকীমা আমাদের বাড়ির 


ভেতরে ডাকলেন। বাড়ির ভেতরে ঢোকার পর কাকীমা বাইরের দরজাটা বন্ধ করে আমাদের বসতে বললেন। তারপর একটু গলা উঁচু করে বললেন, ‘ঝিণি সমীরণ আর দিলীপ এসেছে। ওদের জন্য দুকাপ চা করে নিয়ে আয়।’ কাকীমার মেয়ের নাম ঝিণি, দেখতে মন্দ নয়। মাধ্যমিক পরীক্ষাটা এর মধ্যে ওর বার দুয়েক দেওয়া হয়ে গেছে। নিন্দুক প্রতিবেশীদের সংখ্যা তো কম নেই। তাঁদের অভিমত, “সুকুমার রায় এই সময় বেঁচে থাকলে নির্ঘাত ‘সৎপাত্রী’ নামে একটি কবিতা লিখে ফেলতেন।” কাকীমা নিজের গলার স্বর নীচু করে আমাকে বললেন, ‘নিমাইবাবুর ছেলে রতন, আর তার বন্ধু দিপু, এদের জ্বালায় তো পাড়া ছাড়া হতে হবে দেখছি।’ আমি জানতে চাইলাম, ‘কেন কাকীমা? কি করেছে ওরা?’ কাকীমা বললেন, ‘আগে পাঁচিল ডিঙিয়ে ভেতরে ঢুকে, গাছে উঠে অসভ্যতা করত। তোমার কাকু ওদের বাড়িতে গিয়ে একদিন জানিয়ে এসেছিলেন। তার ফলে বাড়িতে ওদের উপদ্রব বন্ধ হল ঠিকই। কিন্তু তার কিছুদিন পর থেকে ওরা বাইরে অসভ্যতা করতে শুরু করেছে।’ জানতে চাইলাম ‘বাইরে কি ধরনের অসভ্যতা করছে ওরা ?’ কাকীমা বললেন, ‘পরশু তোমার কাকু যখন অফিস থেকে ফিরছিলেন, ওরা তখন পেছন থেকে ধাক্কা দেয় তোমার কাকুকে। তুমিতো জান এই অঞ্চলের রাস্তায় প্রায়দিনই আলো জ্বলেনা। তোমার কাকু ওদের ধাক্কায় মাটিতে পড়ে যান। হাত-পা ছড়ে যায়। আরেকটু হলে চশমাটা ভাঙছিল।’ কাকীমার কথা শুনতে শুনতে আমার মনে হল এর একটা বিহীত অবশ্যই করা দরকার। ‘ব্যাপারটা আমরা দেখছি’ বলে উঠে পড়লাম। 



রতন ক্লাস নাইন পর্যন্ত আমাদের সঙ্গে একসাথে একই ইস্কুলে পড়ত। আমাদের বাড়িও  একেবারে পাশাপাশি। ক্লাস  নাইন থেকে টেন-এ ওঠার বার্ষিক পরীক্ষায় রতন পাশ করতে পারেনি। তার ওপরে রতনের করা অন্যায় তো একটা নয়। প্রায় দিনই মাস্টার মশাইরা ভুরি ভুরি অভিযোগ করতেন, রতন এই করেছে, রতন ঐ করেছে।  



হেডমাস্টার মশাই- এর অলিখিত নির্দেশে মাস্টার মশাইয়েরা ছাত্রদের আচার-আচরণ এবং পড়াশুনো দুটোর দিকেই বিশেষভাবে নজর রাখতেন। তিনি বলতেন, বিদ্যা মানুষকে বিনয়ী করে তোলে। যার আচরণে বিনয়ী ভাব নেই, তার শিক্ষা আদৌ হয়ে ওঠেনি; যতই বড় বড় ডিগ্রী থাকুক না কেন।



প্রত্যেকদিন একই ছাত্র সম্পর্কে অভিযোগ শুনতে শুনতে হেডমাস্টার মশাই একদিন “গার্জেন্স মিটিং” ডেকে বসলেন। গার্জেন্স মিটিং -এ সেইসব ছাত্রের অভিভাবককেই ডাকা হত, যার সম্পর্কে মাস্টার মশাইদের অভিযোগের গুরুত্ব অনেক বেশী। সেই হিসেবে একমাত্র রতনের অভিভাবককেই ডাকা হয়েছিল। গার্জেন্স মিটিং-এর দিন হেডমাস্টার মশাই তাঁর অফিসে সহকারী প্রধান শিক্ষক, মৃণ্ময় স্যান্যাল মশাইকেও ডেকে নিয়েছিলেন। নির্দিষ্ট সময়ে রতনের অভিভাবক এসে পৌঁছলে, হেডমাস্টার মশাই ইস্কুলের দপ্তুরীকে দিয়ে ক্লাস থেকে রতনকে ডেকে পাঠালেন। একটু পরেই রতন এসে ঢুকল, ‘জেঠু আমায় ডেকেছো?’ বলে হেডমাস্টার মশাই- এর অফিস ঘরের দরজায় ঝোলানো ভারী পরদাটা পাকিয়ে হাতে ধরে তাঁর দিকে তাকিয়ে রইল। হেডমাস্টার মশাই একবার তাঁর অফিস ঘরে উপস্থিত সকলের মুখের দিকে দেখলেন। তারপর রতনের দিকে পলকহীন চোখে তাকিয়ে রইলেন কিছুক্ষণ। হেড মাস্টার মশাইয়ের সাথে কেউ এই ভাবে কথা বলছে, বিশেষ করে তাঁরই এক ছাত্র, তিনি এই দৃশ্য কল্পনা করতে পারছিলেন না। তিনি রতনের বাবার হাতে ট্রান্সফার সার্টিফিকেট ধরিয়ে দিয়েছিলেন। আমাদের স্কুলের এ হেন হেডমাস্টার মশাই ছিলেন আমার বাবা। অধিকাংশ অভিভাবকরা  সেই সময় আমার বাবার সম্পর্কে মন্তব্য করেছিলেন, মানুষ হিসেবে তিনি যাই হোন না কেন, হেডমাস্টার হিসেবে আরো সংবেদনশীল হওয়া উচিৎ ছিল। রতনের বাবারও সেই একই অভিমত। তিনি বলেছিলেন, পরীক্ষায় না হয় এক বছর ফেল করেছে। আরো এক বছর কি একই ক্লাসে রেখে দেওয়া যেত না? তাতে শিক্ষার ভিতটা পাকা হত। বাচ্ছারা তো দুষ্টুমী করবেই। তাই বলে স্কুল থেকে তাড়িয়ে দিতে হবে? পরে অবশ্য বাবা বলেছিলেন,‘আদতে আমি হেরে গেছি। ওর মধ্যে পড়ার আগ্রহ গড়ে তুলতে পারিনি। ওকে শিক্ষা দিতে পারিনি। ওকে তাড়িয়ে দিয়ে নিজের হারটাকে আড়াল করার চেষ্টা করেছি। শিক্ষক হিসেবে কাজটা ভালো করলাম না।’     



বাইরে বেরিয়ে এসে আমাদের কি করা উচিৎ ভাবতে ভাবতে হাঁটা শুরু করলাম। পথে এক বন্ধুর  সঙ্গে দেখা হল। তাকে সংক্ষেপে বললাম ঘটনাটা। এমন সময় দেখি রতন আসছে। আমার সেই বন্ধুটি ওকে ডাকল। রতন তাই শুনে দাঁড়িয়ে পড়ে বলল, ‘যা বলার এখানে এসে বলে যা।’ এরপর সব কিছু খুব দ্রুত ঘটে গেল। আমার বন্ধু রতনের কাছে গিয়ে সপাটে এক চড় মারলো ওর গালে। রতন চড় খেয়ে গালে হাত বোলাতে বোলাতে বলল, ‘আমাকে মারলি? দাঁড়া তোদের দেখাচ্ছি।’ এই কথা বলে সে চলে গেল। আমার বন্ধুটি হঠাৎ রেগে গিয়ে মারলো কেন আমি বোঝবার চেষ্টা করছি তখন। বন্ধু নিজেই ব্যাখ্যা করল, ‘অন্যায় করে আবার মেজাজ দেখাচ্ছে। এত সাহস ওর?’ আমি বললাম, ‘না মারলেই পারতিস।’ এমন সময় দেখলাম রতন, দিপু তাদের বাবা-মা ভাই-বোন সবাইকে নিয়ে আমাদের দিকে আসছে। আমাদের কাছে এসে রতনের বাবা আমাকে বললেন, ‘রতনকে তোমরা মেরেছো কেন?’ আমি উত্তেজিত হয়েই ছিলাম। বললাম, ‘ছেলেকে নিজেরা শাসন না করতে পারলে, পাড়ার লোকে শাসন করবে এটাই তো স্বাভাবিক।’ আমার কথা শুনে রতনের বাবা আমার কাছে রতন কি করেছে তা জানতে চাইলেন। আমি ওনাকে মুখার্জী কাকীমার কাছ থেকে ওরা যা যা করেছে বলে শুনেছি তাই বললাম। রতনের বাবা আমাকে ওনার সাথে যেতে বললেন। সব কথা তিনি মুখার্জী কাকীমার মুখ থেকে শুনতে চান। আমি ওদের সাথে গেলাম মুখার্জী কাকীমার বাড়ি। কড়া নাড়লাম। কিন্তু কেউ দরজা খুলল না ।  



মুখার্জী কাকীমা দরজা না খোলার ফলে রতন চোখে মুখে একরাশ রাগ আর আক্রোশ নিয়ে আমাদের দিকে তেড়ে এল, ‘এবার কিন্তু লাথি মেরে দরজা ভেঙ্গে ফেলব।’ আমরা চুপ করে ওর আস্ফালন আর ওর বাবার নিঃস্পৃহ হয়ে থাকা দেখছিলাম তখন । তবে অল্প কিছুক্ষণের মধ্যে দরজা খুলে কাকিমা বেরিয়ে এলেন।  



রতনের বাবা সরাসরি কাকীমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘আপনি কি আমার ছেলেকে শাসন করার জন্য এদের বলেছেন?’ নিজের নিকটতম প্রতিবেশীর কাছ থেকে এমন প্রশ্নের জন্য তিনি প্রস্তুত ছিলেন না। এর ওপরে প্রতিবেশী ছেলেটির যা কর্মকান্ড, সে কথা তিনি পাড়াতে বলে বেড়িয়েছেন বলে স্বীকার করলে কী ঘটতে পারে এই ভেবে কাকীমার মুখের ওপরে কিসের যেন একটা ছায়া এসে পড়ল। অন্য কেউ দেখতে পেল কিনা জানিনা। তবে আমি লক্ষ্য করেছিলাম। কাকীমা কিছুক্ষণ চুপ করে থাকার পর বললেন, ‘এই ধরনের কোন কথা কারোর সাথে আমার হয়নি।’ এবার রতন উত্তেজিত হয়ে আমাকে বলল, ‘সবার সামনে কান ধরে কাছে ক্ষমা চাইতে হবে।’   



অরুণাভ অনেকক্ষণ ধরে মাস্টার মশাইকে লক্ষ্য করছিল। এমনিতেই মাস্টার মশাইয়ের কথা শুনতে শুনতে মনটা বিষণ্ণ হয়ে রয়েছে। তার ওপরে, মাস্টার মশাই ছেঁড়া জুতো হাতে নিয়ে খোঁড়াতে খোঁড়াতে ওর সাথে হাঁটছেন। অরুণাভর ভালো লাগছিল না। খুব রাগ হচ্ছিল মিউনিসিপ্যালিটির ওপরে। বছরের পর বছর রাস্তা সারাবে না, রাস্তায় লাইট লাগাবে না। কি করে টাকাগুলো দিয়ে? মাস্টার মশাইয়ের জন্য কিছু একটা তো করা উচিৎ। কিন্তু কিছু করতে গেলে যে উনি তা গ্রহণ করবেন না, অরুণাভ সেটা খুব ভাল করে জানে। বলবেন, ‘আমার তো এটার প্রয়োজন নেই’। অরুণাভ মনে মনে ভাবল, গুরুদক্ষিণার প্যাঁচে যদি মাস্টার মশাইকে বাগে আনা যায়। সমীরণ অরুণাভর গুরুদক্ষিণা দেবার প্রস্তাব শুনে বলল, ‘একান্তই যদি গুরুদক্ষিণা দিতে চাস, তাহলে একটা কাজ কর। অনেক বছর ধরে বকেয়া পড়ে আছে তোদের প্রপার্টি ট্যাক্স। টাকাগুলো পেমেন্ট করে দে তারাতারি। তোদের মত অনেকেই আমাদের পাড়ায় আছে, যাদের প্রপার্টি ট্যাক্স অনেক বছর ধরে বকেয়া পড়ে আছে। তারা আর্থিক দিক থেকে যথেষ্ট সক্ষম। নাম বললে চিনবি তাদের। দীর্ঘ দিন বকেয়া রেখেছে কাগজে কলমে দুঃস্থ প্রমাণ করার জন্য। এরজন্যে মিউনিসিপ্যালিটির লোককে তারা মিষ্টি খেতে অনেক টাকা দেয়। তবু সময় মত মিউনিসিপ্যালিটিকে ট্যাক্সের টাকা  দেয় না। মিউনিসিপ্যালিটির হাতে টাকা না থাকলে রাস্তাঘাট সারাবেই বা কি করে?  



কথায় কথায় ওরা নিজেদের পাড়ায় পৌঁছে যায়। সামনের বাঁ দিকের রাস্তা ধরে সমীরণকে চলে যেতে হবে। যাবার আগে সে তার ছাত্রকে গুরুদক্ষিণা দেবার কথাটা আরো একবার স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলে, অন্যকে দায়ী করার আগে নিজের দায়িত্ব পালন করাটা খুব জরুরী।   






Friday, December 16, 2022

মাধ্যমিক পাস যোগ্যতায় কয়েক হাজার শূন্যপদে ইন্ডিয়ান অয়েল কর্পোরেশনে কর্মী নিয়োগ | Indian Oil Recruitment 2022 || IOCL Recruitment 2022 || www.iocl.com/apprenticeships


 

প্রত্যেক দেশবাসী জানেন ইন্ডিয়ান অয়েল কর্পোরেশন লিমিটেড একটি কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে পাবলিক সেক্টর। যেটি ভারত সরকারের মিনিস্ট্রি অফ পেট্রোলিয়াম এন্ড ন্যাচারাল গ্যাস দপ্তরের অন্তর্ভুক্ত। প্রায় 56,000 এর বেশি গ্রাহকদের নেটওয়ার্কের মাধ্যমে দেশের প্রতিটি কোণায় জ্বালানি সরবরাহ করে চলেছে এই কোম্পানি।




সম্প্রতি ইন্ডিয়ান অয়েল কর্পোরেশন লিমিটেড তরফ থেকে কয়েক হাজার অ্যাপ্রেন্টিস শূন্যপদের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছে। ভারত সরকারের তরফ থেকে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে এই অ্যাপ্রেন্টিস প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে এবং ট্রেনিং চলাকালীন প্রতিটি প্রার্থীকে পর্যাপ্ত অর্থের স্টাইপেন্ড প্রদান করা হবে। ট্রেনিং শেষে পাবেন স্থায়ী চাকরি। প্রতিটি শাখায় বিনামূল্যে ১ থেকে ১.৫ বছরের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কয়েক হাজার শূন্যপদে গ্ৰুপ ডি সহ আরও অন্যান্য ধরনের কর্মী নিয়োগ করা হবে। চাকরি সংক্রান্ত সম্পূর্ণ বিবরণ নীচে আলোচনা করা হল -




শূন্যপদ গুলির নাম:-


Indian Oil corporation limited এ যে সব শূন্যপদে নিয়োগ হবে সেগুলি হল-


• Technician Apprentice (Civil, Fitter, Machinist)


• Graduate Apprentice


• Trade Apprentice (Data Entry Operator)





শিক্ষাগত যোগ্যতা ও বয়স সীমা:-



Trade Apprentice (Data Entry Operator)-



 স্বীকৃত বোর্ড থেকে মাধ্যমিক বা সমতূল্য পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে। সেই সঙ্গে NCVT/SCVT অনুমোদিত যে কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে ২ বছরের ITI কোর্স Complete করে থাকতে হবে। 


এক্ষেত্রে প্রার্থীর বয়স ১৮-২৭ বছরের মধ্যে হতে হবে। সংরক্ষিত প্রার্থীরা সরকারি নিয়মানুযায়ী বয়সের ছাড় পাবেন।




Technician Apprentice (Civil, Fitter, Machinist)-


কোনো সরকারি অনুমোদিত ইউনিভার্সিটি থেকে Civil Engineering এ অন্তত পক্ষে ৫০% নম্বর পেয়ে ৩ বছরের ডিপ্লোমা কোর্স Complete করে থাকতে হবে। তবে সংরক্ষিত প্রার্থীরা ৪৫% নম্বর পেয়ে থাকলেই আবেদন করতে পারবেন। 


এক্ষেত্রে প্রার্থীর বয়স ১৮-২৭ বছরের মধ্যে হতে হবে। সংরক্ষিত প্রার্থীরা সরকারি নিয়মানুযায়ী বয়সের ছাড় পাবেন। 



Graduate Apprentice-


 সরকারি কলেজ থেকে কমপক্ষে ৫০% নম্বর পেয়ে BA/B.Com/B.Sc পাস করে থাকতে হবে। তবে সংরক্ষিত প্রার্থীরা ৪৫% নম্বর পেয়ে থাকলেই আবেদন করার সুযোগ পাবেন।


এক্ষেত্রে প্রার্থীর বয়স ১৮-২৭ বছরের মধ্যে হতে হবে। সংরক্ষিত প্রার্থীরা সরকারি নিয়মানুযায়ী বয়সের ছাড় পাবেন।




আবেদন পদ্ধতি:-



শুধু মাত্র অনলাইন এর মাধ্যমে আবেদন করতে হবে।


১) প্রথমে এই Indian Oil corporation limited এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইট www.iocl.com/apprenticeships এ প্রবেশ করতে হবে। 



২) এরপর সেখানে Apply now Option এ ক্লিক করলে একটি অ্যাপ্লিকেশন ফর্মের আকারে একটি নতুন window open হবে।


৩) এরপর সেখানে আপনার নিজের নাম, বাবা মায়ের নাম, শিক্ষাগত যোগ্যতা, জেন্ডার, জন্ম তারিখ, ঠিকানা, আধার নম্বর, একটি বৈধ ইমেল আইডি ও ফোন নাম্বার ইত্যাদি দিয়ে সঠিক ভাবে ফর্ম টিকে ফিলাপ করতে হবে।


৪) এরপর এক কপি পাসপোর্ট রঙিন পাসপোর্ট সাইজের ফটো, আগে থেকে করে রাখা একটি সিগনেচার, সমস্ত শিক্ষাগত যোগ্যতার ডকুমেন্টস সহ অন্যান্য সব ডকুমেন্টস এর ছবি তুলে স্ক্যান করে আপলোড করে দিয়ে সাবমিট বাটনে ক্লিক করলেই অ্যাপ্লিকেশান complete।


৫) সবশেষে এই ফিলাপ করা অ্যাপ্লিকেশান ফর্মের একটি প্রিন্ট আউট বের করে নিজেদের কাছে রেখে দেবেন।





গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট-:-


অনলাইনের মাধ্যমে আবেদন করার সময় যে সব গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট লাগবে সেগুলো হল-


১) মাধ্যমিকের অ্যাডমিট কার্ড বা বার্থ সার্টিফিকেট স্ক্যান করা।


২) শিক্ষাগত যোগ্যতার মার্কসীট ও সার্টিফিকেট স্ক্যান করা।

৩) আধার কার্ড এবং ভোটার কার্ড স্ক্যান করা।



৪) এক কপি পাসপোর্ট সাইজের ফটো স্ক্যান করা।


৫) প্যান কার্ড স্ক্যান করা।

৬) কাস্ট সার্টিফিকেট যদি থাকে তাহলে স্ক্যান করা।


৭) cancel চেক বা ব্যাঙ্কের পাস বুকের প্রথম পাতা স্ক্যান করা।




নির্বাচন পদ্ধতি:-


সবার প্রথমে হবে একটি কম্পিউটার বেসড পরীক্ষা। এই পরীক্ষায় যারা উত্তীর্ণ হবেন তাদেরকে শর্টলিস্ট করে ইন্টারভিউ লেটার পাঠিয়ে ইন্টারভিউ ও ডকুমেন্টস ভেরিফিকেশন এর জন্য ডাকা হবে। শেষ পর্যন্ত এই ইন্টারভিউ তে যারা পাস করবেন তাদেরকে সরাসরি চাকরিতে নিয়োগ করা হবে।



আবেদনের সময় সীমা:-


আবেদন শুরু - ১৪/১২/২০২২

আবেদন শেষ - ০৩/০১/২০২৩




OFFICIAL NOTICE:

Click here 🔴


OFFICIAL WEBSTE: 


Click here 🔴




______________________________________________

চাকরি সংক্রান্ত আপডেট পেতে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন





Telegram group-

Click here 🔴






Whatsapp group-

Click here 🔴



Thursday, December 15, 2022

রাজ্যে ICDS এ অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী ও সহায়িকা পদে নিয়োগ || WB ANGANWADI Helper, Worker Recruitment 2022 || ICDS Karmi Recruitment 2022 || ICDS Worker New Recruitment in Murshidabad


 


 
পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের চাকরি প্রার্থীদের জন্য আবার নতুন সুখবর। ICDS তথা অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী ও সহায়িকা পদে নতুন নিয়োগ হতে চলেছে। ইতিমধ্যেই আবেদন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আপনি যদি মাধ্যমিক পাশ করে থাকেন তাহলে আপনার জন্য এটা একটা বড় সুযোগ। নিয়োগ টি হবে পশ্চিমবঙ্গের কিছু ব্লকের শিশু বিকাশ সেবা প্রকল্পের অধীনে। চাকরি সংক্রান্ত সম্পূর্ণ বিবরণ নীচে দেওয়া হল।







পদের নাম: অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী ও অঙ্গনওয়াড়ি সহায়িকা।



মোট শূন্য পদ: 500টি।

নিয়োগ হবে মুর্শিদাবাদ জেলার কিছু ব্লকে। অফিসিয়াল ওয়েবসাইট নীচে দেওয়া আছে, সেখান থেকেই অনলাইন এ ফিলাপ করে নিন।







শিক্ষাগত যোগ্যতা: অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীর জন্য মাধ্যমিক পাশ করে থাকলেই আপনি এখানে আবেদন করার সুযোগ পাবেন।

এছাড়া অঙ্গনওয়াড়ি সহায়িকার জন্য অষ্টম শ্রেণী পাশ করে থাকলেই আবেদন করার সুযোগ পাবেন।



বয়স: 18 থেকে 45 বছর। এছাড়া সংরক্ষিত প্রার্থীরা সরকারি নিয়মে ছাড় পাবেন। তবে এখানে 65 বছর পর্যন্ত আপনি চাকরি করার সুযোগ পাবেন।

বেতন - অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীর জন্য 8250 টাকা প্রতি মাসে বেতন দেওয়া হবে।
অঙ্গনওয়াড়ি সহায়িকার জন্য 6300 টাকা বেতন দেওয়া হবে।


নিয়োগ পদ্ধতি:

এই পদের জন্য 50 নম্বরের লিখিত এবং মৌখিক পরীক্ষা দিতে হবে।



*লিখিত পরীক্ষা হবে 35 নম্বরের-



গণিত – 10 নম্বর

ইংরেজি – 10 নম্বর

জনস্বাস্থ্য এবং সমাজে নারীর স্থান এবং মর্যাদা – 10 নম্বর

সাধারণ জ্ঞান – 5 নম্বর

*মৌখিক পরীক্ষা হবে 5 নম্বরের।



(3) 5 বছরের অভিজ্ঞতার ঊর্ধ্বে প্রতি 3 বছরের জন্য 5 নম্বর এই ভিত্তিতে সর্বাধিক 10 নম্বর।



তারিখ: 
নোটিশ প্রকাশ - 10.12.2022
আবেদন শুরু - 10.12.2022 
আবেদন শেষ -  07.01.2023 





গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট:


1. বয়সের প্রমাণপত্র (Self Attested)।

2. বাসিন্দা প্রমাণপত্র (Self Attested)।

3. কাস্ট সার্টিফিকেট ।


4. শিক্ষাগত যোগ্যতার সার্টিফিকেট।

5. পাসপোর্ট সাইজের ফটো 3 কপি।

6. ভোটার কার্ড







Notice Download-



Apply now:




OFFICIAL WEBSITE: 




______________________________________________
চাকরি সংক্রান্ত আপডেট পেতে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন




Telegram group-





Whatsapp group-

Friday, December 9, 2022

Water ways Recruitment 2022-23 || কেন্দ্রীয় জলদপ্তরে কর্মী নিয়োগ 2022-23 || IWAI Recruitment 2022-23


 


কেন্দ্রীয় জল দপ্তর অর্থাৎ ইনল্যান্ড ওয়াটার ওয়েজ অথরিটি অফ ইন্ডিয়া (Inland Waterways Authority Of India- IWAI) পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে বিভিন্ন পদে কর্মী নিয়োগ হতে চলেছে। নিয়োগ সম্পর্কিত অফিশিয়াল বিজ্ঞপ্তি ইতিমধ্যে জারি হয়েছে। আবেদনকারী প্রার্থীদের গ্রুপ-সি (Group-C) ক্লার্ক সহ অন্যান্য পদে সরাসরি অর্থাৎ সরাসরি নিয়োগ করা হবে।

যেহেতু এটি কেন্দ্রীয় চাকরি তাই পশ্চিমবঙ্গের অন্তর্গত সমস্ত জেলা থেকেই সমস্ত ইচ্ছুক চাকরিপ্রার্থীরা আবেদন করার সুযোগ পাবেন। আবেদন করার সুযোগ পাবেন শুধু মাত্র অনলাইন এর মাধ্যমে। ইতিমধ্যেই অনলাইনে আবেদন প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছে। 

কতগুলো পদে, কোন কোন পদে নিয়োগ, বেতন, শিক্ষাগত যোগ্যতা কি লাগবে তার সম্পূর্ণ তথ্য নীচে আলোচনা করা হল -


নোটিশ নম্বরঃ IWAI-17011/4/2022-ADMIN RECTT

নোটিশ প্রকাশের তারিখঃ 04.11.2022

আবেদনের মাধ্যমঃ শুধু মাত্র অনলাইন।


(1) পদের নামঃ লোয়ার ডিভিশন ক্লার্ক (Lower Division Clerk)

বেতনঃ 19,900 থেকে 63,200 টাকা প্রতি মাসে।

শিক্ষাগত যোগ্যতাঃ  উচ্চমাধ্যমিক পাশ। এছাড়াও, প্রতি মিনিটে 30 টি শব্দ টাইপ করার দক্ষতা থাকতে হবে।


বয়সসীমাঃ  বয়স 27 বছরের মধ্যে হতে হবে। সংরক্ষিত প্রার্থীরা সরকারি নিয়মে ছাড় পাবেন।

শূন্যপদঃ 4 টি 

(2) পদের নামঃ ডেপুটি ডিরেক্টর (Deputy Director)

বেতনঃ 67,700 থেকে 2,08,700 টাকা প্রতি মাসে।

শিক্ষাগত যোগ্যতাঃ  চ্যাটার অ্যাকাউন্টেন্ট বিষয়ে ফাইনাল এক্সাম পাশ করে থাকতে হবে। এছাড়াও, 5 বছর রেগুলার সার্ভিসে থাকা কমার্শিয়াল একাউন্ট বা ফাইনান্স বা অ্যাকাউন্টে ডিপার্টমেন্টের চাকরি প্রার্থীরাও আবেদন করার সুযোগ পাবেন।

বয়সসীমাঃ বয়স 40 বছরের মধ্যে হতে হবে। সংরক্ষিত প্রার্থীরা সরকারি নিয়মে ছাড় পাবেন।

শূন্যপদঃ 2 টি 

(3) পদের নামঃ EDP অ্যাসিস্ট্যান্ট (EDP Assistant)

বেতনঃ 35,400 থেকে 1,12,400 টাকা প্রতিমাসে।

শিক্ষাগত যোগ্যতাঃ  কম্পিউটার সাইন্স বা ইনফরমেশন টেকনোলজি বিষয়ে পাশ করে থাকতে হবে। এছাড়াও, 1 বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।

বয়সসীমাঃ বয়স 30 বছরের মধ্যে হতে হবে। সংরক্ষিত প্রার্থীরা সরকারি নিয়মে ছাড় পাবেন।

শূন্যপদঃ 1 টি 

(4) পদের নামঃ জুনিয়র হাইড্রোফিক সার্ভেয়ার (JHS) 


বেতনঃ  35,400 থেকে 1,12,400 টাকা প্রতি মাসে।

শিক্ষাগত যোগ্যতাঃ  হাইড্রোগাফি বিষয়ে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপ্লোমা বা ডিগ্রী পাশ করে থাকতে হবে। এছাড়াও কাজের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।

বয়সসীমাঃ বয়স 27 বছরের মধ্যে হতে হবে। সংরক্ষিত প্রার্থীরা সরকারি নিয়মে ছাড় পাবেন।

শূন্যপদঃ 3 টি 

(5) পদের নামঃ স্টেনোগ্রাফার – D (Stenographer – D)

বেতনঃ 25,500 থেকে 81,100 টাকা প্রতি মাসে।

শিক্ষাগত যোগ্যতাঃ  উচ্চমাধ্যমিক পাশ। প্রতি মিনিটে 80 টি শব্দ টাইপ করার দক্ষতা থাকতে হবে।

বয়সসীমাঃ বয়স 27 বছরের মধ্যে হতে হবে। সংরক্ষিত প্রার্থীরা সরকারি নিয়মে ছাড় পাবেন।

শূন্যপদঃ 4 টি 


আবেদন পদ্ধতি -
 অফিসিয়াল ওয়েবসাইট এ গিয়ে অনলাইন এর মাধ্যমে  আবেদন করতে হবে। বিস্তারিত আবেদন পদ্ধতি নিচে পয়েন্টের আকারে তুলে ধরা হলো- 

প্রথমে নিচের দেওয়া লিংকে ক্লিক করে IWAI এর অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে হবে।
আবেদন করার লিঙ্কে ক্লিক করে প্রথমে নিজের নাম ও মোবাইল নম্বর বা ইমেল আইডি দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। 
রেজিস্ট্রেশনের সময় আবেদনকারী প্রার্থীকে একটি নির্দিষ্ট ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড তৈরি করতে হবে যেটি পরবর্তীতে আবেদনের ক্ষেত্রে প্রয়োজন পড়বে।
তারপরে আইডি এবং পাসওয়ার্ড দিয়ে লগইন করলে আবেদন পত্রটি সামনে চলে আসবে।
এরপরে সমস্ত প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে আবেদন পত্রটি পূরণ করতে হবে।
সমস্ত প্রয়োজনীয় নথিপত্র স্ক্যান করে আপলোড করতে হবে।
সবশেষে কাস্ট অনুযায়ী নির্দিষ্ট আবেদন ফি জমা দিয়ে আবেদন প্রক্রিয়া শেষ করতে হবে।


আবেদন ফি-
জেনারেল ক্যাটাগরির ফি 500 টাকা।
SC/ST/OBC প্রার্থীদের ফি 200 টাকা।


 গুরুত্বপূর্ণ তারিখ:

নোটিশ প্রকাশ - 04.11.2022
আবেদন শুরু  -       18.11.2022
আবেদন শেষ -        17.12.2022


বিঃদ্র:. সমস্ত ধরনের চাকরির আপডেট পেতে আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ এবং টেলিগ্রাম চ্যানেলে যুক্ত হয়ে যান। নিচে যুক্ত (Join) হওয়ার লিংক দেওয়া রয়েছে ঐ লিংকে ক্লিক করলেই যুক্ত হয়ে যেতে পারবেন। ওখানেই সর্বপ্রথম আপডেট দেওয়া হয়। আর আপনি যদি অলরেডি যুক্ত হয়ে থাকেন এটি প্লিজ Ignore করুন।


 Important Links:  👇👇

Official Website-


Official notice -


Apply Now-


_____________________________________

চাকরি সংক্রান্ত আপডেট পেতে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন




Telegram group-





Whatsapp group-

Thursday, December 8, 2022

উপন্যাস - পদ্মাবধূ || বিশ্বনাথ দাস || Padmabadhu by Biswanath Das || Fiction - Padmabadhu Part -30


 

দাঁড়াও মুকুল, তুমি আমাকে তোমার মন থেকে দূরে সরিয়ে দিলেও আমি তোমাকে সরাতে পারব না। তবে ঐ প্রশ্নের উত্তর দিয়ে যাও তোমার কাছে কিভাবে প্রতারক হলাম।


 ঐ উত্তরটা বাচ্চু গুন্ডার কাছে জানতে পারবে। কিভাবে মিথ্যার অভিনয় করে আমাকে প্রেমের ফাঁদে ফেলেছিলে, তবুও তোমার আমার প্রেমের অঙ্কুর বৃক্ষে রূপ ধারণ করেছিল, কিন্তু সেই প্রেমের বৃক্ষকে অচিরে বিনাশ করলাম। কোনদিন আমার সাথে মিট্ করার চেষ্টা করবে না। আর আমিও চেষ্টা করবো যাতে তোমার মুখচ্ছবি। যেন আমার সম্মুখে না উদ্ভাসিত হয়। চলি গুড বাই

মুকুল হনহনিয়ে বেরিয়ে গেল। দেবী ছাড়বার পাত্র নয়। সে মুকুলের ভুলকে সংশোধন করবেই। দেবীর মাথার কোষে কোষে চিন্তার বাসা বাঁধলো।

দিন কয়েক পর একদিন বিকালে মুকুলদের বাড়ীতে হাজির হলো। মুকুসের সাথে সুমন্ত গল্পে মসগুল সে সময়। তাদের নানা বিষয়ে আলোচনা হচ্ছিল। মুকুলকে, সুমন্ত পড়াশুনা ব্যাপারে সাহায্য করত। মুকুল জানতো সুমন্ত অতি বুদ্ধিমান ছেলে ও পড়াশুনাতেও ভালছিল সুমন্তর কাছে জেনেছিল।

হঠাৎ আলোচনা চলাকালীন কোথা হতে একটা বিষাক্ত পোকা মুকুলের চোখের ভেতরে প্রবেশ করাতে মুকুল চিৎকার করে উঠল, সুমন্ত বুঝতে পারল মুকুলের চোখে কোন বিষাক্ত পোকা প্রবেশ করেছে। সুমন্ত বিলম্ব না করে মুকুলের চোখের পাতায় হাত দিয়ে চোখটাকে ফাঁক করে ফুঁ দিতে থাকল।

সেই সময় দেবী মুকুলদের বাড়ীতে প্রবেশ করে ঐ দৃশ্য দেখবে ভাবতে পারেনি। তাহলে ওরা ডুবে ডুবে জল খাচ্ছে। সুমন্তকে খুব ভালো ছেলে মনে করত, কিন্তু দেবী ওখানে দাঁড়ালো না। মনের মধ্যে তার দাবানলের সৃষ্টি হল ও সুমন্তর প্রতিহিংসার অঙ্কুর গজালো। সে কোন দিন কাকেও সুখী হতে দেবে না। তারা যদি উভয়েই প্রেমে আবদ্ধ হয় তাও টিকতে দেবে না। এর প্রতিশোধ নেবেই। বুকের মধ্যে যে যন্ত্রণার জন্ম নিলো, এর প্রতিকার কি করে করবে, কিভাবে মুকুলকে ভোলার চেষ্টা করবে।

হঠাৎ রন্টুর ডাকে সে দাঁড়িয়ে পড়ল, হ্যালো ব্রাদার, তোর খোঁজে তোদের বাড়ী গিয়েছিলাম। ওখানে জানলাম তুই বাড়ীতে নেই। ভাবলাম মুকুলদের বাড়ীতে তোকে পাবো। তাই এখানে এলাম। তা হ্যাঁরে, মুকুলদের বাড়ীতে সুমন্ত কি করছে। মুকুলের সাথে প্রেম করছে নাতো? তা যাক আজকে তোকে একটা নতুন জায়গায় নিয়ে যাবো।

দেবীদাসকে দেখে মনে হলো সে যেন অন্য রাজ্যে চলে গেছে। রন্টু দেবীদাসকে ধাক্কা দিয়ে বলল, কিরে চল্ দাঁড়িয়ে রইলি কেন? আমি বুঝতে পারছি মুকুল তেকে

বিট্রে করেছে। তোর পেটে লাল জল পড়লেই তোর মনটা চেঞ্জ হয়ে যাবে। রন্ট ট্যাক্সি বলে হাঁকাতে একটা ট্যাক্সি দাঁড়িয়ে পড়ল। জলা গলি যাবো, যাবে?

ট্যাক্সি ড্রাইভার বলল, উঠে পড়ুন। দেবীদাসকে এক রকম জোর করে ট্যাক্সির ভেতরে বসালো।

পুনরায় সেই অভিসার। তবে এখানকার রূপটা একটু আলাদা। রন্টু একটা মেয়ের কাছে গিয়ে কি যেন বলল। দেবী শুনতে পেলো না।

মেয়েটা তৎক্ষণাৎ দেবীদাসের কাছে হাত দুটোকে ধরে বলল, আজকে সারা রাতের অতিথি আপনি। আমার অ্যাপায়ণে আপনার অন্তর পুলকিত হয়ে উঠবে।

আমাদের এখানে যতগুলো নারী আছে সকলেই ভদ্র হয়তো পেটের দায়ে - না থাক আসুন আমার সাথে, আমি পতিতা হলেও আমার নারীত্ব লোপ পায়নি। আসুন আমার সাথে।

 মেয়েটি এক রকম জোর করেই ওর সাজানো রুমের মধ্যে প্রবেশ করিয়ে একটা সুসজ্জিত পালঙ্কের উপর দেবীকে বসালো। এবার বলুন কি খাবেন ? কাজুর সরবত, না মালাই এর সরবত ?

 দেবীর মুখে কথা ফুটল না। মুকুলকে নিয়ে তার স্বপ্ন। মেয়েটি বুঝতে পারে, তাছাড়া রন্টুর কাছে হালকা শুনেছে কোন মেয়ে ওকে আঘাত দিয়েছে, অর্থাৎ এই সময় ওকে কোন দাওয়াই দিলে ওর মনটা চাঙ্গা থাকবে তার জানা আছে।

 মেয়েটি কাবেরী বলে ডাক দিতেই একটি আঠারো বৎসরের অপরূপ সুন্দরী মেয়ে অর্থাৎ পানপাতার মতো মুখখানি পটল চেরা চোখ, বাঁশীর মত নাক, কোঁকড়ানো চুল বিশেষ করে ঠোটের নীচে একটা কালো তিল। ওটাতেই মেয়েটাকে আরো সুন্দরী দেখাচ্ছে।

 হাতে একটা ট্রে, ওতে দুটো গেলাস ও একটা নক্সা করা বোতল। সামনের ছোট্ট টেবিলে নামিয়ে সরবতের গ্লাসে পঁচিশ এম. এল. লালচে রংএর দামী মদ দিয়ে দেবীদাসকে উৎসর্গ করল এবং মৃদু কণ্ঠে বলল, এটা চুমু দিয়ে খেয়ে নিন। মনটা একেবারে হালকা হয়ে যাবে। তাছাড়া একটু পরে দেখবেন যে যন্ত্রণা আপনার ভেতরটাকে কুরে কুরে খাচ্ছে, তা একেবারে নির্মূল হয়ে যাবে। তাছাড়া আমার ছোঁয়া, আমার ভালোবাসা পেলে আপনার মন মোহিত হয়ে যাবে। আপনি সুখের সাগরে ভাসবেন। এই সরবতটুকু খেয়ে নিন। পুনরায় বলল।

 দেবীদাস গ্লাসখানি হাতে নিয়ে ওর মুখ পানে তাকিয়ে রইল।

 কি হলো খান। তাকিয়ে আছেন কেন? সারারাত দেখবেন।

 মেয়েটা দেবীর পাশে বসে বলল, রাত্রের পদ্ম আপনার অর্থাৎ নিশিপদ্ম। এই কাবেরী আমার ছোট বোন। যেন গোলাপের কুঁড়ি। একটু পরেই আপনার মন ভরিয়ে তুলবে কুঁড়ি থেকে ফুটন্ত পদ্ম হয়ে। কাবেরীকে বলল, কাবেরী তুমিতো জানো, আমি অসুস্থ, ইনি আমাদের নতুন অতিথি, ও সজ্জন ব্যক্তি। তোমার মধুতে ভ্রমর যেন আটকে যায় তার ব্যবস্থা করবে। আমি চললাম ।

 মেয়েটি প্রস্থান করতেই কাবেরী বলল, আমাকে পছন্দ নেই বুঝি?

 দেবীদাস কোন কথা বলল না।

 কখন থেকে দেখছি আমার মুখপানে তাকিয়ে আছেন, যাকে খুঁজছেন আমার মধ্যে তাকে দেখতে পাচ্ছেন মনে হয়। নিন আরেক গ্লাস সরবত খান। দেখবেন এবার মেজাজটা পাল্টে যাবে।

দেবীদাস ওর হাত থেকে গ্লাসটা নিয়ে গোগ্লাসে খেয়ে ফেলল। এরপর তৃতীয় গ্লাস পান করার পর সে আর ঠিক থাকতে পারল না। মনে হল চোখের সামনে কুয়াসায় আচ্ছন্ন হলো। ধীরে ধীরে বেহুস হয়ে পড়ল। কিন্তু অন্তরালে যে ষড়যন্ত্র ছিল তা দেবীদাস জানতো না। এমন প্রায়ই ঐ পতিতালয়ে যেতে শুরু করল এবং কখনো রাতও কাটাতো।