বল্টু ও মাষ্টারমশাই - অদ্বয় দত্ত || গল্প - Story || ছোটগল্প - Short story

 

বল্টু ও মাষ্টারমশাই 

 অদ্বয় দত্ত


চৈত্র মাসের শেষ।সময়ের যিনি হিসেব রাখেন তিনি সন্ধ্যাকে ছুটি দিয়ে রাত্রিকে কাজ বুঝিয়ে দিচ্ছেন।কোন অসহায় দরিদ্রের বাড়িতে দুঃস্বপ্নের কালো অন্ধকারের আবহ তৈরি করতে হবে,কোন ধনীর বাড়ির চতু:সীমায় অন্ধকারকে মোটেই ঘেঁষতে দেওয়া চলবেনা-এইসবই বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন।কয়েকটা নাম না জানা পাখি এখনো টেনে টেনে ক্লান্তভাবে ডেকে চলেছে।দুপুরের গরম হওয়া এখনো মুখ ভার করে আছে,ঠান্ডা হতে আরো বেশ কিছু দেরি।হরমোহন বগলে একটা সেকেলে ছাতা আর হাতে একটা পলিথিন জড়ানো ধাতব টর্চ নিয়ে তড়িঘড়ি কাঁঠালের বনের পাশের রাস্তাটা দিয়ে পড়াতে যাচ্ছিলেন।গ্রামের দিকের অনেকের এই অভ্যেস থাকে;ধাতব টর্চের নতুন ভাবটা যাতে নষ্ট না হয়ে যায় তাই একটা পলিথিনের মলাট জড়িয়ে রাখেন।

হরমোহনের গন্তব্যে পৌঁছাতে তখনো অনেকটা পথ বাকি,ঘটনাটা ঘটতেই হলো।ঘটনাটা অস্বাভাবিক নয়।নিত্য দিনের স্বাভাবিক ঘটনা।কিন্তু ঘটনা ঘটার সময়টা অস্বাভাবিক।অন্যদিন হরমোহনের এরকম হয়না,কিন্তু আজ দুপুরে এক ছাত্রের বাড়িতে জন্মদিনের নেমন্তন্ন খেতে গিয়েছিলেন,তাতেই এই।

থেকে থেকে পেটটা কেমন যেনো মোচড় দিয়ে উঠতে লাগলো।তাঁর মনে হলো ব্যথাটা যেনো পেটের একদিক থেকে অন্যদিকে ছুটে বেড়াচ্ছে।নাহঃ আর বুঝি চেপে রাখা যায়না।চারপাশে আলো ফেলে একটু জলাশয়ের চিহ্ন খোঁজার চেষ্টা করতে লাগলেন হরমোহন।যদিও উনি ভালোভাবেই জানেন এদিকে দূরদূরান্ত পর্যন্ত কোনো জলাশয় নেই;এই পথ ওনার কাছে নতুন নয়। কাছাকাছি মাঠও নেই যে নালার জলে কাজ মিটবে।ভারী মুশকিলে পড়লেন হরমোহন।

নিজের ভাগ্যকে ক্রমাগত অভিসম্পাত করতে লাগলেন।মাছের বড়ো মাথাটা কেনো যে ফিরিয়ে দিলেন না।কেনো যে পাঁঠার মাংসটা আরো কয়েক টুকরো খেয়ে ফেললেন।কেনো যে পায়েসটা তৃতীয়বারও নিয়ে নিলেন।নাহ্ আর ভাবতে পারলেন না।

হঠাৎ ওনার মাথায় এলো বন্ধু সুরেন চাকলাদার একবার বলেছিল বিলেতে নাকি জল ব্যবহার করা হয়না।কাগজ দিয়ে কাজ সারা হয়।তাই কাগজের পরিবর্তে গাছের পাতা দিয়েও কাজ সারা যাবে এই ভেবে টর্চ ফেলে কয়েকটা কাঁঠাল গাছের পাতা পেরে নিলেন।তারপর নির্জন রাস্তায় চারিদিকে একবার তাকিয়ে নিয়ে কাঁঠাল গাছের অগভীর বনের ভেতরে ঢুকলেন।এবং একটা জায়গা দেখে গুরুর নাম করে বসে পড়লেন।


বল্টুরা কাকা জ্যাঠার ছেলে মিলিয়ে পাঁচ ভাই এক বোন।তার মধ্যে বল্টু বড়ো,অষ্টম শ্রেণীতে পড়ে।তবে বড়ো হলেও বড়ো বড়ো ব্যাপারটা তার মধ্যে একটুও নেই।মাথায় সারাদিন কীসব আজগুবি ভাবনা চিন্তা ঘুরে বেড়ায়।যা অবাস্তব তাকে বাস্তবতার ছাঁচে কীভাবে ফেললে তা বাস্তবের তকমা পাবে এটাই ওর ভাবনার বিষয় ছিল।

মাস্টারমশাই পড়াতে আসবেন বলে মা ডেকে ডেকেও বল্টুকে চা মুড়ি খাওয়াতে পারেননি।বল্টু বিকেলে থেকে কী একটা নিয়ে ভেবেই চলেছে।মা অনেকবার ডেকেও বল্টুর কোনো পরিবর্তন না দেখে একটা সময় আর ডাকলেন না।অবশ্য তাঁরও আজ মনটা ভালো ছিলনা।বল্টুর বাবা তাঁর স্ত্রীকে আজ ভালো মন্দ দুটো কথা শুনিয়েছেন।দুপুরে এক ফেরিওয়ালা বিছানার চাদর ইত্যাদি মাথায় করে নিয়ে ফেরি করতে এসেছিলেন।সারাদিন মাথায় করে মোট বয়ে বেড়ানো লোকটিকে বল্টুর মা জানালা দিয়ে ডাকলে লোকটির মনে একটা আশার সঞ্চার হয়েছিল।যদি একটা কিছু বিক্রি হয়!!কিন্তু আমাদের সমাজের কিছু নিত্যনৈমিত্তিক ভুল অভ্যাস সেই কবে থেকেই রয়ে গেছে সেটা লোকটিও জানতেন।সেইরকমই ঘটনা ঘটলো বল্টুর মায়ের ক্ষেত্রে।লোকটিকে ডেকে উল্টে পাল্টে নয় নয় করে দশ খানা চাদর খুলে দেখে,নাক সিঁটকিয়ে একটাও না কিনে লোকটিকে ফিরিয়ে দিতে বল্টুর মা বিন্দুমাত্র দ্বিধা করলেন না।বল্টুর বাবা সেটা নিয়ে অনেক কথা শুনিয়েছিলেন দুপুরে।তিনি বলেছিলেন,'যদি কিনবে না তো অত জিনিস খুলিয়ে দেখার কি দরকার?লোকগুলো কষ্ট করে বয়ে বেড়াচ্ছে দু-পয়সা রোজগারের আশায়।তোমার সেসব দিকে খেয়াল আছে?'তাতেই বল্টুর মায়ের মেজাজটা খারাপ হয়ে গিয়েছিল।বল্টুর তারপর ভয় হলো পাছে মা কোনোভাবে সেই রাগটা তার উপর না ঝেড়ে দেন।তাই মাষ্টারমশাই আসার সময় হয়ে গেলেও বল্টু দৌড়ে চা মুড়ি খেতে গেলো।

মাস্টারমশাই এসে পড়লেন।এবং এসেই গোয়ালঘরের খড়ের চালে গুঁজে রাখা চকচকে কাঁচা কঞ্চিটা পেড়ে নিয়ে এসে বসলেন।অন্যান্য ভাইরা আগেই নিজের নিজের জায়গায় চুপচাপ বই নিয়ে বসে পড়েছিল। হ্যারিকেনের আলো তাদের মুখে একটা লালচে ভীতিজনক ছাপ ফেলে রেখেছিল যেটা মাস্টারমশাই পড়িয়ে না যাওয়া অব্দি অদৃশ্য হওয়ায় নয়।এদিকে বল্টু তখনো বইপত্র নিয়ে আসেনি।মাস্টার একবার হাঁকও দিলেন,'কই রে বল্টু লাঠিটা নিয়ে যাবো নাকি?দেখবি কেমন মজা?'

'আজ্ঞে না মাষ্টারমশাই,আমি এসে গেছি।' বলে বল্টু এসে ধপ করে বসে পড়লো।তারপর সবাই মিলে সুর করে পড়া শুরু হলো।

বল্টুর কাকার ছোটো মেয়েটার চার বছর বয়স।সে দুরে একটা দরজার পাশে পর্দার আড়ালে পর্দার একটা অংশ খামচে ধরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মাস্টারের পড়ানো দেখছিল।তার অনুসন্ধানী শৈশবসম্পৃক্ত চোখে না জানি কত প্রশ্ন উঁকি দিয়ে যাচ্ছিল।বল্টুর মা সামান্য কিছু জলখাবার মাষ্টারমশাই-এর জন্য নিয়ে যাওয়ার সময় ছোট্ট মেয়েটিকে দেখতে পেয়ে বললেন,

'কিরে পড়াশোনা করবি?' 

'আমি সেলেট পিনসিল লিখবো।'

'তুই শশুরবাড়ি যাবি।তোর বর আসবে দেখবি পালকি করে।',বলে মা জলখাবারটা দিতে চলে গেলেন।

বল্টুর বাবা কাছেই একটা ঘরে ছিলেন।উনি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে মুখে 'উহ:' বলে শব্দ করলেন।তারপর ভাবলেন মেয়েটিকে এখন থেকেই বিয়ে শব্দটা কেনো বলা?বিয়ে নামক নিয়মটির সঙ্গে পরিচয় যথাসময়ে তো ঠিকই হতো বা হবে।এখন থেকে মেয়েটির শিশুমনে এসব না ঢোকালেই কি নয়?আমাদের সমাজ কি কোনদিন পাল্টাবে না?বাচ্চা মেয়েকে দেখলেই আশীর্বাদস্বরূপ 'তোমার ভালো বিয়ে হোক' বোধহয় কাঙ্ক্ষিত নয়।

এদিকে কিছুক্ষন হলো বল্টুর একটা সমস্যা শুরু হয়েছে।বেশ মনোযোগ সহকারেই সে পড়ছিল কিন্তু সকাল থেকে একবারও প্রাত্যহিক কাজে না যাওয়ায় এবং সন্ধ্যায় গরম চা পেটে পড়ায় প্রকৃতির ডাকে একবার সারা দিতে না গেলেই যে নয় সেটা সে বেশ ভালোই বুঝতে পারছিল।

তাই মাষ্টারমশাইকে কোনো রকমে আমতা আমতা করে সমস্যার কথা বলে ঘর থেকে বেরিয়ে সে বেশ কিছুদূরে মাঠের ধারের পুকুর পাড়ের দিকে গেলো।এদিকটা গ্রামের শেষের দিক।পায়ে চলা রাস্তা আছে।সাইকেল মোটরগাড়ি এদিকে যাবার জো নেই।বলাবাহুল্য রোজ সকালে এদিকে কাজ সারতে এলেও রাতে অন্ধকার নামলে কখনো বল্টুকে আসতে হয়নি,কাজেই অন্ধকার সয়ে এলেও গভীর পুকুরটাকে দেখে তার বেশ ভয়ই করছিল।অবশ্য পুকুরে নামার 'সময়' তখনো আসেনি।গতকাল সজনে ডাঁটা দিয়ে শুক্ত হয়েছিল,বল্টু বেশ কটা কাঁচকলা খেয়েছিল তাতেই আজকে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে অসুবিধা হয়ে পড়েছে।ও ভেবেছিল যেরকম বেগ এসেছে তাতে বুঝি পরিষ্কার হয়ে যাবে।কিন্তু হলনা।আবার যেই ও ভাবছে 'নাহ আজকে আর হবেনা,উঠে পড়ি।' সেই আবার পেটে পাক দিয়ে উঠছে!তাই বহুক্ষণ ধরে ও বসেই রইলো।

এদিকে মাস্টারমশাই দেখলেন বল্টু সেই যে গেল এখনো এলোনা,তাই তিনি ভেতর ভেতর রাগে ছটফট করতে লাগলেন।বার বার বলতে লাগলেন,'বল্টুটা কেন এলোনা এখনো?ঘরে পড়াশোনা করেনাই নাকি?',

'কিরে জংলা?তোর দাদা কই?'

জংলা দেখলো এই সুযোগে যদি পড়াটা কিছুক্ষন ফাঁকি দেওয়া যায় তাহলে বেশ হয়।তাই সে তাড়াতাড়ি বলে উঠলো,'একবার ডাকতে যাবো মাষ্টারমশাই?'

মাস্টারমশাই একটু ভেবে বললেন,'যাবি? আচ্ছা তবে যা।'

জংলা দৌড়ে বেরিয়ে গেলো।তারপর পুকুর ঘাটের কাছে আমগাছের জঙ্গলের বাইরে দাঁড়িয়ে চিৎকার করতে লাগলো, 'দাদা এ দাদা!কই রে? মাষ্টারমশাই এখুনি লাঠি নিয়ে আসচে তোকে জেংলে লাল করে দেবে।' 

ওদিকে বল্টু পড়েছিল মহাসমস্যায়।একে তার পরিষ্কার

হচ্ছিলনা আবার বসে থাকতে থাকতে সেই আজগুবি জিনিস গুলো মাথায় ঘুরছিল।একবার একবার তার চোখের সামনে ভেসে উঠছিল বিশালবপু মাষ্টারমশাইকে কারা যেন চ্যাংদোলা করে তুলে নিয়ে এসে হইহই করে এক-দুই-তিন বলে পুকুরে ছুঁড়ে ফেলে দিচ্ছে।আর মাষ্টারমশাই 'ছেড়ে দে ওরে ছেড়ে দে বাবাগো মরে গেলুম'- বলে পরিত্রাহি চিৎকার করছেন।তারপর 'কবাং' শব্দ করে জলে পড়লেন এবং হাত পা ছুঁড়ে একটা মান কচু গাছ ধরে পুকুরপাড়ে ওঠার বৃথা চেষ্টা করে গাছ সমেত আবার পুকুরে 'কবাং' করে পড়লেন।এবং পুকুরের মৎস্যশ্রেণীর প্রাণীরা তাদের নিজের জমিদারিতে বিশাল কোনো অজানা বৃহদাকার প্রাণীর উপস্থিতি টের পেয়ে ভয় পেয়ে ইতস্তত ঘুরে বেড়াতে শুরু করলো।পুকুরধারে কয়েকটা গোসাপ জলে নামার তাল করছিল তারাও ঘাবড়ে গিয়ে উল্টে ডাঙার দিকে পা বাড়ালো।

কিন্তু বল্টুর ভাইয়ের ডাকে বল্টুর চমক ভাঙলো।সে কোটর থেকে বেরিয়ে আসা গোল গোল পাকানো চোখে তেরে আসা মাষ্টারমশাই-এর বীভৎস মূর্তিটা কল্পনা করে ভিরমি খেয়ে উঠে পড়ে তড়িঘড়ি আম গাছের জঙ্গল থেকে বেরিয়ে এলো।তারপর ভাইয়ের সঙ্গে বাড়ির দিকে হাঁটা দিলো।

এদিকে জগতের সমস্ত কিছু যিনি দেখে চলেছেন তিনি মিটিমিটি হাসলেন।কেনো হাসলেন সেটা আর একটু পরে জানা যাবে।

বল্টু বাড়িতে গিয়ে মাষ্টারমশাই-এর সামনে দাঁড়াতেই মাষ্টারমশাই এক হাত নিলেন।বল্টুর সামনে 'মাষ্টারমশাই-এর কাল্পনিক জলে পড়ার দৃশ্যটা' বার বার ঘুরে বেড়াচ্ছিল তাই সে হঠাৎ ফিক করে হেসে দিল। ব্যাস,আর যায় কোথা।মাষ্টারমশাই কাঁচা কঞ্চি দিয়ে ঘা কতক লাগিয়ে দিলেন।তারপর হঠাৎ ধপ করে বসে পড়লেন।কারণ একটা গন্ধ তাঁর নাকে এলো।গন্ধটা দুর্গন্ধ।এবং সেটা উনি ছাড়াও যে আরো অনেকে পেয়েছে সেটা তাদের মুখের দিকে একবার তাকিয়েই উনি বুঝে গেলেন।বল্টুর কাকার ছেলে বলে উঠলো,'উঁহু কীসের গন্ধ!!অ্যা ছি।'

বল্টুর নিজের অপর এক ভাই বলে উঠলো,' মাষ্টারমশাই জানেন আমাদের বাঁশতলায় এরকম গন্ধ ছাড়ে সবসময়,দুনিয়ার লোক ওখানে সকালে পেট পরিষ্কার করতে যায় যে!' 

ভয়ানক কোলাহল শুরু হলো।সেই কোলাহলের শব্দ শুনে বল্টুর বাবা বেরিয়ে এলেন।বল্টুর দাদুর বৈঠকখানায় রোজ সন্ধ্যায় কয়েকজন গণ্যমান্য বয়স্ক ব্যক্তি এসে গান-গল্প করেন তাঁরা বেরিয়ে এসে নাকে চাপা দিয়ে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে এদিক ওদিক তাকাতে লাগলেন।বল্টুর মা কাকিমারা রান্নাঘর থেকে কিছু একটা হয়েছে শুনেও অত লোকজনের সামনে বাইরে আসতে না পারে আড়াল থেকে ব্যাপারটা বোঝার চেষ্টা করতে লাগলেন।এদিকে বল্টুর ভাইয়েরা স্ব স্ব স্থান থেকে উঠে পড়ে দুর্গন্ধের উৎস খোঁজার চেষ্টা করে চলেছে কিন্তু বল্টু এবং তার ভাই জংলা- এই দুজন চুপচাপ বসেই রইলো।জংলা মাঝে মাঝে মুখ টিপে হাসতে লাগলো।তখন মাষ্টারমশাই চোখ পাকিয়ে বললেন,'কী রে জংলা?খুব হাসছিস যে?তুই বুঝি সব জানিস?'

বল্টুর ভাই জংলা অমনি হো হো করে হেসে উঠে বললো,' হ্যাঁ মাষ্টারমশাই আমি সব জানি।'

বয়স্ক লোকজন বলে উঠলেন,'কী জানো বলে দাও না।কোথা থেকে গন্ধ আসছে এরকম?নাক যে জ্বলে গেল বাবা!'

'দাদা পুকুরপাড়ে বাহ্যে গেলো যে।দিয়ে তো আসার সময় পুকুরে নামলো না।বাহ্যে বসেই উঠে চলে এলো।তাহলে গন্ধ ছাড়বে না?'

'সেকি কথা?এটা সত্যি নাকি? কী রে বল্টু?' ভুরু কুঁচকে বল্টুর বাবা জিজ্ঞেস করলেন।

বল্টু ঘাড় নেড়ে বললো,'মাষ্টারমশাই ডাকতে পাঠিয়েছিলেন যে।তাই তো তাড়াতাড়ি চলে এলুম।'

'অ্যাহ বলো কি?বাবারে বাপ।ছি ছি।বল্টু তুমি এরকম করতে পারলে? ছি ছি।দুয়ারের কাছেই ঠাকুর ঘর।একটা বুদ্ধি বিবেচনা নাই? ছি', বয়স্ক লোকজন বলে উঠে লাফিয়ে তফাতে সরে গেলেন।

এবার সব শুনতে পেয়ে বাড়ির মা কাকিমারা বেরিয়ে এলেন এবং তারপর 'গেল গেল' রব করে চেঁচিয়ে বাড়ি মাথায় তুললেন।

ঠাকুমা ডুকরে কেঁদে উঠে বললেন,'সেদিন ওর দাদু একটা নতুন শতরঞ্জি কিনে আনলো।আমি মাষ্টারমশাই পড়াতে আসছেন বলে ওদেরকে বসতে দিলুম।আর নোংরা করে ফেললে গা?এবার ওইটা আর ঘরে তুলতে পারবো?ছি ছি ছি।ও পুঁটি গোবর জল নিয়ে আয় গোটা উঠোনে দুয়ারে লেপে দিয়ে যা।'

বল্টুর মা অন্য সময় হলে ছেলেকে ঘা কতক লাগিয়ে দিতেন।কিন্তু এখন বল্টুকে ছুঁলে এই রাত্রে আবার স্নান করতে হবে ভেবে দুর থেকেই বকাবকি করতে লাগলেন।

বল্টুর বাবা বলটুর কান ধরে সোজা করে দাঁড় করিয়ে আচ্ছা করে মলে দিতে দিতে বলতে লাগলেন,'ছি তুই একটা অপদার্থ।পুকুরে নামতে তোর কি হচ্ছিল? তুই জানিস না বাহ্যে গেলে জল ব্যবহার করতে হয়?উঠে চলে এলি?ছি একবারে মাথা কাটা গেলো!'

বল্টুর ভাইরা এই তালে বেশ মজা পাচ্ছিলো।তারা হইহই করে আরো গোলমাল সৃষ্টি করলো।বল্টুর দাদু এরপর বেরিয়ে এলেন।তিনিও ব্যাপারটা শুনে বল্টুকে যারপরনাই বকাবকি শুরু করলেন।

কিন্তু কেউ লক্ষ করলনা মাষ্টারমশাই কোনো কথা বলছেন না।তিনি চুপ করে দাঁড়িয়ে কাণ্ডকারখানা দেখে যাচ্ছিলেন।সব জানার পর তিনি বল্টুকে একবারও বকাবকি করলেন না।কারণটা বোধহয় তিনি আর উপরওয়ালা ছাড়া আর কেউ জানতেন না।আজ দুপুরে মহাভোজ খেয়ে সন্ধ্যায় পড়াতে আসার সময় জঙ্গলে প্রকৃতির ডাকে সাড়া তো তিনিও দিয়েছিলেন।এবং সেই রাস্তায় জলের কোনো চিহ্ন না থাকায় ওই অবস্থাতেই ধুতি সামলে বল্টুদের বাড়িতে পড়াতে চলে এসেছিলেন।কাজেই…



Comments

Popular posts from this blog

শারদীয়া সংখ্যা ১৪৩০ || সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র || World Sahitya Adda Sarod sonkha 1430

TATA Steel Job Recruitment 2024 || টাটা স্টিল কোম্পানিতে নতুন করে 6000 শূন্যপদে কর্মী নিয়োগ || TATA company job

মাধ্যমিক পাশেই ভালো মাইনের চাকরি,জলের ট্যাঙ্কি দেখাশোনার স্থায়ী কাজ || Jal Jeevan Mission Registration 2024