বাড়ি বদল - সুমিত মুখার্জী || গল্প - Story || ছোটগল্প - Short story
বাড়ি বদল
সুমিত মুখার্জী
আজ শিশিরের মন খুব খারাপ। শিশির রা আজ তাদের পুরনো বাড়িটা ছেড়ে অন্য জায়গায় চলে যাচ্ছে। মাস খানেক আগে রাতে খাবার টেবিলে বাবা যখন বললেন, আগামী মাসে আমরা নতুন বাড়িতে উঠছি এবং এই বাড়িটা ছেড়ে চলে যাচ্ছি, শিশির তখন নিজের কানকেও বিশ্বাস করতে পারেনি । কেউ যে এক বাড়ি বদলে অন্য বাড়ি যেতে পারে সেটা শিশির কখনোই কল্পনা ও করতে পারে না । শিশির ভেবে নিয়েছিল সে কোন দুঃস্বপ্ন দেখছে। তাই নিশ্চিত হবার সে নিজের গায়ে একটা চিমটি কাটলো । একটু ব্যাথার মতো লাগলো তাই শিশির বুঝলো যে তারা সত্যি সত্যিই চলে যাচ্ছে।
বাবা অন্য জায়গায় বদলী হয়ে যাওয়ায় হঠাৎ করেই তাদেরকে অন্য জায়গায় চলে যেতে হচ্ছে। এই বাড়ি টার জন্য শিশির মনে মনে অনেক কষ্ট পেতে লাগলো । হয়তো ছোটবেলা থেকেই শিশির এই বাড়িতেই বড় হয়েছে তাই তার খারাপ লাগাটাও বেশী। এখানকার পথ ঘাট, নদী নালা, এমনকি সব গাছ পালার নামও শিশির জানে। যেসব গাছপালার নাম শিশির জানেনা, সেসব গাছ পালার নতুন নাম শিশির নিজেই রেখেছে আজ বাড়ির কাঁঠাল গাছটাকে ধরে খুব কাঁদতে ইচ্ছে করছে শিশিরের! গত পাঁচ বছরে সে গাছ টিকে নিজের সন্তানের মতোই আদর যত্নে বড় করেছে সে।
আজ সকালে মাকে নিয়ে শিশির যখন তার স্কুলে সব বন্ধুদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আসার জন্য ও টিসি আনার জন্য গিয়েছিল, তখন ক্লাসের সবাই শিশিরকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিয়েছিল। হৈমন্তী ম্যাডাম যখন আদর করে বুকে জড়িয়ে ধরেছিলেন তখন দুই বছরের বাচ্ছাদের মতো করে কেঁদে দিয়েছিল শিশির। মনীষা যখন শিশিরের দিকে অপলক তাকিয়ে কাঁদছিল আর তার সাদা ইউনিফর্ম এর কোণা দিয়ে চোখের জল মুছছিল তখন তো পাগলের মতো মাথায় হাত দিয়ে চিৎকার করে কেঁদে দিয়েছিল শিলির! মনীষাকে কতো পছন্দ করতো শিশির! অথচ কিছুই বলা হয়নি তাকে এটা ভাবতেই শিশিরের বুক ফাটিয়ে কাঁদতে ইচ্ছে করছিল।
গাড়ি এগিয়ে যাচ্ছে নতুন বাড়ির ঠিকানায়। রাস্তার পাশেই মনীষার বাড়ি, শিশির মনীষা কে একবার বলেও ছিল যে তারা বিকেল চারটায় বের হবে। শিশির তাই বারবার রাস্তার এপাশ ওপাশ দেখছে কোথাও মনীষা তাকে বিদায় দিতে এসেছে কিনা। মনীষার জন্য একটা চিঠিও লিখেছিল শিশির অথচ চিঠিটা আর হাত বদল হল না। শিশির খুব সাবধানে তার চোখের কান্না আটকাতে চেষ্টা করছে, কিন্তু পারছে না। হঠাৎ খেয়াল হল চোখের জলে বুক পকেটে রাখা চিঠিটা একদম ভিজে যাচ্ছে শিশিরের চোখের জলে তবুও শিশির চোখের জল কিছুতেই আটকাতে পারছেনা......।।
Comments