Monday, October 25, 2021

লেখক তীর্থঙ্কর সুমিত -এর একটি রম্যরচনা

 নদী কথায় ভেসে যায় ...

     


         (১৩)


জমানো অনেক কথা বলার থেকে, না বলাটাই বাকি থাকে ।বহুল প্রচলিত কথা কখনো কখনো নতুন হয়ে ওঠে ।আর দূরের হারিয়ে যাওয়া মানুষগুলো বড় কাছের হয়ে ওঠে।এভাবেই দিন - মাস - বছর পেড়িয়ে যায় ।ফিরে আসে কথার জোয়ার।আর অপেক্ষা সৃষ্টি করে বেঁচে থাকার রসদ।এখানেই হয় কলমের সূচনা।

না হয় কথাগুলো ই বাঁচিয়ে রাখুক পাওয়া না পাওয়ার অন্তিম মুহুর্ত ।






               (১৪)


জীবনের মুহূর্তগুলো ক্রমশ ভেসে যেতে থাকে।এপাড় থেকে ওপাড়।ওপাড় থেকে এপাড়।মাঝে যে বিস্তর ব্যাবধান থাকে সেখানে এক একটা ঘর তৈরী হয় ।যে ঘরে অনায়াসে মানুষ বসবাস করতে পারে।ভালোবাসার ঘর।সেই ভালোবাসার ঘরে কত কথা ভেসে যায়।যে কথায় এক একটা নদীর জন্ম।একেকটা সমুদ্রর জন্ম। আর জন্ম নেয় প্রতিনিয়ত কত কবিতার।যে কবিতা সৃষ্টি করে এক একটা পাহাড়,এক একটা পর্বত।সেই পাহাড়ের গা বেয়ে নেমে আসে ঝরণা।যে ঝরণার জল গায়ে মেখে প্রতিদিন হেঁটে চলি।আর কবিতার কথা মনে করি।

কেউ যদি প্রশ্ন করে নদী তোমার জন্ম কোথায়?


আমি বলি এক একটা কবিতাই এক একটা নদী।



লেখক সুজিত চট্টোপাধ্যায় -এর একটি গদ্য

 ফ্যালো কড়ি মাখো তেল 




মেঘে মেঘে বেলা হলো । হবেই তো। এটাই কালের নিয়ম। ব্যাটারি কমজোরি হলে , ঘড়ি স্লো চলবে। উল্টোপাল্টা সময় দেবে। একদিন নিঃশব্দে থেমে যাবে। খেল খতম। 

কত বাসনা অপূর্ণ রয়ে গেল। থাকবেই।

আক্ষেপ, মানুষের জন্মগত অধিকার। তবে মুশকিল হচ্ছে , কী জানেন তো! 

 আকাশকুসুম বাসনা পূর্ণ হয়না। কত-কী পাবার ইচ্ছে । কাকের হঠাৎ ময়ূর পেখম মেলে নাচন ইচ্ছে হতেই পারে। 

কাক যদি গান ধরে , তাহলে চড়াই পাখি হি হি করে হাসে আর কোকিল মূর্ছা যায় । 


ইচ্ছের নাকি ডানা আছে। মেলে ধরলেই হলো। মর্ত্যলোক থেকে বৈকুন্ঠ লোক , উড়ে যাও পতপত করে। কেউ কাছা ধরে টানবে না। 

স্বপ্ন উড়ান ঘুড়ি আপনা আপনিই সুতো কাটা হয়ে লাট খেয়ে মুখ থুবড়ে পড়ে কার্নিশে কাতরাবে। কোলে মার্কেটের কুলি। পাহাড় প্রমাণ মোট মাথায় নিয়ে হেঁই হেঁই করে চলছে এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত। যেন কত সহজ কাজ।

ওদিকে বলাই বাবুকে দেখুন । সামান্য লাউ কুমড়ো পটোলের আড়াই কিলোর ব্যাগ বইতে হিমসিম। সকলের পক্ষে সব কিছু সহজসাধ্য নয়। 


 কপাল ময় হাহাকারের আঁকিবুঁকি। দুর্ভাগ্যের জীবন ম্যাপ। 

নোবেল , অস্কার, ভারতরত্ন তো দূর, একটা লাগদাই সরকারি চাকরিও জুটলো না। টু পাইস ইধার উধার কামাতে না পারলে,,,,,, পানসে রে ভাই, পানসে জীবন। 

মুসুর ডাল আর বড়ির ঝাল। কোনও কোনও রোববারে , সানডে চিকেন। মানে পোলর্ট্রির পালক খসা মুরগির পেঁয়াজ রসুন দেওয়া ট্যালট্যালে ঝোল ছাড়া আর কিছুই জুটলো না। 

 জুটলো কী? বউ। 

সংসার ধর্ম বড় ধর্ম মা, তাই পারিনে ছেড়ে যেতে, 

রামপ্রসাদী গাইতে গাইতে , চান, খাওয়া , বাজার দোকান, এঁদো চাকরি আর মাঝরাতের ক্ষণস্থায়ী এন্টারটেটমেন্ট করে ব্যাটারি এখন টিমটিমে। 

নিভু নিভু। 

সেদিন, পাড়ার মুদির দোকানে বুক চিতিয়ে একজন মাঝবয়সী বীরদর্পে আস্ফালন করছিলেন,,,, জানো হে, , বিয়ে করেই ফেঁসে গেলাম। নইলে কত বাসনা ছিল , মানুষের জন্য কিছু করে যাবো। 

কিছুই হলো না। এখন এই পাঁচফোড়ন জীবন নিয়ে ন্যাটা ঝামটা হচ্ছি। 

বারফট্টাই সর্বস্ব মোড়লপনার কাল যাপন। নধর আপেলের মধ্যিখানে কালো পোকা। চেরাই না করলে আসল রুপ অধরা রয়েই যাবে। 

মানুষ চেনো হে মানুষ চেনো। 

আরে দূর মশাই,, জ্ঞান দেবেন নাতো। নিজেকেই চিনতে পারলাম না , বলে কিনা মানুষ চেনো ! 

যাক, যা বলছিলাম,,, 


হায়রে , কোথায় একটু রাজধানী কিংবা শতাব্দী এক্সপ্রেস। ঠান্ডা কামরায় ফুরফুরে জার্নি। কোথায় উড়োজাহাজের মেগা সুন্দরী লাস্যময়ী এয়ার হোস্টেসের মিষ্টিমুখ চপল হাসি। দুরদুর,, 

কপালে জুটলো লোকাল ট্রেনের ভেঁপু বাঁশি। 

রোজ সকাল আটটায় রেলস্টেশনে পালোয়ান ষাঁড়ের মনোবৃত্তি নিয়ে ট্রেনের অপেক্ষা। ট্রেন প্লাটফর্মে থামতে যা দেরী। শিং বাগিয়ে গোঁত্তা মেরে কোনক্রমে কামরায় সেঁধিয়ে যাও। ব্যস। আপদের শান্তি। আর চিন্তা নেই। মার দিয়া কেল্লা। অফিস যাত্রা সাকসেসফুল। 


বোস দা, আজকে টিফিনের কী আনলেন? 

বোস দা তিরিক্ষি মেজাজে বললো ,,, 

মণিমুক্তর চচ্চড়ি আর সোনার রুটি। কেন,, তুমি একটু চেখে দেখবে নাকি ? 

পাল দা, প্যাকেটের পানমশলার জাবর কাটতে কাটতে হেসে বললো,,,, চটছো কেন দাদা। আমোদ আহ্লাদ বলতে তো এইটুকুই অবশিষ্ট আছে। বাচ্চাদের মতো একটু ইয়ার্কি ফাজলামো। কলুর বলদের ঘানিটানা জীবন। শুধু নাজেহাল আর ন্যাজেগোবরে অবস্থা। 

রোজরোজ ওই একই রুটি চচ্চড়ি। টিফিনবাক্স খুলতেই ইচ্ছে করে না। 

বোস দা, কপাল কুঁচকে বললো ,,,,,, ভালো ভালো পছন্দসই কিমা কোর্মা মোগলাই খানা আনলেই পারো। কেউ তো মানা করেনি। 

পাল দা, বিরসবদনে বললো,,,,, ঠাট্টা তুমি করতেই পারো। কিন্তু নিজের বুকে হাত রেখে বলো দেখি,, তোমার মনে ক্ষেদ নেই , আফসোস ? 

বোস দা, ভিজে কাকের গা ঝাড়ার মতো মাথা ঝাঁকিয়ে বলল,,,,,,, না, হয়না । কেন হবে শুনি। আমার যোগ্যতা কী? আমাকে যদি এই কোম্পানির জেনারেল ম্যানেজার করে দেয় । আমি পারবো সেই দায়িত্ব সামলাতে ? পারবো না। কেননা আমার সেই যোগ্যতাই নেই । সুতরাং আমার ওজন অনুযায়ী আমি ঠিক জায়গায় আছি। 

আচ্ছা পাল, কাল যদি তোমার এ-ই চাকরিটা চলে যায় , তুমি কী করবে ? তোমার কী তেমন কিছু যোগ্যতা আছে , যা দিয়ে তুমি আরও বেটার জায়গায় স্যাট করে ফিট হয়ে যাবে ? আছে? নেই । সোজা মোদ্দা কথা , নেই। যদি থাকতো , তাহলে এত বচ্ছর এ-ই ভাবে একই জায়গায় নিশ্চল দাঁড়িয়ে থাকতে না। সুতরাং আক্ষেপ করার কোন মানেই হয়না। আরে ভাই , ঘুন ধরা কাঠে ফার্নিচার হয়না। বড়জোর জ্বালানি হতে পারে। 


অতএব , নো আক্ষেপ। নো চোখ টাটানি। চোখ টাটানি থেকেই বুক টাটানি। হাসপাতাল , ডাক্তার , বাড়তি বিলের মারণ কোপ। সহানুভূতির দেনা। আত্মীয়দের অসহানুভূতির পিঠটান। বন্ধুত্ব পগার পাড়। একেই বলে সুখে থাকতে ভুতে কিলোনো। 


সেই কে যেন বলেছিল , জানালা খুলে দ্যাখো , তোমার চাইতে আরও অনেক দুঃখী মানুষ এই দুনিয়ায় মানিয়ে গুছিয়ে বেঁচেবর্তে আছে। পারফেক্ট প্রেসক্রিপশন। 

দুঃখী দেখে দুঃখ ভোলো। নইলে আতান্তরের একশেষ হতে হবে। 

সেই কথাটা মনে আছে তো ? ফ্যালো কড়ি মাখো তেল,,, ইয়েস স্যার। 

গরীবের কড়ি হলো কর্ম। মানানসই কর্ম। 

যতক্ষণ কর্ম , 

ততক্ষণ কড়ি । 

যতক্ষণ কড়ি , ততক্ষণ হরি। 

কেউ কারো নয়।

তাই যতক্ষণ বাঁচো,খোল করতাল সহযোগে, উদ্বাহু হয়ে নাচো আর গাও,,,, 

হরিবোল,,,, কড়িবোল,,,, কড়িবোল,,,, হরিবোল,,।

লেখক সত্যেন্দ্রনাথ পাইন -এর একটি গদ্য

 একবিংশ শতাব্দীর আরও এক লজ্জা

 


      আমাদের পাশের স্বাধীন রাষ্ট্র বাংলাদেশ থেকে ঘটে গেল এক লজ্জা জনক বীভৎস নারকীয় ধ্বংস। যে বা যারা ঘটালো সে বা তারা কোন সম্প্রদায়ের সেটা বড় নয়। বড় হলো ঘটানো হয়েছে। কিন্ত্ত কেন? 

    সারা বিশ্বে আমরা বাঙালিরা নিজেদের ধর্ম ও সংহতি এবং সংস্কৃতি নিয়ে বুক ফুলিয়ে চলি। কারণ, আমাদের ভাবনা-- ধর্ম যে যার ভগবান বা ঈশ্বর সবার! 

   সেখানে হিন্দু মন্দিরের ওপর ভাঙচুর বা ধ্বংস লীলা বাঞ্ছিত নয় নিশ্চয়ই। এখানে হিন্দু বা মুস্লিম বা শিখ খ্রীষ্টান নয় অত্যাচার হলে প্রতিবাদ ঘণীভূত হবেই। হয়েওছে। সারা বিশ্বে ইসকনের বিভিন্ন সংগঠন থেকে ঝড় উঠেছে। উঠুক। আরও বেশি বেশি ঝড় উঠুক। যারা এরকম ন্যক্কারজনক কাজ করলো তারা কী চায়! বাঙালির উঁচু মাথাটা টেনে নিচে নামাতে? নাঃ। তা হতে দেয়া যাবে না। বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সেখ হাসিনা কড়া হাতে দমন করতে চেয়েছেন বলে খবর। উত্তম। 

     যদিও লেখিকা তসলিমা নাসরিন একে অন্যভাবে ব্যাখ্যা করে সরকারের ওপর দোষারোপ করেছেন। কিন্ত্ত নিরপেক্ষ ভাবে বলা যায় বাংলাদেশ সরকারের ভূমিকা এক্ষেত্রে সন্তোষজনক। আমরা পশ্চিম বঙ্গের বাঙালি হিন্দুরা হয়তো এটা নিয়ে বেশি মাথা ঘামাচ্ছিনা। ভাবখানা এমন যেন ওর হয়েছে তো আমি কী করবো! 

   মোমবাতি জ্বালিয়ে মিছিল করে বিশ্বের কাছে আমাদের অস্তিত্ব বজায় রাখার জন্যে লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। যেহেতু আমরাই ভাষা দিবস হিসেবে বাংলাদেশের গণ আন্দোলনের পিছনে যুক্ত হয়ে আন্তর্জাতিক রূপ দিতে পেরে গর্বিত। সেখানে কতজন হিন্দু বা মুসলমান ছাত্র ছিলেন তার হিসাব তো করিনি। কারণ, আমরা বাঙালি। বাংলা আমাদের মাতৃভাষা। সেই বাঙালি হয়ে কেন এরকম লজ্জাজনক ঘটনা ঘটলো! কে দায়ী! কেন ই বা ঘটলো? এর পিছনে কি কোন রাজনৈতিক বা স্থায়ী পরদেশী ছাপ বা চাপ রয়েছে!? জানতে ইচ্ছে করে। 

   যে বা যারা এব্যাপারে সরাসরি যুক্ত সে বা তারা শুভ মস্তিষ্কের কিনা দেখতে হবে। সে বা তারা কী উদ্দেশ্যে এরকম ঘটালো সেটাও নিরপেক্ষ তদন্তের প্রয়োজন। 

   আমরা এপার বাংলায় সুখে আছি, থাকবো ও। কারণ--

    আমরা মনে করি----

     একই বৃন্তে দুটি কুসুম হিন্দু মুসলমান। 

      হিন্দু যার নয়নমনি

      মুস্লিম যার প্রাণ।। 

 নমস্কার ধন্যবাদ। সব বাঙালির সুস্থতা প্রার্থনা করে শেষ করলাম।

প্রাবন্ধিক ইমরান শাহ্-এর একটি প্রবন্ধ

 দশমীর দশকথা



নবমী পূজার মাধ্যমে মানবকুলে সম্পদলাভ হয়। শাস্ত্র অনুযায়ী, শাপলা, শালুক ও বলিদানের মাধ্যমে রোববার দশভুজা দেবীর পূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। নীল অপরাজিতা ফুল নবমী পূজার বিশেষ অনুষঙ্গ। নবমী পূজায় যজ্ঞের মাধ্যমে দেবী দুর্গার কাছে আহুতি দেয়া হয়। ১০৮টি বেলপাতা, আম কাঠ ও ঘি দিয়ে এ যজ্ঞ করা হয়। পূজা শেষে যথারীতি অঞ্জলি।


'দশমী' কথাটির মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে বাঙালির আবেগ ও মনখারাপ মিশ্রিত একটি অনুভূতি। দশমী এলেই বাঙালির মনে আসে মায়ের ফিরে যাওয়ার আশঙ্কা। অপেক্ষায় থাকতে হবে আরও একটা বছর। সাধারনত দুর্গাপুজোর অন্ত হয় দশমীর মাধ্যমেই। এই দিনেই মা দুর্গার প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়। তবে এই দিনটিকে বিজয়া দশমী বলার সঠিক অর্থ আজও জানেন না অনেকেই। 


'দশমী' কথাটির সাধারন অর্থ খুবই সহজবোধ্য। আশ্বিন মাসের শুক্ল পক্ষের দশমী তিথিতে পিতৃগৃহ ছেড়ে কৈলাসে স্বামীগৃহে পাড়ি দেন দেবী। সেই কারণেই এই তিথিকে 'বিজয়া দশমী' বলা হয়। তবে দশমীকে 'বিজয়া' বলার কারণ খুঁজলে অনেক পৌরাণিক কাহিনী পাওয়া যাবে। পুরাণের মহিষাসুর বধ কাহিনীতে বলা হয়েছে, মহিষাসুরের সঙ্গে  ৯ দিন ৯ রাত্রি যুদ্ধ করার পর দশম দিনে তাঁর বিরুদ্ধে বিজয় লাভ করেছিলেনমা দুর্গা। তাই তাকে 'বিজয়া' বলা হয়। এছাড়াও শ্রীশ্রীচণ্ডী কাহিনী অনুসারে, দেবীর আবির্ভাব হয় আশ্বিন মাসের কৃষ্ণা চতুর্দশীতে। পরে শুক্লা দশমীতে মহিষাসুর বধ করেছিলেন তিনি। তাই বিজয়া দশমী এই বিজয়াকেই চিহ্নিত করেন। 


উত্তর ও মধ্য ভারতে এবং বাংলাদেশে এই দিনে দশেরা উদযাপিত হয়। তবে তার তাৎপর্য সম্পূর্ণ আলাদা। 'দশেরা' শব্দটির উৎপত্তি সংস্কৃত শব্দ 'দশহর' থেকে। যার অর্থ দশানন রাবণের মৃত্যু। বাল্মীকি রামায়নে বলা হয়েছে, আশ্বিন মাসের শুক্লা দশমী তিথিতেই লঙ্কেশ্বর রাবণকে বধ করেছিলেন রাম। কথিত আছে, রাবণ বধের পরে আশ্বিন মাসের ৩০ তম দিনে অযোধ্যা প্রত্যাবর্তন করেন রাম, সীতা, ও লক্ষণ। রাবণ বধ ও রামচন্দ্রের এই প্রত্যাবর্তন উপলক্ষ্যেই যুথাক্রমে দশেরা ও দীপাবলি পালন করা হয়ে থাকে। 


তবে দুর্গাপুজার শেষ দিন হিসাবে দশমী শোকের ছায়া বহন করলেও শাস্ত্রে এই বিষয়টিকে সেই ভাবে দেখা হয়নি। এপ্রসঙ্গে শ্রীরামকৃষ্ণদেবের একটি কাহিনী উল্লেখযোগ্য। রানী রাসমণীর জামাতা মথুরবাবু একসময় আবেগপ্রবন হয়ে দশমীর দিনেও মা দুর্গাকে বিসর্জন দেবেন না বলে জেদ ধরে বসেন। তখন রামকৃষ্ণদেব তাঁকে বোঝান, বিজয়ার অর্থ দেবীমা ও সন্তানের বিচ্ছেদ নয়। তিনি আরও বলেন যে, মা কখনও তার সন্তানের থেকে মুখ ফিরিয়ে থাকতে পারেন না। এতদিন মা দালানে বসে পুজো নিয়েছেন এরপর মা হৃদয়মন্দিরে বসে পুজা নেবেন। এরপরেই মথুর শান্ত হন এবং বিসর্জন হয় মা দুর্গার প্রতিমা।  


লেখক রঞ্জিত মল্লিক -এর একটি গল্প

             তিলের নাড়ু




               আশ্বিন মাস পড়ে গেছে। শরৎ প্রকৃতি নব সাজে সেজে উঠেছে। চারিদিকে কাশের চাদর, বাউল মাঝির গানের মেঠো সুর, টলটলে দীঘিতে শাপলার আদর,ঢাকের বোহেমিয়ান মাতাল করা বন্দিশ জানিয়ে দিচ্ছে মা উমা আসছেন।


                    সামান্য বহুদিন পরে পুজোতে ঘুরতে যাচ্ছে। বন্ধুর দেশের বাড়ি। মালদার রতুয়াতে। সেখানে গোবরাহাটে বাড়ির পুজোতে বেশ ধুম। 


                আরও একটা কারণ আছে ওখানে যাবার। পুরানো ব্যথা, আবেগটা মাঝে মাঝেই নাড়া দেয়। ছাব্বিশ বছর পরে সেটা আবার নতুন করে টের পাচ্ছে।


                     "কাল রওনা দিবি ?" মা বলল।

             "হ্যাঁ। রাতের ট্রেনেই যাব।" সামান্য ব্যাগ গোছাতে গোছাতে বলল।

     "সমু, শিউলির সাথে দেখা করবি না ? একবার খোঁজ নিস।"

              "তুমি আবার শুরু করলে।"   

      

               সামান্য এড়ানোর চেষ্টা করলেও মা প্রায়ই প্রসঙ্গটা তোলে। যাতে ছেলের সুমতি ফেরে। সংসারী হয়।


                 মালদাতে সকালেই নেমেছে। স্টেশন থেকে নেমে মোরামের রাস্তা ধরে বিবর্তনের বাড়ি অনেকটা পথ। পুরোটা হেঁটেই গেল। গ্রামের জ্যামিতি অনেকটাই চেঞ্জ হয়েছে। সেই সাথে মানুষের রুচিও।


              একটা দীঘির কাছে এসে একটু থেমে এদিক ওদিক ঘুরেই আবার সামনে হাঁটতে শুরু করল। পুরানো কিছু হয়ত মনে পড়েছে। তাই......


               শরৎকালের চেনা ছবিটা গ্রামে আসলেই ধরা পড়ে। ছবির মত সব কিছু যেন সাজানো।


                "সমু, এসেছিস বাবা। কতদিন পরে তোকে দেখলাম।" ঠাকুরমা বুকে জড়িয়ে ধরল।

         "তোমাদের খবর সব ভাল তো ?" সামান্য ঠাকুরমাকে প্রণাম করে।

         "আসতে কোন সমস্যা হয়নি তো ?" বলেই বিবর্তন হাত ধরে টানতে টানতে সামান্যকে দুর্গাদালানে নিয়ে যায়। মৃন্ময়ী মাকে দেখে সামান্যর চোখ ছল ছল করে ওঠে। মা অপর্ণার মধুর হাসি ঝরে ঝরে পড়ছে উঠোনে, দালানে, বাড়ির সর্বত্র।


             বাড়িতে সবাই ব্যস্ত। শুধু একজনের অনুপস্থিতি ভীষণভাবে সামান্যকে কষ্ট দিচ্ছে। সেই অনুপস্থিত ব্যাক্তিকে দেখতেও পাচ্ছে না।



                       "বাজলো তোমার 

                         ...........,আলোর ....." 


                 দুটো দিন কিভাবে হাসি ঠাট্টা মজাতে কেটে গেছে ও নিজেই জানে না। এখানে মানুষ জন বড্ড আপন। সবাইকে বেশ নিজের বলে মনে হয়। 

           

               আজ অষ্টমী। পুজো বসেছে। একটু পরেই অঞ্জলি শুরু হবে। ঢাকের মিষ্টি মল্লারে চারিদিক মুখরিত। 

            

               অষ্টমী আসলেই বুকের ব্যথাটা টনটন করে। সারারাত ঘুমোতে পারেনি। একটা চাপা কষ্ট তাড়া করেছে ওকে। অথচ সেই কষ্টের কথা কউকে বলতে পারছে না। নিজেকে দ্বগ্ধ করছে বারে বারে।


             শিউলির কথা মনে পড়েছে। জানে না ও কোথায় আছে। কেউ ওর কথা তুলছেও না। সামান্য নিজেও কিছু বলতে সংকোচ করছে। খুব ইচ্ছে ছিল শিউলির সাথে অঞ্জলি দেবে। তারপর গোটা গ্রামটা ওকে সাইকেলে চাপিয়ে ঘুরে দেখবে। ওকে ভালবেসে কিছু কিনে দেবে। ওর জন্যে দামী দুটো শাড়িও এনেছে। 


             বহু বছর আগে এখানে এসেছিল। শিউলির সাথে তখন দেখা। বোবা, কালো আদিবাসী মেয়ে। তিন কূলে কেউ নেই। অনাথ শিউলির দূর সম্পর্কের এক মাসিই ভরসা। বিবর্তনের বাড়িতে কাজ করত। 


            শিউলিকে দেখেই সামান্যর ভাল লেগেছিল। টানা টানা হরিণের মতন চোখ, মেদহীন ছিপছিপে শরীর, নদীর মতন নেমে আসা কোমর অবধি বিছানো কালো চুল, যেন খাজুরাহোর শৈল্পিক টাচ রয়েছে ওর শরীরে। 'ভালবাসি' এই ছোট্ট শব্দটা ওকে বলতে পারেনি। শিউলিও হয়ত ওকে ভালবেসে ছিল। চোখের ঈশারাতে সামান্যকে বুঝিয়ে ছিল প্রেমের উপপাদ্য; ওর মনের মধ্যে জমানো না বলা অনেক কথা। যা সামান্য সেদিন হয়ত সবটা অনুভব করতে পারেনি......।


            শিউলির বন্ধু বকুলও এ বাড়িতে কাজ করত। শিউলির মতনই সুন্দরী। ফর্সা গড়ন, বেশ চটপটে। একদিন সামান্যকে একা পেয়ে বলে বসল, "আমাকে বিয়ে করবে?"


             সামান্য তখন বারো ক্লাস পাশ করে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছে। শুনে হেসেছিল। কোন উত্তর দিতে পারেনি।


            তারপর এখানে সেভাবে আসা হয়নি। পরে জেনেছিল বকুল একটা ভিন জাতের ছেলের সাথে পালিয়ে যায়। তারপরে বকুলকে সবাই গ্রাম ছাড়া করে। ওর খবর কেউ জানেনা। 

       

             ভাবতে ভাবতে কোথায় হারিয়ে গিয়েছিল। বিবর্তনের ডাকে চমকে উঠল।

                "অঞ্জলি শুরু হয়েছে। চলে আয়।"

                 "এখুনি শুরু হবে? আমি রেডী হয়ে আসছি।"


                      অঞ্জলি শেষ করে হালকা জলযোগ সেরেই সামান্য আজ আদিনাতে এসেছে। মনটা ভীষণ খারাপ। তাই একটু ঘুরতে বেরিয়েছে। শ্রাবণীর সাথেও ওর একটা সম্পর্ক তৈরী হয়েছিল। সেটাও ধরে রাখতে পারেনি। শ্রাবণী পাঁচ বছর ওকে ভালবেসে ওরই অফিস বসের বন্ধুর ছেলেকে বিয়ে করে। এখন সুখে সংসার করছে। 


             সন্ধ্যেতে ফেরার জন্যে বাসে উঠতেই একটা মেয়ের সাথে বাসের সীটের দখল নিয়ে বচসা বেঁধে গেল। 


            "আপনি তো ভারী অসভ্য লোক আছেন?"

             "কেন? আমি আবার কি করলাম?"

              "কি করলাম মানে, একজন মহিলার সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় শেখেন নি?"

               "জানালার ধারে সীটটা আমিই রেখেছিলাম। আর আপনি তাতে বসে গেলেন?"

                "ও এই ব্যাপার। সেটা ভালভাবে না চেঁচিয়ে বলা যেত না?"

                 "চেঁচামেচি আপনিই শুরু করেছেন আগে......"


                কথা শেষ হবার আগেই বিবর্তনের ফোনটা ঝলসে ওঠে। ফোনে দু চার কথা হয়। ও যে গোবরাহাট থেকে এসেছে সেটা মেয়েটি জানতে পারে। পরে দুজনেই সব মিটমাট করে নেয়। মেয়েটাকে আগে কোথায় যেন দেখেছে বলে মনে হল। ফোনে সব শোনার পর মেয়েটিও কেমন ওর দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে অনেক্ষণ। যেন সামান্য ওর পূর্ব পরিচিত। সেই বুদ্ধিদীপ্ত চোখ, সেই চেহারা..


               আজ বিজয়া দশমী। মা উমা সন্তানদের নিয়ে ফিরে যাবেন। সকলের মনে তাই বিষাদের ছায়া। দশমীতে বাড়ির সবাই লরি ভাড়া করে ফুলহার নদীতে গেছে ঠাকুর ভাসানে। সামান্য যায়নি। ও দীঘির পাড়ে চুপ করে বসে সিগারেট টানছে। আর শিউলির কথা ভেবে কষ্ট পাচ্ছে। কোজাগরীর চাঁদটা দীঘির জলে রূপালী অহংকার ছড়াচ্ছে।

               সন্ধ্যের একটু পরেই একটা হাত সামান্যর পিঠ স্পর্শ করল। বেশ ভালবাসার ছোঁয়া তাতে। সামান্য ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে বাসের সেই মেয়েটি। চমকে ওঠে ওকে দেখা মাত্রই। 


            "তিলের নাড়ু। খুব কষ্ট করে তোমার জন্যে বানিয়েছি। আর এই প্যাকেটটা বাড়ির জন্যে।" বলেই বকুল একটা নাড়ু সামান্যর মুখে গুঁজে দেয় পরম আদরে।

          "সেই পুরানো স্বাদ!" সামান্যর চোখ ছলছল করছে।

              আদিনাতে বাসে যে মেয়েটির সাথে সীট নিয়ে ঝগড়া হয়, সে আসলে বকুল। যদিও পরে দুজনে নিজেদের মধ্যে হওয়া ঝামেলা মিটিয়ে নেয়।


          বেশ কিছুক্ষণের নীরবতা। তারপর বকুল মুখ খোলে।

           "আমি তোমাকে আগেই চিনতে পেরেছিলাম।মেজাজটা সেই আগের মতন রয়ে গেছে।"

           "তুমিও আমার দেখা প্রথম 

দিনের মতন সেই সুন্দরীই আছ? এতটুকু বদল হয়নি।

            "মন থেকে বলছ?"

            "মন থেকে নয়, যদি বলি অন্তর থেকে বলছি....."

            "আমি সেদিনের মত আজও তোমায় ভালবাসি। এখন আদিনাতেই আছি। একটা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কাজ পেয়েছি।"

            "তোমার সম্বন্ধে বহু পুরানো একটা খবর শুনেছিলাম। সেটা কি......"

             "হ্যাঁ, ঠিক শুনেছ। ফিরোজ আমাকে ভালবেসে ছিল। তারপর বলেছিল বিয়েও করবে। পরে বুঝলাম ও আমাকে ব্যবহার করতে চাইছে। তারপর....."

          "তারপর কি?"

           "তারপর নিজেই একদিন সেই সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে চলে আসি। আদিনাতে ঘর ভাড়া নিয়ে একা থাকতে শুরু করি।"


          সামান্য দেখল বকুলের চোখের কোণে বিন্দু বিন্দু বাষ্প জমে উঠেছে। হয়ত একটু পরেই ঝেঁপে বৃষ্টি নামবে। ওর বেদনা ক্লিষ্ট মনে। বকুল এখনও সামান্যকে ভালবাসে। ও একটা ভুল করেছিল ঠিকই। পরে সেটা শুধরে নেয়।


             শিউলি এই দীঘিতেই স্নান করতে এসে সাপের কামড়ে মারা যায়। অনেকদিন হল। খবরটা সবাই চেপে যায়। বকুলও বলতে চায়নি।আজ ওর মুখ ফস্কে বেরিয়ে আসে। শিউলির খবরটা শোনামাত্রই সামান্য কেমন মুষড়ে পড়ল। চোখ টস টস করছে। ওর চোখেও ধরা পড়ছে উত্তাল বিদ্যাধরীর ভরা কোটালের নোনা জোয়ার। আবার কিছুক্ষণের দুজনের নীরবতা। 

 

          "আমায় বিয়ে করবে তো?" বকুল সেদিনের মত হঠাৎ বলে উঠল।

         "ভালবাস আমায় আগের মত?"

         "হ্যাঁ, ভালবাসি। সেদিনের ভালবাসাটা মিথ্যে ছিল না। আজও তোমায় সেদিনের মত....."

        

           বকুলের কথা শেষ হয় না। গলা বুজে আসে। সামান্য আলতো করে ওর হাতটা ধরে পাশে এনে বসায়। কোজাগরী চাঁদের আভা ওর মুখে ঝিকমিক করছে। 

              "বেশ তো, ভালই যখন বাস;মাকে গিয়ে সব বলব।"

         "নাড়ু তৈরীর পুরো পদ্ধতিটা শিউলির কাছেই শিখেছি।"

          "তাই, আমি মুখে দিয়েই ধরে ফেলেছি।"

          "কি?"

           "এটা শিউলির হাতের জাদু। ও বিবর্তনের হাত দিয়ে প্রায়ই আমার জন্যে নাড়ু, মুড়কি, গজা, নিমকি পাঠাত।"


           দেখতে দেখতে সন্ধ্যে একটু একটু করে কালো বোরখাতে ছেয়ে ফেলছে জায়গাটা। চাঁদের মাতাল করা আলো হামাগুড়ি দিচ্ছে দীঘির চারপাশে। সেই আলোতে কাশফুলগুলো ওদের ভালবাসার মতন জীবন্ত হয়ে উঠছে। 


          আজ বিজয়া দশমী, বাইরে বিসর্জনের ঢাক বাজছে। মা উমা ফিরে যাচ্ছেন কৈলাসে। আসছে বছর আবার আসবেন। সবার ঘরে ঘরে। শিউলিও সকল বাঁধন ছিন্ন করে চিরদিনের মতন কৈলাসে ফিরে গেছে।


           জানে ও কোনদিন ফিরে আসবে না। শিউলি না ফিরলেও ওর প্রতি সামান্যর ভালবাসা বকুল ফুল হয়ে আজ ফুটছে। হৃদয়ের অলিন্দে। বকুলের চোখের তারায় ও শিউলির চেনা গন্ধটা পাচ্ছে।  


           দূরে বিসর্জনের শব্দ ভেসে আসছে। এক পবিত্র উন্মাদনা সেই শব্দে।

      

            "বল দুর্গা মাঈ কি! জয়!"

              "আসছে বছর, আবার হবে।"

               ........... ......... ..........


               "বল দুর্গা মাঈ কি! জয়!"


           যদিও আজ বিসর্জন। বকুলের ভালবাসার বিসর্জন হয়নি। সামান্যর ভালবাসা ফুলহার নদীতে ভেসে যায় নি। মা দশভূজা সব ফিরিয়ে দিয়েছেন। 

           

          তিলের নাড়ুর স্বাদ দুজনের ভালবাসাকে আরো মধুর করল। বকুলের মধ্যেই জেগে থাকল শিউলির বোবা স্পন্দন। 


            আঁধার এখন বেশ গভীর। দীঘির জলের মতন। সামান্যর কোলে মাথা রেখে বকুল চাঁদের দিকে তাকিয়ে নতুন পৃথিবীর স্বপ্ন দেখছে। যেখানে শিউলিরও প্রতিচ্ছবি আছে। 


           হালকা বাতাস বইতে শুরু করেছে। দীঘিতে ঢেউ উঠল। ওদের মনেও সেই ঢেউ আছড়ে পড়ছে। ভালবাসার ঢেউ। চাঁদের আলোকে স্বাক্ষি রেখে। 

 

          "দুর্গে দুর্গে দুর্গতিনাশিনী......

           মহিষাসুরমর্দিনী জয় মা দুর্গে......"

লেখক অমিত পাল -এর একটি গল্প

 গরীবের ভূত

 




একদা একটা গ্রামের ঘটনার কথা আজ বলব৷

ঘটনাটি শুনেছিলাম অবশ্য ঐ গ্রামের কিছু বয়স্কদের কাছ থেকে৷ গ্রামটির নাম লাভপুর৷

বীরভূম জেলার অন্তর্গত এই গ্রামটি খুব একটা বড়োও নয়, আবার খুব একটা ছোটও নয়৷ মোটামুটি একটা বটে৷ এই গ্রামে কিছু ধনী পরিবার, কিছু মাঝারি পরিবার এবং কিছু দরিদ্র পরিবারও ছিল৷ প্রাচীন প্রথা অনুযায়ী গ্রামের ধনী ব্যক্তিরা সর্বদায় পদতলে অবদমন করে রাখত, অত্যাচার করত গরীবদের উপর৷ এমনকি তখন জমিদারী প্রথাও প্রচলন ছিল৷ ফলে ধনীরা আরও ধনী ও গরীবরা আরও গরীব হতে লাগল৷


      এই গ্রামেই বাস করত এক দরিদ্র ব্রাহ্মণ৷

তার নাম কানু চট্টোপাধ্যায়৷ তিনি ছিলেন খুবই দরিদ্র এক ব্রাহ্মণ৷ তার কোনো বউ, ছেলে-মেয়ে ছিল না৷ ফলে সে একা অতি দারিদ্রতার সঙ্গে জীবন যাপন করত৷ ঐ গ্রামে একটা বড় এবং পুরাতন কালী মন্দির ছিল৷ সেখানেই সে নিত্য কালীপূজায় রত থাকত৷ আর সঙ্গে কিছু যজমানগিরি করে নিজের জীবিকা নির্বাহ করত৷


   ব্রাহ্মণটি অবশ্য সবার সাথেই ভালো ব্যবহার করত৷ সবার সাথে সৎ আচরণও করত৷ অবশ্য অন্যান্য সবাই ব্রাহ্মণটির সাথে ভালো আচরণ করত, ব্রাহ্মণটিকে শ্রদ্ধাও করত৷ এমনকি ব্রাহ্মণের অধিকাংশ কথা গ্রামের মানুষ জন মেনে চলত৷ ব্রাহ্মণটিও মনে মনে ভাবত গ্রামের লোকজন তাকে এই ভাবেই সহযোগীতা করে যাবে সারাজীবন৷ কিন্তু কি থেকে কি হয়ে গেল? থাক সে কথা, পরে আসছি৷


                       হঠাৎ ঐ গ্রামে একটা ঘটনা ঘটে গেল৷ ঘটনাটি হল এই, ঐ গ্রামের এক জমীদার, নাম তার বীররাম চৌধুরি৷ সে পার্শ্ববর্তী গ্রাম থেকে বাণিজ্য করে খুশি মনে বাড়ি ফিরছিল৷

সঙ্গে ছিল তার লোকজন তথা নায়েব, পনেরো জন লেঠেল, পনেরো জন অশ্বারোহী ইত্যাদি৷

এখানে বলে রাখি এই গ্রামের সাথে অন্য গ্রামে যাওয়ার রাস্তাটি ছিল বাঁশ বনে ঘেরা এক বন্য পথ৷ এখানে সূর্য্য অস্ত যাওয়ার আগেই যেন সন্ধ্যা নেমে আসে৷ বীররাম চৌধুরি আজ কুড়ি দিন পর নিজের গ্রামে ফিরছে৷ মন তার বড়ই আনন্দে আপ্লুত, এটা যে শুধু বাড়ি ফেরার তাগিদেই নয়, বরং সে বাণিজ্যে ভালো মুনাফা অর্জন করেছে৷

     

   সে যখন বাড়ি ফিরছিল তখন সন্ধ্যা হয়ে গেছে৷ সে যখন গ্রামের বড় রাস্তার মুখে এল, তখন সে দেখল রাস্তার একধারে তাদের থেকে পঞ্চাশ - ষাট হাত দূরে ডানদিকে বাঁশ ঝোপের আড়ালে সাদা কাপড় পরাহিত একটা কী দাঁড়িয়ে রয়েছে৷ এই দৃশ্য দেখা মাত্রই সবার মধ্যে এক ভীতির সঞ্চার ঘটল৷ বীররাম চৌধুরি নামে বীর হলে কী হবে? সে ভূতকে খুব ভয় পেত৷ তারা অবশ্য এই দৃশ্য দেখা মাত্রই সেখানে দাঁড়িয়ে পরেছিল৷ কিছুক্ষণের মধ্যেই ঐ মুর্তিটি তাদের দিকে এগিয়ে আসতে লাগল৷

তাকে এগিয়ে আসতে দেখে ভয়ে সবাই দে-দার

ছুট দিল৷ বীররামের লোকজন সমস্ত বাণিজ্যের জিনিস ফেলে পালিয়ে গেল যে যেখানে খুশি৷

           

                          পরদিন সকালে গ্রামের এই খবর প্রচার হয়ে গেল৷ জমিদার বীররাম চৌধুরি সকাল বেলাতেই ঐ দু'দিক বাঁশবন ঘেরা পথে তার ফেলে আসা বাণিজ্যের জিনিসপত্র গুলি আনার জন্য লোক পাঠাল৷ কিন্তু তার লোকজন সেখানে গিয়ে কোন জিনিসের হদিশ পেল না৷ ফলে ঐ জমিদার খুব চিন্তায় পরে গেল৷

   

   এই ভাবে কেটে গেল কয়েকদিন৷ ঐ রাস্তা ধরে অবশ্য গ্রামের লোকেরা সন্ধ্যার পর কোথাও যায় না৷ তবে কিছুদিন পরই আবার ঐ একই ঘটনা ঘটল৷ ঐ গ্রামেরই আর এক জমীদার

তার নাম ঘনশ্যাম মিত্র, সেও বীররামের মত অন্য এক গ্রাম থেকে বাণিজ্য করে ফিরছিল তিরিশ দিন পর৷ তখনও ছিল সন্ধ্যার সময়, আর একই ঘটনায় ঘটল৷ কি একটা সাদা কাপড় পড়া জিনিস দেখে তারা ভয়ে পালিয়ে এসেছে নিজেদের বাণিজ্যের জিনিস পত্রও হারিয়েছে বীররামের মতোই৷

         এই ঘটনাটি পুনরাবৃত্তি হওয়ার জন্য গ্রামে একটা হই হই উত্তেজনার সৃষ্টি হল৷ গ্রামবাসীরা সকলেই ভয় পেল এবং সকলের মনে একটা কৌতুহল বাসা বাঁধল৷ সবাই ঐ ব্রাহ্মণ টির কাছে পরামর্শ নিতে গেল৷

       গ্রামের একজন লোক বলে উঠল, আচ্ছা পন্ডিত মশাই ঐ জিনিস টা আসলে কি বলুন তো?

ব্রাহ্মণটিও বলল, হতে পারে কোন ভৌতিক লীলার খেলা!

আবার একজন লোক বলল, যদি ভৌতিক লীলার খেলা হয় তাহলে বাণিজ্যের জিনিসপত্র গুলো নিল কে? ভূতেরা তো আর টাকা-পয়সা নেয় না!

কি জানি? ব্রাহ্মণটি বলল৷ আবার এও বলল,

যদি অলৌকিক কিছু থেকে থাকে, তাহলে ঐ রাস্তায় দিকে না যাওয়ায় শ্রেয়৷

     গ্রামের দুজন সাহসী জোয়ান ছেলে নাম হল 

তাদের এক জগন্নাথ ডোম আর একজন হল রঘুনাথ ডোম, এদের সাহসীকতার নজির সর্বত্র৷

সমাজের বিভিন্ন কাজে এরা সকলকে সাহায্যও করেছে৷ এককালীন এই গ্রামে জগা ডাকাত নামে এক নৃশংস ডাকাতের উপদ্রব ছিল৷ এরা এই ডাকাতকে মেরে গ্রামের কাছ প্রচুর সম্মানও অর্জন করেছিল৷ তারপর থেকে এরা দুজন গ্রামের চৌকিদারের পদ অর্জন করল৷

                           এই ঘটনার বাড়বাড়ন্ত দেখে 

উভয়'ই একটু উৎসাহিত হয়ে বলে উঠল, আচ্ছা

চাটুজ্যে মশাই আমরা দুজনে যদি একবার দেখে আসি জিনিসটা কি? তাহলে কেমন হয়?

            

                       ব্রাহ্মণটি বলল, দেখ অলৌকিক শক্তির কাছে লৌকিক শক্তির সর্বদায় হারই হয়৷ তাই সেখানে তোমাদের নিজেদের সাহসিকতার পরিচয় দিতে যাওয়াটা মূর্খামির সামিল৷

কি জানি কি থেকে কি হয়ে যাবে? তাই তোমাদের সেখানে না যাওয়ায় শ্রেয়৷

   

                    কিন্তু এইভাবে কি চলতে দেওয়া যায় বলুন তো, রঘুনাথ ডোম বলে উঠল৷

না না আপনি যায় বলেন না কেন আমরা একবার জিনিসটা দেখতে চায়!

                তখন ব্রাহ্মণটি বলল, দেখ সেখানে যাওয়া মানে জীবন নিয়ে টানাটানি৷

এবার তোমরা দুজনে যখন সাহস নিয়ে যেতে চাইছ তখন যেতে পার৷ কিন্তু একটা কথা মনে রাখবে তোমাদের যদি কিছু হয়ে যায় তাহলে কিন্তু গ্রাম বাসীরা তোমাদের জন্য দায়ী থাকবে না৷


     ব্রাহ্মণটির বাড়ন সত্ত্বেও তারা দুজনে ঠিক করে নিল তারা যাবেই৷ তাতে তাদের যা হয় হোক৷ এই বলে তারা মন্দির থেকে নিজ নিজ বাড়ি ফিরে গেল৷ বিকেলের দিকে দু'জন মিলে যুক্তি করল সেখানে সন্ধ্যায় যাওয়ার জন্য তারা কি কি করবে এই বিষয়ে৷


                             পড়ন্ত সন্ধ্যায় তারা দু'জনে

হাতে মোটা মোটা দুটি লাঠি নিয়ে বেরিয়ে পরল এবং দু'জনেই এগিয়ে চলল বড়ো রাস্তার দিকে৷

সেই রাস্তায় তারা পৌঁছে কোথাও কিছু দেখতে পেল না৷

       আষাঢ় মাস, দুপুর থেকেই আকাশে মেঘ জমেছে৷ এই সন্ধ্যার দিকে হাল্কাভাবে একটু ঝড়ও দিতে লেগেছে৷ কোথাও কিছু নেই দেখে তারা দুজনে মনে মনে ভাবল সবাই মিথ্যা গুজব রটিয়েছে এবং সেই সময় বৃষ্টি নামার আশঙ্কা বুঝতে পেরে নিজের গ্রামের দিকে ফিরতে চাইল৷ ঠিক তখনই তারা একটা দৃশ্য দেখে থমকে দাঁড়িয়ে পরল৷


         আরে ওটা কি? জগন্নাথ বলে উঠল৷

তারা দুজনই দেখল একটা সাদা কাপড় পরাহিত মুর্তি তাদের সামনে কুড়ি - পঁচিশ হাত দূরে দাঁড়িয়ে রয়েছে৷


             তারা একটু ভয়ও পেল অবশ্য৷ কিন্তু তৎক্ষণাৎ একটা দমকা হাওয়া দিল আর ঐ মূর্তিটির গা থেকে সাদা কাপড়টি উড়ে গেল, তারপর সব পর্দা ফাঁস৷

                   মূর্তির ভিতর থেকে যে স্বরূপটি বেরিয়ে এল সে আর কেউ নয়, তাঁদেরই গ্রামের ব্রাহ্মণ কানু চাটুজ্যে৷

           তখন তারা রেগে গিয়ে ব্রাহ্মণটিকে বাঁশের লাঠি দিয়ে করাঘাত করল৷ আর বলল এগুলি তাহলে আপনারই কারসাজি?

        

                     আজ্ঞে হ্যাঁ, ব্রাহ্মণটি বলল৷ আবার এও বলল, দেখ আমি তো খুব গরীব মানুষ তোমরা তো সবই জান? কি করব বলো এছাড়া আমার কাছে আর কোনো উপায়ও ছিল না৷ জীবিকা অর্জনের জন্য আমাকে এটা করতেই হত৷ তাছাড়া আমি জানতাম মানুষ ভূতকে ভয় পাই, তাই যদি ঐ নিষ্ঠুর জমিদার গুলিকে ভয় দেখিয়ে যদি তাদের মালপত্র লুট করা যায় তাহলে সেটাকে পাপ কাজ বলা যায় না৷ তাই আমি এই পথ ধরেছি৷


আমাকে ক্ষমা করে দাও, ব্রাহ্মণ আবার বলে উঠল৷ তোমরা যেন আমার এই স্বরূপের কথা গ্রামের কাউকে বলো না৷ আমি আর এই কাজ কোনদিনও করব না৷ আমাকে ছেড়ে দাও৷

    

                   তখন জগন্নাথ ডোম বলল, দেখুন আপনি যেই কাজটা করেছেন সেটি অন্যায়ের কাজ৷ এর জন্য আপনাকে শাস্তি পেতেই হবে৷

এই বলে তারা দুজন ব্রাহ্মণটিকে ধরে নিয়ে গ্রামে ফিরে গেল এবং মন্দিরের একটি থামে বেঁধে রাখল৷

       সারা রাত তারা আর বাড়ি না ফিরে ব্রাহ্মণটিকে পাহারা দিতে লাগল৷ পরের দিন সকালে ব্রাহ্মণটির এই ঘটনার কথা সকলেই জানল৷ আর ব্রাহ্মণটির সাজাও হল৷

তবু আজও ঐ রাস্তায় সন্ধ্যার পর কেউ যায় না৷

কবি নবকুমার -এর একটি কবিতা

 শ্যামল আত্মীয়তার সুর



সান্ধ্যকালীন আজানের সুর ভেসে আসে 

ছড়িয়ে যায় বাতাসে বাতাসে---


চারদিকে এক শীতল নিস্তব্ধতা---

একটু আগে পাখিরা ফিরেছে নীড়ে

উদ্বিগ্ন শাবকেরা মা'কে পেয়েছে ফিরে 

বাসায় খেলা করে শান্ত নীরবতা ।


শান্ত দিঘিজলে ছোট ছোট ঢেউগুলি

ভেঙে পড়ে শান বাঁধা ঘাটের চত্বরে

অতীব সত্বরে ।


নতমুখ গাছেদের পাতাগুলি

বসন্তের শিমুল-পলাশ

চারদিকে নির্জন আভাস ।


ওপারে বেজে ওঠে মন্দিরের কাঁসর

ঘন্টার সাথে যেন দোলায় চামর ।


মানুষেরা ব্যস্ত কাজে 

চলে যায় নিপুণ পা ফেলে রাস্তাতেই

কবি এই শ্যামল আত্মীয়তার সুর

লিখে রাখে কবিতার খাতাতেই ।

কবি উত্তম ধীবর -এর একটি কবিতা

 পক্ষ



কোন বড়শিতে টোপ গিলেছ বন্ধু,

কোন বড়শিতে টোপ?

মোবাইলে স্ট্যাটাস কোথায়?

বোধ বুদ্ধি সকলি কি পেয়েছে লোপ্?


তোমার কাব্যে চাঁদের কিরণ ঝরে প্রত্যহ,

এসেছে সময় ,দাও তার প্রমান,

বয়ে যায় রক্ত নদীর স্রোত---_

তুমিও কি তাতে করতে চাও স্নান?


উত্তাল দেশ ! আতঙ্কে রাতের প্রহর গোনে সংখ্যালঘু

হও তুমি হিন্দু কিংবা মুসলমান,

তোমার কাব্যে তো শুনেছি আর্তের বিলাপ

এসেছে সময় আজ দাও তার প্রমান।


বিবেক-বুদ্ধি সত্বা যদি রাখো বন্ধক

মৌলবাদের কাছে,

এই বধ্য ভূমে তুমিও তবে এক জল্লাদ

তোমারও চোখে রক্তের নেশা অহরহ নাচে।

কবি পৌষালী সেনগুপ্ত -এর একটি কবিতা

 শিক্ষা



জীবন যেন জীর্ণ পাতায় জড়ানো সেই মোড়কখানি,

যার ভিতরে লুকিয়ে রয়েছে অনেক স্মৃতি;

যার মধ্যে কিছু ভালো,

কিছু খারাপ!

কিছু কথা মন ছুঁয়ে যায়,

তো কিছু কথা মনের ভিতরে রয়ে যায়!

কখনো কখনো একটা মর্মস্পর্শী অভিজ্ঞতা ভিতরটা নাড়া দিয়ে যায়!

কখনো আনন্দের অশ্রু তো কখনো দুঃখে চোখের জল!

দুটোই নিজের রয়ে যায়!

বয়ে যায় শুধু সময়!

জীবনটা দেখতে দেখতে ফুরিয়ে যায়!

কিন্তু শিক্ষা কোনো দিনও ফুরায় না,

এক প্রজন্ম থেকে অন্য প্রজন্ম ,

জীবনের যে কোনো খাতে বইবার সময় শিক্ষা মানুষ পায়,

সেই শিক্ষা জীবনের শেষ দিন অব্দি সঙ্গে রয়ে যায়!

কবি পম্পা ভট্টাচার্য -এর একটি কবিতা

 তোমার চোখে দেখেছিলেম আমার সর্বনাশ



দূর হতে হতে চলে যাব একদিন দূর বহু দূরে                  

ছায়াটুকুও পড়বে না যা ছিল তোমার স্মৃতির পাতা জুড়ে।

নীরব কান্নায় পড়বে না ,আমার একফোঁটা চোখের জল

হৃদয় হবে বিদীর্ণ ,শুধু গহন মনে জ্বলবে দাবানল।

প্রকাশ হবে না কোনকিছুই ,আমার নিঃশব্দ অভিমান

হয়তো তুমি ভাসবে সুখের সাগরে,

আমার জীবনে পড়ে রবে জোয়ার ভাটার টান।

সময়ের ব্যবধানে ভাঙে যে অন্ধবিশ্বাস

বেদনাময় জীবনে সান্ত্বনা দেয় শুধুই দীর্ঘশ্বাস।

মরণ হয়তো পারবে কেড়ে নিতে ,হতাশা করবে গ্রাস

কারণ আমি যে তোমার চোখে দেখেছিলেম আমার সর্বনাশ।

কবি সুমিত্রা পাল -এর একটি কবিতা

 ব্যর্থ হলো কবির বাণী




ওরে মৌলবাদীর দল,

দেখিয়ে দিলি আসল রূপ ।

দেখিয়ে দিলি আজও 

মন তোদের অন্ধকূপ।

 মানবতা ভুলে গিয়ে 

ভাঙলি মায়ের মুখ ।

রক্তে রাঙালি তোরা

 বাংলা মায়ের বুক ।

কেমন শিক্ষা তোদের 

মানুষ করলি খুন !

বিশ্ব মাঝে নিজেদের 

মুখ করলি চুন।

যে যার ধর্ম পালন করবে

 এটাই মানব অধিকার ।

কোন সাহসে কেরে নিস

সেই অধিকার সবার ।

একই বৃন্তে দুটি কুসুম 

হিন্দু-মুসলমান ,

বলে গেছেন বিদ্রোহী কবি 

কাজী নজরুল ইসলাম।

 ধর্মের নামে অধর্ম করে,

কবির বুক করলি খান খান।

কবির বাণী ব্যর্থ হলো,

 থাকলো না কবির মান ।

.আমরা সাধারণ মানুষ, মনুষ্যত্ব বুঝি

চাই না দাঙ্গা বিবাদ,

পাশাপাশি বাস করবো হিন্দু মুসলমান,

মিলাব কাঁধে কাঁধ।

এসো সকল দেশের মৌলবাদের 

বিরুদ্ধে গর্জে উঠি,

সকলে মিলে একসাথে ওদের

টিপে ধরি টুটি।

সে মৌলবাদ হোক হিন্দু

অথবা মুসলমান,

মানুষকে ভালবেসে আমরা সবাই

দিতে পারি প্রাণ।

দেশে দেশে ফিরে আসুক শান্তি

হোক মানবতার জয়,

সবার জীবন হতে, কেটে যাক,

সকল প্রকার ভয়।

কবি মায়া বিদ -এর একটি কবিতা

 পরিপূরক



ভাঙাগড়ার খেলা রে ভাই

   ভাঙা গড়ার খেলা।

একূল ভেঙে ওকূল গড়ো

        কাটাও সারা বেলা ।

সৃষ্টি সুখের উল্লাসে তোমার

           মাতন যখন ধরে ।

রঙিন রঙিন স্বপ্ন দিয়ে

         সাজাও তুমি তারে।

সৃষ্টি - ধ্বংসের পথখানি "দ্যাখো"

               সমান্তরাল রেখায় চলে।

একে অন্যের পরিপূরক হয়ে

         বিপরীত ধর্মী খেলা খেলে।

প্রবল বেগে খরস্রোতা নদী

    সামনে এগিয়ে চলে।

নতুন পথ চলার নেশায়

        পুরানোকে যায় ভুলে।

বিধাতা পুরুষের এই দরবারে

        সৃষ্টি - ধ্বংস চক্রাকারে।

চরৈবতি, চরৈবতি, নেইকো বিরাম

            চলছে মেপে সময়টারে।

কবি তুলসীদাস বিদ -এর একটি কবিতা

 শেষ



শেষ ব 'লে কিছু নেই

    লেখা অভিধানে।

ভ'রে রাখো দেহ মন

     নিজ গানে গানে।


আঁধার ঘনিয়ে আসে

            বেলা অবসানে।

ধ'রে রাখো ভ'রে রাখো

             বিণা অভিমানে।


শত ঘৃণা - অপমান

           শেষ কথা বলে?

ধূ ধূ বালি মরা গাঙ

         ঢেউ নাহি তুলে?


আপ্ত - আমিত্ব বোধ

     মিথ্যা সংলাপ।

শেষ করো শেষ করো

         ভেক অপলাপ।


শেষ করো শেষ করো

            হিংসা ব্যাভিচার।

দুঃস্বভাব ভন্ডভাব

     আত্ম অহংকার ।



সৃষ্টি না করিও শেষ

         ধ্বংস অপচয়।

ঝড় - ঝঞঝা শত ক্লেশ

          নিজে করো জয়।


শেষ হলে শুরু হোক

       পথের সন্ধান।

কেটে যাবে ঘুর পাক

      অসৎ বন্ধন।


শেষ বলে কিছু নাই

         যাঁদের জীবন।

ত্যাগ - নিষ্ঠা সততায়

           বাঁচে কীর্তিমান।